গাছটিকে আমি চিনি ১৯৭৯/৮০ সাল থেকে। বছরের এই সময়ে, মে-জুন মাসে, গাছটিকে দেখতে এত ভাল লাগে – সেই ৩৩/৩৪ বছর আগে যেমন ভাল লাগত তেমনি – এই যে এতগুলো বছর চলে গেল সে বুড়িয়ে গেল না, মলিন হল না। কেন এমন হয় না আমাদের সাথে – কেন আমরাও বয়স যাই হোক বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে এমন অমলিন তরুণ হয়ে উঠি না। প্রতিবছর মে-জুন মাসে এই গাছটির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে, আমার এত বছরের চেনা এই শিমুল গাছটির সৌন্দর্য সৌসাম্য চোখ ভরে দেখতে দেখতে – নিজের বয়সটাকে নিজের দেহটাকে নিয়ে খুব বিরক্ত হই। অথবা হতে পারত এমন প্রতিবছর মে-জুন মাসে আমি চলে যেতে পারতাম শিমুল গাছটির জায়গায় আর শিমুল গাছটি আমার জায়গায়। হতে পারেই তো, সেরকমই হয়। এমন করুণ নয়নে তাকিয়ে থাকি একজন আরেকজনের দিকে, কিছুক্ষণ পরই আমার অন্তত মনে হয় আমি শিমুল গাছটির জায়গায় চলে গেছি এবং আমি নিশ্চিত শিমুল গাছটিরও মনে হয় ও আমার জায়গায় চলে এসেছে। বৃক্ষধাম একটু সচলতার জন্য চলে আসে আমার কাছে – মনুষ্যধাম একটু সজীবতার জন্য চলে যায় গাছটির কাছে। অথবা এমনও হতে পারত গাছটি লিখতে চায় আমার মতো, কথা বলতে চায় আমার মতো – আর আমি স্নায়ু ছড়িয়ে স্থবির ওই সতেজতায় পঞ্চভূতের সখা হয়ে ছড়িয়ে থাকতে চাই ওই শিমুল গাছটির মতো। সবই হতে পারত এবং হয়ও। হতে হতেই তো এই পথ চলা। বয়স কাকে কী দেবে? অনন্ত হয়ে বেঁচেছি আজীবন – অনন্ত হয়ে বেঁচে থাকা শিমুল গাছটিকে বন্ধু ভেবেছি। বর্তমান এবং ভবিতব্যই ক্ষয়িষ্ণু, — এই ঝরে যাওয়া পাতা ও তার পচনের আশা — কিন্তু বৃক্ষই অমর : স্নায়ুপুঞ্জবৎ ডালপালায় স্মৃতি আটকে রেখে, আবার পাতাদের গজাতে শেখায় — প্রাণ প্রদায়িনী সে :
প্রতিবছর মে-জুন মাসে এই গাছটির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে [...]