প্রতিনিয়ত চারপাশে এমন কিছু অবিচারের ঘটনা ঘটছে যেসব বিষয়ে কুলীন লেখকদের লিখতে মানা। কুলীন পত্রপত্রিকা বা ফোরামেও সেসব ছাপতে মানা। নিতান্তই যদি কিছু লিখতে হয় তবে তা তত্ত্বের আবরণে লেখাই নিরাপদ। পাছে লোকে ‘নিম্ন মাঝারি’ বলে গাল দিয়ে বসে! পাছে সেসব লেখাকে রগরগে অপরাধ-সাংবাদিকতার লেবেল এঁটে দেয় কেউ! বুদ্ধিবৃত্তিক তাত্ত্বিকতার আড়াল খুঁজতে চাইলে তারও সুযোগের কোনো কমতি নেই [...]

প্রতিনিয়ত চারপাশে এমন কিছু অবিচারের ঘটনা ঘটছে যেসব বিষয়ে কুলীন লেখকদের লিখতে মানা। কুলীন পত্রপত্রিকা বা ফোরামেও সেসব ছাপতে মানা। নিতান্তই যদি কিছু লিখতে হয় তবে তা তত্ত্বের আবরণে লেখাই নিরাপদ। পাছে লোকে ‘নিম্ন মাঝারি’ বলে গাল দিয়ে বসে! পাছে সেসব লেখাকে রগরগে অপরাধ-সাংবাদিকতার লেবেল এঁটে দেয় কেউ!

বুদ্ধিবৃত্তিক তাত্ত্বিকতার আড়াল খুঁজতে চাইলে তারও সুযোগের কোনো কমতি নেই। একটা বিষয় নিয়ে যদি পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা জটিলীকৃত কপচানিই (problematize) না করা গেল, তাহলে আর কিসের ইন্টেলেকচুয়াল! ধরা যাক, আড়াল নিতে চাইলে, নীচের এই ঘটনাটিও বহু তাত্ত্বিকতার আড়াল নিয়ে লেখা যায় — সুধী সমাজের রুচিকে এতটুকু আঘাত না করে। যেমন: নারীর প্রতি সহিংসতা, চাইল্ড এবিউজ, বৈষম্য, সাম্প্রদায়িকতা, সংখ্যালঘুত্ব, আইনের আশ্রয় লাভ, সুবিচার, পুনর্বাসন ইত্যাদি ইত্যাদি।

এটি কোনো “অনন্যসাধারণ” ঘটনা নয়। খুবই সাধারণ, নিত্য নৈমিত্তিক, বহুবার বহুভাবে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা। এই সহিংসতার ঘটনাটি অসাধারণ হয়ে উঠতে পারতো, যদি পাত্রীটি (মিলি রানী, ১৩) অন্ধ বাবা খোকা মালাকারের কন্যা না হয়ে কোনো মিডিয়া মোগলের কন্যা হতো; যদি পাত্রীটি সাংস্কৃতিক (এবং ক্ষমতাশালী) এলিটদের কারো কন্যা হতো। তেমনটি হবার নয়।

তার চেয়ে বরং নীচের খবরটি আজ সকালে যেভাবে পড়েছি হুবহু সেভাবেই তুলে ধরি।

দৈনিক জনকণ্ঠ (৮ ডিসেম্বর ২০০৮)

রায়হান রশিদ

জন্ম চট্টগ্রাম শহরে। পড়াশোনা চট্টগ্রাম, নটিংহ্যাম, এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমান আবাস যুক্তরাজ্য। ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধসমূহের বিচার প্রক্রিয়াকে সহায়তা প্রদান, এবং ১৯৭১ এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের দাবীতে সক্রিয় নেটওয়ার্ক 'ইনটারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম' (ICSF) এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি।

২ comments

  1. ইমতিয়ার - ৯ ডিসেম্বর ২০০৮ (১০:৪৫ অপরাহ্ণ)

    প্রথমত সে নারী, দ্বিতীয়ত সে নামহীনা গোত্রহীনা, তৃতীয়ত সে সংখ্যালঘু…
    না, আমাদের সত্যিই বলবার মতো কিছু নেই। আর আমাদের মনে যদি একটু কষ্ট জেগেও থাকে, তা তাড়ানোর মতো অনেক কিছুই আছে, আছে রিলাক্সেশান মিউজিক, আছে রাত জেগে টানবার মতো পানীয়…
    তবু সান্ত্বনা, অনেক মগজ ধোলাইয়ের পরও আমাদের কেউ কেউ তত কুলীন হতে পারেন না…
    পূর্ণিমাধর্ষণ ঘটনার পর একজন ওয়াহিদুল হক তাদের বাড়ির উঠোনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, তার কাছে আমাদের অক্ষমতা ও দীনতার জন্যে আমাদের হয়ে ক্ষমা চেয়েছিলেন…
    এখন আর কেউ নেই। যারা আছেন, তারা পথের ধুলা মাখতে পারেন না। বড়জোর গোলটেবিল আর সংলাপে বসতে পারেন।
    হতভাগা সেই জাতি, যার বীরের প্রয়োজন হয়
    তবু এই অনুভূতি, রায়হান রশীদের এই হঠাৎকথন ইতিহাসের ধুলির নিচে এই সত্য রেখে গেল, এখনও আমাদের কারও কারও চোখের নিচে একটু কোমলতা রয়েছে, সেই কোমলতা জেগে থাকতে থাকতে নিশ্চয়ই একদিন লাল হয়ে উঠবে, রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান রাখবে, ‘যেথায় থাকে সবার অধম, দীনের থেকে দীন’ সেইখানে কৌলিন্যহীন একজনের পা পড়বে।
    পড়বেই। পড়বেই।

  2. নীড় সন্ধানী - ১৪ ডিসেম্বর ২০০৮ (৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ)

    সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো এই ঘটনাগুলোর প্রতি বেশীরভাগ মানুষের নির্লিপ্ত মনোভাব। যে সমাজে যে ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকে সে সমাজ একসময় সেই ঘটনাগুলোর প্রতি নির্বিকার মনোভাব পোষণ করে। আমাদের দেশে এ ধরনের নির্যাতন হত্যা আত্মহত্যা হরদম ঘটছে। ফলে পত্রিকার পাতায়ও খুব বেশী জায়গা নিতে পারে না ঘটনাগুলো। ভেতরের পাতায়ই সীমাবদ্ধ থাকে যদি না কুলীন সমাজের হস্তক্ষেপ পড়ে। এছাড়া আরো কত কান্না, হাহাকার, বেদনার্ত সুর পত্রিকা পর্যন্তও এসে পৌছাতে পারে না।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.