প্রকৃতির মধ্যে পরিভ্রমণের পথে শিল্পী রশীদ আমিনের রং-ক্যানভাস প্রথম আমাদের চোখে ধরা দেয় আলাদা হয়ে। সেটি ছিল ২০০০ সাল; আ জার্নি থ্রু নেচার প্রদর্শনীর মধ্যে দিয়ে রশীদ আমিন ঘোষণা করেন তাঁর পৃথক অস্তিত্ব ও অবয়ব। পৃথক,- কেননা এর আগেও প্রদর্শনী করেছেন রশীদ আমিন, প্রদর্শনী হয়েছে তাঁর বাংলাদেশেই, প্রদর্শনী হয়েছে দেশের বাইরেও চীন (বাংলাদেশ দূতাবাস গ্যালারি; ১৯৯২) আর হংকং (ক্লাব ৬৪; ১৯৯২)-এ। কিন্তু ওইসব প্রদর্শনীকে বলা ভালো তাঁর প্রস্তুতিপর্ব, ধ্যানপর্ব, অনুসন্ধানপর্ব। তিনি তাঁর নিয়তিকে আঁকড়ে ধরেন আ জার্নি থ্রু নেচার-এর মাধ্যমে। এর আগে তিনি তাঁর নিয়তির খোঁজ করেছেন, চিন্তাকে সংবদ্ধ করার জন্যে বারবার নানা পথে হেঁটেছেন। কিন্তু তিনি তাঁর গন্তব্যে পৌঁছানোর নির্ধারিত পথে হাঁটতে থাকেন ২০০০ সালে এসে।
এই নিয়তির, এই গন্তব্যের চালচিত্র খুব সামান্য কথায় চিহ্নিত করেছিলেন আরেক শক্তিমান শিল্পী নিসার হোসেন, রশীদ আমিনের চতুর্থ প্রদর্শনী আ জার্নি থ্রু নেচার-এর দৃশ্যমানতা লিখতে গিয়ে। নিসার হোসেনের চোখ আটকে গেছে রশীদ আমিনের নিষ্ঠুর ও বিশৃঙ্খল পারিপার্শ্বিকতায়। তিনি দেখেছেন কী এক ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ আবহে ওঁ চেষ্টা করছেন প্রকৃতির অন্বিষ্ট অনুসন্ধান করতে। পারিপার্শ্বিকতা,- কী রাজনৈতিক অর্থে, কী সামাজিক-আর্থনীতিক অর্থে, কী সাংস্কৃতিক অর্থে,- রশীদ আমিনকে প্রলুব্ধ করেছে অভিজাত রুচির যোগান দিতে, জনপ্রিয় রুচির যোগান দিতে; কিন্তু রশীদ আমিন প্রত্যাখ্যান করেছেন এইসব প্রলোভন, প্রত্যাখ্যান করেছেন জনপ্রিয়তা অর্জনের সহজ সরল পথ। অভিজাত রুচির যোগান দিতে পারলে তাঁর শিল্পের পণ্যমান তৈরি হতো, কিন্তু তিনি হারাতেন তাঁর নিজস্ব রেখা-বর্ণ। জনপ্রিয় রুচির যোগান দিতে পারলে তাঁর শিল্পের সাধারণ গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হতো, কিন্তু তাঁর ক্যানভাস হয়ে পড়ত উৎকট ও গতানুগতিক। আর এসবের মধ্যে দিয়ে রশীদ আমিন সীমাবদ্ধ হতেন, শিল্প ও সময়ের মেলবন্ধন উপলব্ধির চোখ হারাতেন। সীমাবদ্ধতা তাঁকে শিল্পের নিরীক্ষা থেকে দূরে সরিয়ে নিতো। সমসময়ের কাছে মানুষ ও শিল্পের দায়বদ্ধতা থেকে তাঁকে দূরে সরিয়ে নিতো উপলব্ধির চক্ষুহীনতা। তিনি এই সহজ সুখের শিল্পময়তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। প্রত্যাখ্যানের এই পথে তিনি সবরকম উৎসাহ হারান আকৃতি বা রূপের বিন্যাসকে অনুসরণ করে ধীরে ধীরে মূল ভাবের কাছাকাছি পৌঁছানোর প্রচলিত সবরকম প্রক্রিয়ার ওপর থেকে। আকৃতি বা রূপের প্রচল বিন্যাস প্রত্যাখ্যানের মধ্যে দিয়ে রশীদ আমিন মূলত অভিজাত ও জনপ্রিয় রুচিকেই প্রত্যাখ্যান করেন, প্রত্যাখ্যান করেন সহজ সুখের শিল্পময়তা।
কী অর্জন করেন রশীদ আমিন তাঁর এই প্রত্যাখ্যানের মধ্যে দিয়ে? না, তিনি কোনও পলায়নপর স্বপ্নের জগত খুঁজে নেন না, নিসার হোসেন বলেছেন, ‘‘বরং নয়নাভিরাম, চকচকে মসৃন কোন ধাতুর পাতে ছুঁচোলো কিছু দিয়ে নির্দয়ভাবে আঁচড় কেটে, মোমের প্রলেপের ওপর পেট্রোলে চোবানো ন্যাকড়া এলোপাথাড়িভাবে চালিয়ে এসিডে ফেলে স্তরের পর স্তর রুক্ষ্ম ভাবে তুলে নিয়ে নির্মল অকলুষ পরিপাটি কোন সাদা কাগজের ওপর যন্ত্রের চাপে একটা কালচে গাঢ় গভীর ছাপ স্থানান্তর করার মধ্যে যে পর্যায়ক্রমিক অনুভূতি তার সবটাই যখন ছবি হয়ে ফুটে ওঠে তখন সাদা চোখে বিমূর্তপ্রায় বাহ্যিক যে চেহারাটা দেখতে পাই অন্তর্দৃষ্টিতে তাকে নিষ্ঠুর বাস্তবতার অকৃত্রিম প্রতিচ্ছবি বলেই মনে হয়।’’
বিমূর্তপ্রায় বাহ্যিকতা, শিল্পী নিসার হোসেন যাকে বলেছেন ‘নিষ্ঠুর বাস্তবতার অকৃত্রিম প্রতিচ্ছবি’, রশীদ আমিন তা আয়ত্ত করেন এক দশকের ধ্যানী মগ্নতার মধ্যে দিয়ে। তাঁর প্রথম একক প্রদর্শনী হয় ১৯৯১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার গ্যেটে ইন্সটিটিউটে। শুরু থেকেই রশীদ আমিন প্রতিজ্ঞা করেন স্থিরলক্ষ্য নিয়ে শিল্পের সাধনায় মগ্ন হতে। তিনি মনে করেন, শিল্পের অন্বেষার মধ্যে দিয়ে মানুষ প্রকারান্তরে প্রতিনিয়ত নিজেকেই অনুসন্ধান করে এবং তিনি নিজেও দীর্ঘ পদযাত্রার ঝুঁকি নিয়ে নিজেকে অনুসন্ধান করছেন। প্রাচীন জ্ঞানসাধনার মূল চেতনা, সক্রেটিস যাকে খুব সহজ ও সংক্ষিপ্ত ভাষায় বলেন, নিজেকে জানো (নো দাইসেলফ),- তাকেই ধারণ করার প্রতিজ্ঞা ঘোষণা করেন তিনি। তাঁর এই প্রতিজ্ঞায় মিশে থাকে প্রচণ্ড এক আবেগময়তাও, ‘‘এই পথ বড্ড কঠিন, ভীষণ দুর্গম। এই পথের শেষ হবে সেখানেই, যেখানে আমি খুঁজে পাব আমার ভুবন, আমার পৃথিবী, সে পৃথিবী হবে আমার একান্ত আপন। আমার সমস্ত সত্তা এবং চেতনা দিয়ে গড়বো সেই পৃথিবী। আমি এখন সেই পৃথিবীর পথে।’’
প্রস্তুতিপর্ব থেকেই রশীদ আমিন বিশ্বাস করেন চিত্রের কাব্যময়তায়। শিল্পের মধ্যে দিয়ে তিনি ধরার চেষ্টা করেন ছন্দের ধারাক্রম, নির্মাণ ও বিনির্মাণের প্রচেষ্টা চালান ছন্দের অনুক্রম। বোধিসত্তাকে অনুরণিত করার মতো কাব্যিক দ্যোতনাকে ক্যানভাসে পরিস্ফুটিত করার প্রচেষ্টা চালান তিনি। তাঁর এই অনুভূতির মধ্যে দিয়ে তিনি প্রকারান্তরে একাত্ম হন একই সঙ্গে কান্দিনস্কিদের বিমূর্ত চিন্তার সঙ্গে, দালির স্যুরিয়ালিজমের সঙ্গে। বিমূর্ততা ও সুরিয়্যালিজমের এই দ্বন্দ্ববিরোধের মধ্যে দিয়ে তিনি পরিভ্রমণ করেন দীর্ঘ এক দশক। এই এক দশকে যেসব ধারাবাহিকতার মধ্যে দিয়ে, যেসব বিচ্ছেদের মধ্যে দিয়ে, যেসব সমন্বয়ের মধ্যে দিয়ে তিনি এগিয়ে চলেন তাতে তাঁর চেতনা ও তুলিতে যুক্ত-বিযুক্ত হয় নানা অনুষঙ্গ : প্রথম প্রদর্শনীতে তিনি মগ্ন ও স্বচ্ছন্দ ছিলেন লিথোগ্রাফি মাধ্যমে, কিন্তু কালক্রমে তিনি পেইন্টিং ও জলরঙেও স্বচ্ছন্দ হয়ে ওঠেন; প্রথম দিকে তাঁর শিল্পচর্চার প্রধান ক্ষেত্র ছিল বেজিং শহর, কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি শিল্পের ভূগোল হারান কিংবা ভূগোল অন্তর্নিহিত হয় তাঁর ক্যানভাসের দৃশ্যমানতা থেকে; কেবল নিরবধি তাঁর ক্যানভাসে বইতে থাকে মানুষের যন্ত্রণা-ক্ষত, মানুষের উল্লাস।
একাডেমিক পরিসরে রশীদ আমিন শিক্ষা নিয়েছেন ছাপচিত্রে, কিন্তু ছাপচিত্রে আবদ্ধ থাকেন নি শেষ পর্যন্ত। তাঁর অন্বেষণই তাঁকে উৎসাহী করেছে আরও সব শিল্পমাধ্যমে কাজ করতে। লিথোগ্রাফের রশীদ আমিন তাঁর প্রথম প্রদর্শনীতে মানুষের যন্ত্রণা ও বিশ্বাসকে, সমাজের বাস্তবতাকে তুলে আনেন অনেকটাই প্রত্যক্ষভাবে। আমিনের প্রথম পর্বের উল্লেখযোগ্য ছবি কম্পোজিশন উইথ ক্রশ, কনফাইন্ড ইন দ্য হারেম, মেন ইন দ্য প্রিজন ইত্যাদি ছবিতে এই সামাজিক বাস্তবতা সরাসরি প্রকাশিত হয়েছে। এইসব সরল বাস্তবতায় মিশে রয়েছে একাডেমিক শৈল্পিক ধারণার সরলতাও। তার ওপর বাংলাদেশে আর্ট ইন্সটিটিউটে যে আদলে শিল্পশিক্ষা দেয়া হয় তা প্রকৃতার্থে স্বাধীন শৈল্পিক ধারণা অর্জনের পথেও নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। প্রথম প্রদর্শনীর প্রাকপর্বে, আশির দশক জুড়ে সারা বিশ্বে সামরিক শাসন-মৌলবাদবিরোধী যেসব আন্দোলন ঘটে সেসব আন্দোলনের চেতনসঞ্চারী শিল্প নির্মাণে মনযোগী ছিলেন তিনি। এই মনযোগের ভারকেন্দ্রে ছিল তাঁর মফঃস্বলী জীবন, প্রত্যক্ষভাবে বক্তব্য উপস্থাপনের মফঃস্বলী সরলতা। এই সরলতাকে প্রাণশক্তি যোগায় একাডেমিক পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে যেসব শিল্পী ও শিক্ষকদের সংস্পর্শে আসেন তাঁদের শৈল্পিক নীতিবোধ,- যা ক্রমশ বৃত্তাবদ্ধ হচ্ছিল নানাভাবে।
কিন্তু কালক্রমে রশীদ আমিন এইসব সরলতা সরিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন। একাডেমিক পরিসরের সরলতা ও একই ছাঁচে বাধা শিক্ষার দৌরাত্ম্য ও প্রতিবন্ধকতা তিনি কাটিয়ে উঠতে থাকেন শিল্পের প্রতি তাঁর গভীর আস্থাময়তার মাধ্যমে। এবং এ কথা বিশেষত শিল্পকলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই জানেন, নব্বই দশকের প্রথমভাগে একটি সেমিনারে আর্ট ইন্সটিটিউটের প্রচলিত পঠনপদ্ধতি, সিলেবাস, শিক্ষকদের জাড্যতা ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি শিক্ষকদের বিরাগভাজন হন এবং এই ঘটনার সূত্রে আর্ট ইন্সটিটিউটে তাঁর শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার দরজাও রুদ্ধ হয়ে যায়। সরল বাস্তবতা ও একাডেমিক শৈল্পিক ধারণার নানাবিধ বাস্তবতা থেকে বেরিয়ে আসার পথে এরকম বিভিন্ন ছোটবড় মূল্য দিতে হয় রশীদ আমিনকে। তাঁর এই জন্মবৃত্তান্ত অনুক্ত থাকে, অনুক্ত আছে; কেননা শিল্পের জন্মবৃত্তান্ত কোনও না কোনওভাবে শিল্পীর জীবনবৃত্তান্ত এবং সেই জীবনবৃত্তান্তের প্রতি আমরা তখনই মনযোগী হই যখন তিনি আলাদা হয়ে ওঠেন তাঁর শিল্পময়তা নিয়ে। টাঙ্গাইল থেকে ঢাকা, ঢাকা থেকে চীন,- রশীদ আমিনের এই ভূগোলবৃত্তান্তের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তাঁর শৈল্পিক জন্মবৃত্তান্ত; বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও শ্রেণীসংগ্রাম থেকে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ থেকে সামরিক শাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন,- বাঙালির এই রাজনৈতিক বৃত্তান্তের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রশীদ আমিনের শৈল্পিক জন্মবৃত্তান্ত; গ্রাম সমাজের ভাঙন, নগরায়নের বিসর্পিল প্রক্রিয়া, গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাওয়ের গ্রামীণ স্বপ্নের মৃত্যু ও শহর দিয়ে গ্রামবন্দির অপস্বপ্নের জয়,- এইসব সামাজিক বৃত্তান্তের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রশীদ আমিনের শৈল্পিক জন্মবৃত্তান্ত। এই জন্মবৃত্তান্ত তাই বারবার হোঁচট খায়, গ্রামীণ ক্ষমতাকাঠামো পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে আরও জটিল হয়, অবিকশিত ও গ্রাম্য নাগরিক শ্রেণীর শহুরেপণায় বিকৃত হয়, সামরিকতন্ত্রের দাপটে অটিজমআক্রান্ত শিশুর মতো অসহায় ঘুর্ণন তুলতে থাকে এবং বিশ্বায়নের থাবায় জড়িয়ে যায়। সঙ্গতকারণেই রশীদ আমিনের শিল্প আর সরল থাকে না, তাঁর শিল্প রিয়ালিজমের কথিত সতীত্ব হারায়, শিল্পী নিসার হোসেন বর্ণিত ‘বিশৃঙ্খল পারিপার্শ্বিকতা’ তাঁর সরলতা হরণ করে।
রশীদ আমিনের এই সরলতাহীন শিল্পময়তাই দৃশ্যময় হয়ে ওঠে আ জার্নি থ্রু নেচার-এর মধ্যে। প্রকৃতির মধ্যে দিয়ে এগুতে থাকেন তিনি, কিন্তু প্রকৃতি শুনলেই যে গতানুগতিক চিত্র আমাদের চোখে ভেসে ওঠে তা তাঁর ক্যানভাসে ঝাপসা হয়ে পড়ে। রেখার পর রেখা টালমাটাল রং-বর্ণ নিয়ে যেভাবে মূর্ত হয়ে উঠতে থাকে তাতে কৌণিকতা আর অমসৃনতা যুগলবন্দি হয় এবং অমসৃনতা ছবির জ্যামেতিক জগতকে পরাভূত করে। এই প্রদর্শনীতে তাঁর চিত্রের ছন্দোময়তাকে ঋদ্ধ করেছে অব্যক্ততার অভিব্যক্তি, কিন্তু ছন্দোময়তার সঙ্গে বিরোধ তৈরি করেছে মোটা ব্রাশের অনায়াস অথচ অমসৃন টানের সমাহার। চিত্রল ও কাব্যিকতার সঙ্গে অমসৃনতার দ্বন্দ্বের মধ্যে দিয়ে আমিনের ভেতরের রক্তক্ষরণ সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এই দ্বন্দ্ব ও রক্তক্ষরণ অভিজাত ও জনরুচিতে বিশ্বাসী মানুষের দৃষ্টির সঙ্গে বিরোধ তৈরি করেছে, কিন্তু তাঁর শৈল্পিক সততা নিশ্চিত করেছে।
২০০০ সালে রশীদ আমিন যখন প্রকৃতির মধ্যে এই পরিভ্রমণ সম্পন্ন করছেন, তার অনেক আগেই তিনি চীন থেকে লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরেছেন। ছাপচিত্রের ছাত্র হিসেবে চীনের অধ্যয়নপর্ব ছিল রশীদের অনুসন্ধানপর্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। চীনের শিল্পরীতি তাঁকে প্রকৃতির কাছে বিশ্বস্ত থাকতে, অনুগামী থাকতে শিখিয়েছে; কিন্তু নিজের দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক বৃত্তান্ত তাঁর সেই প্রকৃতিকে এলোমেলো করে দিয়েছে। প্রকৃতি নিয়ে চিন্তা ও জ্ঞানের এই দ্বন্দ্ব আমিনকে নিতলের দিকে টেনেছে। ফলে তাঁর ছবিগুলি বাহ্যিকভাবে বিমূর্ততার দিকে এগিয়ে গেছে, যদিও এ পর্বে তাঁর অমসৃন রেখা ও ক্যানভাসের বিষন্ন অবতলে তল্লাশি চালালে ফিগারকে খুঁজে পাওয়া যায়, কিন্তু সেই ফিগারের অসম্পূর্ণতা এবং আভাস বরং অব্যক্ত এক বার্তার মারফত বিমূর্ততাকেই উচ্চকিত করতে থাকে। ম্যান অ্যান্ড দ্য নেচার সিরিজের ছবিগুলি এই বিমূর্ততার সঘন প্রকাশ। নির্দয়ভাবে ধাতুর পাতে আঁচড় কেটে তিনি তুলে এনেছেন মানুষের গোপন নৈরাশ্য, অস্তিত্বের সংকট, সমূহ পতন। তাঁর এই নির্দয়তার উল্টোপিঠেই রয়েছে বিশ্বস্ততা। কেননা বিশ্বজুড়ে এ শতাব্দীর শেষ সময়কাল জুড়ে যেসব ভাঙন ঘটে, আদর্শের জগত যেভাবে পাল্টে যায়, বিজ্ঞানের অগ্রগতি মানুষের নৈতিকতাকে যেভাবে বদলে ফেলতে থাকে তাতে নৈরাশ্য ছাড়া মানুষ আর কোনও কিছুই সঞ্চয় করতে পারে না। রশীদ আমিনের তুলিও সঞ্চয় করে এই নৈরাশ্য।
এইভাবে রশীদ আমিন প্রবেশ করেন বিমূর্ততায়। আর সেই বিমূর্ততা পরিণতি পায় তাঁর চতুর্থ প্রদর্শনী সাউন্ড অব সাইলেন্স (১-১০ ফেব্রুয়ারি ২০০২) এবং পঞ্চম প্রদর্শনী হ্যাপেনিং (০৬-১৯ জুন ২০০৩)-এর মধ্যে দিয়ে। সাউন্ড অব সাইলেন্স বা স্তব্ধতার শব্দ তিনি অর্জন করেন যশোরের চারুপিঠে ফেলোশিপ নিয়ে প্রায় এক বছর অবস্থানের সময়। নৈঃশব্দের মধ্যে থেকেও আমরা অনুভব করি এটি ছিল রশীদ আমিনের শিল্পীজীবনের এক স্বর্ণসময়। শিল্পের নাগরিক প্রাণকেন্দ্র ঢাকা থেকে যশোরের মফঃস্বলী আঘ্রাণের নির্বাসন স্বেচ্ছায় বেছে নেন তিনি এবং সৃষ্টি করেন বিষণ্নতার বিমূর্ত ছাপচিত্র। আ জার্নি থ্রু নেচার-এর সরলতাহীনতাকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে তিনি তাতে যুক্ত করেন আদিমতা। এই আদিমতা উচ্চকিত হয় রং নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাঁর সহজতা ও সফলতা থেকে; অথবা এই রং তিনি স্বাভাবিকভাবেই আহরণ করেন মফঃস্বলী আঘ্রাণ থেকে। ধরা যাক, আমরা চোখ রাখি ব্ল্যাক, ব্লু অ্যান্ড পারপল-এর জমিনে; আমরা তখন নিবিড় করে উপলব্ধি করি এই আদিমতা। আমরা তখন বলতে শুনি রশীদ আমিনকে, ‘‘ধাতুর পাত তক্ষণ করি এসিড-পানিতে, সাদা সাদা রেখা প্রস্ফুটিত হয়, আর আমি তাতে খুঁজে বেড়াই প্রকৃতি। না- গাছপালার এই প্রকৃতি নয়, আমার অবচেতন মনের প্রকোষ্ঠ থেকে ঠিকরে বেরুনো কিছু রঙ-রেখার প্রতিচ্ছবি, যা প্রকৃতি থেকেই উৎসারিত। মনোরেখা-চিত্রের ছাপে একের পর এক ভরিয়ে দেই কাগজ যা হয়তো কিছুই অর্থ বহন করে না। তাই এই ছবি এক দিন হবে উইয়ের আহার- কাল ক্রমে। সব কিছু নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তবুও হয়তো থেকে যায় কিছু ছাপ।’’
নিচিহ্ন হওয়ার পরও থেকে যাওয়া এই ছাপটুকুই বিমূর্ততা, রশীদ আমিনের শিল্পের ঘনিষ্ট সঙ্গী। তিনি এই বিমূর্ততার সাধক। কিন্তু অসরল ও নৈরাশ্যময় হওয়ার পরও এই পর্বে রশীদ আমিনের ক্যানভাসের অবতল আমাদের জন্যে নিয়ে আসে প্রসন্নতা, কেননা তিনি অসরলতার সঙ্গে যুক্ত করেন আদিমতা। এই আদিমতা একদিকে মানুষকে সঞ্চালিত করে লোকজ অনুভূতির দিকে, অন্যদিকে একইসঙ্গে মানুষকে দেয় অজস্র বাধা আসার পরও আদিম দিনের মতো সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার উদ্বেল ইচ্ছা। লোকশিল্প থেকে দূরে থাকলেও তিনি বিমূর্ততার মধ্যে দিয়ে এইভাবে নিজের নিয়তিকে লোকসমাজের সঙ্গে যুক্ত করেন, নৈরাশ্যের সঙ্গে আশাকেও যুক্ত করেন। ফলে তা একই সঙ্গে হয়ে ওঠে স্বস্তিদায়ক। হ্যাপেনিং-এ জলরঙে আঁকা তাঁর বিমূর্ত ছবিতেও এই স্বস্তি তিরোহিত হয় না, বরং রঙের ঔজ্জ্বল্যে আরও দীপ্যমান হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে রশীদ আমিনকেও আগের চেয়ে অনেক বেশি আস্থাসম্পন্ন হয়ে উঠতে দেখা যায়। দেখা যায় বলতে, ‘‘আমার শিল্পচর্চার ধরণ হচ্ছে রং ও তুলি নিয়ে ক্যানভাসের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া। যতক্ষণ পর্যন্ত আমার চোখের সামনে স্বস্তিদায়ক কিছু না ভেসে ওঠে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমার তুলি নিরস্ত্র হয় না।’’ রশীদ আমিন তাঁর তুলিকে অব্যাহত রাখেন নিজের স্বস্তি অর্জনের স্থির লক্ষ্যে, কিন্তু তা অনুরণিত হয় ছবির দর্শকদের মধ্যেও। ফলে এই স্বস্তি অভিজাত কিংবা জনরুচিকে সাময়িকভাবে বিভ্রান্ত করে, তারা তাঁকে স্বগোত্রীয় ভাবতে থাকেন, কিন্তু তাতে রশীদ আমিনের পূর্বপ্রতিজ্ঞা ও স্থিরলক্ষ্যের কোনও হেরফের হয় না।
হ্যাপেনিং-এর পর দীর্ঘ তিন বছর পর রশীদ আমিন তাঁর সাম্প্রতিক ও সপ্তম প্রদর্শনীতে এই পূর্বপ্রতিজ্ঞারই সম্প্রসারণ ঘটিয়েছেন। সম্প্রসারণ ঘটিয়েছেন বিমূর্ততার। বিশেষ করে ড্রাইপয়েন্টে আঁকা তাঁর কম্পোজিশনগুলোয় প্রচণ্ড এক ঝড়ের আভাস, সব কিছু ভেঙে পড়ার পূর্বমুহূর্ত আমরা দেখতে থাকি বিষণ্ন আদিমতাসমেত। মনে হয় তিনি আমাদের সব স্বপ্নই ভেঙে ফেলবেন, কিন্তু ভাঙনের মধ্যে দিয়েও তিনি তৈরি করেছেন নিরবধি কালযাত্রা। সাউন্ড অব সাইলেন্স বা স্তব্ধতার শব্দে তাঁর যে পরিভ্রমণ শুরু হয়েছিল, এ প্রদর্শনী তারই এক সফল উত্তরণ। এ পর্বে তিনি তাঁর ক্যানভাসে আরও যুক্ত করেছেন নিষ্প্রভ রং বা আলোর তীব্র বিচ্ছুরণ। শুরু থেকেই তাঁর কাজের মাধ্যম মূলত লিথোগ্রাফ। কিন্তু পেইন্টিং, জলরং কিংবা কাঠখোদাইয়েও তাঁর সহজ বিচরণের মধ্যে দিয়ে তিনি উপকরণ সংস্কৃতিকে আত্মস্থ করেছেন বহুমাত্রিকভাবে। নতুন প্রদর্শনীতে ড্রাইপয়েন্টের পাশাপাশি মোটা ব্রাশের আঁচড়ে তিনি চেয়েছেন উপকরণ ছাপিয়ে নিজেকে চিন্তার দিক থেকে স্থিরবদ্ধ করে তুলতে। প্রতিটি চিত্রের আলাদা আলাদা জন্মবৃত্তান্তের পাশাপাশি এইভাবে সামগ্রিক এক জন্মবৃত্তান্ত রচনার প্রয়াস চালিয়েছেন রশীদ আমিন। প্রতীচ্যের বিমূর্ততা থেকে তিনি তাঁর বিমূর্ততাকে আলাদা করেছেন এই জন্মবৃত্তান্ত দিয়ে, যে জন্মবৃত্তান্তের প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে অমসৃনতা, নিষ্প্রভ রঙের তীব্র বিচ্ছুরণ ও আদিমতা।
কিন্তু আধুনিকতা সবসময়েই চায় অমসৃনতা ও আদিমতাকে তার অধীন করে নিতে। রশীদ আমিন আধুনিকতার এই অধীনতার আগ্রাসনকে আগামী দিনগুলোয় কিভাবে খর্ব ও পরাজিত করবেন তার ওপরেই নির্ভর করছে তাঁর শিল্পের দূরযাত্রা। নির্দয়তা দিয়ে ধাতু কেটে কেটে, রেখা টেনে টেনে তিনি যে আশানিরাশার দ্যুতি ও বিষণ্নতা ছড়াচ্ছেন আগামীতে তা কত অতলস্পর্শী হবে, নিতল নীল হবে আমরা তা দেখবার অপেক্ষায় থাকলাম।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৫ comments
রায়হান রশিদ - ৮ মে ২০০৯ (১১:৩১ অপরাহ্ণ)
ইমতিয়ার শামীমকে ধন্যবাদ লেখাটির জন্য। ছবিগুলোর জন্যও।
জনপ্রিয় রুচিকে গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যানের এই সিদ্ধান্ত শিল্পীরা ঠিক কিভাবে নেন, কোন্ পর্যায়ে নেন, কি কারণে নেন – জানতে ইচ্ছে করে। নাকি এটা আসলে কোন সচেতন সিদ্ধান্ত নয়; কেবলি মনের ডাকে সাড়া দেয়া? আর জনপ্রিয়তার স্রোতে যাঁরা শেষ পর্যন্ত বা শুরু থেকে গা ভাসান, তারা কি সেটা যথেষ্ট সাহসের অভাবে করেন নাকি প্রাপ্তির আশায় কিংবা জীবিকার চাপে পড়ে করেন? নাকি নিজেদের জনপ্রিয়তার ফাঁদে নিজেরাই পড়ে গিয়ে সেটাতেই বাধ্য হয়ে আটকে যান? জানতে ইচ্ছে করে।
শিল্পী রশীদ আমিনও আমাদের মাঝেই রয়েছেন। তাঁর কাছ থেকেও এ বিষয়ে কিছু জানতে পারলে ভাল হতো।।
আরেকটি প্রশ্ন: অভিজাত রুচি কি সবসময় জনপ্রিয় হয়?
ইমতিয়ার - ১০ মে ২০০৯ (১২:২৫ অপরাহ্ণ)
অভিজাত রুচি আর জনরুচিকে আমি সাধারণ অর্থেই ব্যবহার করেছি, এই লেখার ক্ষেত্রে সচেতন প্রত্যয়গত পরিভাষা হিসেবে এদের না দেখাই ভালো। অভিজাত রুচি সব সময় জনপ্রিয় রুচি হয় না বটে, তবে আমার মনে হয়েছে প্রচল অভিজাত রুচি যেমন তাদের দেখার গতিকে ব্যাহত করে বা আঘাত করে এমন ছবি ভালোবাসেন না, ঠিক তেমনি জনপ্রিয় রুচিও তা এড়িয়ে চলে। তবে এই সমিল থাকার পরও জনরুচি দ্রুত অনেক কিছুই গ্রহণ ও হজম করতে পারে; অভিজাত রুচির ক্ষেত্রে তেমন সম্ভব নয়, তার সংস্কৃতির একটি তুলনামূলক স্থির রূপ তার রুচিকেও বদ্ধ করে রাখতে ভূমিকা রাখে।
এরপরও আমরা যে বাংলাদেশে কিংবা পৃথিবীর আরও অনেক দেশে অভিজাত অর্থবান অনেককে অভিজাত ও জনরুচিতে অভিঘাত তৈরি করা শিল্পকে পৃষ্ঠপোষকতা করতে ও কিনতে দেখি, তার কারণ, বোধকরি অনেক রকম। আর বর্তমানে এর একটি বড় কারণ অবশ্যই এই যে, ছবি কেনা কালো টাকা শাদা করার অন্যতম নিরাপদ পথ। এইভাবে একটি ছদ্দ অভিজাত রুচির স্থানও তৈরি হয়েছে, যার সঙ্গে শিল্পের যোগ নেই।
জানি না ব্যাপারটাকে শিল্পীরা কী ভাবেন দেখেন, তবে এটি তো নিশ্চয়ই এক কষ্টকর ব্যাপার যে, শিল্পের বাজারে ক্রেতার সঙ্গে দরাদরির ব্যাপারটা চিত্রশিল্পীদের ক্ষেত্রে খুবই প্রত্যক্ষ। শিল্প পণ্য হওয়ার ধকল বোধকরি তাদেরই সবচেয়ে বেশি সহ্য করতে হয়।
শিল্পীরা এ ব্যাপারে নিজেদের অভিজ্ঞতা যদি ব্যক্ত করেন, তা হলে হয়তো সম্ভব এ বিষয়গুলি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারা।
রশীদ আমিন - ১৩ মে ২০০৯ (১:৫৩ অপরাহ্ণ)
বেশ একটা চমৎকার বিষয় উঠে এসেছে আলোচনায়, অভিজাত রুচি ও জনরুচির ভেদ বিচার।
আমি মোটামুটি অনেকদিন যাবৎ শিল্পচর্চার সাথে যুক্ত আছি, তবে এই বিষয় নিয়ে কখনো গভী্রভাবে ভাবিনি, এবং সচেতনভাবে কখনো একটিকে বেছে নিইনি। তবে শিল্পীর পারিপার্শ্বিকতা বোধহয় শিল্পীকে অনেকটাই প্রভাবিত করে। অনেকে ধারণা করে যে আইপিটিএ-র সাথে যদি জয়নুলের সংস্রব
না ঘটতো তবে হয়তো দুর্ভিক্ষের চিত্রমালা পেতাম কিনা সন্দেহ।
পিকাসো বামঘেঁষা ছিলেন বলেই গুয়ের্নিকা-র জন্ম হয়েছে। অন্তরের গভীর থেকে যদি গণমানুষের কথা উঠে আসে তবে তার মহান তাৎপর্য আছে, কিন্ত উপর থেকে যদি চাপিয়ে দেয়া হয় তবে তার ফল হয় ভয়ংকর, সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে যা ঘটেছে।
তবে আমি সব মানুষের জন্য শিল্পে বিশ্বাসী নই। একজন দর্শকের যদি শিল্প বিষয়ক মনন তৈরী না হয় তবে তার পক্ষে শিল্পের রস আস্বাদন করা সম্ভব নয়। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শুনতে যেমন কান তৈরী করতে হয়, তেমন তো চোখও লাগে ছবি দেখতে। পপুলার শিল্পী অনেকে হতে চায়, নাম যশ সবই চলে আসে হাতের নাগালে, তবু প্রকৃ্ত সমঝদারদের কল্কে না পেলে একটা দীর্ঘশ্বাস তাদের মাঝে থাকেই। শিল্পের বাজার-মূল্যের সাথে সত্যি শিল্পীর কোনো সম্পর্ক নাই শামীম ভাই, দু-এক জনের ভাগ্যে হয়তো ঘটে, অধিকাংশকে ঘানি টেনে যেতে হয়, আর কী কষ্ট যে করতে হয় তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আর যারা শিল্প বেচে বিত্তবান হয় তাদের অনেককেই বড়লোকদের ভাঁড়ে অথবা দাসে পরিণত হতে হয়, কমেডী অথবা ট্র্যাজেডী।
আবদুর রব - ১৫ আগস্ট ২০০৯ (৫:২৩ পূর্বাহ্ণ)
লেখাটা খুবই সুন্দর। তবে, লেখক ইমতিয়ার ‘মফঃস্বলী জীবন’, ‘মফঃস্বলী সরলতা’ ও ‘মফঃস্বলী আঘ্রাণ’ সংক্রান্ত বক্তব্য প্রকাশে আরও কিছুটা সতর্কতা দেখাতে পারতেন। আমার তো মনে হয় শিল্পী রশীদ আমিন এই উপাদানগুলি কেন্দ্রে রেখে ‘সরলতাহীনতাকে’ যুক্ত করেন তাঁর শিল্পকর্মের
বহিরাঙ্গে। যশোরের চারুপিঠে শিল্পীর কাজগুলো দেখে আমার সে কথাই মনে
হয়েছে। আমার ভুলও হতে পারে। লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার অসম্ভব প্রিয় একজন শিল্পী ও তাঁর কাজ সম্পর্কে আমাদের আলোকিত করার জন্যে।
কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ৮ নভেম্বর ২০০৯ (১০:৫৪ অপরাহ্ণ)
ছয় মাসের ব্যবধানে এই লেখার বিষয়ে মন্তব্য জানানোর বিষয়টি কিছুটা বেখাপ্পা মনে হলেও এমন একটা চমৎকার লেখার উপর দুই-একটি কথা, অন্তত ইমতিয়ার শামীম আর মুক্তাঙ্গনকে ভালোবাসা না-জানিয়ে পারছি না। ইমতিয়ার শুধু রশীদ আমিন-এর শিল্পকর্ম নিয়ে অতি প্রয়োজনীয় লেখাটি পোস্ট করেননি, শিল্প-সংস্কৃতির মৌলিক প্রসঙ্গ নিয়েও দরকারি কথাবার্তা বলেছেন। আসলে যে কোনো শিল্পই যে নিরন্তর এক সাধনার বিষয়; জনরুচি আর আর্থিকভাবে অপলেনদেন-এর বিষয়টিকে তোয়াক্কা করা উচিৎ নয়, তাই বিস্তৃতভাবে আমাদের বুঝিয়ে দিলেন তিনি। আর টোটাল আলোচনাটিতো একেবারে আনপ্যারালাল। শিল্পের উপর বহুদিন পর এমন একটা লেখা পড়লাম। পত্রিকাজীবী ধরেনর লিখিয়েদের কম আলোচনা-প্রতিআলোচনাতো পড়া হলো না। এ লেখার গুরুত্বই আলাদা।
তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এমন একটি লেখার উপর মন্তব্য এল মাত্র তিনটি!!!
রেজাউল করিম সুমন/ আহমেদ মুনির/ মুয়িন পার্ভেজ বা আরও অনেকের কাছ থেকে এ ব্যাপারে তাদের মতামত না-পেয়ে খুবই অবাক হলাম!