পিগমী
পিগমীরা জগতের অন্যতম সংস্কৃতিবান মানুষ। তাঁরা এক চমৎকার জীবন যাপন করেন, যে জীবন পবিত্রতার। তাঁরা কর্মব্যস্ত ও উৎপাদনশীল মানুষই শুধু নন, সুখী ও স্বাস্থ্যবান মানুষও বটে। তাঁরা আমাদের মত আলসার, ক্যান্সার ও হৃদরোগে জর্জরিত নন। তাঁরা মানসিক অসুস্থতা ও মনোরোগের অভিযোগও করেন না। তাঁরা অস্তিত্ব রক্ষার কলা ও কৌশল আয়ত্তকরণে পরিপূর্ণভাবে নিয়োজিত। আধুনিক অস্ত্র ও যন্ত্রপাতি, জ্ঞানবিজ্ঞান ও কারিগরিবিদ্যা ছাড়াই তাঁরা দিব্যি প্রকৃতির সঙ্গে, নিজের ও ইশ্বরের সঙ্গে পরিপূর্ণ একাত্মতার জীবন যাপন করেন।
তাঁরা জানেন যে আধুনিক মানুষের আবিষ্কারসমূহ তাঁদের সমাজে প্রযুক্ত হলে তাঁরা নিজেদের জন্য যে নিখুঁত ভারসাম্য অর্জন করেছেন তা ব্যাহত হবে, তাই তাঁরা বাইরের সাহায্য নিতে অস্বীকার করেন, যা আমার বিবেচনায় দারুণ একটা ব্যাপার। কালো আফ্রিকীদের জন্যও তাঁদের কোন শ্রদ্ধা নেই কেননা তারা শাদা মানুষদের দাসত্ব মেনে নিয়েছে। পিগমীরা সম্পূর্ণ স্বনির্ভর জাতি যা নিয়ে নিঃসন্দেহে আমরা গর্ব করতে পারি।
আমাদের মত বামনাকার আমেরিকানদের যদি তাঁদের অবস্থায় বাস করতে হত তাহলে আমরা একদিনেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতাম। আমরা চীৎকার চ্যাঁচামেচি করে সাহায্যর জন্য কান্নাকাটি করতাম। তারপরও আমরা গর্ব করে বলি আমরা কত সভ্য, স্বাধীন, স্বনির্ভর ও অগ্রসর জাতি! আপনারা যদি আদিম মানুষদের জীবন নিয়ে অধ্যয়ন করেন তাহলে দেখবেন আমাদের কারিগরী অর্জন ও অগ্রসরতার কারণে কতটা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছি।
যাদেরকে সে বর্বর বলে তাদের কাছ থেকে অনেক শেখার রয়েছে তথাকথিত আধুনিক মানুষদের। আমরা পৃথিবীর চল্লিশ শতাংশেরও বেশি সম্পদ ধ্বংস করে ফেলেছি এবং এর কোন শেষও দেখা যাচ্ছে না। এইভাবে একদিন যখন সব সম্পদ নিঃশেষিত হয়ে যাবে তখন আমাদেরকে এই আদিম মানুষদের কাছে গিয়েই নিতে হবে প্রাণধারণের শিক্ষা।
ঘাসের শেষ ডগাটি পর্যন্ত খেয়ে শেষ করে ফেলার আগে আমাদের এই পিগমীদের জীবনকে অধ্যয়ন করা উচিৎ। আমাদের বেঁচে থাকার চাবিকাঠি এই মানুষগুলোর হাতেই, যাঁরা তিল থেকে তালের জন্ম দিতে জানেন এবং জানেন কী করে স্বল্পতম সম্পদ নিয়েও পরিপূর্ণ সুখী হতে পারা যায়।
জাপানীরা
জাপানী নারীদের কথা আমি বহুবার বলেছি। আমি ফিরে ফিরে তাদের প্রশংসা করেছি। কিন্তু আমাকে বলতেই হবে যে জাপানী পুরুষেরা হচ্ছে নিকৃষ্টতম।
জাপানী পুরুষদের ওপর আমার কোন বিশ্বাস নেই। তারা খুবই অশ্লীল ও চাষাড়ে হতে পারে, অথচ মুখে তাদের চিরকালীন হাসিটি লেগেই রয়েছে, এমনকি যখন তারা আপনার পায়ের আঙুলের ওপর দাঁড়িয়ে তখনও।
জাপানী প্রকাশকদের কাছে আমার ভাগ্য খোলে নি কোনদিনই। আমার যা প্রাপ্য তা দিতে অস্বীকার করেছে তাদের অধিকাংশজনই। তারা দাবি করে আমার বই ভালো চলে না সেখানে, যা বিশ্বাস করতে আমার কষ্ট হয়। তাদের কাছ থেকে টাকা তোলা জগতের কঠিনতম কাজ। আমি প্রাণপণে চেষ্টা করেছি, তবে শিকে ছিঁড়ে নি কখনো।
আমার অল্প ক’জন জাপানী বন্ধু রয়েছে এবং তাঁরা চমৎকার মানুষ, তবে তাঁরা মনে হয় দুর্লভ ব্যতিক্রম।
জাপানী নারীরা খুবই সূক্ষ ও সংবেদনশীল, কিন্তু জাপানী পুরুষেরা তাঁদের সঙ্গে জঘন্য ব্যবহার করে। জাপানী নারী তাঁদের সেই অসাধারণ মিষ্টি হাসিটি হেসে পুরুষদের সেবায় সদা তৎপর অথচ পুরুষগুলো তাঁকে সহজলভ্য ধরে নিয়ে রীতিমত অবজ্ঞা করে। জাপানী পুরুষেরা শুকরের সমতুল্য- মার্কিন পুরুষের চেয়েও জঘন্য।
আমার জাপানী নারীবন্ধুরা আমাকে বলে তারা আমেরিকান পুরুষদের কতখানি পছন্দ করে। ‘মার্কিন পুরুষেরা ভদ্র ও বিনয়ী’, তারা বলে। বিনয়ী! আমি কক্ষনো মনে করি না যে আমেরিকান পুরুষেরা বিনয়ী। আমার ধারণা জাপানী নারীদের সৌন্দর্য ও আকর্ষণে মার্কিন পুরুষেরা এমনই প্রণয়াবিষ্ট ও উৎফুল্ল হয়ে পড়ে যে তারা তাদের ভক্তি ও প্রশংসা প্রকাশ না করে পারে না। জাপানী নারী বিস্ময়, মুগ্ধতা ও অনুপ্রেরণার প্রতিমূর্তি। আমরা পুরুষেরা তাঁর পরিপূর্ণ সেবাদাস হওয়া ছাড়া আর কীইবা করতে পারি?
ফরাসিজাতি
ফরাসিরা হয়তো সবচেয়ে হাসিখুশি, সুখী ও সহজগম্য মানুষ নয়, কিন্তু জীবন সম্পর্কে তাঁদের ধারণা এত প্রাজ্ঞ ও পরিশীলিত যে তাঁদের তুলনায় আমরা আমেরিকানরা নিছক বনবাসী শিশু।
ফরাসি নারী খোলামেলা, সহিষ্ণু, বুদ্ধিদীপ্ত ও পুরোপুরি নারীসুলভ। তার একটা নিজত্ববোধ রয়েছে, সে নিজের প্রতি সৎ এবং নিজেকে সামনে-পিছনে ভালোভাবেই চেনে। পৃথিবীর সব নারীর চেয়ে তাকে আমার সবচেয়ে বেশি গুণধর বলে মনে হয়। আমি অনেক ফরাসি নারীকে চিনি যারা একইসঙ্গে সফল পেশাগত ও সুখী পারিবারিক জীবনের অধিকারী, এবং তারা এই দুই জীবনের মধ্যে চমৎকার সামঞ্জস্যও বজায় রাখতে পারে।
ফরাসি পুরুষেরা সবচেয়ে ভালো বন্ধু হতে পারে। তাকে চিনতে পারা হয়তো একটু কষ্টসাধ্য তবে একবার আপনাকে তার জীবনে প্রবেশ করতে দিলে সে সারাজীবনের জন্য আপনার বন্ধু হয়ে যাবে। এমনই একজন বন্ধু হলেন জর্জ বেলমঁ, আমার বইয়ের ফরাসি অনুবাদক। তিনি শুধু একজন সুদর্শন, দৃষ্টান্তমূলক মানুষই নন, তিনি আমার জন্য অনেকদূর যেতে প্রস্তুত, তাঁর কাছে আমি চিরজীবনের জন্য কৃতজ্ঞ এবং তাঁর অবিচল উদারতা ও বদান্যতার ঋণ আমি কোনদিনই শোধ করতে পারি নি।
সবকিছুর ঊর্ধ্বে ফরাসিদের রয়েছে সুগভীর জীবনবীক্ষা। তাঁদের রয়েছে দারুণ সহিষ্ণুতা ও গ্রহণক্ষমতা। তাঁরা সমস্যার মোকাবেলা করেন বুদ্ধি, ধৈর্য এবং দরদের সঙ্গে। পৃথিবীর যে কোন জাতির মানুষের চাইতে তাঁদের প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ অনেক বেশি।