রবীন্দ্রনাথ আজ আমাদের মধ্যে বেঁচে নেই। এই বেঁচে না থাকা রবীন্দ্রনাথ সেই ১৯৪২ থেকে বছরে দুদিন তাঁর জন্মমৃত্যুর তারিখ ঘোষণায় আমাদের পত্রপত্রিকায় উপস্থিত আছেন। আমরা তাঁকে নিয়ে গর্বিত। আমরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করি এবং তাঁকে নিয়ে আমাদের উচ্ছ্বাস আমাদের সাংষ্কৃতিক অবস্থানকে উচ্চকিত করে। কিন্তু আমরা কি রবীন্দ্রনাথকে ছেনে দেখছি? কিন্তু আমরা কি আমাদের হাতে ছেনে আমাদের রবীন্দ্রনাথকে তৈরী করছি? কিন্তু আমরা কেন ওপথে যাচ্ছি না, যখন সে পথে না গেলে, আমরা জানি, অন্তত বাংলাদেশের রবীন্দ্রনাথকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি — এ গানের মধ্য দিয়ে যে দেশের সৃষ্টি, সে দেশের ভেতর থেকে যদি রবীন্দ্রনাথের বিগ্রহ বেরিয়ে না আসে, তবে রবীন্দ্রনাথ শুধু ভারতবর্ষে প্রতিষ্ঠা পেয়ে, কতটুকু রবীন্দ্রনাথ হতে পারবেন? আমাদের রবীন্দ্রগানের চর্যায় ওয়াহিদুল হকের যুগ শেষ হয়ে গেছে, যদিও ছায়ানট এখনো আছে, কিন্তু সনজীদা খাতুন পরবর্তী কাউকে এখনো আমরা দেখতে পাচ্ছি না, তারপরও রবীন্দ্রগানের যে প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশে তা এখনো উল্লেখযোগ্য। আর গানের পথ যদি ছেড়ে আসি, যদি বলি তার কবিতা গল্প উপন্যাস নাটক প্রবন্ধের কথা, তাহলে কোথায় আমাদের অবস্থান, আমাদের মধ্যে কজন তখন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে পারব? রবীন্দ্রনাথের গান আর বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম যেমন একাত্ম হতে পেরেছে, রবীন্দ্রসাহিত্য কি সে অর্থে আমাদের জীবনযাপনে কোনো আত্মীয়তার সৃষ্টি করতে পেরেছে? একেবারেই পারেনি, কারণ আমরাও, এই বাংলাদেশ, স্বাধীনতা পরবর্তী আর কোনো উল্লেখযোগ্য অর্জনে ধন্য হতে পারিনি। যদি আমরা পারতাম অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক অবস্থানকে সমুন্নত রাখতে, যদি আমরা পারতাম শিক্ষার হারকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দিতে, তাহলে আমরা সত্যিই পারতাম রবীন্দ্রসাহিত্যকে আমাদের অন্তরে ধারণ করতে। আর তাতেই ছেনে ছেনে জানা হতো আমাদের রবীন্দ্রনাথকে, বেরিয়ে আসতো বহুবিধ উন্মোচন, প্রযোজিত হতো অনেকান্ত নির্দেশনা, আর এভাবেই রবীন্দ্রবিগ্রহের সামনে আমরাও দাঁড়িয়ে থাকতাম, আমাদের উচ্চকিত জাতীয়তা আর মানবিক পরিচয় নিয়ে। আজ তাঁর এই আরেকটি প্রয়াণদিবসে অস্তিত্বশীল থেকে একথাই বারবার বলতে চাই রবীন্দ্রপাঠ্য যেন এই বাংলাদেশে আরো সুদূরপ্রয়াসী হয়, বহুতর মানুষের যেন তা অধিগম্য হয়। বাংলাভাষার রক্ষাকবচ রবীন্দ্রসাহিত্য বা বলতে পারি রবীন্দ্রপাঠ্য। তাঁর কবিতা ও গদ্যের সৃষ্টিতে যদি আমরা নিবিষ্ট হতে পারি তাহলে বাংলাদেশের বাংলা ভাষা জীবনের প্রতিটি ধরনের প্রতিটি সৃষ্টিশীলতার প্রকাশে অনন্য ও চিরদিনের হয়ে উঠবে। এমন অসাধারন একজন লেখকের উত্তরাধিকার সবার জীবনে ঘটে না। হায় উত্তরাধিকার! আহা উত্তরাধিকার!
আমার আরো রবীন্দ্রনাথ : চীনে অপমানিত রবীন্দ্রনাথ, অহিফেন ঠাকুর, মুখের কথা লেখা, উপন্যাস : যোগাযোগ, সীমানা ছাড়ায়ে।
মাসুদ করিম
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৫ comments
মাসুদ করিম - ১৭ আগস্ট ২০০৯ (২:৪২ পূর্বাহ্ণ)
৩১ শ্রাবণ ১৩১৭ প্রকাশিত হয়েছিল গীতাঞ্জলি। সে হিসেবে গত রবিবার ছিল গীতাঞ্জলির শততম বার্ষিকী। কিন্তু দিবসটি ঠিক মতো পালিত হল না রবীন্দ্রভারতীতে। গণশক্তির প্রতিবেদন।প্রথম পৃষ্টার পর।
মাসুদ করিম - ২৪ আগস্ট ২০০৯ (৫:৪৭ অপরাহ্ণ)
নোবেল তদন্ত আবার বন্ধ করল সিবিআই!
হতাশ শান্তিনিকেতন, ক্ষুব্ধ রাজনৈতিক মহল
চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় : শান্তিনিকেতন, ২৩ আগস্ট–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল চুরির তদন্ত ফের বন্ধ করে দিল সিবিআই। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার। তদন্তে ইন্টারপোলের কাছ থেকে ‘ইনভেস্টিগেশন ইনপুটস’ নিত সিবিআই। সিবিআইয়ের স্পেশাল ক্রাইম সেল এই তদন্ত শুরু করেছিল। আপাতত আর কোনো সূত্র না মেলায় তদন্ত বন্ধ রইল জানিয়েছে সিবিআই। ২০০৫ সালের ২৫ মার্চ নোবেল পদকসহ বেশ কিছু মূল্যবান সামগ্রী চুরি যায়। তদন্ত শুরু করে সিআইডি। পরে ৩১ মার্চ সিবিআই তদন্তভার নিয়ে ১০ লক্ষ টাকা পুরষ্কার ঘোষনা করেছিল। খরচ হয়ে গেছে কোটি টাকার ওপরে। দু-চারজনকে গ্রেপ্তার করা ছাড়া আর কিছুই পারেনি সিবিআই। মধ্যবর্তী সময়ে সুইডেন থেকে নোবেল কমিটি খোয়া যাওয়া পদকে রেপ্লিকা পাঠিয়েছে বিশ্বভারতীতে। বোলপুর আদালতে গত ২১ আগস্ট সিবিআই লিখিত তদন্ত বন্ধের কথা জানায়। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ রাজনৈতিক মহল। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, সব রাজনৈতিক দল মিলে ঠিক করেছিল সিবিআই তদন্দ হবে। হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়াটা উচিত নয়। রেলমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, নোবেল চুরির তদন্ত সিবিআইকেই করতে হবে। প্রণব মুখার্জির সঙ্গে আমি কথা বলব। কংগ্রেস নেতা সুব্রত মুখার্জি বলেছেন, এই তদন্ত সিবিআইয়ের এক্তিয়ারে আর নেই। শুনেছি ইন্টারপোলের সাহায্য নেয়া হবে। বিশ্বভারতীর উপাচার্য অধ্যাপক রজতকান্ত রায় জানিয়েছেন, ‘শান্তিনিকেতন হতাশ।’ এ ব্যাপারে ক্ষুব্ধ কর্মীসভা এবং অধ্যাপক সভা দুই সংগঠনই বিশ্বভারতীর আচার্য এবং প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও পরিদর্শক রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিলের হস্তক্ষেপের আর্জি জানিয়ে চিঠি লিখছে। গত বছর ২৬ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফার তদন্ত শুরুর আগে বোলপুর মহকুমা আদালতে ১৬ সেপ্টেম্বর সিবিআই হলফনামা দিয়ে বলেছিল, নতুন সূত্র মিলেছে। তারা তদন্ত শুরু করতে চায়। আদালত তদন্ত পুনরায় চালু করার আদেশ দেয়। দ্বিতীয় দফার তদন্ত চলার সময় তদন্তকারী অফিসার পার্থসারথি বসু ঘুষ-কাণ্ডে জড়িয়ে গ্রেপ্তার হন। নতুন তদন্তকারী অফিসার হন পুষ্পল পাল।
আজকাল, ২৪ আগস্ট ২০০৯।
মাসুদ করিম - ৮ মে ২০১৩ (২:৩৯ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৬ আগস্ট ২০১৫ (১:৩৬ অপরাহ্ণ)
Pingback: মুক্তাঙ্গন | চীনে অপমানিত রবীন্দ্রনাথ