Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর
বক্তৃতা, রাজনীতি ও বিচার
আধুনিককালের রাজনীতিবিদরা যখন তাঁদের কোনো বক্তব্য বা কোনো জনমত প্রচার করতে চান, তাঁরা পত্র-পত্রিকায় প্রবন্ধ-নিবন্ধ বা গবেষণা-পত্র লেখেন, টিভি বা রেডিওতে সাক্ষাৎকার দেন। অনেক কথা বলবার থাকলে তাঁরা প্রতিবেদন বা শ্বেতপত্র প্রকাশ করেন। আবার, সংসদে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ বক্তৃতাও দিতে পারেন তাঁরা ইচ্ছে করলে। কিন্তু এসবের একটা বড় সমস্যা হলো যে এসব লেখা হয়তো কেউ পড়ল না, তাঁর বক্তৃতা বা সাক্ষাৎকার কেউ শুনল না। অন্যদিকে, রোমে তো আর আমাদের মতো সংবাদপত্র ছিল না, ছিল না টিভি বা রেডিও বা বৈদ্যুতিন প্রচার মাধ্যম। কোনো প্রতিবেদন ছাপিয়ে তা বিলি করারও কোনো ব্যবস্থা ছিল না। একসঙ্গে অনেক মানুষের কাছে পৌঁছোবার একটাই উপায় ছিল তাদের, আর তা হলো মানুষের কোনো সমাবেশ বা জমায়েতের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের কণ্ঠ ব্যবহার করা। উচ্চাভিলাষী রোমকরা এই সুবিধেটি পেতো ভালো রকমই, ঘন ঘন, এবং সামাজিক বা রাজনৈতিকভাবে যিনি যতো উচ্চাসনে থাকতেন তাঁর জন্য ততো গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হতো এই কাজটি। মানুষের সামনে কতটা আস্থাভাজন হিসেবে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারছেন সেটার ওপর তাঁদের পেশা বা বৃত্তি অনেকটাই নির্ভর করত।
অবশ্যই, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতাগুলো ছিল রাজনীতিক আর ক্ষমতাসীনদের, যখন বড় বড় কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হতো, বিশেষ করে সিনেটে। দলগুলোর মধ্যে সেরকম নির্দিষ্ট কোনো ভাগ বা বিভেদ ছিল না, কাজেই কখনো কখনো একজন বিশেষ ব্যক্তিই হয়তো মতের ভিন্নতা সৃষ্টি করতেন তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে। কিন্তু কাজটি খুব সহজ ছিল না, কারণ, সিনেটররা ছিলেন অভিজ্ঞ মানুষ, জীবনের নানান পর্যায়ে অনেক ভালো ভালো কথা শুনেছেন তাঁরা। তাঁদেরকে টলাতে হলে বক্তৃতায় যথেষ্ট পারঙ্গম হতে হতো।
আদালতে কথা বলতে পারাটাও জরুরি ছিল বেশ। আধুনিক জগতে কাজটা করেন উকিলেরা, আইনবিদেরা, কিন্তু রোমে ব্যপারটি ছিল অন্যরকম। রোম ছিল আদতেই আইনের দ্বারা শসিত একটি শহর। কথাটা এই অর্থেও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ যে দুনিয়ার হেন কোনো বিষয় ছিল না যা নিয়ে রোমকরা মামলা না ঠুকত। জমির মালিক আর অর্থবানেরা একে অন্যের বিরুদ্ধে মামলা করে দিতো ব্যবসার চুক্তি, ধার-কর্জ, জমির সীমানা, বা ছাদ ধসে-পড়া, ইত্যাদি নিয়ে, ওদিকে ‘সরকারী’ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয়া যেতো তাঁদের ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির জন্য। আর তাছাড়া, খুন-খারাবি, ডাকাতি ও দাঙ্গা তো ছিলই।
আদালতের সমন পাওয়া কেউ আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য সাধারণত তাঁর বিশ্বাসভাজন কাউকে নিযুক্ত করতেন, এবং আদালতে গিয়ে বন্ধুর সমর্থনে কথা বলাকে একটি নাগরিক কর্তব্য হিসেবে বিবেচনা করা হতো। মজার বিষয় হচ্ছে, যিনি তাঁর বন্ধুকে আদালতে সমর্থন করতেন তাঁর জন্য আইন বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ থাকার কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না, যদিও থাকলে সেটা তাঁর বড় একটা সম্পদ বলে গণ্য হতে পারত। তবে কোনো সুহৃদকে একটা গোলমেলে পরিস্থিতি থেকে বের করে আনতে গেলে জনসমক্ষে কথা বলায় বেশ দড় হতে হতো। কারণ, এসব বিচার হতো জনগণের সামনেই; প্রায়ই সেখানে বেশ ক’জন বিচারক উপস্থিত থাকতেন; আর কিমাশ্চর্যম! তাঁদের নিজেদেরও যে সবসময় আইন বিষয়ক প্রশিক্ষণ থাকত তা নয়! কাজেই মামলাটি সম্পর্কে আইনগত খুঁটিনাটি আয়ত্ত করার চাইতে সাধারণভাবে মানুষের মনে বিশ্বাস বা প্রত্যয় জন্মানো যুক্তি উপস্থাপন করাটাই জরুরি ছিল বেশি।
তার মানে, একজন রোমককে ভালো একজন লোক-বক্তা হতে হতো, আর তা হলে সাফল্যের দরজা খুলে যেতো তার সামনে। এবং তার সেরা উদাহরণ ছিলেন মার্কাস তুলিউয়াস কিকেরো বা সিসেরো (Marcus Tullius Cicero); আর তিনিই ছিলেন রোমক বক্তাদের মধ্যে সেরা।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
২ comments
Pingback: লাতিন ভাষার কথা : ৯ | জি এইচ হাবীব
অদিতি কবির - ২ ডিসেম্বর ২০১৪ (২:১৪ অপরাহ্ণ)
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিয়ে একটা লেখায় লাতিন একটা লাইন পড়ে মজা লেগেছিল- similia similibus curantor. এর মানে সম্ভবত বিষে বিষ ক্ষয়। লাতিন ভাষার কথা প্রথম থেকে সব পর্বই পড়ছি এবং ভাল লাগছে। বই আকারে বের হলে কিনবার ইচ্ছে আছে।