পুরনো বইপ্রস্থ
বইপ্রস্থ ২৫ আগস্ট ২০০৯
হাতে পেয়েই এত দ্রুত বই দুটি পড়ে ফেলব আমি ভাবিনি। কিন্তু তাই করলাম, একেবারে নতুন প্রকাশিত বই, কিন্তু একই সাথে পুরনো। প্রথম বইটি সমর সেনের অপ্রকাশিত দিনলিপি ও চিঠি এবং দ্বিতীয় বইটি Margeurite Duras-এর La maladie de la mort-এর বাংলা অনুবাদ ‘মৃত্যুব্যাধি’।
আমাদের খবর মোটেই ভালো নয়
অপ্রকাশিত সমর সেন দিনলিপি ও জুজুকে।।সম্পাদনা : পুলক চন্দ।।দে’জ পাবলিশিং।।মূল্য ২৫০ ভারতীয় টাকা।।প্রথম প্রকাশ অক্টোবর ২০০৯, আশ্বিন ১৪১৬।।
সমর সেন সব সময়েই আমার কাছে আগ্রহের। এই বাংলা ইংরেজি দিনলিপি ও মেয়ে জুজুকে লেখা ১০২টি চিঠি আমার আগ্রহ আরো অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। পুরনো কারো দিনলিপি ও চিঠি পড়ছি বলে একবারের জন্যও মনে হয়নি – মনে হচ্ছিল কোনো এক বন্ধুর দিনলিপি ও চিঠি পড়ছি। আর এ বইয়ে এক অসাধারণ চরিত্রের সাথে পরিচয় হয়েছে, সমর সেনের নাতনি ‘বান্ডিল’। সমর সেনের জীবনে দুটি শব্দ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল : সংবাদ ও সত্য – Izvestia ও Pravda – তিনি বলতেন, সত্যে (Pravda) সংবাদ (Izvestia) নেই, সংবাদে সত্য নেই। খুব ঠিক কথা।
ব্রদেল
মৃত্যুব্যাধি।।La maladie de la mort।। Margeurite Duras।।অনুবাদ : দেবতোষ মিত্র।।অফবিট।।মূল্য ৩০ ভারতীয় টাকা।।প্রথম প্রকাশ জানুয়ারি ২০০৯।।
একটি মেয়ের সঙ্গ কিনে নিয়ে তার সাথে যৌনতা। প্রেম। কামনা। কিন্তু অস্তিত্ব, তার ভেতর যে নারী পুরুষ, সেখানে তো চলে আত্মার গাঢ় জীবনযাপন – নারী তার পূর্ণ নগ্নতা নিয়ে – পুরুষটি প্রেমকে পেতে অনর্গল বলতে থাকে এক প্রলম্বিত সংলাপ – এক অনর্গল টেক্সট। নিঃসঙ্গ পুরুষ ও টাকার বিনিময়ে সঙ্গী নারী তাদের ভালোবাসার মধ্যে মৃত্যুকেই দেখে – এই মৃত্যুব্যাধি – ভালোবাসার কত গল্প, কিন্তু প্রেম ও মৃত্যু বসবাসই করে : কেউ এদের ধরতে পারে না – শরীর পারে না, শব্দ পারে না। মৃত্যুব্যাধি বেঁচে থাকে।
ভালো অনুবাদ দেবতোষ মিত্রের। শরীর প্রেম নিঃসঙ্গতা বিনিময়মূল্যে নির্ধারিত যৌনতা – এ নিয়ে যে জীবনের কাহিনি গড়লেন Duras, সেখানে সৌন্দর্য ও যন্ত্রণা, মৃত্যু ও ব্যাধি, প্রেমের কথা বলে, সব তিনি অস্তিত্বের শামুকের বেদনার মতো একাকার করে দিলেন।
মাসুদ করিম
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৬ comments
রেজাউল করিম সুমন - ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৯:৪৮ অপরাহ্ণ)
১
সংক্ষিপ্ত হলেও দুটি গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের পাঠ-প্রতিক্রিয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। বাতিঘর-এ দুটি বই-ই হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। সমর সেনের দিনলিপি উলটেপালটে প্রথমেই খুঁজেছিলাম তাঁর মস্কোর সহকর্মী ননী ভৌমিককে। একঝলক চোখ বুলিয়ে অন্তত একটা জায়গায় তাঁর ও স্ভেৎলানা ভৌমিকের উল্লেখ চোখে পড়েছিল। দিনলিপির অন্য কোনো পাতায়ও কি আছে তাঁদের কথা? জানালে খুশি হব।
অপ্রকাশিত সমর সেন : দিনলিপি ও জুজুকে বইটি আপনার সংগ্রহে আছে এবং পড়ে ভালো লেগেছে জেনে শিগগিরই পড়ার প্রণোদনা পাচ্ছি। অনুষ্টুপ-এর ‘সমর সেন সংখ্যা’য় অগ্রজ কবি বিষ্ণু দে-র সঙ্গে সমর সেনের পত্রালাপ খুব উপভোগ্য ছিল। এবার আত্মজাকে লেখা শতাধিক চিঠিতে নিশ্চয়ই অন্য এক সমর সেনকে পাব। পরিচিত হতে চাই বান্ডিল-এর সঙ্গেও!
২
শুভময় ঘোষ (১৯২৯—১৯৬৩) মস্কোর চিঠি-র (প্রথম আনন্দ সংস্করণ : নভেম্বর ১৯৮৯) ‘উৎসবের পরদিন’ শিরোনামের পত্রপ্রবন্ধটিতে লিখেছিলেন (পৃ ৮২) :
রায়হান রশিদ - ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৫:৪৩ অপরাহ্ণ)
ধন্যবাদ মাসুদ ভাই বই দু’টো পড়ার অভিজ্ঞতা আমাদের সবার সাথে শেয়ার করার জন্য। দু’টোর একটাও পড়া নেই। আগ্রহ হচ্ছে পড়তে, বিশেষ করে সমর সেনের অপ্রকাশিত দিনলিপি-চিঠি নিয়ে সংকলনটি। স্থানীয় লাইব্রেরীতে ‘মৃত্যুব্যাধি’র কোন ইংরেজী অনুবাদ পাওয়া যায় কিনা খুঁজে দেখবো। মূল উপন্যাসটির অবলম্বনে ছবি নির্মাণও হয়েছিল মনে হয়; নিশ্চিত নই অবশ্য।
সুমনকেও অনেক ধন্যবাদ, মূল্যবান সংযোজনগুলোর জন্য।
নজরুল ইসলাম - ৪ আগস্ট ২০১১ (১:৫৬ অপরাহ্ণ)
অনেক ধন্যবাদ বই দুটোর খোঁজ দেওয়ার জন্য। বিশেষ করে সমর সেনের বইটার ব্যাপারে খুব আগ্রহ হচ্ছে।
অনুষ্টুপ প্রকাশিত “সংকলিত সমর সেন”-এ মস্কোর জীবন, উড়ো খৈ, সত্তরদশকের চালচিত্র, বিষ্ণুদে: সমসাময়িকের দৃষ্টিতে, প্রসঙ্গ কলকাতা… প্রভৃতি পড়ে জানার আগ্রহটা আরো বেড়েই গেছে আসলে
Pingback: বইপ্রস্থ ৪ | মাসুদ করিম
Pingback: বইপ্রস্থ ৬ | মাসুদ করিম
মাসুদ করিম - ১৭ জুলাই ২০১৬ (১২:৪৯ অপরাহ্ণ)
১০ অক্টোবর ২০১৫তে শতবর্ষ উদযাপনের উপলক্ষ ছিল সমর সেনের, আমি খেয়াল করিনি, আমরা খেয়াল করিনি, জানা মতে কলকাতা খেয়াল করেনি, ত্রিপুরা খেয়াল করেছে, সমর সেনের জন্মশতবর্ষে আগরতলায় ‘কবি সমর সেন জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন কমিটি’র উদ্যোগে মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান হয়েছে, সেখানে সমর সেন স্মারক বক্তৃতা দেওয়ার সুবাদে উপস্থিত ছিলেন সৈয়দ হাসমত জালাল, এবং তার সূত্র ধরে তিনি ‘আজকাল’-এ উপসম্পাদকীয় লিখেছেন।