গদ্যে ভাল লিখতে

মনিটরের ঠিক পেছনে একটা নীরব সাদা দেয়াল এবং যদি স্থায়ী হয় তাহলে তো কোনো কথা নেই তবে অস্থায়ীও হতে পারে অবশ্য সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে দেয়াল যেন হয় এবং সাদা। এখন লেখক যখন কাজ শুরু করেছেন তার গদ্যের যা তিনি সারা জীবন ধরেই লিখছেন এবং এই গদ্য তিনি ভাল লিখতে চান আর আমরা জানি এমন শুনতে পাই কেউ কেউ বলে মৃত গদ্যই শুধু ভাল জীবিত সব খারাপ। একথা বলে কাউকে বিপদে ফেলতে চাই না যখন গদ্যের কাজ শুরু হয়ে যাবে মনিটরে আক্ষরিক তখন অক্ষরই সব এটা মানতে হবে এবং জানতে হবে মেঘমণ্ডল সামাজিক যোগাযোগ এসব ঢেঁকুর ওঠা যেকোনো মূল্যে পরিহার করতে হবে। তাহলে ওই যাকে বলে অর্ধেক গদ্যজয় হয়ে গেল।

এটা ভাবতেও ভয়ে রক্তহিম হবে গদ্যের প্রতিটি শব্দ প্রেতাত্মা এবং সামান্যতম ভুলে এদের যেকেউ ঘাড় মটকে দিতে পারে। আবার জমে গেলে তো গেলই এমন এমন জায়গায় বসবে স্তব্ধ অপ্রমত্ত অত্বর ভাস্কর্য। এখন তাই সময়ের হিসেবে নয় ধ্যানের প্রয়োজন দিব্য বিস্তারে যেন অক্ষরে অক্ষরে স্থিতপ্রাজ্ঞ মনের স্থিতিস্থাপকতায় বাক্যের বিনাশ ও উদ্ভাসকে বিন্যাসে সমাবেশে বুদ্ধিদীপ্ত মননদীপ্ত বস্তুময় বাস্তবতায় পরিদৃশ্যমান হয়। গদ্যের শিক্ষা এরপর থেকে বলতেই হবে মৌখিক যান্ত্রিক জৈবিক অনুভবের অক্ষরের মানসিক অতিরিক্তের অস্থির পথ পরিক্রমায় নিবিড় স্থিরতার অনুপুঙ্খ প্রকাশ।

আর সবচেয়ে বিরক্তিকর ক্ষান্তিহীন লিপ্ততা ওই প্রতিদিনের পরিচর্যা। এর কোনো শেষ নেই আবার এর শেষ মানেই অরক্ষিত ক্ষয়ের ঝুঁকিতে নিরন্তর নিঃশেষ হয়ে যাওয়া। খাটাল। প্রায় দাসত্ব তৎপর কর্মস্থল। গদ্য এমনই। অথচ কী পাই আমরা যারা গদ্য সৃষ্টি করে। আর ভাববই বা কেন। এখানেই আরো নিষ্ঠুর তৎপরতা। কিছুই পাব না কিন্তু খাটালের পরিশ্রম চলবে। চালিয়ে যেতে হবে তত দিন যত দিন এই দূরাকাঙ্ক্ষা অবিকল্প ধরে রাখব গদ্যতৎরপতা এক দিনের জন্যও বন্ধ হবে না। এই পরিশ্রম আবার পরিশ্রম পরবর্তী অপ্রাপ্তি কিছু তো লাগেই একে ভুলে থাকতে। কিন্তু ভুলে থাকতে যা কিছু সেব্য তাতেও প্রয়োজন কঠোর নিয়মরক্ষা কয়েক ফোঁটা কি কয়েক চূর্ণ বেশি পড়লেই উচ্ছন্নে যাবে খাটালের কাজ। এবং সঙ্গ বর্জিত সংযমের পরাকাষ্ঠা একটা জীবন যদি পরিগণিত হয় সেজীবনের তাড়িত সময় আনে গদ্য।

নয় কে হয় হয়কে নয় করতে পারা বড় কিছু নয় যদিও একাজে গদ্যের সুযোগ মাত্রাতিরিক্ত। এখন এখানেই গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ে আছে সুযোগ কতটুকু নেয়া যেতে পারে — পর্যাপ্ত কত দূর পর্যন্ত পর্যাপ্ত, উদ্বৃত্ত কতটুকু উদ্বৃত্ত হলেও মাত্রাগত।এসব ব্যাপার স্যাপার আবার খুব টেবিলের কাজ। কর্মকর্তার দায়িত্বের ধাঁচের অনুকূল বা প্রতিকূলকে সমন্বয়ের সিদ্ধতা তখন প্রশংসিত হয়। তাই এখানে প্রশ্ন ওঠে কতটুকু প্রশংসা সত্যিই গদ্যকার পাচ্ছেন অথবা প্রশংসা না পেলেও তার সিদ্ধতা চিহ্নিত হচ্ছে তার সমসাময়িকতায়। এপর্যায়টিও বেশ হতাশার। হয় না কিছুই। যা হয় তা অবজ্ঞা। যাকে বিশুদ্ধ অবজ্ঞা বলতে পারলে আরো ঠিক বলা হয়। তবুও গদ্যের সৃষ্টিশীলতা সিদ্ধহস্ততাকে আঁকড়ে থাকে চারিদিকের সমস্ত অবজ্ঞাকে গায়ে মেখেও।

তো শিল্প উদযোগ না হলে আর কাজ করে কীর্তিমান হওয়ার সম্ভাবনা দিনশেষে অপ্রতুল। সৌন্দর্যতত্ত্ব অবিকল্প। এটাই ওই কালোত্তীর্ণ হওয়ার মূলমন্ত্র। এটাই ওই মেলাবে মিলিবে সূত্র। শিল্পের সম্ভাব্য সমস্ত প্রকরণের প্রতি গদ্যের থাকবে দুর্মর আকর্ষণ। সেই আকর্ষিত সত্তার হৃদয়মননমস্তিষ্কের আক্ষরিক বস্তুবিশ্ব উৎকীর্ণ হবে গদ্যে — বহুমাত্রিক বিস্ময়কর বস্তুত গদ্যশিল্প।

এইতো। ভাষার কথা বলা হয়নি। গদ্য চায় সব ভাষায় গদ্য হোক। আজো অনেক ভাষা গদ্য শূন্য। আবার সব ভাষায় গদ্য সমান উচ্চতায়ও নেই। এক ভাষার গদ্য অন্য ভাষার গদ্যকে প্রভাবিত করুক। বিনিময়ের অনুবাদ সব সীমানা যথাসম্ভব উন্মুক্ত করে দিক। দিকভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তাতে বাড়ে ঠিকই কিন্তু অন্যদিকে এভাবে লব্ধ দৃকসমৃদ্ধি গদ্যের জগতকে নিরন্তর উদ্ভাসিত করে নিজের গদ্যে আরো ভাল লিখতে।

মাসুদ করিম

লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.