মোমেনের জবানবন্দী, মফিজন বা কোরবাণী-র মতো সংবেদনশীল গল্পের স্রষ্টা মাহবুব-উল আলম (১৮৯৮-১৯৮১) ইতিহাসমগ্ন ছিলেন আমৃত্যু। খণ্ডে-খণ্ডে তিনি যে-চট্টগ্রামের ইতিহাস (১৯৬৭) লিপিবদ্ধ করেছেন তার সপ্তম বা শেষ খণ্ডের ভূমিকায় বলেছেন : ‘চট্টগ্রামের ইতিহাস’-এর শেষ (সপ্তম) খণ্ডে ‘আমরা কতিপয় বিশিষ্ট পরিবার, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও আন্দোলন’-এর বিবরণ লিপিবদ্ধ করিতেছি। ইহার ফলে নিজেদের ইতিহাস জানিয়া লইয়া আত্ম-সম্বিৎ লাভে চট্টগ্রামবাসীদের সাহায্য হইবে, ইহাই আমাদের আশা। অধুনাবিলুপ্ত বইটির পৃষ্ঠাসজ্জা একটু অভিনব : ধারাবাহিকভাবে পৃষ্ঠাঙ্ক না দিয়ে প্রত্যেক অধ্যায়কে অ্যালবামের মতো সাজিয়ে দেওয়া হয়েছিল যাতে পরবর্তীকালে নতুন-নতুন তথ্য যুক্ত করে নিতে পারেন ইতিহাসসন্ধানীরা, যদিও লেখকের সে-ইচ্ছে অপূর্ণই থেকে গেছে আজও। চট্টগ্রামের অনেক প্রসিদ্ধ পরিবারের সতথ্য বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন লেখক প্রায় নিঃসঙ্গ পরিশ্রমে; তথ্যবিশ্লেষণে হয়তো-বা সর্বত্র ইতিহাসপদ্ধতি অনুসৃত হয়নি, এমনকী বিভ্রান্তিও থাকতে পারে কোথাও-কোথাও, কিন্তু লেখকের কলম যে কাঠখোট্টা ছিল না তা স্বীকার করতেই হয়। বইটির দ্বিতীয় পরিচ্ছেদের নাম ‘শেখ-এ-চাট্গাম কাযেম আলী’। কাজেম আলী হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা চট্টগ্রামের প্রসিদ্ধ শিক্ষাব্রতী কাজেম আলী (১৮৫২-১৯২৬) সম্পর্কে মাহবুব-উল আলম লিখছেন : কাযেম আলী কিরূপে তাঁহার স্কুলে একটা পারিবারিক আবহাওয়া বজায় রাখিতেন সে সম্বন্ধে ঐ স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র ভূপেন্দ্র কুমার রক্ষিত বলেন : তিনি প্রতিদিন স্কুলে আসিতেন না। তখন ১৯১৭ সাল। একদিন হঠাৎ স্কুলে আসিলেন। সে দিন আমাদের ইংরেজী-শিক্ষক স্কুলে আসেন নাই। তিনি বলিলেন : পড়া আমিই নিব। আমরা ভয়ে তটস্থ হইয়া গেলাম। পড়া ছিল ‘আলেকজাণ্ডার য়্যাণ্ড দি রবার।’ তিনি আমাদের ইংরেজীতে প্রশ্ন করিলেন : ফিলিপ কে ছিলেন? আমি ফস্ করিয়া উত্তর দিলাম : কিং অব ইণ্ডিয়া। তিনি ধমক দিয়া আবৃত্তি করিলেন : অব্ ইণ্ডিয়া? আমি থতমত খাইয়া শুদ্ধ করিলাম : কিং অব ম্যাসেডন। তিনি খপ্ করিয়া আমার একখানি হাত ধরিয়া ফেলিলেন। অতঃপর গর্জন করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন : প্রথমে ইণ্ডিয়া বলেছিলে কেন? কিন্তু ইতিমধ্যে তিনি অনুভব করিলেন, আমার হাত বেশ গরম। তখন বলিলেন : তুমিত ম্যালেরিয়ায় ভুগ্ছ মনে হচ্ছে। অতঃপর শার্ট তুলিয়া পেটে হাত দিয়া বলিলেন : এই যে পিলে বেশ বড় হয়েছে। অতঃপর এইরূপ কথোপকথন হইল : : তুমি কার ছেলে? : আমার বাবার নাম যোগেশ চন্দ্র রক্ষিৎ। : কি করেন? : কলেক্টরীর কর্মচারী। : তুমি ছুটির আগে লাইব্রেরীতে আমার সঙ্গে…
কুইনাইন-আবিষ্কারের তারিখ কারও মনে আছে কি? না থাকলেও ক্ষতি নেই কোনও, আজ ছাত্রহিতৈষী শিক্ষক কাজেম আলী মাস্টারের মৃত্যুদিবসে (১২ ফেব্রুয়ারি) অন্তত তাঁকে স্মরণ করা যাক একবার।