এবার ইদের কয়েকটি দিন কাটিয়ে দিয়েছিলাম ‘মণির পাহাড়’-এ। ‘সোভিয়েত দেশের নানা জাতির রূপকথা’র বই, ফুটপাতে পেয়েছিলাম ২০০৫ সালে। বহুবার পড়লেও বছর খানেক বিরতির পর হাতে তুলে নিতেই সম্পূর্ণ নতুন হয়ে উঠল গল্পগুলো, যেন এইমাত্র কেউ সূর্যের বোন ইলিয়ানা কসিনজ্যানা কিংবা বুদ্ধিমতী রাখালকন্যা আনাইতের নাম বলল আমাকে! [...]

এবার ইদের কয়েকটি দিন কাটিয়ে দিয়েছিলাম ‘মণির পাহাড়’-এ। ‘সোভিয়েত দেশের নানা জাতির রূপকথা’র বই, ফুটপাতে পেয়েছিলাম ২০০৫ সালে। বহুবার পড়লেও বছর খানেক বিরতির পর হাতে তুলে নিতেই সম্পূর্ণ নতুন হয়ে উঠল গল্পগুলো, যেন এইমাত্র কেউ সূর্যের বোন ইলিয়ানা কসিনজ্যানা কিংবা বুদ্ধিমতী রাখালকন্যা আনাইতের নাম বলল আমাকে! নির্ভীক শিকারি বরোল্দই-মের্গেন গহিন বনে তার শিশুপুত্রকে টোপ বানিয়ে কীভাবে নাগসংহার করে বাঁচিয়ে দিল অসহায় মানুষদের, সেই রোমাঞ্চকর কাহিনিও যেন শুনিনি আগে, বা মটর-গড়গড়ির চোখধাঁধানো বীরত্বের কথা। পড়তে পড়তে মনে হয়, আহা, যদি সিভ্‌কা-বুর্কার মতো আমারও থাকত একটা আশ্চর্য পঙ্খিরাজ, তাহলে এই যানজটের শহরে হঠাৎ চিৎকার করে ডেকে আনতাম তাকে : সিভ্‌কা-বুর্কা যাদুকা লেড়কা চেকনাই ঘোড়া সামনে এসে দাঁড়া চাষিপুত্র ইভান তো আমারই মতো আমড়াকাঠের ঢেঁকি যার একমাত্র কাজ ছিল চুল্লির উপরের তাকে বসে বসে ব্যাঙের ছাতা-সেদ্ধ খাওয়া, অথচ সে দিব্যি ঘোড়া হাঁকিয়ে শূন্যে বারো খুঁটি ছাড়িয়ে উঠে রাজকন্যার ঠোঁটে চুমু খেয়ে এল! আবার কী তার নিঃস্পৃহতা, মুহূর্তেই স্বয়ম্বরসভা ছেড়ে ঘোড়াকে বিদায় দিয়ে বাড়ি ফিরল ব্যাঙের ছাতা কুড়িয়ে কুড়িয়ে! নানা স্বাদের আটত্রিশটি রূপকথা, নানা জাতির। পাতায়-পাতায় আছে রঙিন ছবি, প্রত্যেক গল্পের আখ্যাপত্রে চমৎকার অঙ্কন তো আছেই। মস্কোর ‘রাদুগা’ প্রকাশন-এর এই বই বেরিয়েছিল ননী ভৌমিক ও সুপ্রিয়া ঘোষের অনুবাদে, অরুণ সোমের সম্পাদনায়। বাঙালি রসমেজাজ বইটি এত নিপুণভাবে ধরে রাখতে পেরেছে যে মনেই হয় না অনুবাদ; ‘সিভ্‌কা-বুর্কা’ গল্প থেকেই পড়া যাক : ইভান ঘোড়াটার গলা চাপড়ে দিয়ে তাকে লাগাম পরাল, তারপর তার ডান কান দিয়ে উঠে বাঁ কান দিয়ে বেরিয়ে এল। আর কী আশ্চর্য! অমনি সে হয়ে গেল এক সুন্দর তরুণ : কী তার রূপ, সে রূপ বলার নয়, কওয়ার নয়, কলম দিয়ে লেখার নয়। ঘোড়ার পিঠে চড়ে রাজার প্রাসাদের দিকে রওনা হল ইভান। ছুটল ঘোড়া কদমে, কাঁপল মাটি সঘনে, পেরিয়ে গিরি কান্তার, মস্ত সে কি ঝাঁপ তার। অথবা, ‘বুড়ো শীত আর জোয়ান শীত’ গল্পে : জমিদারের কাছে উড়ে গিয়ে পেছনে লাগলে শীত : গালিচার নিচে গিয়ে ঢোকে, আস্তিনের মধ্যে সেঁধোয়, কলারের মধ্যে ঢোকে, নাকে গিয়ে কনকনায়। জোয়ান শীত বড়াই করে তার বাপ বুড়ো শীতের কাছে : দেখেছ আমি কেমন, দেখেছ আমার তেজ! আমার কাছে তুমি…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.