লাতিন ভাষার কথা : ৩১

|| বাচন ও বানান (শেষ অংশ) || ব্যঞ্জনবর্ণের ভেতর কিছু অভ্যাস চলে এসেছিল ফরাসির মাধ্যমে লাতিন শেখানোর সময়, যেমন ‘Iulius’ আর ‘Ianuarius’ শব্দ দুটোর আদ্যক্ষর ‘i’-এর উচ্চারণে আর ‘genius’ ও ‘gens’-এর ‘g’ এর উচ্চারণে [. . .]

Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর

 

বাচন ও বানান

(শেষ অংশ)

 

ব্যঞ্জনবর্ণের ভেতর কিছু অভ্যাস চলে এসেছিল ফরাসির মাধ্যমে লাতিন শেখানোর সময়, যেমন ‘Iulius’ আর ‘Ianuarius’ শব্দ দুটোর আদ্যক্ষর ‘i’-এর উচ্চারণে আর ‘genius’  ও ‘gens’-এর ‘g’ এর উচ্চারণে, সেই ধ্বনিটির সঙ্গে (যাকে টেকনিকালি এফ্রিকেট বলা হয়) যেটাকে আমরা এখোনো পাই    ‘January’ আর ‘gentle’-এ। সেই সঙ্গে ফরাসি থেকে এসেছে  [s] হিসেবে ‘c’-এর ‘মৃদু’ উচ্চারণ, ‘censeo’ আর ‘cella’ শব্দ দুটোয়।

যতক্ষণ পর্যন্ত ইংরেজিতে একটি অনুরণিত (trilled) ‘r’-ধ্বনি ছিল (যে ধরনের ধ্বনি এখনো স্কটিশ ভাষায় এবং কিছু কিছু আঞ্চলিক উচ্চারণভঙ্গি বা টান —accent-এ বিদ্যমান), ততদিন একটি ব্যঞ্জনবর্ণের আগে বা কোনো শব্দের শেষে লাতিন ‘r’-এর কাছাকাছি কিছু একটা উচ্চারণ করবার ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়নি, যেমন ‘cornu’ বা ‘শিঙ’-এ, বা, ‘pater’-এ। যাই হোক, দক্ষিণী তথা প্রমিত ইংরেজি উচ্চারণে এই ধ্বনিটির বিলোপের পর ‘parcis’ (you spare) ও ‘pacis’ (of peace)-এর মতো জোড়া শব্দের মধ্যে তফাত ধরতে বা ‘cerno’ (I see) ও ‘virtus’ (virtue)-র মতো শব্দে সঠিক স্বরাঘাত সম্পন্ন স্বরবর্ণ উচ্চারণ করতে অসুবিধের মুখোমুখি হয় ইংরেজিভাষীরা। একইভাবে, শব্দের শেষে (যেমন ‘feel’ আর ‘fall’-এ), বা ব্যঞ্জনবর্ণের আগে (যেমন ‘felt’ ও ‘film’-এ) ইংরেজি ‘l’ (এল)-এর যেমন একটি ‘ডার্ক’ বৈশিষ্ট্য রয়েছে (কিছু ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণের সময় জিভের পেছনদিকটা টাকরা বা তালুর দিকে উঠে আসা, যেমন ‘l’-এর বেলায়), ‘alter’ (other — অপর, অন্য) ও ‘mel’ (honey — মধু)-এর মতো শব্দের সনাতন উচ্চারণ একই রকমভাবে ভুলের দিকে এগোয়। বেশ কয়েক বছর ধরে নানান চেষ্টা চলে সংস্কার সাধনের। ষোড়শ শতকে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ধ্রুপদী উচ্চারণের অভ্যাসগুলোতে ফিরে যাওয়ার পক্ষে বেশ জোরালো তদবির চলেছিল, তার পুরোধা ছিলেন মহান ওলন্দাজ ক্লাসিকাল পণ্ডিত ইরাযমাস, যিনি ১৫২৮ খৃষ্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর সংলাপমূলক রচনা ‘De recta Latini Graecique sermonis pronuntiatione’ (‘লাতিন ও গ্রীক ভাষার সঠিক উচ্চারণ প্রসঙ্গে’) এই প্রচার চালিয়েছিলেন। অবশ্য নানান যুক্তিতে সেটির বিরোধিতা করা হয়, এবং তার মধ্যে অত্যন্ত জোরালো ছিল এটি যে তাতে করে অক্সফোর্ড ও কেম্ব্রিজে লাতিন উচ্চারণ ভিন্ন হয়ে পড়বে! প্রায় চার শতক পরে ফিরে আসে এই সংস্কারের  ধারণাটি। ধ্রুপদী লাতিনের জন্য একটি নতুন সংশোধিত উচ্চারণ প্রস্তাব করেন নানান পণ্ডিত ও শিক্ষকের একটি দল, ১৮৭০-এর দশকে, এবং বিংশ শতকের গোড়ার দিকের মধ্যে তা যথেষ্ট ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। একজন কমেন্টেটর বিরক্তিভরে যদিও মন্তব্য করেন যে এই সংশোধিত উচ্চারণে আসলে কোনো অ-ইংরেজি ধ্বনি বা এমনকি অ-ইংরেজি অবস্থনে ইংরেজি ধ্বনি ব্যবহার করা হয়নি, কিন্তু তারপরেও সেটা বেশিরভাগ ধ্রুপদী ব্যঞ্জনবর্ণ ও স্বরবর্ণের যৌক্তিক নৈকট্য অন্তত নিশ্চিত করেছিল।

আজ যাঁরা লাতিন ভাষা শেখান, তাঁরা এমন কিছু নীতি নিষ্ঠার সঙ্গে অনুসরণ করেন যা আধুনিক ভাষা শিক্ষায় স্বাভাবিক বলেই ধরে নেয়া হয়, এবং গোড়া থেকেই এমন কিছুর ওপর গুরুত্বারোপ করেন যা  স্বরবর্ণগুলোর ধ্রুপদী গুণাগুণ ও সংখ্যা, স্বরাঘাতের সঠিক ‘বণ্টন’, শব্দের মধ্যে যে কোনো অবস্থানে ‘k’ ও ‘g’-এর ‘কঠিন’ বা ‘জোরালো’ উচ্চারণ, এবং ব্যঞ্জনবর্ণের আগে ও শব্দের শেষে ‘r’ ও ‘l’-এর যথাযথ উপস্থাপনের কাছাকাছি। একথা বললে সম্ভবত সত্যই বলা হবে যে, ভাষাটি উচ্চারণের আধুনিক প্রচেষ্টা প্রাচীন নিয়ম কানুনের অনেক বেশি কাছাকাছি, রোমক সাম্রাজ্যের পতনের পর থেকে অন্য যে কোনো সময়ের প্রচেষ্টার চাইতে।

ঠিক যেমন ইংরেজি উচ্চারণ ধ্রুপদী মান থেকে সরে গিয়েছিল, তেমনি, গোটা ইউরোপের অন্যান্য দেশ জুড়ে নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রবণতা ছিল, কাজেই লোকজন যখন একত্রিত হলো তখন নিশ্চয়ই নানান উচ্চারণের জগাখিচুড়ির মতো কিছু একটা তৈরি হয়েছিল। সত্যি বলতে কি ইরাযমাসের সংলাপ থেকে আমরা সেরকম-ই ধারণা পাই, যেখানে সম্রাট ম্যাক্সিমিলানের দরবারে আসা বিভিন্ন দূতের লাতিন উচ্চারণ নিয়ে তিনি ব্যঙ্গ করেছেন।

নির্দিষ্ট একটি সময়ে নির্দিষ্ট একটি দেশে লাতিন কিভাবে উচ্চারিত হতো তা ঠিকভাবে বলা সাধারণত  কঠিন বা অসম্ভব, আর বেশিরভাগ মানুষই হয়তো বিষয়টির প্রতি খুব একটা আকর্ষণ বোধ করবে না; অবশ্য ব্রিটেন এবং অন্যত্র যে বিশেষ একটি দলের কাছে প্রসঙ্গটির খানিকটা গুরুত্ব রয়েছে তারা হলো কয়্যারের সঙ্গীত শিল্পীগণ। গীতিসম্ভারের (repertoire) অনেক গান-ই ধর্মীয়, আর সেগুলোর কথা লাতিন। তো, এখানে কোন উচ্চারণ ব্যবহৃত হবে? উদ্বিগ্ন কয়্যার পরিচালক ও পরিচালিকাগণ বিশেষজ্ঞদের কাছে যেসব বিষয়ে পরামর্শ চান তা হলো: বাখের লাতিন কেমন শোনাত? মোতসার্তের মাস-এ (mass) এক ধরনের আবার ভার্দির মাসে কি আরেক ধরনের উচ্চারণ ব্যবহৃত হবে? বিভ্রান্তি বা গোলমেলে অবস্থাটা পুরোপুরি এড়াবার জন্য সাধারণত এই পরামর্শই দেয়া হয়ে থাকে যে কোনো কয়্যার বা অন্য যাঁদেরকে প্রাচীনকালের পরে লিখিত কোনো লাতিন টেক্সট উচ্চৈঃস্বরে পড়তে বা গাইতে হয় তাঁরা যেন একটি উচ্চারণেই স্থিত থাকেন। এক্ষেত্রে প্রায়ই ইতালিতে প্রচলিত উচ্চারণ ব্যবহারের সুপারিশ করা হয়। সেটাই কেজো ও বিচক্ষণ কাজ, এই দুই কারণে যে সেটা ধ্রুপদী উচ্চারণের কাছাকাছি, এবং লাতিনের ইতালীয় উচ্চারণকে বরাবরই বেশ সমীহের সঙ্গে দেখা হয়েছে। ইতালি-ই সেই দেশ যেখানে রোম অবস্থিত, রোম-ই ছিল রোমক সাম্রাজ্যের প্রথম রাজধানী, এবং পরে সেটা গির্জা তথা খৃষ্টধর্মের কেন্দ্রে পরিণত হয়। ইতালীয় কায়দায় লাতিন উচ্চারণ করা কঠিন কোনো কাজ নয়। ইতালীয় এবং ধ্রুপদী উচ্চারণের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যগুলো নিচে দেয়া হলো:

* বর্ণগুচ্ছ ‘æ’  আর ‘œ’ দুটোরই উচ্চারণ [e]

* স্বরবর্ণ ওয়াই (লাতিনে যা কেবল গ্রীক থেকে ধার নেয়া শব্দেই  রয়েছে)-এর উচ্চারণ হবে [i]

* ‘h’ অক্ষরটি আদৌ উচ্চারিত হবে না।

* ‘ci’ আর ‘cci’  এবং ‘ce’ ও ‘cce’-র কম্বিনেশনের উচ্চারণ হবে, যথাক্রমে, ‘chilly’ আর ‘check’-এর প্রথম ধ্বনির মতো।

* কোনো স্বরবর্ণের আগে ‘ti’ কম্বিনেশনের উচ্চারণ হবে [tsi], যেমন হয় ‘natio’-তে [natsio]।

সে যা-ই হোক, নিখাদ পেরিয়ড ইন্সট্রুমেন্ট-এ সঙ্গীত উপস্থাপনের ক্রমবর্ধমান আধুনিক উৎসাহ বেশ কিছু কয়্যারকে বরং যে-সময়ে এবং যে-স্থানে সঙ্গীতটি রচিত হয়েছিল সেই সময়কার লাতিনের উচ্চারণের যথাসম্ভব কাছাকাছি উচ্চারণ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার দিকে চালিত করেছে। সে যা-ই হোক, বিভিন্ন সময়ে লাতিন কিভাবে উচ্চারিত হতো তা জানার যদি বিশেষজ্ঞসুলভ কারণ আপনার না থাকে সেক্ষেত্রে এই বইয়ের গোড়ার দিকে আমি যে ধ্রুপদী উচ্চারণের নিয়মের কথা বর্ণনা করেছি তা সবসময়েই ব্যবহার করতে পারেন।

এরপর বাকি থাকে মধ্য যুগে লাতিনের বানান কেমন ছিল সেই প্রসঙ্গটি। সব যুগেই প্রধান নীতিটি ছিল অবশ্যই ধ্রুপদী বানান অনুসরণ করা, তবে ধ্রুপদী রীতি থেকে কিছু ব্যত্যয়ের ঘটনা প্রায়ই দেখা যেতো। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ‘æ’-এর কমবিনেশনটার উচ্চারণ ছিল, সাধারণত, [e],  এবং সেটাকে ওভাবে বানান করাটাই চল হয়ে উঠেছিল। মধ্যযুগের বেশির ভাগ মানুষই ‘sæcula’ (centuries) এবং ‘præmium’ (prize) লিখত না, লিখত ‘secula’ ও ‘premium’। প্রায়ই, এই দ্বিতীয় উদাহরণটির  মতো, ধার-করা শব্দগুলো আধুনিক ভাষাগুলোতে এভাবে বানান করা হয়। ধ্রুপদী ব্যবহার থেকে  ভিন্নতার আরেকটি উদাহরণ হলো স্বরবর্ণের আগে ‘ti’-এর বদলে ‘ci’ লেখা, যেমন ‘consequentia’-র বদলে ‘consequencia’ (consequence, ফলাফল, পরিণতি), এবং এক্ষেত্রেও এটি এধরনের শব্দ  মধ্য যুগে  স্বাভাবিকভাবে যেরকম উচ্চারিত হতো তার সঙ্গে অসম্পর্কিত নয়। এসব বানান ও উচ্চারণ থেকেই এসেছে প্রচুর আধুনিক ইংরেজি ও ফরাসি শব্দ যেগুলো consequence, difference absence-এ ‘c’ বজায় রখেছে, এবং আক্ষরিক অর্থেই  শত  শত শব্দ, যেখানে মূল লাতিন শব্দগুলোতে ‘tia’ ছিল: consequentia, differentia, absentia। Praesentia (presence) একটি উদাহরণ যেখানে প্রাচীনতর বানানগুলোকে মধ্য যুগের বানান ও উচ্চারণ প্রতিস্থাপিত করেছে। তারপরেও, এসব পার্থক্য তেমন বড় কিছু নয়, এবং যিনি ধ্রুপদী লাতিন পড়তে পারেন তিনি মধ্য যুগের বানানে লেখা টেক্সট অনায়াসেই পড়তে পারবেন, (যদিও মাঝে মাঝে বেশ কিছু অন্য বৈশিষ্ট্য দেখা দেয় যার কথা আমি উল্লেখ করিনি।)

বানানের সূত্রে শেষ যে উদাহরণের দিকে আমরা নজর দেবো তা হলো আমাদের আধুনিক ব্যবহার আর প্রাচীন ও মধ্য দুই যুগেই প্রচলিত বানানের মধ্যে তফাত। এই তফাতের কারণ হলো ষোড়শ শতকে করা লাতিন বানানের একটি ছোট সংস্কার। আর সেটা ছিল ‘j’ ও ‘v’ এই দুটো অক্ষর সংক্রান্ত। [i] ও  [j] এই দুটো ধ্বনিই ভাষাটিতে থাকার পরেও ধ্রুপদী উচ্চারণে তাদের মধ্যে ফারাক করবার কোনো উপায় ছিল না। দুটোকেই লেখা ‘i’ লেখা হতো। একই অক্ষর প্রথমে লিখে বানান করা হতো ‘iustitia’ (justice) আর ‘intellectus’ (intellect) শব্দ দুটো, যদিও প্রথম শব্দে সেটার উচ্চারণ [j] এবং দ্বিতীয় শব্দে [i]। আরেকটি উদাহরণ হলো ‘Gaius Iulius Caesar’ নামটি, যেখানে Gaius-এর ‘i’ আর  Iulius-এর প্রথম ‘i’, এই দুটোরই উচ্চারণ [j]।

একই ভাবে [u]  এবং [v]-এর মধ্যেও ফারাক করা যেতো না, (যেটা প্রাচীন লাতিনে একটা ব্যাক সেমি ভাওয়েল এর মতো — ইংরেজির w-র মতো — উচ্চারিত হতো)। দুটো ধ্বনি-ই একই অক্ষর দিয়ে লেখা হতো; ‘uilla’-র (villa) [v], আর ‘urna’-র [u] কে একই হরফ দিয়ে লেখা হত; যদিও, অক্ষর দুটোর আকৃতিতে তফাত ছিল। প্রাচীন রোমক উৎকীর্ণ লিপিগুলোতে হরফগুলো ঠিক আমাদের আধুনিক বড় হাতের ‘I’ এবং ‘V’-এর মতো দেখাতো। মধ্য যুগে নানান ধরনের হস্তলিপি বিকাশ লাভ করেছিল, যা থেকে  ধীরে ধীরে আমাদের ছোট হাতের অক্ষর এসেছে। আর সেখানে দুটো অক্ষর সাধারণত আধুনিক ‘i’-এর  (যদিও, প্রায়-ই, ওপরের বিন্দু বা নোক্তাটি ছাড়া) আর u-র মতো দেখাতো। কিছু কিছু শৈলীতে অবশ্য ‘j’ আর ‘v’-র প্রকারান্তরও দেখা যায়, কিন্তু সেগুলো আধুনিক নিয়ম অনুযায়ী ব্যবহার করা হয়নি। ষোড়শ শতকে এক ফরাসি পণ্ডিতের মাথায় হঠাৎ একটা বুদ্ধি আসে ‘u’ আর ‘i’-কে  স্বরধ্বনির ক্ষেত্রে, আর ‘v’ ও ‘j’-কে ব্যঞ্জনধ্বনির ক্ষেত্রে ব্যবহারের। চমৎকার একটা আইডিইয়া ছিল সেটা, এবং বেশ কিছু আধুনিক ভাষা যেমন জার্মান ও নর্ডিক ভাষাগুলোতে সেটা ব্যবহার করা হয়েছে। এভাবে দুটো নতুন হরফ ‘j’ আর ‘v’ যোগ করা হিলো বর্ণমালায়, এবং সে দুটো বর্ণমালায় যুক্ত হলো সংশ্লিষ্ট দুটো স্বরবর্ণের পরে। ইংরেজিতেও যুক্ত হয়েছিল এই হরফগুলো, কিন্তু মাথা ঘামাবার মতো ব্যাঞ্জনবর্ণ আরো রয়ে গেছে। বিরল হরফ ‘y’ (আদিতে যা ছিল গ্রীক বর্ণমালার একটা স্বরধ্বনির প্রতিনিধিত্বকারী), একটি ধ্বনি বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, ‘j’ -হয় অন্য একটির জন্য, যেমন ‘yet’ আর ‘jet’। এই তফাতটি লাতিনে ছিল না। ব্যঞ্জনবর্ণ ‘i’ আর ‘j’ ‘yet’ শব্দটির প্রথম ধ্বনির মতো উচ্চারিত হতো।

লাতিনের বেলায় এই নতুন বানান কখনোই পুরোপুরি গৃহীত হয়নি, আর, এই সংস্কাররের লক্ষ্য ছিল লাতিনই। লাতিনের সাধারণ বানান আসলে একটা আপোষেরই নামান্তর যেখানে ‘u’ আর ‘v’-এর মধ্যে ফারাকটি গৃহীত হলেও ‘i’ আর ‘j’-এর মধ্যের তফাতটি গৃহীত হয়নি। এই বইতে আমরা এই ব্যবহারটিই অনুসরণ করছি, আর তাই আমরা ‘villa’ ও ‘urna’-র মধ্যে ফারাক করলেও ‘iustitia’ ও ‘intellectus’-এর মধ্যে কোনো তফাত করছি না। অবশ্য বেশ কিছু সংস্করণ আর অভিধান রয়েছে যেখানে ‘j’ ব্যবহৃত হয়েছে, আর তার ফলে বানানাটি হয়েছে ‘justitia’ ও ‘Julius’। তাছাড়া, এমন অনেক বিশেষজ্ঞ আছেন যাঁরা এই সংস্কারটি আদৌ পছন্দ করেন না, আর তাই তাঁরা ‘iustitia’ ও ‘Iulius’-এর পাশে ‘uilla’ লিখবেন। তার মানেই, লাতিন কিভাবে লেখা হবে তা নিয়ে এই জায়গাটতে বিতর্ক রয়েছে। বিতর্কটির বয়স আর কিছুদিন পরেই আধা সহস্রাব্দ হয়ে যাবে, এবং কালক্রমে হয়তো সেটার নিষ্পত্তি ঘটবে। যা-ই ঘটুক, লাতিন এখনো আরো অনেক দিন টিকে থাকবে।

(পরবর্তী অধ্যায় : গ্রন্থাবলী ও লিপিকরবৃন্দ)

জি এইচ হাবীব

জন্ম ১০ই মার্চ ১৯৬৭। পেশা: শিক্ষকতা।

১ comment

  1. Pingback: লাতিন ভাষার কথা : ৩০ | জি এইচ হাবীব

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.