উৎসের রূপকথা
কবে এবং কোথায় মানুষ প্রথম কফিগাছটিকে তার একটি প্রধান পানীয়ের উৎস হিসেবে চিনে নিয়েছিল এ বিষয়ে সঠিক জানাশোনা মানুষের ইতিহাসে নেই। এবং কেউই এখন আর জানে না কে ছিল সে মানুষ, যে এই উদ্ভিজ্জ পদার্থটিকে এক উষ্ণ সমৃদ্ধ সৌরভময় পানীয়ে রূপান্তর ঘটিয়েছিল। তাই এ বিষয়ে রূপকথার প্রচলনটাই বিশেষ। আর আমাদের একালে এর প্রতিটিকেই কমবেশি রম্য মনে হয়। এর মধ্যে যেটি বহুল প্রচলিত, এবং সবগুলোর মধ্যে বেশি সমৃদ্ধ, সেটি আমরা জানতে পেরেছি এক মারোনিৎ সন্ন্যাসীর কাছ থেকে, যখন তিনি সরবনের ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক হয়ে এলেন আঠার শতকের গোড়ায়। তিনি প্রচার করলেন যে, এক খ্রিষ্টীয় বিহারের পাদ্রি মৃতসাগরের তীরগুলোর কাছাকাছি থাকা ছোট্ট টিলাগুলোতে বসে অবসর যাপন করতেন, একবার সেখানে তিনি চরে বেড়ানো ছাগলগুলোর মধ্যে আশ্চর্য এক আচরণ খেয়াল করলেন। তিনি দেখলেন এ ছাগলগুলো একজায়গায় বেশিক্ষণ না থেকে খালি ঘুরে বেড়ায় এবং সারা রাত জেগে কাটায়—এভাবে তিনি এও খেয়াল করলেন এ ছাগলগুলো একধরনের ঘন বেঁটে গুল্মের কাছে একত্র হয়, যে গুল্মের পাতা ঘনসবুজ শক্ত এবং উজ্জ্বল আর সমস্ত গুল্ম ভরে থাকে এক প্রকার দানায় যা দেখতে বেগুনী, খুবই জীবন্ত এবং ছোট্ট চেরিখণ্ডের মতো। তিনি দেখলেন ছাগলগুলো এসবই চিবুচ্ছে। বুড়ো পাদ্রি এই দেখে এই দানাগুলো পানিতে সিদ্ধ করতে লাগলেন ভেবে দেখলেন হয়তো এভাবে পান করে তিনি intoxicated হতে পারবেন। বেশ করে ফুটালেন তিনি, ঐ ফুটন্ত পানীয়ই তিনি যন্ত্রণা নিয়ে পান করলেন, আশ্চর্য! এ তাকে নিয়োজিত করল এক মাতাল অবস্থায়—কিন্তু তার আনন্দের হাবভাব একটুও নষ্ট হলো না—তার চেতনার কিঞ্চিৎ লোপও তিনি অনুভব করলেন না। পক্ষান্তরে তার মানসিক অবস্থান আরো তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল আর ভাবগুলোকে দেখতে পেলেন স্বচ্ছতম দশায়—বেশ প্রাণবন্ত আর গতিময়। তিনি উপলব্ধি করলেন সান্দ্রতায় তার চিন্তাগুলোর জট খুলছে কী বিশুদ্ধ একেকটি পদক্ষেপে। আশেপাশের বস্তুজগত আর ভূমিচিত্র যা তাকে ঘিরে আছে হয়ে উঠল চরম প্রেরণাদায়ী। যে জিনিসটির প্রতি তিনি তাকাতেন বা যে চিন্তাটির মধ্যে তিনি নিজেকে নিয়োজিত করতেন, তা যতই ক্ষুদ্র হোক না কেন, শেষ মুহূর্তে তিনি তার থেকে আবিষ্কার করতেন এক অপ্রত্যাশিত গুরুত্ব। প্রত্যঙ্গগুলো হতো হালকা, মস্তিষ্ক হতো সকল ভারমুক্ত, ধর্মতত্ত্ব হয়ে উঠত মানসিক মত্ততার এক অভিজ্ঞতা যা তন্দ্রাকে দূরীভূত করত এবং ফিরিয়ে আনত তীক্ষ্ণতম ধারনা যত।
আরেকটি গল্প আছে, যার উৎপত্তি পারস্যে এবং নায়ক ইসলামের নবী মুহম্মদ। মুহম্মদের যৌবনের এক সুন্দর দিনে তিনি নাকি চরম অলসতায় ভুগছিলেন, কোনোক্রমেই একে অতিক্রম করতে পারছিলেন না, কোনো চিকিৎসাই কাজ করছিল না, অনেকের অনেক যত্ন যখন ব্যর্থ হলো, তখনই এলেন প্রধান ফিরিশতা জিব্রাইল—তিনি তার কাছে নিয়ে এলেন এক রহস্যময় পানীয়। মুহম্মদ তা পান করলেন, আর তাতেই তার কর্মস্পৃহা প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠল। সেই কর্মস্পৃহার বলেই তিনি পূর্ণশক্তিকে জয় করেছিলেন চৌদ্দটি যুদ্ধ, নিজের তেজ কিছুমাত্র খর্ব না করে সঙ্গ পেয়েছিলেন চৌদ্দজন রমণীর। এভাবে প্রাচীন পারস্যের এ গল্প কফিকে নবীর পানীয়ে উন্নীত ও প্রতিষ্ঠিত করেছিল, যাদুকরী গুণের আরোপ করে একে চিহ্নিত করল ‘ইসলামের সুরা’ বলে আর এভাবে বিরাট মুসলিম সাম্রাজ্যের বিস্তারের মধ্য দিয়ে কফি ও কফিঘর হয়ে উঠল এক নতুন সংষ্কৃতির প্রতীক ও যান।
জনৈক মধ্যপ্রাচ্যের লেখক প্রশস্তি গাইলেন—
ওরে কাফে! তুই বিলিয়ে দিস তোর দয়া, তুই হলি খোদার বন্ধুদের পানীয়, তুই স্বাস্থ্য কামনা করিস তাদের যারা জ্ঞান আহরণের পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়। ভালোর মধ্যে সেই সে মানুষটি একমাত্র, যে পান করে কাফে, সেই জানে সত্যকে। কফিঘর হলো আমাদের খোদা, সেখানে যেখানটায় আমরা উদযাপন ও উপভোগ করি সমাজকে তার সভ্যতর মানুষের মাঝখানে।
তুর্কি কবি বেলিঘি উদাত্ত কণ্ঠে বলে উঠলেন—
দামেস্ককে, হালাব ও তার রাজধানীকে, কায়রোকে আমরা আমাদের মাঝে মিলিয়ে নিয়েছি একাট বলয়ে বিপুল আনন্দের মধ্য দিয়ে। ফুটন্ত কফিদানা, জীবন্ত কফিঘর, আহা গন্ধ অমৃতের!
পার্সি কাফে—‘জ্ঞানীসভা’
সবচেয়ে সাধারণ মানের এমন একটি জায়গা যা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আর সভ্য মানুষের গল্পগুজবে জমে ওঠে—কফিঘরের এই যে বৈশিষ্ট্য এ হলো এশিয়া মাইনরের বৈঠকী উদ্ভব। এমন পরিবেশের ও প্রবৃত্তির সাথে পরিচয় ঘটে ইউরোপীয় দুটি দেশের—স্পেন ও ফ্রান্সের—যারা উনিশ শতকের শুরুতেও সস্তা অপরিষ্কার অসভ্য সরাইখানাগুলোতে মজে ছিল। কিন্তু উনিশ শতকের ফরাসি রোমান্টিক সাহিত্যিক ও চিত্রকরদের প্রাচ্য ভ্রমন তাদের রুচি পাল্টেছে—ফ্রান্স হয়ে উঠেছে কাফে সভ্যতার ধারক ও বাহক। কবি নের্ভাল, গোতিয়ে, চিত্রকর দ্যলাক্রয়া প্রমুখ প্রচুর ভ্রমন করেছেন প্রাচ্যে—এশিয়া মাইনরে। ফরাসি চিত্রকর জঁ শারদাঁ-র কিছু কথা পারস্যের কফিঘর নিয়ে
ঐ ঘরগুলোর ভাষা আমি আজো শিখতে পারিনি, কেমন আশ্চর্য ঠেকে আমার—এ ভাষাটির কিছুই জানি না আমি, অথচ ঘন্টার পর ঘণ্টা এখানে বসে কাটিয়েছি, কফি পান করেছি। তাই আলাপ আলোচনার কথা কিছুই বলতে পারব না আমি, কিন্তু আমি বর্ণনা করতে পারব ঐ ঘরগুলোতে কিভাবে কাজ চলে। আহা, ঘরগুলো ছিল সত্যিই আন্তরিক উল্লাসমুখর ও প্রশস্ত! নানা ধরনের মানুষের সমাগমে কী জীবিত! বেশ সুন্দর সাধারণ জায়গায় হয় ঘরগুলোর অবস্থান, এমন কিছু হয়ে ওঠে না যাতে প্রবেশের অধিকার নিয়ে ভাবতে হয়, এবং পরিবেশটা চমৎকার, যেহেতু ঘরগুলো হলো অভ্যাগতদের মিলন আর অবসর উপভোগের কেন্দ্র। কী উদার জায়গা এই কফিঘরগুলো, আমার মনে পড়ে, বহুবার রাস্তার পাশ দিয়ে যেতে এধরনের কফিঘরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আমরা বাটিতে করে জল পানও করেছি, আশ্চর্য, বড় বড় শহরগুলোতেও কফিঘরগুলোর এই সহজ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করেছি। কফিঘরগুলো বাহির থেকে দেখতে ভূমি থেকে তিন ফুট আন্দাজ উঁচু, আবার ভেতরে তিন ফুট আন্দাজ গভীর। আকারে বা উচ্চতায় ঘরগুলোর বৈচিত্র অবশ্য আছে, সবই একই মাপের নয়। দিনের শুরু থেকেই আমরা কফিঘরে প্রবেশ করতে পারি, ভাবনা চিন্তার কাজ করে যেতে পারি একটানা, সন্ধ্যা পর্যন্ত বন্ধুতার স্মমান্য হ্রাস বা ক্লেশ সইতে হয় না। কফি পরিবেশনের মধ্যে কী সাবলীল সবল যথার্থতা এখানে, এবং দ্রুতবেগে সম্মানের সাথে আমরাও বিপুল উৎসাহে নিঃশেষ করতাম বাটির পর বাটি। ঘরগুলো নাগরিক খবর আদান প্রদানের জায়গাও বটে। প্রচুর কথাবার্তা হয় এখানে। বিভিন্ন রকমের কথাবার্তা। ঘরগুলোতে সবার জন্য স্বাধীনতা, যে কেউ গুরুতর রাজনৈতিক বিষয়েও সরকার ও যে কোনো দলের সমালোচনায় মুখর হতে পারে। মোল্লা ও দরবেশদেরও দেখা পাওয়া যায় এখানে। তারা নিমেষে নিমেষে কোরানের আয়াত উল্লেখ করে, কথা বলে অপার্থিব শান্তি ও বিলাস নিয়ে, আর পৃথিবীর শান্তিকে ও আসক্তিকে হেয় জ্ঞান করে। এখানে কবিরাও আসে, তারা তাদের আনন্দের পদ্যে মেতে ওঠে, উল্লাসের গান গায় পৃথিবীর সুখ শান্তি বিলাস ও আসক্তি নিয়ে—হাহাকার তোলে অনেক অপ্রাপণীয়ের জন্য। আহা, সেসব কফিঘর—কী এক সাধারণ সভা! কিন্তু দিনের পর দিন যখন কাটিয়েছি সেখানে, দেখেছি এ কফিঘরগুলো হলো মুখর জ্ঞানীদের অকপট সভা।
তুর্কি কাফে
তুর্কি কাফে, যা বহু দূর ছড়িয়েছিল কাফের ঐতিহ্যকে, তার বর্ণনা দিচ্ছি তেয়োফিল গোতিয়ের ‘কন্সতান্তিনোপল’ বইটির অংশ বিশেষের উল্লেখ করে
প্যারিসে বুলভার দ্যু তম্পল(Boulevard Du Temple)-এর তুর্কি কাফেটি প্যারিসের নাগরিকদের প্রায় ভাবায় তুরষ্কের কাফে বিপুল বিলাসে ভরা, তুর্কি কাফে সম্বন্ধে যদিও এ ধারনা বদ্ধমূল হয়ে গেছে, কিন্তু আমি তো দেখেছি কন্সতান্তিনোপল-এর কাফেগুলোর সাথে আছে প্যারিসের এই তুর্কি কাফেটির বিস্তর ফারাক। সেখানকার কাফেতে প্যারিসিয়ান খিলান নেই, নেই চমকপ্রদ থাম, উটপাখির ডিমের আয়না নেই—কী যে সাধারণ তুরষ্কে তুর্কি কাফে, এমনটি আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না!
বারো বর্গফুটের একটি ঘর তাতে চুনকাম করা। চারপাশের দেয়ালে একজন মানুষের উচ্চতার সমান অংশ কাঠ দিয়ে ঢাকা। একটি খড়ের মাদুরের ওপর একটি ডিভান। ঘরটির মাঝখানে প্রাচ্যের নিয়মে একটি সাদা মর্মর পাথরের ফোয়ারা। ঘরের এককোণে একটি বাক্সের মধ্যে একটি চুলা সারাক্ষণ জ্বলছে, যেখানে কফি ফুটানো হচ্ছে। এবং পরিবেশিত হচ্ছে পেয়ালার পর পেয়ালা, তামার ছোট্ট কফিপটে, সে পরিমাণে যে পরিমাণে খদ্দেররা চায়।
দেয়ালগুলোতে তাক লাগানো, যাতে রাখা আছে ক্ষুর চিমটি কাঁচি চিরুনি, যেখানে ঝোলানো থাকে ছোট্ট চমৎকার ঝিনুকের আয়না। তাই কাফেতে ঢুকেই আমরা দেখে নিতে পারি আমাদের মুখাবয়বটি—আমার যেমনটি চাই তেমন করে সাজানো আছে কিনা—না থাকলে কাজটা আমরা সেখানে সেরে নিতে পারি। সব তুর্কি কাফেই যুগপৎ ছোট্ট নাপিতের দোকানও। এবং আমি যখন ফুঁকে যাচ্ছিলাম আমার চুরুটটি মাদুরে উবু হয়ে, একজন তোতানাকের স্থূলদেহী তুর্কি আর ইগলনাকের একজন কৃশতনু পার্সি আমার সমুখেই বসেছিল, এরমধ্যে একজন গ্রিক যুবক—বিলাসী স্বভাবের, গোঁফ ছাঁটছিল ও ভ্রুতে রং লাগাচ্ছিল, কিছুক্ষণ আগে যা সে একটি ছোট্ট চিমটি দিয়ে গুছিয়ে নিয়েছিল।
উপসংহার—ইউরোপ
ইউরোপ তার ধর্ম, দৈনন্দিন মানুষের স্বাভাবিক পরিচ্ছন্নতা আর বিলাসময় সুগন্ধি এসবই পেয়েছে এশিয়া মাইনরের কাছ থেকে; তার নির্মাণশক্তি ও শিল্পশক্তি এসেছে তার রসবোধের গুরু গ্রিস থেকে; সে জেনেছে তার নীতি ও ব্যবস্থা রোমানদের কাছ থেকে : সবকিছু মিলিয়ে এখন যা হয়ে উঠেছে বহু মানুষের আরাধ্য সম্পদ, তা সম্ভব হয়ে উঠেছে সেসব ঘরগুলোর জন্য যেখানে মানুষ নিজের অবসরে অবাধে মিলতে পেরেছে। যা কিছু দৈনন্দিন, তার মাঝে লেগেছে জ্ঞানের ছোঁয়া, অভিজাত ইউরোপীয় সমাজে যেখানে শুধু সঙ্গত প্রবেশের অধিকার রক্ষা করা ছিল, সেখান থেকে জ্ঞানের বরপুত্রেরা—বিচ্ছিন্ন হয়ে এসেছে সরল উদার প্রবেশাধিকারের কাফেতে। রেনেসাঁয় যে জাগরণ, এনলাইটমেন্টে যে উল্থান—উনিশ শতকের উচ্ছ্বল কাফেগুলোতে ঘটল ইউরোপীয় শিষ্যত্বের চরম বিকাশ, এই শিষ্যত্বের শক্তির কাছে আর সব যুগপৎ মলিন ও উজ্জ্বল হয়ে উঠল। আমি যা বলছি তা বিশেষ করে ফ্রান্স ও ফরাসি বিশ্বাস নিয়ে বলছি, আর আমার চোখে যেসব গুণীর জীবন ও কীর্তি ভাসছে তারাও ওই একই দেশের এবং এই বিরল ঔদার্যের কাফেতেই ওদের উল্থান। আমি ভাবছি গোতিয়ে, নের্ভাল, বোদল্যার, ভের্লেন, মালার্মে, জিদ, লোতি, ফ্রঁস, অ্যাপোলিন্যার, ব্রতোঁ, আরাগঁ, এলুয়ার, মানে, মোনে, দ্যগা, রেনোয়ার, মাতিস, রুয়োঁ, পিকাসো… মালরো, সার্ত্র, কামু, মিশো, শার… প্রমুখদের কথা, কত সময় ওরা অতিবাহিত করেছেন কাফেতে অন্তরঙ্গ আলোচনায় : তাদের দ্বিতীয় কাজের ঘরে, তাদের সহজ শিক্ষার আসরে, সত্যিই এই ছিল কাফেগুলো, এই হলো সাহিত্যিক কাফে, এই হলো সে প্রতীক ও যান—যা সমস্ত স্বাধীনতার উপভোগে আয়োজনে সম্মেলনে ও সম্মিলনে উদবোধিত করে তুলেছে মানকতার অভীপ্সাকে আর বিবেচনাকে। মানুষ আর কোনো ধর্মযুদ্ধের জন্য, আন্তরাষ্ট্রীয় যুদ্ধের জন্য, একতাবদ্ধ না হোক; কিন্তু মানুষ যুগ যুগ মিলিত হোক আলোচনা করুক নিজেদের সম্বন্ধে—সৌজন্যে ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে; সেই মিলনস্থানটি যেখানে যা হোক না কেন; কফি ও কফিঘর সভ্য মানুষের জন্য তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আছে।
সূত্র : Les Cafés Littéraires—Gérard-Georges Lemaire/ লে কাফে লিতেরের—জেরার-জর্জ ল্যমের।
টীকা :
১. কাফে—ফরাসি ভাষায় শব্দটির দুটি অর্থ : কফি ও কফিঘর।
২. মারোনিৎ : সিরিয়া ও লেবাননের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়।
৩. হালাব : সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থিত। ষোলো ও সতের শতকের কিছু বিপণীর নিদর্শন আছে এখানে। জামি জাকারিয়ার মসজিদ-ই-ফেরদৌস বা বেহেশতের মসজিদ হালাবের স্থাপত্য কীর্তির শ্রেষ্ঠ নিদর্শন, এর নির্মাণকাল এগারো শতক।
মাসুদ করিম
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১০ comments
রায়হান রশিদ - ২০ এপ্রিল ২০০৯ (১:১০ পূর্বাহ্ণ)
দারুন তো! যাই, এক্ষুনি এক কাপ বানাবো।
অবিশ্রুত - ২০ এপ্রিল ২০০৯ (২:৫৩ পূর্বাহ্ণ)
দারুণ লিখেছেন ভাই, অনেকদিন পর কেন জানি সৈয়দ মুজতবা আলীর কথাই মনে পড়ছে আপনার এ লেখা পড়ার সময়। আর নিজেদের ভার্সিটি জীবনের কথা… ছোট ছোট চায়ের দোকান কতই না গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে আমাদের জীবনে, এবং এখনও রেখে চলেছে। আচ্ছা, একটা চালচিত্র দাঁড় করানো যায় না বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর ও শহরতলীর চায়ের দোকানগুলোর, যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং রেখেছে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক জীবনে? আমাদের তো বার নেই, ক্যাফে নেই… আমরা না হয় চায়ের দোকান বা ক্যান্টিনই খুঁজি, জলখাবারের দোকানপাটই খুঁজি…
রশীদ আমিন - ২০ এপ্রিল ২০০৯ (৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ)
ভাল লাগলো , লেখাটি বেশ তথ্যসমৃদ্ধ ।
আমাদের সৈয়দ মুজতবা আলীরও কায়রোর কাফে নিয়ে চমৎকার একটি লেখা আছে …
বিনয়ভূষণ ধর - ৮ আগস্ট ২০০৯ (৯:৫৩ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম,
রায়হান রশিদ-এর মতো আমারো এক্ষুনি এক কাপ গরম…গরম কফি বানিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে!
লেখাটা পড়ে সত্যি খুব মজা পেলাম।।
মাসুদ করিম - ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ (১২:৪১ অপরাহ্ণ)
বেঙ্গালোরে এমজি রোডের কফি হাউজের কফি আমার খুবই প্রিয়, কেরালার মালাবার সমুদ্রতীরেও খেয়েছি অসাধারণ কফি, মোট কথা ভারতীয় মৌসুমি কফির** ‘নন-এসিডিক’ বিশেষত্ব আমাকে প্রচুর কফি খেতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, সবচেয়ে ভাল ভারতীয় কফি আমি খেয়েছি ইতালিতে। ভারত এখন ধনী দেশই, কিন্তু ভারতের রয়েছে এখনো ‘গরীব রপ্তানিকারক’এর প্রবণতা — ভাল ভাল কফি সব ওরা বাইরে রপ্তানি করে দেয়, নিজেদের বাজারের কফি নিম্নমানের — রপ্তানি অযোগ্য কফি। (আমরাও কি ভাল গলদা চিংড়ি বা ব্যাঙ বা কাঁকড়া খেতে পাই?)। এটা উপমহাদেশের ব্যবসায়ীদের রপ্তানিযোগ্য জিনিসের নিজের দেশে বাজার সৃষ্টির অপারগতা ও এখানকার মানুষের ‘ফিলিস্টাইন’ (Philistine: A person who is guided by materialism and is usually disdainful of intellectual or artistic values) জীবনবোধের যৌথ প্রয়াসের ফলই বলতে হবে। ভারত এখন কফি রপ্তানিতে তৃতীয়, ব্রাজিল ও ভিয়েতনামের পরই এর স্থান — ব্রাজিলের সেরা কফির রপ্তানি ও নিজের বাজার অনুপাত প্রায় সমান সমান, ভিয়েতনামের এই অনুপাতটা আমার জানা নেই — তবে ভিয়েতনামের সেরা কফি ভিয়েতনামেই খেয়েছি অহরহ।
আজকে ভারতীয় এক ইংরেজি দৈনিকে কফি প্রসঙ্গে একটা লেখা পড়তে গিয়েই এই মন্তব্যের অবতারণা। এখানেও বলা হচ্ছে দক্ষিণ ভারতে কফি এসছে মক্কা থেকে এক সুফির কল্যাণে।
বিস্তারিত পড়ুন : On a bitter trail।
** মৌসুমি কফি, Monsooned Coffee — এজন্যই ‘নন-এসিডিক’, বর্ষার প্রচুর বৃষ্টিতে ও অন্য গাছের ছায়ায় চাষ করা ভারতীয় কফির বিশেষত্ব : এটি অনেক সবুজ — পানীয়ের গলাধঃকরণে অনেক রেশমি।
মাসুদ করিম - ২৫ মার্চ ২০১৩ (১:৩৩ পূর্বাহ্ণ)
বিপদে বন্ধুর পরিচয় — আমার দুই বন্ধু পানীয়ের একজন আরেকজনের দ্বারা সৃষ্ট সমস্যা থেকে পরিত্রাণ ঘটাতে পারে এটা ভেবেই খুব আনন্দ হচ্ছে। অ্যালকোহল পানজনিত যকৃতের ক্ষয়ক্ষতির বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় নিয়মিত কফি পান পুরুষদের জন্য রক্ষাকবচের কাজ করতে পার। হা, তবে নারীদের ক্ষেত্রে এরকম ঘটবে না — এই পৃথক ফলটা মোটেই পছন্দ হল না।
মাসুদ করিম - ২৮ জুন ২০১৫ (৬:৫৪ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৩ নভেম্বর ২০১৭ (১২:৪৭ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ (৮:৩৭ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১৮ মে ২০২৪ (১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ)
অযান্ত্রিক ছাঁকা/ফিল্টার কফি
এই পদ্ধতিই সহজতম
ভয়েল কাপড় আর ছাঁকনি
https://x.com/urumurum/status/1791764795227607408
https://mastodon.social/@urumurum/112461401581611133