হুগো শ্যাভেজের নাম শুনলে আর কেউ চমকে না উঠুন, জর্জ বুশ অবশ্যই চমকে ওঠেন। এমনকি, বলে রাখা ভালো, এখন যে বারাক ওবামার গায়ের রঙের সঙ্গে আমাদের গায়ের রঙের একটুআধটু মিল আছে বলে আমরা বড়ই প্রীতবোধ করি, ওই বারাক ওবামাও অস্বস্তিতে পড়ে যান হুগো শ্যাভেজের নাম শুনলে। এরকম যেসব মানুষরা বুশ-ওবামাদের জন্যে রীতিমতো অস্বস্তিকর, তাদের তালিকায় আরও একজনের নাম এ সপ্তাহে আরও ভালো করে যুক্ত হয়ে গেল। তিনি ইভো মোরালেস, যিনি এখন বলিভিয়ার রাষ্ট্রপতি। এইসব অস্বস্তির কারণ আছে।
সরকার বদলায় কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি পাল্টায় না। যেমন, ইরাক যুদ্ধ নিয়ে ডেমোক্র্যাটরা বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় যাই
বলুন না কেন, ক্ষমতায় গেলে রিপাবলিকানদের পররাষ্ট্র নীতিই অনুসরণ করবেন তাদের নতুন রাষ্ট্রপতি। যুক্তরাষ্ট্রের কল্যাণে ‘রোডম্যাপ’ নামক একটি শব্দ অনেকদিন হলো আমাদের ঘাড়ে চেপে বসেছে। এই রোডম্যাপ প্রথমদিকে নাযিল হয় প্যালেস্টাইনে। তারপর এখন পৃথিবীর দিকে দিকে অবতীর্ণ হতে শুরু করেছে। পৃথিবীর প্রতিটি দেশ আর মহাদেশ নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব রোডম্যাপ রয়েছে। কিন্তু মুশকিল হলো, আমেরিকা মহাদেশেরই ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো ক্রমশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাববলয়ের বাইরে চলে যাচ্ছে। কিউবার কাহিনী তো সর্বজনবিদিত এবং অনেক অতীতের ব্যাপার, কয়েক বছর আগে ভেনিজুয়েলায় হুগো শ্যাভেজের সরকার আসার পর রীতিমতো বিপত্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ে গেছে তারা। হুগো শ্যাভেজ কেবল রিপাবলিকানের কাছেই নয়, ডেমোক্র্যাটদের কাছেও মহাশত্রু।
কিউবা, কিউবার পর ভেনিজুয়েলা, তারপর হন্ডুরাস, এখন সে দলে যুক্ত হয়েছে বলিভিয়া। কেবল এ-ক’টি দেশই নয়, এক অর্থে ল্যাটিন আমেরিকার প্রতিটি দেশই হয়ে উঠছে সমাজতান্ত্রিক বলয়ের দুর্ভেদ্য দুর্গ। দীর্ঘদিন এ দেশগুলিকে যুক্তরাষ্ট্র নানাভাবে নিজেদের রাজনৈতিক বলয়ে রাখতে বাধ্য করেছে। অধুনালুপ্ত সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধের সময় এসব দেশ ছিল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রাজনৈতিক খেলার পুতুল। ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলি গত ২০০ বছর ধরে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পরিগণিত হলেও যুক্তরাষ্ট্র তাদের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে নিজেদের থাবা বিস্তার করে রেখেছিল। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র আসলে তাদের ১৮২৩ সালের মনরো ডকট্রিনকেই অনুসরণ করছিল, যে ডকট্রিন অনুযায়ী ওই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে তাদের হস্তক্ষেপের অধিকার রয়েছে বলে তারা চিন্তা করে থাকে। কিন্তু এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। এই মুহূর্তে ল্যাটিন আমেরিকার বেশির ভাগ দেশই সমাজতান্ত্রিক ভাবাদর্শে পরিচালিত হচ্ছে। কিউবা, ভেনিজুয়েলা, বলিভিয়া, নিকারাগুয়া ও ইকুয়েডর তো স্পষ্টতই কট্টর বাম দেশ; আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল ও চিলিও প্রায় বাম অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব করছে সেখানে কলম্বিয়া আর মেক্সিকো এবং অংশত কোস্টারিকা।
বলিভিয়ার রাষ্ট্রপতি সমাজতন্ত্রী ইভো মোরালেস। যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ভেনিজুয়েলায় বিরোধী দলের আন্দোলনকে পৃষ্ঠপোষকতা করার মাধ্যমে হুগো শ্যাভেজকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের চেষ্টা চালিয়েছিল, একইভাবে উৎখাতের চেষ্টা চালাচ্ছে ইভো মোরালেসকে। এই ইভো মোরালেস কয়েকদিন আগে সারা বিশ্বে হইচই ফেলেছেন বলিভিয়া থেকে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করার মধ্যে দিয়ে। অবশ্য যু্ধসঢ়;ক্তরাষ্ট্রও তার ক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা করেছে, ওই খবর শুনে তারাও বহিষ্কার করেছে বলিভিয়ার রাষ্ট্রদূতকে। অন্যদিকে বলিভিয়ার পদক্ষেপের প্রতি সম্মান ও সংহতি দেখিয়ে হুগো শ্যাভেজ বহিষ্কার করেছে ভেনিজুয়েলা থেকে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে। অন্যদিকে হন্ডুরাসে নতুন নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র গ্রহণে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে। ১৩ সেপ্টেম্বর নিকারাগুয়ার রাষ্ট্রপতি দানিয়েল ওর্তেগা ঘোষণা করেছেন, বলিভিয়ার এই সিদ্ধান্তের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করার লক্ষ্যে তিনি বুশের সঙ্গে সাক্ষাতের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করবেন। ওর্তেগাও মন্তব্য করেছেন, বুশ বলিভিয়ায় মোরালেসকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে। বলিভিয়া তাদের দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের বহিষ্কারের ঘটনাকে বর্ণনা করেছে আদিবাসী সংগ্রামের ফসল হিসেবে। ১৫০০ শতাব্দীর দিকে বলিভিয়া পরিণত হয় স্পেনের উপনিবেশে। তারপর আর কখনও আদিবাসীরা বলিভিয়া পরিচালনার সুযোগ বা ক্ষমতা কোনওটাই পায়নি। ইভো মোরালেসই সেখানকার গত ৫০০ বছরের ইতিহাসে প্রথম আদিবাসী নেতা, যিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। ১৮ ডিসেম্বর ২০০৫ সালে তিনি যখন ৫২ শতাংশ ভোট পেয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন, তখন বিস্মিত হয়েছিল পশ্চিমা বিশ্বসহ সকল পুঁজিবাদী নীতিনির্ধারকরা।
সবখানেই, যেমন বাংলাদেশেও, মিডিয়াগুলি তাড়িত হয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদে,- তাই গত কয়েক বছরে বলিভিয়ার অনেক ঘটনাও আমাদের অজানা রয়ে গেছে। যেমন, মোরালেস নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি দেশটিতে জাতীয়করণের ধারা ফিরিয়ে আনেন। সেখানকার বড় বড় তেল ও গ্যাসসম্পদগুলি জাতীয়করণ করা হয় প্রথম ধাপেই। সামরিক বাহিনী পাঠিয়ে ৫৬টি গ্যাস ইন্সটলার সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন ইভো মোরালেস। হাইড্রোকার্বন সম্পদ জাতীয়করণের ধারায় বলিভিয়ার বিশেষ দ্বন্দ্ব তৈরি হয় বলিভিয়ায় ৯০ শতাংশ রিফাইনিং-এর ক্যাপাসিটিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাসের সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত ২৮ অক্টোবর ২০০৬-এ পেট্রোবাসের সঙ্গে বলিভিয়ার চুক্তি হয়, মুনাফার মাত্র ১৮ শতাংশ পাবে পেট্রোবাস, অন্যদিকে ৮২ শতাংশ পাবেন বলিভিয়া সরকার। সমস্ত বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে ১৮০ দিনের মধ্যে নতুন করে চুক্তি সম্পন্ন করেন ইভো মোরালেস। বিদেশের সঙ্গে পূর্বে সম্পাদিত অসম্মানজনক চুক্তিগুলি এই প্রক্রিয়ায় হয় সম্মানজনক না হয় বাতিল করে অনেক দেশেরই চক্ষুশূলে পরিণত হন তিনি। আরও ঘোষণা দেয়া হয়, বলিভিয়া আদিবাসীদের প্রধান পণ্য কোকা উৎপাদন অব্যাহত রাখবে এবং তা বৈধভাবে বাজারজাত করে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে। আর যুক্তরাষ্ট্রের বিরাগভাজন হন বিশেষত এই ঘোষণা দিয়ে যে, উৎপন্ন কোকার জন্যে বৈধ বাজার খোঁজা হবে। বলিভিয়ায় এরপর শুরু হয় ইভো মোরালেসের নেতৃত্বে নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও ভূমিসংস্কার। দেশের আদিবাসীদের আরও বেশি সাংবিধানিক ক্ষমতা দেয়ার লক্ষ্যে ছয় আগস্ট, ২০০৬-এ নতুন সংবিধান প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। বলিভিয়ায় নয়টি প্রদেশ এবং সবগুলি প্রদেশই সংবিধান অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসনের অধিকারপ্রাপ্ত। এখন কয়েকটি প্রদেশ আরও বেশি স্বায়ত্তশাসন দাবি করছে। আর এরই সুযোগে বিশেষ করে পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ পান্ডোতে ১১ সেপ্টেম্বর বৃহষ্পতিবার থেকে শুরু হয় বিরোধী দলীয় গভর্নর লিওপোলডো ফার্নান্ডেজের নেতৃত্বে সংঘাত ও সন্ত্রাস। বাকি ঘটনা সবারই জানা, কমপক্ষে ১৮ জন নিহত হয়েছেন এ ঘটনায়। যাদের ১৬ জনই নিরীহ কৃষক। ফলাফল হয় এই, সেখানে সামরিক অবস্থা জারি করেন ইভো মোরালেসের সরকার।
পৃথিবীর সব দেশেই এরকম পরিস্থিতিতে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ঘোট পাকানোর চেষ্টা চালায়। বলিভিয়াতেও চালিয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলির মুরুব্বিপণা ছাড়াও বিভিন্ন দেশ আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে, জিম্বাবুয়ের মতো বলিভিয়াও তার উদাহরণ তৈরি করতে চলেছে। দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলির সংস্থা চিলিতে বৈঠক করছে পাণ্ডোর রাজনৈতিক পরিস্থিতির সমাধানকল্পে।
অন্যদিকে ভেনিজুয়েলায় ২৬ আগস্ট থেকে হুগো শ্যাভেজ শুরু করেছেন এক সামাজিক প্রক্রিয়া ‘মিশন ১৩ এপ্রিল’, যার লক্ষ্য কমিউন গড়ে তোলার মাধ্যমে
জনগণের সম্পদ জনগণের মধ্যে বন্টন ও স্থানান্তরিত করা। এর আগেও ভেনিজুয়েলায় ৩৩টি কমিউন গড়ে তোলা হয়েছে। এখন হুগো শ্যাভেজ চাইছেন তা সারা দেশে সম্প্রসারিত করতে। এরকম একটি মিশন চালু করার উদ্দেশে ২৬ জুলাই সেখানে জারি করা হয় ২৬টি নতুন ও সংশোধিত আইন। এই নতুন ও সংশোধিত অধ্যাদেশগুলির অন্যতম একটি হলো দি নিউ পপুলার ইকনমিক ল। বিরোধী ডানপন্থীরা এ আইনের তীব্র বিরোধিতা করছে। কারণ তারা স্পষ্টতই বুঝতে পারছে, এর মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠী কেবল অর্থনৈতিকভাবেই নয়, সামাজিকভাবেও ক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে উঠবে। এরকম একটি কর্মসূচির নাম ‘মিশন ১৩ এপ্রিল’ দেয়া হয়েছে ভেনিজুয়েলার সাম্প্রতিকতম রাজনৈতিক অতীতের কথা মনে রেখে। ২০০২ সালের ১১ এপ্রিল ভেনিজুয়েলার ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফেডেকামারাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় সাময়িকভাবে হুগো শেভেজকে ক্ষমতাচ্যুত করে। কিন্তু দরিদ্র জনগণ তখন রাস্তায় নেমে আসে এবং সামরিক বাহিনীর একটি অংশকে উদ্বুদ্ধ করে তাদের সমর্থন দিতে। এদের সম্মিলিত আন্দোলনে ১৩ এপ্রিল পুনরায় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন হুগো শ্যাভেজ। ভেনিজুয়েলার রাজনৈতিক ইতিহাসে ওই দিনটির বিশেষ তাৎপর্যের কথা মনে রেখেই এ কর্মসূচির নাম দেয়া হয়েছে ‘মিশন ১৩ এপ্রিল,- যার রয়েছে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক এই তিনটি দিক। আমলাতন্ত্রের বদলে জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটানোই এ মিশনের মূল উদ্দেশ্য। প্রাচ্য, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্র অনায়াসে তাদের মাতব্বরী চালিয়ে যেতে পারলেও লাতিন আমেরিকা নিয়ে তারা ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। কেননা এ দেশগুলির বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এগিয়ে যাচ্ছে জনগণমুখী বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে। ল্যাতিন আমেরিকার এই গণজোয়ার এখন সারা বিশ্বেও তরঙ্গ তৈরি করেছে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আবারও সমাজতান্ত্রিক শক্তিগুলি সংগঠিত হচ্ছে। নেপালে মাওবাদীরা সরকার গঠন করেছে, যা অদূর ভবিষ্যতে এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলিকেও প্রভাবিত করবে। সম্ভবত বাংলাদেশে একারণেই ভবিষ্যতের বাম রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশে সন্ত্রাস দমনের নামে র্যাবের মাধ্যমে মাওবাদী দলগুলির নেতাদের ক্রসফায়ারে হত্যা করা হচ্ছে। বলিভিয়ার কাছ থেকে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিকরা অনেক কিছুই শিক্ষা নিতে পারতেন, কিন্তু তার বদলে সেখানে এখন একটি জাতীয় সনদ তৈরির মাধ্যমে অধিকরতর মুক্ত বাজার প্রতিষ্ঠার এবং জাতীয় সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। অন্যদিকে, ইউক্রেনে কয়েকদিন আগে পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থনপুষ্ট সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতায় উঠে এসেছে নতুন এক রাজনৈতিক শক্তি। বলিভিয়া ১৯ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করেছে, রাশিয়ার সঙ্গে তারা সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর জোর না দিয়ে তারা এতদিন ভুল করেছে এবং অদূর ভবিষ্যতে রাশিয়ার সঙ্গে নিবিড় রাজনৈতিক সম্পর্ক করে তোলা হবে।
এশিয়া যাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাববলয়ের বাইরে না যায়, সেজন্যে ভারতের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে সম্পর্ক নিবিড় করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র আরও অনেক মনযোগী হচ্ছে। এর পাশাপাশি পাকিস্তানে যেনতেন উপায়ে একটি সামরিক অভিযান পরিচালনাও যুক্তরাষ্ট্রের একটি আশু লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু বুশ-ওবামার বাড়ির পাশেই বেড়ে উঠছে তাদের চিরশত্রু আদর্শের অভয়-আবাস। এমনিতেই যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত এখন, তার ওপর ঘাড়ের ওপর সমাজতন্ত্রীদের এই গাঢ় নিঃশ্বাস যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে জন্ম দিচ্ছে আরও অস্বস্তির। আসন্ন নির্বাচনে ওবামাই জিতুন আর ম্যাককেইন-ই জিতুন, এই অস্বস্তি বাড়বে বৈ কমবে না। সঙ্গতকারণেই বাড়বে বোধকরি যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধংদেহী মনোভাব, আগ্রাসী দাপট।
অবিশ্রুত
সেইসব দিন স্মরণে,- যখন কলামিস্টরা ছদ্মনামে লিখতেন; এমন নয় যে তাদের সাহসের অভাব ছিল, তারপরও তারা নামটিকে অনুক্ত রাখতেন। হতে পারে তাৎক্ষণিক ঝড়-ঝাপটার হাত থেকে বাঁচতেই তারা এরকম করতেন। আবার এ-ও হতে পারে, সাহসকেও বিনয়-ভুষণে সজ্জিত করেছিলেন তারা। আমারও খুব ইচ্ছে দেখার, নামহীন গোত্রহীন হলে মানুষ তাকে কী চোখে দেখে... কাঙালের কথা বাসী হলে কাঙালকে কি মানুষ আদৌ মনে করে!
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৬ comments
ফারুক ওয়াসিফ - ১১ নভেম্বর ২০০৮ (৫:৪২ পূর্বাহ্ণ)
ভাল লেখা, অভিনন্দন।
বেনামও নাম। তবে সেই নামের লেখায় আত্মকে আড়াল করা যায় সত্য, তবে তার সুবিধাও আছে। যে কোনো কথা বলা যায়।
অবিশ্রুত - ১৩ নভেম্বর ২০০৮ (১২:৪৯ অপরাহ্ণ)
পড়ার জন্য অভিনন্দন।
নামের আড়ালে কিন্তু শেষ পর্যন্ত আত্মকে আড়াল করা যায় না। কোনও না কোনও বাক্যের মধ্যে দিয়ে তার প্রকাশ ঘটে। তা ছাড়া এই বিশ্ব এখন এত বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে আর তার জন্য এত বেশি নিরাপত্তার ফাঁদ পেতেছে যে, খুব সহজেই অন্তত নেটবাসী কাউকে চিহ্নিত করা সম্ভব।
কিন্তু নাম গোপন রাখার সুবিধা অন্তত এইটুকু যে তাতে ব্যক্তিনির্বিশেষে অনেককে একই ভাবনায় তরঙ্গিত করা সম্ভব। যেমন, ধরুন, এমনও হতে পারত, এই লেখাটি (বা অন্য কারও কোনও লেখা) স্বনামে লিখলে এর সঙ্গে সহমত প্রকাশ করলেও আমি-আপনি হয়ত মন্তব্য করতে আগ্রহী হতাম না, মানুষটি সম্পর্কে এ্যালার্জী থাকার কারণে।
যাই হোক, আবারও ধন্যবাদ আপনার পাঠানুভূতির জন্যে।
মাসুদ করিম - ১২ নভেম্বর ২০০৮ (১২:২৬ অপরাহ্ণ)
আমি অনেক দিন থেকেই লাতিন আমেরিকার আত্মশক্তিতে বিশ্বাসী। প্রথমত মহাদেশটির অসাধারণ শিল্প ও সাহিত্য কর্মের জন্য, দ্বিতীয়ত মহাদেশটির জীবন্ত আদিবাসী অতীতের জন্য। আমেরিকাকে আমি বলতে পছন্দ করি United Snakes of America এটি বলতেন লাতিন আমেরিকান চিত্রশিল্পী মাত্তা। ফিদেল আমার প্রিয় মানুষদের একজন। এই প্রতিবেশীদের প্রভাব যেন আমেরিকার গণমানুষের উপর ভবিষ্যতের দিনগুলোতে আরো ব্যাপক ও অপ্রতিহত হয়ে ওঠে, সে দিকেই যেন সময় বয়ে যায়। আমেরিকার গণমানুষের প্রতিও আমার অনেক আস্থা।
বর্তমান নেপালের ভবিষ্যতের দিকেও আমি উন্মুখ।
আমাদের দেশ কবে আবার আমাদের হবে তার উদ্দেশ্যেই পৃথিবীর সব গণমানুষের কথা বলা।
লেখাটির জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
অবিশ্রুত - ১৩ নভেম্বর ২০০৮ (১২:৫৩ অপরাহ্ণ)
নেপালের ভবিষ্যত নিয়ে আমিও আগ্রহী মাসুদ করিম। আপনি এ ব্যাপারে একটা কিছু লিখুন না। আমার বিশ্বাস, আমাদের অনেকেরই কৌতূহল খানিকটা হলেও মিটবে তাতে। তা ছাড়া খানিকটা আত্মবিশ্বাসও হয়তো ফিরে পাওয়া যাবে।
খুব সুন্দর বলেছেন এই কথাটি।
snigdha - ১৩ নভেম্বর ২০০৮ (৪:১৩ অপরাহ্ণ)
খুবই ভালো একটা লেখা!
হয়তো তাই, কিন্তু তবুও এখনই হতাশ হতে ইচ্ছে করে না!
অবিশ্রুত - ১৪ নভেম্বর ২০০৮ (১:২৩ অপরাহ্ণ)
ব্যাপারটি কি হতাশ হওয়ার বা না-হওয়ার? আমার চেষ্টা ছিল, চোখটা একটু খুলে আশপাশটা দেখার, হতাশ হওয়ার বাসনা আমারও নেই। কিন্তু যে পরিণতি অপেক্ষা করছে তার জন্যও প্রস্তুতি চাই আমাদের। ইতিমধ্যেই ওবামা নির্বাচিত হয়েছেন এবং তিনি যাদের নিয়ে পথ চলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের চেহারা বলে দিচ্ছে, কত বেশি প্রো-ইসরাইলী তারা। কর্পোরেটবাদীরা ওবামাকে পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে অন্তত দুটি কাজ করতে পেরেছেন : পৃথিবীতে তাদের যে অগণতান্ত্রিক ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছিল, খানিকটা হলেও তার ওপর প্রলেপ দিতে পেরেছেন। দ্বিতীয়ত মার্কিন মুসলমান ও কৃষ্ণাঙ্গদের মনে যে ক্ষত তৈরি হয়েছিল তাতে মলম লাগাতে পেরেছেন।
কিন্তু এর বিপরীতে বড় পাওয়াটি হলো : মানুষের মনে আশাবাদ ও আস্থা দুটোই তৈরি হয়েছে। শঙ্খ ঘোষের কবিতার একটি লাইন মনে পড়ছে : মানুষ তার ইচ্ছার সমান… সেই ইচ্ছার প্রতিফলন যে-ভাবেই হোক না কেন, এবারের মার্কিন নির্বাচনে ঘটেছে এবং এই জনমত, আমার মনে হয়, খোদ ওবামার জন্যেও হুমকিস্বরূপ।
অতএব হতাশ হওয়ার কিন্তু কোনও সুযোগ আসলে নেই।