হুইস্কি
কোন গ্লাসে পরিবেশিত হচ্ছে হুইস্কি সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্লাসের চেহারা যদি হয় টিউলিপ ফুলের মতো, অথবা বৃন্তযুক্ত সুগোল পাত্রে ঢেলে দেওয়া যায় এই পরম রমনীয় পানীয়টিকে, তবে কোনো কথাই নেই। তাকিয়ে দেখুন এর সৌন্দর্য, ধীরে ধীরে আঙুলের মৃদু আন্দোলনে পানীয়টিকে নাড়ান গ্লাসের মধ্যে। মদের সুবাস ঘন হয়ে উঠুক পাত্রের মধ্যাংশে। সামান্য জল মিশিয়ে নিন, আঘ্রাণ করুন পানীয়টি। এবার হাল্কা চুমুক দিন। মুখের মধ্যে ধরে রাখুন গৃহীত পানীয়টুকু। অনুভব করুন জিহ্বায় চারিয়ে সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম স্বাদ, পাত্রের ঘ্রাণের মতো নিজের ভেতরেও ঘ্রাণের আমেজ টের পাবেন।
রাম
বহু রূপে পাওয়া যায় এ মদ। ‘লাইট’ বা ‘হোয়াইট’ রামে পাবেন মৃদু মিষ্টত্ব, কিন্তু স্বাদে গন্ধে এমন কিছু অনবদ্য নয় এ বস্তু—মূলত, ককটেলে এর ব্যবহার। ‘গোল্ড’ রামে পাবেন এক প্রাচীন সুবাস। অনেক বছর কাঠের পিপেতে রেখে তারপর বোতলে ঢোকানো হয় এই রাম। এর সোনালী রঙের কারণ ওই কাঠের পিপে। গোল্ড রামের চেয়েও এক পরত বেশি গাঢ় রঙের ডার্ক রাম তৈরি হয়ে ওঠে পুড়ে ঝামা হওয়া পিপেতে। স্বাদে গন্ধে অত্যন্ত কড়া—আঘ্রাণ করলে মিলতে পারে ঝোলাগুড় অথবা ক্যারামেলের গন্ধ। রামের বিবিধ মিশ্রণে ডার্ক রাম ব্যবহৃত হয় রঙ আর গন্ধে মিশ্রণটিকে সবল করে তুলতে। টাইপ করছিলাম, নিজেকে সামলাতে পারলাম না, দূর্গাপুজোর নবমীর রাতে প্রচণ্ড উল্লসিত উন্মত্ততার পর বিছানায় এলিয়ে যাবার আগে যদি নিখাদ ‘গোল্ড রাম’ কয়েক ঢোক গলায় ঢেলে দিতে পারেন, আহ! কী মোহনীয় পাতালবাস হয় ভরদুপুর পর্যন্ত।(এটুকু অস্বাস্থ্য)।
ওয়াইন
দ্রাক্ষাফলের অমোঘ আহ্বান নিয়ে বিরাজমান বহুবর্ণের, বহু স্বাদের, বহুরূপী ওয়াইন। নিস্পিষ্ট আঙুরের রসে ‘ইস্ট’ মিশিয়ে প্রস্তুত করা হয় ওয়াইন।
ওয়াইনের যথার্থ স্বাদগ্রহণ সাধনা ছাড়া সম্ভব নয়। বর্তুলাকার, বড়-পরিধির বৃন্তযুক্ত পাত্রে ঢেলে নিন আপনার পছন্দের ওয়াইন। দেখুন তার রঙ। নাসারন্ধ্রের খুব কাছে নিয়ে এসে গ্লাসের তরলটিকে সামান্য আন্দোলিত করুন গভীর শ্বাসে। মুখে নিন সামান্য ওয়াইন। গিলবেন না, জিভে-টাগরায় অনুভব করুন জটিল, দুরূহ সব স্বাদ-গন্ধের মায়াজাল বিস্তার। এবার গিলে নিন। সাধনায় হয়তো এমনও দিন আসতে পারে, যেদিন এক-চুমুকে বুঝে নেবেন কোন বছরের, কোন বাগানের দ্রাক্ষাজাত ওয়াইন রয়েছে আপনার গ্লাসে।
বিয়ার
স্টার্চ থেকে প্রস্তুত হয় বিয়ার। ‘মল্টেড বার্লি’ এ পানীয়ের সর্বপ্রধান উৎস। ‘হপ’ গাছের ফুল যোগ করা হয় বিয়ার প্রস্তুতকালে—তার ফলে আসে পানীয়টির তিক্ত স্বাদ। নানাজাতের, হরেক প্রকারের বিয়ার মেলে বাজারে। যেমন “এল”—শ্রেষ্ঠ ইস্টে জারানো এই বিয়ার। পাবেন “লাগার” বিয়ার — সাত থেকে বারো ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে এ বিয়ারের প্রথম দফার প্রস্তুতি। তারপরেও শূন্য থেকে চার ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে রাখা হয় এই বিয়ার প্রস্তুত করার সময়।
বিয়ার পান করতে গেলে সচেতন হতে হবে পানীয়ের তাপমাত্রা সম্বন্ধে। হাল্কা লাগার বিয়ার পান করুন আট ডিগ্রীর কম তাপমাত্রায়। ডার্ক লাগারের তাপমাত্রা যেন না ছড়ায় নয় ডিগ্রী। আবার একটু টাইপ থেকে বেরতে হল। বিয়ার খেতে পাই না কতদিন! এখানে পড়ুন : এই অসম্মান।
ভদকা
ভুট্টা থেকে তৈরি হয় ভদকা, হয় আলু থেকেও। ময়দা থেকে নির্মিত হয় এ পানীয়, আবার “রাই” নামক শস্যও ব্যবহৃত হয় এর নির্মাণে। এর ফলে এক ভদকার থেকে অন্যের তফাৎ প্রায় আলোকবর্ষী। যে রকম ভদকা কিনুন না কেন, গুণগত মানে তা যেন হয় প্রথম শ্রেণীর।
পানীয়টিকে সযত্নে রাখুন ফ্রিজে। ঠান্ডা অবস্থায় এ সুরার সূক্ষ্ম মিষ্টত্ব প্রকট হয়ে ওঠে। ঢালুন ঠান্ডা গ্লাসে, ছোট ছোট চুমুকে পান করুন এই পানীয়। মন-প্রাণ জুড়িয়ে যাবে।
জিন
জুনিপারের গন্ধ পাবেন জিনে। ডিস্টিলড জিন প্রস্তুত করা হয় “হোয়াইট গ্রেন স্পিরিট” থেকে, তারপর তাতে মেশে জুনিপার ফল।
জিনের ব্যবহার আছে বিভিন্ন মিশ্র পানীয়ে, ইংরেজিতে যাকে বলে mixed drink। জিন ব্যবহার করুন ককটেল বানাতে। এ পানীয়, যাকে বলে, বেশ “ড্রাই”। জিন পান করলে পিপাসার্ত বোধ করতে পারেন। যথেষ্ট “টনিক ওয়াটার” অথবা “ওয়াইন” মেশান জিনের ককটেলে। বিশুষ্ক জিনকে আর্দ্র করার এ এক পদ্ধতি।
**দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়ার বাংলা সাময়িকী “সময়” থেকে সংকলিত।