যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পর্কে সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যবহুল লেখা লিখেছেন বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী। প্রাসঙ্গিক মনে হওয়াতে প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত লেখাটি সকলের জন্যে হুবহু তুলে দিচ্ছি – অবিশ্রুত।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার: কেন, কোথায় ও কীভাবে?
মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী
১৯৬৯ সালের ২৫ থেকে ২৮ মার্চ মস্কো শহরে চার দিনব্যাপী একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আলোচ্য বিষয় ছিল জার্মানির নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সালতক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়। যুদ্ধ শুরু করেছিল জার্মানি অযথা ফ্যাসিবাদী মানসিকতার উন্মাদনায় এবং সে দেশের নাৎসি বাহিনী সব রকমের যুদ্ধাপরাধ করেছিল। ওই সম্মেলনে রাশিয়াসহ বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, জার্মান প্রজাতন্ত্র, পোল্যান্ড, রুমানিয়া, চেকো োভাকিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, গ্রিস, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে ও সুইডেনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
আলোচনা শেষে যে যুক্ত ঘোষণা গৃহীত হয় তার সংক্ষিপ্ত অনূদিত উদ্ধৃতি এই : ‘‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জার্মান ফ্যাসিবাদী ও সমরবাদীরা শান্তি ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছিল তা স্মরণে রেখে, যাঁরা ফ্যাসিবাদীদের অত্যাচার থেকে জনগণকে মুক্ত করার জন্য জীবন দিয়েছেন তাঁদের স্মরণে এনে, …এটা লক্ষ্যণীয় যে, জার্মান প্রজাতন্ত্র ইতিমধ্যে নাৎসী-যুদ্ধাপরাধীদেরকে শাস্তি দিয়েছে, অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার এক শতাব্দীর চতুর্থাংশ পার হলেও পশ্চিম জার্মানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেনি বরং ওই যুদ্ধাপরাধীদের অনেকেই সেখানে সরকারে, প্রশাসনে, সংসদে, অর্থনৈতিক সংস্থায় এবং তথ্য ও শিক্ষাকেন্দ্রে গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল আছে। …আমরা পশ্চিম জার্মানির গণতান্ত্রিক দল ও ব্যক্তিবর্গকে আহ্বান জানাচ্ছি যেন কোনো যুদ্ধাপরাধী শাস্তি থেকে নিস্তার না পায়। তেমন কার্যক্রম জরুরি নাৎসীদের হাতে অত্যাচারিত ও নিহত লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিদের স্মরণে রাখার উদ্দেশ্যে এবং জরুরি শান্তিময় ভবিষ্যতের নিমিত্তে। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে জার্মানি দ্বিখণ্ডিত হয়। পূর্ব অংশে জার্মানি প্রজাতন্ত্র এবং পশ্চিম অংশে পশ্চিম জার্মানি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
প্রিয় পাঠক-পাঠিকা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কেন হবে প্রশ্নটিকে যাঁরা নেতিবাচক করার চেষ্টা করছেন তাঁদের জবাবে উপরিউক্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবটিই যথেষ্ট মনে করছি।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাগুলো কী ছিল? অতি সংক্ষেপে বলতে, সে চেতনায় ছিল একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের নকশা। আগে বোধে আসেনি যে সে নকশাটি কখনই কার্যকর করা যাবে না, যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা ও দণ্ড দেওয়া না যায়। এবারের নির্বাচনে জনগণ যুদ্ধাপরাধীদের প্রত্যাখ্যান করে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক রায় দিয়েছেন। তাই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছাড়িয়েও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজটি আরও জোরদার হয়ে গণদাবি হয়েছে। এখন বিচারের কাজটি কেবল সময়ের ব্যাপার, যেহেতু জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতির প্রস্তাব পাস হয়েছে যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে।
দুই.
প্রিয় পাঠক-পাঠিকা, ১৯৬৯ সালে অনুষ্ঠিত উপরিউক্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের আদৌ কোনো প্রস্তাব উত্থাপিত হয়নি। কারণ তখন জার্মানির মাঝখানে প্রবাহিত রাইন নদী দিয়ে দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর ধরে অনেক জল গড়িয়ে গেছে এবং সর্বসম্মত যে প্রস্তাবটি পাস হয়েছে তার সারমর্ম, পশ্চিম জার্মানি সরকারকেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে এবং সেটা দ্রুত করা জরুরি এই জন্য যে, দেশের প্রশাসনে যুদ্ধাপরাধীরা খুঁটা গেড়ে আছে। প্রস্তাবটিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, জার্মানি প্রজাতন্ত্র ইতিমধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজটি শেষ করে ফেলেছে। অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে উভয় জার্মানিতেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্দেশে ইতিপূর্বে আইন প্রণীত হয়েছিল। বাংলাদেশেও জাতীয় সংসদ কর্তৃক আন্তর্জাতিক অপরাধসমূহ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ (অ্যাক্ট নং ১৯/১৯৭৩) যথাসময়ে প্রণীত হয়েছে এবং সেটা ১৯৭৩ সালের ২০ জুলাই থেকে আজতক বলবৎ আছে। শুধু তাই-ই নয়, এই আইনটি বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের ৩ দফা দ্বারা হেফাজত আছে এবং ৪৭ ক অনুচ্ছেদের ২ দফায় বলা আছে যে কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে হেফাজতকৃত আইনটি প্রযোজ্য হলে সুপ্রিম কোর্টে কোনো আবেদন করার অধিকার সে ব্যক্তির থাকবে না।
১৯৭৩ সালের উপরিউক্ত ১৯ নং আইনটির ট্রাইব্যুনাল উপ-শিরোনামের ৬ ধারায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করার নিয়মগুলো বলা আছে। একজন চেয়ারম্যানসহ অনধিক দুইজন ও সর্বাধিক চারজন সদস্য সমন্বয়ে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠিত হবে। উল্লেখ্য, সরকার এক কিংবা একাধিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারে। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও সদস্য হওয়ার যোগ্যতা এই- যিনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হওয়ার যোগ্য কিংবা যিনি ইতিপূর্বে হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ছিলেন কিংবা যিনি প্রতিরক্ষা বাহিনীর জেনারেল কোর্ট মার্শালের সদস্য হওয়ার যোগ্য। ট্রাইব্যুনালের স্থায়ী আসন ঢাকায় থাকবে; তবে ট্রাইব্যুনাল অন্য যেকোনো স্থান বা স্থানসমূহে তার অধিবেশন অনুষ্ঠিত করতে পারবে। একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন কিংবা তার চেয়ারম্যান কিংবা কোনো সদস্য সম্পর্কীয় বৈধতা বিষয়ে অভিযোগকারী কিংবা অভিযুক্ত কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবেন না।
১৯৭৩ সালের উপরিউক্ত আইনের ২১ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি টাইব্যুনাল কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত হলে তার বিরুদ্ধে তিনি ৬০ দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করতে পারবেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদের ১ দফা বলে হাইকোর্ট বিভাগের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির এখতিয়ার আপিল বিভাগের আছে এবং ওই অনুচ্ছেদের ৪ দফা বলে এই অনুচ্ছেদের বিধানসমূহ হাইকোর্ট বিভাগের প্রসঙ্গে যেমন প্রযোজ্য, অন্য কোনো টাইব্যুনালের ক্ষেত্রেও সেগুলো সে রকম প্রযোজ্য হবে। ১৯৭৩ সালের উপরিক্ত আইনে গঠিত ট্রাইব্যুনাল, প্রিয় পাঠক-পাঠিকা, আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ষষ্ঠ ভাগের প্রথম পরিচ্ছেদে বর্ণিত সুপ্রিম কোর্ট কিংবা দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে বর্ণিত অধস্তন আদালত নয় এবং তার ধরন নিজস্ব এবং সেভাবে তাকে গঠন করা হয়েছে ও তার কার্যবিধি প্রণীত হয়েছে।
তিন.
১৯৭৩ সালের উপরিউক্ত আইনের ৩ ধারায় যুদ্ধাপরাধের সংজ্ঞা বা তালিকা দেওয়া হয়েছে এবং ৮ ধারায় এই অপরাধগুলোর তদন্তের কার্যপদ্ধতি নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এর আগে ৭ ধারায় বলা হয়েছে সরকার এক কিংবা একাধিক ব্যক্তিকে ট্রাইব্যুনালের সমীপে মোকদ্দমা পরিচালনার জন্য প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দেবেন। ফৌজদারি আইনি পরিভাষায় প্রসিকিউটর ইংরেজি শব্দটি বহুল প্রচলিত যার আভিধানিক অর্থ যিনি কোনো ব্যক্তিকে ফৌজদারিতে সোপর্দ করেন। ৮ ধারার বলা হয়েছে প্রসিকিউটর একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করবেন। তিনি ঘটনা ও পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচিত বলে অনুমিত ব্যক্তির মৌখিকভাবে সাক্ষ্য নেবেন এবং সে ব্যক্তির বিবৃতি লিপিবদ্ধ করবেন। অতঃপর আইনটির ৯ ধারা বলে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক বিচারকাজ শুরু হবে প্রসিকিউটর কর্তৃক অভিযুক্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র পেশ করার পর। তার কমপক্ষে তিন সপ্তাহ আগে সাক্ষীদের তালিকা ও তাদের লিপিবদ্ধ সাক্ষ্য এবং দালিলিক সাক্ষ্য- যদি থাকে- ট্রাইব্যুনালকে দিতে হবে।
১৯৭৩ সালের ওই আইনটির ১০ ধারায় বিচার পদ্ধতি নির্দিষ্ট করা হয়েছে। প্রথমে অভিযোগপত্র পাঠ করা হবে এবং অভিযুক্তকে ট্রাইব্যুনাল জিজ্ঞেস করবেন, তিনি দোষ স্বীকার করেন না নির্দোষ দাবি করেন। অভিযুক্ত যদি দোষ স্বীকার করেন, তবে ট্রাইব্যুনাল তা লিপিবদ্ধ করে তার সুবিবেচনায় দণ্ডাদেশ দিতে পারেন, নতুবা প্রসিকিউটর মোকদ্দমার সূচনা বক্তব্য দেবেন। অতঃপর সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে সেটা শেষ হলে অভিযোগকারীর পক্ষে ও তারপর অভিযুক্তের পক্ষে বক্তব্য পেশ করা হবে। সবশেষে ট্রাইব্যুনাল রায় দেবেন। বিচারকাজ উন্মুক্ত হবে, তবে ট্রাইবুনাল বিবেচনা করলে রুদ্ধদ্বারে হতে পারে।
ইংরেজ শাসনকালে ১৮৯৮ সালে ফৌজদারি কার্যবিধি প্রণীত হয়। অতঃপর এই সুদীর্ঘকাল যাবৎ অনেক সংশোধন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে। ইংরেজদের অধীন অনেক দেশে এই কার্যবিধি জারি করা হয়। আন্তর্জাতিকভাবে এই কার্যবিধি ন্যায়সঙ্গত হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনটিতে নির্দিষ্ট বিচারিক কার্যক্রম উপরিউক্ত ফৌজদারি কার্যবিধির অনুসরণে প্রণীত হয়েছে এই উদ্দেশে যেন ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কাজ ও রায় আন্তর্জাতিক আইন অঙ্গনে প্রশংসিত হয়। খুন, ধর্ষণ ইত্যাদি গুরুতর অপরাধের বিচার একজন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত আদালতে হয় এবং তার দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি হাইকোর্ট বিভাগে দুজন বিচারপতির সন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চে হয়। কিন্তু ন্যায়বিচার অধিকতর দৃঢ় করার উদ্দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের সংখ্যা কমপক্ষে তিনজন করা হয়েছে এবং একই উদ্দেশে ট্রাইব্যুনালের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের যে বেঞ্চ শুনবেন, তার বিচারপতিদের সংখ্যা কমপক্ষে পাঁচজন হবেন।
এতদসত্ত্বেও কেন বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদবে?
মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী : অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, আপিল বিভাগ, সুপ্রিম কোর্ট।
অবিশ্রুত
সেইসব দিন স্মরণে,- যখন কলামিস্টরা ছদ্মনামে লিখতেন; এমন নয় যে তাদের সাহসের অভাব ছিল, তারপরও তারা নামটিকে অনুক্ত রাখতেন। হতে পারে তাৎক্ষণিক ঝড়-ঝাপটার হাত থেকে বাঁচতেই তারা এরকম করতেন। আবার এ-ও হতে পারে, সাহসকেও বিনয়-ভুষণে সজ্জিত করেছিলেন তারা। আমারও খুব ইচ্ছে দেখার, নামহীন গোত্রহীন হলে মানুষ তাকে কী চোখে দেখে... কাঙালের কথা বাসী হলে কাঙালকে কি মানুষ আদৌ মনে করে!
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১ comment
অবিশ্রুত - ৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (১১:২৩ অপরাহ্ণ)
এ লেখায় দেখা যাচ্ছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কোন আইনে হবে সে ব্যাপারে সরকার কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে না পারলেও বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানির মতে, ১৯৭৩ সালের দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্টেই এ বিচার সম্ভব এবং সেটিই করা উচিত।
তিনি যখন এ মত দিচ্ছেন, তখন চারপাশে যে সব ঘটনা ঘটছে সেগুলি খেয়াল করা যাক :
প্রথমত. বাউচার বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন এবং বলে গেলেন যে যুদ্ধাপরাধী বিচারের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য দিতে প্রস্তুত। টিফার ব্যাপারে তিনি বলে গেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ নিয়ে কোনও তাড়াহুড়ো নেই। যুক্তরাষ্ট্র কেন টিফার ব্যাপারে তাড়াহুড়ো দেখাচ্ছে না কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে সমর্থন ব্যক্ত করছে, তা ভেবে দেখার বিষয়। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, এই যুক্তরাষ্ট্র জামায়াতে ইসলামীকে অর্থাৎ যুদ্ধাপরাধীদের অভয়ারণ্য-দলটিকে গণতান্ত্রিক একটি দল হিসেবে বিভিন্ন সময় সার্টিফিকেট দিয়ে এসেছে।
দ্বিতীয়ত. জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ১৯৭৩ সালের আইনটিকে চ্যালেঞ্জ করে একদল আইনজীবী রিট দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে সাত ফেব্রুয়ারির একটি সংবাদপত্রে খবর বের হয়েছে। ওই খবরে বলা হচ্ছে,
জামায়াতে ইসলামীর নেতারা বলছেন, তারা আইনসম্মত পথেই এগুবেন। এ খবরের মধ্যে আমরা তার পূর্বাভাষ দেখতে পাচ্ছি।
তৃতীয়ত. লক্ষ্য করে দেখুন, বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় এ কথা বললেও বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী সম্প্রতি বলেছেন,
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী আরও বলছেন,
অর্থাৎ পুরো ব্যাপারটিকে মনে হচ্ছে ‘যুদ্ধাপরাধী গ্রহণযোগ্যকরণ প্রকল্পে’র অংশ, যাতে আওয়ামী লীগ সরকারও একটি অংশ (এ ব্যাপারে তাদের আইনি দুর্বল অবস্থানের অর্থ সেরকমই দাঁড়ায়)।
তৃতীয়ত. প্রশ্ন উঠতে পারে, এ ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী কী ছাড় দিচ্ছে আওয়ামী লীগকে? সেটি সম্পর্কে আমরা ধারণা পেতে পারি গত শুক্রবার ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটে ইসলামী ছাত্র শিবিরের ৩২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের উপস্থিতিতে শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর দেয়া বক্তব্য থেকে। মীর কাশেম আলী তার ভাষণে বলেছেন
এ ছাড়া দেখা যাচ্ছে এ সভায় শিবিরের সভাপতি রেজাউল করিম শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার স্থপতি হিসেবে উল্লেখ করেন।
একি কথা শুনি আজ মন্থরার মুখে!
স্মরণকালের সেরা কৌতূক আর কী হতে পারে!
আমাদের কী উচিত নয়, উল্লসিত না হয়ে যুদ্ধাপরাধী বিচার ইস্যুতে আরও সাবধানে হিসেব করে পা ফেলা?