আমরা গত কয়দিন ধরে ব্যাপক জল্পনা কল্পনা করছি। আমরা বের করার চেষ্টা করছি টিপে টিপে আসলেই ধর্মান্ধতার পঁচন কতটুকু গভীর হয়েছে। আমরা কেউ কেউ ফুঁসছি, রাগে। কেউবা আবার মুর্তি না ভাষ্কর্য সে বিবাদে মগ্ন। অনেকেই এই ফাঁকে মডারেট, সুবিধাবাদী, মাদ্রাসা ছাত্র ইত্যকার শব্দের পায়াভারী করছেন। তা চলছে বেশ, চলুক! তারপরে কি?
আমরা আবার ফিরে যাবো আমাদের মুখ লুকিয়ে চলা জীবনে? সকাল, বিকাল ন’টা পাঁচটা? আড্ডায় অবসরে চায়ের সুরুৎ, ফাঁকে ধর্মব্যাবসায়ীর গুষ্ঠি উদ্ধার? ভুলে যাবো খুব সহজেই আমাদের একটা কিছু যে ছিনতাই হয়ে গেলো এই অবসরে? আসলে আমরা দিন গুনছি, যেদিন হাতে শুন্য ঝুড়িটা নিয়ে রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে থাকবো আমরা। কবেই নিয়ে গেছে আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতা, হুরমতীর কপালে এখন জ্বলজ্বল করে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’। আমরা জাহানারা ইমাম হারিয়েছি, হুমায়ুন আজাদ, টিএসসি, বাউলের মুর্তি, আলপিন।
আমরা বিশ্বিবদ্যালয়ের মেধাবী তরুনদের হারাচ্ছি হিজবুত তাহেরীর কাছে, শিক্ষকদের হারিয়েছি নানান রঙের রাজনীতিতে, বিএনপি খেয়ে নিয়েছে জামাত, আমলাতন্ত্রে এখন চড়ে বেড়ায় শিবিরের ইমপ্ল্যান্টগুলি। আমাদের উপদেষ্টা একজন নিজে বই লেখে জামাতের ম্যানিফেস্টোর কপিপেস্ট করে, আমাদের একজন জলিল ঐক্যজোটের সাথে ফতোয়ার রফা করে। দেশে এখন চৌষট্টি জেলায় একসাথে বোমা ফাটে। লিস্টির শেষ কোথায়, ইয়ত্তা নেই…
তারপরে কি?
কি আবার! আমাদের দুই ‘আইডেন্টিটি’। বাঙালীত্ব আর মুসলমানিত্ব। ধীরে ধীরে ঘুণের মতো খেয়ে ফেলছে বাঙালীত্বকে অন্যটা। আমরা কষ্ট পাই, কাটা মুরগির মতো ছটফট করি, মানববন্ধনে মিশে গিয়ে হৃদয়ের পাপবোধ ধোয়া দেই। অন্যদিকে আমাদেরই অন্য স্বত্ত্বা নীরবে সম্মতি দেয় হুজুরাইনের গর্জনে।
এ এক অদ্ভুত দ্বৈরথ। ড. জেকিল/ মি. হাইড? বেশতো!
কিন্তু তারপরে কি?
আর কি!! হয় বাঙালীত্ব মিশে যাবে ইসলামের রক্তস্রোতে, অথবা তামার দেয়ালে এসে ঠেকে যাবে খিলজির তলোয়ার।
সেই তামার দেয়াল তুলবে কে? সেই তামা কি আদৌ খনিতে মজুদ আছে?