গত অক্টোবরে এক পোস্টে লেখেছিলাম, বিএনপির ঘোষিত মৃত্যুর ক্রমপঞ্জি লেখা হচ্ছে কোথাও, সেই ক্রমপঞ্জি লিখতে শুরু করেছি। এই মৃত্যুর ঘোষক খালেদা জিয়া, সেই ঘোষিত মৃত্যুর ক্রমপঞ্জি ধরে তিনি ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন বিএনপিবধে।
০৮ ডিসেম্বর ২০০৯ : দুর্নীতির বরপুত্র ও জিয়ার বড় ছেলে তারেক জিয়ার বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে অভিষেক।
০১ জানুয়ারি ২০১০ : ‘রাস্তায় কাঁটা দেব’ রাজনীতির স্থূলবালক সাকার ভাষ্য নিজের গলায় শপথবাক্য হিসেবে পাঠ করলেন খালেদা জিয়া।
৩১ জানুয়ারি ২০১০ : সপরিবারে শেখ মুজিব হত্যা মামলার পাঁচ খুনি আসামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর প্রতিক্রিয়াহীন বিএনপি।
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ : সম্পাদকদের বচনামৃত শোনালেন খালেদা। ‘ আমি সবার কথা শুনব, সবার সঙ্গে কথা বলব’, ‘এক বছর সময় দিয়েছি, সরকারকে আরো সময় দিতে চাই। আমরা সংসদে থাকব, রাজপথেও প্রতিবাদ জানাব’। বচনামৃত ছাড়া আর কিছুই দেয়ার নেই আর খালেদার।
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১০ : ওয়াকআউট না ক্যাটওয়াক! ক্যাটওয়াক, আসব যাব চিরদিনের সেই আমি, মিউজিক। এটাই খালেদার ‘সংসদে থাকব’ অমৃত ভাষনের পরিণতি। এমন সংসদীয় র্যাম্পে ক্যাটওয়াকে তার চেয়ে বেশি আর কাকে মানাবে।
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০: বোমা মেরেও বিএনপিকে বাঁচানো যাবেনা প্রমাণ করলেন দেলোয়ারপুত্র পবন।
২৯ মার্চ ২০১০ : খালেদা জিয়ার মহাসমাবেশে জনতার ঢল নামাই স্বাভাবিক। চট্টগ্রামে, বিএনপির মহড়াকক্ষে, এদিন মহড়ায় (রিহার্সাল) যে জনসমাগম হল, তাতেই আমরা নিশ্চিত তামাশাও (নাটক) মঞ্চসফল হবে। চট্টগ্রাম নয় সারা বাংলাদেশ সেদিন তামাশা দেখতে পাবে। আমরা বলব, খালেদা জিয়ার তামাশায় সারা দেশ আমোদিত হবেই এটাই স্বাভাবিক।
০৪ এপ্রিল ২০১০ : প্রথমে তিনি কথাটা বলেছিলেন চট্টগ্রামের জনসভায়, আর আজ তিনি কথাটা বললেন সংসদে ‘যে মন্ত্রী-এমপিদের বেতন বাড়ানো হচ্ছে, তাঁদের মনোরঞ্জনে ব্যবহার করা হচ্ছে ইডেন কলেজের মেয়েদের।’
০৩ মে ২০১০ : বিএনপি সব সময় বাধাহীন, তাকে বাধা দেয়ার কেউ নেই — কখনো ছিলও না — কখনো হবেও না। তাই নির্বাচন কমিশন ঘেরাওর কর্মসূচি এভাবে মাঝ পথেই শেষ হয়ে গেল। বিএনপি সেই কেষ্ট যাকে কখনো কষ্ট করতে হয় না — তাই বিএনপির মহড়া মহড়া খেলা আর কোনো দিন শেষ হবে না।
০৮ মে ২০১০ : জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরামের আইনজীবি মহাসমাবেশে খালেদা জিয়া বলেছেন, দেশকে বিভক্ত করতে যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে যাচ্ছে সরকার। ঐক্যের প্রতীক খালেদা জিয়া, অনেকে যদিও ভুল করছিলেন, ভাবছিলেন যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়ে তিনি কিছু বলবেন না, জামায়াতের সাথে দূরত্ব বাড়বে খালেদার, তাদের ভুল ভাঙ্গল।
১২ মে ২০১০ : ভূতই দেখছেন খালেদা ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছেন না। ঝাড়ফুঁকবাদ থেকে এখন খালেদা আন্দোলনের পথে যেতে চাইছেন, তার মানে, গ্রামের হাটবাজারের সেই পরিচিত দৃশ্য — ঝাড়ফুঁকে ভূত না নামাতে ভূতেপাওয়াকে বেদম প্রহার — খালেদা এবার জাত চিনিয়ে ছাড়বেন — মরিয়া হয়ে মনে করিয়ে দেবেন তিনি মরেন নাই!
১৯ মে ২০১০ : উলামাপ্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন খালেদা জিয়া, আলেম সমাজের ওপর আক্রমণের মাধ্যমে দেশকে বিভক্ত করে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে যাচ্ছে সরকার — প্রেমের কথা পরের কাছে কইতে যে মানা, সে যে দিব্যি দেয়া দীক্ষা মন্ত্র — তাই খালেদা কখনো সরাসরি জামায়াত প্রসঙ্গে কথা বলতে পারেন না। আলেমরা প্রেমের কথা শুনলে বলেন, আস্তাগফেরুল্লাহ। আবার আলেমরা প্রেম করে বলেন, সুবাহানাল্লাহ। সুবাহানাল্লাহ, খালেদা, আপনার উলামাপ্রেম আনন্দময় হোক। আস্তাগফেরুল্লাহ, খালেদা, ধর্ষণকারী জল্লাদ উলামার সাথে প্রেম করা হারাম।
০৭ জুন ২০১০ : ‘এমন মজা হয় না’ — বিকল্প বাজেট, ছায়া বাজেট — কোথায় ছিল এসব বাজেট, যাদের বাজেট ছইফুরের জিম্মায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা ছিল, আজ ছইফুর নেই — খালেদাকে পেয়েছে কিছু আন্ডারবাম, তাদের জ্ঞানের বালুর গরমেই খালেদার এই হাল। সংসদেরও আর দরকার নেই পেশাদারী সাংবাদিকদের ডেকে প্রতিদিন এমন তারাজ্বলা সংসদ অধিবেশন ডাকতে পারেন খালেদা, উড়িয়ে দিতে পারেন তার হাজার কোটি টাকার পারিবারিক সম্পত্তি — মন্দায় পাঁচতারা হোটেল আর কনভেনশন হাউসের দুরাবস্থা কেটে যাবে। বলিউড ফিল্মের মতো বিদেশেও শুটিং করতে পারেন নিয়মিত, সংসদ শুটিং, যেখানে যাবেন সেখানকার পেশাদার সাংবাদিকদের ডেকে নেবেন, তাদেরও হাল ভাল নয়! হোকনা আপনার হাজার কোটি টাকায় তাদেরও কিছু উপকার! আর অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা যতই খুশি হোক, জামায়াতের বন্ধনের মতো, তারেক-কোকোর লুণ্ঠনের নাড়ীর টান তিনি কোনোদিন অস্বীকার করতে পারবেন না।
০৮ জুলাই ২০১০ : হায়রে বিএনপি। ‘মান্নান ভূঁইয়া অসুস্থ থাকায় তাঁর পক্ষে কেউ যদি বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করেন তবে তা বিবেচনা করা হতে পারে।’ মৃত্যুপথযাত্রী ‘সংস্কারপন্থী’ নিয়ে খালেদা জিয়ার কী যুগান্তকারী পদক্ষেপ! গন্ধ, সত্যিই পচা গন্ধ বের হচ্ছে।
০৫ অক্টোবর ২০১০ : আগামাথার ঠিক নেই খালেদার, ঔদ্ধত্যে ও কূপমুণ্ডকতায় খালেদা জিয়া এখন অনেক এগিয়ে গেছেন, গত ০৫ অক্টোবর ২০১০এ এক সম্মেলনে বলেছেন,যারা মুক্তিযুদ্ধ করেননি, ভারতে প্রবাস জীবনযাপন করেছেন, তারাই নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের চ্যাম্পিয়ন সাজানোর চেষ্টা করছেন। ওই একই সম্মেলনে তিনি এও বলেছেন, স্বাধীনতার পরপরই প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া হয়। আমরা তাদের বিচার করতে পারিনি। স্বাধীনতা বিরোধীদেরও তখনকার সরকার ক্ষমা করে দিয়েছিল। সাধারণ ক্ষমার কথা ভুলে গিয়ে আজ চার দশক পর তাদের সহযোগীদের বিচারের কথা বলে আবার জাতিকে হানাহানির দিকে ঠেলে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে। দেশপ্রেমিকদের এই দ্বিমুখী নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
এরপর মুক্তিযুদ্ধে খালেদা জিয়ার নিজের ভূমিকার কথা অবশ্যই উঠবে, ১৯৭১-১৯৭৫ পর্যন্ত একজন নিতান্ত সাধারণ ব্যক্তি হিসেবে খালেদা জিয়ার জীবন কাহিনী জানা এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দিন শেষের আলোয় এই খালেদা জিয়ার স্বরূপ উন্মোচন ও বিএনপির লুপ্ত হয়ে যাওয়াই হবে আগামী কয়েক বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা।
১৩ নভেম্বর ২০১০ : খালেদার গোলাপী মিথ্যা এক কাপড়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। যাই হোক একাধিকবার চেষ্টা করেও জিয়া যাকে সেনানিবাস থেকে বের করতে পারেননি শেখ হাসিনা তাকে বের করে দিতে পেরেছেন।
০১ জানুয়ারি ২০১১ : এই সরকার অবৈধ, ক্ষমতায় গেলে এই সরকারের সকল কর্মকাণ্ড অবৈধ ঘোষণা করা হবে। ২০১১ সালের শুরুর দিনেই খালেদা তার ভবিষ্যত নিয়ে এমন ‘ইনশাল্লাহ’ ছড়াবেন তা আমাদের জানা থাকার কথা নয়। আসলে ২০১১ সালের প্রথম দিনেই খালদা জিয়া তার এই উক্তির মধ্য দ
[ এই পোস্টটি নিয়মিতই আপডেট করতাম, কিন্তু ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি/মার্চে কোনো একদিন পোস্টটি আপডেট করতে গিয়ে পোস্টটির বেশিরভাগ অংশ মুছে যায়, আর কোনোভাবেই রিকভারি সম্ভব না হওয়ায় পোস্টটি এভাবেই পড়ে আছে — পড়ে থাকবে। – মা.ক ০৪/০১/২০১৪ ]
মাসুদ করিম
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৩১ comments
শামীম আহমেদ - ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৮:২৭ অপরাহ্ণ)
ব্লগের ভিতর দলবাজি ভালো লাগেনা। ধন্যবাদ।
রায়হান রশিদ - ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৬:০৮ পূর্বাহ্ণ)
এই মৃত্যু ঘন্টা কি আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও বাজছে না? অন্য কোন ইস্যুর প্রসঙ্গে যাচ্ছি না, কিন্তু ছাত্র লীগ এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার - এই দু’টো ইস্যুকে যেভাবে মোকাবেলা করছে সরকার (এবং সরকারী দল), তাতে আশাবাদী হওয়া কঠিন।
বিনয়ভূষণ ধর - ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (১২:১৫ অপরাহ্ণ)
@রায়হান!
আমি ছাত্রলীগের ব্যাপারে কিছু বলতে পারবো না তবে ভাই আমি কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের উপর আস্হা রাখছি। আমি এবার খুব আশাবাদী…
বিনয়ভূষণ ধর - ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৫:২১ অপরাহ্ণ)
১.এক সপ্তাহের মধ্যেই প্রস্তুত হবে চূড়ান্ত তালিকা
যুদ্ধাপরাধীদের ৪ স্তরের প্রাথমিক তালিকা
২.বিচারের অবকাঠামোগত প্রস্তুতি শেষ হয়েছে
মাসুদ করিম - ১৩ মে ২০১০ (১০:০৫ পূর্বাহ্ণ)
গতকাল খালেদা জিয়ার আন্দোলন প্রসঙ্গে বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর জনকণ্ঠে তার নিয়মিত কলামে লিখছেন
বিস্তারিত পড়ুন এখানে : খালেদা জিয়ার কাছে জানতে চাই।
মাসুদ করিম - ২১ মে ২০১০ (২:০০ অপরাহ্ণ)
সাপ্তাহিক বুধবারে আমীর খসরু লিখছেন
বিএনপি কোনোদিনই মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দল ছিল না। বিএনপি সব সময় নির্ভেজাল ডানপন্থী দলই ছিল। আমাদের সংবাদ মাধ্যমে অনেকেই এভুলটি ইচ্ছে করেই করেন। এটা যারা করেন তারা বিএনপি ও আওয়ামী লীগের চরিত্রকে এক করে দেখাতে চান। তারা ভুলে যান পন্থায় এক রকম না হয়েও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অনেক বিষয়ে একই রকম আচরণ করতে পারে। তার মধ্যে একটা ধরা যাক অহেতুক হরতাল ডাকা, ক্ষমতায় থাকলে হরতাল খারাপ — ক্ষমতায় না থাকলে হরতাল ভাল। কিন্তু রাজনৈতিক দলের চরিত্রের দিক থেকে বাংলাদেশে একমাত্র ‘মধ্যপন্থা’র দল আওয়ামী লীগই।
২০০৭-২০০৮এ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিএনপি — আরেকটি বহুচর্চিত ভুল ধারণা আমাদের সংবাদ মাধ্যমের অনেকের। ২০০৭-২০০৮এ সব রাজনৈতিক দলেরই সমান ক্ষতি হয়েছিল, কারণ সামরিক শক্তি সব রাজনৈতিক দলের ক্ষতি করার জন্যই কমিটেড ছিল। বিএনপি ক্ষমতায় না থাকলে সবসময়ে এরকম থাকে, ক্ষমতায় থাকা ছাড়া বিএনপির কোনো রাজনৈতিক জীবন নেই।
নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখে বিএনপি ।। আমীর খসরু ।।
মাসুদ করিম - ২ জুন ২০১০ (৯:৫৯ অপরাহ্ণ)
খালেদা জিয়ার কাছে নির্বাচন ও গণতন্ত্রের অর্থ কী, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর লিখছেন
তিনি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন
বিস্তারিত পড়ুন, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের নিয়মিত কলাম, জনকণ্ঠে, আজকের কলামের শিরোনাম : মধ্যযুগীয় চিন্তা থেকে একবিংশ শতাব্দীর রাজনীতি।
মাসুদ করিম - ৯ জুন ২০১০ (১২:৫০ পূর্বাহ্ণ)
পড়ুন এখানে বিএনপির ছায়া বাজেট।
মাসুদ করিম - ৯ জুলাই ২০১০ (১:২৯ পূর্বাহ্ণ)
খালেদা-নিজামীর মতো নরকের কীটদের বাংলাদেশে জায়গা নেই — চিৎকার করে বলুন — আকাশবাতাস কাঁপিয়ে বলুন, এমনই আহবান করেছেন বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীর।
জনকণ্ঠে প্রকাশিত লেখাটির লিন্ক।
মাসুদ করিম - ১২ অক্টোবর ২০১০ (৭:৫১ পূর্বাহ্ণ)
খালেদার এই কথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছেন শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট শহিদুল ইসলাম। তিনি বলছেন
এই দায়িত্বহীন ও অপমানজনক মন্তব্যের জন্য তিনি প্রকাশ্যে রেডিও টেলিভিশনে জাতির কাছে খালেদা জিয়াকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এবং খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে সাবধান করে দিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এই ধরনের মন্তব্য তাকে ও তার দলকে ‘মুসলিম লীগ’এর মতো ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করবে।
বিস্তারিত পড়ুন গতকাল সোমবারের কালের কণ্ঠে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিরোধী নেত্রীর বিস্ময়কর মন্তব্য।
মাসুদ করিম - ২০ নভেম্বর ২০১০ (১২:৩০ পূর্বাহ্ণ)
এখানে দেব ২০ অক্টোবরে জনকণ্ঠে প্রকাশিত মুনতাসীর মামুনের কলামের একটা লিন্ক, যেখানে তিনি বলেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রধান লক্ষ্য খালেদার সেনানিবাসের বাড়ি ও তার দুই পুত্রকে রক্ষা করা। এরমধ্যে খালেদা বাড়ি ছেড়েছেন, পুত্রদের কখন ছাড়বেন জানি না।
আমরা আরো এগিয়ে যেতে চাই, সংসদ ভবন অঞ্চল থেকে জিয়ার কবরও উচ্ছেদ করতে চাই, যেন দুদু সাহেব বলতে পারেন – জিয়ার কবর উচ্ছেদ করলে বাংলাদেশে অন্য কোনো নেতার কবর থাকবে না। বিএনপির বাড়ি গেছে – সেনানিবাস বেঁচেছে, এখন বিএনপির কবরটি গেলে সংসদ ভবনটাও বাঁচে।
এখানে পড়ুন মুনতাসীর মামুনের কলাম : বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মূল আদর্শই হচ্ছে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি ও খালেদা জিয়ার দুই পুত্রকে রক্ষা করা।
নূপুর - ২৩ নভেম্বর ২০১০ (৩:৫৯ পূর্বাহ্ণ)
আমার কিন্তু শিরোনাম দেখেই ছুটে আসা মাসুদ ভাই।
কী অনবদ্য অনুবাদ করলেন মার্কেজের!
মাসুদ করিম - ২৯ নভেম্বর ২০১০ (১২:৪০ পূর্বাহ্ণ)
ওই উপন্যাসের শিরোনামের দুটো অনুবাদের সাথে আমি পরিচিত ছিলাম : একটা ছিল মৃত্যুর কড়ানাড়া (সম্ভবত, রাজু আলাউদ্দিন) আরেকটা পূর্বঘোষিত মৃত্যুর কালপঞ্জি ( মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়)। কিন্তু আমি করেছি আপনার ভাল লাগার জন্যই ঘোষিত মৃত্যুর ক্রমপঞ্জি, এসব করতে ভাল লাগে — সারা জীবন যে শব্দতান্ত্রিক হতে চেয়েছি।
রেজাউল করিম সুমন - ২৯ নভেম্বর ২০১০ (৩:২৩ পূর্বাহ্ণ)
মৃত্যুর কড়ানাড়া-র অনুবাদক বেলাল চৌধুরী।
মাসুদ করিম - ১০ এপ্রিল ২০১১ (২:১৮ অপরাহ্ণ)
গত বুধবারে জনকণ্ঠে বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর লিখেছেন
বিস্তারিত পড়ুন : ভিজে বারুদ কবে বিস্ফোরিত হবে।
মাসুদ করিম - ২০ জুলাই ২০১১ (৭:৫৬ অপরাহ্ণ)
খালেদা জিয়ার কাছে গণতন্ত্র কী, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর লিখছেন
বিস্তারিত পড়ুন এখানে।
মাসুদ করিম - ৮ আগস্ট ২০১১ (১:০৯ পূর্বাহ্ণ)
০৬ আগস্ট ২০১১-এর দৈনিক সংগ্রামের খবরে কিন্তু আল্লাহর দরবারে দোয়া প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার আয়ু বা স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশেষভাবে কিছু চাওয়ার কথা উল্লেখ নেই। অন্য অনেক পত্রিকায় আছে কিন্তু সংগ্রামে নেই।
মাসুদ করিম - ৩০ অক্টোবর ২০১১ (৮:৪৩ পূর্বাহ্ণ)
খালেদা জিয়া তো আকণ্ঠ মুসলমান। কিন্তু গত বৃহষ্পতিবার ময়মনসিংহের মঞ্চে তাকে কেমন ভাইফোঁটা বা ভ্রাতৃদ্বিতীয়ায় (একটু আগাম হয়ে গিয়েছিল,আসলে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া ছিল পরের দিন শুক্রবার) পেয়ে বসেছিল : তার সেদিনের বক্তৃতায় তিনি অনবরত বলছিলেন ‘প্রিয় ভাইয়েরা’ শুধু মনের ভুলে বক্তৃতার মাঝামাঝি দুবার এর সাথে ‘প্রিয় বোনেরা’ বলেছিলেন। ভাইদেরকে দিয়ে তার বিশেষ কর্মযজ্ঞ আছে, ভাইফোঁটা দিয়ে তাদেরকে কাছে টানতে চাইছেন। বাংলার ভাইয়েরা কি তাদের আকণ্ঠ মুসলমান বোনের এই হিঁদুয়ানি ভ্রাতৃমঙ্গলকামনায় তার পাশে গিয়ে দাঁড়াবেন?
মাসুদ করিম - ১৪ নভেম্বর ২০১১ (৬:২১ অপরাহ্ণ)
কামাল লোহানী, খালেদা জিয়ার বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের দল, খালেদার এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে খালেদা ও জিয়ার মুক্তিযুদ্ধ কেমন ছিল তা যেমন আমাদের জানিয়েছেন তেমনি এই ‘মাদাম’ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিয়েছেন তার ব্যক্তিগত ভাণ্ডার থেকে।
জনকণ্ঠে কামাল লোহানীর লেখাটি বিস্তারিত পড়ুন : বলিহারী মাদাম খালেদা জিয়া!
মাসুদ করিম - ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২ (১২:০৯ পূর্বাহ্ণ)
স্বদেশ রায় লিখছেন
লিন্ক : প্রতিহিংসার ধুয়া তুলে বেগম জিয়া ফের যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে চাচ্ছেন।
মাসুদ করিম - ২ মার্চ ২০১২ (৫:৫২ অপরাহ্ণ)
খালেদা জিয়া মদ্যপান করেন, শেখ হাসিনা সহ অনেকে এটাকে খুব খারাপ চোখে দেখে, কেন দেখে তারাই জানে। পরিমিত মদ্যপান শরীরের জন্য ভাল। কিন্তু তার মানে এনয় যে একবারে মদ্যপান না করা ভাল নয়। খারাপ আসলে মদ্যপানকে খারাপ চোখে দেখা। কিন্তু তার চেয়েও খারাপ অতিমাত্রায় মদ্যপান করা। কেউ কি সত্যিই জানেন খালেদা জিয়া কী মাত্রায় মদ্যপান করেন? তবে তার মুখচোখ হাঁটুর অবস্থা দেখে মনে হয় তিনি ইয়েলেৎসিনের চেয়ে কোনোভাবেই কম মাত্রায় মদ্যপান করেন না। তাকে দেখলে কেন জানি আমার খালি ইয়েলেৎসিনের কথা মনে হয়, কেন মনে হয় আমি জানি না।
মাসুদ করিম - ১২ নভেম্বর ২০১২ (১০:২৭ পূর্বাহ্ণ)
জিয়াপূজক অবঃ ব্রিগেডিয়ার দেখি খালেদার চীনের ড্রাগন ও মূলত দিল্লির দরবার প্রীতিতে নাখোশ। তিনি জিয়া ছাড়া আর কেউই ঠিক কূটনীতি বোঝেন বলে মনে করেন না। ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম আবদুল হাফিজ শেখ মুজিবকে পাকিস্তানিদের চোখেই দেখেন এবং আবেগসর্বস্ব সত্তা ছাড়া কিছুই ভাবেন না বলেই মনে হল। বড় বড় পদপাড়া দেয়া এরকম আরো কত রাজনীতি ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অবঃ বর্তঃ ব্রিগেডিয়ার যে আছে আমাদের!
মাসুদ করিম - ১৪ নভেম্বর ২০১২ (১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ)
অমিত বসু, পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক ‘আজকাল’এর উত্তর সম্পাদকীয় আয়োজনে বাংলাদেশ নিয়ে যিনি গত কয়েক বছর ধরে লিখছেন,গতকাল তার দিক থেকে তার কথাগুলো বলেছেন চমৎকারভাবে। বাকিটা ভবিষ্যতের হাতে। তিনি খালেদার শারীরিক মানসিক পরিস্থতির যেকথা তুলেছেন রাজনীতিতে সেপ্রসঙ্গটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
ঠিক কী চান খালেদা? ১/৪
ঠিক কী চান খালেদা? ২/৪
ঠিক কী চান খালেদা? ৩/৪
ঠিক কী চান খালেদা? ৪/৪
মাসুদ করিম - ২৯ নভেম্বর ২০১২ (১১:৪১ অপরাহ্ণ)
কঠিন সময়ে কঠিন সব বাক্য। সবগুলোই রেকর্ডে রাখার মতো।
মাসুদ করিম - ৩১ জানুয়ারি ২০১৩ (৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ)
কেন বিএনপি জামাতের নিস্তার নেই, তার অননুকরণীয় ইতিহাস রাজনীতির ঘনসংবদ্ধ শৈলীতে জনকণ্ঠে তার নিয়মিত কলামে বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর লিখেছেন একটি অবশ্যপাঠ্য টেক্সট।
মাসুদ করিম - ১৭ আগস্ট ২০১৮ (৩:৫৯ অপরাহ্ণ)
আট বছর আগে আমি লিখেছিলাম
মাসুদ করিম - ১৯ আগস্ট ২০১৮ (১০:৪৮ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২১ ডিসেম্বর ২০২১ (৩:৪০ পূর্বাহ্ণ)
তারেক-কোকোর হাত ধরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন খালেদা জিয়া: ফখরুল
https://bangla.bdnews24.com/politics/article1987317.bdnews
দুই শিশু সন্তান তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর হাত ধরে খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার বিকালে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, তাকে ‘অন্যায়’ ও ‘বেআইনিভাবে মিথ্যা মামলায়’ কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে আওয়ামী লৗগ ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ শক্তিতে পরিণত হয়েছে।
“কারণ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এদেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে দুই শিশুর হাত ধরে, আজকে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর হাত ধরে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।”
খালেদা জিয়া ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন দাবি করে সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে আপনারা তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রেখেছেন। এখন তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়াই করছেন, মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।”
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের ক্ষণে দেশের যেসব উন্নয়ন হয়েছে বলে সরকার দাবি করছে, তার সবটাকে খারিজ করে দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই ৫০ বছরে গরিব আরও গরিব হয়েছে। এখানে কিছুসংখ্যক আওয়ামী লীগের সহায়তাপুষ্ট, মদদপুষ্ট কিছু বড়লোক আরও ধনী হয়েছে।
“আজকে আমাদের দেশের কৃষকেরা তারা তাদের পণ্যের দাম পাচ্ছে না, শ্রমিকেরা তাদের শ্রমের ন্যায্য মজুরি পাচ্ছে না।”
মহানগর নাট্যমঞ্চে বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আলোচনা সভার প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, মহানগর দক্ষিনের রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের আমিনুল হক, যুব দলের সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, কৃষক দলের হাসান শহিদুল ইসলাম বাবুল, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব বক্তব্য দেন।
মাসুদ করিম - ২১ ডিসেম্বর ২০২১ (৪:১৩ অপরাহ্ণ)
খালেদা জিয়া পরবর্তী বিএনপির ভবিষ্যত
https://opinion.bdnews24.com/bangla/archives/68290
বিএনপি তার ইতিহাসের সবচেয়ে ক্রান্তিলগ্ন পার করছে বর্তমান সময়ে। ১/১১ এর পর থেকে বিএনপির রাজনৈতিক সংকটে নিপতিত হওয়ার সূত্রপাত। দিন যত গেছে সংকটতো কাটেইনি বরং সময়ের সাথে সাথে তা আরো ঘনীভূত হয়েছে।
সমস্ত সংকট এবং নানাবিধ চাপ সত্ত্বেও যার ওপর মানসিকভাবে নির্ভর করে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থেকেছেন, তিনি হলেন দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এক সামরিক অভ্যুত্থানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বেগম জিয়া বিএনপিতে যোগ দেন।
জিয়া নিহত হওয়ার পর দলে নেতৃত্বের সংকট তৈরি হয়। একই সাথে শুরু হয় নানাবিধ উপদলীয় কোন্দল। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ১৯৮৪ সালের ১০ মে খালেদা জিয়াকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলের চেয়ারপার্সন নির্বাচিত করা হয়। সেই সময় থেকে খালেদা জিয়ার অনেকটা একক নির্দেশনা ও পরিচালনায় দলটি পরিচালিত এবং বিকশিত হয়েছে।
খালেদা যখন দলের প্রধান হন তখন তিনি বিএনপির মত একটি প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দিতে পারবেন কিনা- এ প্রশ্ন অনেকের মধ্যেই জেগেছিল। এমনকি বিএনপির কিছু সিনিয়র নেতা সেসময় প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ খালেদা জিয়াকে সামনে রেখে দলের নেতৃত্ব নিজেদের হাতে রাখতে পারবেন বলে মনে করেছিলেন।
খালেদা জিয়া এমন একটা সময়ে দলের প্রধান হন যখন দেশে সামরিক শাসন চলছে। বিএনপির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আব্দুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করেছেন। বিভিন্ন দলছুট রাজনীতিবিদ এবং কিছু সুবিধাবাদী ব্যক্তি নিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতার কেন্দ্রে বসে গড়ে তোলা এ দলটি জিয়ার অনুপস্থিতিতে টিকে থাকবে কিনা, এ প্রশ্ন তখন বিদগ্ধজনদের মনে।
দলের প্রধান হওয়ার সাথে সাথেই খালেদা জিয়ার সামনে চ্যালেঞ্জ হাজির হয় বিএনপিকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে নিয়ে যাওয়া। এরশাদ প্রথমে ভেবেছিলেন, গৃহবধু পটভূমি থেকে উঠে আসা খালেদার পক্ষে বিএনপির মত একটি দলকে নিয়ে—যে দলে সুবিধাবাদী নেতাকর্মীদের একটা উল্লেখযোগ্য অবস্থান রয়েছে- তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করা সম্ভব হবে না।
জিয়ার পথ ধরে এরশাদও বিএনপিসহ অন্যান্য দল থেকে নেতাকর্মী নিয়ে এসে দল গঠনের উদ্যোগ নেন। এ প্রক্রিয়ায় মওদুদ আহমেদসহ বিএনপি এবং তার অঙ্গসংগঠনের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মী এরশাদের সাথে হাত মেলান। অন্য যেকোন রাজনৈতিক দলের চেয়ে বিএনপি থেকেই বেশি নেতাকর্মী এরশাদের দলে যোগ দেন।
এ সমস্ত কিছু বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করে। জিয়াউর রহমান নিহত হওয়া এবং সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর ফলে বিএনপির নেতাকর্মীরা এমনিতেই ছিলেন মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। এর সবকিছু এরশাদকে একটা মানসিক স্বস্তি এনে দিয়েছিল এই ভেবে যে, অন্তত বিএনপির পক্ষে খালেদার নেতৃত্বে আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হবে না।
এ ধরনের একটি দলকে নিয়েই খালেদা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৫ দলের সাথে যুগপৎ এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সামিল হন। ১৯৮৬ সালে আন্দোলন যখন তুঙ্গে সেই মুহূর্তে হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগ, সিপিবি, ন্যাপ (মো) সহ ১৫ দলীয় জোট থেকে আটটি দল এরশাদ ঘোষিত সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়।
জামায়াতও সেসময় তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে নির্বাচনে অংশ নেয়। তখন জামায়াতের রাজনীতির মূল লক্ষ্য ছিল সেক্যুলার এবং বামপন্থি দলগুলোর কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করা।
সময়টা তখন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ‘শীতল যুদ্ধের’ সময়। জামায়াত তখন জাতীয় রাজনীতিতে সিপিবিকে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে। ফলে সিপিবি যেহেতু নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এ বিবেচনায় এবং সেক্যুলার বামপন্থি দলগুলোর সাথে পাশাপাশি বসার কথা চিন্তা করে জামায়াত নির্বাচনে অংশ নেয়।
আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য প্রধান রাজনৈতিক দল নির্বাচনে চলে যাওয়ায় তা বিএনপির ওপর প্রচণ্ড চাপ তৈরি করে। বিএনপি নেতৃত্ব কোন সিদ্ধান্ত নেবেন সেটা বুঝে উঠতে পারছিলেন না। খালেদা তখন একক সিদ্ধান্তে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন এবং যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তাদেরকে ‘জাতীয় বেইমান’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বিএনপি নেতৃত্ব এজন্য ওসময় তাকে ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে অভিহিত করে।
বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও নির্বাচন প্রতিহত করতে পারেনি। তবে বিএনপির নির্বাচন বর্জন রাজনীতিতে খালেদার একটা ভিন্ন ইমেজ তৈরি করে—যেটা পরবর্তীতে একটা লম্বা সময় তাকে রাজনীতিতে বিশেষ সুবিধা দেয়।
নির্বাচন পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ, সিপিবিকে বাদ দিয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলন পরিচালনা করতে গিয়ে বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা স্পষ্ট হয়। বিএনপি নেতৃত্বাধীন সাত দলীয় জোটের বাকি ছয়টি দল ছিল সাইনবোর্ড সর্বস্ব। এছাড়া খালেদা সাথে পেয়েছিলেন রাশেদ খান মেনন, নির্মল সেনের নেতৃত্বে ১৫ দল থেকে নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়ে বের হয়ে আসা পাঁচটি ছোট বাম দলকে। কিন্তু এদেরকে নিয়ে খালেদার পক্ষে এককভাবে এরশাদবিরোধী আন্দোলনকে পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।
আওয়ামী লীগ, সিপিবিসহ যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল তারা ১৯৮৭ সালে সংসদ থেকে পদত্যাগ করে মাঠের আন্দোলনে যোগ দিলে আন্দোলনে আবার গতি পায়। এরই ধারবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে সামরিক শাসক এরশাদের পতন ঘটে।
এরশাদ সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট মওদুদ আহমদ তার চলমান ইতিহাস: জীবনের কিছু সময় কিছু কথা, ১৯৮৩-১৯৯০ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন (পৃষ্ঠা ৪৮০-৪৮১), রাষ্ট্রীয় অন্য যেকোন প্রতিষ্ঠানের চেয়ে সেনাবাহিনীর ওপর নির্ভর করে এরশাদ দেশ চালিয়েছেন। আন্দোলন তুঙ্গে উঠলে জেনারেলরা এরশাদের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেন। ফলে পদত্যাগ করা ছাড়া এরশাদের সামনে আর কোন বিকল্প খোলা ছিল না।
আন্দোলনের শেষ দিনগুলিতেও বিএনপি নেতা ওবায়দুর রহমানসহ ছাত্রদলের কিছু শীর্ষ নেতা এরশাদের দলে ভিড়েন। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মী জাতীয় পার্টিতে চলে যাওয়ায় সাংঠনিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়া বিএনপির সামনে এরশাদ পতনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের চ্যালেঞ্জ হাজির হয়।
সেসময় অনেকের মাঝে এ ধারণা জন্মেছিল যে বিএনপির পক্ষে বোধহয় নির্বাচনে জয় লাভ করা সম্ভব হবে না। বিএনপির নেতাদের অনেকে নার্ভাস ছিলেন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে খালেদার নেতৃত্বে বিএনপি ১৪০টি আসনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। এ বিজয় খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ করে দেয়।
খালেদার নেতৃত্বে বিএনপি প্রথম ক্ষমতা কেন্দ্রের বাইরে থেকে রাজনীতির চর্চা করে সামরিক শাসন বিরোধী সফল আন্দোলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। তার নেতৃত্বেই প্রথমবারের মত ক্ষমতার বাইরে থেকে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়। বস্তুত এ দুটি বিষয় জিয়ার পরিচয় ছাপিয়ে নিজস্ব ইমেজে খালেদা জিয়ার নেত্রী ইমেজ নির্মাণ করে।
খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী হন তখন বিশ্বে নারী রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান হয়েছেন হাতে গোণা মাত্র কয়েকজন। নারী-পুরুষ সমাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিদার পাশ্চাত্যের অনেক দেশই তাদের রাষ্ট্র পরিচলানা করার জন্য যোগ্য নারী নেতৃত্ব গড়ে তুলতে পারেনি।
বাংলাদেশের মত অর্থনৈতিকভাবে পশ্চাৎপদ এবং সামাজিকভাবে অতীব রক্ষণশীল মুসলিম প্রধান দেশে একজন নারীকে সরকার প্রধান হিসেবে মেনে নেওয়ার মানসিকতা তখনো জনগণের একটা উল্লেখযোগ্য অংশের মাঝে গড়ে উঠেনি। এমনকি খালেদা জিয়া রাজনীতিতে আসার আগে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মীকে শেখ হাসিনার দলীয় প্রধান হওয়ার বিষয়টা নিয়ে কটাক্ষ করতে দেখা যেত। ‘ইসলামপন্থি’ দলগুলো নারী নেতৃত্ব ‘হারাম’ বলে বিএনপির সাথে তখনো জোট বাঁধেনি।
এমতাবস্থায় খালেদা জিয়া সরকার প্রধান হয়ে প্রমাণ করে দেন যে, দরিদ্র মুসলিম প্রধান দেশ হলেও বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী নারীকে সরকার প্রধান হিসেবে গ্রহণ করার মানসিকতা অর্জন করেছে—যা তখন পশ্চিমের উদার গণতান্ত্রিক সেক্যুলার রাষ্ট্রের অনেককেই বিস্মিত করে।
শুধু রাজনৈতিক রক্ষণশীলতা নয়, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি সামাজিক রক্ষণশীলতাতেও ধাক্কা মারেন। সনাতন ধর্ম প্রভাবিত সংস্কৃতির প্রভাবে আবহমান কাল ধরে শ্রেণি-নির্বিশেষে বাংলাদেশের বিধবা নারীরা সাদা শাড়ি পরতেন। খালেদা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সে ঐতিহ্য ভেঙ্গে ফেলেন। সেসময় সমালোচকদের নানা সমালোচনা উপেক্ষা করে তিনি রঙিন শাড়ি পড়া শুরু করেন। ধীরে ধীরে যার একটা সুদূরপ্রসারী প্রভাব বাংলাদেশের সমাজ কাঠামোতে পড়ে–ক্রমশ বিধবা নারীদের সাদা শাড়ি পড়ার প্রথার বিলুপ্তি ঘটে।
বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার সামনে রাজনৈতিক নেত্রী থেকে ‘Stateswoman’ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা হাজির হয়। কিন্তু বিষয়টা তিনি উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হন। শুরুতেই তিনি বিতর্কিত ব্যক্তি আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করে বিতর্কের জন্ম দেন।
এসময় খালেদা জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে উঠা প্রবল আন্দোলনের সম্মুখীন হন এবং এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হন। কিন্তু সবচেয়ে বড় ভুলটা তিনি করে বসেন- মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের অসম্মতি জানানোর মধ্যে দিয়ে।
১৯৯১ সালে অনেকেই যখন মনে করছিলেন সাংগঠনিকভাবে দুর্বল বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারবে না, তখন জনগণের একটা বড় অংশ বিএনপিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে এসে খালেদাকে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্মান এনে দেয়। কিন্তু ক্ষমতায় এসে তিনি সে জনগণের ওপর আস্থা রাখতে পারেননি।
প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় টিকে থাকাকে খালেদা ‘Stateswoman’ হওয়ার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করলেন। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ, বামপন্থি এবং জামায়াত যুগপৎভাবে ভিন্ন ভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে আন্দোলন গড়ে তোলে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে যে প্রশাসনের উপর নির্ভর করে তিনি ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন, সে প্রশাসন তার প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলে, এরশাদের মত তার সরকারের পতন ঘটে। এর মধ্যে দিয়ে তিনি অনেকটা পতিত এরশাদের কাতারে নেমে আসেন।
ক্ষমতা হারানোর পর খালেদা যে সামরিক শাসক এরশাদের অধীনে নির্বাচন না করার জন্য ‘আপসহীন’ খেতাব পান, সেই এরশাদের সাথেই ৪ দলীয় জোট গড়ে তোলেন। এতে যে তার ‘আপসহীন’ ইমেজ প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে সেটা তিনি বিবেচনায় নেননি। যে জামায়াত তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য আন্দোলন করেছিল তাদের সাথেও তিনি জোটবদ্ধ হন। পরবর্তীতে অন্যান্য ‘ইসলামপন্থি’ দলগুলোর সাথেও বিএনপির নৈকট্য বাড়ান।
এর মধ্য দিয়ে ‘ইসলামপন্থি’ দলগুলোর নৈতিক দেউলিয়াত্ব জনগণের সামনে স্পষ্ট হয়। কেননা যারা এতদিন নারী নেতৃত্ব ‘হারাম’ বলে আসছিলেন, সে-ই তারাই নারী নেত্রীর অধীনে রাজনীতি করতে সম্মত হন। কিন্তু খালেদার ৯/১১ পরবর্তী আন্তর্জাতিক রাজনীতির বাস্তবতা বুঝতে পারার ব্যর্থতা থেকে ‘ইসলামপন্থি’ দলগুলো সাথে জোটবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত বিএনপির সাথে পশ্চিমা দুনিয়ার দূরত্ব তৈরি করে। তাইওয়ানের সাথে ব্যবসায়িক সূত্র ধরে দূরত্ব তৈরি হয় বিএনপির দীর্ঘদিনের মিত্র চীনের সাথেও।
খালেদা জিয়ার ক্ষমতার দ্বিতীয় মেয়াদে প্রথম মেয়াদের তুলনায় দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার ঘটে। পুত্র তারেক রহমানকে রাজনীতিতে আনার ফলে দলের মধ্যে সমান্তরাল নেতৃত্ব তৈরি হয়, যা খালেদার নেতৃত্বকে দুর্বল করে। এ সময়কালে ‘ইসলামপন্থি’ সন্ত্রাসবাদের ব্যাপক উত্থান, ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা খালেদা এবং বিএনপির রাজনীতিকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তদুপরি দ্বিতীয় মেয়াদেও তিনি প্রথম মেয়াদের মত অনেকটা একই ধরনের ভুল করে বসেন।
একটু ভিন্নভাবে দলীয় ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা রেখে নির্বাচন করার উদ্যোগ নেন খালেদা। ফলে তার আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত জেনারেল মঈনের নেতৃত্বে ১/১১ এর ঘটনা ঘটে, যার খেসারত বিএনপিকে এখনো বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। যে দলকে খালেদা এরশাদ শাসনামলের দুঃসময় থেকে টেনে তুলে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেন, জাতীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির গতিপ্রকৃতি উপলব্ধি করতে পারার ব্যর্থতার ফলে সে দল বিএনপিকেই তিনি তার ইতিহাসের সবচেয়ে সংকটময় অবস্থায় নিপতিত করেন।
এরশাদের হাতে ক্ষমতাচ্যুতি ঘটার পর দলকে টেনে তুলতে পারলেও ১/১১ পরবর্তী সংকট থেকে খালেদা দলকে আর বের করে আনতে পারেননি। ২০১৪ সালের বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনের পরে তিনি শেখ হাসিনার মত আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটাতে পারেননি।
জীবনের একটা পরিণত সময়ে এসে এসময়ে যেন তিনি ক্লান্তি বোধ করছিলেন। এরশাদ আমলের মত দীর্ঘ আন্দোলন, সংগ্রাম গড়ে তোলার মত ধৈর্য অথবা শারীরিক বা মানসিক কোন অবস্থাই যেন তার ছিল না। তাই অনেকটা যেন শর্টকাট পথ হিসেবে জামায়াতের সাথে মিলে দুই দুইবার পেট্রোল বোমা নির্ভর সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনে দলকে নিয়ে যান-যার লক্ষ্যবস্তু করা হয় সাধারণ আমজনতাকে।
অধিকাংশ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়ে যাওয়ার পর জামায়াত জোটে নিস্ক্রিয় হয়ে যায়। খালেদা বুঝতে পারেন গণতন্ত্রের জন্য নয়, সুবিধাবাদী জামায়াত বিএনপির জনসমর্থনের শক্তিকে ব্যবহার করেছে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে শনাক্ত তাদের দলীয় ব্যক্তিদের রক্ষা করার জন্য। জামায়াতের কৌশল বোঝার ব্যর্থতার চরম মাশুল দিতে হয় বিএনপিকে।
সরকারের প্রবল চাপের মুখে পড়ে দল অনেকটা নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় খালেদা চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান। অনেকে ভেবেছিলেন তিনি হয়ত আর ফিরে আসবেন না। কিন্তু খালেদা দেশে ফিরে এসে তার বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির মামলার রায় মোকাবেলার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি হয়ত ভেবেছিলেন, যে দলের পেছনে তিনি তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় ব্যয় করেছেন, যাকে অবলম্বন করে জিয়া নিহত হওয়ার পর দলটি এত দীর্ঘ পথ চলেছে—সে দলের নেতাকর্মীরা তিনি গ্রেপ্তার হলে আর যাই হোক সর্বস্ব দিয়ে মাঠে নামবেন, তাকে মুক্ত করার জন্য।
এ আত্মবিশ্বাস থেকেই খালেদা দেশে ফিরে আসেন। তিনি হয়ত ধরে নিয়েছিলেন একমাত্র তার গ্রেপ্তারের মধ্যে দিয়েই সরকার বিরোধী আন্দোলন দাঁড়াবে—বিএনপির নেতৃত্বে জনগণ হয়ত তার মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নামবে। কিন্তু তিনি অবাক হয়ে দেখলেন, জামায়াত নেতাদের মুক্তির দাবিতে যে দল এত রক্ত ঝরালো, তার নিজের অতি প্রিয় সেই দল তার মুক্তির জন্য কিছু লোক দেখানো ছাড়া- এক অর্থে কোন আন্দোলনই করল না।
শুধু তাই নয়, তিনি যে সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না বলেছিলেন, তিনি জেলে যেতে না যেতেই বিএনপির নেতারা দলকে সেই সরকারের অধীনেই নির্বাচনে নিয়ে যায়। এ সমস্ত কিছুই জীবন সায়াহ্নে এসে খালেদার ওপর প্রচণ্ড মানসিক চাপ সৃষ্টি করে।
গত ৩৭ বছর ধরে বিএনপির সমস্ত কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে খালেদা জিয়াকে কেন্দ্র করে। তাকে আঁকড়ে ধরেই বিএনপি রাজনীতির নানা উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। সেই তিনি এখন গুরুতর অসুস্থ।
বেশ অনেকদিন ধরে খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড কিছুদিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে তিনি লিভার সিরোসিসসহ নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত। খালেদা জিয়াকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার মত প্রযুক্তি বাংলাদেশে না থাকার ফলে তারা তাকে দ্রুত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য অথবা জার্মানিতে পাঠানোর সুপারিশ করেছে।
দীর্ঘ সময় ধরে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবল চাপের মুখে থাকা বিএনপি তাদের দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানোর ইস্যুকে কেন্দ্র করে আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এটিও আরো অনেক উদ্যোগের মতই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। জনগণের বড় অংশকে সম্পৃক্ত করতে পারা তো দূরের কথা, দলটি তার মাঠ পর্যায়ের সব নেতাকর্মীদেরই এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাস্তায় নামাতে পারেনি।
জনগণের পালস বুঝতে না পারা বা জনগণের মনোজগতকে ঠিক মত পড়তে না পারার বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বের যে প্রবল সীমাবদ্ধতা, সেটি আন্দোলন গড়ে তুলতে পারার ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে আরেকবার তারা স্পষ্ট করে।
খালেদা জিয়া যে হাসপাতালের চিকিৎসা নিচ্ছেন, অর্থাৎ এভারকেয়ার, বাংলাদেশের উন্নয়নের নানা জয়গান গাওয়া সত্ত্বেও চরম বাস্তবতা হচ্ছে, এ ধরনের হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সামর্থ্য দেশের ৯০ শতাংশ জনগোষ্ঠীরই নাই। ভিআইপি কেবিনতো দূরের কথা, এ হাসপাতালটির সাধারণ কেবিনে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার সামর্থ্য দেশের ৯৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীর নেই।
বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ক্ষেত্রেও পরিসংখ্যান দুটি কম-বেশি একই রকম। অপরদিকে, দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদ, আমলা এবং ব্যবসায়ী-পুঁজিপতিদের এভারকেয়ারের মত হাসপাতালে ভরসা রাখতে না পারাটা দেশের আমজনতার স্বাস্থ্য সেবার মানের চিত্র আসলে কতটা করুণ, সে দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করে।
এখন প্রশ্ন হলো, খালেদা জিয়া পরবর্তী সময়ে বিএনপির রাজনীতি কি টিকে থাকবে? বিএনপি আওয়ামী লীগ, জামায়াত বা সিপিবির মত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠা দল নয়। বিএনপি গঠন করা হয়েছে ক্ষমতার কেন্দ্রে বসে, কিছু সামরিক/বেসামরিক আমলার সহায়তা নিয়ে। এ কারণে বিএনপি বিরোধী রাজনীতি যারা করেন তারা বিএনপিকে নিয়ে একটি মিথ তৈরি করেন।
মিথটি হল বিএনপি গঠিত হয়েছে- “উত্তরপাড়া বা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেনাবাহিনীর সমর্থন নিয়ে’। বিএনপির পিছনে সেনা আমলাতন্ত্রের আশির্বাদ রয়েছে।” বিএনপির রাজনীতির বিরোধিরা এ মিথের জন্ম দিলেও এর সবচেয়ে বেশি ভোক্তা কিছুদিন আগ পর্যন্ত ছিল বিএনপির নেতাকর্মীরা। অবশ্য সম্প্রতি, বিশেষত ১/১১ এর পর থেকে আস্তে আস্তে তাদের অনেকে বুঝতে পারছেন বিষয়টা সঠিক নয়। এটা তাদের এতদিন যাবত গড়ে উঠা মনোজাগতিক নির্ভরতাকে ধাক্কা দিলেও সেটি তাদের রাজনীতির মূল স্পিরিটকে নষ্ট করেনি।
কিছু সামরিক আমলার সহায়তায় জিয়ার রাজনৈতিক দল গঠন অন্য সেনা সদস্যদের ক্ষুদ্ধ করে। যারা জিয়ার এ প্রক্রিয়ার প্রতি ক্ষুদ্ধ হয়েছিলেন তারা কেবল কোনও একটি বিশেষ মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন না। ক্ষুদ্ধ হওয়া অফিসারদের মধ্যে একদিকে যেমন ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীরা, তেমনি ছিলেন পাকিস্তান ফেরতরা। একই সাথে ছিলেন মুসলিম জাতীয়াবাদ বা ‘ইসলামপন্থা’য় বিশ্বাসীরা এবং জাসদ ধারার বামপন্থিরা। এমনকি পেশাগত ঈর্ষা থেকেও অনেকে জিয়ার প্রতি ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন। তারা সকলেই চাচ্ছিলেন জিয়াকে ক্ষমতাচ্যুত করতে। ফলে জিয়ার বিরুদ্ধে ১৯টির ক্যু সংগঠিত হয়—যার ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় সহস্রাধিক সেনা সদস্য নিহত হন। ২০ তম সেনা অভ্যুত্থানে জিয়া নিহত হন।
জিয়ার স্ত্রী খালেদা দুই দুইবার ক্ষমতাসীন হলেও রহস্যজনক কারণে জিয়া হত্যার বিচার বা এর তদন্তের কোন উদ্যোগ নেননি। বিএনপির নেতাকর্মী, বুদ্ধিজীবীদের মাঝে এ নিয়ে কোন আগ্রহ দেখা যায়নি। ১৫ অগাস্টের বিয়োগান্তক ঘটনা যেমন দেশি-বিদেশি নানা গবেষক নানা আঙ্গিক থেকে বোঝার চেষ্টা করেছেন, জিয়া হত্যাকাণ্ড নিয়ে সেটা কারো মাঝে পরিলক্ষিত হয়নি। এর মধ্যে দিয়ে বিএনপি সংশ্লিষ্ট বুধিজীবীদের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং নৈতিক দুর্বলতা ফুটে উঠে।
চলমান ইতিহাসে মওদুদ আহমদ লিখেছেন (পৃঃ ২১৪), “জিয়া হত্যার বিচার বা সেই হত্যার পেছনে আর কোন ষড়যন্ত্র ছিল কিনা সেটার আর কোন সুরাহা হয়নি।” ফলে এর সাথে এরশাদ সংশ্লিষ্ট ছিলেন কিনা সেটা আর প্রমাণ করা যায়নি। সেটা করার মতো উদ্যোগ নেওয়ার সাহস এবং মেধা দুটোই বিএনপির মাঝে প্রবল ভাবে অনুপস্থিত। আর এ সাহসিকতার অভাবের ফলেই বিএনপিকে এরশাদ মনোনীত বিচারপতি সাত্তারকে তাদের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসেবে মেনে নিতে হয় (মওদুদ আহমদ, পৃঃ ২১৩)।
সাত্তার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে এরশাদ তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। আবার খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামলের শেষ দিকে জেনারেল নাসিমের অসন্তোষের বহির্প্রকাশ জাতি প্রত্যক্ষ করে। আবার তার দ্বিতীয় ক্ষমতার মেয়াদকালের শেষে জেনারেল মঈন কর্তৃক ১/১১ এর ঘটনা ঘটে। এর থেকে যে বিষয়টা স্পষ্ট হয় সেটা হলো, সামরিক/বেসামরিক আমলাতন্ত্রের সমর্থন ছাড়াও বিএনপি নিজের পায়ে মূলধারার দল হিসেবে টিকে থাকতে সক্ষম।
আগামী দিনেও বিএনপি মূলধারার দল হিসেবে টিকে থাকবে কিনা- এটি নির্ভর করছে দলটি যে রাজনৈতিক মতাদর্শ অনুসরণ করছে সমাজ কাঠামোয় এর প্রভাব কতটুকু তার উপর। বিএনপির রাজনৈতিক মতাদর্শের উৎস মুসলিম জাতীয়তাবাদ। ভারতীয় উপমহাদেশে জিন্নাহর হাত ধরে মুসলিম জাতীয়তাবাদের জন্ম। পরবর্তীতে মাওলানা ভাসানী এবং জুলফিকার আলী ভুট্টো মুসলিম জাতীয়তাবাদের সাথে তৎকালীন প্রভাবশালী ধারণা সমাজতন্ত্রের মিশ্রণ ঘটিয়ে ইসলামী সমাজতন্ত্রের কথা বলেন।
জিন্নাহ ছাড়াও ভাসানী এবং ভুট্টোর তাত্ত্বিক প্রেরণার উৎস আরব জাতীয়তাবাদী সিরিয়ার দার্শনিক মিশেল আফলাক, যিনি বাথ সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্ম দেন। এ মতাদর্শের মূল বিষয় হলো ইসলামী পরিচয় এবং রেটোরিক আরব জাতীয়তাবাদী (এবং সমাজতান্ত্রিক) আন্দোলনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আফলাকের মতে, ইসলাম হচ্ছে মুসলমানদের জন্য ধর্ম, কিন্তু এটি একই সাথে ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত আরববাসীর পরিচয় এবং সংস্কৃতির অংশ।
এ ধারণার বিশ্বাসীরা রাষ্ট্র এবং সমাজে শরীয়া আইন চান না, শুধু কিছু ইসলামিক রেটোরিক, প্রত্যয় এবং শ্লোগান ব্যবহার করতে চান। ক্ষেত্র বিশেষে ইসলামকে জাতিগত পরিচয়ের অন্তর্ভুক্ত করতে চান। একই সাথে তারা জনমানস এবং জীবনযাপন প্রক্রিয়ার অনেকটা পশ্চিমা ধারার মত আধুনিকায়নও চান।
জিন্নাহ এবং ভাসানীর হাত ধরে মুসলিম জাতীয়তাবাদের যে বিবর্তন সেটির আরেকটু আধুনিক সংস্করণ দাঁড় করান জিয়াউর রহমান তার ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে’র ধারণায়—যেখানে ভূ-কেন্দ্রিক জাতীয়াতাবাদের কথা বলা হলেও কিছু ধর্মভিত্তিক রেটোরিক, প্রত্যয় এবং শ্লোগান এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে সমাজ কাঠামোয় এ ধরনের চিন্তার একটা শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে। বাংলাদেশের সেক্যুলার আন্দোলন এ ধরণের চিন্তাধারাকে সমাজ কাঠামো থেকে দূর করতে তো পারেইনি, বরং তাদের অনেকেই এ চিন্তাধারা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন, বা এ চিন্তাধারার সাথে আপস করেছেন। এ সূত্র ধরে আওয়ামী লীগের মাঝেও ধর্মভিত্তিক শ্লোগান এবং প্রত্যয় ব্যবহারের ঝোঁক আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। আবার “ইসলামপন্থিরা” মনে করেন এ ধারার প্ল্যাটফর্মের উপস্থিতি তাদের রাজনীতির বিকাশের সহায়ক।
তাহলে দেখা যাচ্ছে সমাজ কাঠামোতে বিএনপির রাজনৈতিক মতাদর্শের একটা প্রভাবশালী অবস্থান রয়েছে। এ মতাদর্শের অনুসারীরা বিএনপিকেই এখন পর্যন্ত এ রাজনীতির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্লাটফর্ম মনে করে আসছে।
নির্ভরযোগ্য রাজনৈতিক প্লাটফর্ম গড়ে উঠে দুই প্রক্রিয়ায়। এর একটি হলো- ক্যারিশমেটিক নেতার নেতৃত্বে জাতীয় পর্যায়ে আন্দোলন গড়ে তোলার সক্ষমতার ওপর। উপমহাদেশে এভাবে গড়ে উঠেছে গান্ধীর হাত ধরে কংগ্রেস, জিন্নাহ নেতৃত্বে মুসলিম লীগ এবং বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে আওয়ামী লীগ।
আর অপরটি হলো- রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। উদাহারণস্বরুপ বলা যায় ইরাকের সাদ্দাম হোসেন, লিবিয়ার গাদ্দাফি এবং সিরিয়ার হাফেজ আল আসাদের কথা। জনপ্রিয়তা অর্জন না করার ফলে এরশাদের জাতীয় পার্টিকে বিএনপির হুবহু নকল করে গড়ে তোলা হলেও নির্ভরযোগ্য প্লাটফর্ম হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনি।
ভবিষ্যতে খালেদার অনুপস্থিতিতে উপরে উল্লিখিত দুটি প্রক্রিয়ার যেকোন একটি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি যে মতাদর্শে বিশ্বাস করে সে ধারার বিকল্প প্লাটফর্ম গড়ে উঠবে না। ফলে বিএনপিই মূলধারার দল হিসেবে থেকে যাবে। যদিও দলে ছোটখাট ভাঙ্গন থেকে শুরু করে নানা মহল থেকে বিকল্প গড়ার প্রক্রিয়া পরিলক্ষিত হতে পারে।
মাসুদ করিম - ২১ ডিসেম্বর ২০২১ (৪:২২ অপরাহ্ণ)
https://twitter.com/urumurum/status/1472608519413063683
<< বিএনপি-র রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণতম হয়ে ওঠার প্রথম শর্ত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ধুমসে অপমান করা।>>
<<মুখ খারাপ করতে চাই না, কিন্তু মুখ খারাপ করতেই হয়, তারেক জিয়া শিশু মুক্তিযোদ্ধা — খালেদা জিয়া প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা — এখন ফখরুল খুঁড়ে বের করতে পারে কিনা দেখা যাক, সেসময় খালেদার পেটে কেউ ছিল কিনা, তাহলে তাকে পেটে মুক্তিযোদ্ধা ঘোষণা করে সে তাফালিং-এর চূড়ায় উঠে যেতে পারত।>>
https://twitter.com/urumurum/status/1473327290910052353
<<খালেদার মৃত্যুর পরেই বিএনপির রাজনীতি নতুন করে জমে উঠবে। এই রাজনীতি জমে উঠতে গিয়ে বিএনপি হয়তো ভাঙ্গবে। সেই ভাঙ্গন কি মুক্তিযোদ্ধা অমুক্তিযোদ্ধা এই হিসেবে ভাঙ্গবে? অমুক্তিযোদ্ধা অংশে ফখরুল থাকবে, তাই খালেদা-তারেক-কোকো মুক্তিযুদ্ধের কুচক্রে কান ঝালাপালা করছে ফখরুল।>>
মাসুদ করিম - ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ (৪:২৫ পূর্বাহ্ণ)
খালেদা জিয়ার বহুল আলোচিত ১০টি অমানবিকতার ইতিহাস
https://www.dhakatv.net/index.htm/975/
খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য মানবিকতার কথা বলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে যে মানবিক রাজনীতির উর্ধ্বে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দেখাতে হবে। এই মানবিক দৃষ্টি দেখিয়ে খালেদা জিয়াকে যেন উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয় সেজন্য শুধু বিএনপি নয় বিভিন্ন সুশীল মহলের দাবি জানাচ্ছে।
কিন্তু মানবিকতার প্রশ্ন যখন আসে তখন স্বাভাবিকভাবেই আসে যে খালেদা জিয়া নিজে কতটা মানবিক ছিলেন? ১০ বছর তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সেসময় তিনি দেশের রাজনীতিতে এবং জনগণের সাথে কতটুকু মানবিক আচরণ করেছিলেন?
খালেদা জিয়ার ১০ বছরের শাসনামলে ১০টি বহুল আলোচিত অমানবিকতার ইতিহাস তুলে ধরা হলো:
১. ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা: ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা সুস্পষ্টভাবে ছিল বিএনপি-জামায়াতের এক মাস্টারপ্ল্যান। আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করা এবং শেখ হাসিনাকে চিরতরে নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য গ্রেনেড হামলার এই ঘৃণ্য ঘটনা হয়েছিল। এটি আজ আদালতের রায়ে প্রমাণিত।
খালেদা জিয়া তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আদালতের রায়ে দেখা যায়, রাষ্ট্রের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করা হয়েছিল সে সময়। খালেদা জিয়া এই গ্রেনেড হামলার পর ন্যূনতম দুঃখ প্রকাশ করেননি বরং তিনি তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনা ‘ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন’ এমন উদ্ভট, অমানবিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেছিলেন।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নয়, বিশ্বের যে কোন দেশের রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনাগুলোর আলোকে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় বিরোধী দলের ওপর চালানো নৃশংসতা ও অমানবিকতার এক জঘন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয় ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনাকে।
[খালেদা জিয়ার বহুল আলোচিত ১০টি অমানবিকতার ইতিহাস]
২. ১৫ আগস্টের ভুয়া জন্মদিন পালন: ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার বিয়োগান্তক দিন। এই দিনে ভুয়া জন্মদিন পালন করেছিলেন খালেদা জিয়া। এবং শুধু ভুয়া জন্মদিন পালন করেই তিনি ক্ষান্ত হননি, ভুয়া জন্মদিনের তিনি বড় বড় কেক কাটার উৎসব করেছিলেন যেন শোকের আবহ নষ্ট হয়।
একজন মানুষ কতটা অমানবিক হলে রাষ্ট্রের স্থপতির শাহাদাৎ দিবসে ভুয়া জন্মদিনের উৎসব করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্থানি সামরিক কর্মকর্তা কর্নেল জানজুয়ার সাথে স্বেচ্ছায় থেকে যাওয়ার কারণে যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে খালেদা জিয়াকে গ্রহণ করেননি তার স্বামী জিয়াউর রহমান।
বঙ্গবন্ধু নিজের মেয়ে বলে স্বীকৃতি দেয়ায় সেই খালেদা জিয়াকে গ্রহণ করে জিয়া। আর তার প্রতিদান খালেদা জিয়া দিয়েছেন ১৫ আগস্টে কেক কেটে! এটিই খালেদা জিয়ার অমানবিকতার আরেকটি উদাহরণ।
৩. অক্টোবরের নির্বাচনের পর সারাদেশে তান্ডব: ২০০১ এর অক্টোবরের সেই ম্যানিপুলেটেড নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী হয় বিএনপি-জামায়াত। এই বিজয়ের পর পরই বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সারাদেশে তাণ্ডব, শুরু করে।
আরো পড়ুনঃ নির্দয়-নৃশংস খালেদার প্রতি আর কতো মানবিক হবে সরকার?
বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং ভোটারদেরকে চিরতরে নির্মূল করার জন্য সশস্ত্র হামলা, আক্রমণ, লুটপাট, দেশত্যাগে বাধ্য করা, ধ-র্ষণ, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। বাংলাদেশের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার ইতিহাসে একটি এটি একটি নৃশংস বড় ঘটনা।
৪. ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের অস্বীকৃতি: ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কেবল সপরিবারে হত্যাই করা হয়নি বরং এই হত্যাকাণ্ডের যেন বিচার না হয় সেজন্য বিচারের পথরুদ্ধ করেছিলেন খুনি মোশতাক এবং জিয়াউর রহমান।
খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে যখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যখন শপথ নেন তখন তার সামনে সুযোগ এসেছিল এই কালো আইনটি বাতিল করার। আওয়ামী লীগ এই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল এর জন্য বিল এনেছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়া এই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলে অস্বীকৃতি জানান। এটি অমানবিকতার আরেকটি জ্বলন্ত উদাহরণ।
৫. যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী করা: বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়া দেশবিরোধী সংগঠন জামায়াত এবং দলের নেতাদেরকে পাশে নিয়েই ২০০১ এর মন্ত্রীসভায় বসেন খালেদা জিয়া। রাজাকার মতিউর রহমান নিজামী এবং রাজাকার আলী আহসান মুজাহিদের মত নরঘাতকদেরকে মন্ত্রী বানানো ছিল মানবতার বিরুদ্ধে এক ধরনের অপরাধ।
৩০ লাখ শহিদ এবং ৬-৮ লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এই রক্তস্নাত পবিত্র বাংলার মাটিতে এই দেশের পতাকা ওড়ানো গাড়িতে চড়ে বেড়িয়েছে তারা। খালেদা জিয়ার অমানবিক কর্মকাণ্ডের এটি আরেক দৃষ্টান্ত।
৬. ১৯৭৫ এর খুনিদের চাকরিতে বহাল: জাতির পিতার হত্যাকারীদেরকে কূটনৈতিক চাকরি দিয়ে পুরো জাতিকে কলঙ্কিত করেছিলেন খালেদা জিয়ার স্বামী জিয়াউর রহমান। আর সেই কলঙ্কের ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন খালেদা জিয়া স্বয়ং। তিনি কেবল খুনিদের চাকরি বহাল রাখেননি বরং তাদেরকে পদোন্নতিও দিয়েছেন।
খালেদা জিয়ার প্রশ্রয়েই খুনিরা সারাদেশে আস্ফালন করে বেড়িয়েছে। এমনকি তারা ভরা জনসভায় দম্ভের সাথে বলেছিল- মুজিবকে হত্যা করেছি, কেউ আমার বা** ছিঁড়তে পারেনি! এর চেয়ে অমানবিক কান্ড আর কী হতে পারে!
৭. ১৯৭৫ এর খুনিদেরকে সংসদে নিয়ে আসা: খালেদা জিয়া জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনিদেরকে সংসদে নিয়ে আসেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে খুনিদেরকে নির্বাচিত করিয়ে আনেন তিনি।
খালেদা জিয়ার কল্যাণে জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনিদেরকে জাতীয় সংসদে বসিয়ে পবিত্র সংসদের অবমাননা করেছিলেন। এটাও একটি অমানবিকতার একটি উদাহরণ।
৮. বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার বন্ধ: ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার প্রচলিত আইনে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু করে। এই বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসে। গদিতে বসেই খালেদা স্ব-উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির পথ বন্ধ করে দেন।
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ তার আত্মজীবনীমূলক লেখায় এ ব্যাপারে নিজের দুঃখ এবং ক্ষোভের কথা অকপটে স্বীকার করেছেন।
৯. শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকান্ড: শাহ এ এম এস কিবরিয়া একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন ডিপ্লোম্যাট এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী ছিলেন। হবিগঞ্জের এক জনসভায় বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা গ্রেনেড হামলা চালায়। একইসাথে নির্বিচারে গুলি চালায়।
শাহ এ এম এস কিবরিয়া যখন সন্ত্রাসীদের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হন তখন সরকারের কাছে একটি হেলিকপ্টার চাওয়া হয়েছিল। হবিগঞ্জে সে সময় চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল অপ্রতুল। তাই গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু খালেদা জিয়া হেলিকপ্টার দিতে সরাসরি অস্বীকৃতি জানান। ফলাফল- জাতি হারায় একজন সূর্যসন্তানকে।
১০. আওয়ামী লীগ নেতা আহসানুল্লাহ মাস্টারকে হত্যা: আওয়ামী লীগের নেতা আহসানুল্লাহ মাস্টারকে গাজীপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করে খালেদা জিয়ার অনুগত বাহিনীর লোকজন। যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান ও তার বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের রংমহল খ্যাত ‘খোয়াব ভবন’- এ বসে।
মূমুর্ষ অবস্থায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসানুল্লাহ মাস্টারকে ঢাকার পথে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হলে রাস্তায় দফায় দফায় বাধা দেয়া হয়। এক পর্যায়ে টঙ্গীতে তাকে বহনকারী গাড়ি আটকে দেয় সন্ত্রাসীরা। এভাবে বাধা দেওয়া না হলে শেষ পর্যন্ত হয়ত আহসানুল্লাহ মাস্টারকে যথাসময়ে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া যেত। তিনি হয়ত বেঁচে থাকতেন। এটিও অমানবিকতার একটি বড় উদাহরণ।
এখানে মাত্র ১০টি ঘটনার কথা বলা হয়েছে। এর বাইরেও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার ওপর নৃশংস ও বর্বরোচিত হামলা এবং হত্যাচেষ্টার অনেক ঘটনা রয়েছে। আরও রয়েছে গ্যাসের দাবিতে বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর গুলি চালিয়ে হত্যার ঘটনা। রয়েছে সারের দাবিতে তীব্র আন্দোলনে গুলি চালিয়ে বহু সংখ্যক কৃষককে হত্যার ঘটনাও।
পুত্র কোকোর মৃত্যুর ঘটনা শুনে রাজনৈতিক বিরোধ ভুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছুটে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়ার বাড়িতে। প্রধানমন্ত্রী নিজের প্রটোকল ফেলে সেদিন খালেদা জিয়ার পাশে দাঁড়ানোর জন্যই গিয়েছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার বাড়ির গেট খোলা হয়নি সেদিন। এমনই অমানবিক তিনি।
খালেদা জিয়া আপাদমস্তক একজন উগ্র মনোভাবের মানুষ। প্রতিহিংসার রাজনীতি করে গেছেন জীবনভর। এমনকি তার দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম তাকে অশিক্ষিত এবং যোগ্যতাহীন বলে আখ্যা দিয়ে বলেছেন, শুধুমাত্র জিয়াউর রহমানের বিধবা স্ত্রী বলেই তিনি দলের পদ পেয়েছেন, এছাড়া তার আর কোনো যোগ্যতাই নেই।