সেই কোন্ ছেলেবেলায় সকাল হতো ‘আকাশভরা সূর্য-তারা, বিশ্বভরা প্রাণ’ শুনতে শুনতে। একই গানের ভিতর রোজ সকাল গড়িয়ে ইস্কুলের মাঠে। সেখানেও আসতেন তিনি [. . .]

সেই কোন্ ছেলেবেলায় সকাল হতো ‘আকাশভরা সূর্য-তারা, বিশ্বভরা প্রাণ’ শুনতে শুনতে। একই গানের ভিতর রোজ সকাল গড়িয়ে ইস্কুলের মাঠে। সেখানেও আসতেন তিনি — ‘মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি’। রোজ সকাল থেকে রাত অবধি মাকে নানা ভাবে জ্বালিয়ে, কাঁদিয়ে, নির্বিঘ্নে যখন ঘুমিয়েছি, জানিনি মলিন মুখের মায়ের জন্যে ব্যথা হয়। জানিনি আমার চেনা মায়ের বাইরে আর যাকে মাতৃ রূপেন সংস্থিতা জেনে ভালবাসতে গিয়ে এই দূরের দেশে চোখ ভেসে যাবে জলে। রোজ এমন করেই জীবনের নানান অনুভবকে রাঙিয়ে দিয়ে, বাজিয়ে দিয়ে তিনি যখন আমার নিত্যদিনের ভিতর জুড়ে বসেন তখন বুঝি আর কেউ নয়, গানের ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি আর কেউ নন, তিনি নিজেই।

সমস্ত দিন বৃষ্টিতে ভিজে এই শহরটা যখন একটা মনখারাপের চাদর জড়িয়ে ঘুরছে, তখন সন্ধ্যা নামার মুখে দূরের আকাশে মেঘ সরে গিয়ে একটুকরো সাদা মেঘে জড়িয়ে সূর্যটা উঁকি দিলে, আমি তাঁকেই যেন হাসতে দেখলাম আমার এই মেঘলা দিনের ভিতর। আর মনের ভিতর থেকে তিনিই গাইলেন ‘নূতন আলোয় নূতন অন্ধকারে/ লও যদি বা নূতন সিন্ধুপারে/ তবু তুমি সেই তো আমার তুমি,/ আবার তোমায় চিনব নূতন করে।’ এমন নিত্যজানার ভিতর দিয়ে আমার চিরকালের ভিতর যখন তিনি সত্যি হয়ে ওঠেন, আর সব কিছুকে ছাপিয়ে তাঁর উপস্থিতিই জীবন উপভোগের ইচ্ছেকে জাগায়। মনের ভিতর যে অসম্পূর্ণতা সারাক্ষণ অস্থির তাকে স্থিতি দিতেই গীতবিতানের পাতা উল্টে দেন।

স্বরবিতানের সাথে পরিচয় ঘটেনি তখনও, গীতবিতানই কেবল উল্টেপাল্টে দেখতাম। সেইসব দিনগুলোতে মা কেমন উদাস গলায় গাইত ‘ভালোবেসে যদি সুখ নাহি’। কিসের অসুখ মায়ের সেটা জানবার অবকাশ ছিল না ওই বয়েসে। কেবল মায়ের রিনরিনে গলার ভিতর গানটাকে পেতে চাইতাম সে সময়ে। আরো কত পরে নিজের উপলব্ধিকে শাণিয়ে নিয়ে বুঝেছি ভালবেসেও অসুখী হবার ব্যথার ভিতর আমার মা আর রবি ঠাকুর মিলতেন। কিংবা তিনি হয়তো এমনি করেই নানান বয়েসের ভিতর নানান জনের নানান রূপের ঈশ্বর হয়ে ওঠেন। কোনো কোনো রুক্ষ রোদের দিনে উঠোনে কাপড় নাড়তে গিয়ে মায়ের সাথে গলা মিলিয়ে গেয়েছি ‘মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে’। সমস্ত সংসারের চারদিকে রুক্ষ তাপ দুঃখ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে যখন, সেই রকমের একটা সময়ে এই গান গাইবার মন মাকে রবি ঠাকুর পাইয়ে দিয়েছিলেন। আর আমার ছোট্ট বুকের ভিতর মায়ের সেই প্রাণ ঢেলে গাইবার ছবিটি চিরকালের জন্যে আঁকা হয়ে গেল। মুগ্ধতায় চোখের পাতা নেমে এলে মা আর রবি ঠাকুর পাশাপাশি; এ যেন ‘আয় তবে সহচরী, হাতে হাতে ধরি ধরি’।

গীতবিতান খুঁজে স্বরবিতান সাথে নিয়ে রত্না পিসির হাত ধরে প্রথমবার শেখা রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘তাই তোমার আনন্দ আমার ’পর’। গানটা বাণী না বুঝেই সেদিন শিখেছি; আর একটু সময় গড়ালে বাণীটা আবিষ্কার করলাম কোনো এক প্রার্থনার মুহূর্তে। গীতবিতানের সমস্ত পূজা পর্যায়ের গানের ভিতর যে-ঈশ্বরকে কুড়িয়ে পেলাম সে যেন দীর্ঘদিনের জানাকে এক ফুৎকারে উড়িয়ে দিল। ছেলেবেলায় বড়োদের মুখে শোনা, ধর্ম-শিক্ষকের বয়ানের ভিতর যে জুজুর-ভয়-দেখানো ঈশ্বর তাঁকে আর কোথাও খুঁজে পেলাম না। ঈশ্বর যে বন্ধু, প্রিয়, জীবনস্বামী, বঁধুর মতো এত প্রিয় এত কাছের হয়ে ধরা দিতে পারেন রবি ঠাকুর না থাকলে তা জানতাম কী করে? কেমন করে এমন অধিকার নিয়ে তাকে মিলতে ডাকতাম ‘হাতখানি ওই বাড়িয়ে আনো, দাও গো আমার হাতে —/ ধরব তারে ভরব তারে, রাখব তারে সাথে’? কী করে তিনি লিখলেন ‘আরো প্রেমে আরো প্রেমে/ মোর আমি ডুবে যাক নেমে’। আরো অনেক পরে রবীন্দ্রনাথের (লেডি রানু মুখোপাধ্যায়কে) লেখা চিঠিতে মিলেছে উত্তর। তিনি লিখছেন, ‘আমাদের যে ঠাকুরকে আমরা প্রণাম করি, তিনি যত বড়ো তার সমস্তটা যদি সম্পূর্ণ আমাদের সামনে আসত, তা হলে সে আমরা সইতে পারতুম না। কিন্তু হিমালয় পাহাড়ের মত আমরা তাঁর বুকের উপর দিয়ে ক্রমে ক্রমে উঠি। যতই উঠি না কেন, তিনি আমাদের একেবারে ছাড়িয়ে যান না — বরাবর আমাদের সঙ্গী হয়ে তিনি আমাদের আপনি উঠিয়ে নিতে থাকেন। বুদ্ধিতে বুঝতে পারি তিনি আমাদের ছাড়িয়ে আছেন। কিন্তু ব্যবহারে বরাবর তাঁর সঙ্গে আমাদের সহজ আনাগোনা চলতে থাকে। তাই তো তাঁকে বন্ধু বলতে আমাদের কিছু ঠেকে না— তিনি তাঁর উপর থেকে হেসে আমাদের বন্ধু বলেন।’ আমাদের নিত্যদিনের ছোট গণ্ডির ভিতর ঈশ্বরকে কেমন খাপে মিলিয়ে বসিয়ে দিলেন রবি ঠাকুর! যে-ঈশ্বর ঠুনকো চাওয়া-পাওয়ার ভিতর থেকে বাইরে এসে অসীম অনুভবের ভিতর দাঁড়ালেন।

এমন কত কিছু পাইয়ে দিতে গানগুলোর ভিতর দিয়ে রবীন্দ্রনাথ আসেন আমাদের ঘরে, মনে, আমাদের খোলা প্রান্তরে। আর আমি এই প্রাপ্তির ভিতর হেঁটে হেঁটে পৌঁছে যাই কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। সকালবেলায় জানালার ভেনিশিয়ান ব্লাইন্‌ড্ টেনে আলো ডাকতে গিয়ে তাকে নিয়ে ফিরি। দুপুরের রোদে পুড়তে পুড়তে যখন সব কিছুকে কেমন হেলায় তাকিয়ে ফেলে আসতে চাই, সেই সব উদাস সময়ে প্রিয় সব মুখের ছবি হয়ে তিনি আসেন বুকের ভিতর। আমার সমস্ত উদাসীনতাকে বাজিয়ে দিয়ে আমাকে দিয়েই গাইয়ে নেন — ‘এ মোর হৃদয়ের বিজন আকাশে/ তোমার মহাসন আলোতে ঢাকা সে’। চরাচর ছাপিয়ে যখন সন্ধ্যা নামে এখানে, তখন কি এক অদ্ভুত বিষাদের ভিতর সব কেমন হারিয়ে যেতে শুরু করে। স্বস্তির আশায় মন অস্থির হতে চায়। তেমনি এক সন্ধ্যায় প্রথমবার শুনি ‘এ পরবাসে রবে কে হায়’। সন্ধ্যা যেন একটু বেশি তাড়াতাড়ি নেমে এসেছিল সেদিন। চোখ ঝাপসা হয়ে বাইরের সব ছবি কেমন জলে ধুয়ে যেতে শুরু করলে বুকের কাছে ক্রমাগত বেজেছে ‘হেথা কে রাখিবে দুখভয়সঙ্কটে—/ তেমন আপন কেহ নাহি এ প্রান্তরে হায় রে’।

এই যে এমন করে দাগ কেটে দিয়ে বাজে এই গানগুলো নানান মুহূর্তে, তখন বুঝি সুরের নয় বাণীর ভার গানগুলোকে কাঠামোগত ভাবে সুসংহত করেছে। ফলে বাণীটা ঠিক বোধগম্য না হলে এই গানগুলো কেবল গাওয়া হয়, সঙ্গীত ঠিক হয়ে ওঠে না। তবু আজকাল এই গানগুলোকে গায়ের জোরে ‘আধুনিক’ করে তুলবার একটা চেষ্টা চোখে পড়ে। আমার মতো অনাধুনিক আটপৌরে মনের শ্রোতা এতে অস্বস্তিতে পড়ে, কেননা এর গায়কীও এই গানগুলোর গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভারী ভারী যন্ত্রের সাথে মাথা দুলিয়ে লাফঝাঁপ দিয়ে চিৎকার করে গাইলে ‘দূর হতে আমি তারে সাধিব, গোপনে বিরহডোরে বাঁধিব’র যে-ব্যথা যে-আবেদন সেটা আর মুখ্য থাকে না। কেবল গানগুলো ক্রমশ দূরে আরো দূরে সরে যেতে থাকে।

রবীন্দ্রনাথ আধুনিকতা ভালবাসতেন, নতুন কিছুর সাথে যুক্ত হতে চাইতেন সবসময়ই। সরলা দেবী পিয়ানোতে রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছু গানের নোট তৈরি করে দিয়েছিলেন; এতে তিনি এতটাই আনন্দিত হয়েছিলেন যে পরে সে-কথা ইন্দিরা দেবীকে লিখে জানিয়েছিলেন। বিদেশি গানের সুরে নিজের কথা বসিয়ে নিয়ে গান তৈরির কাজটি তাঁর আগে কেউ করেছেন বলে আমার জানা নেই। প্রাণ ভরে সমস্ত জগৎ থেকে গ্রহণ করতে পারতেন বলেই অমন অকাতরে উজাড় করতে পেরেছেন নিজের সৃষ্টিশীলতাকে। এমন যাঁর আধুনিকতার বোধ তাঁর গানগুলোর নতুন করে কোনো আধুনিক আচ্ছাদনের দরকার আছে বলে মনে হয় না। বলছি না আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার করা যাবে না; বলছি — বাণীপ্রধান গানগুলো যদি অযাচিত যন্ত্রসঙ্গীতের সুরের ভিতর কেবল গাইবার জন্যে গাওয়া হয় তাহলে গানগুলোর আবেদন নষ্ট হয়। যন্ত্রের বহুল ব্যবহার সুরকে মুখ্য করে দিতে চাইলে বাণীগুলো ভাবনা তৈরির সুযোগ পায় না। আমাদের মতো অনাধুনিক শ্রোতার জীবনে এই বাণীগুলো আপনা থেকেই ঝড় তৈরি করে বলেই সুরগুলোও তেমন করে বাজে। যেমন করে বাজলে গানের ভিতর দিয়ে ভুবন দেখার অনুভব হয়। মনে হয় — ‘তখন তারি আলোর ভাষায় আকাশ ভরে ভালবাসায়,/ তখন তারি ধুলায় ধুলায় জাগে পরম বাণী’।

লুসিফার লায়লা

শুকতারা নিভে গেলে কাঁদে কি আকাশ ?

১১ comments

  1. অর্ণব - ৮ মে ২০১৪ (১২:৩৯ পূর্বাহ্ণ)

    লেখা ভালো লেগেছে। আধুনিক যন্ত্রানুসঙ্গের ব্যবহার ও গীতির মূলভাব বজায় থাকা, বিষয়টি আরেকটু বিস্তৃত আলোচনার দাবী রাখে। মানে বলতে চাইছি,
    মায়াবন বিহারিনী গানটি ‘আমার কাছে’,রক ভার্সনে নূতনরূপে ধরা দিয়েছে। তো আমার কী ধরে নেয়া উচিৎ, মূলভাব বুঝতে অক্ষমতা নাকি নতুনভাবে আবিষ্কার?

    • লুসিফার লায়লা - ৮ মে ২০১৪ (৫:৫৩ অপরাহ্ণ)

      অর্ণব অনেক ধন্যবাদ লেখা পড়বার জন্যে।
      রবি ঠাকুরের গান মূলত বানী প্রধান,আর বানী প্রধান সঙ্গীত সুর আসে বানীর ভারবাহী হয়ে, আর এর আর একটা মুখ্য বিষয় হোল এসব গানের গায়কী। আমি সে কথা লিখেছিও।গানগুলোকে যদি যন্ত্রসঙ্গীতের বোঝায় ভারি করে তোলা হয় তখন সুরটা মুখ্য হয়ে ওঠে বানীটা হারিয়ে যায়। আর গায়কীটা গুরুত্বপূর্ণ সেটাই একটু বিস্তারত লিখছি। রবি ঠাকুরের গান তার সামগ্রিক জীবনকেই প্রকাশ করে সে কথা তার ছেলের সৃতি কথায় আছে,আর আছে রবি ঠাকুরের নানন লেখায় চিঠি পত্রে।এই যে এমন গভীর অনুভব দিয়ে প্রায় তার সমস্ত উজার করে গানগুলো যে তিনি লিখেছেন সে গান গুলো যখন কেউ রক স্টাইলে, হেলে দুলে, লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে,তরল করে গায় তবে কি সেই বানী গুলো ঠিক অর্থবহ হয়? যে গানটার কথা আমি লিখেছি সে গানটার বানী ধরুন না, কি গভীর অভিমানের ভাষা ‘থাক থাক নিজ মনে দূরেতে, আমি শুধু বাঁশরির সুরেতে প্রশ করিব তার তনুমন অকারন’ অথবা সেই প্রেম কি কোথাও অনুরনিত হয় অই রক স্টাইলের গায়কীতে যখন ওরা ওইভাবে গায় ‘ দূর হতে আমি তারে সাধিব গোপনে বিরহ ডোরে বাধিব’।
      আর আমি ব্যক্তিগত ভাবে রবি ঠাকুরকে আমার সম্পদই মনে করি, মনে করি আমার একান্ত প্রার্থনার জায়গা। ফলে যেখানে সেখানে যেমন তেমন করে আমি ওনাকে পাইনা। অনেকদিন এমন হয়ছে রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠান গুলোতেও আমি তাকে পাইনি।ঘুরেফিরে ক্লান্ত হয়ে সন্ধায় বাসায় ফিরে শুনেছি আমার মা বারান্দায় বসে খুব আস্তে আস্তে গাইছেন তুমি কি কেবলি ছবি। সারাদিন এত আড়ম্বরের ভেতর তাকে পাইনি অথচ মায়ের অই ধ্যনি ভঙ্গিতে গাইবার ভেতর তাকে আমি পেলাম বুকের কাছে। আপনি হয়ত রক স্টাইলে গাইবার ভেতর দিয়ে তাকে পেলেন আর আমি ঠিক ওখানটাতেই তাঁকে হারিয়ে ফেললাম।
      আগাম ধন্যবাদ জানিয়ে রাখলাম আমার এই ধান ভানতে শিবের গাজন গাইবার দীর্ঘ আলোচনা পড়বার জন্যে।

      • অর্ণব - ১০ মে ২০১৪ (২:৫৩ পূর্বাহ্ণ)

        সুচিন্তিত উত্তরের জন্য ধন্যবাদ।
        রবি ঠাকুরের গান বাণী-প্রধাণ।এ ব্যাপারে আপনার কথাগুলোর সাথে পুরোপুরি একমত।যন্ত্র যদি ভার হয়ে গিয়ে মূলভাবকে ভেঙে ফেলে তবে
        ভালো না লাগারই কথা!আর রক,মেটাল সঙ্গীতের ক্ষেত্রে কণ্ঠকেও একটা ইন্সট্রুমেন্ট মাত্র!এটাই প্রাচ্যের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও পাশ্চাত্য রকের
        মধ্যে মূল পার্থক্যের বিষয়টি। প্রশ্নটি হচ্ছে,রক স্টাইলে গাইলে কি গানটি তরল হয়ে যায়?অভিমানের মওত অনুভূতি কি রকে আসছেনা?
        বাণিবিঘ্নিত হচ্ছে? রকসঙ্গীতে গূঢ়-বাণি-নির্ভর গানও নেহাত কম নয়!
        এক্ষেত্রে শেষকথা বোধহয়,শুনতে ভালো লাগা।যেমন আপনার কাছে রক-ভার্সনটি ভালো লাগেনি,আমার লেগেছে।আসলে এটা মানুষভেদে
        ভিন্ন মনে হয়।আমার কথা, গূঢ় বাণী,ভাবের গভীরতাকে আমরা কেন ঐ “রাবীন্দ্রিক স্টাইল” বলয়েই আটকে রাখছি? এর বাইরেও তো রবীন্দ্রসঙ্গীত
        নতুনভাবে মূর্ত হতে পারে!পারেনা কী? দেখুন বাংলা যতো বর্ষার গান আছে,বেশিরভাগই মেঘমল্লার বা এই ধরণের ঠাট ও রাগভিত্তিক।
        মেঘমল্লার এর সুরটা শুনলেই আমাদের কেমন বর্ষার কথা মনে হয়! কিন্তু কেন?এ রাগই কি বর্ষার গানের জন্য স্ট্যান্ডার্ড?অন্য ভাষায় যেসব বৃষ্টির
        গান আছে তাতো আর এই রাগভিত্তিক নয়! কিন্তু তাতে নিশ্চয়ই বর্ষার ভাবে কমতি আসেনা।সুবোধ রায়ের কথা বোধহয় এটা,”বর্ষার গান কেন
        মল্লারেই বাঁধতে হবে?” আর্টের কি কোন সীমারেখা টানা যায়? রবীন্দ্রসঙ্গীতেই বা কেন?
        সব রকভার্সনই যে আমার ভালো লেগেছে তা কিন্তু নয়,যেমন ‘রক উইথ রবীন্দ্রনাথ’ জঘন্য।নচিকেতার ‘পাগলা হাওয়া’ বর্ষার ফিল দেয়নি,কিন্তু
        আমার মজা লেগেছে।শিরোনামহীনের কয়েকটা ভালো লেগেছে,যদিও ভোকাল তুহিন ভাইয়ের গলা সব রবীন্দ্রসংগীতের জন্য উপযুক্ত লাগেনা।
        আমি আমার কথাগুলো ঠিক গুছিয়ে বলতে পেরেছি কিনা জানিনা।আমার একটা কমন পর্যবেক্ষণ, যারা রক-মেটাল ভালোবাসেন তারা রবীন্দ্রসঙ্গীতকে
        ঢিলেমী মনে করে,আবার রবীন্দ্রপ্রেমিরা রককে উৎকট-উল্লাস।আমার কেসটি এক্ষেত্রে একটু জটিল,ছোটবেলা থেকে শাস্ত্রীয়-সঙ্গীত চর্চা করে এসেছি
        আর ভার্সিটি ক্যাম্পাসে রকব্যান্ড। আমি দুটো ধারাকেই উপভোগ করি তুমুলভাবে। আর রক একটা দর্শন, এর উপলব্ধিটাও আসলে চর্চার ব্যাপার।
        আমি একটা সীমারেখা টানতে চাচ্ছি আসলে,একটা স্ট্যান্ডার্ড।আমাদের চর্চাটা আসলে কীভাবে হওয়া উচিৎ। বিশ্বভারতীর চোখ-রাঙ্গানো,রবি ঠাকুরের
        বলতে চাওয়া,আপনার-আমার ভালো লাগা,তরুণ প্রজন্মের চাওয়া সবকিছু মাথায় রেখেই।আপনার অভিমত বলুন।

        আর হ্যাঁ, খালি গলায় রবীন্দ্রসঙ্গীত,সে পরাজাগতিক! 🙂

        • লুসিফার লায়লা - ১১ মে ২০১৪ (২:৪৭ অপরাহ্ণ)

          অর্ণব
          আমি সেকেলে শ্রোতাই কিন্তু নতুন কিছু নিতে পারিনা এমন নয়। বরং নতুন নিতে ইচ্ছেও করে বিষয় হোল সব নতুনে মন ওঠে না, বিশেষ করে সেই সব নুতুনে যেখানে পুরোনটি মনের মত করেই ঠাই করে নিয়েছে আর নতুনটি পুরনোটিকে কেবল একটা নতুন মাত্রা দেবার জন্যেই চেস্টা করছে সেই সব নতুন আমি একটু রয়ে সয়ে নেই বা নেই না।
          আর রবি ঠাকুরের গান? তিনি নিজেই সেটার কথা, সু্‌র, গায়কী সমস্তই, নিজের হাতে ধরে করে দিয়েছেন যত্ন এবং সর্তকতার সাথে, অতি অবশ্যই ভালোবেসে। সেটা তারি কেবল তার। তাকে নতুন বাদ্যযন্ত্রে বসিয়ে নিয়ে গাইতে আমার আপত্তি নেই যদি না সে বাদ্যযন্ত্র তার বানীকে ছাপিয়ে যায়, তার গায়কীকে ভেঙ্গে দেয়।
          রবিন্দ্রনাথ কে জারা কাছ থেকে দেখেছেন তাদের অনেকেরই স্মৃতি কথায় তার গানের প্রসঙ্গ নানা ভাবে এসেছে। গায়কী পছন্দ না হলে অনেককে দিয়ে সেই সুনির্দিষ্ট গানটি গাওয়াননি এমন কথাও লিখেছেন অনেকেই। তার নিজের যদি সেখানে ব্যথা থাকে তবে কেন তাকে নতুন রক ফরমেটে গাইতে গিয়ে অসম্মান করা?
          আর আমায় একটা কথা বলুনতো শুনতে কি খারাপ লাগে পুরোন স্টাইলে গাওয়া রবি ঠাকুর? ওয়াহিদুল হকের কাছে দুএকবার ক্লাস করবার সুজোগ হয়েছিল আমার। উনি সেই রকমেরি একটা ক্লাসে একদিন বলেছিলেন – রবিন্দ্র সঙ্গীত হোল সুকান্ত মানে কাঠামোগত সুন্দর। কথাটা মনে পরল আপনার উত্তর লিখতে গিয়ে। যে কাঠামোগত ভাবেই সুন্দর তাকে আর কেন অযথা অলঙ্কারে জড়িয়ে জবড়জং করে তোলা? প্রান ঢেলে যে রবি ঠাকুর গায় সে যদি সামান্য সুরে ব্যতয় ঘটায় তবে সেটা অত মনে লাগে না কিন্তু গায়কীটা ঠিক না হলে ব্যাথা পাই। যদিও এ আমার নিজের মত তবু জানালাম। আর আপনার জন্যে রেখে যাচ্ছি সুচিত্রা মিত্রের অনুভবটুকু-
          “সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় বলে আমার যা মনে হয় তা হল- যুগ যুগ ধরে বিদেশে বিথোভেন, মোৎসার্ট প্রমুখ মহান শিল্পীদের সৃষ্টি শ্রোতাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছে, রাখছে, রাখবেও। সেখানে ‘একঘেয়েমি’র ধুয়ো তুলে কেউ স্বাধীনতা নেবার কথা ভাবে না। কিন্তু আমাদের দেশেই দেখা যায় রবীন্দ্রনাথের গানের একঘেয়েমি কাটানোর প্রচেষ্টায় নানাজনের নানা মতের ছোপ লাগানোর তাগিদ। রাতারাতি তার ভোল পালটাবার জন্য নানাবিধ তর্কবিতর্ক বাকবিতণ্ডার অবতারণা!”

          -সুচিত্রা মিত্র

    • মাসুদ করিম - ৯ মে ২০১৪ (৮:৫৭ অপরাহ্ণ)

      না শুনে গান নিয়ে কথা বলে লাভ নেই। ‘মায়াবন বিহারিনী’ রক ভার্সনটার লিন্ক আছে? দেয়া যাবে?

      • অর্ণব - ১০ মে ২০১৪ (১:৫৮ পূর্বাহ্ণ)

        মায়াবন বিহারিনী রোমান হরফে লিখে গুগল করুন,প্রথমেই এটা আসবে 🙂

      • লুসিফার লায়লা - ১০ মে ২০১৪ (৬:২৩ অপরাহ্ণ)

        মাসুদ ভাই
        লিঙ্কটা দিলাম এখানে।

        • মাসুদ করিম - ১২ মে ২০১৪ (১১:১২ পূর্বাহ্ণ)

          কিভাবে গানটি ‘রক’ হল বুঝতে পারলাম না। ফলে ব্যাপারটা এমন হয়েছে – না হল রক না হল রবীন্দ্রসঙ্গীত।

  2. সাগুফতা শারমীন তানিয়া - ১১ মে ২০১৪ (৮:০৩ অপরাহ্ণ)

    ইসস, যেমনি সুন্দর লেখা, তেমনি সুন্দর মন্তব্যের জবাবগুলি। লুসিফার লায়লাকে অভিবাদন। এখানে চকিতে মনে পড়ে গেল, রবীন্দ্রনাথকে দেখতে গিয়ে বুদ্ধদেব বসু বলেছিলেন, “কবি তখন অল্পদিন রোগশয্যা ছেড়ে উঠেছেন, কিন্তু রোগের কোনো গ্লানি আর নেই। সেই চিরপরিচিত উজ্জ্বল মহান মুখশ্রী, সেই তীক্ষ্ণ আরক্ত-অপাঙ্গ চোখ, সেই উদার গম্ভীর স্বচ্ছ ললাট। আমার বরাবরই মনে হয়েছে, রবীন্দ্রনাথের চোখ যেন কোনো মোগলসম্রাটের মতো, তাতে তাঁর কবিপ্রতিভা যত না ধরা পড়ে তার চেয়ে একথাটাই বেশি ফোটে যে তিনি স্বভাবতই রাজা। তাঁর চোখের দিকে তাকাতে যেন ভয় করে…অন্যপক্ষে তাঁর হাসিটি মানবিক মধুরতায় ভরা, শ্বেতশ্মশ্রুর আবরণ ঠেলেও সে হাসি বড়ো সুন্দর হয়ে ফোটে, তা দেখলে মনের মধ্যে ভারি একটি আরাম ও আশ্বাস পাওয়া যায়। গ্যেটে সম্পর্কে নেপোলিয়ন বলেছিলেন- হেয়ার ইজ আ কমপ্লিট ম্যান’…রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কেও সেই কথা।”

    রক হিসেবে রবীন্দ্রনাথের গান প্রসঙ্গে বলতে চাই,
    যা ক্ল্যাসিক, তাকে ক্ল্যাসিকের মর্যাদা নিয়ে চর্চ্চা এবং চর্যার অনেক পরে তাকে নিয়ে খেলা চলতে পারে। ভালবাসাহীন হাত-কান-মন নিয়ে ক্ল্যাসিকে হাত দেয়া চলে না, মানে এর জন্যে প্রস্তুতি চাই, মনে আদর চাই। জাত হিসেবে আমরা ক্ল্যাসিকের মর্যাদা বুঝতে-মানতে এবং চর্চ্চা করতে অপারগ। খালি গলায় ঋতু গুহর ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই’ শুনে কান্নাকাটি করবার অনেক অনেক পরে সেটা নিয়ে ভাঙাগড়ার খেলা চলতে পারে, আগে নয়, পরিবর্তে তো নয়ই।

    • লুসিফার লায়লা - ১২ মে ২০১৪ (৩:৪৯ অপরাহ্ণ)

      সাগুফতা শারমিন তানিয়া ইস আপনি লেখা পড়েছেন আবার মন্তব্যও করেছেন দেখে আমার সত্যি খুব ভাল লাগছে খুব আনন্দ। আপনার লেখার আমি দারুন ভক্ত। আপনার লিখবার ধরনটা কি ভীষণ মনকাড়া। কত সহজে জটিল সব বিষয় একেবারে বুকের ভেতর নাড়িয়ে লিখে ফেলতে পারেন।
      আর এইখানে আপনার মন্তব্য পড়ে খুব জোর পেলাম। রবি ঠাকুরের গান নিয়ে এই জায়গাটায় এতো একা লাগে। মনে হয় কেউ বুঝি আর আড়ম্বর ছাড়া তাকে ভালবাসতে পারছে না বা এই ভাবে অনুভব করার লোকজন দিন দিন কমে যাচ্ছে। আর বসুর উদাহরণটা দারুন প্রাসঙ্গিক, আপনি সেয়ার করলেন বলেই জানলাম। অনেক ধন্যবাদ।

  3. ASM Firoz - ৭ নভেম্বর ২০১৬ (৭:৩০ অপরাহ্ণ)

    রবীন্দ্রনাথের ভাগ্যটাই মনে হয় খারাপ ছিল, তা নইলে বাঙ্গালীকে শতাব্দীর (শতাব্দী কেন, শহস্রাব্দের বললেও কি বেশি বলা হয়?) সর্বশ্রেষ্ঠ সঙ্গীত নৈবেদ্য উপহার দিয়েও কি তিনি নিস্তার পাচ্ছেন! আমাদের ভালোলাগার মত করে দেননি, তাই আমরা আমাদের ভালোলাগার মত করে বানিয়ে নেব, তাদের মত করে দেননি, তাই তারা তাদের ভালোলাগার মত করে বানিয়ে নেবে ইত্যাদি এসব কিন্তু এখন শুরু হয়নি, শুরু হয়েছে অনেক আগেই; তাঁর জীবদ্দশাতেই। জীবদ্দশাতেই তাঁকে কঠিন করে তাঁর গান গাইতে বারণ করতে হয়েছে পঙ্কজ মল্লিককে। শান্ত সমাহিত চিত্তে শুনবার মত তাঁর কোমল গান- হে ক্ষণিকের অতিথি, শক্তিমান গায়ক দিলিপ কুমার রায়ের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে অভ্যস্ত ভঙ্গি প্রধান গায়কীর ধাক্কায় আড়ষ্ট হতে দেখে হতাশ হতে হয়েছে তাঁকে। দিলিপ রায়কে স্নেহ করতেন তিনি, তবু হতাশ হয়েছেন এবং ব্যক্ত করেছেন তা তাঁরই স্নেহধন্যা আর এক শিল্পী সাহানা দেবীর কাছে। সাহানা দেবীকে লিখেছিলেন- সেদিন মনটুর গান অনেকক্ষণ ধরে শুনেছি।—- ‘হে ক্ষণিকের অতিথি’ মনটু সেদিন গেয়েছিল- সুরের মধ্যে কোন পরিবর্তন ঘটায়নি। তারমধ্যেও যে ধাক্কা লাগিয়েছিল সেটাতে গানের ভাবের চাইতে ভঙ্গি প্রবল হয়ে উঠেছিল। দেখলুম শ্রোতাদের ভাল লাগল। গানের প্রকাশ সম্বন্ধে গায়কের ব্যাক্তিগত স্বাধীনতা অগত্যা মানতেই হবে- অর্থাৎ গানের দ্বারা গায়ক নিজের অনুমোদিত বিশেষ ভাবের ব্যাখ্যা করে- সে ব্যাখ্যা রচয়িতার অন্তরের সঙ্গে না মিলতেও পারে- গায়কতো গ্রামোফোন নয়। তবে তুমি যখন আমার গান কর শুনলে মনে হয় আমার গান রচনা সার্থক হয়েছে- যে গানে যতখানি আমি আছি ততখানি ঝুনুও আছে। দিলিপ বাবুর গাওয়া রবীন্দ্রনাথের গান মানুষ আগ্রহভরেই শুনেছে তবু রবীন্দ্রনাথ যা চেয়েছিলেন দিলিপবাবু তা দিতে পারেননি মোটেই, বরং দিয়েছিলেন সাহানা দেবীর মত অপেক্ষাকৃত কম শক্তিমান শিল্পী। আলীবর্দি খাঁ নবাব হবার পর বাংলা বারংবার বর্গী আক্রমণের শিকার হয়েছিল। তিষ্ঠোতে পারেননি তিনি একভাবে বেশিদিন এসব আক্রমণ প্রতিহত করতে যেয়ে। একইভাবে আলীবর্দি খাঁর বাংলার মত শুরু থেকেই রবীন্দ্রনাথের গানকেও অনেক আগ্রাসন সহ্য করতে হয়েছে এবং হচ্ছে এখনও। তবে প্রথম দিকের তুলনায় বর্তমান সময়ের আগ্রাসনগুলি নির্দোষ নয় মোটেই। এখন ‘ফিউশন’, ‘উলালা’ ‘উলালা’, ‘রক’ ইত্যাদি নানান নামে এবং পদ্ধতিতে চালান হচ্ছে এসব অত্যাচার। ইউ টিউব-এর কল্যাণে মানুষ এসবই দেখতে পাচ্ছে এখন এন্তার। উলালা-আলাদের গানে ইউ-টিউবে আমি যে মন্তব্য করেছিলাম তার কিছুটার উল্লেখ প্রাসঙ্গিক মনে করছি- ধারণা করি সলীল চৌধুরীর পরে মেধাবী এবং উল্লেখযোগ্য সংগীত পরিচালকদের অন্যতম তিনি। আর একজনতো বোম্বের প্রায় এক নম্বর গায়িকার আসনেই অবস্থান করছেন এখন। এরপরও এঁদের কেন এত দিনতা? রবীন্দ্রনাথতো এঁদের মত ‘জনপ্রিয়’-ও নন, ব্যবসা সফলও নন। তারপরও কেন তাঁর প্রতি এত অশ্রদ্ধা, কেন তাঁকে নিয়ে এত কাটাছিঁড়া! ‘ভিখু’ দের মত দাগী আসামীদেরও একটা ethics বা ধর্ম আছে, বিচারের সম্মুখীন করা হলে হয়ত তাদের কৃত অপরাধ (খুন, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি ইত্যাদি) তারা অস্বীকার করতে পারেন কিন্তু কখনই যুক্তিতর্কের কূট কৌশল খাটিয়ে তাদের সেই অপরাধের বিষয়টি তারা তাত্ত্বিক ভাবে justify বা জায়েজ করবার অপচেষ্টা করবেন না। কিন্তু এঁরা করেন। তা নইলে কোন যুক্তিতে এঁরা রবীন্দ্রনাথের একটি নির্মল শুদ্ধ সুন্দর গানকে- উলালা, উলালা জাতীয় নষ্টামি দিয়ে আপবিত্র করলেন! রক স্টাইলে তাঁর গান গাইতে দিয়ে অর্ণব বা অর্ণব-জাতীয়দের ভালো লাগানোর দায় রবীন্দ্রনাথের নয়। দিনেন ঠাকুরের ভাষায় বলি-তোমার যদি সাদা রসগোল্লা রোজ ভালো না লাগে, অতুলের দোকানে কড়াপাকের রসগোল্লার ফরমাশ দাও। কিন্তু বেচারি সাদা রসগোল্লাকে সাদাই থাকতে দাও। তোমার না ভালো লাগে, আর কারও ভালো লাগতে পারে; পৃথিবী থেকে ব্রাহ্মণপণ্ডিত এখনও লুপ্ত হয় নি। তা না করে তুমি যদি গায়ের জোরে সাদা রসগোল্লায় গুড় মেশাও, তবে রসগোল্লার রসত্ব এবং গুড়ের গুড়ত্ব দুই-ই মাঠে মারা যাবে।

    অবিকৃত, বিশুদ্ধ রবীন্দ্রসঙ্গীত যদি কারো রসের খোড়াক না জোগায় তবে সে দায় রবীন্দ্রসঙ্গীতের নয় বরং শ্রোতার। আইফেল টাওয়ার, সিস্তিন চ্যাপেল, তাজমহল, দিল্লির ইমামবাড়াকে ভেঙে নতুন করে গড়ার কিছু নেই। এসবকে তাদের আদিরূপে থাকতে দেয়াটাই কাম্য। কারো যদি ইচ্ছে হয় এরকম মনুমেন্ট গড়তে, তো সে আদলে নতুন সৌধ গড়ুক –যতো ইচ্ছে, নিজের মনপসন্দ আপন সৌধ। কিন্তু ঐতিহ্যকে থাকতে দেওয়া হোক আদিরূপে, এদের ভুবনমোহন চিরায়ত গরিমায়।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.