ভুল ধর্মনিরপেক্ষতা

গত বছর পশ্চিম বঙ্গের তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েকজন মুসলিম মহিলার সাথে একসাথে নামাজ পড়লেন; আমার পরিচিত এক দক্ষিণ ভারতীয় ভদ্রলোক মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, দরগাহ সবখানেই উপাসনা করেন; আওয়ামী লীগের গত কনভেনশনে দেখলাম কোরান, গীতা, বাইবেল ত্রিপিটক পড়ে সভার কাজ শুরু হচ্ছে; আমার বাবা হজ পালন করে এসে বললেন, এবার কাশী-গয়ায়ও তীর্থ করে আসব। এই সবগুলোই ভুল ধর্মনিরপেক্ষতা। আর ধর্মনিরপেক্ষতার ক্ষেত্রে গান্ধীর বিখ্যাত “beauty of compromise”-ও ভুল ধর্মনিরপেক্ষতা। আমি আমার ধর্ম পবিত্রতার সাথে পালন করলাম, অন্য ধর্মালম্বীও তার ধর্ম পবিত্রতার সাথে পালন করলেন — এতেই আসবে সমাজে শান্তির ধর্মনিরপেক্ষতা, beauty of compromise, সমঝোতার সৌন্দর্য : গান্ধীর সত্য পথের এই সন্ততাও, ভুল ধর্মনিরপেক্ষতা।

ধর্মহীন না হতে পারলে ঠিক ধর্মনিরপেক্ষতা সম্ভব নয়। নিজের ধর্মের পবিত্রতার আবরণে ঢাকা মহান অহিংস প্রেমময় মানুষের অভাব নেই আমাদের সমাজে। তারা আমাদের সবার শ্রদ্ধার পাত্র — কিন্তু কেউই তারা ধর্মনিরপেক্ষ নন।

তাহলে ধর্মনিরপেক্ষতার কী দরকার? এমন পৃথিবী, যেখানে সবার থাকবে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, তার জন্য কেন আমরা কাজ করি না? আমরা কেন ধর্মনিরপেক্ষতার বিপথে চলতে চাই। কেন আমাদের অর্ন্তগত রক্তের ভেতর ধর্মনিরপেক্ষতার স্পন্দন অনুভব করতে চাই?

না, প্রগতির প্রশ্নে এর কোনো বিকল্প নেই। ধর্মনিরপেক্ষতায় পৌঁছতে না পারলে, আমার শিক্ষা আমার স্বাধীনতার সর্বোচ্চ স্ফূরণ সম্ভব নয়। বিসমিল্লায় গলদ না ঘটিয়ে সত্য ও বিজ্ঞানের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ধর্মের সত্য যার যার পকেটে থাকে, ধর্মনিরপেক্ষতা নিরন্তর সত্যের দিকে এগিয়ে যায়।

ভুল ধর্মনিরপেক্ষতা থেকে সরে আসাটাই হবে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রত্যন্ত পথে আমাদের নিরন্তর ছুটে চলার প্রথম পদক্ষেপ।

মাসুদ করিম

লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।

৫ comments

  1. পর্বতারোহী - ১৪ অক্টোবর ২০০৯ (২:৫২ অপরাহ্ণ)

    ভাই আপনার পোষ্টের বক্তব্য আমার মনের কথা।

  2. মোহাম্মদ মুনিম - ১৫ অক্টোবর ২০০৯ (৩:০১ পূর্বাহ্ণ)

    বছর দশেক আগে ঢাকায় যখন প্রাইভেট পড়াতাম, তখন নবম-দশম শ্রেণীর জীববিজ্ঞানের বইয়ে “ইহা মহান আল্লাহতালার কুদরত ছাড়া আর কিছুই নয়’ এই জাতীয় একটা বাক্য দেখেছিলাম (যদ্দুর মনে পড়ে ‘উদ্ভিদের আলোক সংবেদনশীলতা’ অধ্যায়ে)। সেই বইয়ে ডারূইনবাদ ছিল কিনা মনে নেই, না থাকারই কথা। বাংলাদেশে এক শ্রেণীর বিজ্ঞানী (একজন হলেন প্রফেসর শমসের আলী) ইসলাম যে কতটা বিজ্ঞানমনস্ক সেটা প্রমাণ করতে সর্বদাই ব্যস্ত থাকেন। প্রফেসর শমসের আলী বিজ্ঞান শিক্ষার বিস্তারে বেশ খানিকটা ভূমিকা রেখেছেন বলে জানি, তবে বিজ্ঞানশিক্ষার পাঠ্যপুস্তকে এই জাতীয় বাক্য থাকলে সেই শিক্ষায় বিজ্ঞানী তৈরী না হয়ে মোল্লা তৈরী হবারই কথা।

  3. স্নিগ্ধা - ১৫ অক্টোবর ২০০৯ (৮:৩৭ অপরাহ্ণ)

    তাহলে ধর্মনিরপেক্ষতার কী দরকার? এমন পৃথিবী, যেখানে সবার থাকবে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, তার জন্য কেন আমরা কাজ করি না? আমরা কেন ধর্মনিরপেক্ষতার বিপথে চলতে চাই। কেন আমাদের অর্ন্তগত রক্তের ভেতর ধর্মনিরপেক্ষতার স্পন্দন অনুভব করতে চাই?

    আপনার মূল বক্তব্য বোঝা গেলেও, লেখাটা আরো একটু বিস্তারিত করলে ভালো হতো – বিশেষ করে ওপরের প্যারাটা আরেকটু ব্যাখ্যার দাবীদার।

  4. মাসুদ করিম - ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (১০:১৪ অপরাহ্ণ)

    আরেক ‘ভুল ধর্মনিরপেক্ষতা’র সবক দিচ্ছেন এখন আমাদেরকে শেখ হাসিনা। তিনি বলছেন

    ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়।

    হ্যাঁ, তার কথা আমরা বুঝলাম। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মযুক্ততাও নয়। ধনাত্মকও নয় ঋণাত্মকও নয় — নিরপেক্ষ : সংবিধানে ধর্মের প্রশ্নে রাষ্ট্রের ভূমিকা ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র এই অর্থই দাঁড়ায়। হাসিনার এই ‘ভুল ধর্মনিরপেক্ষতা’র সবকে সাজেদা-সুরঞ্জিত এখন বিসমিল্লাহ, আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা, মুসলিম ভিন্ন অন্য ধর্মালম্বীরা অন্যভাবে শুরু করবেন, অন্য ধর্মালম্বীরা অন্যের উপর আস্থা রাখবেন এসব আজগুবি প্রলাপেই দিনরাত কাবার করে দিচ্ছেন। এই ‘ভুল ধর্মনিরপেক্ষতা’র কৌশলে ভোটের বাজারে কী বাজিমাত হবে আমরা জানি না কিন্তু এর প্রভাবে রাষ্ট্র সংবিধান ও জনগণের যে সাংস্কৃতিক ক্ষতি হবে তার পরিণতি হবে ভয়ংকর। প্রায় তিন দশকের রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতায় এখনো যদি শেখ হাসিনা ‘ঠিক ধর্মনিরপেক্ষতা’র পথে রাষ্ট্র ও সংবিধানের চলার পথকে বাধামুক্ত না করেন, তাহলে বলতেই হয় এটা শেখ হাসিনারই চরম দুর্ভাগ্য যে তিনি ‘ভুল ধর্মনিরপেক্ষতা’র জন্য নিজের সমস্ত রাজনৈতিক অর্জনকে বিসর্জন দিচ্ছেন।

  5. মাসুদ করিম - ৪ এপ্রিল ২০১২ (১:২০ অপরাহ্ণ)

    হায় মমতা তোমার গেল ধর্মনিরপেক্ষতা আর এই ইমামদের গেল আখেরাত। আমার টুইটপিকে রাখা ছবিটি দেখুন, সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের ইমামদের সাথে বৈঠক শেষে তাদের সামনে এভাবেই মোনাজাত ধরেন মমতা। ইমামদের নারী বিষয়ক ফতোয়ার হাঁকডাকের তাহলে মানে কী?

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.