৬০০০ ভাষার মধ্যে ২৪৯৮টিই বিপন্ন। পাঁচ রকমের বিপন্নতায় ভাগ করা হয়েছে বিপন্ন ভাষাগুলোকে। বিপন্ন (শিশুরা এ ভাষায় কথা বলে, কিন্তু সব সময় সব জায়গায় বলে না) ৬০৭টি, নিশ্চিত ভাবে বিপন্ন (মাতৃভাষা হিসেবে শিশুরা ঘরে আর ভাষাটি শেখে না) ৬৩২টি, ভয়াবহ ভাবে বিপন্ন (দাদা-দাদিরা বা বুড়ো প্রজন্ম এ ভাষায় কথা বলে, বাবা-মারা বা তাদের প্রজন্ম সে ভাষা বুঝতে পারে, কিন্তু নিজেদের মধ্যে তারা এ ভাষায় কথা বলে না এবং শিশুদেরও ভাষাটি আর শেখায় না) ৫০২টি, চূড়ান্ত বিপন্ন ( বুড়ো প্রজন্মই শুধু ভাষাটি ব্যবহার করে, কিন্তু তাদের মধ্যেও অনেকেই ভাষাটি ভুলে গেছে এবং যারা জানে তারাও সব সময় সে ভাষায় কথা বলে না) ৫৩৮টি ও অবলুপ্ত ( কেউই আর ভাষাটিতে কথা বলে না) ২১৯টি।
বাংলাদেশে পাঁচটি ভাষাকে বিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ককবরক, বিষ্ণুপ্রিয়-মণিপুরী, কুরুক্স –এই তিনটি বিপন্ন, বম নিশ্চিত ভাবে বিপন্ন এবং সাক ভয়াবহ ভাবে বিপন্ন।
১৯৬টি বিপন্ন ভাষা নিয়ে তালিকার শীর্ষে রয়েছে ভারত, তার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (১৯২), ব্রাজিল(১৯০), ইন্দোনেশিয়া (১৪৭) ও মেক্সিকো (১৪৪)।
ভয়াবহ ভাবে বিপন্ন, মাত্র ২৯০০০ ভাষাভাষী নিয়ে বিপন্ন ভাষা, এভেন্কি। সে ভাষায় লেখা একটি কবিতার ইংরেজি অনুবাদ পেয়েছি ইউনেস্কোর ওয়েবসাইটে।
If I forget my native speech,
And the songs that my people sing
What use are my eyes and ears?
What use is my mouth?
If I forget the smell of the earth
And do not serve it well
What use are my hands?
Why am I living in the world?
How can I believe the foolish idea
That my language is weak and poor
If my mother’s last words
Were in Evenki?
— Alitet Nemtushkin, Evenki poet
এই পোস্টের সব তথ্যই সংগৃহীত হয়েছে ইউনেস্কোর ওয়েবসাইট থেকে। ২০০৮ এর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ইউনেস্কো প্রকাশ করেছে ‘বিপন্ন ভাষা’র মানচিত্রের নতুন সংস্করণ। অষ্ট্রেলিয়ার ভাষাবিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার মোসলের সম্পাদনায় সারা পৃথিবীর ৩০ জন ভাষাতত্ত্ববিদের পরিশ্রমে তৈরি হয়েছে এ বারের মানচিত্র। মানচিত্রটি দেখুন ও বিষয়টি আরো বিস্তারিত জানুন।
মাসুদ করিম
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১৯ comments
মাইবম সাধন - ১ মার্চ ২০০৯ (৮:০০ পূর্বাহ্ণ)
খুবই সুন্দর একটি লেখা। তবে শুধুমাত্র বাংলাদেশেই বিলুপ্ত বা বিলুপ্তির পথে যে ভাষাগুলো তাদের একটা সমীকরণ দিলে আরো ভালো লাগত।
ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।
রায়হান রশিদ - ১ মার্চ ২০০৯ (১১:৪২ পূর্বাহ্ণ)
ক.
এই লেখাটির জন্য মাসুদ করিমকে অনেক ধন্যবাদ। একুশে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার পেছনে কিছু মানুষের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছিল বলে জানি। কিছুদিন আগে মুন্নী সাহা তাঁদেরই একজনের (বিদেশ দফতরের প্রাক্তন এক সচিব) সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন টিভিতে। সবগুলো তথ্য টুকে নিতে পারিনি। কারো যদি সেই পুরো প্রক্রিয়াটির ব্যাপারে জানা থাকে তাহলে উল্লেখ করলে ভাল হয়।
– কারা নিয়েছিলেন এই উদ্যোগ?
– কিভাবে কুটনৈতিক প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ এবং ইউনেস্কোর বিভিন্ন নিয়মনীতির সাথে যুদ্ধ করে এই দাবীটি শেষ পর্যন্ত অনুমোদন করানো গেল?
– কোন্ কোন্ দেশ এই দাবীকে সমর্থন দিয়েছিল? কারা দেয়নি? [যতদূর জানি, ইউরোপীয় ব্লকের দু’একটি দেশ ছাড়া বাকীদের নাকি তেমন একটা সমর্থন ছিলনা এই দাবীর পক্ষে; আবার, পাকিস্তান নাকি সমর্থন দিয়েছিল শুরু থেকেই]
– কি কি বাধা এসেছিল এই দাবী বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এবং কি প্রক্রিয়ায় সে সব একে একে অতিক্রম করা গেল?
এই আলোচনাটা জরুরী এ কারণে যে এ থেকে আমরা সবাই হয়তো কিছু শিখতে পারবো। কিছু দাবী আছে যে সব আদায় করতে অত্যন্ত দক্ষ activism এর দরকার হয়। বিভিন্ন চ্যানেল (কুটনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক) এর সাহায্য নিয়ে তাকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারলেই কেবল সে সব দাবী আদায়ে সফলতা আসে। ভাষা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিলাভ তেমনই একটি সাফল্যের গল্প।
খ.
ভাষা দিবসের স্বীকৃতি লাভের আনুষঙ্গিক একটি অঙ্গীকার ছিল বাংলাদেশের মাটিতে “আন্তর্জাতিক ভাষা ইনস্টিটিউট” এর প্রতিষ্ঠা। সে উদ্যোগটির কি হয়েছিল, কেউ বিস্তারিত লিখে জানালে আমরা সবাই জানতে পারতাম। জানতে পারলে এর বাস্তবায়নের জন্য ক্যাম্পেইন করা সহজতর হতো।
গ.
মাইবম সাধন খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় উত্থাপন করেছেন। বাংলাদেশে বসবাসকারী বিভিন্ন জাতিসত্ত্বায় কত গুলো এবং কি কি ভাষা প্রচলিত আছে? সেগুলোর কতগুলোর নিজস্ব বর্ণমালা রয়েছে? কতগুলো এখন বিলুপ্তির দ্বার প্রান্তে? এই আলোচনার পাশাপাশি এটাও আমাদের খুঁজে বের করতে হবে এই সব প্রতিটি ভাষার নিজস্ব লোকজ কাহিনীমালা, উপকথা, পদাবলী ইত্যাদি। এসব সংরক্ষণ করতে হবে। শুধু সংরক্ষণ করলেই চলবে না, আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে যথাযথ মর্যাদায় তুলে ধরতে হবে নতুন প্রজন্মের কাছে। অমূল্য এই ঐশ্বর্য অগোচরে অবহেলায় চিরতরে বিলীন হতে বসেছে। একে প্রতিরোধ করতে হবে।
রায়হান রশিদ - ৫ মার্চ ২০০৯ (১:২৬ পূর্বাহ্ণ)
এই পোস্টটি পেলাম:
বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের ভাষা আন্দোলনের কথা
মাসুদ করিম - ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (১০:২৬ পূর্বাহ্ণ)
নীরবে মারা গেল আন্দামানের ‘বো’ ভাষা। শেষ ‘বো’ভাষী বোয়া সিনিয়রের মৃত্যুতে আরেকটি ভাষা হারিয়ে গেল পৃথিবী থেকে। পড়ুন এখানে।
মাসুদ করিম - ২৩ জুলাই ২০১০ (৮:১১ অপরাহ্ণ)
হারিয়ে যাওয়া ভাষা পড়বে ও অনুবাদ করে দেবে কম্পিউটার। পড়ুন এখানে।
মাসুদ করিম - ২৯ অক্টোবর ২০১০ (৫:৫৪ অপরাহ্ণ)
কোচিনে মালায়লাম ও পর্তুগিজ ক্রেয়লের শেস সদস্য ছিলেন রোজারিও, তিনি মারা গেছেন ২০ আগস্ট ২০১০। বিস্তারিত পড়ুন এখানে।
মহসীন রেজা - ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (৩:০৯ অপরাহ্ণ)
বাংলাদেশে বসবাসরত সকল আদিবাসিদের ভাষা রক্ষায় জোর অগ্রগতি চাই। মায়ের ভাষায় তাদের পাঠ্যপুস্তক চাই।
রেজাউল করিম সুমন - ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (১১:২৪ অপরাহ্ণ)
‘আদিবাসী শিশু মাতৃভাষায় পড়বে কবে?’ শীর্ষক সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বিপ্লব রহমান লিখেছেন,
মাসুদ করিম - ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (১০:১২ পূর্বাহ্ণ)
চর্যাপদের যুগে বর্ণমালাকে বলা হত সিদ্ধিরত্থু, যাকে ধরে ভাষার সিদ্ধি। আদিবাসী ভাষাগুলোর বর্ণমালা উদ্ধারে সর্বশক্তি নিয়োগ করা উচিত আদিবাসী ভাষাকর্মীদের। সেই কাজে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দেয়ার পরও যদি দেখা যায় ওভাবে ভাষাকে পূর্ণগতিতে ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না, তাহলে আমার ব্যক্তিগত অভিমত বাংলা বর্ণমালায় আদিবাসী ভাষাগুলো বাঁচিয়ে রাখার ও সচল করার যেন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কারণ আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য ভাষাকে বাঁচানো। যদি এরকম দেখা যায় যে, নতুন প্রজন্মের আদিবাসীদের কাছে বাংলা বা কারো কারো কাছে ইংরেজি বর্ণমালা পরিচিত হয়ে উঠেছে অনেক বেশি তাহলে সেই বর্ণমালাকে ধরে ভাষাকে গতি দেয়াটা অনেক বেশি ভাষার জীবনরক্ষার জন্য কার্যকর হবে।
মাসুদ করিম - ৫ মার্চ ২০১৩ (৭:১৭ অপরাহ্ণ)
বিস্তারিত পড়ুন : দেশে ৫৪ ভাষা প্রচলিত: সংস্কৃতি মন্ত্রী।
মাসুদ করিম - ২২ জুন ২০১৩ (২:৫৭ অপরাহ্ণ)
বিপন্ন ভাষা থেকে এভাবে অদ্ভূত ভাষার সৃষ্টি হওয়া তো খারাপ নয়। তেমনি একটি নতুন অদ্ভূত ভাষা আবিষ্কৃত হয়েছে এস্ট্রলিয়ার তানামি মরুভূমি তথা উত্তর জনপদে। ইংরেজি, আদিবাসী ভাষা ওয়ালপিরি ও ক্রেয়লের সংমিশ্রণের এভাষার সৃষ্টি হয়েছে। এভাষার ক্রিয়াপদে ইংরেজির আধিপত্য এবং বিশেষ্য ও বাক্য গড়নে ওয়ালপিরির আধিপত্য পরিলক্ষিত হয়েছে। নতুন এভাষাটির নাম রাখা হয়েছে Light Walpiri।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে।
মাসুদ করিম - ১৪ আগস্ট ২০১৩ (৫:৩৯ অপরাহ্ণ)
নতুন শুমারি মতে ভারত হারিয়েছে এপর্যন্ত ২২০টি ভাষা। ২০১১ খেকে শুরু হয়ে দুবছর ধরে চলেছে এই শুমারি — ১৯৬১ সালে ছিল মোট ১১০০ ভাষা ৫০ বছরের ব্যবধানে ২০% ভাষাই হারিয়ে গেছে।
মাসুদ করিম - ৫ ডিসেম্বর ২০১৩ (৯:৩৬ পূর্বাহ্ণ)
অফলাইনের চেয়ে অনলাইনে ভাষার বিপন্নতা আরো বেশি, প্রচলিত ভাষার ৫ শতাংশেরও কম অনলাইনে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর যেহেতু সারা পৃথিবীতে অনলাইনের প্রবণতা অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বাড়ছে ফলে ভাষার ডিজিটাল মৃত্যু বিকট সমস্যা হিসেবে ভাষার বিপন্নতার প্রধান কারণ হিসেবে দেখা দেবে অদূর ভবিষ্যতে। অবশ্য এখানে আশার কথাও আছে, যদি অনলাইনে প্রচলিত ভাষার ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে থাকে তাহলে ভাষার ডিজিটাল সজীবতা ভাষার মধ্য দিয়েই পৃথিবীতে বহুত্ববাদিতার সম্ভাবনা অকল্পনীয় হারে বাড়িয়ে দিতে পারবে।
মাসুদ করিম - ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ (২:৫৫ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৩ মার্চ ২০১৪ (৩:২৮ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ (১:০৭ অপরাহ্ণ)
লিন্ক এখানে।
মাসুদ করিম - ১ জুলাই ২০১৫ (১০:৩২ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৯ জুলাই ২০১৫ (১২:০০ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২০ জানুয়ারি ২০১৬ (১০:০৮ পূর্বাহ্ণ)