জামাতে ইসলামী ভূত দেখছে,- সত্তরের নির্বাচনের ভূত! তাদের কাছে মনে হচ্ছে এবারের নির্বাচন হবে সত্তরের নির্বাচনের মতো, তাদের ভাষায় যা ‘একতরফা’; তাদের ভাষায়, যে-নির্বাচনে ‘আওয়ামী লীগ জোর করে ভোট আদায় করেছিল।’ এবারের নির্বাচন কেমন হবে? সত্তরের নির্বাচনটি যদি বুঝতে পারি, তা হলে সেটি বোঝা বোধকরি আরও সহজ হবে। আর তা বুঝতে হলে খানিকক্ষণের জন্যে ইতিহাসের পাশে দাঁড়াতে হবে, বিশেষ করে তাদের যারা সত্তরের নির্বাচন চোখে দেখেননি। সত্তরের নির্বাচনের সময় তৈরি হয়েছিল গণজোয়ার। জামায়াতে ইসলামীর মতো দলের কাছে সেই গণজোয়ার ব্যাপারটিকে ‘একতরফা’ মনে হওয়া খুবই স্বাভাবিক, কেননা ওই গণজোয়ারের মুখে শুধু জামায়াতে ইসলামী কেন, আরও অনেক জনপ্রিয় ও সংগঠিত রাজনৈতিক দল খড়কুটোর মতো হাবুডুবু খেতে খেতে কোনওমতে টিকেছিল। তারপরও সেইসব দলগুলির কোনওটিই সত্তরের নির্বাচনকে একতরফা মনে করে না, মনে করে না যে ওই নির্বাচনী আওয়ামী লীগ জোর করে ভোট আদায় করেছিল। এমনকি বিভিন্ন বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলিও ওই সময়ের পরিস্থিতিকে বিশ্লেষণ করে থাকেন এভাবে,Ñ ‘বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলির রাজনৈতিক নেতৃত্বজনিত ব্যর্থতার কারণে তখন জনগণের আন্দোলনের নেতৃত্ব আওয়ামী লীগের কাছে চলে যায়।’
একমাত্র ব্যতিক্রম জামায়াতে ইসলামী। এতদিন না বললেও তারা এবার বলছে, সত্তরের নির্বাচন একতরফা। তারা এবার আরও বলছে, আওয়ামী লীগ তখন জোর করে ভোট আদায় করেছিল; যদিও জামায়াতের জানা আছে, প্রকৃত সত্য কী। কিন্তু মিথ্যাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার যে কাজ তারা অবিরাম করে চলেছে, তাতে সত্তরের নির্বাচনকে একতরফা হিসেবে বর্ণনা করা না গেলে একাত্তরে তাদের ভূমিকাকে জায়েজ করা সম্ভব নয়। ইতিহাসের সব সত্যকেই তারা অস্বীকার করতে সিদ্ধহস্ত। তারা মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতার ও পাকবাহিনীকে সহযোগিতার দায়দায়িত্ব অস্বীকার করেছে। তারা শান্তিবাহিনী, আলবদর আর আলশামস বাহিনী গড়ে তোলার কথা অস্বীকার করেছে। তারা বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়দায়িত্ব অস্বীকার করেছে। কোনও ভুল স্বীকারের মধ্যেও যেতে রাজি নয় তারা। এবং এখন তারা সত্তরের নির্বাচনকেও অস্বীকার করছে। মাথার ওপর গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকার পরও বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নির্বিঘেœ যিনি সভা করতে পারেন, সেই আলী আহসান মুজাহিদ, আরও একটু এগিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন,Ñ ‘একাত্তরে আমাদের শক্তি যদি এখনকার মতো হতো, তা হলে ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতো।’
ভাবার্থে বলা এই কথার মানে হলো, একাত্তরে সত্যিই শক্তি ছিল না তাদের, সেটি স্বীকার করে নেয়া; প্রকারান্তরে স্বীকার করে নেয়া, একাত্তরে জনতার শক্তির উদ্বোধন ঘটেছিল আর জনতার সেই অপরিমেয় শক্তির কাছে প্রচ- হিংস্রতা থাকার পরও পরাস্ত হয়েছিল তারা। কিন্ত অবস্থা যদি হতো ঠিক এখনকার মতো, তা হলে জনগণ সেই ইতিহাস রচনা করতে পারত না, আওয়ামী লীগও পারতো না জনগণকে নেতৃত্ব দিতে। মুজাহিদের পক্ষে এরকম কথা বলা খুবই সম্ভব,Ñ তিনি গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়েও ফখরুদ্দিনের সঙ্গে মিটিং করতে পারেন; তার পক্ষে এটা ভাবা তাই খুবই সম্ভব যে শক্তি তার অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু তিনি হয়তো ভুলে গেছেন, একাত্তরেও তাদের ঠিক একইরকম শক্তি ছিল, ঠিক একইভাবে তারা ইয়াহিয়া খান, টিক্কা খান আর জুলফিকার আলী ভুট্টোদের সঙ্গে দেন-দরবার করতে পারতেন। কিন্তু হায়, তারপরও তারা ধোপে টিকতে পারেন নি।
জামায়াতের স্মৃতি খুবই স্বল্পস্থায়ী, তাই তাদের মনে নেই সেই কথা। সিইসি কেন সত্তরের নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন, জামায়াতে ইসলামীর কিংবা বিএনপি-র নেতারা তা ভালোই বোঝেন। সত্তরের নির্বাচন হয়েছিল সামরিক শাসনের আওতায়; এবার জরুরী আইনের আওতার নির্বাচনটিকে জায়েজ করার বাসনা থেকেই ও প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন তারা। কিন্তু সত্তরের নির্বাচনী পরিপ্রেক্ষিত আর এখনকার নির্বাচনী পরিপ্রেক্ষিত তো এক নয়। সত্তরে জনগণ সংঘবদ্ধ ছিল, ঐক্যবদ্ধ ছিল; আর এখন শক্তিশালী অতিকায় রাষ্ট্রীয় কাঠামো,- যে রাষ্ট্রীয় কাঠামো এতই শক্তিশালী যে এখন তার আর স্বীকার করার দরকার নেই, কারা তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল একসময়। বরং এখন এ রাষ্ট্র হাত বাড়িয়ে দিতেও দ্বিধান্বিত নয় সেই শক্তির দিকে, যারা তার প্রতিষ্ঠায় একসময় ঘোরতর বিরোধিতা করেছিল।
এবং যে-কেউ জানেন, সেই শক্তির নাম জামায়াতে ইসলামী। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর যদি এরকম ধারণা হয়েই থাকে যে, তারা অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, তা হলে তা সত্যিই ভুল হবে,Ñ পলাতক আসামী মুজাহিদ ফখরুদ্দিনের সামনে বসে মিটিং করেছে সত্যি, একদল ধর্মোন্মাদ মানুষ বিমানবন্দরের সামনে থেকে ভাস্কর্য ভেঙে ফেলেছে সত্যি, ছাত্রশিবিরের ধর্মোন্মাদরা নাট্যকর্মীদের আগুনে পুড়িয়ে মারার হুংকার ছাড়ছে সত্যি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মীদের হত্যার জন্যে মৌলবাদীদের পত্রিকায় পুরস্কার ঘোষণা করা হচ্ছে এটাও সত্যি,Ñ কিন্তু তার মানে এই নয় বাংলাদেশ নামের দেশ থেকে সমস্ত প্রগতিশীলতা, সমস্ত ন্যায়পরায়ণতা, সমস্ত প্রতিবাদমনস্কতা হারিয়ে গেছে। আরব দেশে যেমন আইয়েমি জাহেলিয়াতের যুগ থাকার পরও, কন্যাশিশুহত্যার রেওয়াজ থাকার পরও বিধবা নারী খাদিজা মাথা উঁচু করে নিজের অর্থনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করে নারী-পুরুষ সবার জন্যে দৃষ্টান্ত তৈরি করে গেছেন, অবিভক্ত ভারতবর্ষে যেমন নবাব সিরাজউদ্দৌলার হয়ে হাসতে হাসতে জীবন দিয়ে সেনাপতি মোহনলাল জীবন দিয়ে আরেক সেনাপতি মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতাকে উপহাস করে দেশপ্রেম ও অসাম্প্রদায়িকতার উদাহরণ রেখে গেছেন, বাংলাদেশেও সেরকম দৃষ্টান্ত স্থাপনের মতো মানুষ বর্তমানে ও ভবিষ্যতেও নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে, যারা কূপম-ুকতা, পশ্চাৎপদতা আর অন্যায়কে পায়ে দলে ঠিকই মাথা উঁচু করবেন।
সত্তরের নির্বাচনের ভূত দেখার অনেক আগে থেকেই অবশ্য জামায়াতে ইসলামী আর একটি ভূত দেখে আসছে। সে ভূতের নাম ভারত। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্যে ভারত সবচেয়ে বড় হুমকি,- এরকম একটি ধারণা প্রতিষ্ঠার জন্যে তারা তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে বহু আগে থেকেই। জামায়াতে ইসলামী একসময় অবিভক্ত ভারত টিকিয়ে রাখার জন্যে পাকিস্তান আন্দোলনের বিরোধিতা করে ফতোয়া দিয়েছিল। কিন্তু সেই পাকিস্তানই পরে মওদুদী ও জামায়াতে ইসলামীর চোখের মণি হয়ে ওঠে আর ভারতকে তারা আমাদের কাছে করে তোলে রীতিমতো আতংককর এক শক্তি।
কিন্তু জামায়াতে ইসলামীকে হতাশ করে এখন বাংলাদেশের ভৌগলিক সার্বভৌমত্বের প্রতি অনেক হুমকি হয়ে উঠেছে স্বৈরতান্ত্রিক একনায়কতান্ত্রিক আরেকটি দেশ মিয়ানমার ওরফে বার্মা। ভারতের মতো মিয়ানমারের সঙ্গে অত দীর্ঘ সীমান্ত নেই বাংলাদেশের; কিন্তু খুব সামান্য ওইটুক সীমান্ত নিয়েও অন্তহীন সমস্যা তৈরি করে চলেছে তারা বাংলাদেশের সাথে। বাংলাদেশের মতো ভৌগলিকভাবে ছোট ও অর্থনৈতিকভাবে অবিকশিত দেশকে সামাল দিতে হচ্ছে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু সমস্যা। আর এই ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বড়সড় নেতিবাচক ভূমিকা আছে। উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের মধ্যে তারা তাদের সংগঠন গড়ে তুলছে এবং তাদের উদ্বুদ্ধ করছে বাংলাদেশেই থেকে যেতে!
সত্যি কথা বলতে গেলে, এই মিয়ানমারের সঙ্গে এখন নীরব এক যুদ্ধই শুরু হয়েছে বাংলাদেশের। বাংলাদেশের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার বেশ ফলাও করে ঘোষণা করেছিলেন, মিয়ানমারের কাছ থেকে কৃষিজমি লিজ নিয়ে তারা কৃষিকাজের পরিকল্পনা করতে চলেছেন। কিন্তু মিয়ানমারের তরফ থেকে সে ব্যাপারে সম্ভবত সাড়া পাওয়া যায়নি। ১১ জানুয়ারি ২০০৬-এর পর থেকে সামরিকজান্তা শাসিত মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে অতি উৎসাহ দেখিয়ে আসছিলেন তার শেষ ফল এই যে, সেন্টমার্টিনস দ্বীপ থেকে ৬০ নটিকেল মাইল দূরে বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমারের যুদ্ধজাহাজ এসেছে। মিয়ানমারের নিজস্ব সমুদ্রএলাকার মধ্যে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্যে তাদের ১১টি ব্লক রয়েছে। কিন্তু সেই সীমানা পেরিয়ে তারা হানা দিয়েছে বাংলাদেশের সমুদ্রএলাকাতে। এর আগে থেকেই তারা বলে আসছিল, ওই এলাকা তাদের। বাংলাদেশ তাতে জোর আপত্তি করায় ওই এলাকাকে তারা পরিণত করে বিতর্কিত ও অমীমাংসিত এলাকায়! কথা ছিল, আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা হবে। কিন্তু তার আগেই ছোবল হেনেছে মিয়ানমার। মিয়ানমারের সামরিক সরকার তাদের নৌবাহিনীর পাহারায় সেখানে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কাজ করতে নিয়ে এসেছে কোরিয়ান ট্রামস্ ওসাম লিমিটেড কোম্পানিকে।
বাংলাদেশ তাৎক্ষণিকভাবেই এর প্রতিবাদ করেছে। বঙ্গোসাগরে মাত্র দুই নটিকেল মাইলের মধ্যে বাংলাদেশের একটি ফ্রিগেটসহ ৫টি এবং মায়ানমারের ৩টি রণতরী মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে।
বাংলাদেশের জন্যে এই ঘটনা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ,Ñ আর তা কেবল ভৌগলিক দিক থেকে নয়, আন্তর্জাতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষার দিক থেকেও।
প্রথমত: বঙ্গোপসাগরে ভারতের সঙ্গেও বাংলাদেশের বিরোধপূর্ণ জলসীমানা রয়েছে। ওই সমস্ত এলাকায়ও তেল-গ্যাস মজুদ থাকার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকায় ভারত তাদের অহেতুক দাবি ছাড়তে চাইছে না। মিয়ানমারের সঙ্গে এই যুদ্ধউত্তেজনা ও জলসীমানার বিরোধ যদি বাংলাদেশ দ্রুত সম্মানজনকভাবে নিষ্পন্ন করতে না পারে এবং ভারতও যদি মিয়ানমারের পথ বেছে নেয় তা হলে এসব সামাল দেয়া কী সামরিক কী কূটনৈতিক কোনওভাবেই সামাল দেয়া বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব হবে না।
দ্বিতীয়ত: মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রধান অর্থনৈতিক এবং সেই বিবেচনায় সম্ভাব্য প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীন,Ñ যাদের কোনও নিজস্ব তেলখনি নেই এবং কোনও তেল কোম্পানীর মালিকানাও নেইÑ ২০০৫ সালে একটি তেল কোম্পানীর মালিকানা কেনার জন্যে সর্বোচ্চ টেন্ডার দেয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র আপত্তির মুখে তাদের তা প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছে। মিয়ানমারের সামরিক শাসনকে চীন বরাবরই পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে এবং তেলসম্পৃক্ত স্বার্থ থাকায় এ ক্ষেত্রে চীন মিয়ানমারকে কূটনৈতিক নানা প্রক্রিয়ায় সমর্থন করবে, এতে কোনও সন্দেহ নেই। এসবের গড় ফল দাঁড়াবে বঙ্গোপসাগরের জলসীমানা বিরোধসংক্রান্ত ঘটনার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে চীন-মিয়ানমার ও ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের রণক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে। এইসব সমস্যা উত্তরণের ক্ষেত্রে হয়তো বাংলাদেশিদের সামান্য হলেও আশাবাদ থাকত,Ñ যদি তাদের একটি দেশপ্রেমিক সরকার থাকত। কিন্তু যে-দেশে এমন একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার রয়েছে,Ñ যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশটির তেল-গ্যাস-কয়লা-খনিজসম্পদকে বিদেশি কোম্পানিগুলোর কাছে ইজারা দিতে সমর্থ একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্যে আপ্রাণ কাজ করে যাচ্ছে সে-দেশের সরকারের কাছ থেকে আর কীইবা প্রত্যাশা করার থাকে? কী-ইবা প্রত্যাশা করার থাকে সেই দেশের সেনাবাহিনীর কাছে, যে-সেনাবাহিনীই ডেকে নিয়ে এসেছে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে? এটি এখন যে-কারও কাছেই সুস্পষ্ট, বাংলাদেশের মতো দেশটিকে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বাইরে এমন এক অর্থনৈতিক ব্যক্তিত্বের ইমেজ গড়তে, দেশের জনগণ সব কিছু ভুলে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যার মুখের দিকে চেয়ে থাকবে এবং সেই অর্থনৈতিক ব্যক্তিত্বের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার ড্রেন দিয়ে সমুদ্র বন্দর থেকে শুরু করে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ তুলে দেয়া যাবে কর্পোরেট তত্ত্বাবধানে। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের এই সংকট নিয়ে জামায়াতে ইসলামী অবশ্য এখনও মুখ খোলেনি, তবে খালেদা জিয়া যেহেতু তার চট্টগ্রামের জনসভায় এ সম্পর্কে মুখ খুলেছেন, সেহেতু আশা করা যায়, মুজাহিদও মুখ খুলবেন। কিন্তু এইসব মুখ খোলাখুলির সবটাই হবে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে। তারা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে একটুও ছাড় দেবেন না, দরকার হলে বঙ্গোপসাগরে তলিয়ে যাবেন, তবু সত্তরের নির্বাচনের ভূত দেখবেন এবং হাসিমুখে বলবেন, দেশপ্রেমিক ছিলাম বলেই ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলাম। বলবেন, সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা যে আমরাই ছিলাম, সেটি এখন দেশবাসী বুঝতে পারবে।
তবে কী রাজনৈতিক দল, কী সেনাবাহিনী, কী জনগণ,Ñ সকলের সামনেই এখন এক সময় এসেছে একে অপরকে চিনে নেয়ার। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এবং সেনা কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে গঠিত রাজনৈতিক দলগুলিসব সময় প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানের আগে দেশপ্রেমিক শব্দটি ব্যবহার করতে ভালোবাসেন। এবার বাংলাদেশের জনগণের সামনে সময় এসেছে তাদের সেই দেশপ্রেম কতটুকু, তা হাতেনাতে বুঝে নেয়ার। এটি ঠিক, যুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন তাতে জয়ী হওয়ার দায়িত্ব কেবল সেই দেশের সেনাবাহিনীর ওপর বর্তায় না, বরং জনগণের ওপরেও বর্তায়। কিন্তু এটিও ঠিক, রাষ্ট্রের কাঠামো কেমন হবে তা নিয়ে কোনও রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাহিনী আর জনগণের আকাক্সক্ষা যদি পর¯রবিরোধী হয় তা হলে জনগণকে বিকল্পই চিন্তা করতে হয়। কেউ ভূত দেখছে, কেউ আবার তেল দেখছে,Ñ কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের আগে এই হিসাবটুকু ঠিকঠাক বুঝে নেয়া দরকার,Ñ তা হলেই কেবল তাদের পক্ষে সম্ভব ভূতের ওই ভয় তাড়ানো, সম্ভব দেশের তেল দেশেই রাখা।
০৯ নভেম্বর ২০০৮।
সেইসব দিন স্মরণে,- যখন কলামিস্টরা ছদ্মনামে লিখতেন; এমন নয় যে তাদের সাহসের অভাব ছিল, তারপরও তারা নামটিকে অনুক্ত রাখতেন। হতে পারে তাৎক্ষণিক ঝড়-ঝাপটার হাত থেকে বাঁচতেই তারা এরকম করতেন। আবার এ-ও হতে পারে, সাহসকেও বিনয়-ভুষণে সজ্জিত করেছিলেন তারা। আমারও খুব ইচ্ছে দেখার, নামহীন গোত্রহীন হলে মানুষ তাকে কী চোখে দেখে… কাঙালের কথা বাসী হলে কাঙালকে কি মানুষ আদৌ মনে করে!