Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর
নাম ও বংশ বা পরিবার
মানুষের নামকরণের রোমক পদ্ধতি আমাদের পদ্ধতির চাইতে ভিন্ন। রোমের বিশিষ্ট পরিবারের পুরুষদের নামে সবসময়ই তিনটি অংশ থাকত, যেটা আমরা ‘Marcus Porcius Cato’ বা, ‘Gaius Julius Caesar’ বা, ‘Marcus Tullius Cicero’-তে লক্ষ করব। আমাদের মতোই প্রথম একটা নাম থাকত, যাকে বলা হতো ‘praenómen’ বা, ‘পারিবারিক নামের আগের নাম’ বা, ‘আদ্যনাম’ (forename), তবে এই নাম খুব বেশি ছিল না, সব মিলে কুড়িটির বেশি হবে না। কোনোরকম ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ না রেখেই নামগুলোকে ছোট করে ফেলা যেতো। ‘Marcus’ হয়ে যেতো ‘M’, ‘Quintus’ ‘Q’, ইত্যাদি। একটা অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ‘Gaius’-এর সংক্ষিপ্তকরণ করা হতো ‘C’ দিয়ে; কারণটা অবশ্য আর কিছুই না, বর্ণমালাটা যখন শৈশবদশায় ছিল তখন ওই বর্ণটা ‘k’ আর ‘g’ এই দুই ধ্বনির জন্যই ব্যবহৃত হতো। আমরা যতটুকু জানি, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই প্রথম নামগুলোর কোনো মানে ছিল না, তবে সেগুলোর কিছু কিছুর একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়। ‘Quintus’ মানে ‘পঞ্চম’ (the fifth), ‘Sextus’ ‘ষষ্ঠ’ (the sixth), ‘Decimus’ ‘দশম’ (the tenth)। বহুসন্তান বিশিষ্ট পরিবারগুলোকে হিসেব রাখার সুবিধার জন্য নিশ্চয়ই এভাবে সংখ্যার শরণ নিতে হয়েছিল।
আর, মাঝের নামটি, যেটা ‘-ius’ দিয়ে শেষ হতো, সেটাকে বলা হতো ‘nomen’, ‘নাম’ (name), বা কখনো কখনো ‘nomen gentis’, ‘পারিবারিক বা বংশ নাম’ (family name)। এটা দিয়ে নামধারী ব্যক্তিটি কোন বৃহত্তর পরিবার বা বংশের অন্তর্ভুক্ত তা বোঝাত, এবং সেটা হয়ত এক সঙ্গে অনেকেই বহন করতো। এর সঙ্গে স্কটিশ গোত্রনাম, যেমন ‘Campbell’, ‘McDonald’ এবং ‘Stewart’, ইত্যাদি ব্যবহারের বিষয়টির তুলনা করা যায়। যাই হোক, সবার শেষে বসতো ‘cognomen’ বা পদবী (surname), যা দিয়ে কারো একেবারে নিকট পরিবারকে বোঝাতো, অর্থাৎ সে-নামধারী লোকের সংখ্যা হতো অনেক কম।
রোমের প্রধান কোনো পরিবারের সদস্য নয়, কিন্তু মুক্ত নাগরিক, এমন বেশিরভাগ পুরুষেরই থাকত দুটো মাত্র নাম, একটা ‘praenómen’, আরেকটা ‘nomen’, এবং তার পরিবার ও বংশ আলাদা করে বোঝানোর মতো কিছু ব্যবহার করা হতো না। বলাই বাহুল্য, সবার শেষে ছিল দাসদের স্থান, যাদের নাম ছিল কুল্লে একটি। সেটা কখনোই রোমক আদ্যনাম হতো না, বরং তা হতো বর্ণনামূলক, যেমন, ‘Syrus’, ‘সিরীয়’ (the Syrian)।
লক্ষ করবার বিষয় হলো, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোমের নারীদের ছিল দাসদের মতোই একটি নাম, তা তিনি কোনো বিশিষ্ট পরিবারের সদস্য হলেও। আর সে নামটা প্রায় হতো স্রেফ বাবার বংশ নামের স্ত্রীবাচক রূপ। Marcus Tullius Cicero-র মেয়েকে বলা হতো ‘Tullia’। অবশ্য আরেক ধরনের নামও দেখা যেতো বৈ কি। Marcus Vipsanius Agrippa-র কন্যাকে বলা হতো ‘Vipsania Agrippina’, আর তাঁর তিন মেয়ের নাম ছিল ‘Agrippina’, ‘Livilla’ আর ‘Drusilla’। প্রথমজন পেয়েছিল তার মায়ের নাম, বাকি দুজনের নাম রাখা হয়েছিল তাদের বিখ্যাত প্রমাতামহী Livia Drusilla-র নাম অনুযায়ী, যিনি অগাস্টাসের স্ত্রী ছিলেন।
তার মানে, নাম দেখেই দিব্যি বোঝা যেত মানুষের সামাজিক অবস্থান বা পরিচয়: যার যতো নাম, সামাজিক মর্যাদার মইয়ের ততো ওপরে সে। তিনটে থাকলে তো খুব-ই ভালো; মজা হচ্ছে, রাঘব-বোয়ালদের আরো বেশি-ও থাকতো কখনো কখনো, কারণ বিভিন্ন সাম্মানিক নাম দেয়া হতো তাঁদেরকে, তাঁদের বাস্তব বা কাল্পনিক মস্ত কোনো কীর্তি অক্ষয় করে রাখতে। তবে বেশিরভাগ পুরুষকেই দুটো নাম নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হতো, নারী আর দাসেদের একটি নিয়ে।
মাঝে মাঝে কাউকে বাড়তি একটা নাম দেয়া হতো তার সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের কারণে। আগেই বলা হয়েছে, সিযারের ইচ্ছাপত্রে দেখা যায় তরুণ গাইয়াস অক্টাভিয়াসকে দত্তক নিয়েছিলেন তিনি; রোমের বড় বড় পরিবারের মধ্যে বেশ প্রচলত ছিল এই প্রথাটি। সেটা করা হতো অংশত বিশাল কোনো ধন-সম্পদের যোগ্য উত্তরসূরী নিশ্চিত করার জন্য, বা, অংশত, পরিবারে পরিবারে সম্পর্ক জোরদার করতে। যাকে দত্তক নেয়া হতো সে তার নতুন বাবার ‘nomen’ আর ‘cognomen’ পেতো। তরুণ গাইয়াস অক্টাভিয়াস তাই তাঁর মৃত পালক বাবার নামগুলো নিয়ে রাতারাতি গাইয়াস জুলিয়াস সিযার বনে গিয়েছিলেন। তবে সেটার সঙ্গে তিনি অক্টাভিয়ানাস-টাও জুড়ে নিয়েছিলেন, যা বলে দেয় আগে তিনি অক্টাভিয়াস পরিবারের সদস্য ছিলেন। ওদিকে পরে আবার সিনেট তাঁকে সাম্মানিক নাম ‘অগাস্টাস’-এ ভূষিত করে। ফলে সব মিলিয়ে তাঁর নামটা দাঁড়ায় গাইয়াস জুলিয়াস সিযার অক্টাভিয়ানাস অগাস্টাস।
মুক্তি পাওয়া দাসেরাও পেতেন নতুন নাম। মুক্ত মানুষ হিসেবে আদ্যনাম আর পারিবারিক নাম দুটোই থাকত তাঁদের। তবে দ্বিতীয়টার ক্ষেত্রে সাধারণত তাঁরা তাঁদের ভূতপূর্ব মালিকের নামটা নিতেন। ধনাঢ্য ডিক্টেটর লুইয়াস করনেলিয়াস সুলা বিপুল সংখ্যক দাসকে মুক্ত করে দেন, তার ফলে দেখা গেল হঠাৎ করে করনেলিয়াস নামের হাজার হাজার মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে রোমের রাস্তায় রাস্তায়।
দৈনন্দিন জীবনে কে কোন নামটি ব্যবহার করত সেটারও ছিল রকমফের। বিখ্যাত লোকেদেরকে সাধারণত তাঁদের শেষ নাম বা ‘cognomen’ ধরেই ডাকা হতো। সিসেরো নামেই মার্কাস তুলিয়াস সিসেরো পরিচিত, আর গাইয়াস জুলিয়াস সিযারকে সাধারণত সিযার-ই বলা হতো। ব্যতিক্রম-ও ছিল বৈ কি। অগাস্টাসের উত্তরসূরী ও সৎপুত্রের নাম রাখা হয় তাইবেরিয়াস ক্লদিয়াস নিরো, কিন্তু তিনি তাইবেরিয়াস নামেই পরিচিত ছিলেন আগাগোড়া, যা কিনা স্বল্পসংখ্যক রোমক আদ্যনামের একটি। পরে, তাঁর এক ভাইয়ের ছেলে সম্রাট হন। তাঁর নাম ছিল তাইবেরিয়াস ক্লদিয়াস দ্রুসাস; তাঁকে কিন্তু সবসময়-ই ক্লদিয়াস ডাকা হতো। আসল কথা হলো, তিন নামধারী লোকেদের যেকোনো নামেই পরিচিত হতে বাধা ছিল না কোনো।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১ comment
Pingback: লাতিন ভাষার কথা : ১৩ | জি এইচ হাবীব