কবিবন্ধু ফুয়াদ হাসানের ফোন পেলাম রবিবার (৫ জুলাই ২০০৯) দুপুরে, যদিও আগের দিনই খবরটা পেয়েছিলাম সুমন ভাইয়ের (রেজাউল করিম সুমন) কাছে। পত্রিকায় জানলাম, আলাউদ্দিন আল আজাদ (১৯৩২-২০০৯) মারা গেলেন শুক্রবার রাতে। কিন্তু দেরিতে হলেও ফুয়াদের ফোনালাপে প্রচ্ছন্ন ছিল এক স্মৃতিপ্রাসঙ্গিকতা। [...]

কবিবন্ধু ফুয়াদ হাসানের ফোন পেলাম রবিবার (৫ জুলাই ২০০৯) দুপুরে, যদিও আগের দিনই খবরটা পেয়েছিলাম সুমন ভাইয়ের (রেজাউল করিম সুমন) কাছে। পত্রিকায় জানলাম, আলাউদ্দিন আল আজাদ (১৯৩২–২০০৯) মারা গেলেন শুক্রবার রাতে। কিন্তু দেরিতে হলেও ফুয়াদের ফোনালাপে প্রচ্ছন্ন ছিল এক স্মৃতিপ্রাসঙ্গিকতা। বহুদিন আগে, যখন আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ছাত্র, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে একসঙ্গে পড়েছিলাম ভোরের নদীর মোহনায় জাগরণ। এ-বইয়ের 'দুই আফসোস' কবিতাটি আমাদের দুজনকেই আক্রান্ত করেছিল শরব্যঞ্জনায়। পরে অনেকবার চিরকুট দিয়েও বইটির খোঁজ পাওয়া যায়নি। আজাদের লেখার সঙ্গে আমি আকৈশোর পরিচিত, বলা যায়, তিনি ছিলেন আমার প্রথম সাহিত্যনায়ক। নবম শ্রেণিতে, ১৯৯২-এ, পাঠ্যবাংলার কবিতাসঙ্কলনে 'আমার মা'কে যখন' নামের একটি সম্মোহক দীর্ঘকবিতা ছিল তাঁর। দুর্ভাগ্য বা সৌভাগ্য এই : কবিতাটি পরীক্ষার পাঠ্যসূচির বাইরেই পড়ে ছিল সারাবছর। আমার এতই প্রিয় ছিল যে পাঠোচ্ছ্বাসে মুখস্থ হতে দেরি হয়নি। প্রথম স্তবক মনে আছে এখনও : আমার মা'কে যখন মনে পড়ে চলতি বাসের ভিড়ে জানালায় তাকাই করুণ আমি, রডধরা সহযাত্রীর হাতের যত ঘাম লাগে গালে ঝাঁকুনির তালে তালে এবং যদিও খুব নিরুপায় গরম নিঃশ্বাসে চাপে দেখি দূরে হলুদ-সবুজ বন, কালোজাম থোকা থোকা ধরে আছে আলগোছে ঠোকর মারে কাকেরা, উড়ে যায় ডাল থেকে ডালে, বসে কি যে খুশি দুপুররোদেও ডাকে অবিশ্রাম। আমি মুগ্ধ শিশু, চোখে এক হ্রদ বিস্ময়ের ঝিকিমিকি, মহাকায় বটগাছ খেলা করে বাতাসের স্রোতে―হাতে পাখি নীলকণ্ঠ নাম তখন ছন্দের কোনও ধারণাই ছিল না; পরে বুঝলাম, কবিতাটির গায়ে বোলানো হয়েছে অক্ষরবৃত্তের সোনারুপোর কাঠি, যা উতল গাঙের বুকেও এনে দিতে পারে নিঝুম অরণ্যের ঘুম। এ-ও দেখলাম, অষ্টাক্ষর পর্বকে মাঝেমধ্যেই ৩+২+৩ মাত্রার বিরলকর্ষিত বিলে চালিয়ে নিয়েছেন কবি অবলীলায়। অন্তর্মিলে ও অন্ত্যমিলে বহমান এক স্মৃতিকাতরতা মুগ্ধ করে রেখেছিল আমার কিশোরহৃদয় এবং এখনও ভিড়েলা বাসে কোথাও যেতে যেতে যেন 'গালে লাগে' 'রডধরা সহযাত্রীর হাতের যত ঘাম'। ২ কিন্তু কবিতা নয়, উপন্যাসের সূত্রেই আজাদের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়, আমার এক খালাতো ভাই দুটি বই নিয়ে এসেছিলেন বাসায়। একটি পারস্য উপন্যাস, অন্যটি আজাদের শীতের শেষ রাত বসন্তের প্রথম দিন। বইদুটি ছিল মায়ের দখলে―দূর থেকে দেখতাম বিড়ালের কারুণ্য নিয়ে। আমার অভিশাপে মায়ের চোখে ঘুম নেমে আসত দুপুরে, তখন একটু-একটু পড়ার সুযোগ…

আমাদের এই সময়টাকে সবদিক দিয়ে সর্বার্থে জড়িয়ে আছেন তিনি। তাঁরই কথায়, ‘শিকড় দিয়ে আঁকড়ে’ আছেন। তাই কবি শঙ্খ ঘোষ-এর কোনও বিশেষ পরিচয় হয় না। তাঁর অস্তিত্বই তাঁর পরিচয়। বাংল কবিতায় প্রায় ষাট বছর ধরে তিনি তৈরি করে নিয়েছেন এমন এক পথ, যে-পথে স্বল্প যাত্রী, যে-পথে সামান্য আলো জ্বলে। সমালোচনায় নিয়ে এসেছেন সর্বজনবোধ্য এক জ্ঞানচর্চার দিশা, সংক্রামকভাবে বারবার সাড়া দিয়েছেন সংকট সময়ে। এই কবির সঙ্গে কথা বলেছেন সুমন্ত মুখোপাধ্যায়। লেখার কথা, জীবনের কথা, ঘরের আর বাইরের কথা। [...]

[বইয়ের দেশ (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০০৯) থেকে সংকলিত] সকলেই একটা আশ্রয়ের কথা ভাবছে আমাদের এই সময়টাকে সবদিক দিয়ে সর্বার্থে জড়িয়ে আছেন তিনি। তাঁরই কথায়, ‘শিকড় দিয়ে আঁকড়ে’ আছেন। তাই কবি শঙ্খ ঘোষ-এর কোনও বিশেষ পরিচয় হয় না। তাঁর অস্তিত্বই তাঁর পরিচয়। বাংল কবিতায় প্রায় ষাট বছর ধরে তিনি তৈরি করে নিয়েছেন এমন এক পথ, যে-পথে স্বল্প যাত্রী, যে-পথে সামান্য আলো জ্বলে। সমালোচনায় নিয়ে এসেছেন সর্বজনবোধ্য এক জ্ঞানচর্চার দিশা, সংক্রামকভাবে বারবার সাড়া দিয়েছেন সংকট সময়ে। এই কবির সঙ্গে কথা বলেছেন সুমন্ত মুখোপাধ্যায়। লেখার কথা, জীবনের কথা, ঘরের আর বাইরের কথা। . . . সুমন্ত : বেশির ভাগ কবি বা লেখকেরই তো লেখা শুরুর সময়ে আটপ্রহরের লেখকবন্ধুরা এসে যায়, একসঙ্গে তারা লেখে, তর্ক করে, লেখা ছাপতে দেয়, তারপর একদিন যে যার পথে চলতে থাকে। আপনার ক্ষেত্রেও কি তেমন হয়েছিল? শঙ্খ : তেমন কোনো লেখকবন্ধুর দল? না, শুরু করবার দিনগুলিতে একেবারেই হয়নি সেটা। এ-ব্যাপারে একটু লুকিয়ে-থাকা স্বভাবই ছিল আমার। ভরসা করে কাউকে দেখাব লেখা, আবার তা নিয়ে তর্কও করব, এতটা উদ্যম ছিল না, সাহসও ছিল না। প্র : তাহলে, একেবারে শুরুতে কাদের কাছ থেকে উৎসাহ পেতেন? কাউকে-না-কাউকে তো দেখিয়েছেন? উ : স্কুলজীবনে বা কলেজজীবনের একেবারে গোড়ায় খুব ঘনিষ্ঠ দু’-একজন বন্ধু – নিজেরা যারা লিখত না – তেমন কাউকে পড়িয়েছি কখনও। তারা যে কেবল উৎসাহ দিত তা নয়, তারও চেয়ে বেশি, বাড়তি একটু বাহবাই দিত। এমনকী ছাপাবার জন্যও পীড়াপীড়ি করত। প্র : গোড়ার দিকে তিনটে কবিতার খাতা পুড়িয়ে দিয়েছিলেন কেন তবে? এইরকম একটা কথা পড়েছি কোথাও। উ : হ্যাঁ, বলেছি কিছুদিন আগে। হস্টেলের এক বন্ধুর সঙ্গে একটু মান-অভিমানের ঘটনা ছিল সেটা। ও পড়েছিল কবিতা, কিন্তু সেটা আবার রটিয়েও দিয়েছিল। সবাইকে ও জানিয়ে দিল কেন? এই অভিমান থেকে কাণ্ডটা। ছেলেমানুষিই হয়েছিল। অবশ্য ছেলেমানুষই তো ছিলাম তখন। ষোলো বছর বয়সের ঘটনা ওটা। প্র : কোন হস্টেল? রামকৃষ্ণ মিশনের? উ : রামকৃষ্ণ মিশনের। এখন বেলঘরিয়াতে প্রকাণ্ড জায়গা জুড়ে যে রামকৃষ্ণ মিশন স্টুডেন্টস হোম, খুবই ছোট চেহারায় সেটা তখন – মানে দেশভাগের সময়টায় – ছিল মানিকতলার হরিনাথ দে রোডে। সেখানে কাটিয়েছি দু’বছর। বেশ নতুন রকমের অভিজ্ঞতা ছিল সেটা। প্র :…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.