গত ২৭, ২৮ ও ২৯শে জুন ২০০৮ ভারতের মুম্বাই শহরে প্রগতিশীল সংগঠন সেন্টার ফর স্টাডি অফ সোসাইটি এন্ড̈ সেকুলারিজম (CSSS) এবং ইন্সটিটিউট অফ ইসলামিক রিসার্চ যৌথভাবে তিনদিনব্যাপী এক সম্মেলন আয়োজন করে। সংগঠনটির সভাপতি ড. আসগর আলী ইঞ্জিনিয়ার, যিনি পারিবারিক আইন ও শরিয়া বিষয়ে একজন বক্তা হিসেবে ইতোমধ্যেই দেশে বিদেশে পরিচিতি লাভ করেছেন। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আগত নারী-নেতৃবৃন্দ যাঁরা মাঠ পর্যায়ে নারীদের আইনী এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে সহায়তা দিয়ে থাকেন। নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে উঠে এসেছে কিভাবে সমাজের সকল স্তরে ফতোয়ার মাধ্যমে স্ত্রী-প্রহার, অনিয়ন্ত্রিত বহুবিবাহ, তাৎক্ষনিক তালাক ইত্যাদি অনাচার এবং বৈষম্যমূলক কর্মকান্ড চলে আসছে বহুদিন ধরে। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী নারী নেতৃবৃন্দ তাদের মাঠ পর্যায়ে আন্দোলন এবং বিভিন্ন কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা আলোচনা করেন বাকী অংশগ্রহণকারীদের সাথে। এসব আলোচনায় শরিয়ার নামে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ফতোয়াবাজীর ব্যপারটিই বারবার উঠে আসে। বক্তাদের মধ্যে ড. আসগর আলী ইঞ্জিনিয়ার এবং কানাডীয় মুসলিম কংগ্রেসের হাসান মাহমুদ তুলে ধরেন কিভাবে কোরাণের মূল শিক্ষাকে লংঘন করে কিছু কিছু শরিয়া আইন কিভাবে নারী নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হতে পারে এবং হয়ে থাকে। সম্মেলনের অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন কুতুব কিদোয়াই, মওলানা শোয়েব কুট্টি, মুফতি ইনামুল্লাহ খান এবং সর্বভারতীয় মুসলিম পারসোন্যাল ল’ বোর্ডের সদস্য ব্যারিষ্টার নিলুফার আক্তার। বক্তারা শরিয়াকেন্দ্রিক এসব অনৈসলামিক আইন দ্বারা নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ক্যানাডিয়ান মুসলিম কংগ্রেসের শরিয়া আইন বিষয়ক পরিচালক ক্যানাডা-প্রবাসী বাংলাদেশী হাসান মাহমুদ (যিনি ‘ফতেমোল্লা’ ছদ্মনামে সমভাবে পরিচিত) রচিত শরিয়া-তথ্যচিত্র ‘‘হিল্লা’’-র প্রদর্শন। ঢাকায় রাকিবুল হাসান প্রযোজিত ও পরিচালিত এই তথ্যচিত্রের মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, ইলোরা গওহর, টিসা, লিটু আনাম, মাসুদ আলী খান, আমিরুল হক চৌধুরী, রতন খান প্রমূখ; ক্যামেরায় আনোয়ার হোসেন। ফর্মের দিক থেকে তথ্যচিত্রটিকে ডকুমেন্টারী ও চলচ্চিত্রের রাখীবন্ধন বলা যায় কারণ এতে সাধারণ চলচ্চিত্রের কাঠামোতেই পৃষ্ঠা ও আইন নম্বর তুলে ধরে মূল শরিয়া কেতাব, শারিয়া আইন, ইসলামি জুরিসপ্রুডেন্স, সহি বুখারি এবং অন্যান্য হাদিস ও কোরাণের আয়াত উদ্ধৃত করে দেখানো হয়েছে কিভাবে তাৎক্ষণিক তালাকের শরিয়া আইন কোরাণের নির্দেশকেই আসলে লংঘন করে। সাবটাইটেল সংযুক্ত তথ্যচিত্রটির শেষে হাসান মাহমুদ উপস্থিত দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। গণসচেতনতা সৃষ্টিতে তথ্যচিত্রটির উপযোগীতা এবং এর সম্ভাবনা উপলব্ধি করে আয়োজক সংগঠন ইতোমধ্যেই এর কপি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের নারী-সংগঠনের কাছে পৌঁছানোর আয়োজন করেছে। অনেকেই আশা করছেন জনগণের কাছে তথাকথিত শরিয়া আইনের সামাজিকভাবে ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে প্রয়োজনীয় সচেতনতা সৃষ্টিতে এ ধরণের তথ্যচিত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
[মুসলিম কানাডিয়ান কংগ্রেসের প্রেস রিলিজ থেকে পূনঃলিখিত]