ঠিক একশো বছর আগে, ১৯০৯ সালের ২৭ আগস্ট, আটষট্টি বছর বয়সে কলকাতায় গিরীন্দ্রকুমার দত্তের জীবনাবসান হয়। সাহিত্য, ব্যঙ্গচিত্র, শিল্পশিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য। মৃত্যুশতবর্ষে তাঁকে স্মরণ করা হলো এই লেখায়। [...]

ঠিক একশো বছর আগে, ১৯০৯ সালের ২৭ আগস্ট, আটষট্টি বছর বয়সে কলকাতায় গিরীন্দ্রকুমার দত্তের জীবনাবসান হয়। সাহিত্য ও চিত্রকলা – উভয় ক্ষেত্রেই তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য। তিনি ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সমসাময়িক ঔপন্যাসিক। শ্রীগজপতি রায় ছদ্মনামে তাঁর লেখা ‘ঐতিহাসিক নবন্যাস : অঙ্গখণ্ড : মাধবমোহিনী’-র সমালোচনা প্রকাশিত হয়েছিল বঙ্কিমচন্দ্র সম্পাদিত ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকার ফাল্গুন ১২৭৯ সংখ্যায় এবং অমৃতবাজার পত্রিকায় ১৮৭৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তারিখে। তাঁর লেখা আরো দুটি উপন্যাসের নাম জানা যায় : ‘চন্দ্ররোহিণী’ (১৮৭৫) এবং ‘হীরালাল’ (১৮৭৭)। রাজেন্দ্রলাল মিত্র সম্পাদিত সচিত্র মাসিকপত্র ‘রহস্য সন্দর্ভ’ এবং প্রাণনাথ দত্ত সম্পাদিত রঙ্গ-ব্যঙ্গমূলক সচিত্র মাসিকপত্র ‘বসন্তক’-এ গিরীন্দ্রকুমার নিয়মিত লিখতেন। প্রাণনাথ (১৮৪০-১৮৮৮) আর গিরীন্দ্রকুমার দুজনই ছিলেন কলকাতার হাটখোলার দত্তবাড়ির ছেলে; প্রাণনাথ গিরীন্দ্রকুমারের জেঠতুতো অগ্রজ। গিরীন্দ্রকুমার রাজেন্দ্র দত্তর তৃতীয় পুত্র, তাঁর জন্ম হয় ১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দ অর্থাৎ ১২৪৭ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসে। ‘বসন্তক’ (১৮৭৪-১৮৭৬) পত্রিকার প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১৮৭৪ সালের জানুয়ারি মাসে। সে-সময়ে দুই তুতো ভাইয়ের বয়স ৩৩/৩৪। দুজনের আঁকা ব্যঙ্গচিত্রের লিথোগ্রাফ ছাপা হতো পত্রিকাটিতে। ‘বাংলা বইয়ের ছবি’ প্রবন্ধে কমল সরকার লিখেছেন, “‘বসন্তক’ সম্পাদক প্রাণনাথও ছিলেন শিল্পী। কিন্তু গিরীন্দ্রকুমারের চিত্রাঙ্কন প্রতিভা ছিল অনন্যসাধারণ।” দেবীপদ ভট্টাচার্যের ‘বাংলা সাময়িকপত্র’ প্রবন্ধ থেকে জানা যাচ্ছে, ডাকমাশুল সমেত ‘বসন্তক’-এর বাৎসরিক চাঁদা ছিল তিন টাকা ছয় আনা। ‘এই পত্র সম্বন্ধীয় পত্রাদি’ পাঠাবার ঠিকানা ছিল ‘চিৎপুর রাস্তার ৩৩৬ নং ভবন’; পত্রিকাটি মুদ্রিত হতো গরাণহাটা ৩৩৬ সুচারু যন্ত্রে। ‘সংবাদ প্রভাকর’, ‘সংবাদ ভাস্কর’ প্রভৃতির মতো ‘বসন্তক’ শিরে একটি সংস্কৃত শ্লোক বহন করত : নব পরিণয়যোগাৎ স্ত্রীষুহাস্যাভিযুক্তং মদবিলসিত নেত্রং চারুচন্দ্রার্দ্ধমৌলিং বিগলিত ফণিবন্ধং মুক্তবেশম্ শিবেশং প্রণমতি দিনহীনঃ কালকূটাভ কণ্ঠং।। ‘প্লানচেট’ যন্ত্রকে শিখণ্ডী করে ‘বসন্তক’ তখনকার বাঙালী রাজনৈতিক নেতাদের, রাজপুরুষদের (অ্যাশলি ইডেন, রিচার্ড টেম্পল, স্টুয়ার্ট হগ প্রভৃতি) নিয়ে রঙ্গকৌতুক করত, ‘প্লানচেটে’র আসল উদ্দেশ্য তার মতে ‘প্ল্যান টু চীট’। ‘মানভঞ্জন’, ‘হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রী’, নিরেট গাধা’ প্রভৃতি কার্টুন খুবই উপভোগ্য। তখনকার দিনের প্রাচীন গ্রন্থ প্রকাশ সম্পর্কেও কৌতুককর কটাক্ষ আছে। ‘প্লানচেটে’ বাল্মীকির পর কৃত্তিবাস-কাশীদাস এলেন, বললেন : “আমাদের সকল দোষ নহে, যা দেখ তাহা আমাদের হাত-পা ভাঙ্গা কন্ধাকার মাত্র। কতকগুলো উপাধিধারী প্রকাশকেই আমাদের এ দশা করেছে – যদিও কপিতলার আক্রমণে হাড়গোড় রক্ষা পেয়েছিল, বটতলার কুষ্মাণ্ডগুলো তাও শেষ করেছে।...” ‘বসন্তক’-এ সমকালীন রাজনৈতিক প্রসঙ্গের গান ও…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.