সুপারিশকৃত লিন্ক: মার্চ ২০১০

মুক্তাঙ্গন-এ উপরোক্ত শিরোনামের নিয়মিত এই সিরিজটিতে থাকছে দেশী বিদেশী পত্রপত্রিকা, ব্লগ ও গবেষণাপত্র থেকে পাঠক সুপারিশকৃত ওয়েবলিংকের তালিকা। কী ধরণের বিষয়বস্তুর উপর লিংক সুপারিশ করা যাবে তার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম, মানদণ্ড বা সময়কাল নেই। পুরো ইন্টারনেট থেকে যা কিছু গুরত্বপূর্ণ, জরুরি, মজার বা আগ্রহোদ্দীপক মনে করবেন পাঠকরা, তা-ই তাঁরা মন্তব্য আকারে উল্লেখ করতে পারেন এখানে।
ধন্যবাদ।

আজকের লিন্ক

এখানে থাকছে দেশী বিদেশী পত্রপত্রিকা, ব্লগ ও গবেষণাপত্র থেকে পাঠক সুপারিশকৃত ওয়েবলিন্কের তালিকা। পুরো ইন্টারনেট থেকে যা কিছু গুরত্বপূর্ণ, জরুরি, মজার বা আগ্রহোদ্দীপক মনে করবেন পাঠকরা, তা-ই সুপারিশ করুন এখানে। ধন্যবাদ।

২৪ comments

  1. মাসুদ করিম - ১ মার্চ ২০১০ (৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ)

    তখন তার বয়স ছিল ১৫, আজ ৮০, গাব্রিয়েলে কপ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ধর্ষণের স্মৃতি নিয়ে বই লিখেছেন। সেবই নিয়ে ‘স্পিগেল’এর ফিচার, পড়ুন ,

  2. মাসুদ করিম - ২ মার্চ ২০১০ (৯:৩০ পূর্বাহ্ণ)

    জন্মেছিলেন ১৯২৬ সালে দিনাজপুরে, আর ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০-এ কলকাতায় আর. জি কর হাসপাতালে ৮৪ বছর বয়সে মারা গেলেন ‘বহুরূপী’তে ষাট বছরের নাট্যজীবন পার করা অভিনেতা, নির্দেশক, সংগঠক, নাট্যকার ও নাট্যবিদ, বাংলা নাটকে চিন্তাশীল প্রয়োগের জন্য বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব কুমার রায়। পড়ুন গণশক্তির রিপোর্ট। শেষবার আমার সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল বহুরূপীর কার্যালয়ে, চট্টগ্রামের সৌন্দর্য্যে তার বিমুগ্ধতার কথা জানিয়েছিলেন, ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন নাটক নিয়ে চট্টগ্রাম ঘুরে যাবার। সেবার তার নির্দেশিত দীপঙ্কর চন্দ রচিত নাটক ‘দীপদণ্ড’ দেখেছিলাম, কুমার রায়ের নাট্যভাবনায় চিন্তাশীলতার উচ্চতা বুঝতে হলে এনাটকটি দেখা বাঞ্চনীয়।

  3. মাসুদ করিম - ২ মার্চ ২০১০ (৯:৫১ পূর্বাহ্ণ)

    এক কন্নড় আঞ্চলিক পত্রিকায় তসলিমা নাসরিনের বুরখা বিষয়ক এক বিতর্কিত লেখার অনুবাদ প্রকাশকে ঘিরে ভারতের কর্নাটকে সহিংসতায় দুব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন।Violence over Taslima article in Karnataka, 2 killed

    • মাসুদ করিম - ২ মার্চ ২০১০ (৫:৫৭ অপরাহ্ণ)

      তসলিমা নাসরিন জানালেন তিনি কোনো কন্নড় পত্রিকার জন্য কখনো কিছু লেখেননি। যদিও খবরে স্পষ্ট বলা হয়েছে পত্রিকায় তার লেখার অনুবাদ ছাপা হয়েছে। এমন হতে পারে ওরা তার লেখার অনুবাদ ছাপানোর অনুমতি নেয়নি, অথবা তার নামে ওরা কোনো লেখা প্রকাশ করেছে যা তার নয়, অথবা এমনও হতে পারে তসলিমা মিথ্যা কথা বলছেন। কিন্তু যাই হোক লেখার প্রতিবাদে ১৫০০ লোকের মিছিল ২জন ব্যক্তির প্রাণনাশ। আমাদের এই উপমহাদেশটা কেন এরকম হয়ে উঠছে!

      Nasreen, staying in an undisclosed destination due to security reasons since her return to India last month, had her visa extended recently by six months till August this year.

      তসলিমা নাসরিনের ব্যাপারটাও কিছু বোঝা যাচ্ছে না : তিনি ভারতে গোপন স্থানে কেন বসবাস করছেন, ছয় মাস ছয় মাস ভিসা পাচ্ছেন, প্রকাশ্যে না থাকতে পারলে, নাগরিক না হতে পারলে, তার উচিত প্রকাশ্যে থাকতে পারেন এমন কোনো দেশে চলে যাওয়া। আর যেখানে তার সুইডেনের নাগরিকত্ব আছে, সেখানে তার শুধু শুধু ভারতবাসের কী অর্থ কে জানে।

      • মোহাম্মদ মুনিম - ২ মার্চ ২০১০ (৬:৫৮ অপরাহ্ণ)

        তিনি ভারতে আসলেই যদি গন্ডগোল বাঁধে তবে তাঁকে ভিসা দেবার প্রয়োজনটাই বা কি? তসলিমা নাসরিন ভারতে আসলেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হন, এই লোভ তিনি সামলাতে পারছেন না।

      • মাসুদ করিম - ৩ মার্চ ২০১০ (১০:০৬ পূর্বাহ্ণ)

        আউটলুক ব্লগে সুঁদীপ দুগাল জানাচ্ছেন,

        It turns out that the article was an unauthorised translation of a 2007 piece first published by Outlook way back in 2007, and also available on her own website, and of course elsewhere on the web.

        The translation is said to be quite close to the original, but the jury is still out whether it is an exact word by word translation, and many claim that some of the words in the translated version seem more provocative.

        তার মানে অনুমতি না নিয়েই তার লেখার অনুবাদ ছাপিয়েছে পত্রিকাটি। এখানে আউটলুকে ২০০৭-এ ছাপানো তসলিমার লেখাটি
        এই ব্লগে আরো বলা হয়েছে তসলিমা নাসরিন সম্প্রতি ইদে-মিলাদুন্নবির দিন ভারতের Permanent residency-র জন্য আবেদন করেছেন। ব্লগার বলছেন

        The timing of the article (soon after Taslima applied for permanent residency in India and on Milad-ud-Nabi, when Muslims the world over celebrate the Prophet’s birthday) and the place of protests (Karnataka chief minister’s home town) and the nature of the organised protests, particularly as they are said to be based on distorted reports and incitements about her remarks about the Prophet, and that on his birthday, has predictably led to questions being raised about foul play.

        While it needs to be clearly determined who was behind the incitement and rioting in Hassan and Shimoga, those protesting need to realise that such incidents only perpetuate and strengthen the stereotype of “intolerant” Muslims.

        এখানে পড়ুন দুগালের ব্লগ L’affaire Taslima
        একটা অনুমান লেখার যে অংশটির অনুবাদকে ঘিরে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হচ্ছে, সেটি সম্ভবত

        Why are women covered? Because they are sex objects. Because when men see them, they are roused. Why should women have to be penalised for men’s sexual problems? Even women have sexual urges. But men are not covered for that. In no religion formulated by men are women considered to have a separate existence, or as human beings having desires and opinions separate from men’s. The purdah rules humiliate not only women but men too. If women walk about without purdah, it’s as if men will look at them with lustful eyes, or pounce on them, or rape them. Do they lose all their senses when they see any woman without burqa?

        My question to Shabana and her supporters, who argue that the Quran says nothing about purdah is: If the Quran advises women to use purdah, should they do so? My answer is, No. Irrespective of which book says it, which person advises, whoever commands, women should not have purdah. No veil, no chador, no hijab, no burqa, no headscarf. Women should not use any of these things because all these are instruments of disrespect. These are symbols of women’s oppression. Through them, women are told that they are but the property of men, objects for their use. These coverings are used to keep women passive and submissive. Women are told to wear them so that they cannot exist with their self-respect, honour, confidence, separate identity, own opinion and ideals intact. So that they cannot stand on their own two feet and live with their head held high and their spine strong and erect.

        কন্নড় পত্রিকাটি New Indian Express গ্রুপের। তাদের ইংরেজি পত্রিকায় এখনো এ বিষয়ে কোনো Opinion-ধর্মী লেখা খুঁজে পাইনি। তবে মঙ্গলবার তাদের ‘কন্নড় প্রভা’ পত্রিকার আঞ্চলিক অফিস যে আক্রান্ত হয়েছে সেখবর পড়ুন এখানে

  4. মাসুদ করিম - ২ মার্চ ২০১০ (১০:১৪ পূর্বাহ্ণ)

    রাশিয়া আমেরিকার মধ্যে ১৯৯১-তে স্বাক্ষরিত Strategic Arms Reduction Treaty (START I) এর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে ০৫ ডিসেম্বর ২০০৯-এ। এবছর নতুন করে একটি নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি সম্পন্ন করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। এবছর এপ্রিলে আমেরিকায় অনুষ্ঠিত হবে Non-prolifiration treaty-এর শীর্ষ সম্মেলন, তার আগে প্রধান দুই আণবিক অস্ত্রধারীর এ চুক্তি তাৎপর্যপূর্ণ।

  5. বিনয়ভূষণ ধর - ২ মার্চ ২০১০ (১:৪৫ অপরাহ্ণ)

    আজ ২রা মার্চ পতাকা উত্তোলন দিবস। একাত্তরের এইদিনে আমাদের মহান স্বাধীনতার লাল-সবুঝ পতাকা প্রথম উত্তোলন করা হয়। পড়ুন এখানে…

  6. মাসুদ করিম - ৩ মার্চ ২০১০ (১০:১৬ পূর্বাহ্ণ)

    চাঁদের মাটিতে ৬০ কোটি টন বরফের সন্ধান। চাঁদে বসবাস কতদূর!

  7. বিনয়ভূষণ ধর - ৬ মার্চ ২০১০ (৪:৫২ অপরাহ্ণ)

    ওয়ান ইলিভেনের অজানা কথা
    মোখলেসুর রহমান চৌধুরী

    বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপুর্ণ একটি অধ্যায় ওয়ান ইলেভেন। তার আগে ও পরে বাংলাদেশ অতিক্রম করে করে টালমাটাল এক ক্রান্তিকাল। সেই ক্রান্তিকালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এবং তত্থ্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইয়াজ উদ্দিন আহমদের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক মোখলেসুর রহমান চৌধুরী। আর সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি নিজেও জড়িয়ে পড়েন ইতিহাসের ভিত নাড়ানো এক ঘটনার সঙ্গে। ওয়ান ইলিভেনের আগে ও পরের নানা ঘটনা এখনো জনমনে অপার রহস্য হয়েই রয়ে গেছে। মোখলেসুর রহমান চৌধুরী সেই সব ঘটনার স্বাক্ষী। ইতিহাসের সেই সব না জানা ঘটনা নিয়েই মোখলেসুর রহমান চৌধুরীর ধারাবাহিক কলাম।

    পড়ুন এখানে

    • রায়হান রশিদ - ৬ মার্চ ২০১০ (৬:১৬ অপরাহ্ণ)

      খুব মজা পেলাম তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের শুরুর দিককার ‘মোখলেসনামা’ খ্যাত ইয়েসউদ্দিনের প্রেস সচিব তথা দোর্দন্ড প্রতাপ “বিশিষ্ট সাংবাদিক” যেভাবে বিষয়গুলো দেখানোর চেষ্টা করলেন তা পড়ে। কয়েকটি অসামান্য অংশ উদ্ধৃত করছি:

      ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি গভীর রাতে এক সেন কর্মকর্তা আমাকে একটি চিরকুট দেন। অফিসে কাজে ব্যস্ত থাকায় এসির বাতাসে চিরকুটটি কোথায় যেন উড়িয়ে নিয়ে যায়। পরে তিনি আবার আমার রুমে আসলে চিরকুটের বিষয় আলোচনায় আসে। কিন্তু আমরা দুজনেই চিরকুটটি খুঁজে পাইনি।

      মোখলেস আর সেনা অফিসার মিলে কামরাময় হামাগুড়ি দিয়ে সেই ‘চিরকুট’ খুঁজছেন – দৃশ্যটি কল্পনা করার চেষ্টা করছি।

      একজন উপদেষ্টা বা মন্ত্রীর সাথে কর্মকর্তা বা নিরাপত্তারক্ষীরা দুর্ব্যবহার করবে এটি কিভাবে সম্ভব- কেবল মনোলগ করলাম। অবশ্য আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করার খবর সর্বত্র আগেই গুজবাকারে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। ১৫ দিন আগে এমনও বলা হয়েছিল যে, আমাকে আমার চেয়ারে বসা অবস্থায় গুলি করে মারা হবে

      সত্যিই তার জীবন মহাসংকটের মুখে, যেমনটি একদা ছিল মুজিব, তাজউদ্দিন, তাহেরদের!

      একজন বুজুর্গ আমাকে পবিত্র কোরআন থেকে উদ্ধৃত করে মসজিদে বলেছিলেন, আল্লাহ ওয়ালিউল্লাজিনা আমানু ইয়ুখ রুজুহুম মিনাজ জুলমাতি ইলানুর। অর্থাৎ আল্লাহ সৎ লোকদের সেভাবে রক্ষা করেন যেভাবে দুধ থেকে মাছিকে তুলে নেয়া হয়। তিনি আমাকে বললেন যে, নো বডি উইল বি এবল টু টাচ ইউ, ইনশাল্লাহ।

      রীতিমতো আধ্যাত্মিক কানেকশান! পড়লে বিশ্বাসী হতে মন চায়।

      দুপুর পৌনে ১২টায় আমি পদত্যাগপত্র লিখি। মিন্টো রোডের বাসভবনে এই পদত্যাগপত্র লেখার আগে আম্মাকে সালাম করি এবং আম্মা ও স্ত্রীকে আগেই বলে নেই যাতে তারা আমাকে বাধা না দেন। মাশাল্লাহ, তারা সম্মত হন এবং যে দুজন গুরুত্বপূর্ণ অফিসার আমার কার্যক্রম ভূমিকা ও সততায় মুগ্ধ ছিলেন তাদের পাঠালে অফিসার এসে আমার কাছ থেকে পদত্যাগপত্রটি নিয়ে যান।

      এমন সত মানুষ কোথায় পাবো আর!

      বিধি অনুযায়ী, পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার পরই সরকারি সুযোগ সুবিধা পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করা যায়। ভিআইপিদের বেলায় ভদ্রতা ও সভ্যতারওতো ব্যাপার ও মাত্রা আছে। আজ আমি যাকে স্যালুট দিচ্ছি স্যার স্যার করছি তার প্রতি কী কালই আমি চোখ উল্টে দিতে পারি স্রেফ ক্ষমতার জন্যে ও ক্ষমতার মদমত্ততায়। বলা হয়, ওয়ানস বস অব অলওয়েজ বস

      এতো বড়ো স্বঘোষিত ভিআইপি’র মর্যাদা বুঝলো না এই দেশ।

      ১১ জানুয়ারি এক সিনিয়র জেনারেল বঙ্গভবনে আমার রুমে বসে বললেন, আপনি ভ্যাটারান। আপনাকে দায়িত্ব পালনে কেউ বাধা দেবে না। অপর একজন গুরুত্বপূর্ণ সেনা কর্মকর্তাও ওই সময় আমাকে নির্দ্বিধায় দায়িত্ব পালন করে যেতে বলেন।

      আমরা জানতি পারছি, তিনি যে কতো ইম্পর্ট্যান্ট একজন ‘ভ্যাটেরান’, খোদ সিনিয়র জেনারেলরাই পঞ্চমুখ!

      ১৬ জানুয়ারি আমি বঙ্গভবনে যাই এবং বিকেল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত বঙ্গভবনের উর্ধ্বতন থেকে অধস্তন পর্যন্ত সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর কাছ থেকে বিদায় নেই। বেশিরভাগই তখন অশ্রুসজল। অনেকেরই উপকার করেছি শুনতে হচ্ছিল তাদের স্বাগত স্বীকারোক্তিতে।

      বুক ভেঙ্গে যায় পড়লে, এমনই অশ্রুসিক্ত সেই বিদায় দৃশ্য!

      বাঙালী জাতির আসলেই অনেক বড়ো ক্ষতি হয়ে গেল! ইয়েসউদ্দিনের প্রেস সচিব পদ হারানোর কথা তিনি যেমন বিস্তারিতভাবে লিখলেন, চাকুরীটা কেন এবং কোন্ বিচারে তাকে দেয়া হয়েছিল, চাকুরী পাওয়ার পর তিনি নিজেও আর কি কি করেছিলেন, সে সব নিয়েও একটু লিখলে পারতেন মনে হয়।

  8. বিনয়ভূষণ ধর - ৬ মার্চ ২০১০ (৮:৪৮ অপরাহ্ণ)

    @রায়হান!
    এতোটা অস্হির হলে চলবে কি করে! “মোখলেসনামা” নাটকের প্রথম অংকের প্রথম দৃশ্য গেলো মাত্র!…

    • বিনয়ভূষণ ধর - ১৪ মার্চ ২০১০ (৬:৩৬ অপরাহ্ণ)

      ওয়ান ইলিভেনের অজানা কথা
      মোখলেসুর রহমান চৌধুরী
      দ্বিতীয় পর্ব: পড়ুন এখানে…

  9. রায়হান রশিদ - ৬ মার্চ ২০১০ (১১:২৪ অপরাহ্ণ)

    ব্লগ বিষয়ে আসিফ নজরুলের বিভ্রান্তি এবং জনৈক গল্পকারের বিষোদগার নিয়ে মজার আলোচনা, এখানে

  10. মাসুদ করিম - ৯ মার্চ ২০১০ (১০:১৪ পূর্বাহ্ণ)

    ক্যাথরিন বিগেলো, নারী দিবসের নারী। এই প্রথম শ্রেষ্ঠ পরিচালকের অস্কার পেলেন একজন নারী

  11. মোহাম্মদ মুনিম - ১২ মার্চ ২০১০ (১২:০৮ পূর্বাহ্ণ)

    ডেভিড ফ্রস্টকে দেয়া বংগবন্ধুর সাক্ষাৎকার

  12. মোহাম্মদ মুনিম - ১২ মার্চ ২০১০ (১২:১৯ পূর্বাহ্ণ)

    বাংলাদেশের ইসলামী জঙ্গিবাদ নিয়ে মানিজা হোসাইনের লেখা

  13. মাসুদ করিম - ১৩ মার্চ ২০১০ (১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ)

    বিশিষ্ট সাংবাদিক ও ভাষাসৈনিক কে জি মুস্তাফা আজ শনিবার ভোরে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে মারা গেছেন। তিনি কিডনি ও হূদরোগজনিত রোগে ভুগছিলেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
    পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, কাল রোববার পর্যন্ত তাঁর মরদেহ হাসপাতালেই রাখা হবে।
    গত ৮ ফেব্রুয়ারি তাঁকে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে বিশিষ্ট এই সাংবাদিককে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। আজ ভোরে তিনি মারা যান। লিন্ক

    • মাসুদ করিম - ১৪ মার্চ ২০১০ (১০:২৩ পূর্বাহ্ণ)

      শোকলেখন সংগ্রহ : কে জি মুস্তাফা
      কালের কণ্ঠে আবেদ খান

      কিংবদন্তিতুল্য মানুষটি চলে গেলেন
      আবেদ খান
      কে জি ভাই চলে গেলেন। আমাদের সাংবাদিকতা পেশার বর্তমান প্রজন্ম বুঝতে কি পারবে, কোন মানুষটি নিঃশব্দে লোকান্তরিত হলেন? সাংবাদিকতা পেশা যদি এককভাবেও কারো কাছে ঋণী থাকে তিনি হলেন কে জি ভাই_খন্দকার গোলাম মুস্তাফা। অনন্য রুচিবোধ, অসাধারণ নীতিনিষ্ঠা, অতুলনীয় সততা এবং অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব তাঁকে কিংবদন্তির মানুষে পরিণত করেছিল।
      কে জি ভাইয়ের সাংবাদিকতার সূচনা কলকাতায়_বিভাগপূর্ব কাল থেকেই। সাতচলি্লশের পর ঢাকায়। বাম রাজনীতির প্রতি একনিষ্ঠ কে জি মুস্তাফার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তিনি কখনো পেশার সঙ্গে রাজনৈতিক মতাদর্শকে জড়িয়ে ফেলেননি। আবার এই কে জি মুস্তাফাই সাংবাদিকদের অধিকার, দাবি-দাওয়া নিয়ে পাকিস্তানব্যাপী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। একই সঙ্গে ভাষা আন্দোলনেও দিয়েছিলেন সক্রিয় নেতৃত্ব। রাজনৈতিক কারণে কখনো কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন, আবার কখনো মাসের পর মাস আত্দগোপন করে থেকেছেন। এ তো গেল তাঁর রাজনৈতিক জীবনের কথা। সাংবাদিক হিসেবে কিংবা সাংবাদিকদের সংগঠক হিসেবেও তিনি একই রকম উজ্জ্বল। আজ যাঁরা প্রবীণ সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত, তাঁদেরও অনেকেরই পেশাজীবন শুরু হয় তাঁর হাতে। আবার তিনি ছিলেন নিখিল পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। দীর্ঘদিন, সম্ভবত মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি ছিলেন পাকিস্তান ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি। পাকিস্তানের প্রথম সামরিক শাসক প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের বাকস্বাধীনতা হরণকারী নীতির বিরুদ্ধে সে সময় দেশব্যাপী সাংবাদিকদের যে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তার পুরোভাগে ছিলেন কে জি মুস্তাফা। সেই আন্দোলনের মুখে আইয়ুবের সামরিকজান্তাকে হার মানতে হয়েছিল এবং সর্বপ্রথম গঠিত হয়েছিল সাংবাদিকদের বেতন বোর্ড রোয়েদাদ। আজ সাংবাদিকতা পেশা যে মর্যাদা পেয়েছে, সাংবাদিকদের যে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে, তার জন্য কে জি মুস্তাফার অবদান অবশ্যই মনে রাখতে হবে। প্রায় ষাট বছরের পেশাগত জীবনে কখনো তিনি নীতি কিংবা আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি।
      কে জি ভাইকে আমি প্রথম দেখেছি একজন বাম রাজনীতিক হিসেবে, আমার কৈশোরকালে। আমাদের বাড়ির রাজনৈতিক আবহের মধ্যে। মাঝে মাঝে রাতের বেলায় অল্প সময়ের জন্য আসতেন তিনি। এরপর দেখেছি পত্রিকা অফিসে। আজাদে, সংবাদে, ইত্তেফাকে, অবজারভারে_সেই পাকিস্তান আমলে। ছোটখাটো মানুষ কিন্তু অসামান্য ব্যক্তিত্ব। সিদ্ধান্ত প্রদানে সামান্যতম দ্বিধা নেই। সত্য কথাটি উচ্চারণে সামান্যতম কুণ্ঠা নেই।
      জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাঁর আদর্শগত ভিন্নতা ছিল সেই পাকিস্তান আমল থেকেই। কিন্তু তা কোনো অবস্থাতেই পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধকে আক্রান্ত করেনি। বঙ্গবন্ধুর চেয়ে কয়েক বছরের ছোট ছিলেন বটে, তবে বন্ধুত্বের সম্পর্কে তা কোনো বাধা হয়নি কখনোই। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু তাঁকে ইরাক এবং ইয়েমেনের রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগ দেন। নির্দ্বিধায় কে জি ভাই সেই দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর তাঁর নিয়োগ বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু তারপর তিনি দেশে ফেরেননি। থেকে যান ইরাকে_যোগ দেন বাগদাদের একটি জাতীয় দৈনিকে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে। ১৯৮৪ সালের দিকে ইরাকের বাগদাদে তাঁর সঙ্গে দেখা হয় আমার। মুখে স্নেহসিক্ত হাসি। তারও বেশ কিছুকাল পরে তিনি দেশে ফেরেন। কিছুকাল বিরতির পর প্রত্যাবর্তন ঘটে সাংবাদিকতা পেশায়ও। একটি নতুন দৈনিকের দায়িত্ব গহণ করেন তিনি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত থাকেননি সেখানে। ফিরেছিলেন দৈনিক সংবাদ পত্রিকায়ও। সেখানেও বেশি দিন থাকা হয়নি। তখন তাঁর বয়স হয়েছে_কমে এসেছে গুরুদায়িত্ব বহনের ক্ষমতাও। তারপর কিছুকাল থেকেছেন লেখালেখির ভেতরে। শেষ পর্যন্ত অবসর।
      আমাদের সাংবাদিকতা জগৎটি ক্রমশ অভিভাবকহীন হয়ে পড়ছে। পাকিস্তান আমলে এই পেশার নেতৃত্বে যাঁরা ছিলেন তাঁদের অনেককে আমরা হারিয়েছি ইতিমধ্যেই। কেবল মুসা ভাই আছেন, ফয়েজ ভাই আছেন, নির্মল দা আছেন, লোহানী ভাই আছেন_তবে নিষ্ঠুর সময় তাঁদের কর্মক্ষমতা হরণ করেছে অনেকখানি।
      কিন্তু তারপর? এক অপরিসীম শূন্যতা_সর্বগ্রাসী শূন্যতা কে জানে কোথায় নিয়ে যাবে এই পেশাকে! আমাদের দুর্ভাগ্য, কে জি ভাই তাঁর সুবিশাল অভিজ্ঞতার এবং কর্মজীবনের কোনো সঞ্চয় রেখে যেতে পারলেন না তাঁর উত্তরাধিকারদের জন্য।
      আমরা কালের কণ্ঠের সাংবাদিক-কর্মচারী-পৃষ্ঠপোষক ও শুভানুধ্যায়ীদের পক্ষ থেকে জনাব কে জি মুস্তাফার স্মৃতির প্রতি জানাই আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।

      প্রথম আলোতে জাহীদ রেজা নূর

      শ্রদ্ধাঞ্জলি
      চলে গেলেন কে জি মুস্তাফা

      জাহীদ রেজা নূর | তারিখ: ১৪-০৩-২০১০
      সকালে এবিসি রেডিওর খবরে প্রথম শুনলাম, কে জি মুস্তাফা আর নেই। সঙ্গে সঙ্গে একটা অপরাধবোধ চেপে ধরল আমাকে। যুগান্তরের সহকারী সম্পাদক হাসান মামুন আর আমি কত দিন ভেবেছি, তাঁকে একনজর দেখে আসব, কিন্তু হয়ে উঠল কই? মুক্তকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগে কাজ করার সময় তিনি ছিলেন আমাদের সম্পাদক। এ রকম রাশভারী চেহারার, দরাজকণ্ঠের অধিকারী মানুষটিকে খুব কাছে থেকে না জানলে চেনা হয়ে উঠত না।
      শৈশবের একটি স্মৃতি এখনো মনে জ্বলজ্বল করে। আমার বাবা দৈনিক ইত্তেফাকের তত্কালীন কার্যনির্বাহী ও বার্তা সম্পাদক সিরাজুদ্দীন হোসেনের সঙ্গে অসাধারণ বন্ধুত্ব ছিল তাঁর। একাত্তরে বাবাকে হত্যা করল পাকিস্তানি ও আলবদররা মিলে। স্বাধীনতার পর বৈরুতের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দেশত্যাগের আগে তিনি আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। আট সন্তান নিয়ে মা তখন অথৈ সাগরে। কে জি কাকা আমাদের অভয় দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু সিরাজের কথা ভুলবে না। মনে আছে, বিদায়ের আগে আমার ছোট ভাইয়ের হাতে একটি ১০০ টাকার নোট গুঁজে দিয়েছিলেন।
      তাঁর অধীনে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, একসময় প্রচণ্ডরকম বকাঝকা করছেন, আবার পরক্ষণেই রাগ পড়ে গেলে কাছে ডেকে বোঝাচ্ছেন। কোমলে-কঠোরে মিলে ছিল তাঁর মনটা।
      ইসলামিয়া কলেজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সিরাজুদ্দীন হোসেন, খন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস (কেজি মুস্তাফার অগ্রজ), আসফউদ্দৌলা রেজা, কাজী গোলাম মাহবুব, শামসুদ্দীন মোল্লা ছিলেন সহপাঠী। কে জি মুস্তাফা ছিলেন একটু জুনিয়র। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হওয়ার পরও আজাদ পত্রিকাটি ছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। কিছুকাল পরে পত্রিকাটি চলে আসে ঢাকায়।
      কে জি মুস্তাফা কাজ করতেন আজাদে। ১৯৪৯ সালের জানুয়ারিতে ঢাকায় এসে কে জি মুস্তাফা ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং পুনরায় চাকরি নেন আজাদ পত্রিকায়। কিন্তু তিন মাসের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ধর্মঘটের সঙ্গে সহযোগিতা করার কারণে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের তৃতীয় আহ্বায়ক হিসেবে গ্রেপ্তার হন। জেলফেরত কে জি মুস্তাফা চাকরিতে জ্যেষ্ঠতা পাননি।
      কেজি মুস্তাফার সঙ্গে ছিল বামপন্থী রাজনীতির যোগ। ১৯৫১ সালে যুবলীগ প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি ছিলেন কমিটির সদস্য। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় কাজ করতেন সংবাদে। ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল ২২ ফেব্রুয়ারি, তাতে সাধারণ ছাত্র ও জনগণের ভাবনার প্রকাশ ছিল না। সে সময় সংবাদ ছিল ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের মুখপত্র। খায়রুল কবীর ছিলেন সম্পাদক। কাজ করতেন জহুর হোসেন চৌধুরী, সৈয়দ নুরুদ্দীন, তসদ্দুক হোসেন, কে জি মুস্তাফা, সরদার জয়েনুদ্দীন, কাজী মহম্মদ ইদ্রিস প্রমুখ। কে জি মুস্তাফা, সৈয়দ নুরুদ্দীনরা বলেছিলেন, সংবাদ মুসলিম লীগের কথামতো চললে তাঁরা ধর্মঘটে যাবেন। কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছিল, সত্য খবরই ছাপা হবে। এ সময় কে জি মুস্তাফা ধর্মঘটে না যাওয়া নিয়ে বলেছিলেন, ‘ধর্মঘট করলে জনসাধারণ খবর পাবে না, কাজেই সত্য ঘটনার রিপোর্ট দিয়ে কাগজ বের করাই উচিত।’ কিন্তু প্রতিবেদন তৈরি করার পর তার কিছুটা পরিবর্তন করে ছাপা হয়, ফলে সংবাদের এই ভূমিকায় ক্ষুব্ধ জনগণ সংবাদের ওপর চড়াও হয়।
      এ সময় রাজনৈতিক তত্পরতা বেড়ে গেলে ১৯৫৩ সালের প্রথম দিকে সংবাদপত্র থেকে বিদায় নেন কে জি মুস্তাফা। ১৯৫৫ সালের অক্টোবরে কে জি মুস্তাফার ওপর থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করা হলে তিনি আবার ফিরে আসেন সংবাদে। কিন্তু নভেম্বরেই ধর্মঘটের সময় আবার গ্রেপ্তার হন। ১৯৫৬ সালের জুনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাঁকে যখন পাবনা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশনে ইত্তেফাকের জেনারেল ম্যানেজার আবদুল ওয়াদুদ আইবির লোকদের প্রতিবাদ উপেক্ষা করে সেখানে উপস্থিত হয়ে বলেন, ‘মানিক ভাই (ইত্তেফাকের সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন) একটা মেসেজ পাঠিয়েছেন তোমাকে। তোমাকে পাবনায় খুব সম্ভব নজরবন্দী করা হবে। কিন্তু তুমি ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে সাত দিনের জন্য হলেও ঢাকায় চলে আসার চেষ্টা করো। এখানে তোমার ইত্তেফাকে যোগ দেওয়ার সব ব্যবস্থাই মানিক ভাই করে রেখেছেন। নজরবন্দীও থাকতে হবে না বেশি দিন। আবু হোসেন সরকারের সরকার এক মাসের বেশি টিকবে না।’
      ১৯৫৬ সালের ২৮ জুন পাবনা কারাগার থেকে নজরবন্দীর হুকুমনামাসহ তিনি দেখা করলেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আলী আহমদের সঙ্গে। তিনি অনুমতি দিলেন ঢাকা যাওয়ার। ঢাকায় এসেই কে জি মুস্তাফা বিয়ে করলেন তত্কালীন বেতার ও মঞ্চের প্রথম সারির অভিনেত্রী সাবেরা খাতুনকে। সেই বিয়েতে মানিক মিয়ার পাঠানো দুই ভাড় মিষ্টি নিয়ে উপস্থিত ছিলেন আবদুল ওয়াদুদ। তিনি কানে কানে কে জি মুস্তাফাকে বললেন, ‘কালই একবার ইত্তেফাকে কথা পাকাপাকি করতে চলে এসো’। ১৯৫৮ সালে ন্যাপ-আওয়ামী লীগ ঝগড়ার পরিপ্রেক্ষিতে মানিক মিয়া বললেন, কে জি সাহেব, আর তো একসঙ্গে কাজ করা চলে না, অনেকেই আপত্তি করছেন।’ কে জি মুস্তাফার ওপরও চাপ ছিল। তিনি সংবাদের বার্তা সম্পাদক হিসেবে যোগ দিলেন। ১৯৫৮ সালে ইসকান্দর মির্জাকে শিখণ্ডি রেখে আইয়ুব খান সামরিক আইন জারি করলে রাজনীতি ও সাংবাদিকতার ওপর খড়্গ নেমে আসে। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান অবজারভারে কর্মরত থাকার সময় তিনি আবার গ্রেপ্তার হন।
      একটি বিষয়ের উল্লেখ এখানে না করলেই নয়। ১৯৬৭ সালের জুন মাসে পাকিস্তানের তথ্য ও বেতারমন্ত্রী খাজা শাহাবুদ্দীন জাতীয় পরিষদে ঘোষণা করেন যে, বেতার ও টেলিভিশন থেকে পাকিস্তানবিরোধী রবীন্দ্রসংগীতের প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ নিয়ে যে অস্বস্তিকর অবস্থা সৃষ্টি করেছিল সরকার, তার বিরুদ্ধে দেশের শিল্পীসমাজের পাশাপাশি সাংবাদিকেরাও ছিলেন সোচ্চার। এই সাংবাদিকদের মধ্যে ছিলেন কে জি মুস্তাফাও।
      বহু পত্রিকায় কাজ করেছেন কে জি মুস্তাফা। মাঝে কিছু দিন দেশের বাইরের পত্রিকায়ও কাজ করেছেন। ছিলেন রাষ্ট্রদূত। ১৯৯৮ সালে মুক্তকণ্ঠে কাজ করার সময় প্রত্যক্ষভাবে প্রথম তাঁর সংস্পর্শে এসেছিলাম। পেয়েছি তাঁর স্নেহাস্পর্শ। তাই তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে অসহায় বোধ করি, চোখে আসে জল।

      সমকালে আবদুল গাফফার চৌধুরী

      আমার বুকেও আত্মীয় বিয়োগের বেদনা
      আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
      কেজি মুস্তাফার মৃত্যুতে বাংলাদেশের সাংবাদিকতার আকাশ থেকে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র ঝরে পড়ল। যদিও তিনি পরিণত বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন, তথাপি এই মৃত্যু বাংলার সাংবাদিকতায় যে শূন্যতা সৃষ্টি করেছে তা পূরণ হতে বহুদিন লাগবে। তিনি শুধু সাংবাদিক ছিলেন না, তিনি রাজনীতিক এবং কূটনীতিকও ছিলেন। গত অর্ধশতকের বাংলায় রাজনীতি ও সাংবাদিকতায় তিনি যে স্বাক্ষর রেখে গেছেন, তার প্রভাব বহুদিন অম্লান থাকবে। পাকিস্তান আমলের বাম রাজনীতিতে এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও তিনি যে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন তা বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি উজ্জ্বল অধ্যায়। ভাষা আন্দোলনে সেই ১৯৪৮ সাল থেকে তিনি ছিলেন সামনের সারির নেতা। বায়ান্নর একুশের সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলার মাঠে ১৪৪ ধারা ভাঙার যে সিদ্ধান্ত হয়, তার পেছনেও সাহসী ভূমিকা ছিল কেজি মুস্তাফার।
      ধর্মভিত্তিক পাকিস্তান রাষ্ট্রে যেখানে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি করাই ছিল বিপজ্জনক, সেখানে নিষিদ্ধ বাম রাজনীতিতে তিনি বহুকাল ছিলেন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী এবং সে কারণে তাকে আত্মগোপনে থাকতে হয়েছে। পঞ্চাশের দশকের শেষদিকে দৈনিক সংবাদ পত্রিকার অফিসটি ছিল দেশের প্রগতিশীল সাহিত্যিক-সাংবাদিকদের একটি আশ্রয়স্থল। তিনি এই কাগজে দীর্ঘকাল সাংবাদিকতা করেছেন এবং নবপ্রজন্মের বহু সাংবাদিক তৈরি করেছেন।
      তার সাংবাদিকতার সূচনা চলি্লশের দশকের কলকাতায়। দেশভাগের পর তিনি ঢাকায় এসে ছাত্রজীবনেই সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত হন। অবশ্য তার সাংবাদিক জীবনের সূচনা কলকাতাতেই। তিনি একাদিক্রমে দৈনিক আজাদ, দৈনিক ইত্তেফাক এবং দৈনিক সংবাদে দীর্ঘকাল সাংবাদিকতা করেছেন। কিন্তু দৈনিক সংবাদ বামঘেঁষা সংবাদপত্র হওয়ায় ওই কাগজের সঙ্গেই বেশিদিন জড়িত ছিলেন। তিনি শুধু অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিই নয়; দেশের প্রগতিশীল সব সাংস্কৃতিক ও সামাজিক আন্দোলনেও যুক্ত ছিলেন এবং নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেজন্য নির্যাতন বরণও করেছেন। বারবার কারাগারে গেছেন এবং কখনও আত্মগোপন করেছেন।
      যদিও তিনি চরিত্রে ছিলেন বামপন্থি; কিন্তু বাঙালির সেক্যুলার জাতীয়তার আন্দোলনেও বিশ্বাসী ছিলেন এবং তাতে সক্রিয় অংশ নিয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলন ও প্রগতিশীল সমাজ গঠনের আন্দোলনে পঞ্চাশের দশকের যে ক’জন পথিকৃতের নাম উচ্চারণ করা যায়, তাদের মধ্যে কেজি মুস্তাফা একজন। তিনি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন কলকাতায় ছাত্রজীবন থেকেই। দু’জনের মধ্যে রাজনৈতিক মতপার্থক্য ছিল; কিন্তু একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কোনো দ্বিমত ছিল না। ফলে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর সরকার তাকে কূটনৈতিক পদে যোগদানের আমন্ত্রণ জানান এবং তিনি তা গ্রহণ করেন। তিনি সর্বশেষ ইরাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন এবং প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন ও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর তিনি ইরাকেই অবস্থান করেন এবং বাগদাদ টাইমস পত্রিকায় সম্পাদকীয় বিভাগে যোগ দেন। দেশে ফিরে এসে তিনি প্রথমে চট্টগ্রামের দৈনিক পূর্বকোণের সম্পাদক পদে যোগ দেন। তারপর ঢাকায় ফিরে এসে কয়েকটি কাগজের সঙ্গে যুক্ত থাকার পর শেষে দৈনিক মুক্তকণ্ঠ নামের একটি দৈনিকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হন। শেষজীবনে তিনি কলামিস্ট হিসেবে আবির্ভূত হন এবং দেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক আন্দোলনে যথেষ্ট শক্তি ও সাহায্য জোগান। তার কলাম আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সাফল্যেও যথেষ্ট সাহায্য জুগিয়েছে। শেষ বয়সে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তিনি কলাম লেখা বন্ধ করেন এবং কিছুকাল রোগ ভোগের পর পরিণত বয়সেই মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু তার এই প্রয়াণে দেশের সর্বস্তরের মানুষই শোকাভিভূত হবে। কারণ এ দেশের সব ধরনের গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মী ও নেতা হিসেবে তার নামটি অবশ্যই চিরকাল বেঁচে থাকবে।
      আমি তার একজন সাংবাদিক ছাত্র ছিলাম। কয়েক মাস আগেও আমি তার ঢাকার বাসায় তার সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। তার মৃত্যু আমার বুকেও আত্মীয় বিয়োগের বেদনা সৃষ্টি করেছে। আমি তার পত্নী সাবেরা আপা, তার সন্তান-সন্ততি এবং পরিজনবর্গকে আন্তরিক সমবেদনা জানাই।
      লন্ডন, ১৩ মার্চ, ২০১০

      কালের কণ্ঠে কামাল লোহানী লিখেছেন

      কিংবদন্তীতুল্য নেতা
      কামাল লোহানী
      সাংবাদিকতা জগতের এক কিংবদন্তিতুল্য নেতার মৃত্যু হলো। তাঁর মৃত্যুতে আমরা একজন দক্ষ সাংবাদিক যেমন হারালাম, তেমনি হারালাম একজন অভিজ্ঞ কূটনীতিককে। কে জি মুস্তাফার সাংবাদিক সত্তার বাইরেও যে রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা ছিল, সেটি ছিল প্রগতিশীল ও আদর্শভিত্তিক। তাই তাঁর জীবনে আন্দোলন-সংগ্রামে জেল-জুলুম ও নির্যাতন-নিপীড়নও সহ্য করতে হয়েছে। তিনি ভাষাসৈনিক ছিলেন। বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবি উত্থাপিত হয়েছিল এ বঙ্গের ছাত্রসমাজের কাছ থেকে, তখন কে জি মুস্তাফা ছিলেন পূর্ববঙ্গ কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য। এ ভাষা আন্দোলনের রক্তক্ষয়ী অধ্যায়ের পর যখন অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার স্ফুরণ ঘটল ওই তরুণ ছাত্রসমাজের মধ্যে, তখন জন্ম নিয়েছিল একটি নতুন ছাত্র সংগঠন, যার নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন। এ সময় পূর্ববঙ্গ কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে ছাত্র ফ্রন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করার দায়িত্ব যাঁদের হাতে ছিল, তিনি ছিলেন তাঁদের একজন। সে কারণে ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে এ দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কে জি মুস্তাফার অগ্রণী ভূমিকা ছিল। তিনি সত্য ভাষণে অকপট ছিলেন এবং যেকোনো সংকটে চটজলদি সিদ্ধান্ত নিতে পারঙ্গম ছিলেন। অসাধারণ ছিল তাঁর সাহস।
      আমার স্মৃতিতে যত দূর মনে পড়ে, আমি তাঁকে প্রথম দেখেছিলাম ১৯৫৩ সালে ঢাকায় পুঁথিপত্র প্রকাশনীর ঘরে। এটি শুধু দোকান ছিল তা-ই নয়, রাজনীতি ও সংগ্রামের প্রয়োজনে পুঁথিপত্র একটি প্রকাশনী সংস্থায়ও পরিণত হয়েছিল। এর স্বত্বাধিকারী ছিলেন ছাত্রনেতা মোহাম্মদ সুলতান এবং এম আর আখতার মুকুল। এ প্রতিষ্ঠানটিই ছাত্র ইউনিয়নের প্রথম সম্মেলনের সময় ছিল যোগাযোগের কেন্দ্র। এখানেই প্রথম তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয়। তিনি তখন কমিউনিস্ট পার্টির তরফ থেকে নতুন ছাত্র সংগঠনটির সংযোগ রক্ষা করছিলেন।
      এরপর কে জি ভাইয়ের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয় সাংবাদিকতা করতে গিয়ে। ১৯৫৫ সালে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আমি তখন দৈনিক মিল্লাত নামে একটি পত্রিকায় সবে প্রবেশ করেছি। তিনি তখন দৈনিক সংবাদের বার্তা সম্পাদক ছিলেন। পরে কে জি ভাই দৈনিক সংবাদ ছেড়ে দৈনিক ইত্তেফাকে চলে যান। কিন্তু কিছুদিন পরই বাংলা সংবাদপত্র ছেড়ে তিনি ইংরেজি দৈনিক পাকিস্তান অবজারভারে যোগ দেন। দীর্ঘকাল তিনি সাংবাদিক হিসেবে এ পত্রিকায় কাটিয়েছিলেন। এখানে একটি কথা বলে রাখি, কে জি ভাইয়ের সাংবাদিকতার জীবন শুরু আবুল মনসুর আহমদ সম্পাদিত দৈনিক ইত্তেহাদে। পরে তিনি বেশ কিছুদিন দৈনিক আজাদে কাজ করেছেন। নিপুণ সাংবাদিকের দক্ষতা ছাড়াও কে জি মুস্তাফা সাংবাদিক ইউনিয়নের একজন প্রতিষ্ঠাতা এবং জাঁদরেল সংগঠক ছিলেন। তিনি কেবল দুই বঙ্গেই নয়, সারা পাকিস্তানেই সাংবাদিক সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব দিয়েছেন। পাকিস্তান ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রথম সেক্রেটারি জেনারেল ও পরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সাংবাদিকদের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিল অবিসংবাদিত।
      মুক্তিযুদ্ধ-উত্তরকালে কে জি মুস্তাফা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে কূটনৈতিক পেশায় যোগ দেন। প্রথমে লেবানন ও পরে ইরাকে সফলতার সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। শুনেছি, তাঁর প্রতিভাদীপ্ত কূটনৈতিক জীবনের প্রশংসা যখন লেবাননের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধুর কাছে করেছিলেন, তখন উত্তরে বঙ্গবন্ধুও গর্বের সঙ্গে বলেছিলেন, আমি তো তোমার দেশে আমার এক বন্ধুকেই পাঠিয়েছি।
      কিন্তু পঁচাত্তরের নির্মম হত্যাকাণ্ডে বঙ্গবন্ধু যখন সপরিবারে নিহত হলেন, তারপর ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমানের আমলে তাঁকে কূটনৈতিক পদ থেকে প্রত্যাহার করে দেশে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের প্রতিহিংসার শিকারে পরিণত হয়ে তিনি ইরাকের রাজধানী বাগদাদেই থেকে গিয়েছিলেন এবং ইরাক থেকে প্রকাশিত বিখ্যাত ইংরেজি সাময়িকী বাগদাদ টুডের সম্পাদনার দায়িত্বও গ্রহণ করেছিলেন। আর সেখানেই সপরিবারে দীর্ঘ নির্বাসিত জীবন যাপন করতে হয়েছিল।
      দেশের সুস্থ অবস্থা ফিরে আসার পর কে জি মুস্তাফাও দেশে ফিরে এলেন। অনেক দিন বসে থাকার পর তিনি আবার সাংবাদিকতায় যোগ দিয়েছিলেন এবং চট্টগ্রামের দৈনিক পূর্বকোণ তাঁর হাত দিয়েই বেরিয়েছিল।
      এ ছাড়া ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক মুক্তকণ্ঠের সম্পাদকও ছিলেন। পরে তিনি ইংরেজি ও বাংলায় কলামও লিখতে শুরু করেছিলেন। অসুস্থ হওয়ার বেশ কিছুদিন আগ পর্যন্ত তিনি নিয়মিত দৈনিক জনকণ্ঠে তাঁর লেখা চালিয়ে গিয়েছেন। বছরাধিককাল হলো তিনি আর লিখতে পারছিলেন না।
      কে জি মুস্তাফার সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে আমার একটি যোগাযোগ ছিল। সাংবাদিক ইউনিয়ন করতে গিয়ে বহুবার আমরা পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন কাউন্সিল অধিবেশনে মিলিত হয়েছি। তাতে ইউনিয়ন সম্মেলন পরিচালনায় তাঁর দক্ষতা ও বিচক্ষণতার পরিচয় পেয়েছি। পরবর্তীকালে আমি যখন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ছিলাম, তখন আমরা যেকোনো সংকটে পড়লে তাঁর কাছ থেকে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত ও পরামর্শ পেয়েছি। পাকিস্তান ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সেক্রেটারি জেনারেল কিংবা প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পরামর্শ দিতেন। আমার মনে আছে, আইয়ুব খানের আমলে যখন আমরা সামরিক শাসকের জারি করা সংবাদপত্রের কণ্ঠ রোধকারী কালা-কানুনের বিরুদ্ধে লড়াই করছি, তখন তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আমাদের যেমন সাহস দিয়েছে, তেমনি আন্দোলনকে সফল করতে সহায়তা করেছে। আইয়ুবের জারি করা এ প্রেস অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম ছিল সর্বাত্দক। সে সময় পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সব খবরের কাগজ ১৭ দিন পর্যন্ত বন্ধ ছিল, ওই ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃত্বের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন কে জি মুস্তাফা। এ আন্দোলনে সাংবাদিকদের পাশে গণমাধ্যমের অন্যান্য শাখার কর্মীরাও এসে জমায়েত হয়েছিলেন যেমন, তেমনি সারা পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ এ আন্দোলনে আমাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। যা সম্ভব হয়েছিল কে জি মুস্তাফা, আসরার আহমদ, মিনহাজ বার্না, আবদুল্লাহ মালিক, আই এ রহমান প্রমুখের নেতৃত্বে।
      কে জি মুস্তাফা ছিলেন আদর্শিক রাজনীতির একজন সংগ্রামী পুরুষ। সাংবাদিক হিসেবে একজন দক্ষ কারিগর। ইউনিয়ন নেতা হিসেবে একজন বলিষ্ঠ সাহসী ব্যক্তিত্ব। আবার সাংবাদিকরা যেকোনো ক্ষেত্রে গিয়ে যে সফলতা অর্জন করতে পারেন, তা তিনি কূটনীতিক হিসেবে সফল হয়ে প্রমাণ করেছেন। তিনি আমাদের মধ্যে অমর হয়ে থাকবেন।
      লেখক: সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

      কালের কণ্ঠে হারুন হাবীব লিখেছেন

      সাহস ও আদর্শের প্রতিকৃতি
      হারুন হাবীব
      কে জি মুস্তাফার মৃত্যুসংবাদটি খুব একটা অপ্রত্যাশিত ছিল না। কারণ কে জি ভাই জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পেঁৗছেছিলেন। তাঁর বয়স বিবেচনা করলেই বোঝা যায়। কাজেই আমাদের সর্বজনশ্রদ্ধেয় কে জি ভাইয়ের মৃত্যু আমাকে অতটা বিস্মিত করেনি। সঙ্গে সঙ্গে এও আমাকে বলতে হবে, কে জি মুস্তাফার মৃত্যুতে আমাদের সৎ ও সাহসী সাংবাদিকতার ভুবনে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়ে গেল তা সত্যি সত্যি বেদনার।
      আমি মূলত মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গন থেকে ফিরে সাংবাদিকতা পেশায় প্রবেশ করেছিলাম। কিন্তু কে জি ভাই আমাদেরও দুই প্রজন্ম আগে থেকে অর্থাৎ পাকিস্তান আমলের শুরু থেকেই সেদিনকার পূর্ব পাকিস্তানের সাংবাদিকতা জগতে মধ্যমণি হয়ে নিজের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলেছিলেন। সে সময় কেজি ভাইয়ের মতো সুবিশাল সাংবাদিকের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগতভাবে পরিচয়ের সুযোগ হয়ে ওঠেনি। পুরনো প্রেসক্লাব ভবনে যখন গেছি চা কিংবা অন্যান্য খাবার খেতে তখন কে জি মুস্তাফাকে সরাসরি দেখেছি। প্রথমদিকে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করেছি। কিন্তু ও রকম প্রখর ব্যক্তিত্বশীল একজন মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে বেশি কিছু বলার সাহস আমাদের মতো তরুণদের হয়ে ওঠেনি। খুব বেশি দীর্ঘ নন; কিন্তু সুঠামদেহী। মাথায় বেশ ঝাঁকড়া চুল। এর মধ্যে কে জি ভাই তখনকার পাকিস্তান অবজারভারের বিশাল ব্যক্তিত্বশীল সাংবাদিক। কাজেই দূরত্ব স্বভাবতই ছিল। আজ কে জি ভাই তাঁর প্রিয় স্বদেশভূমি ছেড়ে চলে গেলেন চিরদিনের জন্য। কিন্তু আমাদের নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকরা কতজনে কে জি মুস্তাফার সাংবাদিক কৃতিত্ব এবং ঐতিহ্য জানেন তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কে জি মুস্তাফা ছিলেন সাবেক পাকিস্তান ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের শীর্ষস্থানীয় নেতা। তাঁর আহ্বানেই তৎকালীন পাকিস্তানে সংবাদপত্রে সফল ধর্মঘট পালিত হয়। আমি তখনো সাংবাদিকতায় ঢুকিনি; কিন্তু কে জি ভাইয়ের নেতৃত্বে সেই যে সাংবাদিকদের ধর্মঘট, যা তখনকার আইউববিরোধী আন্দোলনকে এগিয়ে দিয়েছিল, তা ভাবতে আজও আমার বিস্ময় হয়। সাংবাদিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সেদিনকার পাকিস্তানে কে জি ভাই যে দক্ষ এবং সাহসী নেতৃত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন তা আমাদের সাহসী ইতিহাসের অংশ।
      কে জি ভাই অসাধারণ বাগ্মী ছিলেন, সাংবাদিকদের শীর্ষস্থানীয় নেতা। ৬০-এর দশকে সেদিনকার পূর্ব পাকিস্তানে সাংবাদিকতার যে অবিস্মরণীয় বিস্ফোরণ ঘটেছিল, তার অন্যতম কিংবা প্রধানতম কারিগর ছিলেন কে জি মুস্তাফা। আমার মনে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে তিনি সর্বপ্রথম অংশগ্রহণ এবং দক্ষ সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ছিল তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। সেই সুবাদে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু কে জি মুস্তাফাকে ইরাকের রাষ্ট্রদূত করেন। আমার সুযোগ হয়েছিল সেদিন জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে কে জি মুস্তাফাকে সংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজনে থাকার। এরপর বহুদিন তিনি দেশে ছিলেন না, কারণ এরই মধ্যে ১৯৭৫ সালে পরিবারের লোকজনকে হত্যা করা হয়। তখনকার আওয়ামী লীগ সরকারকে পাল্টে দিয়ে নানান ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে সামরিক শাসন জেঁকে বসে। এই শাসকরা মুক্তিযুদ্ধের সাড়ে ৩ বছরের মাথায় বাংলাদেশের প্রগতির চাকা টেনে ধরে। কে জি ভাই সারা জীবন প্রগতিশীল রাজনীতির পক্ষে কাজ করেছেন, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়েছেন, পাকিস্তানি সেনাশাসকদের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। সেই কে জি মুস্তাফা কী করে বাংলাদেশের ভীষণ দুর্ভাগ্য মেনে নেবেন? কাজেই কে জি ভাই স্বেচ্ছা নির্বাসনে গেছেন বিদেশের মাটিতে। বছরের পর বছর তিনি ঘরে ফেরেননি।
      আমার ঠিক মনে পড়ে না কে জি মুস্তাফা কোন সালে দেশে ফিরেছেন। তবে দেশে ফিরে তিনি তাঁর জীবনের আরেকটি অধ্যায় শুরু করেন সাংবাদিকতায়। যুক্ত হন দৈনিক সংবাদের সঙ্গে। চট্টগ্রামের পূর্বকোণের সঙ্গে, শেষ পর্যন্ত সাবেক দৈনিক মুক্তকণ্ঠ পত্রিকার সঙ্গে। কিন্তু আমি লক্ষ্য করেছি, কে জি ভাইকে আমরা সেদিনকার তরুণ সাংবাদিকরা চিনতাম সেই সাহসী দুর্ধর্ষ মানুষ, যিনি পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা হিসেবে নিজের সাহস ও যোগ্যতা প্রদর্শন করেছিলেন, সেই কে জি ভাইকে আমরা আর কখনো ফিরে পাইনি।
      একদিকে তাঁর বয়স বেড়েছিল, অন্যদিকে পরিবর্তিত পরিস্থিতির টানাপড়েনে কে জি মুস্তাফা ক্রমান্বয়েই নিজের মধ্যে গুটিয়ে পড়ছিলেন। মাঝে মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই নির্দিষ্ট সময় জাতীয় প্রেসক্লাবে বসতেন। তাকে ঘিরে বসতেন প্রবীণ ও নবীন সাংবাদিকরা। কে জি ভাই ধীরস্থিরভাবে তার বক্তব্য রাখতেন। কখনো তার ক্ষুরধার যুক্তি, তাঁর জীবনবোধ এবং দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনের অভিজ্ঞতা উপহার দিতেন আমাদের মতো নতুন প্রজন্মের সংবাদকর্মীদের। কিন্তু একটি বিষয় আমাকে উল্লেখ করতে হবে, কয়েক বছর আগে কে জি ভাই যখন নিয়মিতভাবে প্রেসক্লাবের কেবিনে বসতেন, তখন বেশিরভাগ সময় তিনি হয় নির্বাক কিংবা আনমনে চিন্তা করতেন।
      আমাদের মতো নবীনদের তাঁকে প্রশ্ন করে বেশি কিছু জানার সুযোগ হয়নি। ব্যক্তিগতভাবে আমি কে জি ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ কখনো পাইনি, আজ কৃতজ্ঞচিত্তে একটি ঘটনার কথা মনে করতে চাই। সম্ভবত ২০০০ সালে আমি তখন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কলম ধরি এবং সাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকি বলে আমাকে নিয়ে তখনকার সাম্প্রদায়িক শক্তির মুখপত্রগুলো লাগাতার অপপ্রচার চালাতে থাকে। সেই অপপ্রচারের মাত্রা এক সময় এতটাই তীব্র হয় যে, আমি ব্যক্তিগতভাবে ওদের বিরুদ্ধে আমার জীবনে আরেকটি যুদ্ধ শুরু করতে বাধ্য হই। ঠিক সেই সময়ই বেশ কয়েকটি কাগজে কে জি মুস্তাফা তাঁর ক্ষুরধার লেখনীতে আমার পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পর সেই সমর্থনকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি।
      বাংলাদেশের সাংবাদিকতার আকর এবং চরিত্র আজ আধুনিক জামানার হয়েছে। শত শত নতুন সংবাদকর্মী এই পেশায় যোগ দিয়েছেন। আমি মনে করি, কে জি ভাইয়ের হাতে আমাদের সাংবাদিকতার যে ভিত্তি গড়ে উঠেছিল, সে ভিত্তি ছিল আদর্শ, সাহস ও নৈতিকতার। আমরা যেন সেই সাহস, আদর্শ ও নৈতিকতাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি সেই প্রার্থনাই করব। আমি জানি না, কে জি ভাই তাঁর আত্দজীবনী লিখে গেছেন কি না। যদি না লিখে থাকেন তাহলে তাঁর জীবনী বাংলাদেশের নতুন সাংবাদিকদের অবশ্যই জানার সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত। কে জি ভাইয়ের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রইল।
      লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

  14. মাসুদ করিম - ২১ মার্চ ২০১০ (১০:০৫ পূর্বাহ্ণ)

    মহানায়কের প্রস্থান। গিরিজা প্রসাদ কৈরালা গত শনিবার ৮৬ বছর বয়সে মারা গেলেন। নেপালের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে এই মৃত্যু যেন মরার পরেও কাজ করে। তার মৃত্যু যেন নেপালে সংবিধান রচনা সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় মেকানিজমে আসতে পারে, এই আশা রাখি। এবং মাওবাদী, নেপালি কংগ্রেস ও মার্কসিস্ট-ল্যালিনিস্টরা যেন তাদের HLPM(High Level Political Mechanism) সফল করতে পারেন সেই শুভ কামনা জ্ঞাপন করছি। এখানে তার মৃত্যুর খবরের কয়েকটি লিন্ক : কান্তিপুরে, হিন্দুতে, হিন্দুতে

  15. মাসুদ করিম - ২৩ মার্চ ২০১০ (১০:১৬ পূর্বাহ্ণ)

    হল্যান্ডের বিরুদ্ধে হুগো সাভেজের অভিযোগ। আমেরিকার সপ্তমহাদেশ শাসনের এসব পরিকল্পনা আদতে একই। কোথাও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, কোথাও মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ — যুদ্ধ তার চলছেই।

  16. মাসুদ করিম - ২৪ মার্চ ২০১০ (১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ)

    আত্মহত্যা করেছেন কানু সান্যাল। এখানে পড়ুন টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় অভিজিত ঘোষের ব্লগ When I met Kanu Sanyal। আউটলুকে পড়ুন Naxalbari: Home to the Revolution

  17. রেজাউল করিম সুমন - ২৭ মার্চ ২০১০ (১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ)

    দৈনিক জনকণ্ঠ, ২৩ মার্চ ২০১০

    ‘ক্রসফায়ার’ প্রদর্শনীতে ‘ক্রসফায়ার’!

    স্টাফ রিপোর্টার ॥ ধানমণ্ডির দৃক গ্যালারিতে ‘ক্রসফায়ার’ শীর্ষক একটি আলোকচিত্রের প্রদর্শনী বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। দেশে ‘অস্থিতিশীলতা’ সৃষ্টি হতে পারে দাবি করে পুলিশ প্রর্দশনী বন্ধ করে গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়। সোমবার বিকেলে প্রর্দশনী উদ্বোধনের কথা থাকলেও দুপুর থেকেই পুলিশ দৃক গ্যালারি ঘিরে রাখে। বিকেলে ভারতীয় খ্যাতিমান লেখিকা মহাশ্বেতা দেবী প্রর্দশনী উদ্বোধন করতে আসলে তাঁকে ভিতরে যেতে বাধা দেয়া হয়। এ সময় গ্যালারির ভিতর থেকে কাউকে বাইরে এবং বাইরে থেকে কাউকে ভিতরে যেতে দেয়নি পুলিশ। দৃকের পরিচালক শহীদুল আলমের তোলা র‌্যাবের ক্রসফায়ার সংক্রান্ত ছবি নিয়ে এই প্রর্দশনীর আয়োজন করা হয়েছিল। তবে পুলিশি বাধায় গ্যালারির ভিতরে ঢুকতে না পারলেও গেটের বাইরেই এই প্রর্দশনীর উদ্বোধনের আয়োজন করেন শহীদুল আলম। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ড নিয়ে এমনিতেই সমালোচনামুখর মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তার ওপর ক্রসফায়ার নামক এই প্রদর্শনী বন্ধ করায় সরকারের প্রতি নিন্দা জানিয়েছে সংগঠনগুলো।
    পুলিশী বাধার মুখে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করে মহাশ্বেতা দেবী বলেন, এই প্রদর্শনীর বিষয়টি হয়ত তাদের (সরকারের) পছন্দ না। তাই তারা এটি বন্ধ করে দিল। কলকাতায়ও এখানকার মতো ক্রসফায়ারের নামে অসাংবিধানিকভাবে মানুষ হত্যা করা হয়। যাতে সরকারের আগ্রাসী মনোভাবেরই প্রকাশ ঘটে। সভ্যতা কখনও ক্রসফায়ার সমর্থন করে না। আমি এবার এ বিষয় নিয়ে লিখব।
    শহীদুল আলম বলেন, ক্রসফায়ারে মানুষ হত্যা করার সময় বৈধতার প্রশ্ন আসে না, প্রর্দশনীর সময় বৈধতার প্রশ্ন কেন? পুলিশের বক্তব্য এ ধরনের প্রর্দশনীর ফলে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হতে পারে, কিন্তু জনগণ কখনও এ ধরনের প্রদর্শনীতে অরাজকতা সৃষ্টি করে না। বরং পুলিশ আসলেই অরাজকতা সৃষ্টি হয়। তাদের অবস্থানই মানুষের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি করে।
    নূরম্নল কবীর বলেন, পুলিশের ভাষ্য ‘ক্রসফায়ার’ নামক এই প্রদর্শনীর কোন পারমিশন নেয়া হয়নি, তাই তারা এটা বন্ধ করে দিয়েছে। আমার প্রশ্ন ক্রসফায়ারের নামে অবৈধ হত্যা তো সরকার বন্ধ করেনি, কিন্তু এই প্রর্দশনী বন্ধ করতে এত তৎপর কেন সরকার? এই প্রদর্শনী বন্ধ করে সরকার মানুষের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করেছে। এতে দেশ-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ৰুণ্ন হয়েছে। পৃথিবীর সমসত্ম সরকারই তাদের অপকর্মগুলো লুকিয়ে রাখতে চায়। আজকের এই ঘটনাই তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। অগণতান্ত্রিক মানসিকতার কারণে সরকার নিজেই একটি আত্মঘাতী সিদ্ধানত্ম নিল। এই প্রর্দশনীটি স্বাভাবিকভাবে চললে যতটা মিডিয়া কাভারেজ পেত, এখন দেশ_বিদেশের মিডিয়ায় এর বহুগুণ কাভারেজ পাবে। এই হীন কাজের মাধ্যমে সরকার একদিকে যেমন জনগনের অধিকার নষ্ট করল, তেমনি নিজের ভাবমূর্তির ৰতি করল বহুগুন।
    শিল্পী মোসত্মফা মনোয়ার বলেন, কেন প্রর্দশনী করতে দেয়া হবে না, এটা তো এক আশ্চর্যের বিষয়। যেখানে দেশে মারাত্মক সব ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, সে দিকে সরকারের কেন বাধা নেই, একটি প্রদর্শনী হতে দেবে না এটা কেমন কথা। দেশে ক্রসফায়ার হচ্ছে , সেটা তো বন্ধ হচ্ছে না। তাহলে এ বিষয়ের আলোকচিত্রের প্রর্দশনী কেন বন্ধ হবে। এই সরকারতো সংস্কৃতিমনা সরকার, কেন এই প্রর্দশনী বন্ধ করতে চাইছে তার কারণ অবশ্যই উদঘাটন করতে হবে।
    ধানমণ্ডি থানার ওসি শাহ আলম বলেন, সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নেয়ায় এই প্রর্দশনী বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সরকারের কার অনুমতি লাগবে, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) অনুমতি লাগবে।
    ধানমণ্ডি জোনের পেট্রোল ইন্সপেক্টর আবু হাজ্জাজ বলেন, সব প্রদর্শনীর জন্য পারমিশন লাগে না, কিন্তু ‘ক্রসফায়ার’ শব্দটি বেশ সেনসেটিভ, তাই এর জন্য পারমিশন নেয়া অবশ্যই উচিত ছিল।
    এই প্রদর্শনীতে র্যাবের ক্রসফায়ারে হত্যা করা কোন মানুষের ছবি নেই। র‌্যাবের হত্যা নাটকের স্থানগুলোর সিম্বোলিক ছবি রয়েছে, যেমন –ধান ৰেত, খোলা মাঠ, ডোবা বা পানির ছবি ইত্যাদি। এমন ছবির সংখ্যা ১৬টি। আরও আছে পত্রিকার কোলাজ কাটিং, গুগল আর্থ ও একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি। এই গুগল অর্থে কিক করলেই এ পর্যন্ত ক্রসফায়ারে র্যাবের হত্যা সকল মানুষের নামের লিস্ট ও তাঁদের কেস হিস্ট্রি (প্রায় ৭০০ জনের) ভেসে উঠবে মনিটরে। এসব হিস্ট্রি থেকে জানা যাবে কাকে, কোথায়, কবে, কখন এবং কিভাবে মারা হয়েছে। দর্শনার্থীরা অনলাইনে এই হত্যার হিস্ট্রি দেখে যেন নিজের মন্তব্য লিখতে পারে এ জন্য এখানে একটি অবসনও রাখা হয়েছে। পুলিশ প্রর্দশনী বন্ধ করে দিলেও দেশ- বিদেশের সবাই এই অনলাইনে এই প্রর্দশনীর সকল ছবি দেখতে পাবে।

    ‘ক্রসফায়ার’ শীর্ষক প্রদর্শনীটি অনলাইনে দেখা যাবে এখানে

  18. রায়হান রশিদ - ৩০ মার্চ ২০১০ (১:১৮ পূর্বাহ্ণ)

    ‘জিহাদ ও শ্রেনীসংগ্রাম তত্ত্বের আড়ালে বাংলাদেশে কি ঘটছে’
    – ড. আনোয়ার হোসেন।

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.