এক বিয়োগ এক : খালেদা জিয়ার গোপন ডায়েরি

আমি হেরে গেছি। এ শুধু আমিই জানি। আমাকে হারালে তোমাদের আর কোনো সম্ভাবনা নেই। অনেক স্বপ্ন ছিল, ক্ষমতা হারিয়ে স্বপ্নগুলো সব চুরমার হয়ে গেল। সেদিন থেকে আমি অমানবিক জীবনযাপন করছি। স্বামী ছিল এক বিক্ষিপ্ত আত্মা, তাকে কখনো আপন ভাবতে পারিনি। জড়িয়ে পড়েছিলাম কিন্তু সবসময় নিজেকে আলাদা রেখেছি।[...]

আমি হেরে গেছি। এ শুধু আমিই জানি। আমাকে হারালে তোমাদের আর কোনো সম্ভাবনা নেই। অনেক স্বপ্ন ছিল, ক্ষমতা হারিয়ে স্বপ্নগুলো সব চুরমার হয়ে গেল। সেদিন থেকে আমি অমানবিক জীবনযাপন করছি। স্বামী ছিল এক বিক্ষিপ্ত আত্মা, তাকে কখনো আপন ভাবতে পারিনি। জড়িয়ে পড়েছিলাম কিন্তু সবসময় নিজেকে আলাদা রেখেছি। আমার ছেলে দুটো আমাকে আরো নিঃসঙ্গ করে দিয়েছে। কতবার ভেবেছি সবকিছু ছেড়ে কোথাও চলে যাব। নিজের মা-বাবা-ভাই-বোন এরা হয়ে উঠল আরো বৈরী। আমার কোনো মূল্যই নেই ওদের কাছে — আমার মূল্য শুধু আমি ক্ষমতার বৃত্তে থাকব। থেকেছিও, কিন্তু কিছুই পাইনি। থাকি সেনানিবাসে, কারণ শুধু এ নিবাসটিকেই আমি আপন করে পেয়েছিলাম। আমার এ থাকার জায়গাটি আমার খুব পছন্দ। এখানেই দেশের কেন্দ্র। আমি কেন্দ্রের ভাষা ও যোগাযোগ বুঝি। এই আমার নিজের কাজ। আমার কাজকে আমি মূল্য দিই, আমার কাজ আমার কাছে অনেক বড়। সবার কাছেই নিজের কাজই সবচেয়ে বড়। প্রতিটি মানুষ তার দক্ষতার জায়গাটিকে ভালোবাসে, আগলে রাখে। এরশাদের সাথে আমার রফা হয়েছিল। থাকার জায়গাটি আমাকে ছেড়ে দাও, আমি তোমাকে আর সব দাবী ছেড়ে দেব। কারণ আমি জানতাম এখান থেকে আমি অনেক কিছুকেই আমার নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসতে পারব। এরশাদ অনেক কিছুই বোঝে, কিন্তু বুদ্ধিমান নারীর বুদ্ধির গভীরতা সে বুঝতে পারে না। ছিল তো জিয়ার ‘স্ক্রিপ্ট রাইটার’, তার বুদ্ধিই বা কতটুকু। জিয়া মারা যাবার পর আমি ঠিক জায়গাতেই ছিলাম, আমার কাজের জায়গায় ছিলাম। ওখানে ছিলাম বলেই এমন দাপটের সঙ্গে ফিরে আসতে পেরেছিলাম। আজো সেনানিবাসে আমার সঙ্গে খেলতে পারে এমন কেউ জন্ম নেয়নি। কিছুটা সমস্যা হয়েছিল — এক এগারো যাকে বলা হয়, সেই থেকে। কিন্তু ওরাও আমাকে এখান থেকে বের করে দিতে পারেনি। কারণ কারো অতো মুরোদ নেই, একজন অঘোষিত ও মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আশঙ্কাহীন সেনাপ্রধানকে সেনানিবাস থেকে কে বের করবে। আমি আছি আমি থাকব। এখান থেকে কেউ আমাকে তাড়াতে পারবে না।

জিয়ার একটা ঘোড়ারোগ ছিল — পায়ে মাথায় ছিল আর্মি, কিন্তু উঠতে বসতে ভাল লাগত বুদ্ধিজীবিদের সাথে! তারেক জিয়ার মধ্যেও ওই ঘোড়ারোগ প্রবল। জিয়া তো মরেই গেল, তারেক জিয়া বিএনপিকে ডুবিয়ে এখন দেশের বাইরে বসে আছে আর এখন দেশে দ্রুত ফিরে এসে বিএনপিকে সে ধ্বংস করতে চায়। বিএনপি আমার কাছে যেমন ছিল, তেমনটি জিয়ার কাছেও ছিলনা, আর তারেক জিয়ার কাছে তো কিছুই থাকবেনা।

বিএনপির জন্য একদম যাদের দরকার নেই — তারা হল বুদ্ধিজীবি। এদেরকে আমি কোনো প্রশ্রয় দিইনি। এ প্রজাতিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেই আমি টিকে ছিলাম, টিকে আছি, টিকে থাকব। প্রথম আলোর মতিউর রহমানই একমাত্র বুদ্ধিজীবি যাকে আমি কিছুটা মূল্যায়ন করেছিলাম — সেটা সেনানিবাসের একটি অতি গোপনীয় কারণেই করেছি। কিন্তু মতিউর রহমান সম্পূর্ণ ভুল বুঝেছিলেন। এরশাদের মতো রমণীমোহন যেমন বুদ্ধিমান নারীর বুদ্ধির হদিস পায় না, তেমনি মতিউর রহমানের মতো বুদ্ধিজীবিরা চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের কিনারা করতে পারে না।

বিএনপির দরকার এখন শুধুই মেসমেরিজম। আর সেটা শুধু আমারই আছে। জিয়ারও ছিল না, তারেকেরও নেই। আর এ জন্যই আমার পর বিএনপি শেষ। সবাই জানে, এক বিয়োগ এক শূন্য।

মাসুদ করিম

লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।

১৪ comments

  1. mahtab - ১৫ ডিসেম্বর ২০০৯ (১:২৭ অপরাহ্ণ)

    মাসুদ ভাই চালিয়ে যান।

  2. নুর নবী দুলাল - ১৬ ডিসেম্বর ২০০৯ (৯:১৪ অপরাহ্ণ)

    অভিনন্দন……..ভাল লাগল…..

  3. মাসুদ করিম - ১৮ অক্টোবর ২০১২ (১:৫১ পূর্বাহ্ণ)

    চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদসংস্থা চিনহুয়ায় খালেদা জিয়ার প্রোফাইলটা খুবই ইন্টারেস্টিং।

    Here is the profile of Khaleda Zia.

    Khaleda, 63, aspires to form the next government through the parliamentary elections on Monday. Her BNP leads a four-party alliance that includes the country’s largest Islamic party Bangladesh Jamaat-e-Islami.

    In 1960, Khaleda got married to General Ziaur Rahman and has two sons with him. Ziaur Rahman, a liberation war hero of 1971, became president in 1977 through a “yes” or “no” referendum and founded the BNP in 1978.

    Until the assassination of president Ziaur in a mutiny in 1981,Khaleda had taken little interest in either politics or public life.

    After the assassination of president Ziaur, his vice president Abdus Sattar took over as the acting president.

    After four months of presidential election in November 1981, the then Chief of Army Staff Ershad overthrew Sattar and the BNP government in March 1982.

    In March 1983, Sattar appointed Khaleda Zia as vice-chairperson of the BNP. In 1984, she became the chairperson.

    Khaleda actively participated in the movement of anti Ershad. Khaleda was detained several times at her Dhaka Cantonment house during the nine-year rule of Ershad.

    In 1991, she became the country’s first female prime minister through a general election on Feb. 27 and formed the government.

    In the 1996 polls, the BNP lost to Sheikh Hasina’s Awami League but emerged as the largest opposition party in the Parliament.

    Aiming to return to power, the BNP formed a four-party opposition alliance and won the Parliament polls in 2001 with a two-third majority and Khaleda was sworn in as the prime minister.

    Khaleda was arrested by the incumbent caretaker government on charges of corruption in September 2007 and was released on bail in September this year. Her two sons were also arrested on corruption charges but released on health grounds. They are now undergoing treatment abroad.

    প্রোফাইলের শুরুতে খালেদার জন্মদিনের কোনো উল্লেখ নেই।

    জিয়ার ক্ষমতায় আসা ও বিএনপি সৃষ্টি নিয়ে যা লেখা হল, became president in 1977 through a “yes” or “no” referendum and founded the BNP in 1978, তা এক কথায় অনবদ্য। আহ, চিনহুয়া পারেও বটে, এত কম কথায় এত স্পষ্ট উদ্দেশ্যপূর্ণ ‘ক্লিনচিট’ জিয়াকে কেউই দিতে পেরেছে বলে আমার মনে হয় না।

  4. মাসুদ করিম - ১ নভেম্বর ২০১২ (১:৩০ অপরাহ্ণ)

    বিএনপির জন্য একদম যাদের দরকার নেই — তারা হল বুদ্ধিজীবি। এদেরকে আমি কোনো প্রশ্রয় দিইনি। এ প্রজাতিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেই আমি টিকে ছিলাম, টিকে আছি, টিকে থাকব।

    মনে হচ্ছে খালেদা জিয়া বুদ্ধিজীবি প্রজাতিকে প্রশ্রয় দিতে গিয়ে ভারত সফরে ভুলভাল বকছেন। গোপন ডায়েরি অনুযায়ী এর পরিণতি হবে ভয়ানক।

    এখানে পড়ুন খালেদার ভারত সফরের কথাবার্তা নিয়ে আমার ফেসবুক স্ট্যাটাস

    • মাসুদ করিম - ২১ অক্টোবর ২০১৩ (১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ)

  5. Pingback: রাজাকার : মতিউর রহমানের গোপন ডায়েরি | মাসুদ করিম

  6. মাসুদ করিম - ২৭ অক্টোবর ২০১৩ (১০:৪৮ অপরাহ্ণ)

  7. মাসুদ করিম - ২২ ডিসেম্বর ২০১৩ (৬:৪৫ অপরাহ্ণ)

    The title of this article might upset supporters of BNP, a political party which held power through the democratic process for two full terms. But the continuous chilling remarks made by leaders of BNP and their cohort Jamaat-e-Islami force one to ponder the issue. Early this year, Jamaat threatened to wage civil war while BNP leaders have encouraged replication of atrocities such as that in Fatikchhari against AL across the country. One BNP senior leader, before a party rally in October, directed party leaders and activists to arm themselves with machetes, axes, and whatever weapon they can acquire to fight back if attacked. At a rally in November, a Jamaat leader termed the Sitakunda mayhem as “just a sample” and threatened that “the whole country would turn into Sitakundu.” Another Jamaat leader at the same rally warned of setting ablaze the entire 56,000 square miles of the country. The latest came through another senior BNP leader’s apparent justification of the recent brutality carried out against ordinary people by killing them indiscriminately and burning passengers to death and sabotaging train movement by dismantling fish plates on rail tracks during past weeks of BNP-Jamaat alliance’s hartals and blockades. In response to people’s fear, the senior leader justified these actions by saying: “Does this not happen when there is a war? Don’t you see the Western powers are killing so many innocent civilians in the war in Afghanistan? Don’t you see children getting killed? Don’t you see women getting killed?” Based on this latest stance, one can thus conclude that BNP-Jamaat actually see themselves as waging an undeclared war – which BNP’s political ally Jamaat already threatened at the beginning of the year. Though the killing spree of the innocent ordinary people is happening during the 18-party alliance’s blockades or hartals, BNP-Jamaat blames the government and disclaims their responsibility for these atrocities. But their speeches throughout the year stand contrary to their words. Rather, the BNP acting secretary general in November seemingly acknowledged that opposition leaders and activists were engaged in street violence during their anti-government agitation. In a program of their student wing, the BNP leader said that opposition activists have to do much more than just vandalise one or two vehicles on the street to have the BNP-led alliance’s demands met. In October, a renowned columnist and active sympathiser of BNP-Jamaat alliance and fundamentalist Hefazat-e-Islam, said on a talk show program that journalists “deserved” to be bombed as he thinks the media of today ignored the opposition’s issues: “Such ignorance will eventually lead to bombings. The bombings in recent times have been very little, I think it should have been more.” When the latest BNP statement defending the recent violence by comparing it to collateral damage during war became an issue of debate, BNP supporters justified this statement, giving even more frightening comparisons. A professor of Dhaka University, on a talk show program not only defended the statement, but added examples of the activities of India’s Maoist terror groups and also an Indian separatist group ULFA (United Liberation Front of Assam). Terror acts in Afghanistan and Pakistan were also brought into consideration during the discussion on the program, where the professor tried to justify the opposition’s ongoing violence. We have witnessed political movement and violence in the country during the last four decades. We saw processions, rallies of thousands of people of the both ruling AL and BNP during the 9-year long rule of military dictator HM Ershad and even afterwards when the two major parties were in power one after another. We witnessed party leaders of different levels in the street along with their regular activists and supporters join the program. Even those people who did not belong to any party but supported the cause of the movement also came to the street to extend their solidarity to the movement. We saw brutality of the law enforcers on the protestors during all regimes in the past. We witnessed violent clashes between protestors and police, even protestors throwing crude bombs and cocktails during those clashes. But those were absolutely limited to the political protestors and police or among the rival political groups. Killing ordinary people was never the target of the protestors. Jamaat and their student wing Islami Chhatra Shibir activists have waged a planned war on police since last year. Now many common people are being killed every day. The opposition deny responsibility on the one hand, while on the other hand defend these crimes in a way, as if they are admitting their responsibility for these crimes. What is most alarming is that the BNP and Jamaat are not only conducting these crimes as part of a political and democratic movement, but they and their supporters do not hesitate to cite the example of the war-like situation in Afghanistan, Pakistan, and in some parts of India. Are they really advancing towards taking insurgency groups as their model? Are they imposing war against the people in the name of democratic political movement to meet their demands? If so, isn’t there any reason to ponder the question in the title?

  8. মাসুদ করিম - ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ (১১:০০ পূর্বাহ্ণ)

  9. মাসুদ করিম - ৯ এপ্রিল ২০১৫ (১০:৩০ অপরাহ্ণ)

    ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের’ আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন

    গুলশানের বাসায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেড় ঘণ্টার বৈঠকে অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, প্রকৌশলী আ ন হ আখতার হোসেইন, কলামনিস্ট মাহফুজউল্লাহ, সাংবাদিক নেতা আবদুল হাই শিকদার, অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নী ও কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন ছিলেন।

    বিস্তারিত পড়ুন এখানে

  10. মাসুদ করিম - ৯ এপ্রিল ২০১৫ (১০:৩৬ অপরাহ্ণ)

    এবারও এগিয়ে শেখ হাসিনা

    দীর্ঘ বিরানব্বই দিন গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থানের পর ৫ এপ্রিল দুপুরে বাসায় ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ৪ এপ্রিল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় খুলে দেওয়া, ৫ এপ্রিল আদালতে আত্মসমর্পণ করে বেগম জিয়ার জামিন লাভ এবং গুলশানের নিজের বাসা ফিরোজায় ফিরে যাওয়া– এসব কিছুই গত তিন মাস ধরে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তেজনা বিরাজ করছে তা প্রশমনের ইঙ্গিত। নেপথ্যে নানা উদ্যোগের ফলেই রাজনীতির প্রধান দুপক্ষ, সরকার ও বিএনপি কিছুটা নমনীয় অবস্থানে এসেছে বলে শোনা যাচ্ছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা এ নমনীয়তা ইতিবাচক বলেই মনে করে স্বস্তি অনুভব করছেন। তবে এ স্বস্তি কতদিন স্থায়ী হবে তা এখনই বলা যাবে না।

    বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলন কেন্দ্র করে রাজনীতিতে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল তা থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসা যাবে তা বলতে পারছিলেন না কেউ। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই সংকট উত্তরণের পথ বের করে দিয়েছেন। তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশের চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার মুখে যেন কিছুটা ঠাণ্ডা পানি ছিটিয়ে দিয়েছেন। এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কিনা তা নিয়ে কিছুটা সংশয় থাকলেও নিজেদেন ‘গ্যাড়াকল’ থেকে বেরিয়ে আসার উপায় হিসেবে নির্বাচন থেকে দূরে না থাকার সিদ্ধান্তই নিয়েছে বিএনপি। দলের এ সিদ্ধান্তের পেছনে বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিতে বেগম জিয়াকে প্রভাবিত করেছেন।

    সরকার ও বিএনপির মধ্যে গোপন সমঝোতা বা আপোসরফা হয়েছে কিনা সে প্রশ্ন বিভিন্ন মহলে দেখা দিয়েছে। প্রকাশ্যে এ ব্যাপারে রাজনীতির কুশীলবরা মুখ না খুললেও কিছু একটা যে হয়েছে সেটা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না কারও। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় খুলে দিয়ে এবং আদালতে হাজির হওয়ার সময় বেগম জিয়ার জন্য ‘পর্যাপ্ত’ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সরকার বিএনপিকে কিছুটা ছাড় দিয়েছে। আর বেগম জিয়া আদালতে হাজির হয়ে এবং বাসায় ফিরে নিজের অনড় অবস্থানের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন।

    প্রশ্ন উঠেছে, দীর্ঘ তিন মাস আন্দোলনের নামে দেশে নজিরবিহীন সহিংসতা চালিয়ে বেগম জিয়া কী পেলেন? তিন মাস অফিসে থাকার ‘কষ্ট’ ছাড়া অন্য কোনো কষ্ট কি তাঁর মনে নেই? তাঁর আন্দোলনে ১৩৮ জন নিরীহ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। এর মধ্যে পেট্রোল বোমার আগুনে পুড়ে মারা গেছেন ৭৭ জন। গুরুতর দগ্ধ হয়েছেন প্রায় ৩৫০ জন। বিভিন্ন কারণে আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে দেড় হাজার মানুষ। নাশকতায় বাস-ট্রাকসহ প্রায় দুহাজার যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রেলপথে কমপক্ষে ৮০টি স্থানে নাশকতা চালানো হয়েছে। সড়ক পরিবহন খাতেই ক্ষতির পরিমাণ ৩১ হাজার কোটি টাকা বলে জানা গেছে।

    এছাড়া ২৩টি ভূমি অফিসসহ অন্তত ৪১টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়া হয়েছে, পুড়ে গেছে অনেক মূল্যবান দলিল-দস্তাবেজ। কৃষি, তৈরি পোশাক শিল্পসহ অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে অপূরণীয়। হাজার হাজার কোটি টাকার উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। শিক্ষাখাতে যে ক্ষতি হয়েছে তা কীভাবে পূরণ করা হবে সে প্রশ্ন শিক্ষানুরাগী সবার মধ্যেই আছে। ১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থী চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে ছুটির দিনগুলোতে কোনোভাবে পরীক্ষা দিয়েছে। প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থীর জীবন থেকে চুরি হয়ে গেছে কোটি কোটি শিক্ষা-ঘণ্টা। বছরের শুরুতেই নতুন বই হাতে পেলেও ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারেনি।

    যারা জীবন দিলেন, স্বজন বা সম্পদ হারালেন, অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেন, যাদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত হল– তারা এখন সান্তনা খুঁজবেন কোথায়? বিএনপির যেসব নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন, মামলায় জড়িয়েছেন, ঘর-বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে আছেন– তাদের জন্যই বা এই আন্দোলনের ‘প্রাপ্তি’ কী?

    যদি বলা হয়, আন্দোলনে বেগম জিয়া ব্যর্থ বা পরাজিত হয়েছেন তাহলে বিএনপির সমর্থক অনেকেই মানতে চাইবেন না। তারা বলবেন, এখনই আন্দোলনের সাফল্য-ব্যর্থতার মূল্যায়ন করা যাবে না। তিন মাস ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়াই বেগম জিয়ার বড় সাফল্য। তাছাড়া দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মহলের সমর্থন পাওয়াও তাদের উল্লেখযোগ্য অর্জন। সরকার যে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল, এটা সবাই দেখেছেন। কাজেই আন্দোলনে বেগম জিয়া কিছুই অর্জন করেননি– সে রকম মনে করলে ভুল হবে।

    বিএনপি সমর্থক কেউ কেউ বলছেন যে, ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফলেই বোঝা যাবে আন্দোলনে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত না লাভবান হয়েছে। তাদের ধারণা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে, ভোটাররা ভয়-ভীতিমুক্ত পরিবেশে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারলে বিএনপির প্রার্থীদের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি।

    তিন সিটি নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, লাভ হবে বিএনপিরই। হিসাব-নিকাশ করেই তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপির নেতৃত্ব এটা উপলব্ধি করেছেন যে, ৬ জানুয়ারি থেকে তারা যে আন্দোলন শুরু করেছেন সে আন্দোলনে ব্যাপক সংখ্যক মানুষকে যুক্ত করা সম্ভব হয়নি। দলের নেতা-কর্মীরাও সব জায়গায় সমানভাবে মাঠে নামেনি। পেট্রোল বোমা ও ককটেল নিক্ষেপের জন্য মূলত ‘আউটসোর্সিং’ করা হয়েছে। ফলে আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়েছে।

    বিভিন্ন মহল থেকে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে বিএনপি। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল মহলগুলোও আন্দোলনের নামে নিরীহ মানুষের প্রাণহানির বিষয়টি সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। কিন্তু আন্দোলন থেকে সরে আসার সম্মানজনক পথ পাচ্ছিল না দলটি। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে কার্যত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই বিএনপির মুখরক্ষার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন বলে কেউ যদি মন্তব্য করেন, তাহলে তাকে দোষ দেওয়া যাবে না।

    তবে বিএনপির বিবেচনায় রয়েছে এটাই যে, নির্বাচনে তারা জিতলে কিংবা হারলে অথবা জোর করে তাদের হারিয়ে দেওয়া হলে পরবর্তীতে সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা তাদের জন্য সহজ হতে পারে। নির্বাচনে বিএনপিসমর্থিত প্রার্থীরা জিতলে বলা হবে, সরকারের প্রতি মানুষের সমর্থন নেই। কাজেই মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নামতে পারবে দলটি। আবার নির্বাচনে যদি তাদের সমর্থিত প্রার্থীরা পরাজিত হয় তাহলে বলা হবে, তাদের বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে; এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। পুরনো কথা নতুন করে সামনে এনে আন্দোলনের সূচনা করা যাবে।

    এ ধরনের রাজনৈতিক কৌশলে বিএনপি জয়যুক্ত হতে পারবে কিনা সে বিষয়েও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে সন্দেহ রয়েছে। অন্যদিকে সরকারপক্ষ মনে করছে, এ মুহূর্তে নির্বাচনে তাদের সমর্থিত প্রার্থীদের খারাপ করার কারণ নেই।

    ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে দেশে যে রাজনৈতিক বাস্তবতা ছিল, বিএনপির প্রতি মানুষের যে আকর্ষণ ছিল, তা এখন নেই। তিন সিটিতেই মেয়র পদে যাদের প্রার্থী করা হয়েছে (বিশেষত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে) তারা কম বিতর্কিত। ঢাকা উত্তরের প্রার্থী, ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হকের রয়েছে একটি পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি। দলের বাইরেও রয়েছে তার ব্যাপক পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা। দক্ষিণের প্রার্থী সাঈদ খোকনও একজন শক্ত প্রার্থী। বাবা মোহাম্মদ হানিফের প্রতি মানুষের দরদ ও ভালোবাসাকে তিনি পুঁজি করতে পারবেন। তাছাড়া এবার দলসমর্থিত প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য আঁটঘাট বেঁধেই মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ। কারণ এ নির্বাচনে পরাজিত হলে তার রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া কি হবে সেটা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ভালোই বুঝতে পারছেন।

    কৌশল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিলেও বিএনপিসমর্থিত প্রার্থীদের নানা ধরনের প্রতিকূলতার মধ্যেই পড়তে হবে। আন্দোলনের নামে নিরাপরাধ মানুষদের কেন হত্যা করা হল, কেন দিনের পর দিন সাধারণ মানুষদের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্ভোগের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হল, কেন ছেলেমেয়েদের শিক্ষাজীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হল– এসব প্রশ্নের উত্তর তাদের দিতে হবে। তাছাড়া জয়লাভ করলেই যে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন তারা, এরই-বা নিশ্চয়তা কী? মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে তারা দায়িত্বপালনের অযোগ্য হবেন না তার গ্যারান্টি আছে কি? অন্য সিটি করপোরেশনগুলোতে বিএনপির মেয়রদের কী অবস্থা হচ্ছে সেটা কারও অজানা নয়। জেনেশুনে মানুষ কেন এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে যাবে?

    আবার মানুষ এটাও বুঝতে পারছে যে, বিএনপি আন্দোলন করে দাবি আদায় করতে পারবে না। ২০১৪ সালে নির্বাচন প্রতিহত করার আন্দোলনে তারা সফল হয়নি। এবারও মধ্যবর্তী নির্বাচন আদায়ের আন্দোলনে নেমে তারা ব্যর্থ হল। কাজেই বর্তমান সরকার মেয়াদ শেষ করার আগে ক্ষমতা ছাড়বে বলে মানুষ এখন আর খুব বেশি বিশ্বাস করছে না।

    বিএনপি যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় যেতে চাচ্ছে। কিন্তু তারা ক্ষমতায় গিয়ে কী করবে, বর্তমান সরকারের চেয়ে তারা ভালো কি করবে এবং কীভাবে করবে সে সব বিষয়ে কিছুই বলছে না। সবচেয়ে বড় কথা, তারা ক্ষমতায় যেতে চায়, আন্দোলনের ডাক দিয়ে জনদুর্ভোগের কারণ ঘটায়; কিন্তু নেতারা ত্যাগ স্বীকার করতে চান না। জেলজুলুমের ভয়ে পালিয়ে থাকেন। আন্দোলনের নামে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে, বিপদের মুখে ঠেলে দেয় এ দল। এ ধরনের পলায়নপর মনোভাব পছন্দ করে না কেউ। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মানুষের এই মনোভাবের প্রতিফলন দেখা যাবে বলে সরকারপক্ষ মনে করছে।

    অবশ্য বিএনপি নেতৃত্ব মনে করেন, আন্দোলনে বিএনপি সফল কী ব্যর্থ তা নিয়ে তাদের ভোটারদের মাথাব্যথা নেই। বিএনপির প্রতি মানুষের সমর্থন অটুট রয়েছে। বিএনপির সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীরা আন্দোলনের মাঠে না নামলেও দলসমর্থিত প্রার্থীদের ভোট দিতে কার্পণ্য করবে না।

    আওয়ামী লীগকে আরও বেশি সমর্থন পাওয়ার জন্য জরুরিভাবে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে বলেও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। এ সরকারের আমলে দেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে এতে সন্দেহ নেই। তারপরও এ সরকার সম্পর্কে কারও কারও মধ্যে যে অসন্তোষ রয়েছে সেটা অস্বীকার করা যাবে না। মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগের এক শ্রেণির নেতা-কর্মীর নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়া ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ মানুষ পছন্দ করে না। আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা-কর্মীর মধ্যে মানুষকে কাছে না টেনে দূরে ঠেলে দেওয়ার এক ধরনের পারদর্শিতা রয়েছে বলেও অনেকে মনে করেন।

    ছাত্রলীগের কোন্দল, হানাহানি সরকারের সুনাম নষ্ট করছে ব্যাপকভাবে। দেশের উন্নয়নে সরকার যতটা আগ্রহী, সুশাসনের ব্যাপারে ততোটা মনোযোগী নয় বলেও অনেকে মনে করেন। কোনো কোনো এমপি ও মন্ত্রীর কার্যকলাপেও অনেকে বিরক্ত ও হতাশ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, দেশকে জঙ্গিমুক্ত করা, দেশের রাজনীতিকে পাকিস্তানি ধারায় পরিচালিত করার ষড়যন্ত্র মোকাবেলার জন্য বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রাখার যে রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে– এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন ও সংগঠিত করতে যে রাজনৈতিক কার্যক্রম থাকা দরকার, সেটাও নেই তাদের। সারা দেশেই আওয়ামী লীগ কার্যত একটি নিস্ক্রিয় সংগঠনে পরিণত হয়েছে।

    এসব বিষয়ের দিকে নজর না দিলে বিএনপির প্রতি মানুষের সমর্থন কমলেও সরকার বা আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন বাড়বে না।

    প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বারবার এটা প্রমাণ করেছেন যে, রাজনৈতিক কৌশলে তিনি খালেদা জিয়ার চেয়ে এগিয়ে। আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণার আগেই বিএনপি নেতাকে বাসায় পাঠিয়ে তিনি আবারও প্রমাণ করলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাঁকে টেক্কা দেয়ার ক্ষমতা এখনও কেউ অর্জন করতে পারেনি। খালেদা জিয়াকে তাঁর সমর্থকরা আপোসহীন নেত্রী বলে প্রচার করলেও বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে তিনি আপোস করেছেন– নীতির প্রশ্নে, কৌশলের প্রশ্নেও। একাধিকবার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে সামনে এগুনোর পরিবর্তে তাঁকে পিছু হটতে দেখা গেছে।

    এবারের আন্দোলনেও কি তিনি আসলে এগুতে পেরেছেন?

  11. মাসুদ করিম - ৯ ডিসেম্বর ২০১৫ (৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ)

    সামরিক বাহিনীর চরিত্র নষ্ট করা হচ্ছে: খালেদা

    দেশের সামরিক বাহিনীকে ‘বিপথে’ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

    আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের নাম উল্লেখ করে তাদের ‘মানুষখেকো’ বলেছেন তিনি।

    মঙ্গলবার রাতে গুলশানে নিজের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেন, “পুলিশ ও সামরিক বাহিনী- তাদের বলছি, আপনারা দলের কর্মী না। আপনারা এদেশের সন্তান। সশস্ত্র বাহিনীকে বলব, এই বাহিনী গড়েছি আমরা। এরা তো চায়নি। তারা চেয়েছিল বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন নেই।”

    সামরিক বাহিনীকে ‘বিপথে’ নেওয়া হচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপি নেত্রী বলেন, “আজকে তাদেরকে দেশে নিরাপত্তার জন্য কোনো কাজ দেওয়া হচ্ছে না। তারা এখন রাস্তা-ঘাট বানাবে, এই বানাবে, বিল্ডিং বানাবে। তাদের চরিত্র নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। এই হলো দেশের অবস্থা।”

    হত্যা-গুমের জন্য পুলিশ ও র‌্যাবের দিকে অভিযোগ তুলে খালেদা জিয়া বলেন, “আজকে দেশে গণহারে মানুষ হত্যা চলছে। দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার নেই, আইনের শাসন নেই। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই। আজ শুধু চলছে অত্যাচার-অত্যাচার।

    “অত্যাচার করছে শাসক দল, যারা জবরদখল করে ক্ষমতায় আছে। আজকে হায়েনার কবলে দেশ, আজকে ডাইনির কবলে দেশ। এরা রক্তখেকো মানুষ হয়ে গেছে।”

    সরকারবিরোধী আন্দোলন চলাকালে বিভিন্ন সময়ে গুলিবিদ্ধ ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের আর্থিক অনুদান দিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেন, “গতকালও মেহেরপুরে দুইজনকে ক্রসফায়ার দেওয়া হয়েছে। কীসের ক্রসফায়ার? পুলিশ ও ছাত্রলীগ এসব করছে।

    “পুলিশের কমিশনার ছিল আগে, এখন র‌্যাবের ডিজি বেনজীর- এ হলো মানুষখেকো, তার সঙ্গে যোগ হয়েছে হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী)। আর এর আগে ছিল জিয়া (র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান)। আরো কয়েজন আছে।

    “আমি পুলিশের সবাইকে অভিযুক্ত করব না, খারাপ বলব না। পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়, তারা বাধ্য হয়ে এই কাজ করছে। তারা নিজের দেশের ভাই-বোনকে মারছে। পুলিশ ও র‌্যাব বাহিনীকে বলব-এসব হত্যা বন্ধ করুন। র‌্যাবের বেনজীরকে বলব, এসব বন্ধ করেন। নইলে এর পরিণতি ভালো হবে না।”

    সামরিক বাহিনী, পুলিশ-র‌্যাবের পাশাপাশি বিচারকদের নিয়েও কথা বলেন বিএনপি নেত্রী।
    “আপনারা সদয় হোন। ন্যায়বিচার করুন। অন্যায় নির্দেশ মানবার জন্য আপনারা শপথ

    নেননি। আপনারা শপথ নিয়েছেন সত্যিকার ন্যায়বিচার করবেন, জনগণকে সুবিচার দেবেন,” বলেন তিনি।

    জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “আর কখন জাগবেন? আর কত মা-বোনেরা কাঁদবেন, সন্তান হারাবেন? এখন আমাদের জাগতে হবে। এখন সময় এসেছে।”

    বিএনপি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিতে বিশ্বাস করি না। এই আওয়ামী লীগ কয়দিন পর পর কিছু লোককে ধরে অত্যাচার করে জঙ্গি বানায়। এই জঙ্গি জঙ্গি বলে বিদেশিদের ভয় দেখানোর জন্য- আওয়ামী লীগ চলে গেলে নাকি জঙ্গিদের উত্থান হবে।

    “আমরা বলতে চাই, আওয়ামী লীগ থাকলে জঙ্গির উত্থান হয় এবং হবে।”

    বর্তমানে জঙ্গি হিসেবে যাদের সবার সামনে হাজির করা হয় তারা আসলে ‘নির্বোধ’ বলে মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া।

    “কিছু লোককে ধরে র‌্যাব অনেক দিন রেখে দেয়। তারপর তাদের খেতে দেয় না। তাদের চেহারা সুরত বদলে যায়। তাদের চুল-দাঁড়ি লম্বা হয়ে গেলে তখন মানুষের সামনে আনে।

    “পুলিশের কাছে যেসব হাবি-যাবি অস্ত্র থাকে, সেগুলো সামনে নিয়ে ধরে বলে, এই যে জঙ্গি ধরেছি। আসলে তারা কিন্তু নির্বোধ।”

    বিএনপি নেত্রী বলেন, ক্ষমতায় গেলে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা ও প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় করবেন।

    বক্তব্যে আবারো ‘নিরপেক্ষ’ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন দাবি করেন তিনি।

  12. মাসুদ করিম - ২০ জুলাই ২০১৬ (১১:০১ অপরাহ্ণ)

  13. Pingback: মুক্তাঙ্গন | হন্যতে : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গোপন ডায়েরি

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.