সাহিত্যে ছড়ার অবদান কী, বা এর অবস্থান কোথায় ? এ রকম বালখিল্য প্রশ্ন শুনে আঁতেল ব্যক্তিরা হয়তো এক চিমটি মুচকি হাসি দুলিয়ে চলে যাবেন প্রসঙ্গান্তরে। আর আমার মতো মোটাবুদ্ধির লোকেরা ? হয়তো চেয়ে থাকবেন হতভম্ব হয়ে প্রশ্নকর্তার মুখের দিকে। কিন্তু কেউ কি একবারও ভেবে দেখেছেন, হাজার বছরের শ্রুতি-পরিক্রমায় এসেও সাহিত্যের সবচেয়ে প্রাচীন আর মাটিবর্তী লোকায়ত এ মাধ্যমটিকে নিয়ে এরকম প্রশ্নের সংযোগ সূত্রটি কোথায় লুক্কায়িত ? মাটিলগ্ন গণমানুষের জনভাষ্যের প্রতীকী বিন্যাসে উপস্থাপিত জ্যান্ত ছড়াকে নিয়ে এরকম ধোয়াশা সাহিত্যের কুলীন অঙ্গনে যতোই অস্পষ্টতা ছড়াক না কেন, ব্রাত্যজনের প্রাণের সম্পদ টিকে থাকার চাবিকাঠিটা যে ব্রাত্যজনগোষ্ঠীর হাতেই চিরকাল থেকে যায়, এটা আমরা অনেকেই ভুলে যাই। কিন্তু মহাকাল ভুলে না ঠিকই। আর ভুলে না বলেই শেষ পর্যন্ত আমাদেরকে মেনে নিতেই হয় যে, সাহিত্যের পালকিটাকে সম্মুখবর্তী হতে হলে ওই ব্রাত্যজনের কাঁধে চড়েই এগুতে হয় তাকে। কাসুন্দি ছড়া সাহিত্যের সম্প্রতি প্রকাশিত দু’পাতার একটা প্রকাশনা ‘নিব’ ওল্টেপাল্টে দেখছিলাম। এক জায়গায় এসে চোখ আটকে গেলো। চার লাইনের ছোট্ট একটা ছড়া। ‘ভাতের বদলে আলু / বাবার বদলে খালু / এর চেয়ে তো ভালোই ছিলো / তারেক জিয়া, ফালু।’ একবার পড়েই গেঁথে গেলো মনে। ছড়াটা ছোট্ট, কিন্তু এর ইফেক্টটা কি ছোট্ট রইলো ? মাথার ভেতরে ঢুকে রিনিরিনি বাজাতে লাগলো। দৈনন্দিন জীবন যাত্রায় আমাদের বহুমাত্রিক নিষ্পেষণের চিত্রগুলোর একটা লিঙ্ক কী চমৎকার ইঙ্গিতময় দক্ষতায় জুড়ে দেয়া হলো ! যেগুলো আনন্দচিত্র নয়, কষ্টচিত্র। ভুক্তভোগী মানুষের বুকের ভেতরে জমে থাকা কষ্টক্ষত। সামান্য ক’টা অক্ষরের যাদুতে ছবির পর ছবি হয়ে যেন ভেসে ওঠতে লাগলো। কৌতুহলী হয়ে মনে করতে চেষ্টা করলাম, মুহিববুল্লাহ জামী নামের এই লেখক বা ছড়াকারের অন্য কোন লেখা আগে পড়েছি কি না। মনে করতে পারলাম না। সম্পূর্ণ অপরিচিত এই ছড়াকারের নাম আগে কোথাও শুনেছি বলেও মনে হলো না। হতে পারে আমার সীমাবদ্ধতা এটা। কিন্তু বিষয়টা উত্থাপিত হলো ক’দিন যাবৎ সাহিত্যে ছড়ার অবস্থান বা অবদান নিয়ে ভাবনার সূত্র ধরে। বিকেলের এক চায়ের আড্ডায় প্রসঙ্গক্রমেই ছড়াটা আউড়ালাম আবার। এবং উপস্থিত যারা ছিলো, লুফে নিলো সবাই ! যদিও এরা সাহিত্য জগতের কেউ নন বা সাহিত্য রসিকও বলা যাবে না, তবু ছড়াটার প্রতি তাদের আগ্রহে একটুও কমতি দেখলাম…
সাহিত্যে ছড়ার অবদান কী, বা এর অবস্থান কোথায় ? এ রকম বালখিল্য প্রশ্ন শুনে আঁতেল ব্যক্তিরা হয়তো এক চিমটি মুচকি হাসি দুলিয়ে চলে যাবেন প্রসঙ্গান্তরে। আর আমার মতো মোটাবুদ্ধির লোকেরা ? হয়তো চেয়ে থাকবেন হতভম্ব হয়ে প্রশ্নকর্তার মুখের দিকে। কিন্তু কেউ কি একবারও ভেবে দেখেছেন, হাজার বছরের শ্রুতি-পরিক্রমায় এসেও সাহিত্যের সবচেয়ে প্রাচীন আর মাটিবর্তী লোকায়ত এ মাধ্যমটিকে নিয়ে এরকম প্রশ্নের সংযোগ সূত্রটি কোথায় লুক্কায়িত ? [...]