যে যা-ই বলুন, দ্য স্টোরি অভ আর্ট-এর মতো বই অনুবাদে হাত দেয়া আমার জন্যে অপরাধের শামিল। কিন্তু আমি সেই অপরাধ না করে থাকতে পারিনি। কেন পারিনি সেটা বইটির সঙ্গে যাঁরা পরিচিত তাঁরা তো খানিকটা উপলব্ধি করতে পারবেনই, এমনকী যাঁরা পরিচিত নন কিন্তু আমার এই ব্যর্থ প্রয়াসের মধ্য দিয়ে পরিচিত হতে চাইবেন তাঁরাও বুঝতে পারবেন। [...]

গোড়াতেই নিজের কথা, অর্থাৎ, ব্যক্তিগত একটি সংকোচের কথা না বললে নিজের কাছেই আমাকে জড়োসড়ো হয়ে থাকতে হবে। যে যা-ই বলুন, দ্য স্টোরি অভ আর্ট-এর মতো বই অনুবাদে হাত দেয়া আমার জন্যে অপরাধের শামিল। কিন্তু আমি সেই অপরাধ না করে থাকতে পারিনি। কেন পারিনি সেটা বইটির সঙ্গে যাঁরা পরিচিত তাঁরা তো খানিকটা উপলব্ধি করতে পারবেনই, এমনকী যাঁরা পরিচিত নন কিন্তু আমার এই ব্যর্থ প্রয়াসের মধ্য দিয়ে পরিচিত হতে চাইবেন তাঁরাও বুঝতে পারবেন। তবে, এরকম একটি অপরাধের গুরুতর প্রভাব আছে বলেই পাঠকের দরবারে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। বাংলা অনুবাদের ক্ষেত্রে একটি সমস্যা হলো -- এটি নিতান্তই এ অভাজনের ব্যক্তিগত মত -- এ-ভাষায় অনুবাদ করার মতো এতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাকি রয়ে গেছে যে বিষয়বস্তু এবং আয়তন, দু দিক থেকেই ওজনদার একটি বইয়ের একাধিক অনুবাদ করাটা আপাতত আমাদের জন্য বিলাসিতার পর্যায়ে পড়ে (লেখা বাহুল্য, দ্য স্টোরি অভ আর্ট সেরকমই একটি কিতাব)। কাজেই, শিল্পকলা বিষয়ে আমার মতো আনপড় লোকের হাতে দ্য স্টোরি অভ আর্ট অনুবাদ না হওয়াই ভালো ছিল। তাহলে যোগ্য কোনো ব্যক্তির হাতে বইটির যথাযোগ্য সমাদর হতো। কিন্তু এখন আর সেটি হওয়ার উপায় থাকলো না, সম্ভবত। আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত হলে আনন্দিত হওয়ার একটি উপলক্ষ পাবো। কথাগুলো বিনয় বলে মনে করলে, পাঠক, আপনারা আমার ওপর অবিচার করবেন। বাংলাদেশে এটা একটি মহামারী আকার ধারণ করেছে। যিনি যে কাজের জন্য উপযুক্ত তিনি তা না করে অন্য কাজ করেন। তাঁদের বেশিরভাগের সঙ্গেই আমার তফাৎ হচ্ছে তাঁরা সেজন্যে সংকোচ বোধ করেন না, আমি করি। বইটি সম্পর্কে আমার আপাতত বিশেষ কিছু বলার নেই, অনেক কারণেই; তার একটি হচ্ছে, সে চেষ্টা না করে অনুবাদটি পাঠযোগ্য করার ব্যাপারেই আমার উৎসাহ বেশি। আর, সেই ইংরেজি প্রবাদটি তো আপনাদের জানাই আছে: "the proof of the pudding is in the eating", তা সেটা অনুবাদের মাধ্যমে খাওয়া হলেও; মানে বলতে চাইছি, আরেকটি প্রবাদের শরণ নিয়ে, ধ্বংসাবশেষ দেখেই বোঝা যায় ইমারতটি একদা জাঁদরেল ছিল। কিছুদিন আগে খানিকটা কৌতূহলবশেই ইউটিউবে গিয়ে বইটির নাম লিখে অনুসন্ধান করেছিলাম। যা পেলাম তা অপ্রত্যাশিত। প্রথমে পাওয়া গেলো একটি অডিওবুক-এর খবর। সেটিও মহামতি গম্‌ব্রিখ্ বিরচিত: আ লিটল হিস্ট্রি অভ্ দ্য ওয়ার্লড। তার নিচে…

প্রকৃতির মধ্যে পরিভ্রমণের পথে শিল্পী রশীদ আমিনের রং-ক্যানভাস প্রথম আমাদের চোখে ধরা দেয় আলাদা হয়ে। সেটি ছিল ২০০০ সাল; আ জার্নি থ্রু নেচার প্রদর্শনীর মধ্যে দিয়ে রশীদ আমিন ঘোষণা করেন তাঁর পৃথক অস্তিত্ব ও অবয়ব। পৃথক,- কেননা এর আগেও প্রদর্শনী করেছেন রশীদ আমিন, প্রদর্শনী হয়েছে তাঁর বাংলাদেশেই, প্রদর্শনী হয়েছে দেশের বাইরেও চীন (বাংলাদেশ দূতাবাস গ্যালারি; ১৯৯২) আর হংকং (ক্লাব ৬৪; ১৯৯২)-এ। কিন্তু ওইসব প্রদর্শনীকে বলা ভালো তাঁর প্রস্তুতিপর্ব, ধ্যানপর্ব, অনুসন্ধানপর্ব [...]

প্রকৃতির মধ্যে পরিভ্রমণের পথে শিল্পী রশীদ আমিনের রং-ক্যানভাস প্রথম আমাদের চোখে ধরা দেয় আলাদা হয়ে। সেটি ছিল ২০০০ সাল; আ জার্নি থ্রু নেচার প্রদর্শনীর মধ্যে দিয়ে রশীদ আমিন ঘোষণা করেন তাঁর পৃথক অস্তিত্ব ও অবয়ব। পৃথক,- কেননা এর আগেও প্রদর্শনী করেছেন রশীদ আমিন, প্রদর্শনী হয়েছে তাঁর বাংলাদেশেই, প্রদর্শনী হয়েছে দেশের বাইরেও চীন (বাংলাদেশ দূতাবাস গ্যালারি; ১৯৯২) আর হংকং (ক্লাব ৬৪; ১৯৯২)-এ। কিন্তু ওইসব প্রদর্শনীকে বলা ভালো তাঁর প্রস্তুতিপর্ব, ধ্যানপর্ব, অনুসন্ধানপর্ব। তিনি তাঁর নিয়তিকে আঁকড়ে ধরেন আ জার্নি থ্রু নেচার-এর মাধ্যমে। এর আগে তিনি তাঁর নিয়তির খোঁজ করেছেন, চিন্তাকে সংবদ্ধ করার জন্যে বারবার নানা পথে হেঁটেছেন। কিন্তু তিনি তাঁর গন্তব্যে পৌঁছানোর নির্ধারিত পথে হাঁটতে থাকেন ২০০০ সালে এসে। http://www.flickr.com//photos/84513436@N05/sets/72157631038915334/show/ এই নিয়তির, এই গন্তব্যের চালচিত্র খুব সামান্য কথায় চিহ্নিত করেছিলেন আরেক শক্তিমান শিল্পী নিসার হোসেন, রশীদ আমিনের চতুর্থ প্রদর্শনী আ জার্নি থ্রু নেচার-এর দৃশ্যমানতা লিখতে গিয়ে। নিসার হোসেনের চোখ আটকে গেছে রশীদ আমিনের নিষ্ঠুর ও বিশৃঙ্খল পারিপার্শ্বিকতায়। তিনি দেখেছেন কী এক ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ আবহে ওঁ চেষ্টা করছেন প্রকৃতির অন্বিষ্ট অনুসন্ধান করতে। পারিপার্শ্বিকতা,- কী রাজনৈতিক অর্থে, কী সামাজিক-আর্থনীতিক অর্থে, কী সাংস্কৃতিক অর্থে,- রশীদ আমিনকে প্রলুব্ধ করেছে অভিজাত রুচির যোগান দিতে, জনপ্রিয় রুচির যোগান দিতে; কিন্তু রশীদ আমিন প্রত্যাখ্যান করেছেন এইসব প্রলোভন, প্রত্যাখ্যান করেছেন জনপ্রিয়তা অর্জনের সহজ সরল পথ। অভিজাত রুচির যোগান দিতে পারলে তাঁর শিল্পের পণ্যমান তৈরি হতো, কিন্তু তিনি হারাতেন তাঁর নিজস্ব রেখা-বর্ণ। জনপ্রিয় রুচির যোগান দিতে পারলে তাঁর শিল্পের সাধারণ গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হতো, কিন্তু তাঁর ক্যানভাস হয়ে পড়ত উৎকট ও গতানুগতিক। আর এসবের মধ্যে দিয়ে রশীদ আমিন সীমাবদ্ধ হতেন, শিল্প ও সময়ের মেলবন্ধন উপলব্ধির চোখ হারাতেন। সীমাবদ্ধতা তাঁকে শিল্পের নিরীক্ষা থেকে দূরে সরিয়ে নিতো। সমসময়ের কাছে মানুষ ও শিল্পের দায়বদ্ধতা থেকে তাঁকে দূরে সরিয়ে নিতো উপলব্ধির চক্ষুহীনতা। তিনি এই সহজ সুখের শিল্পময়তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। প্রত্যাখ্যানের এই পথে তিনি সবরকম উৎসাহ হারান আকৃতি বা রূপের বিন্যাসকে অনুসরণ করে ধীরে ধীরে মূল ভাবের কাছাকাছি পৌঁছানোর প্রচলিত সবরকম প্রক্রিয়ার ওপর থেকে। আকৃতি বা রূপের প্রচল বিন্যাস প্রত্যাখ্যানের মধ্যে দিয়ে রশীদ আমিন মূলত অভিজাত ও জনপ্রিয় রুচিকেই প্রত্যাখ্যান করেন, প্রত্যাখ্যান করেন সহজ সুখের শিল্পময়তা। কী অর্জন…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.