Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর
ইম্পেরিয়াম রোমানাম :: অগাস্টাস এবং রোমক সাম্রাজ্য
সিযার নিহত হওয়ার পর জানা গেল যে তিনি তাঁর এক বোনের উনিশ বছর বয়স্ক নাতিকে দত্তক নিয়েছিলেন। আমরা যেখান থেকে খবরটি পাই সেখানে লেখা আছে: Gaium Octávium in familían noménque adotavit — তিনি গাইয়াস অক্টাভিয়াসকে পরিবারের একজন সদস্য এবং তাঁর নামের উত্তরাধিকারী হিসেবে গ্রহণ করেছেন। সেদিন থেকে যুবকটি গাইয়াস জুলিয়াস সিযার হিসেবে পরিচিত হলেন, আর সেই সঙ্গে বাড়তি একটি নাম হিসেবে পেলেন অক্টাভিয়ানাস (ইংরেজিতে, অক্টাভিয়াস)।
গোড়ার দিকে প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিবিদরা তাঁকে উপেক্ষা করার চেষ্টা করলেন, আর সেটাই হলো তাঁদের সবচেয়ে বড় ভুল। কয়েক বছরের মধ্যে তিনি তাঁর এক সৈন্যবাহিনী নিয়ে রোমের বাইরে শিবির ফেললেন এবং সিনেটকে বাধ্য করলেন মাত্র ২১ বছর বয়েসে তাঁকে কনসাল হিসেবে নিযুক্ত করতে। এর পরের পনের বছরের ইতিহাস রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব আর গৃহযুদ্ধের ইতিহাস, যেখানে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন অক্টাভিয়ান আর এন্টনি, যিনি একসময় সিযারের ঘনিষ্ঠতম মিত্র ছিলেন। এন্টনি আর মিশরের রানী ক্লিওপেট্রা অবশেষে পরাজিত হন ও মৃত্যুবরণ করেন, এবং, সাম্রাজ্যের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন অক্টাভিয়ান; তখন তাঁর বয়স পঁয়ত্রিশ। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও গৃহযুদ্ধ চলাকালে বেশ নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি, এবং ধারণা করা হয়েছিল এক আতঙ্কের রাজত্ব কায়েম করবেন অক্টাভিয়ান, কিন্তু বাস্তবে তার উল্টোটাই ঘটল।
অক্টাভিয়ান সারা জীবনের জন্য ডিক্টেটর বা কনসাল হতে চাননি, এবং তিনি সিনেটকে বলে দিয়েছিলেন যে তিনি তাদের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিচ্ছেন। অবশ্য নিজের হাতে তিনি এমন কিছু ক্ষমতা রেখে দিয়েছিলেন যেগুলো ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একথা বলা অসঙ্গত হবে না যে, রোমকে তিনি এক নতুন সংবিধান দিয়েছিলেন, যে-সংবিধান অনুযায়ী একজনের হাতেই ছিল বেশিরভাগ ক্ষমতা, কিন্তু সিনেট, কনসাল ও রাষ্ট্রের অন্যান্য কর্মকর্তারাও সেখানে ছিল, এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় তাঁদের কথারও যথেষ্ট মূল্য দেয়া হতো। সেকারণে, তাঁকে ‘Augustus’ (মানে, ‘শ্রদ্ধেয়’, ‘রাজসিক’) উপাধিতে ভূষিত করে সিনেট একভাবে তাদের কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছিল। ভাবীকালের কাছে সেই নামেই পরিচিত হয়ে আছেন তিনি, এবং ২৭ খৃষ্ট পূর্বাব্দ থেকে ১৪ খৃষ্টাব্দে ছিয়াত্তর বছর বয়েসে মৃত্যু পর্যন্ত সেই উপাধি ধারণ করেছিলেন তিনি।
অগাস্টাস ছিলেন এক নতুন ধরনের শাসকের প্রথম প্রতিনিধি। তাঁর মৃত্যুর পর সম্রাট হন তাঁর সৎ পুত্র তাইবেরিয়াস, এবং তার পর আরো অনেকে, যাদের শেষজন সিংহাসনচ্যুত হন ৪৭৬ খৃষ্টাব্দে, অগাস্টাস তাঁর নতুন ধরনের শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের অর্ধ সহস্রাব্দ বা পাঁচশ বছর পর। ইংরেজিতে এই শাসকদের বলা হয় ‘emperor’ (আমরা বাংলায় বলি, ‘সম্রাট’), কিন্তু জার্মান ভাষায় শব্দটা ‘Kaiser’, এসেছে ‘Caesar’ থেকে, এবং বেশ আগেভাগেই ঢুকে পড়েছিল জার্মান ভাষা পরিবারে। আধুনিক জার্মানিক ভাষা, যেমন সুইডিশ, ডেনিশ, ওলন্দাজ, এবং আইসল্যান্ডিকেও পাওয়া যাবে শব্দটি। আর, কথাটি অশুদ্ধ নয় মোটেই, কারণ সব সম্রাটেরই পুরো নামের একটি অংশ ছিল ‘Caesar’। তবে তাঁদের আনুষ্ঠানিক পদবী ছিল ‘Augustus’ — এক সাম্মানিক নাম, যা তাঁরা প্রত্যেকেই ধারণ করেছেন। তাঁদের নামে আরেকটি শব্দ-ও ছিল — ‘imperator’; আর এটাই ইংরেজি ‘emperor’ শব্দের উৎস, এসেছে ফরাসি ‘empereur’ হয়ে।
‘Imperator’ শব্দের আধুনিক মানে ‘অধিনায়ক, দলপতি’ (commander), যা ক্রিয়াপদ ‘imperare’ বা ‘আদেশ করা’ (to command) এবং গুণবাচক বিশেষ্য ‘imperium’ অর্থাৎ, ‘আদেশ, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব’ (command, power, authority)-র সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত।
সিনেট যাঁকেই আদেশ করার ক্ষমতা দিত — আগেই বলা হয়েছে, সাধারণত এক বছরের জন্য বা বিশেষ কোনো সামরিক অভিযানের জন্য — তাঁর-ই থাকত ‘imperium’, এবং তাঁকে বলা হতো ‘imperator’। অগাস্টাস যে নীতিটা চালু করেছিলেন তা হচ্ছে তাঁর হাতেই থাকত সর্বোচ্চ ক্ষমতা — ‘summum imperium’, আর কাজেই তিনি-ই সবসময় ‘imperator’ ছিলেন। অবশ্যই তার মানে ছিল এই যে, যে ভূ-ভাগ তাঁর কর্তৃত্বাধীন ছিল সেখানে তিনি সবসময় স্বাধীনভাবে চলতে পারতেন, দরকার হলে বল প্রয়োগ করে হলেও। সে-কারণে এই ভূ-ভাগকে ‘imperium’-ও বলা হতো, আর সেখান থেকেই এসেছে আধুনিক শব্দ ‘empire’। রোমক সাম্রাজ্যকে তাই বলা হতো ‘imperium romanum’।
দীর্ঘদিন শাসন করেছেন অগাস্টাস, এবং মোটের ওপর, ভালোভাবেই; বেসামরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, অর্থনীতি শক্তিশালী হয়েছিল, এবং নানান প্রদেশে প্রশাসন ব্যবস্থার উন্নতি ঘটেছিল। সেটা ছিল খুবই দীর্ঘকাল মেয়াদী এক স্থিতিশীল অবস্থার শুরু। দুশো বছরের বেশ পরেই কেবল বড়সড়, দীর্ঘস্থায়ী একটা সংকট দেখা দিয়েছিল, কিন্তু সেটাও কেটে গিয়েছিল; আর, পঞ্চম শতকে বিভিন্ন জার্মানিক উপজাতি এসে পশ্চিম অঞ্চল আক্রমণ করে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়ার আগ পর্যন্ত সাম্রাজ্যের শাসনে বিঘ্ন ঘটেনি কোনো।
You must be logged in to post a comment.