গত ১২ ফ্রেব্রুয়ারি ২০০৮ আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের জন্মবার্ষিকীতে জনসংস্কৃতি মঞ্চ একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে। সেই সভায় আমি একটি আলোচনা করি। সেটার শ্রুতিলিখনটি প্রাসঙ্গিক মনে হওয়ায় তুলে দিলাম।
* * *
প্রথম কথা হচ্ছে যে, উপন্যাস ব্যাপারটি আমাদের দেশে কোথা থেকে এলো। এবং যেটা মুহম্মদ আজম ব্যাখ্যা করেছেন যে অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে; আধুনিকতা গণতন্ত্র উন্নয়ন ইত্যাদির মতো এই জিনিসটিও আমাদের দেশে আমদানি করা হয়েছে। সেই আমদানির আগের ইতিহাসের একটা বড় দাগ হচ্ছে ১৮০০ সাল — যখন কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর পরই যা হয়, তা বোধহয় পৃথিবীতে দ্বিতীয়বার আর সম্ভব নয়। একটি কলেজ ও তার কয়েকজন মাস্টার মিলে একটি প্রাচীন ভাষার ওপর দর্জিগিরি ফলালেন। ভাষা সংস্কার করলেন। এ কাজে বাংলা তেমন কোনো ব্যকরণ বই পাননি। তাঁরা পেয়েছেন সংস্কৃত পুস্তক ও সংস্কৃত ব্যাকরণশাস্ত্র। আর মাথায় করে বয়ে এনেছিলেন ইউরোপীয় বিদ্যা। এই দুইয়ের মিলনে যে ঘটনাটি ঘটলো, সেটাকেই আমাদের সাহিত্যের ইতিহাসে আধুনিক যুগের সূত্রপাত বলে ধার্য করা হলো। যদিও বাংলা সাহিত্যের শুরু আরো অনেক আগে বলে সাহিত্যের ইতিহাসকাররা স্বীকার করেন। তাঁরা সাহিত্য পাচ্ছেন কিন্তু গদ্য পাচ্ছেন না। তাই চিন্তা ও সামাজিক আদানপ্রদানের ভাষা হিসেবে গদ্যকে তাঁরা সাজালেন ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। কিন্তু রহস্যটা এই যে ১৮৭০ থেকে ১৮৭৭ সাল নাগাদ এইরকম নবীন একটি গদ্যে রবীন্দ্রনাথের জন্ম হলো কীভাবে! কিংবা মাত্র ৫০ বছরের মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আবির্ভূত হলেন। তাহলে নতুন গদ্যের জন্মের মাত্র ৫০-৭০ বছরের মাথায় কিভাবে এরকম দুজন পরিণত লেখকের জন্ম সম্ভব হচ্ছে! এর একটা ব্যাখ্যা হচ্ছে, ভাষাও আবদুল কাদের জ্বিলানী হতে পারে। এই অলৌকিকে বিশ্বাস না করলে আমাদের মানতে হয় যে, এই ভাষায় সাহিত্যের দীর্ঘ চর্চা ছিল। এবং ভাষার দর্জিগিরি শুরুর আগে থেকেই তা বহমান ছিল। দেবেশ রায় তাঁর সামায়িকপত্রে বাংলা গদ্য বিষয়ক আলোচনায় প্রাচীন বাংলা গদ্যের আড়াই হাজার বিধি পাওয়ার প্রমাণ পেশ করছেন — আঠারশ সালের আগের। এবং সেই গদ্য সব সময় যে কাহিনী ছিল তাও নয়। জমিদার চিঠি পাঠাচ্ছে নায়েবের কাছে, নায়েব তার জবাব দিচ্ছে, বিবিধ সামাজিক আদান প্রদান, কন্যার বিবাহ নিয়ে আলোচনা ইত্যাদি। আরও পেছনের দিকে গেলে সিরাজউদদৌলারও একশ বছর আগের দলিল পাওয়া যাচ্ছে। সেখান থেকে উদ্ধৃত করি : জনৈক নরহর এবং তার স্ত্রী দেবানাম্নী দাসীর কথা। নরহর বলছে মহাজনকে: আমি অমুক, আমার স্ত্রী দেবানাম্নী দাসী তোমার সহিত অন্নপহতি ও কর্জ্জপহতি নগদ নয় রূপাইয়া পাইয়া আত্মবিক্রয় হইলাম। এটাও তো গদ্য! অন্যদিকে মঙ্গলকাব্য থেকে শুরু করে পালা-আখ্যানেও ন্যারেটিভ বিকশিত হচ্ছিল। এ দুইয়ে মিলেই জন্ম সম্ভব ছিল আধুনিক বাংলা আখ্যান সাহিত্যের এবং গদ্যেরও।
এখন এ প্রাচীন গদ্যের জায়গায় তাঁরা আমাদের শেখালেন নতুন গদ্য। তাহলে মাঝখানের যে সময়টাকে হারিয়ে দেওয়া হলো, সেটাকে বলতে চাই ভাষার বেড়ে ওঠার সময়, কৈশোরের সময়। আর কৈশোর হলো সেই সময় যখন একদিকে ব্যক্তিত্ব বিকশিত হয় এবং স্বভাব-চরিত্র দাঁড়িয়ে যায়। সেই সময়টা আমাদের থেকে কেড়ে নেওয়া হলো, আমাদের নিজেদের মতো করে বেড়ে উঠতে দেওয়া হলো না। মোদ্দা কথা এই যে, উপনিবেশবাদ হলো অধীনস্থ সংস্কৃতির নিজস্ব বিকাশ রহিত করার রাজনীতি। এখন আমরা আমাদের আমিত্বকে নিজের ভিতরে না খুঁজে, নিজের ইতিহাসে না খুঁজে, আমার প্রকৃতি ও আমার অভিজ্ঞতার যে জগত তার মধ্যে না খুঁজে অন্য কারো বয়ানে খুঁজছি। আর এটা শেখানোর গুরু-ভার নিল ইউরোপীয় আধুনিকতা ও ইউরোপীয় পুঁজিবাদ ইত্যাদি। আমরা এখন আত্মানুসন্ধানে ভয় পাই। আমরা আর নিজেদের কথা বলি না। আমরা বলি অন্যের কথা। কারণ অন্যের কথা বললে আমি পাস করবো, আমার অবস্থানটা নিরাপদ থাকবে।
এরকম একটা অবস্থায় সাহিত্যের একটা বড় কাজ হচ্ছে, হয় তথাকথিত সেই আধুনিকতাকে কুর্ণিশ করে সেটাকে আরও বিকশিত করে যাওয়া। নিজেদের লেজুড় অবস্থাটাকে আরও পোক্ত করে ফেলা; যাতে লেজ হিসেবে আমাকে কখনো খসিয়ে না ফেলা যায়। ঠিক যেমন টিকটিকি বিপদে পড়লে শত্রুর মুখে লেজ ছেড়ে পালায়! যেভাবে হেগেল বলেছেন যে, ইতিহাস হচ্ছে ইউরোপের; যাদের রাষ্ট্র আছে, যাদের ওই পরিমাণ বিকাশ ঘটেছে। আর বাকিরা হচ্ছে সেই ইতিহাসের লেজুড় বা উপাদান। এভাবে যারা ভাবতেন তাদের একজন হলেন নীরদ সি চৌধুরী। ব্রিটিশরা চলে গেলে তাঁরা কান্না জুড়ে দিলেন, হায় আমাদের সভ্যতার সূর্যও বোধহয় চলে গেল! আরও অনেকে আছেন। এমন কি বঙ্কিমচন্দ্রের নামও বলা যায়।
তাঁরা জাতকুলমান ছেড়ে ইউরোপের একটা সংস্কৃতিকে উপগ্রহ হিসেবে বঙ্গদেশের কর্দমাক্ত পরিবেশে আলো জ্বালানোর প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন। যার নাম বঙ্গীয় রেনেসাঁ; ইউরোপীয় রেনেসাঁ ও এনলাইটেনমেন্টের অনুকরণে। এটা যদি আধুনিকতা হয়, তাহলে সেই আধুনিতার ফল আমরা দেখছি। আমাদের আজকের এই শিক্ষা, সংস্কৃতি, মানবিকতা, গণতন্ত্র ইত্যাদি নানান সুন্দর সুন্দর জিনিসগুলো আমরা এরই মধ্যে পাবো। আর যে বাতিল মালগুলো; যাকে তথাকথিত আধুনিকতার খোপে পোরা গেল না, যেগুলো ঐ আধুনিকতার অগ্রযাত্রায় শামিল হলো না, সেগুলো পড়ে থাকলো অন্ধকারে। এসবের সঙ্গে শুধু জাতীয় অভিজ্ঞতাই পড়ে থাকলো না, এই জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ইতিহাসবোধ-সমাজবোধ তথা তার আবেগের যে বিশেষ ধরণ, তার যে আত্মপ্রকাশের বেদনা, তাও পরিত্যাজ্য হলো। ত্যাজ্য জিনিসেরও স্থান সমাজে আছে, তাই তা হারিয়ে গেল না। সে বেদনাটা কিন্তু টিকে থাকলো ত্যাজ্যদের সমাজে অর্থাৎ নিম্নবর্গের জীবনে। এবং উৎসে ফেরার জন্য পরবর্তীকালে সাহিত্যিকরা তাকেই সন্ধান করতে থাকলেন। যে বিকাশ রেখাটা মুছে ফেলা হয়েছিল সেটাকে অনুসন্ধান করার অর্থ নিজেদের মুক্তি ঘটানো অর্থাত নিজের মধ্যে যে উপনিবেশায়ন ঘটেছিল, আমার আমিত্বকে যে আমি অপরের নামে চিনতে শিখেছিলাম; সেই জায়গা থেকে সরে এসে নিজের পরিচয় ঘোষণা করা, নিজের নাম ঘোষণা করা। তাহলে সংস্কৃতির লড়াই এর কেন্দ্রীয় বিষয় হচ্ছে সেই জায়গা খুঁজে বের করা, যেখানে নিজেদের ভাব ও অভাব দুটো নিয়েই আমরা দাঁড়াতে পারি। তাহলে কাজ হচ্ছে নিজের সেলফ বা আত্ম-কে, নিজের স্পিরিট বা চৈতন্যকে অনুসন্ধান করা। সেগুলোকে স্ব-স্বভাবে ফিরিয়ে আনা। এর মানে এই না যে, অতীতকে তুলে এনে আবার বর্তমানের ইঞ্জিনের সঙ্গে লাগিয়ে দিলাম বগি হিসেবে। এটা হয় না। মূলত সেটা আছে বর্তমানেও। সে কারণেই এই অনুসন্ধানটা দরকার।
এর প্রয়োজন হচ্ছে কেন? কারণ এ ছাড়া আমাদের সাহিত্যের স্বরাজ আসবে না। এ কারণে সংস্কৃতির লড়াইয়ে আমরা বারবার পরাজিত হচ্ছি বা ঠকে যাচ্ছি। রাজনৈতিকভাবে আমরা যে পরিমাণ জাতীয়তাবাদী ভাব ধরি, চিন্তার মধ্যে সংস্কৃতির মধ্যে, বুদ্ধিবৃত্তির মধ্যে আমরা সেই পরিমাণই পরাজিত ও পরজীবি হয়ে থাকি। আমাদের সম্পদ হলো আমাদের ভাষা, তা মধ্যবিত্ত ২০/৫০ লাখ নর-নরনারীর ভাষা না, ১৪ থেকে ১৫ কোটি লোকের মুখের ও মনের ভাষা এবং বিশ্বজুড়ে অন্তত ২৫ কোটি বাঙালির ভাষা। এর বয়স প্রায় হাজার বছর। কাজেই এই ভাষার ভাণ্ডারে যে অভিজ্ঞতা রয়েছে, সে শব্দাবলী রয়েছে, ইতিহাসের যে স্মারক রয়েছে, নানান রকমের আবেগের বহুমাত্রিক প্রকাশের যে ছাপ রয়েছে তা যদি একত্র করতে না পারি, ব্যবহার করতে না পারি, তাহলে সে ভাষা বা সাহিত্য নির্জীব এবং নিরুত্তাপ শব্দের মিছিল ছাড়া আর কিছুই নয়।
প্রথমদিকে আমরা চেয়েছিলাম আধুনিকতার নামে ইউনিভার্সেল বা বিশ্বজনীন হতে। সে সময় বিশ্বজনীন হওয়ার অর্থ দাঁড়িয়েছিল ঔপনিবেশিক প্রভু-সংষ্কৃতি রপ্ত করা। কেউ কেউ অবশ্য ইউনিক হওয়ার কথাও ভেবেছিলেন। এবং এই দোলাচালটা বঙ্কিমচন্দ্রের মধ্যেও পাওয়া যায়। দেবেশ রায়ের বিশ্লেষণ অনুসারে, উনি প্রথমদিকে লিখেছেন ব্রিটিশ সাহিত্যিক স্যার ওয়াল্টার স্কট এর অনুকরণে; অরণ্য-পাহাড়-পর্বতের মধ্যে রাজপুরুষদের অভিযান ও রোমান্সের ঘনঘটাজালে আবিষ্ট উপন্যাস সেসব। সেখান থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে দুর্গেশনন্দিনী, কপালকুণ্ডলা এসব লিখলেন। কিন্তু তিনিও পারলেন না। কারণ বঙ্কিমচন্দ্র চাচ্ছিলেন সমাজে একটা নতুন পরিবর্তন, জাগরণ। কিন্তু সে জাগরণের রসদ তো বর্তমান থেকে ৩০০ বছর পিছিয়ে রাজকাহিনীর মধ্যে পাওয়া সম্ভব ছিল না। উপন্যাস সর্বদা বর্তমানের হাত ধরে হাঁটার চেষ্টা করে। কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্র চট্টপাধ্যায় আমাদের প্রথম আধুনিক উপন্যাসের নায়ক-নায়িকাদের হাত ধরে হাঁটিয়ে নিলেন ষোল কি সতের শতকের আলো-আঁধারির পরিবেশে। অতএব, বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাসটি দাঁড়াল পুরাকালের ওপর। অথচ তার আগে আলালের ঘরের দুলাল লেখা হয়েছিল সেই সময়ের কলকাতার জনজীবনের পরিস্থিতি নিয়ে এবং তার মধ্যে প্রবেশ করে। বঙ্কিম চেয়েছিলেন কমলাকান্তের দপ্তরে তিনি সমকালে ফিরবেন। কিন্তু এটা তো প্রবন্ধগুচ্ছ। কমলাকান্ত চরিত্রটি যেখানে-সেখানে যেতে পারে, সবকিছু নিয়ে কথা বলতে পারে। তার যে সর্বগামিতা ও ধারণক্ষমতা সেটা উপন্যাসের আদলে না হলে সম্ভব হতো না। কিন্তু সাহস পেলেন না একে উপন্যাস বলবার। অথচ তাতেই প্রমাণ হচ্ছে যে ভিন্ন একটা আকুতি গোড়া থেকেই ছিল। কিন্তু তা ফলতে অনেক দেরি হলো। গোড়ার দিকের উপন্যাস পারিবারিক বা সামাজিক আখ্যানে ভরপুর রইলো। রাষ্ট্র-রাজনীতি-ইতিহাসের গতি তাতে ঠাঁই পেল না।
উপন্যাসের সঙ্গে ইতিহাসের একটা সমান্তরালতা রয়েছে। ইতিহাসকে যে অর্থে অবজেকটিভ বলা হয় উপন্যাস সেই অর্থেই সাবজেকটিভ। তাকে মানবীয় অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে, জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার প্রবাহকে ব্যবহার করে বলবার কথাটি ফলিয়ে দেখাতে হয়। তা দেখাতে গিয়ে লেখককে হয় প্রচলিত উচ্চবর্গের নির্মিত ইতিহাস ও সমাজদৃষ্টির প্রতিধ্বনি করতে হয়, কিংবা তার বাইরে অন্য এক ইতিহাস কাঠামোর দিশা খুঁজতে হয়। সে ইতিহাস কাঠামোয় গরিব-গুর্বো মানুষ, বৃহত্তর কৃষকসমাজ, শহুরে মজুর-মধ্যবিত্ত সহ জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন অংশের টানাপড়েনের মধ্যে দিয়ে যে গতি-দুর্গতির ব্যকরণ দাঁড়িয়ে যায়, তাকেই বলা যায় স্বতন্ত্র মানস ও ইতিহাসকাঠামো। একে আমলে না নিলে ঐ কাজ সম্ভবে কুলায় না। ব্যক্তির মনের একান্ত বিকারকেও বৃহত্তর জীবনের সঙ্গে একটা সাপেক্ষ সম্পর্ক ছাড়া দেখলে পূর্ণ আয়তনে দেখা কঠিন হয়। এখানেই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের আবির্ভাবের শর্ত তৈরি হয়ে ছিল।
তিনি উচ্চবর্গের সাহিত্য রুচির বাইরে যাওয়ার জন্য উচ্চবর্গের জাতীয়তাবাদী আধুনিকতাবাদী প্রকল্পে সংশয় করে এখানকার ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার নিজস্ব গতিসূত্র খুঁজতে গেলেন দুটি মাত্রায়। ইতিহাস ও ভুগোল হলো সেই দুই মাত্রা। এর জীবনযাপন করা নিম্নবর্গীয় মানুষ হলো তাঁর বিষয়। তবে কি, কোনো লেখকই আসলে আকাশ থেকে পড়েন না! তিনি আসলে নিজের ভাষার আগেকার ধারা বা ট্র্যাডিশনের কোনো একটির ওপর সওয়ার হয়ে আসেন। রবীন্দ্রনাথ যেমন বিহারীলালকে খুঁজে বের করেছিলেন, ইলিয়াসকেও তেমনি তাঁর পূর্বসুরীদের অভিজ্ঞতা থেকে নিতে হয় শিখতে হয়। নিজেকে একটা ট্র্যাডিশনের মধ্যে ফেলে তবে সেই ট্র্যাডিশনকে উত্তরিত করতে হয় নতুন স্তরে। কিন্তু আমরা দেখছি, অতীতকে নবায়ন করা হচ্ছে, অতীতের বৈপ্লবিক পরিবর্তন নয়। তারাশঙ্করের হাঁসুলি বাঁকের ইতিকথা-র বনওয়ারি বা করালীর সঙ্গে ইলিয়াসের খোয়াবনামা-র তমিজ কি তমিজের বাপের চেহারা-চরিত্র মিলে যায় বলে মনে হয়। অদ্বৈত মল্লবর্মণের তিতাস-এ সে সুবল বা কিশোর, পদ্মানদীর মাঝি-তে কুবের কিংবা দেবেশের তিস্তাপারের বৃত্তান্তে সে-ই আবার বাঘারু হয়ে আসে। কিন্তু ব্যাখ্যান ও তাৎপর্য বদলে যায়। এভাবে উপন্যাসে উপন্যাসে চালাচালি হয়ে জাতীয় আখ্যান রচনার সংস্কারকাজ চলতে থাকে। এর মধ্যে একটা উল্লম্ফন ঘটান আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তাঁর খোয়াবনামা-য়। হাঁসুলি বাঁকের ইতিকথা থেকে পদ্মানদীর মাঝি, তিতাস একটি নদীর নাম, গড়শ্রীখণ্ড পর্যন্ত যে নবায়নের তোড় দেখি তিস্তাপারের বৃত্তান্তে চলে তার রূপান্তর। এভাবে আগের ধারা থেকে একটা ছেদ ঘটছে। ছেদ না হলে নতুন যাত্রা শুরু হবে কী করে?
পরের পর্বে সমাপ্য
চৌখুপি থেকে বেরিয়ে দিকের মানুষ খুঁজি দশদিকে।
