গত অক্টোবরে এক পোস্টে লেখেছিলাম, বিএনপির ঘোষিত মৃত্যুর ক্রমপঞ্জি লেখা হচ্ছে কোথাও, সেই ক্রমপঞ্জি লিখতে শুরু করেছি। এই মৃত্যুর ঘোষক খালেদা জিয়া, সেই ঘোষিত মৃত্যুর ক্রমপঞ্জি ধরে তিনি ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন বিএনপিবধে।
০৮ ডিসেম্বর ২০০৯ : দুর্নীতির বরপুত্র ও জিয়ার বড় ছেলে তারেক জিয়ার বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে অভিষেক।
০১ জানুয়ারি ২০১০ : ‘রাস্তায় কাঁটা দেব’ রাজনীতির স্থূলবালক সাকার ভাষ্য নিজের গলায় শপথবাক্য হিসেবে পাঠ করলেন খালেদা জিয়া।
৩১ জানুয়ারি ২০১০ : সপরিবারে শেখ মুজিব হত্যা মামলার পাঁচ খুনি আসামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর প্রতিক্রিয়াহীন বিএনপি।
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ : সম্পাদকদের বচনামৃত শোনালেন খালেদা। ‘ আমি সবার কথা শুনব, সবার সঙ্গে কথা বলব’, ‘এক বছর সময় দিয়েছি, সরকারকে আরো সময় দিতে চাই। আমরা সংসদে থাকব, রাজপথেও প্রতিবাদ জানাব’। বচনামৃত ছাড়া আর কিছুই দেয়ার নেই আর খালেদার।
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১০ : ওয়াকআউট না ক্যাটওয়াক! ক্যাটওয়াক, আসব যাব চিরদিনের সেই আমি, মিউজিক। এটাই খালেদার ‘সংসদে থাকব’ অমৃত ভাষনের পরিণতি। এমন সংসদীয় র্যাম্পে ক্যাটওয়াকে তার চেয়ে বেশি আর কাকে মানাবে।
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০: বোমা মেরেও বিএনপিকে বাঁচানো যাবেনা প্রমাণ করলেন দেলোয়ারপুত্র পবন।
২৯ মার্চ ২০১০ : খালেদা জিয়ার মহাসমাবেশে জনতার ঢল নামাই স্বাভাবিক। চট্টগ্রামে, বিএনপির মহড়াকক্ষে, এদিন মহড়ায় (রিহার্সাল) যে জনসমাগম হল, তাতেই আমরা নিশ্চিত তামাশাও (নাটক) মঞ্চসফল হবে। চট্টগ্রাম নয় সারা বাংলাদেশ সেদিন তামাশা দেখতে পাবে। আমরা বলব, খালেদা জিয়ার তামাশায় সারা দেশ আমোদিত হবেই এটাই স্বাভাবিক।
০৪ এপ্রিল ২০১০ : প্রথমে তিনি কথাটা বলেছিলেন চট্টগ্রামের জনসভায়, আর আজ তিনি কথাটা বললেন সংসদে ‘যে মন্ত্রী-এমপিদের বেতন বাড়ানো হচ্ছে, তাঁদের মনোরঞ্জনে ব্যবহার করা হচ্ছে ইডেন কলেজের মেয়েদের।’
০৩ মে ২০১০ : বিএনপি সব সময় বাধাহীন, তাকে বাধা দেয়ার কেউ নেই — কখনো ছিলও না — কখনো হবেও না। তাই নির্বাচন কমিশন ঘেরাওর কর্মসূচি এভাবে মাঝ পথেই শেষ হয়ে গেল। বিএনপি সেই কেষ্ট যাকে কখনো কষ্ট করতে হয় না — তাই বিএনপির মহড়া মহড়া খেলা আর কোনো দিন শেষ হবে না।
০৮ মে ২০১০ : জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরামের আইনজীবি মহাসমাবেশে খালেদা জিয়া বলেছেন, দেশকে বিভক্ত করতে যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে যাচ্ছে সরকার। ঐক্যের প্রতীক খালেদা জিয়া, অনেকে যদিও ভুল করছিলেন, ভাবছিলেন যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়ে তিনি কিছু বলবেন না, জামায়াতের সাথে দূরত্ব বাড়বে খালেদার, তাদের ভুল ভাঙ্গল।
১২ মে ২০১০ : ভূতই দেখছেন খালেদা ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছেন না। ঝাড়ফুঁকবাদ থেকে এখন খালেদা আন্দোলনের পথে যেতে চাইছেন, তার মানে, গ্রামের হাটবাজারের সেই পরিচিত দৃশ্য — ঝাড়ফুঁকে ভূত না নামাতে ভূতেপাওয়াকে বেদম প্রহার — খালেদা এবার জাত চিনিয়ে ছাড়বেন — মরিয়া হয়ে মনে করিয়ে দেবেন তিনি মরেন নাই!
১৯ মে ২০১০ : উলামাপ্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন খালেদা জিয়া, আলেম সমাজের ওপর আক্রমণের মাধ্যমে দেশকে বিভক্ত করে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে যাচ্ছে সরকার — প্রেমের কথা পরের কাছে কইতে যে মানা, সে যে দিব্যি দেয়া দীক্ষা মন্ত্র — তাই খালেদা কখনো সরাসরি জামায়াত প্রসঙ্গে কথা বলতে পারেন না। আলেমরা প্রেমের কথা শুনলে বলেন, আস্তাগফেরুল্লাহ। আবার আলেমরা প্রেম করে বলেন, সুবাহানাল্লাহ। সুবাহানাল্লাহ, খালেদা, আপনার উলামাপ্রেম আনন্দময় হোক। আস্তাগফেরুল্লাহ, খালেদা, ধর্ষণকারী জল্লাদ উলামার সাথে প্রেম করা হারাম।
০৭ জুন ২০১০ : ‘এমন মজা হয় না’ — বিকল্প বাজেট, ছায়া বাজেট — কোথায় ছিল এসব বাজেট, যাদের বাজেট ছইফুরের জিম্মায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা ছিল, আজ ছইফুর নেই — খালেদাকে পেয়েছে কিছু আন্ডারবাম, তাদের জ্ঞানের বালুর গরমেই খালেদার এই হাল। সংসদেরও আর দরকার নেই পেশাদারী সাংবাদিকদের ডেকে প্রতিদিন এমন তারাজ্বলা সংসদ অধিবেশন ডাকতে পারেন খালেদা, উড়িয়ে দিতে পারেন তার হাজার কোটি টাকার পারিবারিক সম্পত্তি — মন্দায় পাঁচতারা হোটেল আর কনভেনশন হাউসের দুরাবস্থা কেটে যাবে। বলিউড ফিল্মের মতো বিদেশেও শুটিং করতে পারেন নিয়মিত, সংসদ শুটিং, যেখানে যাবেন সেখানকার পেশাদার সাংবাদিকদের ডেকে নেবেন, তাদেরও হাল ভাল নয়! হোকনা আপনার হাজার কোটি টাকায় তাদেরও কিছু উপকার! আর অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা যতই খুশি হোক, জামায়াতের বন্ধনের মতো, তারেক-কোকোর লুণ্ঠনের নাড়ীর টান তিনি কোনোদিন অস্বীকার করতে পারবেন না।
০৮ জুলাই ২০১০ : হায়রে বিএনপি। ‘মান্নান ভূঁইয়া অসুস্থ থাকায় তাঁর পক্ষে কেউ যদি বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করেন তবে তা বিবেচনা করা হতে পারে।’ মৃত্যুপথযাত্রী ‘সংস্কারপন্থী’ নিয়ে খালেদা জিয়ার কী যুগান্তকারী পদক্ষেপ! গন্ধ, সত্যিই পচা গন্ধ বের হচ্ছে।
০৫ অক্টোবর ২০১০ : আগামাথার ঠিক নেই খালেদার, ঔদ্ধত্যে ও কূপমুণ্ডকতায় খালেদা জিয়া এখন অনেক এগিয়ে গেছেন, গত ০৫ অক্টোবর ২০১০এ এক সম্মেলনে বলেছেন,যারা মুক্তিযুদ্ধ করেননি, ভারতে প্রবাস জীবনযাপন করেছেন, তারাই নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের চ্যাম্পিয়ন সাজানোর চেষ্টা করছেন। ওই একই সম্মেলনে তিনি এও বলেছেন, স্বাধীনতার পরপরই প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া হয়। আমরা তাদের বিচার করতে পারিনি। স্বাধীনতা বিরোধীদেরও তখনকার সরকার ক্ষমা করে দিয়েছিল। সাধারণ ক্ষমার কথা ভুলে গিয়ে আজ চার দশক পর তাদের সহযোগীদের বিচারের কথা বলে আবার জাতিকে হানাহানির দিকে ঠেলে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে। দেশপ্রেমিকদের এই দ্বিমুখী নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
এরপর মুক্তিযুদ্ধে খালেদা জিয়ার নিজের ভূমিকার কথা অবশ্যই উঠবে, ১৯৭১-১৯৭৫ পর্যন্ত একজন নিতান্ত সাধারণ ব্যক্তি হিসেবে খালেদা জিয়ার জীবন কাহিনী জানা এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দিন শেষের আলোয় এই খালেদা জিয়ার স্বরূপ উন্মোচন ও বিএনপির লুপ্ত হয়ে যাওয়াই হবে আগামী কয়েক বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা।
১৩ নভেম্বর ২০১০ : খালেদার গোলাপী মিথ্যা এক কাপড়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। যাই হোক একাধিকবার চেষ্টা করেও জিয়া যাকে সেনানিবাস থেকে বের করতে পারেননি শেখ হাসিনা তাকে বের করে দিতে পেরেছেন।
০১ জানুয়ারি ২০১১ : এই সরকার অবৈধ, ক্ষমতায় গেলে এই সরকারের সকল কর্মকাণ্ড অবৈধ ঘোষণা করা হবে। ২০১১ সালের শুরুর দিনেই খালেদা তার ভবিষ্যত নিয়ে এমন ‘ইনশাল্লাহ’ ছড়াবেন তা আমাদের জানা থাকার কথা নয়। আসলে ২০১১ সালের প্রথম দিনেই খালদা জিয়া তার এই উক্তির মধ্য দ
[ এই পোস্টটি নিয়মিতই আপডেট করতাম, কিন্তু ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি/মার্চে কোনো একদিন পোস্টটি আপডেট করতে গিয়ে পোস্টটির বেশিরভাগ অংশ মুছে যায়, আর কোনোভাবেই রিকভারি সম্ভব না হওয়ায় পোস্টটি এভাবেই পড়ে আছে — পড়ে থাকবে। – মা.ক ০৪/০১/২০১৪ ]

লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
