লু স্যুন (১৮৮১–১৯৩৬) — মৃত্যুদিনে স্মরণ

লু স্যুন লু স্যুনের (১৮৮১—১৯৩৬) মৃত্যুদিনে স্মরণ এবং তাঁর একটি লেখার অনুবাদ ...

চীনের চেচিয়াং প্রদেশের প্রাচীন শহর শাওসিং-এর দক্ষিণদিকে অবস্থিত তুছাংফাংখৌ-র ‘চৌ’ পদবীধারী একটি পরিবারে ১৮৮১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২৫ তারিখে প্রায় মধ্যরাতে জন্মগ্রহণ করে চৌ পৌয়ি আর শ্রীমতী লুরুই-এর প্রথম পুত্রসন্তান। তাঁদের দ্বিতীয় পুত্র চৌ জুওরেন-ও (১৮৮৫–১৯৬৭) অগ্রজের মতোই সাহিত্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করে সাহিত্যিক ও সাহিত্য সমালোচক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। জাপ-সাম্রাজ্যবাদীদের সঙ্গে সহযোগিতা করে তিনি ধিক্কৃত হন। পরিবারের একমাত্র কন্যাসন্তানের জন্ম হয় ১৮৮৮ সালে, জন্মের ১০ মাস পরেই তার মৃত্যু হয়। তৃতীয় পুত্র চৌ চিয়ানরেন-ও (১৮৮৯–১৯৮৪) আধুনিক চীনের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠা অর্জন করেন। পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান চতুর্থ পুত্র চৌ ছুনশৌ-র (১৮৯৩—১৮৯৮) মৃত্যু হয় মাত্র ৫ বছর বয়সে, বসন্ত রোগে।

জ্যেষ্ঠ সন্তানের বয়স যখন পনেরো, সে-সময়ে দীর্ঘ রোগভোগের পর ভুল ও সেকেলে চিকিৎসায় মাত্র সাঁইত্রিশ বছর বয়সে পরিবারের কর্তার মৃত্যু হয় (১২ অক্টোবর ১৮৯৬)। পিতার মৃত্যুর কয়েক বছর পর তিনি জাপানে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন, কিন্তু পড়া শেষ না করেই বদলে নেন নিজের জীবনের লক্ষ্য – সাহিত্য আন্দোলনের মাধ্যমে চীনা জাতির ভাগ্য পরিবর্তনকে নিজের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন। ১৯৩৬ সালের ১৯ অক্টোবর তারিখে পঞ্চান্ন বছর বয়সে শাংহাই-এ তাঁর মৃত্যু হয়।

জীবদ্দশাতেই তিনি স্বীকৃতি ও প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন আধুনিক চীনা সাহিত্যের স্থপতি রূপে। যুবসমাজকে তিনি কতটা অনুপ্রাণিত করতে পেরেছিলেন তার খানিকটা আন্দাজ পাওয়া যাবে এই তথ্য থেকে – যুবকদের কাছ থেকে মোট ১২০০টি চিঠি তিনি পেয়েছিলেন এবং উত্তরে লিখেছিলেন ৩৫০০-এরও বেশি চিঠি। তাঁর যুব-সাক্ষাৎপ্রার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৫০০। পরবর্তীকালে মাও সেতুং তাঁর সম্পর্কে বলেন :

চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের তিনি ছিলেন প্রধান সেনাপতি। তিনি শুধু একজন মহান সাহিত্যিকই ছিলেন না, তিনি একজন মহান চিন্তাবিদ ও মহান বিপ্লবীও ছিলেন। লু স্যুন ছিলেন প্রস্তরের মতো দৃঢ়, সকল রকমের মোসাহেবি ও আজ্ঞানুবর্তিতা থেকে তিনি মুক্ত ছিলেন। তাঁর এই চরিত্র বৈশিষ্ট্য ঔপনিবেশিক ও আধা-ঔপনিবেশিক দেশের জনগণের এক অমূল্য সম্পদ। সাংস্কৃতিক ফ্রন্টে, সমগ্র জাতির বিরাট সংখ্যাধিক্যের প্রতিনিধি হিসেবে লু স্যুন শত্রুর দুর্গ বিদীর্ণ করেন এবং তার উপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়েছিলেন; এতে তিনি ছিলেন সবচেয়ে নির্ভুল, সবচেয়ে নির্ভীক, সবচেয়ে দৃঢ়, সবচেয়ে সত্যনিষ্ঠ, সবচেয়ে উৎসাহী জাতীয় বীর, আমাদের ইতিহাসে এই বীরের কোনো তুলনা নেই। লু স্যুন-এর পথ চীনা জাতির নতুন সংস্কৃতির পথ।

লু স্যুন (ছবি:  লি ইতাই, ১৯৭৪)

লু স্যুন (ছবি: লি ইতাই, ১৯৭৪)

আমি আর এসব ভাবতে পারি না।

শুধু এটুকু বুঝতে পেরেছি যে গত কয়েক বছর ধরে আমি এমন জায়গায় বাস করছি যেখানে চার হাজার বছর ধরে তারা মানুষের মাংস খাচ্ছে। বোনের মৃত্যুর সময় দাদা সবেমাত্র বাড়ির দায়িত্ব নিয়েছেন। সম্ভবত তিনি তার মাংস আমাদের ভাতে-তরকারিতে মিশিয়ে অজান্তে তা খেতে বাধ্য করেছেন।

হয়তো আমি অজান্তে বোনের কয়েক টুকরো মাংস খেয়েছি – এবার আমারও পালা …

আমার মতো একজন মানুষ, যার ইতিহাসের চার হাজার বছর ধরে মানুষ খাওয়া চলছে, প্রথমে কিছু না জেনেও এখন কীভাবে সত্যিকারের মানুষদের মোকাবেলা করব?

‘এক পাগলের ডায়েরি’ নামে লু স্যুনের প্রথম ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছিল ১৯১৮ সালের মে মাসের ৫ তারিখে ‘নব যৌবন’ পত্রিকায়। লু স্যুন – এই নামটির সঙ্গে এ গল্পের মাধ্যমেই চীনা পাঠকদের প্রথম পরিচয় ঘটে। ওই পত্রিকার একই সংখ্যায় ছাপা হয়েছিল ‘থাংসি’ ছদ্মনামে লেখা তাঁর তিনটি নতুন রীতির গদ্যকবিতা – ‘স্বপ্ন’, ‘প্রেমের দেবী’, ‘পীচফুল’। একই ছদ্মনামে ওই পত্রিকায় জুলাই মাসে ছাপা হয় আরো দুটি কবিতা – ‘তাদের ফুলবাগান’, ‘মানুষ ও কবিতা’। আগস্ট মাসে ছাপা হয় তাঁর প্রবন্ধ – ‘সতীত্ব সম্বন্ধে আমার মতামত’। ওই বছরেই প্রকাশিত লু স্যুনের আরো কয়েকটি প্রবন্ধ হলো : ‘এলোমেলো চিন্তা (২৫)’, ‘এলোমেলো চিন্তা (৩৩)’, ‘এলোমেলো চিন্তা (৩৫)’, ‘এলোমেলো চিন্তা (৩৭)’, ‘এলোমেলো চিন্তা (৩৮)’।

‘থাংসি’-র মতো ‘লু স্যুন’-ও ছিল লেখকের ছদ্মনাম! ‘লু স্যুন’ নামটা তিনি তৈরি করে নিয়েছিলেন তাঁর নিজেরই অন্যতম ছদ্মনাম ‘স্যুনসিং’-এর সংক্ষেপিত রূপের সঙ্গে মায়ের পদবী যুক্ত করে নিয়ে। কারণ ‘নব যৌবন’-এর সম্পাদক ছিয়াং স্যুয়ানথোং কৃত্রিম নামের মতো শোনায় এমন কলমী-নাম পছন্দ করতেন না।

লু স্যুনের শ্রেষ্ঠ গল্প ‘আ’ কিউ-র সত্য কাহিনি’ (ডিসেম্বর ১৯২১) ধারাবাহিকভাবে প্রথম প্রকাশের সময়ে এর লেখকের ছাপা হয়েছিল ‘পা রেন’ বা ‘ইতর প্রাণী’। এই গল্পের প্রথম অধ্যায় ‘চেন পাও’ সংবাদপত্রের ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হয় ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে।

১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবে বলশেভিকদের জয় ও পৃথিবীর প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অভ্যুদয় আর চীনে ১৯১৯-এর ৪ মে তারিখে সূচিত সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্ততন্ত্র-বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের নতুন পর্যায়ে উন্নীত হওয়া – এই দুই ক্রান্তিলগ্নের মাঝামাঝি সময়ে লু স্যুন লেখক হিসেবে যথার্থ অর্থে আত্মপ্রকাশ করেন। বস্তুতপক্ষে ১৮৯৮ সালের সংস্কার আন্দোলন থেকে ১৯১৯ সালের ৪ মে-র নতুন সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পূর্বমুহূর্ত এবং ৪ মে-র আন্দোলনের সময় থেকে ১৯৩৬ সালের ১৯ অক্টোবর অর্থাৎ মৃত্যুদিন – এই দুই ক্রমিক পর্বে গণতান্ত্রিক বিপ্লবী থেকে কমিউনিস্ট বিপ্লবীতে লু স্যুন-এর রূপান্তরকে চিহ্নিত করা হয়।

সাহিত্যচর্চার বিভিন্ন পর্যায়ে লু স্যুন ব্যবহার করেছেন প্রায় ৭৩টি কলমী-নাম! জন্মের পর তাঁর ঠাকুর্দার দেয়া নাম ‘চাং শৌ’, শৈশবে রাখা বৌদ্ধ-নাম ‘ছাংকাং’ কিংবা সতেরো বছর বয়সে নানচিং শহরে নৌ-একাডেমিতে ভর্তি হবার সময়ে ঠাকুর্দার এক ভাইয়ের দেয়া নতুন নাম ‘চৌ শুরেন’ – এগুলোর কোনোটাতেও এখন আর লু স্যুনকে চিনতে পারবেন না তাঁর বিশ্বজোড়া অগণিত পাঠক।

আমাদের কাছে লু স্যুনের প্রধান পরিচয় একজন অসামান্য গল্পকার হিসেবে। ‘এক পাগলের ডায়েরি’ (এপ্রিল ১৯১৮), ‘আ’ কিউ-র সত্য কাহিনি’ (ডিসেম্বর ১৯২১) প্রভৃতি গল্পের কল্যাণে প্রায় যে-কোনো পাঠকের কাছেই তিনি সুপরিচিত। তাঁর গল্পের নাট্যরূপান্তর কেবল চীনা ভাষাতেই হয়নি, অন্য অনেক ভাষার মতো আমাদের ভাষায়ও হয়েছে।

লু স্যুনের গল্পের সংখ্যা বেশি নয়; সাকুল্যে পঁচিশটি গল্প তিনি লিখেছেন ১৯১৮ থেকে ১৯২৬ সালের মধ্যে। তাঁর হাতেই আধুনিক চীনা ছোটগল্পের সূচনা ও বিকাশ। ১৯১৮ থেকে ১৯২২ সালের মধ্যে লেখা চোদ্দটি এবং ১৯২৪ ও ১৯২৫ সালে লেখা এগারোটি গল্প সংকলিত হয়েছে দুটি গল্পগ্রন্থে – ‘হে যুদ্ধ, স্বাগত’ বা ‘লড়াইয়ের ডাক’ (‘নাহান’, ১৯২৩) এবং ‘সংশয়’ (‘ফাংহুয়াং’, ১৯২৬)।

১৯৩৫ সালে প্রকাশিত হয় ঐতিহাসিক পটভূমিতে লেখা লু স্যুনের আটটি গল্পের সংকলন ‘পুরোনো গল্প নতুন করে বলা’। বইয়ের নামকরণ থেকেই স্পষ্ট যে, প্রাচীন চীনে প্রচলিত কয়েকটি গল্পই এক্ষেত্রে তাঁর মূল অবলম্বন। বিবরণের ক্ষেত্রে অনেকসময়ে তিনি প্রাচীন পাঠ-কেই অনুসরণ করেছেন, আবার কখনো ‘চিন্তার বল্গাকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত করে’ও দিয়েছেন। আসলে তাঁর সময়কার চীনের রাজনীতি আর সামাজিক পটভূমিই তাঁকে দিয়ে এই গল্পগুলি লিখিয়ে নিয়েছে। পুরোনো ধ্যান-ধারণার ধারক-বাহক, মুৎসুদ্দি-বুর্জোয়া লেখক, কুওমিনতাং শাসকশ্রেণীর ভাড়াটে সাহিত্যিক আর সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন-নীতিকে একহাত নেয়ার জন্যই পুরোনো গল্পগুলো নতুন করে লিখতে হয়েছিল তাঁকে।

লু স্যুন নিজে কোনো উপন্যাস লেখেননি, তবে বিভিন্ন সময়ে সম্পাদনা করেছেন ‘প্রাচীন চীনা উপন্যাসের ইতিবৃত্ত’ (১৯১০), ‘চীনা উপন্যাস সাহিত্যের ইতিবৃত্ত’ (দুই খণ্ডে প্রকাশ ১৯২৩ ও ১৯২৪ সালে, পরিমার্জনা ১৯৩০-এ), ‘প্রাচীন চীনা উপন্যাস সংকলন’ (১৯২৬)।

মাত্র একটিই কাব্যগ্রন্থ লু স্যুনের – ‘বুনো ঘাস’ (১৯২৭)। একটি বাদে এ বইয়ের আর সব লেখাই গদ্যকবিতা। এই কাব্যগ্রন্থটি আধুনিক চীনা কবিতায় গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে স্বীকৃত। দু-একটা কবিতা উদ্ধৃত করা যাক।

আমি স্বপ্ন দেখলাম, আমি একটা সংকীর্ণ গলি দিয়ে হাঁটছি। আমার পরনে ভিখারির মতো জীর্ণ পোশাক।

একটা কুকুর আমার পিছনে ঘেউ ঘেউ করতে লাগল।

আমি ঘৃণাভরে পিছনে ফিরে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠলাম : “এই! চুপ! থুতু-চাটা নেড়ি কুত্তা!”

সে একটা চাপা হাসি হাসল।

সে বলল, “আরে না! এই বিষয়ে মানুষের সমান নই।”

“কী?” আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম, অনুভব করলাম এটা একটা চূড়ান্ত অপমান।

“আমার বলতে লজ্জা হয়, আমি এখনও জানি না কীভাবে তামা আর রুপো, সিল্ক আর সুতি, অফিসার আর সাধারণ নাগরিক, প্রভু আর ভৃত্যের মধ্যে পার্থক্য করা যায়।…”

আমি পিছন ফিরে পালাতে লাগলাম।

আমার পিছন থেকে চিৎকার ক’রে সে আমাকে থামতে বলল, “একটু দাঁড়াও! আমরা আরও কিছু কথা বলব…”

কিন্তু আমি প্রাণপণে সোজা দৌড়তে লাগলাম, যতক্ষণ না স্বপ্নের শেষে আমার নিজের বিছানায় ফিরে এসেছি।

(‘একটা কুকুরের পালটা জবাব’, ২৩ এপ্রিল ১৯২৩)

এবারে সংলাপের আদলে রচিত একটি দীর্ঘ কবিতার অংশবিশেষ। বছর তিরিশ-চল্লিশের এক ছিন্নবেশ শ্রান্ত পথিক নির্জন স্থানে মাটির বাড়ির সামনে সত্তর বছরের বৃদ্ধ ও তাঁর দশ বছর বয়েসী নাতনির মুখোমুখি হয়। তার জলতেষ্টার কথা শুনে বৃদ্ধ তাঁর নাতনিতে জল আনতে পাঠান এবং পথিকের নাম জিজ্ঞেস করেন।

পথিক : আমার নাম? আমি তো তা জানি না। যতদূর আমার স্মরণে আসে বরাবর আমি একলা; তাই আমার আসল নাম কী তা আমার জানা নেই। আমি যখন পথে পথে ঘুরে বেড়াই, তখন মানুষেরা তাদের খুশিমতো নাম ধরে আমাকে ডাকে। কিন্তু আমার তা মনে নেই, আর একই নামে কেউ কখনো আমাকে একবারের বেশি ডাকেনি।

বৃদ্ধ : আচ্ছা। তা বেশ, তুমি কোত্থেকে আসছ?

পথিক (দ্বিধান্বিতভাবে) : আমি জানি না। যতদূর আমার স্মরণে আসে আমি এইভাবেই হেঁটে চলেছি।

বৃদ্ধ : ঠিক আছে। তাহলে, কোথায় যাবে তা জিজ্ঞাসা করতে পারি কি?

পথিক : বিলক্ষণ পারেন। কথা হচ্ছে, আমি তা জানি না। যবে থেকে জানি আমি এইভাবেই হেঁটে চলেছি সামনের কোনো স্থানের দিকে। আমার যা স্মরণে আসে তা হলো আমি অনেক দূর হেঁটেছি আর হাঁটতে হাঁটতে আজ এখানে এসে পৌঁছেছি। আমি যাব (অঙ্গুলি নির্দেশ করে) ওই পথ ধরে সামনের দিকে!

[…] আমার যাত্রা কোনোদিনই শেষ হবে না? … (সে কিছুক্ষণ ভাবল, তারপর বলতে লাগল) অসম্ভব! আমাকে চলতেই হবে। ফিরে যদি যাই এমন কোনো স্থান পাব না যেখানে গণ্যমান্য লোক নেই। এমন কোনো স্থান পাব না যেখানে জমিদার নেই, এমন কোনো স্থান নেই যেখানে না আছে নির্বাসন বা গারদ। এমন কোনো স্থান নেই যেখানে না আছে কপট হাসি আর কপট অশ্রু। আমি তাদের ঘৃণা করি। না, আমি ফিরে যাব না।

[…] হ্যাঁ, আমাকে এগিয়ে যেতেই হবে। তাছাড়া, সামনের দিক থেকে একটি স্বর আমাকে ডাকছে ও তাড়া দিচ্ছে যাতে আমি বিশ্রাম না নিই। …

(‘পথিক’, ২ মার্চ ১৯২৫)

বেইজিং-এর বিদেশী ভাষা প্রকাশনালয় থেকে লু স্যুন-এর বিভিন্ন একক গ্রন্থ বা সংকলন আর একাধিক জীবনী ছাড়াও প্রকাশিত হয়েছে ৪ খণ্ডে তাঁর ‘নির্বাচিত রচনা’, ইংরেজি অনুবাদে – পৃষ্ঠাসংখ্যা সাকুল্যে দেড় হাজারেরও বেশি। ১ম খণ্ডে রয়েছে গল্প, কবিতা আর স্মৃতিকথা; পরবর্তী ৩ খণ্ড জুড়েই সংকলিত হয়েছে তাঁর নির্বাচিত প্রবন্ধ। সাহিত্য-প্রসঙ্গ, স্মৃতিচারণ, শোকলেখন, পাঠ-প্রতিক্রিয়া, সমালোচনা, শিল্প-সমালোচনা, বই বা সংকলনের ভূমিকা, সমালোচনা বা চিঠির উত্তর ইত্যাদি ছাড়াও আছে নানা উপলক্ষ আর আশু প্রয়োজনকে সামনে রেখে লেখা অজস্র ছোটবড়ো লেখা।

সাহিত্য আর বিপ্লব, চীনা আর রুশ সাহিত্যের সম্পর্ক, সাহিত্য-সমালোচনার প্রত্যাশিত ধরণ ইত্যাদি নিয়ে তো লিখেছেনই, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অর্থাৎ শিশু-কিশোর আর তরুণদের বেড়ে ওঠা এবং শিক্ষার লক্ষ্য ও পদ্ধতিও তাঁকে ভাবিয়েছে। ঐতিহ্য ও প্রথাগত সংস্কারের সঙ্গে নির্মীয়মাণ নতুন সমাজের দ্বন্দ্বকে চিহ্নিত করার কাজেও চালিত হয়েছে তাঁর লেখনী।

‘সতীত্ব সম্বন্ধে আমার মতামত’ (আগস্ট ১৯১৮) প্রবন্ধে লু স্যুন পুরুষপ্রধান সমাজ নির্দেশিত সতীত্বের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন; আমরা দেখব, মেয়েদের কলেজে তাঁর বক্তৃতার বিষয় ‘নোরা ঘর ছেড়ে যাবার পর কী ঘটে?’ (২৬ ডিসেম্বর ১৯২৩)। কোনো গার্লস স্কুলে খাটো চুলের মেয়েদের পরীক্ষা দিতে না দেয়ার কথা বলা হলে সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেন (৪ সেপ্টেম্বর ১৯২৭); আর নারী-পুরুষের অর্থনৈতিক সমানাধিকার ছাড়া যে সমাজের অগ্রগতি অসম্ভব সে-কথা বলেন বেশ প্রত্যয়ের সঙ্গেই (‘নারী স্বাধীনতা প্রসঙ্গে’, ২১ অক্টোবর ১৯৩৩)।

১৯০৭ মাল থেকে ১৯৩৬ সালের মধ্যে লু স্যুন লিখেছেন ৬৫০টি প্রবন্ধ – যা চীনা ভাষায় ১৬টি খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে।

জাপানি ভাষা লু স্যুনকে বাধ্যতই শিখতে হয়েছিল মাঞ্চু সরকারের বৃত্তি নিয়ে জাপানে পড়তে যাবার পর (১৯০২—১৯০৩), তোকিও-র কোবুন কলেজে। ইংরেজি আর জার্মান ভাষার সঙ্গে তাঁর প্রাথমিক পরিচয় হয়েছিল নানচিং-এ থাকতেই (যথাক্রমে চিয়াংনান নৌ-একাডেমিতে এবং সামরিক বিদ্যালয়ের অধীন রেলওয়ে ও খনি বিদ্যালয়ে)। পরে তোকিওতে জার্মান ভাষা ভালো করে শেখার সুযোগ তিনি হাতছাড়া করেননি। জাপানি ও জার্মান ভাষার মধ্যস্থতায় বিদেশী প্রগতিশীল সাহিত্য, বিজ্ঞান ও দর্শন-বিষয়ক রচনার সঙ্গে তাঁর পরিচয়ের পথ সুগম হয়।

নানচিং-এ পড়ার সময়েই লু স্যুনের বিজ্ঞান ও দর্শন বিষয়ে আগ্রহের সূত্রপাত হয়। সে-সময়ে টি. এইচ. হাক্সলি-র ‘ইভোল্যুশন অ্যান্ড এথিক্স্’ (ইয়ান ফু-র চীনা অনুবাদ, ১৮৯৬) বইয়ে ডারউইনের বিবর্তনবাদের আলোচনা তাঁকে গভীরভাবে আলোড়িত করে। তিনি পরিচিত হন প্রাচীন গ্রিক দার্শনিকদের দর্শনচিন্তার সঙ্গেও। ইংরেজ ভূতাত্ত্বিক সি. লিয়েল-এর ‘এলিমেন্ট্স্ অব জিঅলজি’ বইটি লু স্যুন দু-খণ্ডে নকল করে নিয়েছিলেন। পরে, জাপানে, বিদেশী ভাষাশিক্ষা তাঁকে বিজ্ঞানমনস্কতা ও আধুনিক প্রগতিশীল ধ্যান-ধারণার প্রসারের লক্ষ্যে অনুবাদকর্মে ব্রতী হতে সাহায্য করে। একই লক্ষ্য নিয়েই তিনি চীনা ভাষায় বিভিন্ন বিজ্ঞান-বিষয়ক প্রবন্ধ লেখেন। তাঁর ধারাবাহিক অনুবাদ আর প্রবন্ধ ছাপা হতে থাকে জাপানে অধ্যরনরত চেচিয়াং প্রদেশের চীনা ছাত্রদের পত্রিকা ‘চেচিয়াং-এর ঢেউ’-এ। এ পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সভ্য স্যু শৌশাং-এর সঙ্গে এর আগেই লু স্যুনের হৃদ্যতা গড়ে ওঠে।

তোকিও ও সেন্দাই-এর ছাত্রজীবনে লু স্যুন প্রবাসী চীনাদের বিপ্লবী কর্মকাণ্ড ও মাঞ্চুবিরোধী প্রচারণার সংস্পর্শে আসেন। সেন্দাই-এর মেডিক্যাল কলেজের পড়াশোনায় ইস্তফা দিয়ে সাহিত্য আন্দোলন গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে তিনি সেন্দাই ছেড়ে ১৯০৬-এর জুন মাসে তোকিওতে চলে যান। সেই মাসেই চীনা বিপ্লবী চাং থাইইয়ান শাংহাই থেকে মুক্তি পেয়ে চলে যান জাপানে; তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় চীনের বুর্জোয়া বিপ্লবী শ্রেণীর মাঞ্চুবিরোধী প্রধান প্রচারপত্র ‘মিনপাও’। এ পত্রিকার প্রথম ও দ্বিতীয় সংখ্যায় মার্কসবাদ সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ এবং ‘কমিউনিস্ট ইশ্তেহার’-এর আংশিক অনুবাদ প্রকাশিত হয়। লু স্যুন এ পত্রিকার আগ্রহী পাঠক ছিলেন।

১৯০৭ সালে চীনের আনহুই প্রদেশের মাঞ্চু গভর্নরের হত্যাকাণ্ডের পর বিপ্লবী স্যু সিলিং ও তাঁর কয়েকজন অনুগামীকে হত্যা করা হয়। মাঞ্চু সরকারের গণবিরোধী দমন-নীতির প্রতিক্রিয়ায় জাপান-প্রবাসী চীনা তরুণরা ক্রমেই বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠতে থাকেন। এ সময়ে আরো কয়েকজন সহ লু স্যুন রাশিয়া থেকে পালিয়ে আসা এক বিপ্লবীর কাছে রুশ ভাষা শিখতে শুরু করেন। তবে অল্পদিনের মধ্যেই তা বন্ধ হয়ে যায়।

লু স্যুন তোকিও শহরে কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে নিয়ে সাহিত্য আন্দোলন গড়ে তোলার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে একটি সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সত্ত্বেও কয়েকজন লেখকের পিছিয়ে পড়া ও কারো কারো চাঁদা প্রত্যাহারের কারণে ‘নব জীবন’ নামের পত্রিকাটি অপ্রকাশিত থেকে যায়। এই স্বপ্নভঙ্গের পর তিনি হাত দেন রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের সাহিত্য অনুবাদের কাজে। নানা ভাষার প্রগতিশীল ও আধুনিক সাহিত্যের অক্লান্ত পাঠক হয়ে ওঠেন তিনি। সেই সঙ্গে চলতে থাকে হোনান প্রদেশ থেকে আসা চীনা ছাত্রদের সাময়িকপত্র ‘হোনান’-এর জন্য প্রবন্ধ রচনা। এ পত্রিকাতেই ‘লিং ফেই’ ছদ্মনামে লেখা ‘মানুষের ইতিহাস’ প্রবন্ধে লু স্যুন ডারউইনের বিবর্তনবাদের ব্যাখ্যা করেন।

চীনা ভাষার অনুবাদ সাহিত্যে লু স্যুনের অবদান উল্লেখযোগ্য। তাঁর করা অনুবাদের মধ্যে রয়েছে: রাশিয়া (সোভিয়েত ইউনিয়ন), ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, হাঙ্গেরিয়া, ফিনল্যান্ড, স্পেনের সাহিত্যের ৯টি উপন্যাস, ৭৮টি গল্প ও উপকথা, ২টি নাটক এবং ৮টি শিল্প-সাহিত্যতত্ত্বের বই। তাঁর অনুবাদ সম্ভারের একটা অসম্পূর্ণ সূচিতে (কালানুক্রমিক) চোখ বোলানো যাক :

১৯০৩ – ভিক্তর উগো-র ‘ল্য মিজেরাব্‌ল্‌’, জুল ভের্ন-এর কল্পবিজ্ঞানকাহিনি ‘জার্নি টু দ্য মুন’ ও ‘ভয়জ্ টু দ্য সেন্টার অব দি আর্থ’
১৯০৯ – রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের নির্বাচিত ছোটগল্প সংকলন
১৯২২ – এরোশেন্কো-র রূপকথাধর্মী নাটক ‘রঙিন মেঘ’
১৯২৩ – ‘আধুনিক জাপানি ছোটগল্প সংকলন’
১৯২৯ – জাপানি ভাষা থেকে লুনাচার্‌স্কি-র শিল্প-সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধ
১৯৩০ – ‘আধুনিক সাহিত্য সংগ্রহ’ আর জাপানি ভাষা থেকে প্লেখানভ্-এর ‘শিল্পতত্ত্ব’ ও ইয়াকভ্‌লিওভ্-এর ‘অক্টোবর’ উপন্যাস
১৯৩১ – জাপানি ভাষা থেকে ফাদেইয়েভ্-এর উপন্যাস ‘উনিশ জন’
১৯৩২ – বিশজন সোভিয়েত লেখকের ছোটগল্প
১৯৩৫ – জার্মান ভাষা থেকে লিয়েভ্ পান্তেলিওভ্-এর কিশোরকাহিনি ‘হাতঘড়ি’, জাপানি ও জার্মান ভাষা থেকে গোগল-এর ‘মৃত আত্মারা’ উপন্যাসের ১ম খণ্ড, জাপানি ভাষা থেকে গোর্কি-র ‘রুশদেশের রূপকথা’, চ্যেখভ্-এর আটটি গল্প।

এই সূচি থেকে আমরা জানলাম, ১৯২৯ ও ১৯৩০ সালে জাপানি ভাষা থেকে যথাক্রমে লুনাচার্‌স্কি-র শিল্প-সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধ ও প্লেখানভ্-এর ‘শিল্পতত্ত্ব’ অনুবাদ করেছিলেন লু স্যুন। এ প্রশ্ন নিশ্চয়ই অপ্রাসঙ্গিক হবে না এখানে – বাংলায় আনাতোলি লুনাচার্‌স্কি-র (১৮৭৩—১৯৩৩) ক’টা লেখার অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে? প্রোগ্রেস পাবলিশার্স প্রকাশিত ইংরেজিতে অনূদিত নির্বাচিত সংকলন ‘অন আর্ট অ্যান্ড লিটরেচার’ (অন্তত তিনটি সংস্করণ)-এর কথা নিশ্চয়ই অনেকেরই মনে পড়বে। এর দ্বিতীয় পরিমার্জিত সংস্করণে (১৯৭৩) ছিল মাত্র ষোলোটি লেখা। যদিও ধ্রুপদী ও সমকালীন সাহিত্য, চিত্রকলা, ভাস্কর্য ও সংগীত নিয়ে তাঁর প্রবন্ধের সংখ্যা শ দেড়েক। রাশিয়ার ও পশ্চিম ইয়োরোপের শিল্প-সাহিত্যের ইতিহাস, নন্দনতত্ত্ব, রাজনীতি এবং গুরুত্বপূর্ণ লেখক-শিল্পীদের নিয়ে তাঁর বক্তৃতামালা ও প্রবন্ধ সোভিয়েত দেশে বিরতিহীনভাবে প্রকাশিত হয়েছিল বিশ শতকের বিশ ও তিরিশের দশকে। তাঁর মৃত্যুর পর স্তালিন যুগে (ও সম্ভবত স্তালিনোত্তর সময়েও দীর্ঘ সময় জুড়ে) আর পুনর্মুদ্রিত হয়নি এসব লেখা।

গেওর্গি প্লেখানভ্-এর (১৮৫৭–১৯১৮) সম্ভবত একটিমাত্র শিল্প-বিষয়ক বইয়ের অনুবাদ উভয়বঙ্গেই হয়েছে – ‘আর্ট অ্যান্ড সোশ্যাল লাইফ’ (১৯১২); এটি তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনা নয়। প্রোগ্রেস প্রকাশিত তাঁর পাঁচ খণ্ডের ‘সিলেক্টেড ফিলসফিকাল ওয়ার্কস’-এর পঞ্চম খণ্ডটি (পৃষ্ঠা সংখ্যা সাতশো-র বেশি, ইংরেজি সংস্করণ : ১৯৮১) প্লেখানভের নন্দনভাবনার সংকলন। জানতে পারল ভালো লাগত লু স্যুন জাপানি অনুবাদ অবলম্বনে লুনাচার্স্কি ও প্লেখানভ্-এর যে-দুটি বই (বা প্রবন্ধ সংকলন) চীনা ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন তাতে কোন কোন লেখা ছিল।

১৯৩৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গোগল-এর ‘মৃত আত্মারা’ উপন্যাসের ২য় খণ্ডের অনুবাদ শুরু করেছিলেন লু স্যুন। জানি না সে-অনুবাদ তিনি শেষ করতে পেরেছিলেন কি না। (গোগল যে বরাবরই তাঁর প্রিয় লেখক ছিলেন তার সাক্ষ্য বহন করছে লু স্যুনের প্রথম গল্পের শিরোনাম – ‘এক পাগলের ডায়েরি’।) প্রসঙ্গত জানতে ইচ্ছে করছে, গোগলের ‘মৃত আত্মারা’ বাংলায় অনূদিত হয়েছে কি?

লু স্যুনের গল্প-কবিতার কয়েকটি সংকলন বাংলা অনুবাদে পাওয়া যায়। এ মুহূর্তে দুটি বই আমার সামনে আছে : ‘লু স্যুনের নির্বাচিত গল্পসংকলন’ (মাহফুজ উল্লাহ অনূদিত, বিদেশী ভাষা প্রকাশনালয়, বেইজিং, ১৯৮০, প্রথম পুনর্মুদ্রণ ১৯৮১), ‘বুনো ঘাস’ (অমল পাল অনূদিত, সপ্তর্ষি প্রকাশন, কলকাতা, ২০০৭)। সেন নালান-এর ‘লু স্যুন : জীবনী ও সাহিত্য’ (বাংলা অনুবাদ : ১৯৮৬, অনুবাদকের নাম অনুল্লিখিত) বইটি বেশ তথ্যপূর্ণ, লু স্যুনকে অনুধাবনে যথেষ্ট সহায়ক। এ বইটিরও প্রকাশক বিদেশী ভাষা প্রকাশনালয়। কয়েক বছর আগে নীলক্ষেতের ফুটপাতে পেয়ে গিয়েছিলাম একটি ইংরেজি বই – ‘বিশ্বসাহিত্যে লু স্যুনের প্রভাব’। যতদূর মনে পড়ে চীনের বাইরের কোনো প্রকাশন থেকে ছাপা। দোকানি বেশি দাম চাওয়ায় কেনা হয়নি সেই বই!

গল্প বাদে লু স্যুনের অন্যান্য গদ্যরচনার (প্রবন্ধ, স্মৃতিচারণ ইত্যাদির) অনুবাদ বাংলায় বড়ো একটা চোখে পড়ে না। বলাই বাহুল্য, সেই অভাব মোচনের প্রাথমিক ক্ষুদ্র প্রয়াস হিসেবে নয়, নেহাতই ভালো লাগার টানে আজ লু স্যুনের মৃত্যুদিনে নিবেদন করছি তাঁর ‘এলেবেলে ভাবনা’ (২৪ সেপ্টেম্বর ১৯২৭) নামের লেখার (একগুচ্ছ প্রবচন) চটজলদি অনুবাদ।

হুল ফোটানোর পর মৌমাছি মারা যায়; আর হুল ফোটানোর পর ছিদ্রান্বেষী ব্যক্তির আয়ু বাড়ে।

এই দুইয়ের মধ্যে এটাই পার্থক্য।

* * *

জন স্টুয়ার্ট মিল ঘোষণা করেছিলেন স্বৈরশাসন মানুষজনকে নৈরাশ্যবাদী করে তোলে।

তাঁর জানা ছিল না যে প্রজাতন্ত্র তাদের নীরব করে দেয়।

* * *

যুদ্ধের সময়ে, সবচাইতে ভালো পেশা হলো সেনাবাহিনীর ডাক্তারের। বিপ্লবের সময়ে, সবচাইতে ভালো কাজ হয় সেনাদলের পশ্চাদ্ভাগে। হত্যাকাণ্ডের সময়ে, সবচেয়ে ভালো জল্লাদ হওয়া। এই কাজগুলো বীরোচিত আর নিরাপদ।

* * *

বিখ্যাত কোনো পণ্ডিতব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার সময়ে মাঝে-মাঝে তাঁর কথা বুঝতে না পারার ভান কোরো। তোমাকে মাথামোটা মনে হলে তিনি তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবেন; আর জ্ঞানী মনে হলে তোমাকে অপছন্দ করবেন। তাই সবচেয়ে ভালো হলো মাঝে-মাঝে তাঁর কথা বুঝতে না পারা।

* * *

বেশির ভাগ মানুষ জানে, সেনাপতির তরবারি সৈন্যদের হুকুম তামিল করানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। তারা উপলব্ধি করে না যে একইভাবে তা ব্যবহৃত হয় বুদ্ধিজীবীদের হুকুম তামিল করানোর কাজেও।

* * *

বক্তৃতা পর বক্তৃতা, তারপর আরো আরো বক্তৃতা।

কিন্তু মুশকিলের কথা এই যে, এত সব বক্তৃতার কোনোটা থেকেই স্পষ্ট হয় না কেন বক্তারা এত সোচ্চার, আর এও স্পষ্ট হয় না এসব বক্তব্যে তাঁরা নিজেরাই আস্থা রাখেন কি না।

* * *

বিচক্ষণ, পরাক্রান্ত মানুষজন অতীতকে মৃত আর ফেলে-আসা সময় হিসেবেই বিবেচনা করে। ক্ষমতাসীনরা চায় এখনকার অবস্থানেই থেকে যেতে। যারা এখনো ক্ষমতার স্বাদ পায়নি তারা চায় সবকিছুকে ঢেলে সাজাতে।

এটাই সাধারণ নিয়ম।

* * *

পেছনে ফিরে যাওয়া বলতে লোকে বোঝায় কয়েক বছর আগে ফিরে যাওয়া – যে-সময়টার কথা তাদের স্মরণে আছে; ইউ কিংবা শিয়া, শাং কিংবা চৌ রাজবংশের সময়কালে ফিরে যাবার কথা তারা বলে না।

* * *

প্রত্যেক নারীই জননী ও কন্যার সহজাত প্রবৃত্তি নিয়েই জন্মায়। জায়া-সুলভ সহজাত প্রবৃত্তি বলতে কিছু নেই।

পরিস্থিতির চাপেই জায়া-সুলভ সহজাত প্রবৃত্তির উন্মেষ ঘটে, আর তা জননী ও কন্যার সহজাত প্রবৃত্তিরই যোগফল।

* * *

সাবধান, প্রতারিত হবেন না।

যারা নিজেদের চোর বলে পরিচয় দেয় তাদের ব্যাপারে সতর্ক না থাকলেও চলে, কারণ বাস্তবে তারা লোক খারাপ না; কিন্তু যারা নিজেদের সাচ্চা ভদ্দরলোক বলে দাবি করে তাদের ব্যাপারেই বরং সতর্ক হওয়া দরকার, কারণ চোর তো আসলে তারাই।

* * *

নীচতলার একটা লোক মৃত্যুপথযাত্রী, তার পাশের বাড়িতেই গ্রামোফোন বাজছে; মুখোমুখি বাড়িটার লোকজন বাচ্চাদের সঙ্গে হৈচৈ জুড়ে দিয়েছে। ওপরতলায় দুজন গলা ফাটিয়ে হাসছে, আর জুয়ার আসর থেকেও শোরগোল শোনা যাচ্ছে। নদীর বুকে নৌকোর ভিতরে এক মহিলা কাঁদছে তার মরা মায়ের জন্য।

মানুষ তার আনন্দ-বেদনা অন্যের সঙ্গে বিনিময় করতে জানে না – আমার কেবলই মনে হয় তারা বড্ড বেশি কোলাহলপ্রবণ।

* * *

শতচ্ছিন্ন পোশাকে কাউকে হেঁটে যেতে দেখলেই ছোট পোষা কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করে ওঠে, এমন নয় যে তার মনিব তাকে এরকম করতে বলেছে।

পোষা কুকুর প্রায়শই মনিবের চেয়েও কড়া স্বভাবের হয়।

* * *

মলিন জামাকাপড় পরা একসময়ে হয়তো নিষিদ্ধ ঘোষিত হবে। তখন মলিন পোশাক পরলে তোমাকে বলা হবে কমিউনিস্ট।

* * *

মানুষ যখন নিঃসঙ্গ বোধ করে তখন সৃষ্টি করতে পারে; নিঃসঙ্গতা ঘুচে গেলে সে আর সৃজনক্ষম থাকে না, কারণ তখন তার প্রেমানুভূতি থাকে না।

সকল সৃষ্টির মূলেই রয়েছে ভালোবাসা।

* * *

যে-লোকটা আত্মহত্যা করতে চায় সে হয়তো সমুদ্রের বিপুল বিস্তারকে ভয় পায়, গরমের দিনে যে-দ্রুততায় লাশে পচন ধরে তাকে সে ভয় পায়।

কিন্তু শরতের রাতে একটা টলটলে জলাশয় দেখলে সে আত্মহত্যা করে বসবে।

* * *

মেয়েদের হাফহাতা জামা দেখলেই তাদের মনে ঝিলিক দেয় অনাবৃত বাহু, উদোম শরীর, যৌনাঙ্গ, সঙ্গম, বাছবিচারহীন সম্পর্ক আর জারজ সন্তানের চিন্তা।

এই একটা ব্যাপারে চীনাদের কল্পনাশক্তি যারপরনাই ক্ষিপ্র।

[পোস্ট পুনর্লিখন : ২০-২১ অক্টোবর ২০০৯]

রেজাউল করিম সুমন

একজন সামান্য পাঠক।

১৭ comments

  1. ইমতিয়ার - ২০ অক্টোবর ২০০৯ (৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ)

    চীনের জন্যে দুঃখজনক ব্যাপার, কোটি কোটি মানুষের এই দেশটিতে লু স্যুনের ধারে কাছে যাওয়ার মতো কোনও সাহিত্যিক এত বছর পরেও আর এলো না!
    স্কুলের উঁচু ক্লাসে ওঠার পর উপহার পেয়েছিলাম লু স্যুনের শ্রেষ্ঠ গল্প সমগ্র আর চীনের শ্রেষ্ঠ গল্প নামের দু’টি বই। ‘চীনের শ্রেষ্ঠ গল্প’ বইটির শুরুতেই ছিল আবার এমন এক গল্প, যেটি তাঁর শ্রেষ্ঠ গল্প সমগ্র-তে ছিল না, অথচ আমার খুবই প্রিয় ছিল। এখন আর নাম মনে নেই, শুধু মনে আছে, উত্তম পুরুষে এক বিত্তবান এক নিম্নবিত্তের উদ্দেশে কথা বলছে এবং ক্রমাগত তাকে নিঃস্ব করে চলেছে। একসময় দেখা গেল পাতলুন ছাড়া নিম্নবিত্তটির কোনও কিছুই পরা নেই এবং বিত্তবান খুব বিনয়ী গলায় সেটিও তাকে খুলে দিয়ে দিতে বলল।
    বইটি হারিয়ে গেছে। এখনও আমি বইটিকে খুঁজে ফিরি ভুলে যাওয়া গন্ধ মনে পড়ার মতো উদ্বেল হয়ে।
    আর লু স্যুনের শ্রেষ্ঠ গল্পের ভূমিকা থেকেই জেনেছিলাম, তার জীবনের লক্ষ্য ছিল আসলে চিকিৎসক হওয়া। কিন্তু তিনি উপলব্ধি করলেন, এক পিছিয়ে পড়া দারিদ্রে ভরা দেশে তারও চেয়ে বড় বেশি প্রয়োজন আসলে একজন সত্যিকারের সাহিত্যিকের…
    এখনও রাতটির কথা মনে পড়ে। রাত বাড়ছে, টিনের চালে শিশিরের শব্দ,স্কুলপড়ুয়া এক ছেলে রুদ্ধশ্বাসে পড়ছে একটি সফল পেশার স্বপ্ন হত্যা করার এক অবিশ্বাস্য ইতিহাস….
    হে বালক,
    ‘আমাদের যে দিন গেছে, একেবারেই কি গেছে? কিছুই কি নেই বাকি?’

    • রেজাউল করিম সুমন - ২৯ অক্টোবর ২০০৯ (১২:৩১ অপরাহ্ণ)

      ধন্যবাদ ইমতিয়ার ভাই।

      চীনের জন্যে দুঃখজনক ব্যাপার, কোটি কোটি মানুষের এই দেশটিতে লু স্যুনের ধারে কাছে যাওয়ার মতো কোনও সাহিত্যিক এত বছর পরেও আর এলো না!

      ২০০০ সালে সোল মাউন্টেন-এর লেখক কাও শিংজিয়ান সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। কয়েক মাসের মধ্যেই ওই ঢাউস উপন্যাসের অনুবাদ নামিয়ে দিয়েছিলেন প্রমিত হোসেন। উপন্যাসটির ইংরেজি বা বাংলা কোনো অনুবাদই পড়িনি; ফলে জানা হয়নি ভদ্রলোক কেমন লেখেন। যে-লেখক সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান, বাংলায় তাঁর দু-চারটা বইয়ের ভালো-মন্দ অনুবাদ হয় বটে, কিন্তু সামগ্রিকভাবে সে-দেশের/ভাষার সাহিত্য নিয়ে আগ্রহ তৈরি করে দেয়ার দায়িত্ব আমাদের অনুবাদক বা সমালোচকদের নিতে দেখি না।

      চীনের সাহিত্য অল্পস্বল্প যা পড়েছি সবই বেশ আগের – বেইজিং ও কলকাতার অনুবাদ। ‘চাইনিজ লিটলেচার’ পত্রিকায় ছাপা গল্প-উপন্যাসগুলোকে চীনের প্রতিনিধিত্বশীল লেখা বলে মনে করা যায় কি না বলা মুশকিল। চীনা গল্পের একটি ইংরেজি সংকলন – সম্ভবত ৪৯টি গল্প ছিল সে-বইতে – কিনেছিলাম। প্রথম গল্পটা ছিল অবশ্যই লু স্যুনের – ‘আ’ কিউ-র সত্য কাহিনি’। কয়েকটা গল্প ভালোও লেগেছিল, তবে সব গল্প পড়া হয়ে ওঠেনি।

      সাম্প্রতিক চীনা সাহিত্যে দু-চার জন বড়ো লেখকও কি নেই? তাঁদের লেখার সঙ্গে পরিচিত হতে চাই।


      লু সুনের গল্প সমগ্র (জুলাই ১৯৮৫) নামে একটা বই পেলাম, নিজামউদ্দিনের সংগ্রহ থেকে। অনুবাদ ও সম্পাদনা করেছেন সন্দীপ সেনগুপ্ত, সংকলনটি ছাপাও হয়েছে তাঁর নিজের উদ্যোগে, পরিবেশক ছিল ‘কথা ও কাহিনী’। হে যুদ্ধ, স্বাগত (১৯২৩), সংশয় (১৯২৬) এবং পুরোনো গল্প নতুন করে বলা (১৯৩৫) – তিনটি বইয়ের সমস্ত গল্পই এ সংকলনে আছে। আপনার স্মৃতিতে-রয়ে-যাওয়া কৈশোরে-পড়া সেই গল্পটিও নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে এখানে।

      • রেজাউল করিম সুমন - ৭ নভেম্বর ২০০৯ (৭:৪৮ অপরাহ্ণ)

        চীনা গল্পের একটি ইংরেজি সংকলন – সম্ভবত ৪৯টি গল্প ছিল সে-বইতে – কিনেছিলাম। প্রথম গল্পটা ছিল অবশ্যই লু স্যুনের – ‘আ’ কিউ-র সত্য কাহিনি’। কয়েকটা গল্প ভালোও লেগেছিল, তবে সব গল্প পড়া হয়ে ওঠেনি।

        বইটা খুঁজে পেয়েছি। স্মৃতিবিভ্রাটজনিত একটা বড়ো ভুল এই সুযোগে শুধরে নিচ্ছি।

        Masterpieces of Modern Chinese Fiction 1919-1949 (By Lu Xun and Others, Foreign Languages Press, Beijing, 1983) নামের সংকলনটিতে গল্পের সংখ্যা চব্বিশ। ব্লার্বে বলা আছে : ১৯১৯-১৯৪৯ – চীনের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই কালপর্বের সবচাইতে প্রতিভাবান চব্বিশ জন লেখকের চব্বিশটি সেরা গল্প সংকলিত হয়েছে এই বইয়ে। পাঠকদের সুবিধার্থে প্রত্যেক গল্পের শেষে সংযোজিত হয়েছে লেখক-পরিচিতি। চীনা সাহিত্য-ইতিহাসের প্রতিনিধিস্থানীয় লেখকদের প্রতিনিধিত্বশীল রচনাই নির্বাচন করেছেন সম্পাদকরা; যদিও সম্পাদনা কারা করেছেন তার উল্লেখ ব্লার্বে বা ভিতরের আখ্যাপত্রে নেই, উল্লেখ করা হয়নি প্রচ্ছদশিল্পী ও অলংকরণশিল্পীর নামও। সম্পাদনা ও সচিত্রণের দায়িত্ব-পালনকারীরা সম্ভবত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রকাশালয়টিরই চাকুরে ছিলেন। লু স্যুন বাদে সংকলনভুক্ত অন্য গল্পকাররা হলেন যথাক্রমে – Guo Moruo, Ye Shengtao, Bing Xin, Wang Tongzhao, Xu Dishan, Yu Dafu, Mao Dun, Rou Shi, Zhang Tianyi, Ding Ling, Ai Wu, Ye Zi, Ba Jin, Lao She, Shen Congwen, Xiao Hong, Liu Baiyu, Liu Qing, Cao Ming, Zhou Libo, Zhao Shuli, Sun Li, Kang Zhuo.

  2. রশীদ আমিন - ২০ অক্টোবর ২০০৯ (৬:০৭ পূর্বাহ্ণ)

    ধন্যবাদ সুমন, বৃত্তের বাইরের একটি লেখা উপহার দেয়ার জন্য । গতকালই টিভিতে একটা চীনা ছবি দেখছিলাম যার একটি চরিত্রে লু সুনকে দেখা গেল । একজন তরুণ বিপ্লবী লু সুন এর সাথে দেখা করতে এসেছে ,এবং তার সাথে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলছে, নাওয়া খাওয়া ভুলে গেছে, এবং আয়া এসে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে খাবার টেবিলে নিয়ে গেল । আসলে বিপ্লবী তার বান্ধবীর সাথে লু সুনের সাথে দেখা হওয়ার অভিজ্ঞতাটি স্মৃতিচারন করছিল। বোধ হয় তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সিনেমাটি দেখানো হয়েছিল । গতকাল যে তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী ছিল তাও জানা ছিলনা । সুমনের বদৌলতে জানা গেল। লু সুনের আরেকটি বড় অবদান হচ্ছে ইউরোপের জীবনঘনিষ্ঠ ছাপচিত্রীদের চীনদেশে পরিচয় করিয়ে দেয়া, বিশেষ করে সাদাকালো কাঠখোদাইয়ে যে অসাধারণ কাজ হচ্ছিল তার বার্তা চীনদেশে পৌঁছে দেয়া। জার্মানীর প্রখ্যাত নারী ছাপচিত্রী ক্যাথে কোলভিট্‌জের ছবিগুলো চীনে জনপ্রিয় হওয়ার পিছনে লু সুনের অবদান অনেক।

    • রেজাউল করিম সুমন - ২৯ অক্টোবর ২০০৯ (১২:৪০ অপরাহ্ণ)

      ধন্যবাদ আমিন ভাই, ছাপচিত্রের প্রসঙ্গ সংযোজনের জন্য।

      প্রথমে তাড়াহুড়োর কারণে কিছুই গুছিয়ে লিখতে পারিনি; এ বিষয়ে একটা অনুচ্ছেদ পরে জুড়ে দেব ভেবে রেখেছিলাম। পরে পুনর্লিখনের সময়ে মনে হলো ছাপচিত্র-প্রসঙ্গ মূল লেখায় যোগ না করলেও চলে, আপনার কথার সূত্র ধরে এ নিয়ে লেখার নীচেই তো আলোচনা চলতে পারে। চীনা ছাপচিত্র বিষয়ে আপনার কাছ থেকে অনেক কিছুই জানার আছে।

      বেইজিং-এর লু স্যুন জাদুঘর সম্পর্কেও আপনার কাছ থেকে জানতে পারব আশা করি। লেখকের মৃত্যুদিনে প্রচারিত চলচ্চিত্রটির কথা জেনে ভালো লাগল।

  3. ফারুক ওয়াসিফ - ২০ অক্টোবর ২০০৯ (৮:৪৫ পূর্বাহ্ণ)

    অভিনন্দন সুমন।

    বড় লক্ষ্য কী বড় মনীষাকে আবাহন করে আনে? সেইসব লক্ষ্য হারিয়ে ফেলেছি বলে কি আমরা ল্যু সুন, টলস্তয়-গোর্কি, রবীন্দ্রনাথ আর হেমিংওয়েদের মতো মানুষের বিকাশ কঠিন করে ফেলেছি?

    • রেজাউল করিম সুমন - ২৯ অক্টোবর ২০০৯ (১২:৩৫ অপরাহ্ণ)

      ধন্যবাদ, ফারুক। ‘বড় লক্ষ্য’ বলতে কি বোঝাতে চাইছেন সমাজবদলকে?

  4. নুরুজ্জামান মানিক - ২০ অক্টোবর ২০০৯ (৮:৫৪ পূর্বাহ্ণ)

    লু স্যুন… আমারও প্রিয় মানুষ । ধন্যবাদ সুমন ভাই, দুর্দান্ত একটি রচনা উপহার দেয়ার জন্য ।

  5. কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ২০ অক্টোবর ২০০৯ (১০:১০ অপরাহ্ণ)

    সুমনকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। লু স্যুন সম্পর্কে অনেক আবেগ-উচ্ছ্বাস অনেক আগে থেকেই আমার ছিল; এখনো আছে। তবে তাঁকে শুধু গল্পকার, প্রাবন্ধিক, কবি হিসাবেই জানতাম। তিনি যে অনুবাদকে এত সিরিয়াসলি নিয়েছিলেন, তা তো জানতাম না। সুমন এত সিরিয়াসলি কাজটা করেছে যে, তা আমার ভাষাতীত এক অভিজ্ঞতা মনে হচ্ছে। চিনে শুধু নয়, বিপ্লবের প্রতি তাঁর মতো নিবেদিতপ্রাণ পৃথিবীর আর কোথাো খুব কমই পাোয়া যাবে।
    লেখাটি আমায় দীর্ঘ-দীর্ঘ কাল ভাবাবে।

    • রেজাউল করিম সুমন - ২৯ অক্টোবর ২০০৯ (১২:৩৮ অপরাহ্ণ)

      জাহাঙ্গীর ভাই, ধন্যবাদ আপনাকে।

      লু স্যুনের অনুবাদ প্রয়াস বিষয়ে আরো কিছু তথ্য আছে ওয়াং শিছিং-এর লু স্যুন-জীবনীতে (ইংরেজি সংস্করণ : বিদেশী ভাষা প্রকাশনালয়, ১৯৮৪) এবং সেই সূত্রে সেন নালান-এর লেখায়ও।

  6. রেজাউল করিম সুমন - ২১ অক্টোবর ২০০৯ (৮:৪৭ অপরাহ্ণ)

    ধন্যবাদ সবাইকে।

    এই লেখার আদিপাঠ ছিল বিশ্রী রকমের অগোছালো। নতুন করে লিখেছি। যাঁরা আগেই পড়েছেন তাঁদেরকেও আবার পড়ার অনুরোধ জানাই। এখানে দু-একটা নতুন প্রসঙ্গেরও অবতারণা করা হয়েছে।

  7. মাসুদ করিম - ২৩ অক্টোবর ২০০৯ (১২:১৭ পূর্বাহ্ণ)

    মেয়েদের হাফহাতা জামা দেখলেই তাদের মনে ঝিলিক দেয় অনাবৃত বাহু, উদোম শরীর, যৌনাঙ্গ, সঙ্গম, বাছবিচারহীন সম্পর্ক আর জারজ সন্তানের চিন্তা।

    এই একটা ব্যাপারে চীনাদের কল্পনাশক্তি যারপরনাই ক্ষিপ্র।

    হ্যাঁ, এখনো একই আছে… তবে একটা অসাধারন উন্নতি হয়েছে – জারজ সন্তানের চিন্তা এখন আর নেই!

    • রেজাউল করিম সুমন - ২৯ অক্টোবর ২০০৯ (১২:৩৯ অপরাহ্ণ)

      সরস মন্তব্য! male gaze-এর ‘চর্চা’য় বোধহয় পিছিয়ে নেই আমরাও – মানে বঙ্গপুঙ্গবরা।

  8. কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ২৬ অক্টোবর ২০০৯ (১২:০৬ পূর্বাহ্ণ)

    আবারো পড়লাম। আবারো অনেক বেশি শুভেচ্ছা।

  9. রেজাউল করিম সুমন - ১২ ডিসেম্বর ২০১০ (৮:২৩ অপরাহ্ণ)

    সচলায়তন-এ লু স্যুনের একটি কবিতার অনুবাদ করেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.