...কথা ইশারা এক বিষণ্ণ শক্তি হয়ে আমাদের ইন্ধন জোগায় প্রসন্ন হতে, সামনের দিকে এগোতে। মামুন হুসাইনের এ-গ্রন্থ আমাদের তাড়িত করে অতীতকে নতুন করে দেখতে, নতুন উপনিবেশের মুখোমুখি হতে, জিজ্ঞাসু হতে। যে-মুখ আমরা লুকিয়ে রেখেছি আমাদের থেকে, সে-মুখের উদ্ভাসে যেন হঠাৎ করেই শিমুল তুলোর বাউরি ওড়ে। উড়তে উড়তে রোদ পিঠে করে, পাঁচ আঙুলে চোখ বাঁচিয়ে আরো হাঁটতে ডাক দেয় আমাদের।

স্পর্শের জালে বিভোর হয়ে মুখবই দেখতে দেখতে বই হারিয়ে যাওয়ার উল্লাস তুলতে তুলতে সবাই যখন নিজেরাই লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে অদৃশ্য গহিন এক উপনিবেশে, মামুন হুসাইন তখন নিজেকে ফিরে দেখছেন কথা ইশারায়; নিজেকে, - কিংবা অতীতজাড়িত বিপন্ন ভবিষ্যতের দিকে ইঁদুরদৌড়ে ছুটে চলা আমাদেরও। কথা ইশারা তাঁর নিজের কথায়, ‘তাদেরই টিপসই এবং জলছাপ’ ‘বিবিধ উদ্বিগ্নতা এড়ানোর জন্যে যেসব মানুষের সঙ্গে দল বেঁধে’ একদিন হেঁটেছেন তিনি। অসমাপ্ত অবয়ব নিয়ে তারা দেখা দেয় আমাদের কাছে, কিন্তু তাদের সামগ্রিকতা ধরা পড়ে আমাদের কান্নার শক্তির মুঠোতে, স্বপ্নভঙ্গের বেদনাতে, যে-পথের শেষ জানা নেই অথচ যে-পথে যেতেই হয় সে-পথের প্রতিটি পদক্ষেপে। অনেক আগে ঈশ্বরের কাছে কাঁদবার শক্তি না হারাতে প্রার্থনারত এক ঋজুমানবও ডাক দিয়েছিলেন কথা ইশারায়। ‘পুরাতন হয় নতুন পুনরায়’ - তাই আমরা আবারো কথা ইশারার হাতছানি পাই। পাই ‘নিজস্বতা’ প্রমাণ করার যে উন্মাদনা চলছে অথবা চলছে ‘নিজেকে প্রতিস্থাপন করার যে ইঁদুর-দৌড়’ তার ভয়ংকর কথাচিত্র। এর ফাঁকফোকর গলেই আবার উঁকি দেয় মামুন হুসাইনের মামুন হুসাইন হয়ে ওঠার আয়োজন, যা তাঁর অন্য কোনো গ্রন্থের পাঠ থেকে পাওয়া কখনো সম্ভব নয়। নিজের কথাই লিখেছেন বটে মামুন, খুঁজেছেন তাঁর বিবিধ পদচিহ্ন; নিজের নিরীহ সাদামাটা জন্মবৃত্তান্তের খানিকটা ডিমেন্টিক হতে থাকা মায়ের দাদির কাছে শুনতে শুনতে তিনি মুখোমুখি হয়েছেন পাখিহীনতার কষ্টে আচ্ছন্ন শিশুপুত্রের। তবু ব্যক্তিগত গদ্য হয়েও তা ব্যক্তিগত নয়। শেষ পর্যন্ত কথা ইশারা সমকালের যৌথ কোরাস, উত্তর-অন্বেষা। যে-শনাক্তকরণ চিহ্ন তিনি তুলে ধরেন, শুরুর যে-পাঁচালি বয়ন করেন, কিংবা সমসময়ের মানুষের সঙ্গে চলতে চলতে নিরুপায় বাজার-সদাইয়ে শামিল হন, সেসবের সবকিছুতেই ঘটতে থাকে সামাজিক সংখ্যালঘুত্বের ব্যক্তিক উদ্ভাস। একটু একটু করে সময়কে চিনতে থাকি আমরা, চিনতে থাকি মামুনকেও, যিনি শেষ পর্যন্ত ভাবতে শুরু করেন, ‘এখন মনে হয়, লেখায় আধুনিকতার চেয়ে ট্র্যাডিশন আবিষ্কার করাই বড় সমস্যা!’ মামুনের লিখনশৈলীর আধুনিকতায় যাঁরা পথ হারিয়ে ফেলেন, গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খেতে থাকেন, সংগুপ্ত ঈর্ষাও বয়ে বেড়ান, তাঁরা এবার নতুন করে ভাবতে পারেন, ট্র্যাডিশনের অন্বেষণ কত গভীর হলে আধুনিকতারও বাক বদলায়। দুর্বলচিত্তের মানুষ হিসেবে নিজেকে গ্রন্থিত করতে থাকলেও একটি প্রস্ত্ততিপর্বের আখ্যানও পেতে থাকি আমরা। সেই প্রস্ত্ততিপর্বে থাকে আলাদা হওয়ার নয়, বরং মেলানোর প্রস্ত্ততি, ‘সহস্র বন্ধন মাঝে মুক্তির স্বাদ’ নেওয়ার প্রস্ত্ততি। খাতায় তিনি লিখে…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.