খেলোয়াড় এথলিট মডেল। পেশাগত দিক থেকে যৌবনেই এদের অবসর নিতে হয়। প্রায় কুড়ি বছর হবে আমার অমিত আগ্রহ এই পেশার লোকদের নিয়ে। আমি জানি না কেন আমার মনে হয় যৌবনের নিখাদ সৌন্দর্য এদের মধ্যেই মূর্ত হয় সবচেয়ে বেশি। আর এদের মধ্যে মডেলরা হয় সবচেয়ে সুন্দর, কারণ তারা থাকে আলোকে উদ্ভাসিত,পরে অনন্য সব পোষাক, র্যাম্পে মার্জার পদচারণায় পোষাক মেকআপ নগ্নতা মুখরতা সবকিছু মিলিয়ে সে এক দক্ষতার মাতাল উপস্থাপনা। আমি আমাদের যুগের যে কয়েকজনকে ফটোগ্রাফে দিনের পর দিন দেখেছি তারা হলো নাওমি ক্যাম্পবেল, ক্লাউডিয়া শিফার ও কেট মস, — এদের মধ্যে যাকে আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে সে নাওমি ক্যাম্পবেল। আমার খুবই খারাপ লাগছে যখন জেনেছি আর কিছুদিনের মধ্যেই নাওমি অবসরের ঘোষণা দেবে।
নাওমির এথনিক চেহারা, তার ত্বকের গাঢ় রং, তার পদচারণার তীব্র উদ্দাম ছন্দ, আর তার সবচেয়ে এথনিক দুটি প্রবল বৈশিষ্ট্য বিশাল আইভরি হাসি ও কুরঙ্গের চোখের মতো চেরা মায়াবী দুটি বাদামী চোখ, যার তুলনা পাশ্চাত্যের মডেল জগতে আর পাওয়া সম্ভব নয়। ক্লাউডিয়ার আছে ব্রিজিত বার্দোর মতো ‘ফাম ফাতাল’রূপ, যা আধুনিক ইউরোপীয় নারীর বিপদজনক সৌন্দর্যের চূড়ান্ত প্রকাশ। কেট ‘মে ৬৮’-র পর জনপ্রিয় হওয়া ‘ঘরহীন আইনহীন’ অনাথ সৌন্দর্যের প্রতিভু। যারা ‘লাভারস অন দ্য ব্রিজ’ ছবিটি দেখেছেন তারা বিনোশের অভিনয় ও অবয়বে এই ‘ঘরহীন আইনহীন’অনাথ সৌন্দর্যই মূর্ত হতে দেখেছেন।কিন্তু এথনিক নাওমি ইউরোপের পোস্টমডার্ন ক্রেজ। আমার কাছে আমার প্রজন্মের সবচেয়ে সুন্দর মডেল। আমার সত্যিই মন খারাপ।খেলোয়াড় এথলিট মডেল। এরা যখনই কেউ বিদায় নেয়, আমার যৌবন আঘাত পায়, এই বিদায়গুলো আমাকে শুধু ভাবায় যে ব্যক্তিদের এত উপভোগ করলাম তারপর এ জগতে আরো উপভোগ্য কেউ কি আসবে? নাকি উপভোগ্যতার দিন শেষ হয়ে যাবে, অথবা উপভোগ্যদের মধ্যে এদের অস্তিত্ব ভুলে যাব? জানি না, শুধু এটুকু জানি , খেলোয়াড় এথলিট মডেল, এরা বিদায় নেয় কিন্তু আমরা বিদায় দিতে চাই না, আমাদের যৌবন চলে যায় কিন্তু আমরা চলে যেতে দিতে চাই না। নাওমি র্যাম্পে থাকবে না এটাই বাস্তবতা, কিন্তু নাওমি রক্তক্ষরণ করে দিয়ে যাচ্ছে এটা আরো বড় বাস্তবতা। আমার কাছে ফ্যাশন র্যাম্প রিক্ত হয়ে যাবে, এই মায়াহরিণির মতো এথনিক কাউকেই আমি আর কখনো দেখিনি।
মাসুদ করিম
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৩ comments
মাসুদ করিম - ৭ জুন ২০০৯ (৭:২৮ অপরাহ্ণ)
ফ্যাশন মডেলিংয়ের ক্যামেরার পেছনে বাস্তবে কী ঘটে, তা নিয়ে ডকুমেন্টারি, Picture Me, তৈরি করেছেন মডেল সারা জিফ। এ নিয়ে Louise France-এর প্রতিবেদন।
রায়হান রশিদ - ৭ জুন ২০০৯ (৭:৪৫ অপরাহ্ণ)
সৌন্দর্য এবং যৌবনের আইকনরা যখন একে একে অবসর নিতে থাকেন কিংবা হারিয়ে যেতে থাকেন, তখন তা যেন আমাদেরও মনে করিয়ে দেয় যে সময় থেমে নেই। মনে করিয়ে দেয় আমাদেরও বয়স বাড়ছে, যা ভুলে থাকতে পারলেই বেঁচে যেতাম হয়তো। আবার আমাদের গড়ে ওঠা সৌন্দর্যের ধারণা, সেইসাথে ‘সর্বজনীন সুন্দর’ বলে আদৌ কিছু আছে কিনা তাও কিন্তু ভেবে দেখবার মত। এর কতটা বিজ্ঞাপনী মিডিয়ার গুণ, কতটা নন্দনতত্ত্ব, কতটা বংশগতির শুদ্ধতা, কতটা আমাদের নিজেদের চিন্তার সীমাবদ্ধতা — এই বিষয়গুলো নিয়েও গভীর আলোচনা হতে পারে। এমনকি এই আলোচনাটা হওয়া জরুরি বলেই মনে করি।
মাসুদ ভাইকে ধন্যবাদ।
মাসুদ করিম - ১৪ জুন ২০০৯ (৪:৩৫ অপরাহ্ণ)
এই জটিল গ্রন্থিতে আরেকদিন ষাঁড়ের যুদ্ধের উত্তেজিত অন্ধ একাগ্রতা নিয়ে প্রবেশ করব। আজ প্রত্যুত্তরে শুধু কিছু পদ্য উদ্ধৃতি।
১.
২.
৩.
৪.
১. from Endymion John Keats
২. from To a Young Beauty W B Yeats
৩. A drinking song W B Yeats
৪. ফনের দিবাস্বপ্ন থেকে, স্তেফান মালার্মে অনুবাদ : সুধীন্দ্রনাথ দত্ত