ঘরের বাইরে কমের মধ্যে একবার হলেও এক কাপ চা আমরা সবাই খেতে চাই। কিন্তু গত ১০-১৫ বছর ধরে কী যে চা খাচ্ছি নিজেই জানি না। চট্টগ্রাম শহরের প্রায় সব অঞ্চলেই কম বেশি চা খেয়েছি। মনে হয়েছে এ শহরে কে কার চেয়ে কত বেশি খারাপ চা বানাতে পারে তার অঘোষিত প্রতিযোগিতা চলছে। আমাদের শহরের প্রশাসক ও জনপ্রতিনিধিরা প্রতিনিয়তই নাগরিক সুবিধার কথা বলেন, যে শহরে এক কাপ ভালো চা, সারা শহর খুঁজেও পাওয়া যায় না, সে শহরে নাগরিক সুবিধা,সে শহরকে প্রতিনিয়ত নগর বলা, আমাদের অভ্যাসই কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন রাখা। আমাদের একেক জনের ঘর আজকাল যেরকম সিরিয়ালের মতো সাজানো, আর বাইরে সবকিছু ধ্বস্ত, আমাদের মতো সমাজেরই মানায় দেখা হলেই ‘বাসায় আসবেন’ বলা। আমরা অতিথিপরায়ণ কারণ আমাদের অতিথি নারায়ণ। কিন্তু আমাদের ঘরের বাইরে চায়ের দোকানে আমরাতো খদ্দের, আর আমাদের কাছে খদ্দের মানেই, তাকে আঁচাতে হবে, ডোবাতে হবে, কোপাতে হবে, আমাদের কাছে খদ্দের এক জলজ্যান্ত শয়তান, তার অনিষ্ট করতে পারলেই স্বর্গের দরজা খুলবে, নইলে আল্লাহ/ভগবান আমাদের ঠ্যাঙ্গাবেন। আমরা ধর্মপরায়ণ তাই যত পারি অন্যের ক্ষতি করি। কারণ তাই মোক্ষম যাতে অন্যের ক্ষতি হবে আর নিজের লাভ হবে এবং আল্লাহ/ভগবানের নাম টিকে থাকবে।
মাসুদ করিম
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৮ comments
রায়হান রশিদ - ১৯ আগস্ট ২০০৮ (১:৩৮ অপরাহ্ণ)
এই হল যাকে বলে চায়ের কাপে ঝড় তোলা। এক কাপ চা নিয়ে আপনার লেখায় যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে:
১. নগর সভ্যতা এবং অন্ধবালকের নামবিভ্রাট,
২. স্বর্গমর্ত্য, আল্লাহ ভগবান (এবং শয়তান),
৩. খদ্দের-ক্রেতার মধ্যকার সম্পর্কের জটিল টানাপোড়েন,
৪. গৃহসজ্জা এবং আকাশ সংস্কৃতি,
৫. আতিথেয়তা, কাস্টমার সার্ভিস এবং পূঁজিবাদের লোভলালসা।
চায়ের দোকানে বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা দেয়ার সময় অনেক আশা/পিপাসা নিয়ে চা দিতে বলি আমরা। এরপর ঘোলাটে রঙয়ের স্যাকারিন স্বাদের যে তরল পদার্থটি সামনে দেয়া হয় তা দেখে প্রাণনাশের (নিজের কিংবা অন্যের) ইচ্ছে জাগেনি কখনো, খুব কম মানুষই মনে হয় বুকে হাত রেখে তা বলতে পারবে। সুতরাং আমাদের জীবনে এক কাপ চায়ের তাৎপর্য কোনভাবেই খাটো করে দেখা যাবেনা। আর বিন্দুর মাঝে যদি সিন্ধুই না দেখতে পারলাম তাহলে আর ব্লগ লিখছি-পড়ছি কেন? দোকানীর চাকে ঘিরে আমাদের সবার সম্মিলিত ক্রোধ, স্বপ্নভঙ্গ, হতাশা এবং জিঘাংসা বিজড়িত এই বিষয়টা নিয়ে লিখবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মাসুদ করিম - ২০ আগস্ট ২০০৮ (৪:২২ অপরাহ্ণ)
চমৎকার মন্তব্য।এবার দেখি এই দুষ্কর্মে কার কী অবদান:
1. বড় পুঁজির নির্দয় দস্যুতা: যেমন তেমন মানের দুধ আমদানি।মেয়াদোত্তীর্ণ,তেজষ্ক্রিয় দুধ এনে সুদৃশ্য মোড়কে এর বাজারজাতকরণ।কনডেন্সড মিল্ক উৎপাদনের জন্য কারখানায় বিনিয়োগ এবং দুধহীন দুধ তৈরীর চরম ভাওতাবাজী।
2. নিম্নমানের পুঁজির চালিয়াতি: ব্যবহৃত চা-পাতা শুকিয়ে চা-পাতা হিসেবে আবার তা বিক্রি করা।
3. দোকানদারি বুদ্ধির অমোঘ ব্যবহার: একই চা-পাতা জ্বাল দিতেই থাকা।
4.সামাজিক অবক্ষয়: ডাইলসেবীদের ভয়ংকর চিনির চাহিদা পূরণ করতে মাত্রাহীন চিনির প্রয়োগ।
প্রবীর পাল - ২০ আগস্ট ২০০৮ (৯:৩২ পূর্বাহ্ণ)
১. চায়ের মত নিরীহ মাদক বিশ্বে এখনো আবিষকৃত হয়নি। চা জনপ্রিয়, চা গ্রহণযোগ্য, চা পরিবারিকভাবে স্বীকৃত এবং চা চা-ই। বর্ষার দিনে বাইরে থেকে একটু ভিজে এলে, শীত শীত ও নাজেহাল ভাবটা কাটাতে, অলস দুপুরে নিজেকে খুঁজে পেতে (চাঙ্গা করে নিতে), রাত জাগতে চাইলে, আড্ডায় চায়ের তুলনা নেই। চোখের সামনে ধোঁয়া উঠা একটি গরম কাপ অপেক্ষায় আছে কখন চুমুক পড়বে, ভাবতেই গায়ে একটা “জোশ” এসে যায়। চায়ের তুলনা শুধু চা-ই।
২. চায়ের তৃষ্ণা কখনো কমে না, মরে না, তাই চায়ে তৃপ্তি হয় না কারোরই। তৃপ্তি পেলেই গেল। মজাটাই গেল। সেই চা-ই সেরা চা, এক কাপ খেলেই আরেক কাপের জন্য জিব নিশপিশ করবে, মন নিশ্চিত হয়ে যাবে পরের কাপই গেল কাপের চেয়ে মজাদার ও চাঙ্গাকারী, পরের কাপটাই সেরা।
৩. আমার বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ট বন্ধুর (আলম, বাবু, রূপমসহ আরো কয়েকজন) বাসা ছিল চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড রেলওয়ে কলোনীতে, আমারও। বলছি প্রায় বছর দশেক আগের কথা। আমরা মাঝে মাঝেই কারো না কারো বাসায় আড্ডা দিতাম ঘন্টার পর ঘন্টা। চায়ের ভক্ত ছিল সবাই, বলাই বাহুল্য। মাঝে মাঝে আড্ডার বিষয়ও হয়ে উঠতো “চা”। কোন “হোটেলে” কেমন চা বানায়, কোন চায়ের তৃপ্তি কেমন, যদিও এ আলোচনার কোন সিদ্ধান্ত হয় না কখনোই, সবার জিবই আলাদা আলাদা হওয়াতে কার খাওয়া চায়ের কে কেমন স্বাদ পায়, শত চেষ্টাতে সে অপরকে বোঝাতে পারে না, সে বুঝটা একান্ত নিজের নিজের। সেদিন আড্ডায় আমার এক বন্ধু বলল, “অমুক হোটেলে”র চা ই সেরা, তারা চায়ের সাথে বিস্কিট মিশিয়ে দেয় গুড়ো করে, কলাও কচলে মিশিয়ে দেয়, ফলে স্বাদটাও হয়ে যায় অন্যরকম, ওফ। না খেলে বোঝা যাবে না। অপর জন বলল, ধুর, আমি বলি “তমুক হোটেলের” কথা, তারা মেশায় পুদিনা পাতা, আর ডিম, তাদের চায়ের ঘনত্বও যেমন স্বাদও তেমন। আরেকজন বলে, চায়ের পাতাটা কোত্থেকে আসে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমি খেয়েছিলাম “সমুক” জায়গায় দার্জর্িলিং থেকে আসা পাতা দিয়ে তৈরী চা। আড্ডাটা আমার বাসায় হ্িচছল বলে, মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিই, আমিও এক হাত দেখিয়ে দিই বন্ধুদের, চা কাকে বলে। বললাম, তোমরা বস, আমি চা বানিয়ে নিয়ে আসি। তারা সানন্দে সম্মতি দিলে, কালবিলম্ব না করে কাজে নেমে পড়ি। রান্নাঘরে গিয়ে প্রথমেই বিপুল চেষ্টায় খুঁজে বের করি চা পাতা। পানি ফুটতে থাকলে ভাবি, শুধু চা আর চিনি মিশিয়ে চা বানালে এই চায়ের “বিশেষত্ব” আর কি রইল। এতো হবে যেমন তেমন চা। ভাবলাম, চায়ের পাতার সাথে বাড়তি কিছু যোগ করি, যাতে বন্ধুরা আমার তৈরী চায়ের গল্প বিভিন্ন জায়গায় করতে পারে, নিজেরাও খেয়ে বিশেষ তৃপ্তি লাভ করতে পারে। রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে আর কি কি পাওয়া যায় খঁ্ুজলাম, হাতের কাছে কলা নেই, কিন্তু একটি কমলা দেখে একটু খোসা ছিঁড়ে নিয়ে এক টুকরা দিলাম কেটলিতে, হেভি সেন্ট বের হবে। বিস্কিট আছে, এতো দিতেই হবে, দিলাম গুড়ো করে। তেজপাতাও দেখি আছে, এ তো দেয়াই যায়। জিরা? দেব কি ? দেই একটু । দিলাম, দেখি কি হয়? লবন তো অবশ্যই দিতে হবে, নুনের গুনের কথা কে না জানে। রসুন? দেব?… আরও দিয়েছিলাম অনেককিছুই, আজ আর ফাঁস করতে চাই না। নিশ্চিতও ছিলাম ধন্য ধন্য পড়ে যাবে। আমি নিজে নিজেই অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে বন্ধুদের দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে আছি, রূপম চুমুক দিয়েই বলল, এটা কি? আমিও সানন্দে জবাব দিলাম, কেন, চা? {…..এখানে আরেকটি ঘটনা প্রাসঙ্গিক হতে পারে, “কেন, চা” এই জবাবের সাথে মিলে যায় বলে। তখন চট্টগ্রাম আঁঁিলয়সে ঋতি্বক ঘটক রেট্রো হচ্ছিল কয়েকদিন ব্যাপী। আমাদের এক আর্টিষ্ট বন্ধু (নাম বলছি না) বিশাল একটা ছবি এঁকে নিয়ে এসে প্রদশনর্ী হলের সামনে টাঙিয়ে রেখেছে। যারা ঋতি্বক ঘটকের চেহারা চেনে তারা বুঝতে পারল না, ছবিটা কার আর যারা ঋতি্বক ঘটকের চেহারা দেখেনি আগে (তাদের সংখ্যা কম) তার অনুমান করে নিল, যেহেতু ঋতি্বকের সিনেমাই দেখানো হচেছ ভেতরে, সেহেতু বাইরে টাঙানো ছবিটাও নিঃসন্দেহে ঋতি্বকের , তারা কোন প্রশ্ন করলো না। বাকীরা কয়েকদিন ধরে অনবরত প্রশ্ন করতে থাকলো, ছবিটা কার, কার, কার? আয়োজক কতর্ৃপক্ষ এক পর্যায়ে অতিষ্ট হয়ে আর্টিষ্টকে বলল, ছবিটার নীচে “ঋতি্বক ঘটক” নামটা লিখে দিলে ভাল হয়। আটিষ্ট মারমুখী ভঙ্গিতে বলল, “কেন”, তাকে বলা হল “না, এটা একটা প্রচলিত রীতি, যেমন কারো ছবি এঁেক তার নাম ও ব্রাকেটে জন্ম-মৃত্যুর তারিখ ইত্যাদি তথ্যগুলো থাকলে ভাল। আর্টিষ্ট কি বুঝল কে জানে, গম্ভীর হয়ে বলল, আচ্ছা। কেউ আর তার সামনে খোলাসা করল না প্রকৃত ঘটনা, কারণ সবারই বাল্যকালে পড়া কবিতাটা মনে ছিল (দাদার হাতে কলম ছিল, ছুঁড়ে মেরেছে… এখানে পড়ুন “তুলি ছিল”)} আমিও জবাবে বলেছিলাম, কেন, চা? কেউই আর কথা বাড়ায়নি, নীরবে চা পান শেষ করল, পান শেষে অকৃতজ্ঞ (!) রূপম বলল, রান্নাঘরে যা যা পাওয়া যায়, মরিচ ছাড়া সবই দিয়
েছ তোমার চায়ে, মরিচটাও একটু দাওনি কেন?
৪. চা যেমনই বানাই, মাসুদ করিমকে শোনাতে চাই আমার “ফরেন চা” খাওয়ার গল্প। কোলকাতার কোন এক জায়গায়, নাটক দেখতে গিয়ে, পান করেছিলাম চা। চায়ের সেই স্বাদ আর মনে নেই, কিন্তু মনে আছে, দেখি, সবাই চা খাওয়ার পর পাত্রটা ছুঁড়ে ফেলছিল রাস্তার পাশে। মাটির পাত্রটা ভেঙে চুরমার হয়ে পড়ছিল দোকানীর কাছেই। সেদিন চা পানের চেয়ে মাটির পাত্রে চা পানই উল্লেখযোগ্য ঠেকছিল আমার কাছে। চা পান শেষে আমিও ছুঁড়ে ভেঙে ফেললাম পাত্রটা, ঐ পাত্র ভাঙার মজাটা নেহাত কম নয়। এখন মাসুদ করিমকে সে পরামর্শ কিভাবে দিই, আমি চা পান করেছিলাম ভাঁড়ে, আপনি পান করেছেন কাপে।
রেজাউল করিম সুমন - ১ সেপ্টেম্বর ২০০৮ (৫:৫৮ অপরাহ্ণ)
প্রবীরদার স্ব-রচিত ও নিরীক্ষালব্ধ চা চেখে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি! সেই সুযোগ বোধহয় কেবল তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের জন্যই সংরক্ষিত ছিল। তবে একসঙ্গে চা পানের সুযোগ প্রত্যেক সাক্ষাতেই হয়, হয়েছিল আজ বিকেলেও।
রায়হানের বাসায় একসময় আমাদের আড্ডা ছিল। বিকেলেই জড়ো হতাম কয়েকজন; ছুটির দিনে দিনভর চলত সেই আড্ডা — কখনো-বা সারা রাত, এমনকী পরদিন পর্যন্তও। অন্দরমহল থেকে নির্দিষ্ট সময় পর পর ট্রে হাতে কেউ-না-কেউ আবির্ভূত হতো। আর মাঝে-মধ্যে আমাদেরই গিয়ে বসতে হতো খাবার টেবিলে। সেই আড্ডারই একটা অংশ ছিল নির্মাণ-এর নিয়মিত পাঠচক্র।
মাসুদ ভাই সত্যিকারের চা-প্রেমী। খেতে ও খাওয়াতে পছন্দ করেন চৈনিক চা। তাঁর “এক কাপ চা” লেখাটা পড়তে গিয়ে অনেকেরই হয়তো মনে পড়বে The Book of Tea-র কথা। কেবল চা-চর্যার নয়, এ বইটিকে বলা হয় জীবন-চর্যার বই। জাপানি ভাবুক কাকুজো ওকাকুরা (১৮৬৩–১৯১৩) বইটি লিখেছিলেন আমেরিকায় বসে, ইংরেজিতে, ১৯০৬ সালে। ঠিক একশো বছর পর বইটির বঙ্গানুবাদ প্রকাশিত হয়েছে; অনুবাদক : সুদীপ্ত চক্রবর্তী, প্রকাশক: কলকাতার “মনফকিরা”। তারই দুটি অধ্যায় থেকে কিছু অংশ সবাই মিলে পড়া যাক এখানে।
…
চা একটি শিল্পকর্ম, এর আসল গুণগুলি দেখা দেয় কেবল ওস্তাদের হাতেই। চায়েরও ভালো আর মন্দ আছে যেমন চিত্রকলারও আছে, সাধারণত পরেরটাই বেশি আছে। নিখুঁত চা বানানোর কোনো ধরাবাঁধা প্রণালী নেই, ঠিক যেমন ছক কষা নেই একটি কালজয়ী ছবি আঁকার। প্রতিবারের চা আসে নতুন মেজাজ নিয়ে, জলের সাথে তাপের সাথে তার নিত্য নব সম্পর্ক গড়ে, প্রত্যেকবার তার বলার থাকে এক নবীন কাহিনী। কিন্তু একটি ব্যাপার চায়ে সর্বদাই থাকতে হবে — ঐ তার অন্তরের, অন্দরের, নির্ভুল সুন্দরতা। আসলে আমরা তো জীবনের অতি সরল মূল ব্যাপারগুলোকে জানতে-চিনতেই বার বার ভুল করি আর তার মাশুল গুনে চলি। সুঙ্ কবি লিলিচাই তো দুঃখে বলেই গেছেন, পৃথিবীতে তিনটি মহাভুল হয়ে চলেছে — মিথ্যা শিক্ষায় উজ্জ্বল যৌবনের অপচয়, অপরিশীলিত প্রশংসায় প্রকৃত শিল্পের অবনমন, আর অশিক্ষিত হাতে খাসা চায়ের বিনষ্টি।
…
চায়ের শুরু চিকিৎসায়, পৌঁছেছে সে পানীয়ে। অষ্টম শতকের চিনদেশে তার প্রথম পদার্পণ কাব্যের আঙিনায়, মৃদু আমোদের আঙ্গিক হিসেবে। পঞ্চদশ শতকের জাপান তাকে গরীয়ান্ করেছিল সৌন্দর্যদর্শনের এক ধর্মই বানিয়ে; নাম দিয়েছিল চা-চর্যা। চা-চর্যা এক ধর্মদিশা, যা খুঁজে বেড়ায় সুন্দরতার পরশমণি দিনগত আবিলতার ভিড়ে। তা বুনে চলে শুদ্ধতা আর মিলনগাথা, পারস্পরিক বদান্যতা, সমাজবিধির স্বপ্নময়তা। নিশ্চয়তই এ অসম্পূর্ণতার গুণগ্রাহিতা, জীবন নামক এই অসম্ভবের মধ্যেই কিছুকে সম্ভব করে তোলার সবিনয় সাধনা।
চায়ের দর্শন শুধু সাধারণ অর্থে সৌন্দর্যতত্ত্বই নয়, কারণ এতে মূল্যবোধ আর ধর্মের সঙ্গে ওতপ্রোত থাকে মানুষ আর প্রকৃতি সম্বন্ধে আমাদের যাবতীয় বোধ। এ আমাদের পরিচ্ছন্নতা শেখায়, তায় স্বাস্থ্যসম্মত, এ অর্থনীতিও [?] বটে, কারণ এর মাধ্যমে দেখি, আরাম আছে সারল্যেই, জটিলতা আর মহার্ঘতায় নয়। এ যেন নৈতিকতার জ্যামিতি, বিশ্বজগতের সঙ্গে আমাদের আনুপাতিক সম্পর্কের সূত্রধার। চা-চর্যা হল প্রাচ্য গণতন্ত্রের প্রকৃত প্রাণশক্তির প্রতিভূ, কারণ সে তার প্রত্যেক পিয়াসীকেই করে তোলে রুচির রাজন্য।
মাসুদ করিম - ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৮ (৭:৫০ অপরাহ্ণ)
ছবিটি চমৎকার। একজন চা-পায়ীর তৃষ্ণা চাঙ্গা হয়ে ওঠে কিসে জানেন? এই ধূমায়িত পানির দৃশ্যে।জাপানী আয়োজনের সাথে আমি পরিচিত নই, কিন্তু চীনা আয়োজনের সাথে আমি পরিচিত। গরম পানিতে চা পাতা দিলেন,মূহুর্তের মধ্যে সেই গরম পানীয় দিয়ে চায়ের কাপটা ধুয়ে নিলেন,পাঁচ মিনিট পর চা ঢেলে পান করতে লাগলেন,পানি শেষ হলে আবার গরম পানি দিলেন,পান করলেন,একই পাতায় তিনবার গরম পানি দিয়ে পান করতে পারেন।পাতা চা তিনবার ফুটে অনন্য স্বাদ উপহার দেয় আর আমাদের দানা চা তিনবার ফুটে গজ হয়।
মাসুদ করিম - ৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৮:১০ অপরাহ্ণ)
হঠাৎ করে আলোচনায় রংপুরের কাউনিয়া, প্রথমে আরিফুল হকের লেখায় প্রথম আলোতে গতকাল এবং তারপর আজকে অজয় দাশগুপ্তের লেখায় সমকালে। বিষয় : চা-এর বিজ্ঞাপন, কিন্তু আজকের নয় শতবছরের আগের, যখন ইংরেজরা পানীয় হিসেবে চা-কে এখানে জনপ্রিয় করতে চাইছিল।
পড়ুন আরিফুল হকের যাহাতে নাহিকো মাদকতা-দোষ এবং অজয় দাশগুপ্তের জাতীয় যাদুঘর কর্তৃপক্ষের প্রতি।
মাসুদ করিম - ১৬ এপ্রিল ২০১৩ (১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ (১২:১৭ অপরাহ্ণ)