আমার সাঁই — আমি তাঁর জন্য অপেক্ষা করি।

বিরাট মাঠের পারে বাড়ি। বছরে কয়েকবার সেই মাঠে খুনোখুনি লড়াই হয়। প্রথম ভয় সেই বাড়িতে। একদিকে নিকষ বাঁশঝাড়, আরেকদিকে গাছগাছালি ভরা অন্ধকার, আরেকদিকে কয়েক ঘর প্রতিবেশী। বিরাট উঠানের পরে দেওয়াল দিয়ে ঘেরা। সেই দেওয়ালে সন্ধ্যা হলেই ছায়াদের নড়াচড়া দেখতাম। দেখতাম আর বুকে থম ধরে যেত। কাউকে বোঝানো যেত না সেই ভয়। বয়স বেড়েছে দিনে দিনে, ছায়ারাও আসে না আর। তাদের আমি রেখে এসেছি শৈশবের সেই কুহককাতর জগতে।

আমার ভয়, আমার রোমাঞ্চ, আমার দুঃসাহসসকল নিয়ে আমি আমার সাঁই — আমি তাঁর জন্য অপেক্ষা করি।

বিরাট মাঠের পারে বাড়ি। বছরে কয়েকবার সেই মাঠে খুনোখুনি লড়াই হয়। প্রথম ভয় সেই বাড়িতে। একদিকে নিকষ বাঁশঝাড়, আরেকদিকে গাছগাছালি ভরা অন্ধকার, আরেকদিকে কয়েক ঘর প্রতিবেশী। বিরাট উঠানের পরে দেওয়াল দিয়ে ঘেরা। সেই দেওয়ালে সন্ধ্যা হলেই ছায়াদের নড়াচড়া দেখতাম। দেখতাম আর বুকে থম ধরে যেত। কাউকে বোঝানো যেত না সেই ভয়। বয়স বেড়েছে দিনে দিনে, ছায়ারাও আসে না আর। তাদের আমি রেখে এসেছি শৈশবের সেই কুহককাতর জগতে। কিন্তু নিয়তির দেয়ালে কিসের যেন ঝলক দেখি, দেখি অন্তিম ভয় হয়ে নাচে সেইসব কৃষ্ণমূর্তি।

প্রথম দুঃসাহস ছিল একটি অন্ধ ও মৃত কূপ। দুভাই মিলে কীসের যেন টানে ঝুঁকে, তার ভেতরে তাকাতাম। অনেক আগে ওখানে লাশ পাওয়া গিয়েছিল। তলার অন্ধকারের দিকে তাকানোর রোমাঞ্চ আজো শিরার লহু চঞ্চল করে তোলে। রাত নামলে পড়োভিটার গহ্বর থেকে নিশাচর যেমন মুখ বাড়ায়, তেমনি বাস্তবের খোপ খুলে পরাবাস্তব রোমাঞ্চের জগতে উঁকি দিয়ে আসি। অন্ধকূপের মতো তারও টান শিহরিত করে, রোমাঞ্চভূক পতঙ্গ হয়ে মনে হয় ঝাঁপ দিই তার ইশারায়।

প্রথম দুঃস্বপ্ন এসেছিল দরবেশের বেশে। আশ্বিনের ‘বিকেলের দিকে যেই ঝড় আসে তাহার মতোন’ জ্বর আসতো শীত আসি-আসি করা বিকেলে। অসুখের জানালায় বসে আমি দেখি ঘুমন্ত ইঁদারা, পারদে ভাসন্ত চোখ। তারাদের চোখের হিম কুশের মতো এসে বেঁধে মনে। পরম বন্ধুর মতো ঘুম আসে, স্বপ্ন আসে। দেখি আমার জানালার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি। কালো মানুষটির পরনে গৈরিক, মাথার মাথালও গেরুয়া, বুকের ‘পরে ভোরের মতো আলো-আঁধারি দাড়ি। আধখোলা জানালা দিয়ে আমরা চোখে চোখে তাকিয়ে থাকি।

তাঁর মুখে অদ্ভুত হাসি ভাসে। কণ্ঠে স্নেহ ঝরিয়ে বলেন, ‘নাহ্ থাক, ঘুমাক’।

ঘুমের মধ্যে টের পাই বুকের পরে শ্বাস ফেলে চলে গেলেন তিনি। বোবা ধরার অবোধ কষ্টে আমি গোঁ গোঁ করতে থাকি।
অনেক বার তিনি এসেছেন। অনেক কাল হলো তিনি আর আসেন না। বোবা ধরা স্বপ্ন আসে মাঝে মাঝে। রাতভর বৃষ্টি যখন, তপ্ত শরীর হিমে পোড়ে যখন, কোথাও বোবায় ধরা কুকুর করুণ আর্তনাদ করে যখন, আমি বুঝি এমন কোনো রাতেই তিনি আবার আসবেন। আমার ভয়, আমার রোমাঞ্চ, আমার দুঃসাহসসকল নিয়ে আমি আমার সাঁই_তাঁর জন্য অপেক্ষা করি।

৩.
এ অবধি তিনি আসেননি। জন্ম আর বিবাহ এসেছে একই লগ্নে, অঝোর বৃষ্টির মধ্যে। কন্যা ও তুলার সন্ধিক্ষণে আমি তাহাদের পাই। প্রেম আসে সন্ধি পারায়ে।

জন্মের কথা মনে হলে গর্ভের ঘোলা অন্ধকারের সঙ্গে হলুদ আলোর মেশামেশির দৃশ্য দানা বাঁধে। যেন জল মেশানো ঘন রংদুটি পরস্পরকে গ্রাস করতে চাইছে। গর্ভের অন্ধ ঈশ্বর মাটির দুনিয়ায় সন্তানজন্ম পায় আর নাড়ি কেটে পরমকে হারায়। অথচ অন্ধের চোখ তো ঈশ্বর স্বয়ং। মনের মধ্যে সেই চক্ষু অপলক। তা মলিন দেখে না, সহি দেখে। তা সংসার দেখে না, বিশুদ্ধ প্রেম দেখে। যেন তারই আহ্বান েহে বসুধা, জননীর পিঞ্জর ছাড়িয়ে মায়াবি পর্দা সরিয়ে চলে আসছি তোমার নিকট।ে আর জীবনের চৌকিতে বসিয়ে আমায় তুমি গেছ স্নানে। আর আমার যে একা লাগে! আমি পারি না। উঠোন পেরিয়ে বাঁশঝাড়ের শীতল ছায়ার নীচে স্নানঘর আমায় টানে।

হাঁটি হাঁটি পায়ে আমি তো তোমার কাছেই যেতে চেয়েছি। উঁকি দিয়েছি দরজার ছোট্ট ফুটোয়। তুমি জানলে না, আয়েশা হয়ে গেলে মা তুমি। অভিশাপ দিলে: জহরে কহরে মরবি। হায় হাসান, হায় নীল জহর! হায় হোসেন, হায় লাল খুন! মা, তুমি দিলে বর, তাই আমি জহরে জহরে নীলকণ্ঠ শিব। তুমি দিলে শাপ, তাই মাটিতে সিজদা রাখা উবু পিঠে ছুরি খেয়ে চলি।

মৃত্যুর লগ্নের কথাও মনে আসে। মনে আসে সইে স্বপ্ন: এক জোড়া পা, অঝোর বর্ষণের সন্ধ্যায় গোড়ালি ডোবা জলা পেরিয়ে চলে যাচ্ছে। সমস্ত আয়ু নিয়ে সে দাঁড়িয়ে ছিল পথের ধারে। এই পথইে পয়েছে িজনম, পয়েছে িবয়সরে সাথী।
বয়স হারাতে হারাতে আজো আমি সং হয়ে দাঁড়িয়ে আছি সেই পথেরই ধারে। অশ্রু বয়ে যাওয়া খাঁড়ির মুখে উদ্দালক হয়ে বারবার বাঁধ জাগিয়েছি তোমার ঢল থামাব বলে, হে শ্যাম হে মরণ…

এ চোখে নামুক শঙ্খ,
দিগন্তরেখার সব খাঁজ ভরে যাক শ্মশানভষ্মে।
উঠতি আঁধার তখনি দেখে নিক, কার বুকে জমে আছে কতটুকু জল।
জান িনা, কার চোখে কোন অন্ধকার দেখে আলো হতে চেয়েছিল কে?

অকুলের সঙ্গীর জন্য অপেক্ষা করছি বর্ষণমুখর সন্ধ্যার গ্রহণলাগা আলাের ছায়ায়।

ফারুক ওয়াসিফ

চৌখুপি থেকে বেরিয়ে দিকের মানুষ খুঁজি দশদিকে।

১৯ comments

  1. মাহাবুবুর রাহমান - ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৮:৫৮ অপরাহ্ণ)

    মুক্তাঙ্গনে যারা লিখতে আগ্রহী তাদেরকে সর্তক করা হয়েছে :

    তবে কেবল কবিতা বা গল্প হিসেবে লেখা পোস্ট ছাপানোর জন্য মুক্তাঙ্গন উপযুক্ত স্থান নয়।

    তো এই পোস্টটিকে আমরা কী বলব! কিংবা ধরা যাক কেউ একজন যদি সরকার কিংবা রাষ্ট্রের কিংবা ইত্যাদি ইত্যাদির সমালোচনা করে একটা কবিতা লেখে এবং সেটা পড়ে আমরাও বুঝতে পারি যে, এটা একটা কবিতা; কিন্তু সেই কবি যদি চালাকি করে সমালোচনা হিসেবে লেখাটি এখানে পোস্ট করে তবে?…

    • মুক্তাঙ্গন - ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৯:৫১ অপরাহ্ণ)

      ধন্যবাদ আপনার সুচিন্তিত বক্তব্যের জন্য। আপনার মন্তব্য আবারও প্রমাণ করলো মুক্তাঙ্গনে সত্যিকারের মডারেটর আসলে এখানকার সকল পাঠক এবং লেখক। নীতিগতভাবে মডারেটর-হস্তক্ষেপের মত বিষয়গুলো আমরা ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছি। লেখকদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং আস্থার অবস্থান থেকেই মূলতঃ এই নীতির উন্মেষ। সে উদ্দেশ্য মাথায় রেখেই – ব্লগমন্ডলে যাঁরা অনেকদিন ধরে নিয়মিত লিখছেন, এবং যাঁরা প্লাটফর্মের কারিগরি দিকগুলোর সাথে ইতোমধ্যে সম্যক পরিচিত হয়ে গেছেন – তাঁদের লেখা স্বীয়-মডারেশনের আওতাধীন করার চেষ্টা চলছে। কারণ, আমরা প্রত্যাশা করি, সম্মানিত লেখকগণ ব্লগের সাধারণ নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে নিজের বিচার-বিবেচনার চর্চা করবেন এবং সে অন‍ুযায়ী নিজ দায়িত্বে নিজের লেখা নিজেই ‘প্রকাশ’ করে নেবেন নিজ একাউন্ট থেকে।

      লেখক ফারুক ওয়াসিফের একাউন্টও “স্বীয়-মডারেশন”-এ আপগ্রেডকৃত একাউন্টগুলোর একটি। এ কারণে তাঁর লেখায় মডারেটরদের কারো হস্তক্ষেপ ছিল না। তবে পড়ে মনে হচ্ছে লেখাটি “স্মৃতিচারণ” তালিকাভূক্ত বলে বিবেচিত হতে পারে, যার সাথে অবশ্য মুক্তাঙ্গনের প্রকাশ-নীতির কোন বিরোধ নেই। অবশ্য এই বিবেচনায় আমাদেরও ভুল হতে পারে। কারণ, চূড়ান্ত বিচারে একটি লেখার আঙ্গিক এবং প্রকরণ আসলে কি হওয়া উচিত, কিংবা কিভাবে সেটি বিবেচিত হওয়া উচিত – তা বিচারের বা বলে দেয়ার অধিকার অবশ্যই লেখকের নিজেরই। ফারুক ওয়াসিফ (সম্ভবত তাড়াহুড়োয়) পোস্টটির “বিভাগ”-ভূক্তির ঘরগুলো খালি রেখেছেন, যে কারণে এই অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত প্রশ্নের জন্ম। প্রয়োজনীয় ঘরগুলো তিনি নিজ হাতে পূরণ/নির্বাচন করে নিলেই এই বিষয়টার একটা গ্রহণযোগ্য সুরাহা হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। লেখকের প্রতি অনুরোধ থাকবে যত দ্রুত সম্ভব সেটা করে নেয়ার। বিভাগ এন্ট্রি করা নিয়ে আমাদের আরেকজন লেখকও সম্প্রতি কিছু কারিগরি সমস্যার সম্মূখীন হয়েছিলেন; সমাধানটি এখানে বিধৃত

      আপনাকে আবারও ধন্যবাদ। লেখক, মডারেটর, ব্লগ প্লাটফর্ম, সংগঠক – সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব-কর্তব্যের ব্যাপারে সজাগ রাখতে আশা করি আমরা আপনার মত এমন সচেতন পাঠক আরও পাবো।

      • মাহাবুবুর রাহমান - ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৯:৫৩ পূর্বাহ্ণ)

        আমার দেয়া উপযুক্ত মন্তব্যটির লক্ষ্য বর্তমান পোস্টটি নয় বরং ব্লগ-কর্তৃপক্ষের নীতির সাথে সহমত পোষণ না করা। যে নীতিটির সাথে সহমত নই তা উদ্ধৃত করা হয়েছে। আমার প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে :

        ব্লগমন্ডলে যাঁরা অনেকদিন ধরে নিয়মিত লিখছেন, এবং যাঁরা প্লাটফর্মের কারিগরি দিকগুলোর সাথে ইতোমধ্যে সম্যক পরিচিত হয়ে গেছেন – তাঁদের লেখা স্বীয়-মডারেশনের আওতাধীন করার চেষ্টা চলছে।

        তো সে হিসেবে ফারুক ওয়াসিফ স্বীয়-ইমামতিতে (self-moderation) উন্নীত। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে দীর্ঘদিনের লেখালেখি সূত্রে যাদের কাণ্ডজ্ঞান, পরিমিতিবোধ, রুচিশীলতার উপর আপনাদের আস্থা এসেছে তারা যদি এখানে কবিতা/গল্প পোস্ট করে তবে আপত্তি কোথায়?

        আমার সীমিত পাঠজ্ঞান বলে বর্তমান পোস্টটি নিশ্চিতভাবেই একটি কবিতা। এবং এটি সুলিখিত। এধরনের সুমিত, পরিশীলিত কবিতা যদি কেউ এখানে পোস্ট করে থাকেন তবে কর্তৃপক্ষের নারাজ হওয়ার কোন কারণ দেখি না। আমার ধারণা কর্তৃপক্ষ কবিতার বিরুদ্ধে নয় – (কবিতার নামে করা) কবিতাবাজির বিরুদ্ধে। কি, কতটুকু ঠিক বললাম?

        • মুক্তাঙ্গন - ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ)

          @ মাহাবুবুর রাহমান,

          — অন্যান্য ব্লগ প্লাটফর্মে কর্তৃপক্ষ বলতে সাধারণভাবে যা বোঝা হয়, এখানে বিষয়টা তার থেকে কিছুটা ভিন্ন। ঢাকঢোল পিটিয়ে বিপননি শ্লোগান দেয়া থেকে এই বেলা বিরত থাকা হল।

          — কবিতা-গল্পের শত্রু নই আমরা – ঠিক ধরেছেন। কিন্তু “ভাল” কবিতা-গল্প এলেই তা গ্রহণযোগ্য হবে – সেটা মনে হয় ঠিক ধরেননি। কারণ অন্যত্রে, তবে দ্বিমত পোষণের অধিকার আপনার রয়েছে।

          — বাংলায় ব্লগিংয়ের নামে যা এখন প্রচলিত, বলাই বাহুল্য তা খুবই “আকর্ষনীয়”। তবে মুক্তাঙ্গন সেই পথ অনুসরণ না করার অধিকার সংরক্ষণ করে।

          — লেখকের “কবিতা” আপনার ভাল লেগেছে। জেনে তিনি আনন্দিত হবেন নিঃসন্দেহে॥

          • মাহাবুবুর রাহমান - ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (২:২৫ অপরাহ্ণ)

            মোল্লা বঙ্কিম বাবু সূত্রে এতদিন যে ভুল কথাটি জাইনা আইছিলাম তা হইল লেখকের লেখার উদ্দেশ্য পাঠকরে আনন্দ দান করা। আজ জানলাম পাঠকেরও পাঠের উদ্দেশ্য আছে – এবং তা লেখকরে আনন্দ দান করা। দেখিয়া কিঞ্চিৎ প্রমোদ লভিলাম।
            কথা প্যাঁচাইতে ভাল্লাগে না। কিন্তু মুক্তাঙ্গন তরফ থেকে যে উত্তর দেয়া হয়েছে –

            – লেখকের “কবিতা” আপনার ভাল লেগেছে। জেনে তিনি আনন্দিত হবেন নিঃসন্দেহে॥

            তা কিছুটা আলঙ্কারিক (এবং সরল কথায় বলতে গেলে খোঁচাসুলভ) বইলা মনে হইছে। তাই…। ভুলও মনে হইতে পারে, সেক্ষেত্রে ক্ষমা-ঘেন্না কইরা দিবেন।
            আমার মন্তব্যের (১.১.১) কোথ্থাও বলি নাই কবিতাটি ভালো লাগছে। ভালোলাগা-মন্দলাগা জাতীয় মন্তব্য আমি সযত্নে এড়াইয়া চলি। আমার ধারণা এই ধরনের মন্তব্যে পিঠ-চাপড়ানির উপাদান যথেষ্ট পরিমাণে নিহিত থাকে।
            আমি কেবল লেখাটার কিছু বৈশিষ্ট্য তুইলা ধরছি মাত্র। এবং আমার তুইলা ধরাটাও উপরিতলের এবং দায়সারা গোছের।

            মুক্তাঙ্গন কবিতা শব্দটিকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে (“কবিতা”) রেখে কি তাঁর সন্দেহ প্রকাশ করেছেন? অর্থাৎ মুক্তাঙ্গন কী বলতে চাচ্ছেন এইটা কবিতা নয়!

            আমার পক্ষ থেইকা বিষয়গুলা আরেকটু পরিষ্কার করি।

            ধরা যাক কেউ একজন কোন একটি লেখা এনে আরেকজনের হাতে ধরাইয়া দিয়া মৃদু ও মাঝারি কণ্ঠে কইলেন, পড়েন (আপনের প্রভুর নামে)। তো সেই পাঠক তা পইড়া – আমরা অনুমান করতে পারি – নানা ধরনের কথা কইলেন।
            প্রথম অনুমান করি : তিনি কইলেন এইটা কবিতা হয় নাই। তো লেখক যদি চাল্লু হয় সেও উত্তর দিতে পারে : আমি তো কই নাই এইটা কবিতা! সেই ক্ষেত্রে পাঠক তার পক্ষে যুক্তি তুইলা ধরতে প্রথমেই হয়তো লেখাটার আঙ্গিকের দিকে নজর দিব। কিন্তু সেইখানে যদি কবিতার কোনো আঙ্গিকই না থাকে! এই পোস্টটার মতো যদি মুক্তগদ্য হয়! সেই ক্ষেত্রে পাঠক লেখাটির মইদ্যে (সংক্ষেপে বলি) এমন কোন ইশারা-ইঙ্গিত পাইছে যাতে লেখাটাকে সে কবিতাগোত্রীয় বইলাই ধইরা নিছে। না ধইরা উপায় ছিল না।

            আবার ধরা যাক একটা কবিতা একজনকে পড়তে দিয়া বলা হইল এইডা সম্বন্ধে কিছু কন। পাঠক কবিতাডা পইড়া এইডার ১০১টা বৈশিষ্ট্য বয়ান করল। শুইনা তো কবি খুশিতে বিভ্রম। তার পর কিঞ্চিৎ খেয়াল হইলে কবি আরেকটু আদুরে সুরে আবদার কইরা বসলেন : কবিতাডা আপনের কেমন নাগছে হেইডা তো কইলেন না; হেইডাও একটু কন। তখন পাঠক যাহা বললেন : কবিতাডা আমার ভাল্লাগে নাই। (ঠাস।)
            শুনিয়া কবি অতিকষ্টে বদনখানি প্রফুল্ল রাইখা পশ্চাৎমুখে শুধাইলেন : ক্যানো ভাই, ক্যানো, ভাল্লাগে নাই! আপনি তো লেখাটার ১০১টা হকিকত বয়ান করছেন।
            তখন মাহাবুব উদাসীন চিত্তে ধ্বনিত করলেন : আস্বাদনযোগ্য কোন “বস্তু”ই এখন আর স্বাদ নাগে না। অদ্য হইতে আমি অন্যতর কোন “ভাববস্তু”র আস্বাদন চাই।

          • রেজাউল করিম সুমন - ২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৫:৫৭ অপরাহ্ণ)


            মাহাবুবুর রাহমান প্রসঙ্গত লিখেছেন,

            আমার ধারণা কর্তৃপক্ষ কবিতার বিরুদ্ধে নয় – (কবিতার নামে করা) কবিতাবাজির বিরুদ্ধে। কি, কতটুকু ঠিক বললাম?

            ‘কবিতাবাজি’ শব্দটা এই প্রথম শুনলাম। মুক্তাঙ্গন যে কবিতার বিরোধী নয়, তা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। তবে এ-কথা ঠিক, মৌলিক কবিতা পোস্ট হিসেবে এখানে ছাপা হয়নি – এই ব্লগটির সুনির্দিষ্ট নীতিমালার কারণেই। তাতে যে পাঠক হিসেবে খুব বঞ্চিত হয়েছি, এমন নয়। অনলাইনে কবিতা পড়ার সুযোগ তো আছেই – ফেসবুকে, ব্যক্তিগত ব্লগস্পটে, অন্য অনেক ব্লগে…। মুক্তাঙ্গন-এ গল্প-কবিতা ছাপা হয় না – এই সীমাবদ্ধতাকে মেনে নিতে অসুবিধা হয় না যখন দেখি বিচিত্র বিষয় নিয়ে ভাবিয়ে-তোলার-মতো অনেক লেখা আছে এখানে, আর পরস্পরের পৃষ্ঠ কণ্ডূয়ন বা অকারণ ছিদ্রান্বেষণের চর্চা না করে এই ব্লগে লেখক-পাঠকরা গড়ে তুলতে চাইছেন সুস্থ এক আলোচনার পরিবেশ।

            মাহাবুবুর রাহমানের সর্বশেষ সশ্লেষ মন্তব্যটি পড়ে মনে হলো, ব্লগে লেখালেখির ক্ষেত্রে প্রমিত লেখ্য ভাষার প্রতি পক্ষপাত প্রকাশ করে মুক্তাঙ্গন ভুল করেনি। অতি-সপ্রতিভতাবশত অনেকেই নিজের অজান্তে গ্রাম্যতার চর্চা করেন, একে প্রশ্রয় দেন।

  2. মাহতাব - ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (১০:৩১ পূর্বাহ্ণ)

    অসামান্য একটি লেখা। লেখককে অনেক ধন্যবাদ।

  3. ফারুক ওয়াসিফ - ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (১:১৮ অপরাহ্ণ)

    কী বিভ্রাটেই না পড়া গেল। কোনো ভাবেই বিভাগের ঘরে কিছু বসাতেই পারছি না। দুঃখিত।

    এটা আমি লিখেছিলাম জার্নাল গোছের লেখা হিসেবে। কবিতা নিশ্চয়ই অন্য জিনিস। তবে স্বীকার করি, বেদনার ঘরে যেমন আশা ঢুকে বসে থাকে, তেমনি এর কিছু কাব্যগুণ থাকতে পারে। এটা সিরিজ হবে, আগের দুই কিস্তি অন্যত্র দেওয়া ছিল ‌আমার ‘ব্যক্তিগত অডেসি’ নামে।
    আমার ব্যক্তিগত অডেসি —১

    আমার ব্যক্তিগত অডেসি ২ : ও বৃষ্টি ও মরণ

    এসব আমার এক ধরনের আত্মসমীক্ষণ; স্মৃতি ও সত্তার মধ্যে ভ্রমণ। এবং সত্তাস্বরূপ প্রায়শই কাব্যিক ভাব ধরে বিরাজ করেন। স্পষ্ট গোত্রবিভাজনে আমার এই অপারগতাকে ক্ষমার সুন্দর নয়নে না দেখলে আমার কুণ্ঠার আর কোনো পর থাকবে না।

  4. রায়হান রশিদ - ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (২:১৪ অপরাহ্ণ)

    কবিতা নিশ্চয়ই অন্য জিনিস। তবে স্বীকার করি, বেদনার ঘরে যেমন আশা ঢুকে বসে থাকে, তেমনি এর কিছু কাব্যগুণ থাকতে পারে।

    কিংবা গদ্যের পক্ষে নিমগ্ন চেতনার উপযুক্ত ভাষামাধ্যম হয়ে ওঠা হয়তো সত্যিই কঠিন। আর কবিতায় ঘোর অবিশ্বাসীও মানতে বাধ্য – কাব্যময় প্রকাশে খন্ডিত মুহুর্তের অনুভূতি যে প্রিসিশানে লক্ষ্যভেদ হয়, আটপৌরে গদ্যে তা কদাচিৎ হয়। তাছাড়া, প্রকৃত কবির পক্ষে নিজেকে আড়াল করার দুঃসাধ্যতা তার জীবনকে কোন অংশে সহজ করে না; ফারুক ওয়াসিফের বিড়ম্বনা সেই সত্যের সাক্ষী হয়ে থাকলো।

    Stream of Consciousness বলে একটা কথা প্রায়ই শুনি। এর সঠিক ভাবানুবাদ কি হতে পারে?

  5. ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৮:২৮ অপরাহ্ণ)

    ফারুক ওয়াসিফ:
    অনেক দিন পর ব্যতিক্রমি মেজাজের একটা লেখা পড়লাম। ধন্যবাদ। আপনার দেয়া লিন্ক ধরে বাকী দুই পর্বও পড়ে এলাম। এই সিরিজটা চালু রাখার অনুরোধ করবো আপনাকে। এই পর্ব থেকে কিছু প্রিয় অংশ:

    প্রথম দুঃসাহস ছিল একটি অন্ধ ও মৃত কূপ। দুভাই মিলে কীসের যেন টানে ঝুঁকে, তার ভেতরে তাকাতাম। অনেক আগে ওখানে লাশ পাওয়া গিয়েছিল।

    কুয়োর রহস্যময় অন্ধকারে চমৎকার ধরেছেন শৈশবের অনুসন্ধিৎসু বিপদপ্রেমী মন। সবার আগে যা কেড়ে নেয় বয়স।

    দেখতাম আর বুকে থম ধরে যেত। কাউকে বোঝানো যেত না সেই ভয়। বয়স বেড়েছে দিনে দিনে, ছায়ারাও আসে না আর।

    পড়ে মনে হয় একটা পুরো প্রজন্মের শৈশব বুঝি ঠিক একই রকম ছিল। ছেড়ে যাওয়া ছায়াদের কথা মনে পড়িয়ে দিলেন।

    প্রথম দুঃস্বপ্ন এসেছিল দরবেশের বেশে।

    এ অংশটা বুঝিনি। যে সাঁইবাবাকে নিয়ে এ লেখা, তিনি কেন দুঃস্বপ্ন হলেন? থাক, ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই।

  6. ফারুক ওয়াসিফ - ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৮:৪৬ অপরাহ্ণ)

    তিনি আমার স্বপ্নে আসতেন যে!

  7. ফারুক ওয়াসিফ - ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৮:৪৮ অপরাহ্ণ)

    ঠিক ধরেছেন রায়হান, কবিতা আমার যাবতীয় দ্বিধার অপর নাম।

  8. ফারুক ওয়াসিফ - ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৪:০০ অপরাহ্ণ)

    এই প্যারাটা আবার লিখেছি, অন্ধত্ব, সৌন্দর্য্য আর প্রেম নিয়ে পরে লিখব বলে।
    ”জন্মের কথা মনে হলে গর্ভের ঘোলা অন্ধকারের সঙ্গে হলুদ আলোর মেশামেশির দৃশ্য দানা বাঁধে। যেন জল মেশানো ঘন রংদুটি পরস্পরকে গ্রাস করতে চাইছে।গর্ভের অন্ধ ঈশ্বর মাটির দুনিয়ায় সন্তানজন্ম পায় আর নাড়ি কেটে পরমকে হারায়। অথচ অন্ধের চোখ তো ঈশ্বর স্বয়ং। মনের মধ্যে সেই চক্ষু অপলক। তা মলিন দেখে না, সহি দেখে। তা সংসার দেখে না, বিশুদ্ধ প্রেম দেখে।”

  9. আহমেদ মুনির - ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৩:১৮ অপরাহ্ণ)

    আসামান্য । লেখাটি কবিতা না স্মৃতিচারণ তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই । এমন লেখাকে আমরা বার বার স্বাগত জানাব । ফারুকের এমন বিষণ্ণ শব্দগুচ্ছ আমাকে আক্রান্ত করেছে।

    • ফারুক ওয়াসিফ - ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৪:৫৬ অপরাহ্ণ)

      একই দাবি আপনার প্রতিও মুনির। আপনার কবিতা ও গদ্য টানে যে!

  10. ফারুক ওয়াসিফ - ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৪:৩৭ অপরাহ্ণ)

    সুমন, আপনাকে প্রণাম।

    • মুক্তাঙ্গন - ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৪:৪৯ অপরাহ্ণ)

      কোন নির্দিষ্ট মন্তব্যের জবাব দিতে “প্রত্যুত্তর” লেখা বোতামে ক্লিক করে মন্তব্য করতে পারেন, তাহলে তা নির্দিষ্ট ঐ মন্তব্যের ঠিক নিচেই প্রদর্শিত হবে।
      ধন্যবাদ।

    • রেজাউল করিম সুমন - ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৭:১৮ অপরাহ্ণ)

      @ ফারুক ওয়াসিফ

      আপনাকেও — আমার ও মুনিরের পক্ষ থেকে।

      আমারও ভালো লেগেছে আপনার লেখাটা।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.