শ্রদ্ধেয় দ্বিজেন শর্মাকে নিয়ে এ লেখাটি লিখেছিলাম অনেক আগে, ১৯৯৮ সালে। কয়েকদিন হলো তাঁকে খুব মনে পড়ছে… আপনাদেরও মনে পড়ুক, এই প্রত্যাশায় লেখাটা তুলে দিচ্ছি।
রাশিয়ার কৃষ্ণসাগর পারের সোচিতে বেড়াতে বেড়াতে এক নিসর্গপ্রেমী দেখেন অবারিত মাঠে বিঘাখানেক জায়গা জুড়ে হাতখানেক গভীর জলাধারের মোজাইকে কী সুন্দর সূর্য, মাছ আর অক্টোপাশ ঝলমল করছে; জলাধারের মধ্যিখানে আড়াআড়ি দেয়াল তোলা, যেন দুর্গ, মাঝখানে সুরঙ্গ, একটা নয়- অজস্র আর শিশুরা আলপথ ধরে ছুটে আসছে, ঝাপিয়ে পড়ছে জলে, জলের সুরঙ্গ দিয়ে মেতে উঠেছে দুঃসাহসিক অভিযানে। তিনি আরও অবাক হয়ে যান একথা জেনে যে সেটা ওখানকার টোকাইদের একটি বিনোদন কেন্দ্র এবং শুধু একটি নয়, এরকম বিনোদনকেন্দ্র টোকাই শিশুদের জন্যে আরও আছে, আছে গভীর পুকুরে বড় বড় সাপ, কুমীর, মাছ, ডলফিন কিংবা শিশুদের কৌতূহলকে উসকে দেয়ার মতো আরও অনেক জীবজন্তুর প্রতিমূর্তি, তাদের মুখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে, অফুরন্ত জলের ধারা তবু শেষ হয় না, অথচ পুকুরে কোনও জলও জমে না, শিশুরা এসে যেন কতদিনের পুরানো বন্ধু এরকম নির্ভাবনায় চেপে বসে প্রতিমূর্তিগুলোর ওপর, তারপর আবার ঝাপিয়ে পড়ে কিংবা গা বেয়ে বেয়ে নামে পুকুরের জলে, তাদের মুখরতা শেষ হয় না, তাদের কোলাহল থেমে যায় না, তাদের আনন্দধারা বয়ে যায় রবিঠাকুরের ভুবন জুড়েও।
তিনি, দ্বিজেন শর্মা, সেই বিনোদন কেন্দ্র দেখেন আর ভাবেন দেশে মানে বাংলাদেশে গিয়ে সেখানকার টোকাইদের জন্যে এরকম বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তুলবেন। টোকাই, যে-শব্দটার অস্তিত্ব কোনও কালে কোনও দেশের কোনও ভাষার অভিধানে কিংবা প্রাত্যহিক কথনে কখনওই ছিল না, যে শব্দটাকে তাঁদেরই আরেক বন্ধু শুধু আবিষ্কারই করেন নি, দিনের পর দিন ছবি এঁকে এঁকে তার শাব্দিক ও সামাজিক অর্থ তৈরি করেছেন, প্রত্যয়গত মর্ম নির্মাণ করেছেন সেই টোকাইরা ডাস্টবিন থেকে ছুটে আসবে এই বিনোদন কেন্দ্রগুলোয়, হাসবে নাচবে গাইবে আর উৎসবের সুরে সুরে নিত্যদিনের ক্ষুধা, দারিদ্র ও অপমানের অনেক অনেক উর্ধ্বে উঠে যাবে। তাঁর সেই স্বপ্ন দেখা শেষ হয় না, তাঁর বয়স বেড়ে যেতে থাকে, তার স্বপ্নের সোভিয়েট ভেঙে পড়তে থাকে, তাঁর জীবনজীবিকার সংগ্রাম আরও কঠিন হয়ে পড়ে, কখনও নিজের কাছে নিজেকেই পলায়নবাদী মনে হয়; কিন্তু স্বপ্ন দেখা শেষ হয় না, কেননা নিসর্গপ্রেমী বলে যে কোনও মুহূর্তেই তো তিনি নির্ভর হতে পারেন সান্ত্বনা চাইতে পারেন প্রকৃতির কাছে, প্রকৃতির সবুজদীপ্তি তাই প্রতিদিনই ভর করে তাঁর শরীরে এসে। আর কে না জানে সবুজ মানেই জীবন, জীবনের মুখরতা-উল্লাস!
সেই মুখরতায় নিমগ্ন হয়ে থাকার জন্যেই নিস্পৃহভঙ্গীতে দ্বিজেন শর্মা দেখতে পারেন কীভাবে মানুষের স্বপ্ন-আকাক্সক্ষা গুড়িয়ে যায় নিত্যদিনের প্রতিঘাতে, যে সোভিয়েট ইউনিয়ন মানুষের মুক্তির প্রত্যাশাকে জ্বালিয়ে তুলেছিল আগুনের পরশমণি ছুঁইয়ে দিয়ে, কোটি কোটি মানুষকে এনে দাঁড় করিয়েছিল সমতার পতাকা ওড়ানোর জন্যে একই প্রান্তরে সেই সোভিয়েতের পতনকে তিনি দেখেন সমকাল থেকে অনেক দূরে দাঁড়ানো মহাকাল-দ্রষ্টার নির্মোহ চোখে, লেখেন ১৭ জুবভ্স্কি বুলভার। সোভিয়েতের পতন আর তাঁর রুদ্ধ জীবনজীবিকা এসে দাঁড়ায় একই সমতলে। গ্লাসনস্ত আর পেরোস্ত্রইকার থাবায় রক্তাক্ত হতে থাকে ১৭ জুবভ্স্কি বুলভার, যেটি ‘আসলে একটি ঠিকানামাত্র নয়, একটি ফেনোমেনানও, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বহু প্রজন্মের বহুবিধ রঙিন স্বপ্ন’। এখানেই ছিল বিখ্যাত সেই প্রগতি প্রকাশন, যা যেমন আমাদের কোটি কোটি মানুষের বিপ্লবের চেতনাকে উদ্দীপিত করেছে, একইভাবে মাতৃভাষায় আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে তাদের ভাষার ধ্রুপদী রচনাগুলো, আমাদের শিশুবেলাকে মধুময় করে তোলার জন্যে পৌঁছে দিয়েছে দুর্দান্ত সব শিশু-কিশোর সাহিত্য। কিন্তু খোলা হাওয়ার ধাক্কায় এই প্রগতি হারিয়ে যায় মহাকালের অন্ধকারে।
দ্বিজেন শর্মা তাঁর ১৭ জুবভস্কি বুলভারের স্মৃতি নিয়ে লিখতে থাকেন, কিংবা লেখেন না,- তিনি আসলে হাঁটতে থাকেন এক লুপ্ত সভ্যতার ধ্বংসস্তূপের ওপর দিয়ে। সোভিয়েত ভেঙে যায়, তিনি দেশে ফেরেন, টোকাইদের বাগান আর করা হয়ে ওঠে না, বর্মা অয়েল কোম্পানির বানানো রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে তিনি অকস্মাৎ আবারও ক্রন্দনধ্বনি শুনতে পান গভীরতর অসুখে আক্রান্ত এই পৃথিবীর, যে জলপ্রপাতের মূর্চ্ছনায় তিনি নিজেকে পবিত্র করতে চেয়েছিলেন সেই মাধবকুণ্ডের দিকে চেয়ে তিনি দেখেন সারকোফেকাসকে, দৃশ্যমান পাথুরে কফিন মৃত্যুর গন্ধ ছড়ায়, দূর অতীতে জুলিয়াস ফুচিকের ফাঁসির মঞ্চ থেকে, অ্যানা ফ্রাংকের ডায়েরি, লাইপম্যানের অগ্নিগর্ভ কিংবা রোজেনবার্গের পত্রগুচ্ছ পড়তে পড়তে যেমন চোখ ভিজে উঠতো ঠিক তেমনি জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলি পড়তে পড়তে কাঁদতে থাকেন, হয়তো তাঁর স্ত্রী তাকান অবাক চোখে, একটা বই পড়ে কাঁদবার কি-ইবা আছে বুঝতে চেষ্টা করেন, তিনি তা টের পেয়ে কান্না লুকাতে লুকাতে বলে ওঠেন, আমার কী মনে হয় জানো, যারা লেখাপড়া জানে না তাঁদের একাত্তরের দিনগুলির স্মৃতিচারণ ক্যাসেটে ধরে বই লিখলেও সাহিত্য হয়ে উঠবে। এইরকম বহু দুঃখ কিংবা বহু স্বপ্ন তাঁর মনে জমা হতে থাকে। আর সেইসব দুঃখ কিংবা স্বপ্নগুলির অক্ষরপাত সৃষ্টি করে মম দুঃখের সাধন।
তাঁর দুঃখের সাধন পড়তে পড়তে আমি কিংবা আমরাও ফিরে যাই আমাদের অতীতে। মাহমুদুল হক নামের এক সন্তুর সন্তুগাথা কালো বরফ পড়তে পড়তে যন্ত্রণার আগুনে পুড়ে পুড়ে আমরাও শুদ্ধচিত্ত হতে থাকি। মনে পড়ে এক সাপ্তাহিকের ঈদসংখ্যায় এই উপন্যাস পড়ে আমরা কী ভীষণ আবেগী হয়ে উঠেছিলাম, বই আকারে বের হওয়ার আগেই সেই সন্তুগাথা নিয়ে এক লিটল ম্যাগাজিনে ছাপা হয়েছিল আলোচনা। এই কালো বরফ পড়তে পড়তে দ্বিজেন শর্মাও আলোড়িত ও সম্মোহিত হয়ে পড়েন, বার বার ফিরে যান কৈশোরের দিনগুলোতে, প্রবেশ করেন রাম-রহিমদের সম্মিলিত জীবনের টুকরো টুকরো ছবির এক বিস্তৃত মোজাইকে। অনায়াসে বলে ওঠেন তিনি সেইসব চরিত্রের কথা যাঁদের তিনি আত্মীয় জ্ঞান করেন, নিয়ত খুঁজে বেড়ান জনারণ্যে, প্রিয়জনকে যাচাই করেন তাদেরই আদলে; সেইসব অন্নদা দিদি, ভারতি কিংবা আনেৎ-এর সঙ্গে সংযোজিত করেন আরো দু’টি নাম : ‘বাঙালীর শত্রু’দের ষড়যন্ত্রের বলি মনি ভাই ও স্মৃতিভারবিধ্বস্ত আউটসাইডার অধ্যাপক আব্দুল খালেক’।
যত দুঃখই আক্রান্ত করুক না কেন শেষ পর্যন্ত দ্বিজেন শর্মা আশাবাদী। সোভিয়েত পতনের পরে উল্লসিত দেশগুলোর পুঁজিবাদী জয়গান শুনে তাই তিনি অনায়াসেই লিখতে পেরেছেন যে এই গানের আয়ু নিশ্চিতই খুবই স্বল্প। কেননা ধনতন্ত্র এখন শ্রম ও পুঁজির দ্বন্দ্বের পাশাপাশি আরো একটি গুরুতর দ্বন্দ্বের মুখোমুখি। আর সেটি হল প্রকৃতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব। তিনি যে কী ভয়াবহ সত্যি কথাটিই লিখেছেন তা আমরা প্রতিনিয়ত বুঝতে পারছি ক্রমাগত পরিবেশ ও আবহাওয়াগত পরিবর্তনশীলতার তোড়ে অসহায় মানবপ্রজাতির মুখচ্ছবি দেখে। আর কে না জানে এই পরিবর্তনশীলতার দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণই ধনতন্ত্রের। দ্বিজেন জোরালো গলায় আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন সোভিয়েতের পতনের জন্যে শ্রমিক কৃষক একটুও দায়ী নয়, দায়ী হল মধ্যবিত্তরা। এই মধ্যবিত্তরা পার্টি ও সরকারের উচ্চপদে থেকে একটি বিশেষ স্তর তৈরির মধ্যে দিয়ে উসকে দেয় ইউরোপের বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক সমাজের ব্যক্তিস্বাধীনতা, বৈষয়িক প্রাচুর্য, সুযোগসুবিধার প্রলোভনকে। শোষণহীন সমাজ নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা দ্বিজেন শর্মার কাছে ইউটোপিয়া মনে হলেও অকপটে লেখেন, ‘..তবে শোষণ, যদি শব্দটাকে এছাড়া আর কোনভাবে ব্যক্ত করা না যায়, তাকে নিম্নতম পর্যায়ে কমিয়ে আনা, মানবিক করা যাবে অবশ্যই’। তিনি আমাদের সামনে উপস্থিত করেন সেইসব মানুষকে যাঁরা এখনও ভ্রমণরত দ্বিজেন শর্মার মুখে ভলগোগ্রাদ উচ্চারিত হতে শুনে বেশ চড়া গলায় তা শুধরে দিতে দ্বিধা করে না, বলে, ভলগোগ্রাদ নয়, স্তালিনগ্রাদ, স্তালিনের শহর, তাঁর নামেই তো মানুষ লড়েছে। আমরা শুনি সেই বৃদ্ধ আরো বলছে, রাশিয়ায় এখন যে ভয়াবহ অবস্থা চলছে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষের চরম দুর্দিনেও পরিস্থিতি এত বাজে হয় নি, তখন অনেক কিছু না থাকলেও শৃঙ্খলা ছিল, ছিল সহমর্মিতা। দ্বিজেন শর্মার লেখায় এই বৃদ্ধের বয়ান পড়তে পড়তে আমাদের ধারণা করে নিতে একটুও অসুবিধা হয় না রাশিয়াতেও এখন চলছে এক অপপ্রচারের কাল, ইতিহাস বিকৃতির মহাযজ্ঞ, যেমন চলেছে আমাদের এই বাংলাদেশেও। শোলোকভের বিখ্যাত সেই উপন্যাস প্রশান্ত দন-এর এখনকার সংস্করণ থেকে স্তালিনের নাম বাদ দেয়ার ঘটনা বর্ণনা করে দ্বিজেন শর্মা আমাদের মনে করিয়ে দেন, ইতিহাসবিকৃতিকারীরা শুধু বাংলাদেশেই নয় ছড়িয়ে আছে সারা পৃথিবীতে এবং শেষ বিচারে ইতিহাস রচনাও কোন নিরপেক্ষ ব্যাপার নয়, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ঐকান্তিকতার ব্যাপার।
দ্বিজেন শর্মার এই লেখাগুলো অনেকটা আত্মকথন, কিন্তু বার বার পড়বার মত। এমনকি অগ্রজের আত্মজীবনী প্রসঙ্গ বর্ণনা করতে গিয়েও তিনি যেসব আনুসঙ্গিক অনুভব অনুরণিত করেন তাও তো আমাদের প্রকৃতিমুখীন করে তোলে। প্রকৃতি বিলয়ের হাহাকার ছড়িয়ে পড়ে আমাদের অন্তরাত্মা জুড়ে। যেখানে ছিল নাগেশ্বর, বকুল ও চাঁপার সুঘ্রাণ, পামগাছ, অষ্টবক্র কাঠগোলাপ, দুর্মর মধুমঞ্জরী সেখানে এখন হা-মুখ শূন্যতা। নদীর কংকাল পড়ে আছে গাঁয়ের পাশে। আর বয়সী এক মানুষ অতীতের অভিজ্ঞতায় পুড়ে পুড়ে অঙ্গার হয়ে কেবলই পায়চারী করছে পিতৃপুরুষের প্রাচীন ভিটায়। প্রতিমা বিসর্জনের শোকাবহ শোভাযাত্রা তাঁর কন্ঠপথে : ‘ইনো কিছু ভালো লাগে না। না মাটি, না পানি, না গাছগাছালির রঙ’। আমরা অনুভব করি আমাদের প্রকৃতি মরে যাচ্ছে, আরও ভয়াবহ ব্যাপার এই যে অতীতের অভিজ্ঞতায় শালপ্রাংশু মানুষদেরকে আমরা নিজেদের থেকে বিযুক্ত করে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিয়ে সভ্যতা ও শিক্ষার ধারাবাহিকতায় ছেদ ঘটাচ্ছি, ফাটল ধরাচ্ছি।
তিনি তাই আমাদের আত্মকথনের ছলে যেন মরিয়া হয়ে মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রকৃতি ও প্রকৃতির সন্তানদের। হয়তো বা সে জসিমউদ্দিন মণ্ডল, হয়তো বা ইয়ানুশ কর্চাক, কিংবা জ্যোস্নারাতের ঘোড়সওয়ার মণি সিংহ, অথবা জগদীশ গুপ্ত, আইতমাতভ। জীবনের উপান্তে তাঁরা কী অসীম সম্পদই না রেখে গেছেন আমাদের জন্যে!
একটা কথা বারবার বলা হলেও তাই আবারও মনে করা দরকার : আমাদের শুধু গল্প উপন্যাস কিংবা কবিতাই নয়, আরও অনেক ভাল ভাল সাহিত্য দরকার। পরশুরামের আত্মা যে জাতির মধ্যে থেকে শুকিয়ে যায়, অবধূতের পায়ের চিহ্ন যে প্রজন্ম খুঁজে পায় না, জগদীশ চন্দ্রের মনন যে জনগোষ্ঠীর কাছে গিয়ে কেবলই প্রত্যাখ্যাত হয় সেই জাতি-প্রজন্ম-জনগোষ্ঠী মাথা তুলে কোনওদিনই দাঁড়াতে পারবে না, বরং বিদ্যাসাগর-রবীন্দ্রনাথ-বঙ্কিম-মানিক-বিভূতি-তারাশঙ্কর-জীবনানন্দের প্রতিভার দীপ্তিতে অন্ধ হয়ে তোতা কাহিনীর পুনর্জন্ম দেবে। অনেক বিদগ্ধ কবি, উপন্যাসিক, গল্পকারের পাশাপাশি আমাদের দরকার আরও অনেক সংখ্যক ভাল আত্মকথক, পরিবেশকথক, বিজ্ঞানদর্শী, পরিব্রাজক, রম্যলেখক আরও সব বিচিত্রমুখী লেখক। ছায়াময়তা তৈরির কিংবা ঝরা পাতা দিয়ে মৃত্তিকার উর্বরতা বাড়ানোর কাজ তো শুধু মূল কিংবা কাণ্ড দিয়ে হয় না, সূর্যের গনগনে তাপ, বজ্রপাত কিংবা ঝড়ঝাপটা সয়ে বেড়ে ওঠা ডালপালা লতাপাতারও তাতে ভূমিকা থাকে। সালোকসংশ্লেষণ তারাই করে। পাখিদেরও আশ্রয় দেয় তারাই।
দ্বিজেন শর্মার এই সাহিত্যকীর্তির কাছে তাই আমাদের বার বার ফিরে যেতে হবে। তাঁর মতোই আরেক ব্যথিত স্বাপ্নিক জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন, মৃত্যুর হাত ধরে স্বপ্ন ছাড়া কে বাঁচিতে পারে? দুঃখের সাধনে দ্বিজেন শর্মাও এক মাধুরিমাময় স্বপ্নের জগত তৈরি করেছেন আমাদের জন্যে। নিশ্চয়ই আমরাও বেঁচে থাকব টোকাইদের জন্যে বাগান করার বাসনা নিয়ে।
