উৎসের রূপকথা কবে এবং কোথায় মানুষ প্রথম কফিগাছটিকে তার একটি প্রধান পানীয়ের উৎস হিসেবে চিনে নিয়েছিল এ বিষয়ে সঠিক জানাশোনা মানুষের ইতিহাসে নেই। এবং কেউই এখন আর জানে না কে ছিল সে মানুষ, যে এই উদ্ভিজ্জ পদার্থটিকে এক উষ্ণ সমৃদ্ধ সৌরভময় পানীয়ে রূপান্তর ঘটিয়েছিল। তাই এ বিষয়ে রূপকথার প্রচলনটাই বিশেষ। আর আমাদের একালে এর প্রতিটিকেই কমবেশি রম্য মনে হয়। এর মধ্যে যেটি বহুল প্রচলিত, এবং সবগুলোর মধ্যে বেশি সমৃদ্ধ, সেটি আমরা জানতে পেরেছি এক মারোনিৎ সন্ন্যাসীর কাছ থেকে, যখন তিনি সরবনের ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক হয়ে এলেন আঠার শতকের গোড়ায়। তিনি প্রচার করলেন যে, এক খ্রিষ্টীয় বিহারের পাদ্রি মৃতসাগরের তীরগুলোর কাছাকাছি থাকা ছোট্ট টিলাগুলোতে বসে অবসর যাপন করতেন, একবার সেখানে তিনি চরে বেড়ানো ছাগলগুলোর মধ্যে আশ্চর্য এক আচরণ খেয়াল করলেন। তিনি দেখলেন এ ছাগলগুলো একজায়গায় বেশিক্ষণ না থেকে খালি ঘুরে বেড়ায় এবং সারা রাত জেগে কাটায়—এভাবে তিনি এও খেয়াল করলেন এ ছাগলগুলো একধরনের ঘন বেঁটে গুল্মের কাছে একত্র হয়, যে গুল্মের পাতা ঘনসবুজ শক্ত এবং উজ্জ্বল আর সমস্ত গুল্ম ভরে থাকে এক
প্রকার দানায় যা দেখতে বেগুনী, খুবই জীবন্ত এবং ছোট্ট চেরিখণ্ডের মতো। তিনি দেখলেন ছাগলগুলো এসবই চিবুচ্ছে। বুড়ো পাদ্রি এই দেখে এই দানাগুলো পানিতে সিদ্ধ করতে লাগলেন ভেবে দেখলেন হয়তো এভাবে পান করে তিনি intoxicated হতে পারবেন। বেশ করে ফুটালেন তিনি, ঐ ফুটন্ত পানীয়ই তিনি যন্ত্রণা নিয়ে পান করলেন, আশ্চর্য! এ তাকে নিয়োজিত করল এক মাতাল অবস্থায়—কিন্তু তার আনন্দের হাবভাব একটুও নষ্ট হলো না—তার চেতনার কিঞ্চিৎ লোপও তিনি অনুভব করলেন না। পক্ষান্তরে তার মানসিক অবস্থান আরো তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল আর ভাবগুলোকে দেখতে পেলেন স্বচ্ছতম দশায়—বেশ প্রাণবন্ত আর গতিময়। তিনি উপলব্ধি করলেন সান্দ্রতায় তার চিন্তাগুলোর জট খুলছে কী বিশুদ্ধ একেকটি পদক্ষেপে। আশেপাশের বস্তুজগত আর ভূমিচিত্র যা তাকে ঘিরে আছে হয়ে উঠল চরম প্রেরণাদায়ী। যে জিনিসটির প্রতি তিনি তাকাতেন বা যে চিন্তাটির মধ্যে তিনি নিজেকে নিয়োজিত করতেন, তা যতই ক্ষুদ্র হোক না কেন, শেষ মুহূর্তে তিনি তার থেকে আবিষ্কার করতেন এক অপ্রত্যাশিত গুরুত্ব। প্রত্যঙ্গগুলো হতো হালকা, মস্তিষ্ক হতো সকল ভারমুক্ত, ধর্মতত্ত্ব হয়ে উঠত মানসিক মত্ততার এক অভিজ্ঞতা যা তন্দ্রাকে দূরীভূত করত এবং ফিরিয়ে…