ইদানীং দেশের একজন বড় আইনজীবী প্রায়শই বলেন, চলমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযান সফল করতে এবং সমাজকে দুর্নীতির রাহুমুক্ত করতে তিনি প্রয়োজনে জীবন দেবেন। জীবন দেয়া সহজ কাজ নয়। জলপাই-আশ্রিত কেউ জীবন দেয় না। ফলে, এটা তাঁর কথার কথা। মানে বাজে কথা। ইদানীং তিনি আরো একটি কাজ প্রায়ই করেন। বেশ রেগে যান, ধমক-ধামক দেন, চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন বক্তৃতা-সভায়। বলেন, “যথেষ্ট হয়েছে — আসুন, এই সরকারের সাথে একযোগে কাজ করি।” তিনি বলেন, “এ সরকারের কোনো মেয়াদ নেই। ইলেকশন না হলে তার দায়ভার নেই।” প্রয়োজনে তিনি সাংবিধানিক ব্যাখ্যা দেবেন। কারণ, জনগণ সকল ক্ষমতার মালিক হলেও সংবিধানের মালিক হতে পারেনি। আজ অবধি নয়। এটার মালিক তিনি। এটা বোঝেন কেবল তিনি এবং আরো কিছু স্বঘোষিত সংবিধান বিশেষজ্ঞ। আর কিছু চাটুকার এঁদের মহান করে তোলেন, প্রতিনিয়ত।
সুপ্রীম কোর্ট সংবিধানের অভিভাবক। এতদিন এটাই জানতাম। কিন্তু বর্তমান সরকারের মেয়াদ প্রশ্নে, স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নে, দুদক-এর কার্যক্রম প্রশ্নে এবং আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ আইনগত প্রশ্নে সুপ্রীমকোর্টের মতামত নেয়ার বদলে বড় আইনজীবীর মতামত চাওয়া হচ্ছে। তিনি বিধান দিয়ে চলেছেন, শাস্ত্র বিচার করে। তাঁর এই বিধান যেন ইতিহাসের অমোঘ নিয়ম। রাষ্ট্রীয় প্রচার চালানো হচ্ছে এভাবেই। সন্তানের করুণ পরিণতি দেখছেন অভিভাভক, অসহায়-স্বাধীন চোখে!
অনেক আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালিকে সতর্ক করেছিলেন — শাস্ত্রবেত্তা এই ব্রাহ্মণকুল অনেক রকম বিধান দিয়ে থাকেন, দক্ষিণার জোরে। কোত্থেকে দক্ষিণা আসছে, জানতে চাই, মনে সন্দেহ বাড়ছে। এবং তা জোরালো হচ্ছে। মানুষের ধনসম্পদ যারা লুণ্ঠন করে তারা তস্কর। সংবিধান লংঘন করে দেশ যারা শাসন করে তারা ডাকাত। সবচেয়ে বড় দুর্বৃত্ত। একটা জাতির সম্মিলিত ইচ্ছার দলিল সংবিধান। এই দলিলের তোয়াক্কা না করে দেশ চালানো শুধু দুর্নীতিই নয়, দেশদ্রোহিতাও বটে। এই দেশদ্রোহীদের সাথে একই ছাতার তলে বসে দুর্নীতি নির্মূলের ডাক দেয়া এবং জীবন বলিদান করার ঘোষণা দেয়া জাতির সাথে প্রতারণার শামিল। ১৬৬ জনকে ক্রস ফায়ার করে, আদিবাসী হত্যা করে, তাদের জীবন বিষিয়ে তুলে, সাংবাদিক নির্যাতন করে, শিক্ষকদের অপমান করে, জনগণের মৌলিক মানবিক অধিকার বছরের পর বছর শিকেয় তুলে রেখে, শ্রমিক অসন্তোষ ও মূল্য সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিয়ে জীবনের সর্বক্ষেত্রে চূড়ান্ত ধস নামানোর আয়োজন যারা আজ করছে — তারা দেশদ্রোহী, সন্ত্রাসী, বর্বর। এদের সহযোগী শাস্ত্রবিশারদগণ। এখনও সম্মান দিতে চাই, যেমনটা সবসময় দিয়েছি। জাতিকে বিভ্রান্ত করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। নইলে ঘৃণা করার দুঃসাহস দেখাব।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১৩ comments
রেজাউল করিম সুমন - ২৭ জুন ২০০৮ (১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ)
কেবল ঘৃণা দিয়ে বুদ্ধিজীবিতার এই পরাভব আর দেশ ও জাতির এই নিরুদ্দেশ যাত্রা ঠেকানো যাবে না…
মাসুদ করিম - ১০ জুলাই ২০০৮ (৩:০০ পূর্বাহ্ণ)
বাংলাদেশে লুটেরাদের সবচেয়ে বড় সহায়ক শক্তি সুশীলকান্তরা, যেমনি বাংলাদেশে জঙ্গীদের সবচেয়ে বড় সহায়ক শক্তি মৌলবাদী প্রতিষ্ঠিত মাওলানারা। হ্যাঁ এদেরকে ঘৃণা করাই উচিত, কিন্তু একে কী দুঃসাহস বলা যায়।
মাসুদ করিম - ৪ জানুয়ারি ২০১২ (২:১০ অপরাহ্ণ)
আজকের সমকালে রাহাত খানের কলামে কামাল হোসেন নিয়ে কিছু কথা এখানে উদ্ধৃত করে রাখা প্রয়োজনীয় মনে হল।
লিন্ক এখানে।
মাসুদ করিম - ১৮ মে ২০১৭ (৯:১৯ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৫ নভেম্বর ২০১৮ (১০:০৭ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১৭ নভেম্বর ২০১৮ (৮:০৬ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ (৬:১৬ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ (৯:১৭ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ (১০:৫৪ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ (২:২২ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ (৫:৪৬ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ (১০:৫০ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ (১০:৪০ পূর্বাহ্ণ)