আধুনিক জগত থেকে ক্লেশকর এক যাত্রার শেষে, আলেহো কার্পেন্তিয়েরের লোস পাসোস পারদিদোস_ দ্য লস্ট স্টেপস_(১৯৫৩) উপন্যাসের নায়ক সান্তা মনিকা ডে লা ভেনাদোস এ পৌঁছে। আদেলান্তাদো সেখানে জঙ্গল কেটে কয়েকটি কুড়েঘরের একটি শহর পত্তন করেছে। নামহীন সেই নায়ক মনে করে, কিংবা মনে করতে ভালবাসে যে, এটাই সেই উপত্যকা যেখানে সময় থিতু হয়েছে, সময় আর এগয় না যেখানে। কারণ, জায়গাটি ইতিহাসের খাতের বাইরে। তার ধারণা এখানেই সে নিজেকে ফিরে পাবে। তার ইচ্ছা হয় অডেসিকে ভিত্তি করে এক সাংগীতিক সৃষ্টি করে। তাই নগরপত্তনিদারের কাছে কিছু কাগজ চায়। কিন্তু আদেলান্তাদোর কাছে যা আছে তা তো নতুন শহরের আইন লিখতেই লেগে যাবে। তবুও আরও একটি নোটবই তাকে দেয়া হয়। দ্রুতই তা ভরে যায়। বিরক্ত আদেলান্তো তাকে শেষ নোটখাতাটি দেয়। তখন চরিত্রটি বাধ্য হয় গুটিগুটি অক্ষরে লিখতে, প্রতিটি শূন্যস্থান কাজে লাগাতে, এমনকি নিজের জন্য একধরনের সাঁটলিপিও সে আবিষ্কার করে। কিন্তু তাতেও না কুলালে সে কেবলই লেখে আর মোছে। কেননা তার সামনে যাওয়ার কোনো স্পেস নাই। তাই লেখা, মোছা আর পুনর্লিখন প্রক্রিয়ায় তার পাণ্ডুলিপি আর্কাইভের রাখা ও ফেলার (The economy of Loss and Gain) কসরতে ঢুকে যায়। রবার্টো গঞ্জালেস এচেভারিয়া তাঁর মিথ এন্ড আর্কাইভ অভিসন্দর্ভে দেখান যে, কার্পেন্তিয়েরের হাতেই হালের লাতিন আমেরিকার উপন্যাসের আদল কীভাবে দাঁড়িয়ে যায়। পরে, আমরা দেখব যে, মার্কেজ, ফুয়েন্তেস, য়োসার উপন্যাসে এরকমই কিছু অসাধিত পাণ্ডুলিপি ফিরে ফিরে আসছে। তা-ই যেন হয়ে ওঠে লাতিন আমেরিকার উপন্যাসের আদি টেক্সট।
পাশাপাশি, আদি পাণ্ডুলিপির সমান্তরালে পাচ্ছি একটা যাত্রার বিবরণ: নদীর বন, পাহাড়ের ওপর দিয়ে। এবং আখ্যানগুলো যেন অসম্পূর্ণ। যেন পরের কেউ এসে তাকে এগিয়ে নেবে। এই মর্ত্যরে রাজত্বে, পেদ্রো পারামো, শতবর্ষের নিঃসঙ্গতা যেন একই আখ্যানের লিখন, লেপন ও পুনর্লিখনের সাঁটলিপি। একেকটি নতুন শুরু, ভিন্ন ভিন্ন দেশ ও কালের মধ্যে। এশেভারিয়ার ভাষায় লোস পাসোস পারডিদোস হলো সেই মহাআখ্যানের মহাফেজখানা। এ প্রক্রিয়ায় যা ঘটছে, এশেভারিয়া বলছেন,
If Carpentier’s novel is the founding archival fiction, Garcia Marquez’ is the architypical one.
পাওয়া ও হারানো, আত্ম-আবিষ্কারের সফর, নতুন আরম্ভের মিথ আর সেই আদি অভিজ্ঞতানিচয় মিলে গঠন করে লাতিন আমেরিকার উপন্যাসের মণিমুকুর বা পড়ৎব। কার্লোস ফুয়েন্তেসের টেরা নোস্ত্রা (১৯৭৬), কার্পেন্তিয়েরের এল রেইনো দে এস্তে মুন্ডো বা এল সিগো ডে লা লুসে, য়োসা’র লা গুয়েরা দেল ফিন দেল মুন্ডোসহ ইত্যাকার উপন্যাসগুলো যেন লাতিন আমেরিকার নিজস্ব ইতিহাস ও সংস্কৃতি কাঠমো এবং অবশ্যই জীবনের নিজস্ব সংবেদ খুঁজে পাওয়ার প্রয়াস। লেখা হয়ে ওঠে অ্যাক্টিভ মেমোরি। যেন ধস নামে হেগেলের সেই দম্ভে যে, প্রাচ্যের ইতিহাস নাই আÍচেতন নাই; তারা বিশ্বেতিহাসের অংশ বা উপাদান মাত্র। এই নতুন ‘আমি’র সার্বভৌম আবির্ভাব, নিজস্ব ‘ছিল’র সাংস্কৃতিক ও জ্ঞানতাত্ত্বিক প্রত্নতত্ত্ব খুঁড়ে বের করার মিশন যেন উপন্যাসেরও হয়ে ওঠার মিশন। তাই,
Latin American novel must appear to be obsessed with Latin American history and myth.
এভাবে মিথ ও ইতিহাস উপন্যাসে সহাবস্থান করে একটি ভূখণ্ডের মানবসমাবেশকে আখ্যানের মধ্যে ষ্ফূট করে করে তোলে। যেজন্য তৈরি বাস্তব ও তার বন্ধনের যুক্তিকে অস্বীকার করতে হলে ফিরতে হয় সেই ইতিহাসের ‘অরিজিনালিটিতে’; পর্দায় ঢাকা মিথ ও লোকস্মৃতিকে সক্রিয় করে তোলার মাধ্যমে। তার জন্য দরবারি ইতিহাসের এক ধাপ পেছনে গিয়ে মিথ ও প্রাকৃতিক অস্তিত্বসমূহকে শৈল্পিক অস্তিত্ব করে তোলার দরকার হয়। আর সেই অস্তিত্বের শীর্ষে থাকে সামাজিক গতিশীলতা এবং ঐতিহাসিক ও প্রজাতিগত স্মৃতি। ইতিহাসতত্ত্বের প্রাথমিক উপাদান লাতিন ইতিহাসে তাই ‘আর্কাই’।
(আখ্যায়ন বা কথা হলো সেই প্রাথমিক উপাদান > ইতিহাস ও উপন্যাস উভয়েরই। ইতিহাস > ‘ইতি’+‘হা’-অব্যয় +‘অসিত’_ছিল।)
আর ছিল আইনের ভাষ্য। আমাদের মনে আছে যে, আইন ও আখ্যানের টানাটানি একই স্পেসের অধিকার নিয়ে। ফুয়েন্তেসের ভাষায়,
The Roman legalistic tradition is one of the strongest components in Latin American culture: from Cortes to Zapata, we only believe in what is written down and codified.
_ Carlos Fuentes/Newyork Book of review, 1986
কিন্তু এ কি সাহিত্যের প্রকৃতির বাইরে চলে যাওয়া নয়? লেখ্য জ্ঞান (আইন, দলিল, ভ্রমণবর্ণনা, নৃতত্ত্ব, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান) আর লোকস্মৃতি, কল্পনা ও মিথের বিন্যাস ছাড়া লাতিন উপন্যাসকে বোঝা ও ব্যাখ্যা করা কতটা সম্ভব? তা যদি হয়, তাহলে উপন্যাস বুর্জোয়া সমাজের ফল (লুকাচ) বা তার আবির্ভাব মহাকাব্য থেকে, তা সর্বভাষার অভিজ্ঞতার সাক্ষ্যে বলবার উপায় নাই। তা থাকতেও পারে নাও পারে। অ্যাডর্নো ও বাখতিন উপন্যাসের ঐতিহ্য অনুসরণ করেন প্রাচীন গ্রিসের নন সেকুলার টাইম ও স্পেসে। এ কথা দেবেশ রায়ও জোরের সঙ্গে তুলেছেন। তাহলে, উপন্যাস এখানে জ্ঞানতাত্ত্বিক পদ ও প্রকরণ হয়ে ওঠার দাবি করে, যার ঐতিহ্য আধুনিক যুগেরও আগে থেকে বহমান। এশেভারিয়ার প্রস্তাব,
The novel having no fixed form of its own, often assumes that of a given kind of document endowed with truth bearing power by society at specific moments in time.
আমার জোর এখানে উপন্যাস বা ন্যারাটিভের এই truth bearing power-এর ওপর। এটাই তাকে সাহিত্যের বলয়ে অ-সাহিত্যের গুণসম্পন্ন করে তোলে।
দুই.
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে পজেটিভিজমের ধার ক্ষয়ে এলে নতুন নৃতত্ত্ব ও দার্শনিক বিকাশ ঘটে। ইউরোপের দেখানো পথের বাইরেও স্বতন্ত্র গন্তব্য সম্ভব এ প্রতীতি জন্মে। অঞ্চল ও তার সমাজের ‘অযৌক্তিক’ উপাদানের দিকে নজর পড়ে। উপন্যাসের ইউরোপীয় আদিপিতারা: বালজাক, গান্ডোস, ডিকেন্স, জোলারা যে অর্থে তাঁদের সময়ের সমাজতাত্ত্বিক ও তত্ত্ববিদ, সেই অর্থের শাসন পরিহার শুরু হয়। আজ যাকে ম্যাজিক রিয়েলিজম বলা হচ্ছে, তা আসলে সেই রিয়েলিজম ও ন্যাচারালিজমের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা। উপন্যাসে বিউপনিবেশীকৃত এক ‘আমি’র আবির্ভাব সূচিত করে এই ঘটনা।
এই ‘আমি’ স্প্যানিশ উপনিবেশায়নের আগে ছিল কি না, সে তর্ক রেখে দিয়েও বলা যায়, জাতীয় চৈতন্য সন্ধান ও নির্মাণের জন্য লাতিন লেখকদের ভেবে নিতে হয়েছিল সেই আমি আছে এবং তা সম্ভব। এবং তা টের পাওয়া যায় উপনিবেশায়িত আমি যে প্রজা তার অস্তিত্বের দ্বান্দ্বিকতার মধ্যে। একদিকে সে তার অধীনস্ততা সম্পর্কে সচেতন আবার সে কর্তৃত্ববাদী ক্ষমতারই অংশ। হেগেল যেমন তাঁর Master-Slave Dialectics–এ বলেন, ”Self consciousness has before it another consciousness; it has come outside itself.”
এই অন্য-চৈতন্য যা আমার আগেই ছিল, এবং তার সাপেক্ষেই আমি আমি হয়ে উঠি, তা প্রভুর চৈতন্য। প্রভু এখানে অধীনের চেতনাকে স্থগিত করেই নিজেকে কায়েম করে। চেতনার বিউপনিবেশনের কাজ হলো প্রক্রিয়াটাকে ঘুরিয়ে দেওয়া, আÍকে আবার বিভাজিত করা। কীভাবে?
Firstly through suspension it gets back itself…for it was aware of being in the other, it cancels its own being in the other…
লাতিন উপন্যাস প্রমাণ করে ইউরোপীয় চোখে বর্ণিত সেখানকার মানুষ ও প্রকৃতি, ভাষা ও প্রাণপুঞ্জ বস্তনিচয় নয় কেবল, তা সজাগ ও বিকাশশীল সত্ত্বা। সেই সত্ত্বার সন্ধানই হলো লাতিন উপন্যাসের ভিন্ন গন্তব্য। অনেকটা সভ্যতা আবিষ্কারের প্রত্নতাত্ত্বিক অভিযানের মতো রোমাঞ্চকর উদ্ভাসন। এই প্রক্রিয়ায় আবারো দেখা পাই, লস এন্ড গেইন অব মেমরি’র। অতীতকে পুনর্বাখ্যা করা ও পুনসৃজন করা। কেননা, অতীতের আখ্যানপুঞ্জ থেকেই ছন্নছাড়া আপরিচয় জোড়া লাগাতে হয়। সংস্কৃতির ভেতর এই পরিচয়কে খুঁজে নিতে তাই দেখি অনেকগুলো পরস্পরযুক্ত আরম্ভ। বাস্তবতার প্রত্যক্ষতাকে মোকাবেলা করে তার দাসত্ব থেকে বেরিয়ে আসার গতিসূত্র। বস্তুগততা, সমাজতত্ত্ব ইত্যাদির ভার উপন্যাসের কল্পনাকে সীমিতই করেছে বলা যায়।
(এ আলোচনাটি তোলা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কবি মোহাম্মদ রফিক-এর শিক্ষকতার অন্ত উপলক্ষে আয়োজিত আন্তর্জাতিক (!) সেমিনারে। এটি আসলে একটি খসড়া নোটের প্রথম অংশ। পরের অংশে রয়েছে বাংলা উপন্যাসের ধারার ওপর কিছু মন্তব্য।)
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৪ comments
রায়হান রশিদ - ২৯ জুলাই ২০০৯ (৯:১২ অপরাহ্ণ)
ধন্যবাদ ফারুক ওয়াসিফ। অনেক দিন ধরেই মনে মনে লাতিন আমেরিকার সাহিত্য নিয়ে এমন একটা লেখা খুঁজছিলাম। অন্য কিছু না, এর পর্যায়ক্রমিক ধারা এবং প্রভাবগুলোর বিষয়ে জানার আগ্রহে। এই সিরিজটি দেখে বেশ ভরসা পাচ্ছি। বাকী পর্বগুলোর অপেক্ষায় থাকলাম, বলাই বাহুল্য। আপনি লিখেছেন:
’ইতিহাসের খাতের বাইরে’ – বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করবেন? সত্যি বলতে কি শব্দগুলো দেখে একটু চমকে উঠেছিলাম প্রথমে। গত বছর ফরাসী প্রেসিডেন্ট সারকোজীর একটা বক্তৃতা হাতে এসে পড়েছিল, সেনেগালের ডাকারের এক সভায় দিয়েছিলেন। সেখানে অনেক কথার মাঝে তিনি বলেছিলেন:
কি জানি হয়তো সারকোজির মুখ থেকে নিঃসৃত হয়েছিল বলেই কিনা, কিংবা ফ্রান্সের প্রায়-ফ্যাসিস্ট অভিবাসন নীতির কিছুটা জানা ছিল বলেই কিনা – কথাগুলোকে সাদা মনে নিতে পারিনি। সেই সাথে এই কূট প্রশ্নটাও মনের কোণে তো এসেছিলই – সারকোজির এই দৃষ্টিভঙ্গী তার আফ্রিকা থেকে আগত অভিবাসীদের প্রতি নীতি নির্ধারণে ঠিক কতটুকু কি ভূমিকা রেখে থাকতে পারে! যাকগে, আপনার মতামতটাই বরং শুনি। আপনি হয়তো অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে লিখেছেন।
এই সুযোগে আইরিশ কবি ইভান বোল্যান্ড এর একটি কবিতা বরং পড়ি:
ধন্যবাদ।
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৮:৫২ অপরাহ্ণ)
ফারুক ওয়াসিফ:
সম্ভাবনাময় এই আলোচনাটা আগে চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শুরু হয়েই কেমন হঠাত করে থমকে গেল! পরের পর্বের জন্য আশা করি বেশী দিন অপেক্ষায় রাখবেন না।
শামীম ইফতেখার - ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৪:০১ পূর্বাহ্ণ)
@ ফারুক ওয়াসিফ
প্রথম পাতার কল্যাণে লেখাটা পড়া হল। সে জন্য ধন্যবাদ। বইটি পড়া নেই। পড়ার আগ্রহ হচ্ছে। মনে করি না কার্পেন্তিয়র তার উপন্যাসের পটভূমিকে ইতিহাস বহির্ভূত জনপদ হিসেবে চিত্রিত হতে দেখাটা পছন্দ করতেন।
এই সাইটে কারো আলোচনাতেই আপনাকে তেমনভাবে অংশগ্রহণ করতে দেখিনা। কেন?
@ রায়হান রশিদ
সারকোজির বক্তৃতার লাইনে লাইনে বর্নবাদ, ঔপনিবেশিক সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স আর শ্বেতাঙ্গ জাত্যাভিমান। এর বেশী কিছুই বলার নাই। এমন উগ্র ডানপন্থীদেরই তাহলে ইউরোপীয়রা ক্ষমতায় পাঠাচ্ছে! ভাল।
দুখু সুমন - ২৫ এপ্রিল ২০১৪ (৪:০৪ পূর্বাহ্ণ)
জনাব ফারুক ওয়াসিফ,
আপনার একটি মতের সঙ্গে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করছি বলে দুঃখিত! আপনি যে বোধাক্রান্ত হয়ে লাতিন সাহিত্যের শিল্পগুণকে খারিজ করে দিয়েছেন, সেই বোধের পুনঃনির্মাণ-ই লাতিন সাহিত্যের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। আপনার মতে,
‘আমার জোর এখানে উপন্যাস বা ন্যারাটিভের এই truth bearing power-এর ওপর। এটাই তাকে সাহিত্যের বলয়ে অ-সাহিত্যের গুণসম্পন্ন করে তোলে।’-
এই সাহিত্য, অ-সাহিত্য কেন্দ্রিক ইউরোপীয় ভাবনাকে খারিজ করে দিয়েই উত্তর উপনিবেশিক সাহিত্য ভাবনার উন্মেষ-বিকাশ। সাহিত্য সত্যের বাইরের কোন শক্তি না। সাহিত্যের সত্য বড় বিচিত্র, সত্যের অনেক রূপ- সত্য মানে পত্রিকার পাতা না, কিম্বা ইতিহাসের খাতা না- বাস্তব না হয়েও তা সত্য হয়ে উঠতে পারে কালের পারম্পর্যে। নির্দিষ্ট টাইম-স্পেসকে ধারণ করেই সাহিত্যের মধ্যে সেই পাউয়ার ক্রিয়েট হয় যা নির্দিষ্ট টাইম-স্পেসকে ভেঙ্গে দিয়ে সেকুলার টাইম-স্পেসে পৌঁছে যায়। রাধা, সীতা কিম্বা দ্রৌপদির কাহিনি আক্ষরিক অর্থে কতোটা সত্যি সে প্রশ্ন অবান্তর, কারণ আজও বিশ্বময় তাদের বিচরণ মানব আত্মাকে ভীষণ বিচলিত করে। সেদিক থেকে truth bearing power হীন কোন সাহিত্য কল্পনা কেবল অ্যাবসার্ড ভাবনা মাত্র।
আপনার লেখায় নতুনত্ব কিছু নেই, খুব সাধারণ ভাবনার সঙ্গে কেবল আপনার মন্তব্যজুড়ে দিয়ে আপনি লিখাটি শেষ করেছেন। পরে হয়তো আমরা আরো বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা পাবো। লাতিনের এই উত্তর উপনিবেশিক সাহিত্যতত্ত্ব আজ তুঙ্গে। আমিত্ব ভাবনার এই থিওরি জন্মানোর অনেক আগে রবীন্দ্রনাথ কিছুটা টের পেয়েছিলেন, কিন্তু পুরোটা ঠিকঠাক করে যেতে পারেন নি। বাঙলা কবিতাকে উপনিবেশের গ্রাস থেকে বের করে এনেছিলেন, এখন আমাদের দায়িত্ব উপন্যাসকে উপনিবেশের থাবা থেকে মুক্ত করা। আপনি খেয়াল করুণ, ‘আলেহো কার্পেন্তিয়েরের লোস পাসোস পারদিদোস_ দ্য লস্ট স্টেপস_(১৯৫৩) উপন্যাসের নায়ক সান্তা মনিকা ডে লা ভেনাদোস এ পৌঁছে। আদেলান্তাদো সেখানে জঙ্গল কেটে কয়েকটি কুড়েঘরের একটি শহর পত্তন করেছে।’- এই গল্প আমাদের মঙ্গলকাব্যের গল্প, যেখানে গ্রন্থিত আছে, “আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে” কিম্বা “সবার উপরে মানুষ সত্য”- সেই সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম-ই হোক, বাঙালির শিল্পের সংগ্রাম!