Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর
ঐতিহ্যের অভিভাবকবৃন্দ
(দ্বিতীয়ার্ধ)
যেসব মানুষ প্রশান্ত স্বচ্ছলতার মাঝে দিন গুজরান করে তাদের গল্পের চাইতে এধরনের আখ্যান ঢের বেশি পাঠযোগ্য। Tours-এর গ্রেগরির পাঠক ছিলেন প্রচুর, আর সেটা এই দুই কারণেই যে, যাদের কথা তিনি লিখেছেন তারা সেরকমই যেমনটি তাদেরকে তাঁর রচনায় দেখা যায়, আর তিনি ছিলেন এক অসামান্য প্রতিভাবান লেখক। অবক্ষয় আর পতনের কাল হিসেবে আমাদের কাছে মধ্য যুগের যে ভাবমূর্তি তার পেছনে বোধ হয় তাঁর খানিকটা অবদান রয়েছে। যেসব মানুষের কথা তিনি বর্ণনা করেছেন তাঁদেরকে সভ্য বলা যায় না। ধ্রুপদী লেখকদের চাইতে তাঁর লেখা ভিন্নও বটে। তাঁর লাতিন প্রাঞ্জল, এবং সহজপাঠ্য, তবে বিশেষ্যর বিভিন্ন সমাপ্তির মধ্যে তিনি ফারাক করতে পারতেন না, আর এ ব্যাপারটি সম্পর্কে তিনি নিজেও সচেতন ছিলেন, তার জন্য কষ্ট পেতেন, আর তাঁর বানান ছিল জঘন্য। (সুধীন দত্তের প্রথম দিকের বাংলা বানান সম্পর্কে বুদ্ধদেব বসু তাহলে বেশ মোলায়েম শব্দ-ই উচ্চারণ করেছেন দেখছি: অস্থির। — অনুবাদক)। ওপরে যে প্যাসেজটা উদ্ধৃত করা হয়েছে সেখানে ‘ipsus consobrinus meus’ এমন দেখায় যেন সেটাতে -us-এ নমিনেটিভ সিঙ্গুলার এন্ডিং রয়েছে, যার কোনো মানে দাঁড়ায় না। যেটা বোঝানো হয়েছে তা হলো accusative plural, আর সেক্ষেত্রে সেটার সঠিক বানান হবে ‘ipsos consobrinos meos’।
কিন্তু মধ্য যুগ বলতে যা বোঝায় তা হলো ইউরোপীয় ইতিহাসে এক হাজার বছর, অথচ মেরোভেঞ্জীয় শাসনামল ছিল ইউরোপের মূল ভূখণ্ডের বহু অঞ্চলের মধ্যে একটিতে কয়েকশ বছরের একটি পর্ব মাত্র। দেশ ও কাল ভেদে সংস্কৃতি আর রাজনীতি ভিন্নতা ঘটত। সমৃদ্ধির দীর্ঘ কাল যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে গভীর, কঠিন সংকটের মুহূর্ত। সত্যি বলতে কি, গোটা মধ্য যুগ জুড়ে স্থির ছিল এমন জিনিস খুব বেশি পাওয়া যাবে না। সবাই ছিল খৃষ্টান, আর সর্বত্রই ব্যবহৃত হতো লাতিন; এছাড়া বেশিরভাগ ব্যাপারই ছিল যথেষ্ট আলাদা। যার ফলে এই যুগের অন্যান্য ঐতিহাসিকেরা Tours-এর গ্রেগরির চাইতে যথেষ্টই ভিন্ন, যদিও তাঁরা সবাই লাতিনেই লিখেছেন। অন্যরা অবশ্য তাঁর মতো ভুল লাতিনে লেখেন না মোটেই, বরং অনেকেই কাজটা করেন সুচারুভাবে এবং প্রাচীন অলংকারশাস্ত্র অনুযায়ী। আর সে রকম পাওয়া যাবে শত শত।
বিশেষ করে দ্বাদশ শতকে ইতিহাস রচনার এবং সত্যি বলতে অন্যান্য সাহিত্যিক কর্মকাণ্ডেরও একটা জোয়ার আসে। উদাহরণ হিসেবে কয়েকজনের নাম বলা যায়, যেমন মাল্মসবেরির উইলিয়াম, যিনি ইংল্যান্ডের একটি ইতিহাস রচনা করেছিলেন (‘Gesta regum Anglorum’ — ইংরেজ রাজাদের কীর্তি) — বা, বর্তমান লেবাননের অন্তর্ভুক্ত টায়ারের বিশপ উইলিয়াম, যিনি ক্রুসেডগুলোর এক দুর্দান্ত ইতিহাস লিখেছিলেন (‘Historia rerum in pártibus transmarïnis gestárum’, সমুদ্রপারের রাজ্যসমূহের ঘটনাবলীর ইতিহাস)। মনমাউথের জিওফ্রে-র ‘Historya regum Britanniae’ (ব্রিটেনের রাজাদের ইতিহাস)-এ পাওয়া যায় অতীতের আরো কল্পনাপ্রবণ একটি চিত্র। তিনি বেশ জোরের সঙ্গেই বলেছেন যে, আসলে ‘Britannici sermonis librum’ (ব্রিটিশ — কেল্টিক — ভাষায় রচিত গ্রন্থ) থেকে অনুবাদ করেছেন তিনি; সে যাই হোক, সে-কাজটির আর কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় না। ব্রিটনদের ইতিহাস বর্ণনা করেছেন জিওফ্রে তাদের আদি উৎস থেকে, আর তাঁর মতে সেটা ট্রয়। তাতে অবশ্য তারা রোমকদের সমকক্ষতা অর্জন করে, কারণ তারাও বিশ্বাস করে যে ঈনিয়াস ও তার অনুসারীদের মাধ্যমে সেই নগর থেকেই এসেছে তারা। ব্রিটনরা যখন এংলো-স্যাকসনদের সঙ্গে যুদ্ধে চূড়ান্তভাবে পরাস্ত হলো, অর্থাৎ সেই অষ্টম শতক পর্যন্ত বর্ণনা রয়েছে এখানে। ঘটনার ঘনঘটায় পরিপূর্ণ জিওফ্রে-র রচনাটি বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল, এবং সেটা যথেষ্ট সঙ্গত কারণেই। বেশ কিছু ভালো গল্প রয়েছে এখানে যেগুলো অনেকে অনেকবার বলেছেন। যেমন, কিং লিয়ারের প্লটটাও রয়েছে সেখানে, কিন্তু সর্বোপরি এই রচনাটি জাদুকর মার্লিন, রাজা আর্থার, তাঁর তরবারি এক্সক্যালিবার এবং তাঁর বিখাত অনুসারীদের নিয়ে সৃষ্ট পুরো সাহিত্য সম্ভারের সূচনাবিন্দু। আর্থারীয় কিংবদন্তীর প্রথম লিখিত সংস্করণ উপস্থাপন করেছেন জিওফ্রে; সেদিক থেকে দেখতে গেলে রোমান্স ও ফ্যান্টাসির একটি সুবিপুল ঐতিহ্যের প্রথম মানব তিনি। এধরনের সাহিত্যিক রচনা চিরকালই জনপ্রিয়, যা ‘লর্ড অভ দ্য রিঙ্গস’ এবং হ্যারি পটারের বিভিন্ন পর্ব প্রমাণ করে। সে যাই হোক, লোকে যেসব ক্ষেত্রে অন্যান্য ভাষা ব্যবহার করতে শুরু করে তার মধ্যে রোমান্স একটি। জিওফ্রের অল্প কছুদিন পরেই ফরাসি ও ইংরেজি ভাষায় এই ধরনের বই লেখা হযইয়েছিল, এবং লাতিন সেই পরবর্তী প্রথায় তেমন জরুরি কোনো ভূমিকা পালন করেনি। এর বাইরের সাধারণ ইতিহাসে অবশ্য পরবর্তী বেশ কয়েক শতক ধরে লাতিন ব্যবহৃত হতে থাকে।
কিন্তু কেবল বড় বড় ঐতিহাসিকরাই ইতিহাস সম্পর্কে জানান না আমাদের। আরো সাধারণ লেখকও, যাঁরা নিজেদের আশেপাশে যা ঘটে তার বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন, বা, চিঠি-পত্র বা চুক্তিনামা লেখেন তাঁরা আজকের ঐতিহাসিকদের কাছে আরো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ উৎস বা সূত্র বলে বিবেচিত, আর এধরনের উপাদান পাওয়াও যায় অনেক বেশি পরিমাণে। স্থান এবং কালভেদে সরবরাহটির বেশ তারতম্য ঘটে, তবে সাধারণভাবে পূর্ববর্তী কালের চাইতে পরবর্তী কালে এসব অনেক বেশি পরিমাণে সংরক্ষিত হয়েছে। এ-ধরনের ঐতিহাসিক সূত্র বা উৎসগুলো ত্রয়োদশ শতক অব্দি গোটা ইউরোপ জুড়ে প্রায় সবক্ষেত্রেই লাতিনে লিখিত। এর পরে তা বদলে গিয়েছে, তবে সপ্তদশ শতক পর্যন্ত এবং সে শতকের খানিকটা অব্দি লাতিন সূত্র বা উৎসগুলো পাওয়া বেশ মামুলি ব্যাপারই ছিল। যীশু খৃষ্টের জন্মের খানিক আগে রোমকরা নিজেরাই ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার সময় থেকে একেবার চতুর্দশ শতক পর্যন্ত ইউরোপের প্রায় গোটা ইতিহাসই লাতিন ভাষায় লিখিত হয়েছে। এবং তার পরের ৩০০ বা ৪০০ বছর পরেও লাতিন প্রায় হরহামেশাই ব্যবহৃত হচ্ছিল। ইউরোপের ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করতে এবং সূত্র বা উৎসগুলো পড়তে ইচ্ছুক এমন যে কাউকে হয় লাতিন শিখতে হবে, অথবা তার মনোযোগকে গত ২৫০ থেকে ৩০০ বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
পরবর্তী অধ্যায় : প্রাচীনকালপরবর্তী কাব্য
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১ comment
Pingback: লাতিন ভাষার কথা : ৩৬ | জি এইচ হাবীব