Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর
বাচন ও বানান
(প্রথম অংশ)
লাতিন যাদের মাতৃভাষা ছিল না তাদেরকে শব্দের বানান আর লেখা শেখার পাশাপাশি সেগুলো উচ্চারণ করতেও শিখতে হতো। কিন্তু সেগুলোর উচ্চারণ কেমন হওয়ার কথা সেকথা কিভাবে জানতো তারা? লাতিন যেহেতু তখন আর কারোই মাতৃভাষা ছিল না ফলে অনুকরণ করা যায় এমন কেউ ছিল না। সত্যি বলতে কি, প্রাচীনকালের শেষ দিকেই এই সমস্যাটি দেখা দিয়েছিল। চতুর্থ শতকের মধ্যেই লাতিন উচ্চারণ যথেষ্ট বদলে গিয়েছিল যীশুর জন্মের সময়ের কাছাকাছি সময়ের তুলনায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব ভাষা-ই বদলায়, লাতিন-ও তার ব্যতিক্রম ছিল না। বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা লক্ষ করেছিলেন যে ধ্রুপদী টেক্সটগুলোতে শব্দের বানান আর সেগুলোকে তাঁরা ও তাঁদের শিক্ষার্থীরা যেভাবে উচ্চারণ করেন তার মধ্যে একটা বেশ ফারাক আছে, কাজেই দোনাতাস আর তাঁর সমসাময়িকদের মধ্যে ইতিমধ্যেই উচ্চারণের নিয়ম কানুন নিয়ে একটা বিতর্ক ছিল।
সম্রাট কনস্তান্তিন যখন কনস্তান্তিনোপলকে সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিলেন তখন সমস্যাটা আরো বড় হয়ে উঠল। পূর্বাঞ্চলীয় নতুন রাজধানীতে রাজপ্রশাসন চালাবার জন্য লোক নিয়োগের জরুরি প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল, আর কাজটা চালানো হতো লাতিনে। অথচ সাম্রাজ্যের সেই অংশের মানুষজনের মাতৃভাষা ছিল গ্রীক বা অন্য কিছু, এবং তাদের লাতিন ভাষায় একটা বিশদ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন পড়ত। আর ঠিক এই কারণেই প্রিসিয়ান তাঁর ব্যাকরণ বই সম্পাদনা করেছিলেন। সেটা ছিল প্রাচীনকালের সমস্ত ব্যাকরণের মধ্যে সবচাইতে সারগর্ভ, এবং তাতে ভাষাটির উচ্চারণের ওপর অনেকখানি জায়গা খরচ করা হয়েছে। তো, মঠভিত্তিক বিদ্যালয়গুলোতে — যেগুলোর সঙ্গে সাবেক রোমক জগতের প্রায় কোনো সম্পর্ক-ই ছিল না — লাতিন একটি বিদেশী ভাষায় পরিণত হতে পরিস্থিতি আরো বেশি জটিল হয়ে পড়ল, যেমনটি ঘটেছিল আয়ারল্যান্ডে, আর পরবর্তী কালে জার্মানী ও স্ক্যান্ডিনেভিয়াতে। কোথাও কোথাও উচ্চারণ নিশ্চয়ই খুব খারাপ ছিল।
সৌভাগ্যক্রমে, বেশিরভাগ লাতিন শব্দের উচ্চারণ কেমন হবে তা সেগুলোর বানান থেকে বের করা যায়। বর্ণমালাটা ঠিক এই ভাষার জন্যেই আবিষ্কৃত হয়েছিল, এবং লাতিনের বেশিরভাগ ধ্বনি প্রায় সব ইউরোপীয় ভাষাতেই পাওয়া যাবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ‘bona’ — good, ‘mitte’ — send, ‘lectus’ ‘bed’, এই শব্দগুলোতে অক্ষরগুলো কিভাবে উচ্চারিত হবে তা নিয়ে কখনো কোনো সন্দেহ নেই। কিছু কিছু ধ্বনি অবশ্য সমস্যা সৃষ্টি করেছিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার কারণ এই যে, প্রাচীনকালেই বদলে গিয়েছিল লাতিনের উচ্চারণ। আর, উচ্চারণ বদলে যাওয়ার একটি বড় উদাহরণ হলো ‘c’ হরফ, ক্ল্যাসিকাল সময়ে লাতিন ভাষায় যেটি সব সময় ‘ক’ বা ‘k’ ধ্বনির প্রতিনিধিত্ব করেছে। নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, Cicero তাঁর নাম ‘কিকেরো’-ই (kikero) উচ্চারণ করতেন, এবং ‘concepta’ — ধারণা বা ভাব (idea) — শব্দটি ‘কনকেপ্টা’-ই (konkepta) উচ্চারিত হতো। কিন্তু প্রাচীনকালের শেষের দিকে উচ্চারণটি বদলে গেল: ধ্বনিটি যখন ‘e’ ও ‘i’-এর আগে আসতো তখন আর সেটাকে আগের মতো উচ্চারণ করা হতো না। তবে সেই ভিন্ন উচ্চারণও অঞ্চলভেদে বিভিন্ন হতো, যা কিনা বিভিন্ন রোমান্স ভাষা খেয়াল করলেই বোঝা যাবে। ইতালীয় ভাষীরা ব্যবহার করেন ভাষাতত্ত্ববিদরা যাকে বলেন palato-aveolar affricate, ইংরেজি ‘chilly’ শব্দের গোড়াতে যে-ধ্বনি, ঠিক সেটি। ওদিকে, ফরাসি ভাষায় ওই একই ধ্বনি ‘Cicéro’ আর ‘concepts’-এ হলো ‘স’ [s]। জার্মানিক ভাষাগুলো প্রচুর লাতিন শব্দ নিয়েছে, আর সেখানেও উচ্চারণগুলোতে এই পরিবর্তন প্রতিফলিত। ‘স’ [s] টি ইংরেজি নিয়েছে ফরাসী থেকে, ‘Cicero’ আর ‘concepts’-এর মতো শব্দে। ওদিকে আবার জার্মান ভাষা নিয়েছে সেই উচ্চারণটি, আদতে যা ছিল প্রাচীন ফরাসিতে, যেমন [ts] — Cicero [tsitsero], Konzept [kontsept]।
যাঁরা লাতিন জানতেন, তাঁরা এসব শব্দ পাঁচশ বা একহাজার বছর আগে কিভাবে উচ্চারণ করতেন? নিশ্চিতভাবে জানতে পারবো না আমরা, যেহেতু সেসব উচ্চারণের কোনো রেকর্ডিং বা এমনকি বিশদ কোনো বর্ণনাও নেই; কিন্তু সেসময়ে বিভিন্ন দেশে সেসব শব্দ ভিন্ন ভিন্নভাবে যেভাবে উচ্চারিত হতো বলে ওপরে বলা হয়েছে, নানান নিদর্শন বা প্রমাণ সেদিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করছে যে এরি মধ্যে সেগুলো ওভাবেই উচ্চারিত হতো। একথা বিশ্বাস করার একটা যুতসই কারণ হচ্ছে ধার-করা শব্দগুলো যেভাবে উচ্চারিত হয় সেটা। শব্দগুলো যে-ভাষা ধার নিয়েছিল সে-ভাষায় শব্দগুলো সেই উচ্চারণই সঙ্গে করে নিয়ে গেছে যেভাবে তারা লাতিনে উচ্চারিত হতো, এ-কথা ভেবে নেয়া ছাড়া শ্রেয়তর আর কোনো ব্যাখ্যা নেই। সম্ভবত ইউরোপের সমস্ত অংশে উচ্চারণের কিছু বাঁধাধরা নিয়ম-রীতি ছিল, কিন্তু তারপরেও একেক অঞ্চলে স্থানীয় কতকটা ভিন্নতা অনুমোদন করা হতো।
লাতিন থেকে ধার-কর্জ যে কেবল জার্মানিক ভাষাগুলোই করেছিল তা নয়। রোমান্স ভাষাগুলো-ও হর-হামেশাই করেছে কাজটা, যদিও লাতিন থেকেই সেগুলোর উৎপত্তি। ফরাসিতে ‘concept’ শব্দটাই তার একটা উদাহরণ। এটা একটা মার্কামারা বিদ্বজ্জনোচিত শব্দ, ফরাসি কথ্য ভাষাতে সম্ভবত যার কোনো অস্তিত্ব-ই ছিল না গোড়ার দিকে। এবং ভাষাটির প্রত্যয়নের প্রথম ৩৫০ বছরের যে লিখিত টেক্সট আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে তার মধ্যে কোথাও শব্দটি খুঁজে পাওয়া যাবে না। সত্যি বলতে কি, শব্দটি প্রথম উদয় হয় ১৪০১ খৃষ্টাব্দে, আর ইংরেজিতে সেটার সংশ্লিষ্ট শব্দের আবির্ভাব ঘটে ষোড়শ শতকে। পরে আমরা দেখতে পাবো যে, ইউরোপের ভাষাগুলোর হাজার হাজার শব্দের ক্ষেত্রে একই ব্যাপার ঘটেছে।
ভিন্ন ভিন্ন স্থানে যে লাতিনের ভিন্ন ভিন্ন উচ্চারণ ছিল সেটা ধার-করা শব্দগুলো ছাড়াও অন্তত আরো একটি সঙ্গত কারণ থেকে বুঝে নেওয়া যায়, আর তা হলো, উনবিংশ ও বিংশ শতকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে লাতিনের সনাতন উচ্চারণ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান। এটা ভালো করে লেখাজোখা রয়েছে, এবং এখানে ওখানে সম্ভবত বিচ্ছিন্ন কেউ না কেউ আছেন যাঁরা এই ধারার উচ্চারণ ধরে রেখেছেন, যা কিনা আসলেই দেশভেদে ভিন্ন হতো। এখন এই পার্থক্যগুলো আগের চাইতে কম। বিংশ শতক জুড়ে একধরনের সংস্কার আন্দোলন চলেছে, যার ফল হয়েছে এই যে লোকজন মোটামুটি একই রকমের উচ্চারণ করে, তা তারা যেখানেই থাকুক না কেন। এটা এমন একটা উচ্চারণ যা ক্লাসিকাল সময়ে ভাষাটির যে-উচ্চারণ ছিল সেটার প্রতিনিধিত্ব করে, এবং যেটার কথা বইটির গোড়াতেই বলা হয়েছে।
এর বিপরীতে, সনাতন উচ্চারণ — ধার-করা শব্দগুলোর মতো — আমাদেরকে একথা জানার একটা ভালো সুযোগ করে দেয় যে শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে সেগুলো কিভাবে উচ্চারিত হয়ে এসেছে। কথাটা বিস্তারিতভাবে বলার কিছু নেই; শুধু এ-বিষয়ে সচেতন থাকলেই চলবে যে বিভিন্ন স্থানে তা ভিন্ন ভিন্নভাবে উচ্চারিত হতো, আর এসবের কিছু কিছু স্থানে তা ধীরে ধীরে বদলেও গেছে। যাই হোক, ইংল্যান্ডে লাতিনের উচ্চারণের ইতিহাস নিয়ে কিছুটা সময় ব্যয় করবো আমরা এই বেলা।
স্বরবর্ণের ক্ষেত্রেই লাতিনের সনাতনী ইংরেজি উচ্চারণ ধ্রুপদী উচ্চারণ থেকে সবচাইতে সরে গেছে। তার একটা কারণ হলো স্বরাঘাত (stress) ও ছন্দ (rhythm) বিষয়ক ইংরেজির নানান নিয়ম কানুন। এর মানে হলো, একেবারে সেই আদিম প্রাচীন ইংরেজির সময় থেকে ইংরেজিভাষীরা স্বরাঘাতপড়া স্বরবর্ণগুলোর উচ্চারণ প্রলম্বিত করে গেছে সেগুলোর পর দুটো ব্যঞ্জনবর্ণ না থাকলে। তারা “focus” ও “pater”-এ দীর্ঘ স্বরধ্বনি ব্যবহার করেছে, যদিও লাতিনে তা ছিল হ্রস্ব। আবার উল্টোদিকে, দুই ব্যঞ্জনবর্ণের আগে দীর্ঘ স্বরধ্বনি থাকলে তা ছোট করে ফেলার একটা প্রবণতা ছিল, তা লাতিনে সেটা দীর্ঘ থাকলেও। উদাহরণস্বরূপ, ইংরেজি উচ্চারণ অনুযায়ী ‘actum’ (waged) ও ‘factum’ (done) এর ছন্দ মিল ঘটত (যেমন ঘটত ‘act’ ও ‘fact’-এর মধ্যে), যদিও লাতিনে প্রথম শব্দটিতে রয়েছে একটি দীর্ঘ ‘a’ পরেরটিতে হ্রস্ব ‘a’।
তার চাইতেও আকর্ষণীয় হলো, পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকে ইংরেজি ভাষায় সংঘটিত তথাকথিত Great Vowel Shift-এর কারণে দীর্ঘ স্বরবর্ণগুলোর গুণগত মানের পরিবর্তন। এই শিফট-এর কারণে ‘game’, ‘seem’, ‘rose’, আর ‘wine’-এর — যথাক্রমে — [a], [e], [o] এবং [i] তাদের দীর্ঘ উচ্চারণ হারায়, এবং তাদের আধুনিক মান লাভ করে। লাতিন স্বরবর্ণগুলোর উচ্চারণ একই পথ ধরে। একটা যে বিশেষ জায়গায় এই উচ্চারণটা এখনো মাঝে মাঝে শোনা যেতে পারে তা হলো আইন ও দর্শন বিষয়ক আলাপ আলোচনাতে প্রায়-ই হানা দেয়া কিছু লাতিন শব্দবন্ধে। কোনো মামলা অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি হলে আইনজ্ঞরা সেটাকে ‘sine die’ (আক্ষরিক অর্থে, ‘কোনো দিবসহীন’) বলতে পারেন, এবং এই কথাটির উচ্চারণ করতে পারেন অনেকটা এভাবে: ‘সাইন-ই-দাই-ই’। আরো একটা কথা বলি আমরা — ‘habeas corpus’, যার প্রথম শব্দটি বলি অনেকটা এভাবে — ‘হে-বি-আস’। আর, গোয়েন্দা কাহিনীপ্রেমীদের কাছে সুপরিচিত ‘modus operandi’ কথাটার ‘modas’-এর প্রথম সিলেবল ও ‘operandi’-র ২য়টিতে আমরা একটি ডিপথং বা যুক্ত স্বরধনি ব্যবহার করি! যুক্তিবিদ্যা সংক্রান্ত শব্দ ‘a priori’ ও ‘a fortiori’-র ক্ষেত্রে সাধারণত প্রথম শব্দটিকে উচ্চারণ করা হয় A হরফ আর শেষ স্বরবর্ণটি ‘I’ (আই) শব্দের মতো। এছাড়াও, জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত নাম Gemini, Leo আর Piscies-এও উচ্চারণটির অবশেষ রয়ে গেছে। উপসর্গ semi- আর anti-র ব্রিটিশ ও আমেরিকান উচ্চারণের তফাতের কারণটাও এই উৎসের কাছে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। এই প্রবণতাটি অবশ্য আর কার্যকর নেই, আর যেসব লাতিন অভিব্যক্তি রোজকার ভাষায় ঢুকে পড়েছিল সেগুলোর উচ্চারণও এখন ধ্রুপদী লাতিন উচ্চারণের মত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ‘sine qua non’ শব্দবন্ধে ‘qua’ শব্দের উচ্চারণ এখন সাধারণত [kwa] হলেও একসময় সেটা [kwe] উচ্চারিত হতো।
পরবর্তী অংশ : বাচন ও বানান (শেষ অংশ)
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১ comment
Pingback: লাতিন ভাষার কথা : ২৯ | জি এইচ হাবীব