লাতিন ভাষার কথা : ২৬

|| ধর্মপ্রচারকবৃন্দ, লাতিন ও বিদেশী ভাষাসমূহ || খৃষ্টধর্ম প্রচার করার জন্য প্যাট্রিশাস নামের এক সন্ন্যাসী ৪৩২ খৃষ্টাব্দে ফ্রান্সের Lérins মঠ থেকে আয়ারল্যান্ড যাত্রা করেন। যতোটা আশা করা গিয়েছিল তার চাইতে অনেক বেশি সাফল্য অর্জন করেন তিনি [. . .]

Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর

ধর্মপ্রচারকবৃন্দ, লাতিন ও বিদেশী ভাষাসমূহ

খৃষ্টধর্ম প্রচার করার জন্য প্যাট্রিশাস নামের এক সন্ন্যাসী ৪৩২ খৃষ্টাব্দে ফ্রান্সের Lérins মঠ থেকে আয়ারল্যান্ড যাত্রা করেন। যতোটা আশা করা গিয়েছিল তার চাইতে অনেক বেশি সাফল্য অর্জন করেন তিনি, এবং এখনো তাঁকে সেইন্ট প্যাট্রিক নামে আয়ারল্যান্ডের রক্ষাকর্তা সন্ত হিসেবে স্মরণ করা হয়। অসংখ্য যে সমস্ত ধর্ম্প্রচারক লাতিন ভাষী নয় এমন মানুষজনের মাঝে ঈশ্বরের বাণী প্রচারের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন তিনি। আয়ারল্যান্ড কখনোই রোমক সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল না, এবং সেখানের মানুষ আইরিশ নামের একটি কেল্টিক ভাষায় কথা বলত। প্যাট্রিক সে ভাষাটি রপ্ত করেন, এবং স্পষ্টতই তাঁর আরাধ্য কাজে সেটি ব্যবহার করেন, যদিও গির্জার  সঙ্গে সম্পৃক্ত লোকজন পড়া ও লেখার জন্য লাতিন ভাষাই ব্যবহার করতেন বলে বোধ হয়। প্যাট্রিকের মিশন শুরু হওয়ার পরপরই নিশ্চয়ই আইরিশ ভাষা রোমান হরফে লিখিত হতে শুরু করে, কিন্তু একেবারে গোড়ার দিককার যেসব টেক্সট আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে সেখানে কিন্তু খৃষ্টীয় কোনো বিষয়বস্তু পাওয়া যায়নি।

আয়ারল্যান্ডে আশ্রমিক ব্যবস্থা অত্যন্ত সাফল্য লাভ করেছিল, ফলে, খৃষ্টানদের অনেকেই সন্ন্যাসী হিসেবে জীবন কাটিয়ে গেছেন। আশ্রম বা মঠগুলো নিশ্চয়ই বিদ্যালয় হিসেবে যথেষ্ট কার্যকর ছিল, কারণ পরবর্তী শতকগুলোতে সেখানে লাতিনের দক্ষতার বিষয়ে খুবই উচ্চ পর্যায়ের মান রক্ষা করা হয়েছিল, যদিও  ইউরোপের বাকি অংশে তখন বিদ্যাচর্চা হয়ে উঠছিল বিরল থেকে বিরলতর। আইরিশ জনগণকে অবশ্যই লাতিন শিখতে হয়েছিল একেবারেই বিদেশী একটি ভাষা হিসেবে, এবং সম্ভবত আশ্রমিক বিদ্যালয়গুলোতেই তারা লাতিন ভাষাটি একই সঙ্গে লিখতে, পড়তে ও বলতে শিখেছিল। তাদের জন্য সেটি ছিল আগাগোড়াই ধ্রুপদী লাতিন। অন্যদিকে, ইউরোপের মূল ভূখণ্ডের লোকজন ভাবতো তারা লাতিনে কথা বলছে, কিন্তু তাদের কথ্য ভাষা লিখিত লাতিন থেকে এতোটাই ভিন্ন ছিল যে এমনকি কিছুদিন বিদ্যালয়ে পাঠ নেবার পরেও  ধ্রুপদী ঢঙে লাতিন লিখতে খুবই কষ্ট হতো তাদের।

শত শত বছর ধরে ধ্রুপদী লাতিনে অন্য যে-কারো চাইতে বেশি দক্ষতার পরিচয় দিয়ে এসেছিলেন আইরিশ সন্ন্যাসীরা; এটি এমন একটি ঘটনা যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রমাণিত হবে পরে। ক্রমে সন্ন্যাসীরা নিজেরাও হয়ে ওঠেন উৎসাহী ধর্মপ্রচারক। গোড়ার দিকে তাঁরা মনোযোগ দেন ইংল্যান্ডের দিকে, যেখানে রোমক সময় থেকেই খৃষ্টানরা বাস করতো, যদিও পঞ্চম শতকে এঙ্গেলস ও জুটদের আক্রমণের পর সেখানে খৃষ্টধর্ম পুরোপুরি উবে যায়। অবশ্য, ৬০০ খৃষ্টাব্দের দিকে আইরিশরা উত্তর-পশ্চিমে ধর্মপ্রচারণামূলক কাজ শুরু করে, এবং প্রায় সেই সময়েই রোম থেকে পোপের পাঠানো একজন বিশপ দক্ষিণ-পশ্চিমে ধর্মপ্রচার শুরু করেন।

একশ বছরের মধ্যেই পুরো ইংল্যান্ড খৃষ্টধর্মের আওতায় চলে আসে, আর তার ফলে দ্বীপটিতে ফিরে আসে লাতিন এক গুরুত্বপূর্ণ বিদেশী ভাষা হিসেবে। আশ্রমিক জীবন ও আশ্রমিক বিদ্যালয় সমৃদ্ধি অর্জন করে, এবং অষ্টম শতকের মধ্যে দেখা যায় ইংরেজদের মধ্যে যিনি সবচাইতে ভালো লাতিন জানেন তাঁর চাইতে ভালো আর কোনো লাতিনভাষী নেই। শতকের সেরা লাতিন লেখক ছিলেন বিডি (Bede), যাঁর সম্মানসূচক উপাধি ছিল ‘venerábilis’, ‘শ্রদ্ধেয়’, (the venerable)। এখন যা নিউক্যাসল-আপন-টাইন তারই ধারে কাছের এক মঠের সন্ন্যাসী ছিলেন বিডি, প্রবল পরাক্রমে নিজেকে নিবেদন করেছিলেন লেখালেখির কাজে। তিনি যা লিখে গেছেন তার বেশিরভাগই হলো বাইবেলের টীকাভাষ্য এবং অন্য ধরনের ধর্মীয় সাহিত্য, তবে ইংল্যান্ডের ইতিহাসের জন্যই সবচেয়ে বিখ্যাত তিনি। তাঁর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ইংল্যান্ড কি করে খৃষ্টধর্মের ছায়াতলে এলো তা বর্ণনা করা, তবে দ্বীপটির ইতিহাস আরো সামগ্রিকভাবেও নেহাত কম লেখেননি তিনি — সেই ৫৭ খৃষ্ট পূর্বাব্দে সিজারের আগমন থেকে শুরু করে একেবারে ৭৩১ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত, যখন লেখালেখিতে ইতি টেনেছেন তিনি।

দুর্দান্ত লাতিন লিখতেন বিডি, এবং তার বেশিরভাগই ধ্রুপদী নিয়মনীতি পুরোপুরি মেনে, যদিও, স্পষ্টতই লাতিন তাঁর মাতৃভাষা ছিল না। অত্যুৎসাহী এক ইতিহাসবিদ ছিলেন তিনি; আর, তাঁর লেখা পাঠককে ধরে রাখত কারণ সেখানে তিনি সব ধরনের মানুষের জীবনের আকর্ষণীয় নানান ছোট ছোট কাহিনী বর্ণনা করেছেন, যদিও তার সবগুলোতেই যে কোনো না কোনো নীতিকথা থাকত তা নয়। যীশুর জন্ম থেকে নানান ঘটনার কাল অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে নির্দেশ করার মাধ্যমে পাশ্চাত্য ইতিহাসে স্থায়ী অবদান রেখেছেন তিনি। বিডির কালে ইংল্যান্ড ছিল এক বহুভাষিক সমাজ। তিনি তাঁর লেখা ইতিহাসে এই বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে ভাষা রয়েছে মোট পাঁচটি ‘Anglorum vidélict, Brettonum, Scottorum, Pictorum et Latinorum’ — এঙ্গল, ব্রিটন, স্কট, পিক্ট আর রোমকদের ভাষা। এঙ্গলদের ভাষা ছিল, অবশ্যই, ইংরেজির একটি আদিরূপ; ব্রিটনদেরটি, আমরা যাকে বলি ওয়েলশ; স্কটিশ ছিল আজকে যার নাম গেইলিক, আর ওদিকে পিক্টদের ভাষাটি পুরোপুরিই অন্তর্হিত — কেউই জানে না সেটি কোন ভাষা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। লাতিনের কথাও উল্লেখিত হয়েছে, কিন্তু বিডি বলছেন সেটা এমন একটি ভাষা যেটি বাইবেল পাঠের মাধ্যমে সবারই জানা। আসলে এই কথাটির মাধ্যমে এটাই ঘুরিয়ে বলা হয়েছে যে লাতিন এদের কারোই মাতৃভাষা ছিল না, খৃষ্টানরা পাণ্ডিত্যপূর্ণ কাজে ভাষাটি ব্যবহার করেছে এবং ভাষাটি গোটা পশ্চিম ইউরোপে এই ভূমিকাটিই পালন করেছে।

খৃষ্টধর্ম ছড়িয়ে দিতে ধর্ম্প্রচারকেরা ইংল্যান্ড থেকে পুব দিকে বেড়িয়ে পড়েন। এঁদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলেন ওয়সেক্স-এর উইনফ্রিথ, যদিও নিজেকে তিনি লাতিন ভাষায় বনিফেতিয়াস (Bonifatius) বলতেন, যেটাকে আবার ইঙ্গ রূপ দিয়ে বনিফেস (Boniface) করা হয়েছে। বিডির সমসাময়িক ছিলেন তিনি, এবং পোপের অনুরোধে উত্তর সাগরের উপকূলে ফ্রিসিয়া থেকে একেবারে সেই দক্ষিণে বাভারিয়া পর্যন্ত নানান এলাকায় ধর্মপ্রচার করে বেড়িয়েছেন। এসব কর্মকাণ্ডের খবর পাই আমরা তাঁর বিস্তারিত পত্র যোগাযোগের মাধ্যমে, যা পরে সংরক্ষণ করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ফ্রিসিয়ায় পেগানদের হাতে নিহত হন তিনি, এবং একজন শহীদ হিসেবে তাঁকে সন্তের মর্যাদা দেয়া হয়। পুবের মিশনটি এই বিষয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল যে অষ্টম শতকে ফ্র্যাঙ্কদের সাম্রাজ্য ক্রমেই বিস্তার লাভ করছিল, আর তার ফলে নবম শতক শুরু হতে না হতে ফ্রান্স, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, সুইটযারল্যান্ড, উত্তর ইতালি, জার্মানি, অস্ট্রিয়া এবং আরো অনেকটা অঞ্চল সেই সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে। যে-মানুষটি এই বিপুল বিস্তারের পেছনে ছিলেন তাঁর নাম শার্লামেন। আর, ঘটনার যে-সমস্ত বিকাশের কারণে লাতিন এরপর বহু শতাব্দী ধরে ইউরোপে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভাষা হিসেবে পরিণত হয়েছিল সেসবের পেছনেও যথেষ্ট অবদান ছিল তাঁর। দু’ভাবে এই অবদান রেখেছিলেন তিনি: প্রথমত, পুব দিকে এক যুদ্ধাভিযান শুরু করেছিলেন তিনি, যেটাকে তিনি জুড়ে দিয়েছিলেন — উদার কারো ভাষায় যাকে বলা যেতে পারে — ধর্মপ্রচারকের প্রবল উৎসাহের সঙ্গে। মুখ্যত এর অর্থ ছিল এই যে, খৃষ্টান হতে রাজি নয় এমন যে কাউকে কতল করেছিল তাঁর সৈন্যরা। যারা বেঁচে গিয়েছিল তারা সদস্য হলো প্রভূত সম্পদ ও সঙ্গতি সম্পন্ন খৃষ্টীয় সম্প্রদায়ের, যা কিনা প্রয়োজনে রাষ্ট্রেরও হস্তক্ষেপের ওপর ভরসা রাখতে পারত। গির্জার সব কাজ হতো লাতিন ভাষায়। আর এভাবেই মধ্য ইউরোপের একটি বিরাট অংশে ধর্ম ও প্রশাসনের ভাষার মর্যাদা লাভ করল লাতিন।

আর, দ্বিতীয়ত, শার্লামেন ছিলেন শিক্ষাদীক্ষার এক অতি উৎসাহী প্রবক্তা। নানান বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠা ও সংস্কার সংক্রান্ত কাজকর্মের গতি বৃদ্ধির ব্যাপক প্রয়াস চালিয়েছিলেন তিনি। এ-কাজে তাঁকে সহায়তা করেছিলেন এলকুইন নামের এক ইংরেজ। ভাবিকালের যাজকেরা যাতে ধ্রুপদী নিয়ম অনুযায়ী সঠিক লাতিন ভাষা শেখেন এ-ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে যথেষ্ট চেষ্টা করেছিলেন তিনি। এছাড়াও, প্রাচীনকালের জ্ঞান ও সাহিত্যের পুনরুজ্জীবনের ব্যাপারে যে বিদগ্ধ মহল ততপর ছিলেন তার মধ্যমণি ছিলেন এলকুইন। খানিকটা যৌক্তিকভাবেই এই আন্দোলনকে ক্যারোলিঞ্জিয়ান রেনেসাঁ বলা হয়। এই দলের সদস্যরা অবশ্যই লাতিনে লেখালেখি করতেন, এবং প্রাচীন নমুনা বা আদর্শ অনুযায়ী লেখার জোর প্রচেষ্টা থাকত তাঁদের। এর একটি বিখ্যাত উদাহরণ হলো এইনহার্ড নামের একজনের লেখা খোদ শার্লামেনের জীবনী। সেটি সাজানো হয়েছিল একেবারে দ্বিতীয় শতকে সুয়েতোনিয়াস রচিত রোমক সম্রাটদের জীবনীগুলোর পরিকল্পনা অনুযায়ী। সম্রাট শার্লামেন সম্পর্কে সব কথাই বলেন আমাদের এইনহার্ড, আর সেসবের মধ্যে একটি হলো তিনি ছিলেন ‘eminenti statúra’ — ‘অসাধারণ দীর্ঘ দেহের অধিকারী’। কথাটি সত্য। তাঁর সংরক্ষিত দেহাবশেষ থেকে বোঝা যায় তিনি প্রায় ছয় ফুট ছয় ইঞ্চি লম্বা ছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি ছিলেন ‘in cibo et potu témperans’ — ‘খাদ্য ও পানীয় গ্রহণে সংযমী’। সম্রাট লাতিনটা জানতেন খুব ভালো, এবং সে-ভাষায় কথা বলতে পারতেন মাতৃভাষার মতোই স্বচ্ছন্দে, যদিও এটা বেশ কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাপার যে লাতিন তিনি ঠিক লিখতে পারতেন না। শিশুকালে ভাষাটি লিখতে শেখানো হয়নি তাঁকে, এবং বড় হয়ে যখন সে-চেষ্টা করেন সেটা খুব একটা সাফল্যের মুখ দেখেনি।

শার্লামেনের নানান প্রচেষ্টার ফলে নবম শতকের গোড়ার দিকে প্রায় গোটা পশ্চিম আর মধ্য ইউরোপ লাতিন ভাষায় অপেক্ষাকৃতভাবে ভালো কিছু যাজকবিশিষ্ট একটি ঐক্যবদ্ধ গির্জা বা খৃষ্ট সম্প্রদায়ের অধিকারী হয়। বাকি কারোই শিক্ষাদীক্ষা বলতে কিছু ছিলই না বলতে গেলে। এটি ছিল এমন একটি সময়ের শুরু যা প্রায় পাঁচশ বছর স্থায়ী হয়েছিল, আর এই কালপর্বে ইউরোপে লিখিত ভাষা হিসেবে নিরঙ্কুশ প্রাধান্য ছিল লাতিনের, পরে যা কথ্য ভাষা হিসেবেও ব্যবহার করে শিক্ষিত শ্রেণী। ক্যারোলিঞ্জীয় সাম্রাজ্য শিগগিরই ভেঙে যায় আবার, এবং পরবর্তী শতকগুলোতে প্রচুর রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায় ইউরোপ, কিন্তু বহু শতক ধরে নতুন নতুন অঞ্চলে বিস্তৃত হতে থাকে লাতিন। তো, ভাষাটি কি ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল সেটা বুঝতে চলুন আমরা ব্রিটেনের ঘটনাবলীর দিকে তাকাই।

 

(পরবর্তী অধ্যায়: ‘ব্রিটেনে লাতিন’)

জি এইচ হাবীব

জন্ম ১০ই মার্চ ১৯৬৭। পেশা: শিক্ষকতা।

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.