জর্জ সিমেনোঁ সিমেনোঁ আমাদের সময়ের একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ গল্প-বলিয়ে। আঁদ্রে জিদ তাঁকে আরেক বালজাক বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি জন্মেছিলেন বেলজিয়ামে, জীবনের বড় একটা অংশ কাটিয়েছেন ফ্রান্সে, আর বিত্তশালী হবার পর একখানা প্রাসাদ ক্রয় করে চলে যান সুইৎজারল্যান্ডে। আমি যখনই তাঁর কথা ভাবি, আমার মনে ভেসে ওঠে আমারই কল্পনার ফসল একটি খুব হাস্যোদ্রেককারী ছবি। আমার সুইৎজারল্যান্ড ভ্রমণের সময় তাঁর মুখে শোনা একটা কথা থেকেই অবশ্য এর উৎপত্তি। তিনি বলেছিলেন লেখার সময় তাঁর পেচ্ছাপের বেগ এলে তিনি লেখার টেবিল ছেড়ে উঠে গাড়িতে চেপে মাইলখানেক দূরে চলে যেতেন। সেখানে রাস্তার ধারে থেমে চোখের সামনে চমৎকার কোন দৃশ্য রেখে তিনি তার প্রিয় ওক গাছটির ওপর নিজেকে ভারমুক্ত করতেন। সিমেনোঁ ছিলেন একজন প্রকৃত ভদ্রলোক, যিনি সবসময়ই পরিপাটি করে পোশাক পরে থাকতেন। আমি তাকে কল্পনা করি তিনি রোল্স্ রয়েস বা এমনি কোন দামি গাড়ি পেছনে রেখে, পিনস্ট্রাইপের থ্রিপীস স্যুট পরে, পায়ে ঝকঝকে পালিশ করো জুতো, গ্লাভস্-পরা হাতে নুনু ধরে গাছের গায়ে জল ছাড়ছেন। জানি আমি অতিশয়োক্তি করছি, কিন্তু এই ছবিটা আমি কিছুতেই মাথা থেকে বিদায় করতে পারি না। লেখক ও মানুষ হিসাবে সিমেনোঁ একজন দুর্লভ প্রাণী। এমন একজন লেখক যিনি তিনশত পৃষ্ঠার একটা আস্ত উপন্যাস লিখে ফেলতে পারেন স্রেফ দশ-বারো দিনে। তিনি একটা জায়গা সম্পর্কে গভীরভাবে গবেষণা করেন। তিনি সে বিষয়ে বই, পত্রপত্রিকা, টেলিফোন ডিরেক্টরি, খবরের কাগজ কিনে পড়েন, সে অঞ্চলের বিশেষ বাকভঙ্গিগুলো রপ্ত করা থেকে শুরু করে সব বিষয়েই খোঁজখবর নেন। তিনি একটা জায়গার এমন খুঁটিনাটি বর্ণনা দেন যে আপনি নিশ্চিত হবেন যে তিনি সেখানে যুগযুগ ধরে বাস করেছেন। তিনি এমন জাতের লেখক যে তাঁর লেখা না পড়ে থাকতে চাইবেন না আপনি। যুবা বয়স খেকেই তিনি লেখার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। তিনি খুব কুখ্যাত একটা জায়গায় ঘর ভাড়া নেন যেখানে একদা ভিক্টর য়ুগো থাকতেন। সে-বাড়ির ভাড়া দেবার পয়সা ছিল না, তাঁর ব্যাংক একাউন্ট সবসময় থাকতো বিয়োগাত্মক, কিন্তু কী এক অদ্ভুত কারণে তাঁর যখনই টাকা লাগতো সেটা তখন তাঁর অ্যাকাউন্টে ঠিকই জমা থাকতো। একদিন তিনি ব্যাংক কেরানিকে জিজ্ঞাসা করেন "আচ্ছা বলেন তো, আমি জানি আমি সবসময়ই ব্যাংকের কাছে টাকা ধারি, কিন্তু প্রয়োজনে সবসময়ই আমার অ্যাকাউন্টে টাকা থাকে।…
সিমেনোঁ আমাদের সময়ের একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ গল্প-বলিয়ে। আঁদ্রে জিদ তাঁকে আরেক বালজাক বলে আখ্যায়িত করেছেন।