কবিতা : বিমূর্ততা, বিকৃতি ও পরম্পরা

কবিতা নিয়ে, তা যে বা যার কবিতাই হোক না কেন, কিছু লিখা বেশ বিপজ্জনক। আমার সবসময় মনে হয়েছে কবিতার গঠন এবং প্রকৃতিতে এত বেশি সম্ভাবনা, প্রতি-সম্ভাবনা এবং বিমূর্ততা রয়ে যায় যে কবিতাকে সুনির্দিষ্টায়িত এলাকাভিত্তিক করার চেষ্টা পন্ডশ্রম ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু সময়ে সময়ে এ-বোধটুকু থাকা সত্ত্বেও কবিতার মানে বের করে ফেলার একটা চেষ্টা থেকেই যায়। . . .

===

(দীর্ঘ পোস্ট; এক্কেরে সিরিয়াসলি সাহিত্য-সমালোচনা ও দর্শনে আগ্রহ না থাকিলে ভাল লাগিবে না; থাকিলেও লাগিবে, তাহাও নয়। তবুও সতর্ক করা হইলো।)

… ব্যসকূটে গাপ হচ্ছে …

অদৃশ্য শীকরে স্মৃতিরেণুর পলিনেশন; হতজোড় অর্বাচীন শ্যাম্পু,
কদলীবৃক্ষের কিউপিড – – বাদুর। অতঃপর সিক্সটি ওয়াট্‌ বাল্বে
ব্ল্যাকঅউটই সার হইল। শীত-বিম্বিত সিলিকা পিন্ডের বারো ইঞ্চি
ধড়ে তেরো কোটি মাংস শুধু মেঘের। (যা-ও একখান্‌ চেহারা!)
টিয়া টিয়া শ্যাওলায়, দৃষ্টি রবার্ট ব্রুসের জালিকা-গুরু : ঠাওরে
অস্তিত্বের কবর বাড়ি।
(এরশাদ আলমগীর)

কবিতা নিয়ে, তা যে বা যার কবিতাই হোক না কেন, কিছু লিখা বেশ বিপজ্জনক। আমার সবসময় মনে হয়েছে কবিতার গঠন এবং প্রকৃতিতে এত বেশি সম্ভাবনা, প্রতি-সম্ভাবনা(১) এবং বিমূর্ততা(২) রয়ে যায় যে কবিতাকে সুনির্দিষ্টায়িত এলাকাভিত্তিক করার চেষ্টা পন্ডশ্রম ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু সময়ে সময়ে এ-বোধটুকু থাকা সত্ত্বেও কবিতার মানে(৩) বের করে ফেলার একটা চেষ্টা থেকেই যায়। মানুষের জ্ঞানকাঠামো সবসময় ব্যাখ্যার দিকে আগ্রহী বলেই হয়তো আমরা ক্রমাগতঃ ‘মানে’-শুদ্ধু চিন্তা করে যাচ্ছি এবং এর আওতায় আনতে চাচ্ছি যা ‘মানে’-র মধ্যে পড়ে না, বা আমাদের ব্যাখ্যাবৃত্তিক ও সিদ্ধান্তমূলক চিন্তাকাঠামো যাকে এখনো স্পর্শ করেনি, তা এবং তাকেও। সুতরাং, পাঠ-পঠন ছাড়াও যেকোনোভাবেই আমরা সিদ্ধান্তমূলক। অর্থাত, কবিতা পড়ে আমি কোনো স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছুবো না বলেও আমরা আসলে অবচেতন বা চেতন অবস্থায় কোনো না কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছি এবং এই পুরো ব্যাপার বা প্রক্রিয়ার সম্বন্ধে অসতর্ক থেকে যাই। এখানে, সিদ্ধান্তমূলকতার ব্যাপারে আমার মন্তব্য গা-জোয়ারি মনে হয়ে থাকলে এই বিষয়ে আমার একটি লেখা পড়ে দেখবার অনুরোধ রইল(৪)। তবে সার-কথা এখানেই বলা হয়ে গেছে।

সমস্যা হচ্ছে – কিছু কবিতা এমন হয়, যা প্রথমে পাঠককে নিরুতসাহিত করে তোলে ভাষার কারণে; অর্থাত, এমনতরো কবিতাসমূহে পাঠক প্রাথমিক বাধা যেখানটায় পান – সেটা হলো ভাষা। অপ্রচলিত শব্দের প্রচলিতকরণ, দুর্বোধ্যতার পরপর দেয়াল, এবং পাঠকের শেষাবধি কোথাও পৌঁছুতে পারার পূর্ব-ইচ্ছা এবং ব্যর্থতা এই সমস্ত কবিতায় পাঠককে বিমূঢ়, হতাশ ও কবিতাটিকে শিল্পের ‘বিমূর্ত’ বা ‘অর্থহীন’ বা ‘উদ্ভট’ শাখায় পতিত করে প্রত্যাখ্যান করতে উতসাহিত করে তোলে। এক্ষেত্রে আমাদের ব্যাখ্যাবৃত্তিক জ্ঞানকাঠামো শুরুতে বিপুল জটিলতার মুখোমুখি হলেও বিচলিত হয়না, বরঞ্চ এদের জন্যে, যদিও এরা প্রকরণ ও প্রকৃতিতে ভিন্ন হতে পারে, নতুন নতুন শাখার উদ্ভব ঘটায়, এবং এই নামকরণের ও বিভক্তিকরণের ক্ষেত্রে ব্যাখ্যাবৃত্তিক মাত্রা থেকে কবিতাটি ঠিক যেমনটি দেখা গেছে, সেই চেহারাটিই তুলে ধরে। নামকরণের ও বিভক্তি-উপবিভক্তিকরণের এই ইতিহাস সুপ্রাচীন কালের এবং এখনো তীব্রভাবে প্রসারিত হচ্ছে – যে কারণে সুনির্দিষ্টিকীকরণ ও নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা অর্জন বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এত গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের ব্যখ্যাবৃত্তিক জ্ঞানকাঠামো এই গুরুত্ব নির্মাণে সর্বাধিক ভূমিকা পালন করে। শরীরবৃত্ত, প্রাক-রাষ্ট্রিক কাঠামো, সম্পদক্ষত্রে মানুষের মনোজাগতিক গঠনও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যাই হোক, এইসব কবিতার ক্ষেত্রে বা এ-ধরণের শিল্পের ক্ষেত্রে(৫) হয় ভাষা নয় শব্দ-বিন্যাস বা বাক্যগঠনে থাকে সম্পূর্ণ নতুন বা ভিন্নতর রূপকাঠামো যা আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক এবং ক্ষেত্রবিশেষে অপ্রাতিষ্ঠানিক বুদ্ধিবৃত্তিকে সংশয়াচ্ছন্ন ও চিন্তিত করে তোলে; এমনকি দৃষ্টির একটি নবতর মাত্রা সৃষ্টির চেষ্টাও থাকে সময়ে সময়ে; ভাষাসৃষ্ট এই প্রাচীরের কারণে কবিতার বিষয়বস্তু বা উদ্দেশ্য বা বিষয়বস্তু-উদ্দেশ্যহীনতা পাঠকের লক্ষ্যের মধ্যে থাকে না; এখন এইসব কারসাজি বা চেষ্টার সাফল্য বা অসাফল্য বিচারের মানদন্ড কি বা কি হওয়া উচিত, সেটা তর্কের বিষয়, কিন্তু যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো সংজ্ঞায়ীতকরণ ব্যতীত বা নির্দিষ্টিকীকরণ ছাড়া আমরা কোনো কিছু বোঝার চেষ্টাও করতে পারি না যেটা কাঠামোবাদীদের ভাষায় একটু ভিন্নতর মাত্রায় হলেও কেন্দ্র হিশেবে কাজ করে এবং এর ফলে যেকোনো কবিতা ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে পূর্বজ্ঞানের পরিকাঠামো আমরা কখনোই অস্বীকার করতে পারিনা; এই দীর্ঘ কথনের কারণ এরশাদ আলমগীরের ‘…ব্যসকূটে গাপ হচ্ছে…’ কবিতাটিকে কোনো দলে ফেলার ইচ্ছে যদি না-ও থাকে, তবুও কাঠামোকে অস্বীকার সম্ভব হবে না। এবং দলভুক্তি হবেই।

উপরোক্ত কবিতাটিকে প্রথমে আমরা সাধারণভাবে শব্দ থেকে বাক্যে আর্থ-রূপ দেয়ার চেষ্টা করব। সাধারণ পঠনে এটি কী দাঁড়ায় সেটিই আমাদের প্রাথমিক বিবেচ্য বিষয় হবে:

সেমিকোলনে শেষ হওয়া প্রথম চারটি শব্দের একত্রিত অর্থ – অদৃশ্য বাতাসের জলকণায় স্মৃতির পরাগের বা কণা বা ধূলির পরাগায়ন ঘটছে; এখানে ‘স্মৃতিরেণু’ শব্দটি দুটি বা তিনটি অর্থ বোঝাতে পারে – স্মৃতির রেণু বা পরাগ বা ধূলি অথবা স্মৃতির মতো রেণু বা পরাগ বা ধূলি; এক্ষেত্রে রেণু শব্দের অর্থ পরাগ হিশেবে সবচেয়ে ভাল যায়; পরাগায়ন এরপরেই বলে বলছি। কিন্তু ধূলি যে এখানে অপ্রযোজ্য তা-ও নিশ্চিত করে বলা যায়না। অর্থাৎ, অদৃশ্য বাতাসের জলকণায় স্মৃতির পরাগের পরাগায়ন ঘটছে; যদ্দূর মনে হয় -স্মৃতির সংযোগসূত্রিতা কিরকম তা আমাদের কাছে অজানা – এই ব্যাপারটিই বোঝানো হচ্ছে। সেমিকোলনের পর বাকি অংশটি দাড়ি দিয়ে শেষ হয়েছে; এর অর্থ দাঁড়ায় এরকম – হতজোড় কোনো অর্বাচীন শ্যাম্পু, অর্বাচীন এখানে নতুন বা আধুনিকের চেয়ে অব্যবহৃত অর্থেই বেশি ব্যবহৃত হয়েছে বলে মনে হয়, এবং কলাগাছের পাখাবিশিষ্ট প্রেমের প্রতীক বাদুর; কিউপিড সাধারণত রোমান পুরাণের শব্দ- পলিবিয়াস-এর রোমান পুরাণে এর উল্লেখ আছে- যা প্রেমের প্রতীক হিশেবেই ব্যবহৃত হয়। কিউপিডের পর দুটি ড্যাশ-এর আলাদা কোনো মানে কি আছে? যা মনে হয় – নেই। এরপরের বাক্যটির একটিই অর্থ দাঁড়ায় আপাততঃ – সিক্সটি ওয়াটের কোনো বাল্ব নিষ্প্রদীপ হয়ে গেল; রূপকার্থে এই বাক্যটি কোনো কিছু বোঝানোর সম্ভাবনা কম, যদিও ব্ল্যাকআউট শব্দটির বিভিন্ন অর্থ নিয়ে বাক্যটির বিভিন্ন অর্থ করা যায়, কিন্তু বাকিগুলো বাক্য হিশেবে অপ্রাসঙ্গিক। এটি একটি পূর্ণবাক্য। এরপরের বাক্যটি বেশ জটিল।’শীত-বিম্বিত’ বলতে এখানে ঠিক কি বোঝানো হয়েছে – তা স্পষ্ট নয়। ‘শীত’ শব্দটির মানে কাল হিশেবে পৌষ ও মাঘ-কে বোঝায; এছাড়াও পানি, কর্পূর হিশেবেও এর ব্যবহার আছে। ‘শীত-বিম্বিত সিলিকা পিন্ডের বারো ইঞ্চি ধড়ে তেরো কোটি মাংস শুধু মেঘের’ হয়তো শীতকালে সিলিকার তৈরি কাঁচের কোনো খন্ডে মেঘের ছায়া পড়েছে, তা-ই ইঙ্গিত করছে, যদিও তেরো কোটি মাংস যা কিনা মেঘের তা পরিমাণবচক বিশেষ্যের ক্ষেত্র হিশেবে অপ্রযোজ্য। কবিতার খাতিরে এইসমস্ত অপ্রচলন মেনে নেয়া যায়, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ‘বারো ইঞ্চি’ বা ‘তেরো কোটি’ সংখ্যাগুলো। বারো ইঞ্চি হচ্ছে স্কেলের হিশেব, যা একটি একক। আর তেরো কোটি কোনো সাংখ্যিক তাতপর্য বহন করে কি-না তা জানা নেই, যদিও তেরো কোটি সংখ্যাটি আমাদের কাছে বাংলাদেশের একসময়কার জনসংখ্যা হিশেবে বেশ সুপরিচিত। এরপরেই ব্র্যাকেট বন্দী বিস্ময়বোধক চিহ্ন নিয়ে শেষ হওয়া একটি বাক্য – (যা-ও একখান্‌ চেহারা!) এর পূর্ববর্তী বাক্যকে নাকি এর পরবর্তী বাক্যকে ব্র্যাকেট-বন্দী বাক্য-বিশেষণ হয়ে বিশেষায়িত করছে, বোঝা যায়না। এর আগের লাইনের সাথে এটি বেশি যায়। অথবা এটি আলাদা, সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র অবস্থান নিয়েও থাকতে পারে। পরবর্তী বাক্যটি, মাঝখানে একটি কোলন নিয়ে যা শেষ হয়েছে, সত্যিকার অর্থে কোনো বাক্যই নয়। ‘টিয়া টিয়া শ্যাওলায়’ এবং এর পরে একটি কমা, কমার সাথে সঙ্গতিহীন ‘দৃষ্টি রবার্ট ব্রসের জালিকা-গুরু’ ও এরপর কোলন দিয়ে বাক্যসমাপ্তি – এই বাক্যটির অর্থ-সংগঠনই ভুল বা অর্থহীন। কমার পূর্ববর্তী অংশের তেমন করে কোনো অর্থই হয়না, কিন্তু পরবর্তী অংশ বা বাকিটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। জালিকা শব্দটির উদ্ভব জালিক থেকে, এর বিভিন্ন অর্থ থাকলেও রবার্ট ব্রুসের উল্লেখ এক্ষেত্রে মাকড়শা ছাড়া আর কিছুই বোঝায় না; যদিও ভিন্ন অর্থসমূহ আলোচনা আরও চিত্তাকর্ষক করে তুলত বলে ধারণা। এই লাইনের আক্ষরিক অর্থ করলে যা দাঁড়ায় তা হচ্ছে – কোনো একটি মাকড়শাকে দেখা যাচ্ছে যা ‘অস্তিত্বের কবর বাড়ি’ ঠাওরে বেড়াচ্ছে, বা বলা যায় মাকড়শাটি এর ‘অস্তিত্বের কবর বাড়ি’ বা মৃত্যুকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।

পুরো কবিতাটি পড়ে যে কেউ বিমূঢ় বোধ করতে পারেন এবং এতে তাকে দোষ দেয়া যায়না।

সিম্বলিস্ট মুভমেন্টের পরের দিকের কবিতার মূলতঃ সমস্যা(!!!) হলো কবিতার সাথে পাঠকের বিযুক্তিকরণের প্রক্রিয়া তখন থেকেই শুরু। ইন্ডাস্ট্রিয়াল সোসাইটির ত্রমশঃ অস্তিত্ববাদী হয়ে ওঠা ব্যক্তি তার অভিজ্ঞতার যে ডিমেনশন অ্যবসার্ড-এর মধ্যে দিয়ে নিয়ে এসেছে সেটার কারণে এবং বর্তমানে চরম ডিস্‌ইন্টিগ্রেশানের কালে কবিতা হয়তো তার আপাত নৈর্বত্যিক অবস্থান(৬) আর ফিরে পাবেনা (৭); যা অনেকাংশেই শিল্পের (চিত্রশিল্প ব্যতীত) অন্যান্য স্তরে এখনো সম্ভবপর এবং বিদ্যমান।

সম্পর্কহীনতার উপাখ্যানই তাই আজ কাব্যালচোনার মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

*********************************************************

পরবর্তী আলোচনায় আমি চারটি বিশ্লেষণে এই কবিতাটির পরপর ব্যবচ্ছেদ ঘটাতে চাই: উইলিয়াম জেমসের ‘স্ট্রীম অফ কনশাসনেস’-এর পারস্পেকটিভ থেকে, কাঠামোবাদী ও উত্তর-কাঠামোবাদী সাহিত্যপাঠ, হেনরি জেমসের ব্যবহৃত ‘ইন্টিরিয়র মনোলগ’ এবং জয়েসের ‘এপিফ্যানি’ থেকে। এই চারটির বাইরেও বেশ কিছু ক্রিটিসিজম টুল আছে যার মধ্যে অধুনান্তিকতা, সুররিয়ালিস্টিক ফ্রি-এসোশিয়েটিভ রাইটিং ও ফেনোমেনোলজি খুবই গুরুত্বপূর্ণ; তবে আমি অন্য কোনো আলোচনায় এইগুলা আনতে চাই এবং এও মনে করি যে লিটারেরী ক্রিটিসিজমের মেথডোলজিক্যাল টুল বেছে নেওয়ার অধিকার আলোচকের আছে।

পাদটীকাসমূহ:

১. একটু লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে – কবিতায় এক একটি শব্দ কী বিপুল পরিমাণ সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দিচ্ছে; একটি শব্দের পরে আরেকটি শব্দের অবস্থান এবং তার আকৃতিলাভ আসলে আরও প্রচুর কিন্তু সুনির্দিষ্ট সংখ্যক শব্দের অবস্থান এবং আকৃতিলাভ এবং ফলতঃ ভিন্ন ভিন্ন শরীরকাঠামো অসম্ভাবনার দিকে নিয়ে যায়; যে আপাত অসম্ভাব্যতাগুলো নিয়ে চিন্তা করা অত্যন্ত কৌতূহল উদ্দীপক।

২ কবিতার উৎস এত বেশি অজানা, এবং এর কোনো নির্দিষ্ট দৈহিক রূপ বের করা এত বেশি অসম্ভব যে বিমূর্ততার সাথে কবিতা প্রায় প্রতিশাব্দিক ভাবে যায়; একটু সহজ ভাবে বললে, ব্যাপারটা অনেকটা এরকম – মানুষ কেন কবিতা লিখে? কবিতার কোনো নির্দিষ্ট রূপ আছে কি? কোনটি কবিতা এবং কোনটি নয়, এর সীমারেখা আদৌ টানা যাবে? বা করলে সেটা কি সঙ্গত হবে? ইত্যাদি প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়াটা বেশ মুশকিলের কাজ বলে চিহ্নিত এখনো।

৩ ‘মানে’ শব্দটা অবশ্য বেশ গোলমেলে, এ-নিয়েই ভাষাতত্বে একটি শাখা খুলে গেছে।

৪ “শব্দ ও শাব্দিক রূপ : সীমাবদ্ধতা” – পুরাই একটা দার্শনিক প্রবন্ধ; ভাষা ও চিন্তনক্রিয়া কিভাবে আমাদের মধ্যেকার সীমাবদ্ধতার ধারণা তৈয়ার করে এবং সংখ্যার যে রূপ আমাদের ভাষাচিন্তায় বিদ্যমান, তার প্রভাব নিয়েই এই আলোচনা।

৫. এদের যেহেতু সুনির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা যায়না, বা করলেও তাতে অসম্পূর্ণতা অনেক বেশি থাকে অনুমান-নির্ভরতার কারণে এবং বিমূর্ততার কোনো বিভাগও নেই যার ফলে ‘এ-ধরণের’ শব্দটি ব্যবহৃত হল।

৬. আপাত-নৈর্বক্তিক-অবস্থান এমন একটি অবস্থান যেখানে পাঠক বা অডিয়েন্স শিল্পীর রিপ্রেসেন্টেশনের ক্ষেত্রে একটি কালেকটিভ-সাবজেক্টিভ পারস্পেকটিভে পৌঁছেন, যা শিল্পের সাবস্টেন্স নিয়ে অন্ততঃ বিমূর্ততার আখ্যান শুরু করতো না; শিল্পীরও পাঠকের সাথে বিযুক্তিকরণের মধ্যে দিয়ে যেতে হতো না। লক্ষণীয়, ঊনিশ শতকের গোড়া থেকেই কিন্তু আসলে পূর্ববর্তী শতকের সাহিত্যের ভিন্ন ভিন্ন পাঠ ও ব্যাখ্যা শুরু।

৭. ব্রাউনিং, আর্নল্ডরা যা উপভোগ করে যেতে পেরেছিলেন, কিন্তু এজরা পাউন্ডরা যা স্বেচ্ছায় বিসর্জন দিয়েছিলেন।

জিফরান খালেদ

কবি। বঙ্গভাষাহীন কবি যদিও। দর্শন, যুক্তিবিদ্যা ও চিরায়ত পদার্থবিদ্যায় দিনানিপাত করি। আর নিজেকে দেখে দেখে হাসি, হাসতে থাকি, মায়া লাগে, মায়ায় ভাসি।

২০ comments

  1. মনজুরাউল - ১০ সেপ্টেম্বর ২০০৮ (৬:১৫ অপরাহ্ণ)

    এক্কেরে কিসসু বুঝিনা তা নয়।বোঝার কষ্ট ধাতে সয় না। নাজিম, নেরুদা, সুভাষ,
    অমিয়, নবারুণ আর এইরকম কিছু উচ্চিংড়ে বাদে যা তা বোধগম্যতার বাইরে রাখাটাই শ্রেয়জ্ঞানে নিশ্চুপতা। এতে কী অপরাধ হয়? তাহলে আমি কবিতার পাঠক নই। আলোচক নই। সমালোচক তো নই-ই। তাইলে এখানেই ক্ষ্যামা।

    সুস্বাগতম কবি।

    • জিফরান খালেদ - ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৮ (২:৫৪ অপরাহ্ণ)

      অনিয়মিত বেশ। তাই দেখা হয় নাই।

      আপনার শুভেচ্ছা গৃহীত হইলো। কিন্তু, ক্ষ্যামা দেওয়ার ব্যাপারটা গ্রহণ করলাম না। করাটা অনুচিত ঠেকে এবং অসত্যের প্রলেপও পড়ে বটে সেখানে।

      সুতরাং…

  2. সান্ত্বনা - ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৮ (১১:২৫ পূর্বাহ্ণ)

    বোদ্ধা পাঠক নই, ভালো লাগার টানেই মাঝেমধ্যে কবিতা পড়ি। এই পাণ্ডিত্যপূর্ণ লেখাটা পুরোপুরি বুঝতে পেরেছি এমন দাবি করব না। কয়েক বছর আগে একটা বই (সাহিত্যপত্রের গ্রন্থরূপ) পড়েছিলাম : অমরেন্দ্র চক্রবর্তী সম্পাদিত কবিতা পরিচয়। সেই বইয়ের আলোচনাগুলোর কথা এখনও কিছু কিছু মনে আছে। সেখানকার আলোচকরা যেসব কবিতা নিয়ে আলোচনা (এমনকী তর্ক-বিতর্কও) করেছিলেন, সেগুলো আগেই পড়া ছিল। এই পোস্টে যাঁর কবিতা আলোচিত হলো তাঁর লেখার সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল না। এই নামটির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য জিফরান খালেদকে ধন্যবাদ জানাই।

    “লিটারেরী ক্রিটিসিজমের মেথডোলজিক্যাল টুল” নির্বাচনের/প্রয়োগের অধিকার নিশ্চয়ই আলোচকের আছে। কিন্তু দীর্ঘ এই আলোচনার পরও উদ্ধৃত কবিতাটি যে ঠিকমতো হৃদয়ঙ্গম করতে পারিনি সে আমারই ব্যর্থতা। তার জন্য খেদ করেই-বা কী হবে!

    কবিতার দ্বিতীয় পঙক্তিতে যুগল হাইফেন (- -)-এর বিশেষ কোনো তাৎপর্য থাকার কথা নয়। কীবোর্ডে ড্যাশ (–) খুঁজে না পেয়ে তার বিকল্প হিসেবেই বোধহয় কবি ওই যতিচিহ্ন ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছেন।

    “আপাত-নৈর্বত্যিক-অবস্থান” বোঝার জন্য আগে তো “নৈর্বত্যিক” শব্দের মর্মোদ্ধার করা দরকার। আমার সীমিত শব্দভাণ্ডারে এই শব্দটি নেই। আলোচক বা অন্য কেউ জানিয়ে দিলে বাধিত হব।

    ভয়ে ভয়ে বলছি, এ “কবিতা”টিকে আমার মনে হয়েছে কোনো আত্মরতিপ্রবণ তরুণের ব্যক্তিগত মুহূর্তের বর্ণনা। হয়তো ঠিকমতো ধরতে পারিনি। তবে আমার এরকমই মনে হয়েছে। এ নিয়ে তর্ক করে অন্যদের বিরক্ত করব না, কথা দিচ্ছি।

    • জিফরান খালেদ - ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৮ (৩:০৯ অপরাহ্ণ)

      কবিতাটা যে আমি ধরতে পেরেছি, তা কিন্তু নয়। কবিতা ধরতে পারার জন্যে হয়তো লিখাটি আদৌ নয়, কিন্তু সে যাক… আপনার ধারণাটুকু আমার বেশ মনে ধরলো কিন্তু… আর, এরশাদ আলমগীর বেশ অপরিচিত কবি… একদম নিভৃতচারী… তাই বোধহয় অপরিচয়ের ব্যাপারটা।

      অসংখ্য ধন্যবাদ এই অকিঞ্চিতকর লিখাটিতে এমন মনযোগ দেওয়ার জন্যে। ভাল থাকুন…

  3. মুজিব মেহদী - ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৮ (৮:৩০ অপরাহ্ণ)

    কবিতাটার কিচ্ছু বুঝলাম না, আলোচনাটা যদিও বুঝলাম। ‘বারো হাত কাঁকুড়ের তেরো হাত বিচি’ ব্যাপারটাও হয়ত খানিক বোঝা গেল। প্রতিভাধররা সেটা পারেন। যেমন পারছেন জিফরান খালেদ। এরকম নমুনা বাংলাসাহিত্যে আরো আছে, ওসবের লেখকরাও প্রতিভাবান- আজফার হোসেন, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ প্রমুখ।

    • জিফরান খালেদ - ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৮ (৩:১২ অপরাহ্ণ)

      হাহাহা… মুজিব ভাই, মশকরা করেন ছোট ভাইয়ের লগে?

      আজফার হোসেনরে তো ঠিক লোকেট করতে পারলাম না… একটু জানায়েন তো…

  4. শামীম - ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৮ (৮:৫৫ অপরাহ্ণ)

    জিফরান খালেদ,

    আপনার লেখাটা মন দিয়ে পড়লাম, শুরুতে সতর্ক করার পরও (এক্কেরে সিরিয়াসলি সাহিত্য-সমালোচনা ও দর্শনে আগ্রহ না থাকিলে ভাল লাগিবে না; থাকিলেও লাগিবে, তাহাও নয়। তবুও সতর্ক করা হইলো।)। লেখাটা নিয়ে মন্তব্য আরেকদিন করা যাবে। এমুহুর্তে আপনার লেখার চেয়েও বেশী মনযোগ কেড়েছে আপনার লেখক প্রোফাইল, যেখানে আপনি লিখেছেন:

    বিলাতে অধ্যায়নরত। ফারুক ভাইয়ের আশাবাদ শুইনা এইখানে আসা। দেখি…

    কোন এক ফারুক ভাইয়ের আশাবাদ রয়েছে এবং তা “শুইনা” আপনি এখানে এসেছেন তা নিঃসন্দেহে এই ব্লগের পাঠকদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক খবর। তবে আমাদের মধ্যে বেশীর ভাগ মানুষই মনে হয় “অধ্যয়ন” করেন, তবে তাতে অবশ্যই কারো কারো “অধ্যায়ন” করার অধিকার নষ্ট হয়ে যায়না, মানতেই হচ্ছে!

    আপনার পরবর্তী লেখাগুলোর অপেক্ষায় থাকলাম। সবাই “দেখি”, আপনিও “দেখুন”।

    • জিফরান খালেদ - ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৮ (৩:২২ অপরাহ্ণ)

      হাহাহা… বেশ বেশ!! আপনার মন্তব্যটিতে খোঁচাখুঁচির রেশ পেলাম বেশ…

      ফারুক ভাই আমার অত্যন্ত প্রিয় একজন মানুষ। তিনি যখন আমাকে এই ব্লগবাড়ির কথা জানালেন এবং বললেন যে বেশ কিছু ভাল লিখার জমায়েত হয়েছে এখানে, তো, আমি সেইসূত্রে ঢুঁ মারি। ভালও লাগে বেশ… আশা রাখি পরবর্তীতে সাধারণ বচনকে এমন কাদাটে করবার প্রচেষ্টায় লিপ্ত থাকবেন না…

      আর, আমি যে এখনো একজন ছাত্র, একাডেমিক্যালী স্পিকিং, সেই ব্যক্তিপরিচয়টাই উল্লেখ করেছিলাম শুধু। আপনার অধ্যয়ন করবার অধিকার হরণ করবার জন্যে নয়। খুব বেশি দেখাও হয়তো এইজন্যেই ভাল নয়। দেখতে থাকুন, সামলে চলুন…

      ভাল থাকুন।

  5. শামীম ইফতেখার - ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৮ (৬:৪৮ অপরাহ্ণ)

    সুপ্রিয় জিফরান খালেদ,

    ক.
    আমার মন্তব্যে ‘খোঁচাখুঁচির রেশ’-টি ঠিকই ধরতে পেরেছেন। দেখে ভালো লাগলো। কিন্তু এর অন্তর্নিহিত বক্তব্যটি এখনো ধরতে পারেননি দেখে কিছুটা হতাশ হলাম। যে “সাধারণ বচনকে কাঁদাটে” করার অভিযোগ তুললেন (“আশা রাখি পরবর্তীতে সাধারণ বচনকে এমন কাঁদাটে করবার প্রচেষ্টায় লিপ্ত থাকবেন না…”), মন্তব্যটি আসলে তা নিয়েই। প্রথমত: শব্দটি সম্ভবত “কাদাটে” হবে, “কাঁদাটে” নয়; কাউকে কাঁদানো আমার উদ্দেশ্য নয়। দ্বিতীয়ত, যে মন্তব্যটিকে আপনি “সাধারণ বচন” বলছেন, তা যে কারো কারো বিচারে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বা সৌজন্যবহির্ভূত বলেও মনে হতে পারে, তা কি একবারও ভেবেছেন? ব্লগ কর্ণধাররা সেটি আপনার গোচরে না আনায় কিছুটা অবাকই হয়েছি। ধরে নিলাম এটা তাদের উদারতা। কিন্তু বাকী পাঠকরাও ততটাই লিবারেল হবেন তা আশা করা কেন? আপনার “দেখি” শব্দটা অন্তত আমার কানে শুনিয়েছে স্কুল পরিদর্শকের “দেখি”-র মত, যার সামনে গোটা প্রতিষ্ঠানকে পরীক্ষা দিতে হবে এখন। নিন্দুকেরা একে “দেখে নেব” ধরণের শাসানো বলেও ভ্রম করতে পারেন। অবশ্য পুরোটা আমার বোঝার ভুলও হতে পারে। যদি হয়, সেক্ষেত্রে অগ্রীম ক্ষমা চেয়ে নিতে আপত্তি নেই।

    খ.
    এরশাদ আলমগীরকে চিনিনা। তিনি নিভৃতচারী কি ব্রহ্মচারী, সেটিও অপ্রাসঙ্গিক। “ব্যসকূটে গাপ হচ্ছে” যদি তার কবিতার প্রতিনিধিত্বকারী নমূনা হয়, তাহলে সে কবির আর কোন লেখা জানার আপাতত কোন আগ্রহ বোধ করছিনা। এত বেশী অপঠিত ভালো কবিতা রয়ে গেছে সারা পৃথিবীতে, সেখানে এরশাদ আলমগীরের জন্য সময় পাওয়া যাবে বলে মনে হয়না, তাকে নিয়ে ‘পান্ডিত্যপূর্ণ’ আলোচনা তো দূরের কথা। তাই, জিফরান খালেদের এই লেখাটি পড়ে মনে একবার ধন্দ লেগেছিল, বুঝিবা তিনি তাবৎ বাংলা সাহিত্য ঘেঁটে “ব্যসকূটে গাপের” চেয়ে ভালো আর কিছু খুঁজে পেলেন না। মন কেঁপে উঠেছিল কি এক অজানা আশংকায়। অবস্থা কি সত্যিই এতটা শোচনীয়? কারণ:

    যে দ্যাশে নদী নাই, সেই দ্যাশে নর্দমাও সাগর
    যে দ্যাশে নাগর নাই, সেই দ্যাশে পেটুয়াও নাগর

    [ভাবার্থ: পেটুয়া= স্থুলাঙ্গ পেটুক পুরুষ; নাগর= সুদর্শন eligible পুরুষ]

    গ.

    (‘নৈর্বত্তিক’ শব্দটি) আপনার শব্দভান্ডারে নেই বলছেন? হাহাহা… কিভাবে বিশ্বাস করি বলুন? এই নৈর্বত্তিকতার জন্যেই তো দর্শনের মনীষা ব্যয়িত হলো কতো…

    খুব অবাক হবো দর্শনশাস্ত্রে এর পেছেনে আদৌ কোন “মনীষা ব্যয়িত” হয়ে থাকলে। শব্দটি যদি ‘নৈর্ব্যক্তিক’ হয় তাহলে অবশ্য ভিন্ন কথা, যে শব্দটির সাথে সম্ভবত সান্ত্বনা এবং বাকী বাংলাভাষীরাও পরিচিত। আর ‘একাডেমিকেলী’ বলুন আর যেভাবেই বলুন না কেন (“আমি যে এখনো একজন ছাত্র, একাডেমিক্যালী স্পিকিং, সেই ব্যক্তিপরিচয়টাই উল্লেখ করেছিলাম শুধু। আপনার অধ্যায়ন করবার অধিকার হরণ করবার জন্যে নয়।”) শব্দটা ‘অধ্যয়ন’ হবে, ‘অধ্যায়ন’ নয়। বাংলা একাডেমী অভিধান: ১৫ এবং ৩৮৫ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য। মনে হচ্ছে আপনি আমার বা সান্ত্বনার বক্তব্য ঠিক বুঝতে পারেননি!

    ভালো থাকুন। ভূমির কাছাকাছি থাকুন। সরল সহজে বাঁচুন।

    • জিফরান খালেদ - ২৯ সেপ্টেম্বর ২০০৮ (২:০২ পূর্বাহ্ণ)

      আমি আসলেই আপনার আপত্তির অংশটুকু, আমার পরিচিতিতে, ধরতে পারছিলাম না। বারবার মনে হচ্ছিল, আপনি কোন কারণে আহত হয়েছেন যেটা আরো বেশি অবাক করার মতো ব্যাপার। আপনার যেহেতু আপত্তিকর ও রূঢ় মনে হয়েছে, আমি তাই আরো স্পষ্ট করে লিখলাম। ‘দেখি’র ব্যাপারটা একধরণের দুঃখবোধ বা অসহায়তাবোধ থেকে লিখা। যেই কারণে আসলে ফারুক ভাইয়ের আশাবাদের ভরসা করা, ঠিক সেরকমটাই… যাক, সেটিও তুলে দিলাম… কেন রুষ্ট করা অপরিচিতকে মিছিমিছি?

      আমার অসাবধানতাবশতঃ যে ভুল এবং দৃষ্টিকটুভুল সমূহ আমি তা ঠিক করে নিলাম। কৃতজ্ঞ সে কারণে।

      এরশাদের কবিতা ভাল লাগেনি, বেশ। এই লিখাটি বহু আগের। যখনের, তখন এই কবিতাখানি আমার কিছু কথা বা চিন্তা বলবার সুযোগ করে দিয়েছিল। এরশাদের অপরাপর কবিতাসমূহ এইরূপ নয়। সে যাক…

      আসলেই অসংখ্য ভাল অপঠিত কবিতা রয়ে গেছে… কোনো মানে হয়তো হয়না অ্যাবসার্ডরে ডিকোড করার… কবিতাপাঠ শুভ হোক, ভাল থাকুন। ক্ষুণ্ণ হয়ে থাকলে ক্ষমাপ্রার্থী।

      • শামীম ইফতেখার - ২৯ সেপ্টেম্বর ২০০৮ (১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ)

        সুপ্রিয় জিফরান খালেদ,
        ভুল এবং ভুল বোঝাবুঝি আমাদের সকলেরই হয়। বড় এবং মুক্ত মনের পরিচয় তা স্বীকার করতে পারার মধ্যে। আপনাকে অভিনন্দন এবং ধন্যবাদ।
        আমার মন্তব্যে কাঠিন্যের যেটুকু সুর তা অনিচ্ছাকৃত, অনেকটা আপনার মতই “দুঃখবোধ বা অসহায়তাবোধ থেকে” উদ্গত; সে আরেক কাহিনী, অন্য একদিন বলবো। আমার মন্তব্যে যদি আপনি কষ্ট পেয়ে থাকেন, আমি ক্ষমাপ্রার্থী। ভবিষ্যতে আপনার কাছ থেকে আরো অনেক লেখার প্রত্যাশায় থাকলাম।
        ভালো থাকুন।

      • শামীম ইফতেখার - ৭ অক্টোবর ২০০৮ (৩:২১ অপরাহ্ণ)

        পূনশ্চঃ
        অন্যদের কথা জানিনা, তবে যতটুকু লেখা হয়েছে, তাতে সামগ্রিকভাবে লেখাটি অপবিশ্লেষণের, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে লক্ষ্যহীন অতিবিশ্লেষণের দোষে দুষ্ট মনে হয়েছে। আবার যে সব ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা জরুরী ছিল, তা বিশেষভাবে অনুপস্থিত। আশা করছি, পরবর্তীতে যে চতুর্মাত্রিক ‘ব্যবচ্ছেদ’ এর আশ্বাস দেয়া হয়েছে, তাতে বিষয়গুলো আরেকটু স্পষ্ট করা হবে।

        • জিফরান খালেদ - ৮ অক্টোবর ২০০৮ (৩:০৮ অপরাহ্ণ)

          হুমম। তেমন মনে হলে আসলে খুব একটা কিছু করবার যে আছে, দেখছিনা। এইটা বোধহয় বোঝা যাওয়া দরকার যে, লিখাটি একটি কবিতার বিশ্লেষণের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছে অন্যান্য কিছু বিষয়কে এবং সেই বক্তব্যকে চিহ্নিত করবার জন্যে এই কবিতাটিকে ব্যবহার করা হয়েছে; vice versa নয়। প্রথন দুই প্যারাগ্রাফের কথন অপবিশ্লেষণ বা অতিবিশ্লশষণের অনুঘটক কিভাবে হয়, তা আমি বুঝিনি বা বুঝিনা বলেই সেইটা লিখা। এই দুই প্যারাগ্রাফ আমার নোমেনক্লেচার, ভাষার দর্শন, ‘মানে’, বোধগম্যতার রাজনীতি, – এইগুলা নিয়ে আমার ভাবনা প্রকাশক। সেখান থেকেই আগুয়ান হয়ে কবিতার একটা আক্ষরিক অর্থবোধকতা বের করার চেষ্টা। সাধারণ পাঠ হিশেবে। তা, সেই সাধারণ পাঠ অনেক দোষেই দুষ্ট হতে পারে। কিন্তু, প্রথম দুই প্যারাগ্রাফ হলো আমার লিখাটির সারবেত্তা। লিখার শিরোনামেও সেটা নিয়েই আসলে আগানো গেছে। সে যাক, ধরে নিচ্ছি, আপনার পাঠ মনযোগী ছিল, সেই হিশাবে পাঠের জন্যে ধন্যবাদ।

  6. অলকেশ - ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৮ (১১:২১ অপরাহ্ণ)

    জিফরান খালেদ “নৈর্ব্যক্তিক” শব্দের বানানটি দু’স্থানে দু’ভাবে ব্যবহার করেছেন। যেমনঃ

    পাদটীকা : ৬ তে “আপাত-নৈর্বত্যিক-অবস্থান”

    ২ নং মন্তব্যকারিনী সান্ত্বনার প্রশ্নের প্রত্যুত্তরেঃ “আমি ‘নৈর্বত্তিকতা’ নিয়ে”

    বানান আমি নিজে অনেক সময়ই ভুল করে ফেলি। তবে কেউ দেখিয়ে দিলে সেখান থেকে শিখি। আমার কাছে মনে হয়েছে, শামীম সাহেব ও সান্ত্বনা বোধ হয় সেই দিকটিরই অর্থাৎ বানান বিভ্রাট নিয়ে মূলতঃ ইংগিত করতে চেয়েছেন যা কোন কারণে জিফরান খালেদ মিস্ করে গেছেন বা ধরতে পারেন নি।

    • জিফরান খালেদ - ২৯ সেপ্টেম্বর ২০০৮ (২:০৭ পূর্বাহ্ণ)

      ধন্যবাদ দাদা। আমি ভুলগুলো শুধরে নিয়েছি।

  7. রায়হান রশিদ - ৮ অক্টোবর ২০০৮ (৫:৩৮ অপরাহ্ণ)

    @ জিফরান খালেদ এবং শামীম

    যেহেতু এ লেখার বাকী কিস্তিগুলো এখনো অপ্রকাশিত, তাই কোন আলোচনায় অংশগ্রহণ কিছুটা প্রি-ম্যাচিউরই হয়ে যায়। তবে মন দিয়ে পড়ছিলাম মন্তব্য প্রতি‌-মন্তব্যগুলো। যেহেতু লেখার বিষয়বস্তু হল “কবিতা” এবং “কবিতায় বিমূর্ততা” সেহেতু সেখানে মৌলিক মতভেদ থাকতে বাধ্য, স্রেফ প্যারাডাইমের ভিন্নতা এবং তার ক্রমপরিবর্তনশীলতার কারণে হলেও (paradigm এর কোন ভালো বাংলা থাকলে জানালে কৃতজ্ঞ হব)। সেক্ষেত্রে লেখক শুরুতেই যা বলেছেন, খুব মনে হয় ভুল বলেননি: কবিতা নিয়ে, তা যে বা যার কবিতাই হোক না কেন, কিছু লিখা বেশ বিপজ্জনক

    শেষ অনুচ্ছেদটি শুরুতে নিযে আসলে (যেমন: প্রথম কিংবা তৃতীয় অনুচ্ছেদে) পুরো লেখাটির একটি অগ্রীম কাঠামোগত ওভারভিউ পাওয়া যেতে পারে। তাতে আলোচিত কবিতাটির বিশ্লেষণের (‘শব্দ থেকে বাক্যে অর্থরূপ’) প্রেক্ষিত বোঝা সহজতর হতে পারে। ভেবে দেখা যায় কি? পরের কিস্তিগুলো পড়ার আশায় রইলাম।

  8. ব্লগ প্রশাসক - ৮ অক্টোবর ২০০৮ (৫:৪৮ অপরাহ্ণ)

    ফুটনোট
    ব্লগপোস্টে সরাসরি এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফুটনোট সংযোজনের সুবিধা রয়েছে এখন। মুক্তাঙ্গনে লেখার ধরণ বিবেচনায় এই ব্যবস্থাটি এখন জরুরী মনে হচ্ছে। বিস্তারিত জানতে এখানে দেখুন (দ্রষ্টব্য#৪)।
    ধন্যবাদ।

  9. রণদীপম বসু - ৪ জুলাই ২০০৯ (৭:৩৩ পূর্বাহ্ণ)

    হা হা হা ! জিফরান, মুক্তাঙ্গনে আপনাকে পেয়ে ভালো লাগছে।

    আপনার পরিশ্রমী লেখাটি ভালো লাগলো আপনার লেখার গুণে, অবশ্যই ব্যবচ্ছেদকৃত কবিতাটির কাব্যগুণে নয়। কাউকে কাউকে দু’একটা বানান বিভ্রাটকে যেভাবে পেঁচিয়ে ধরতে দেখলাম, তাতে করে সহজ সংশোধনেচ্ছু মনোভাবের চেয়ে নির্মম বিজ্ঞতার নিরাবেগ জটিলতাই প্রকাশ পেয়েছে বেশি। এতে করে নির্ভরতার বদলে ভীতিটাই প্রাধান্য পেয়ে যায় বৈ কি ! হতে পারে আপনার গভীরায়তনিক লেখাটার জাল খুলতে খুলতে পাঠকের চেতনাও ততক্ষণে জটিলাবর্তে ঝাঁপ দিয়ে ফেলেছে ! হা হা হা ! আমার অবস্থাও এর চাইতে বেশি ভালো মনে হচ্ছে না। তবে পরবর্তী লেখাগুলো পাঠের আগ্রহে তাতে একটুও ভাটা পড়েনি।
    কবিতা নিয়ে সেই লিরিকটা মনে পড়ছে ( স্মৃতি থেকে তুলে আনা, তাই সম্ভাব্য প্রমাদ স্বীকার করে নিচ্ছি)-

    ওপাড়ার সখিনা
    সারা অঙ্গে কবিতা তাঁর
    কিন্তু সে কবিতা বুঝে না…

    • শামীম ইফতেখার - ৪ জুলাই ২০০৯ (১:৫৩ অপরাহ্ণ)

      রণদীপম বসু,
      আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা আমার প্রকাশভঙ্গীর ত্রুটি ধরিয়ে দেয়ার জন্য। পুরো আলোচনাটা পড়ে এখন সত্যিই মনে হচ্ছে এতে পুরো ব্যাপারটিকে “সহজ সংশোধনেচ্ছু মনোভাবের চেয়ে নির্মম বিজ্ঞতার নিরাবেগ জটিলতা” হিসেবে গ্রহণ করার অবকাশ থেকে যাচ্ছে। যদিও মন্তব্যগুলোর উদ্দেশ্য ছিল পুরো বিপরীত, এই “বিজ্ঞতার জটিলতা”কেই এড়ানো।
      আবারও ধন্যবাদ।

      =====

      জিফরান খালেদ প্রিয়বরেষু,
      আমার মন্তব্যে কিছুটা কঠোরতা প্রকাশ পেয়ে গেছে, যা কিছুটা অযাচিত এমনকি অপ্রয়োজনীয়ও হয়তো কিছুটা। দুঃখ প্রকাশ করছি সে জন্য। যে অস্পষ্টতার বিরুদ্ধে আমার মন্তব্য, এখন মনে হচ্ছে তাতে কিছুটা আমিও দুষ্ট। তাই ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজনীতা অনুভূত হচ্ছে।
      পাঠক হিসেবে এরশাদ আলমগীর এর এই নির্দিষ্ট কবিতাটির নির্বাচনে প্রথমেই কিছুটা হোঁচট খেয়েছিলাম আসলে। কবির অন্য কবিতাগুলোর সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ ঘটেনি তাই বলতে পারছি না এটি তাঁর প্রতিনিধিত্বমূলক কবিতাগুলোর একটি কি না। অন্য কোন কবিতা বাছাই করা যেতো কি না তা লেখকই ভাল জানবেন। দ্বিতীয় যে বিষয়টিতে হোঁচট খেয়েছি তা হল কোন ধরণের ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ ছাড়াই কিছু কিছু তাত্ত্বিক ধারণার উল্লেখে। বহু দিন ধরেই নানা বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনায় অধুনার কিছু লেখকের মধ্যে কঠিন কঠিন তাত্ত্বিক শব্দমালা/পরিভাষা প্রয়োগের (অনেকসময়ই নিতান্ত অপ্রয়োজনীয়ভাবে) একটি অদ্ভুত প্রবণতা লক্ষ্য করে আসছিলাম। এতে আমাদের মত সাধারণ পাঠকরা শত আগ্রহ থাকা সত্বেও বক্তব্য অনুধাবনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছি বরাবর। বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনায় এ ধরণের অস্পষ্টতা রেখে দেয়া কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে পরিভাষাগত জটিলতা সৃষ্টির এই প্রবণতাকে অনেক সময় কিছুটা সততাবিবর্জিতও মনে হয়েছে আমার কাছে। অবশ্য এ আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। এর ফলে আমি মনে করি লেখার মূল উদ্দেশ্যটাই ব্যাহত হয় সবার আগে। লেখকের জ্ঞান-গম্যির বহর দেখে অবুঝ পাঠকের মনে তাক হয়তো লাগে ঠিকই, কিন্তু কাজের জিনিস কিছুই শেখা হয় না তার, আর আলোচনায় অংশগ্রহণ তো আরও দূরের কথা।
      এসব নানা কারণেই মনের মধ্যে সব সময় এক ধরণের সরল আশাবাদ পোষণ করার চেষ্টা করে এসেছি যে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার এই প্রচলিত ধারায় একটা মৌলিক পরিবর্তন অন্তত আসুক – সহজ সাবলীলতা এবং সর্বোপরি পাঠকবোধ্যতা কিছুটা হলেও প্রাধান্য পাক লেখকদের লেখায়। তবে এ সত্য যে এটা বলা যত সহজ করা হয়তো ততটা সহজ না। ‘সহজ কথা যায় না বলা সহজে’ – এটা কে না জানে! আর তত্ত্বীয় অনেক বিষয়ই আছে যেগুলো হয়তো সহজভাবে প্রকাশ করা সত্যিই দুঃসাধ্য। তবে চেষ্টাটা অন্তত থাকা উচিত। কোন লেখা যখন কেবলমাত্র বিশেষজ্ঞ পাঠকদের জন্য লেখা হয় (যেমন: জার্নাল এ) তখন হয়তো অতো শত ব্যাখ্যা করে সব কিছু খুলে না বললেও চলে কারণ সেখানকার পাঠকরা বিষয়বস্তু এবং পরিভাষার সাথে পূর্ব অবগত। কিন্তু ব্লগে বা পত্র পত্রিকায় প্রকাশের উদ্দেশ্যে যে সব লেখা, সেগুলো মনে হয় আরেকটু পাঠক বান্ধব হওয়া দরকার। লেখাকে dumbed down না করেও সেটা মনে হয় করা যায়। আশা করি ব্যাপারটা ভেবে দেখবেন।
      বেশ অনেক দিন হল আপনার এই লেখাটির বাকী কিস্তিগুলোর জন্য অপেক্ষায় আছি। চিন্তায় ঘাত প্রতিঘাত থাকবে, ন্যায্য অন্যায্য স্তুতি থাকবে, আক্রমণ থাকবে। তাতে সৃজনশীল লেখকের দমে যাওয়া কি শোভা পায়?
      ভাল থাকুন।
      বি:দ্র:- আপনার বাবা কেমন আছেন এখন?

    • রেজাউল করিম সুমন - ৬ আগস্ট ২০০৯ (১:০০ অপরাহ্ণ)

      @ রণদীপম বসু :

      স্মাগলার আলোচক সম্পাদক তরুণীর দল,
      কবিতা বোঝে না কোনো সঙ
      অভিনেত্রী নটীনারী নাটের মহল
      কার মনে কতোটুকু রঙ?
      ও পাড়ার সুন্দরী রোজেনা
      সারা অঙ্গে ঢেউ তার, তবু মেয়ে
      কবিতা বোঝে না!

      আল মাহমুদের “অবুঝের সমীকরণ” কবিতার একটি স্তবক

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.