এই বইটি প্রথম পড়ি ১০ বছর আগে, পাঠচক্রে। এটা ছিল বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত। অনুবাদকের নাম মনে নাই। অনেকটা দায়সারা গোছের মনে হয়েছিল অনুবাদটা। পাঠচক্রে বই থেকে ভাললাগা ক’এক লাইন টুকে আনতে হতো। তার পর সমন্বয়কারী দস্তখত দিতেন। আর কেউ একজন বইটার ওপর আলোচনা করত। তখন একটা শব্দই গেঁথে ছিল মনে এলদোরাদো (স্বর্ণভূমি)।বলা যায় এই স্প্যনিশ শব্দটার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু দশ বছর পর গতবাত্রে যে কাঁদিদ পড়লাম। এটা মূল ফরাসী থেকে অনুবাদ করেছেন ফরাসী ভাষাবিদ কবি অরুণ মিত্র। এ এক অসাধারণ অনুবাদ। একেবারে মূলের ছোয়া পাওয়া যায়। ভলতেয়ারকে চিরদিন গুরু মানি, কেননা তাঁর মতো প্রথাভাঙ্গা দার্শনিক ইহজন্মে আর দেখা দেয় নাই। সবকিছুতে তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম। রাজতন্ত্র বিরোধী, ধর্মবিরোধী, সবসময় হতাশাবাদী ইত্যাদি। নিজদেশে বুদ্ধি হবার পর থেকে থাকতে পারেননি। সবসময় ক্ষমতাবানদের বিরোধিতা করেছেন। নির্বাসন আর জেল ছিল তাঁর জীবন। তিনি বলতেন দূর্ণীতিপরায়ন রাস্ট্রে সৎ মানুষের একমাত্র বাসস্থান কারাগার। এই বইটিতে তিনি মূলত অষ্টাদশ শতাব্দীর পুরো ইউরোপকে পটভূমি ও বিষয়বস্তু করেছেন। যদিও এটাকে ফিকশন বলা হয়, মূলত মানুষের বোধ্য করে তিনি দর্শন লিখেছেন বলে মনে হয়ে আমার। পৃথিবীর যে সব আশাবাদী দার্শনিক সক্রাতেস, এরিস্তোতল আর ধর্মগ্রন্থসমূহ এমনকি ভারতীয় গীতা উপনিষদেও যে সবকিছু সবসময় সবচেয়ে ভালর জন্য ঘটে। পুরো উপন্যাসটি তিনি এই বাক্যের বিরোধিতা করার জন্য লিখেছেন। এর নায়ক কাঁদিদকে শিখিয়েছিল তার দর্শনগুরু প্লাঁগস। ব্যারণ কন্যাকে চুমু খাওয়ার অপরাধে রাজদরবার থেকে পাছায় ১৪টি লাথি দিয়ে কাঁদিদকে বের করে দেবার পর। সে বেরিয়ে পড়ে পৃথিবীর পথে। ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশে কাঁদিদের নিয়তি তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। কিন্তু সবখানেই সে দেখল জানোয়ার সুলভমানুষ হিংস্রতা, প্রতারণা নিষ্ঠুরতা দখলদারিত্ব নারীধর্ষন খুন যুদ্ধ। এই সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে সে জানতে পারে পৃথিবীতে সব কিছু ঘটে সবচাইতে খারাপ হবার জন্য। মানবজাতির ভবিষ্যত সম্পর্কে বিরাট হতাশার ভেতর নিক্ষেপ করেন ভলতেয়ার পাঠককে। জেস্যুটদের ভন্ডামী, তথাকথিত আত্মহীন সাহিত্যিকদের ছলনা, দার্শনিকদের ভ্রান্তদর্শন সব নিজের মতো প্রায় অকাট্য যুক্তি দিয়ে সে পরাজিত করে। কাঁদিদকে জিজ্ঞেস করে তার ভৃত্য_ তাহলে আশাবাদ মানে কি? _কাঁদিদের উত্তর, সবকিছু খারাপ থাকা অবস্থায় যে বলে সবকিছু ভাল চলছে সে হলো গিয়ে আশাবাদী। কত সত্য কথা আমাদের দেশের সরকারগুলোর দিকে…