‘দ্বিতীয় প্রকৃতি’র সাধক

কবিবন্ধু ফুয়াদ হাসানের ফোন পেলাম রবিবার (৫ জুলাই ২০০৯) দুপুরে, যদিও আগের দিনই খবরটা পেয়েছিলাম সুমন ভাইয়ের (রেজাউল করিম সুমন) কাছে। পত্রিকায় জানলাম, আলাউদ্দিন আল আজাদ (১৯৩২-২০০৯) মারা গেলেন শুক্রবার রাতে। কিন্তু দেরিতে হলেও ফুয়াদের ফোনালাপে প্রচ্ছন্ন ছিল এক স্মৃতিপ্রাসঙ্গিকতা। [...]

Alauddin Al Azad
কবিবন্ধু ফুয়াদ হাসানের ফোন পেলাম রবিবার (৫ জুলাই ২০০৯) দুপুরে, যদিও আগের দিনই খবরটা পেয়েছিলাম সুমন ভাইয়ের (রেজাউল করিম সুমন) কাছে। পত্রিকায় জানলাম, আলাউদ্দিন আল আজাদ (১৯৩২–২০০৯) মারা গেলেন শুক্রবার রাতে। কিন্তু দেরিতে হলেও ফুয়াদের ফোনালাপে প্রচ্ছন্ন ছিল এক স্মৃতিপ্রাসঙ্গিকতা। বহুদিন আগে, যখন আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ছাত্র, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে একসঙ্গে পড়েছিলাম ভোরের নদীর মোহনায় জাগরণ। এ-বইয়ের ‘দুই আফসোস’ কবিতাটি আমাদের দুজনকেই আক্রান্ত করেছিল শরব্যঞ্জনায়। পরে অনেকবার চিরকুট দিয়েও বইটির খোঁজ পাওয়া যায়নি।

আজাদের লেখার সঙ্গে আমি আকৈশোর পরিচিত, বলা যায়, তিনি ছিলেন আমার প্রথম সাহিত্যনায়ক। নবম শ্রেণিতে, ১৯৯২-এ, পাঠ্যবাংলার কবিতাসঙ্কলনে ‘আমার মা’কে যখন’ নামের একটি সম্মোহক দীর্ঘকবিতা ছিল তাঁর। দুর্ভাগ্য বা সৌভাগ্য এই : কবিতাটি পরীক্ষার পাঠ্যসূচির বাইরেই পড়ে ছিল সারাবছর। আমার এতই প্রিয় ছিল যে পাঠোচ্ছ্বাসে মুখস্থ হতে দেরি হয়নি। প্রথম স্তবক মনে আছে এখনও :

আমার মা’কে যখন মনে পড়ে চলতি বাসের ভিড়ে জানালায়
তাকাই করুণ আমি, রডধরা সহযাত্রীর হাতের যত ঘাম
লাগে গালে ঝাঁকুনির তালে তালে এবং যদিও খুব নিরুপায়
গরম নিঃশ্বাসে চাপে দেখি দূরে হলুদ-সবুজ বন, কালোজাম
থোকা থোকা ধরে আছে আলগোছে ঠোকর মারে কাকেরা, উড়ে যায়
ডাল থেকে ডালে, বসে কি যে খুশি দুপুররোদেও ডাকে অবিশ্রাম।
আমি মুগ্ধ শিশু, চোখে এক হ্রদ বিস্ময়ের ঝিকিমিকি, মহাকায়
বটগাছ খেলা করে বাতাসের স্রোতে―হাতে পাখি নীলকণ্ঠ নাম

তখন ছন্দের কোনও ধারণাই ছিল না; পরে বুঝলাম, কবিতাটির গায়ে বোলানো হয়েছে অক্ষরবৃত্তের সোনারুপোর কাঠি, যা উতল গাঙের বুকেও এনে দিতে পারে নিঝুম অরণ্যের ঘুম। এ-ও দেখলাম, অষ্টাক্ষর পর্বকে মাঝেমধ্যেই ৩+২+৩ মাত্রার বিরলকর্ষিত বিলে চালিয়ে নিয়েছেন কবি অবলীলায়। অন্তর্মিলে ও অন্ত্যমিলে বহমান এক স্মৃতিকাতরতা মুগ্ধ করে রেখেছিল আমার কিশোরহৃদয় এবং এখনও ভিড়েলা বাসে কোথাও যেতে যেতে যেন ‘গালে লাগে’ ‘রডধরা সহযাত্রীর হাতের যত ঘাম’।

কিন্তু কবিতা নয়, উপন্যাসের সূত্রেই আজাদের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়, আমার এক খালাতো ভাই দুটি বই নিয়ে এসেছিলেন বাসায়। একটি পারস্য উপন্যাস, অন্যটি আজাদের শীতের শেষ রাত বসন্তের প্রথম দিন। বইদুটি ছিল মায়ের দখলে―দূর থেকে দেখতাম বিড়ালের কারুণ্য নিয়ে। আমার অভিশাপে মায়ের চোখে ঘুম নেমে আসত দুপুরে, তখন একটু-একটু পড়ার সুযোগ পেতাম। ছাপাবাঁধাই চমৎকার দুই বইয়েরই, তবে আমাকে বেশি আকৃষ্ট করেছিল আজাদের উপন্যাসটি। এক মহিলা অনুপম ভঙ্গিতে হাত তুলে বসে আছেন নীলাভ শূন্যতায়। কাইয়ুম চৌধুরীর প্রচ্ছদ। বইটির পরবর্তী সংস্করণে পরিত্যক্ত হয়েছে এই মায়াবী প্রচ্ছদ, কাগজের মানও অক্ষত থাকেনি। নবসংস্করণ যে সর্বদা উত্তরণের সিঁড়ি নয়, এটিই তার প্রমাণ।
shiter shesh rat cover
মনস্তাত্ত্বিক এই উপন্যাসে, স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি-হওয়া বিলকিস ধীরে ধীরে বোনের ছেলে কামালের প্রতি কামাসক্ত হয়ে ওঠেন―এটুকু বললে মোটাদাগে অবিচার করা হবে। অনেক ছায়ারোদ্দুরের সূক্ষ্ম আলপনা এঁকেছেন লেখক বিশ্বস্ত রঙে-রেখায়। প্রথম ছোট বাক্যটিতেই উপ্ত রয়েছে যেন সমস্ত গল্পের বীজ :

কুয়াশা জমে না; কিন্তু পশ্চিম আকাশে কুয়াশার মতো একটা ধোঁয়াটে আবরণ ফ্যাকাশে করে তোলে গোধূলির রং।

বিলকিসের মনোবেদনায় সিক্ত হতে হতে আমি খুঁজতাম অনেক পরিচিত মহিলার মুখে বিলকিসেরই প্রতিবিম্ব―তবে কি এই, এত প্রাচুর্য বা আপাতফুল্লতার পাপড়িতেও থাকে লুকিয়ে নিঃসঙ্গতার কীট?

আজাদের যে-উপন্যাসটি আমি প্রথম স্বাধীনভাবে, এমনকী বাবার হাতে কিনিয়ে নিয়ে পড়েছিলাম, সেটি কর্ণফুলী, সঙ্গে শহীদুল্লা কায়সারের সারেং বৌ। কায়সারের উপন্যাসটির সম্পূর্ণপাঠে আমার ধৈর্যচ্যুতি ঘটেছিল, কিন্তু কর্ণফুলী পড়েছিলাম একবার, দু-বার―বিচ্ছিন্নভাবে বহুবার। বিশেষত এর পরিবেশবর্ণনা এবং চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা ও চাকমা ভাষা শ্রুতিশ্রীতে ব্যবহার করার অনন্য কৌশল মুগ্ধ করেছিল আমাকে।

ইস্কুলে পড়ার সময়েই, আমাদের বাংলার শিক্ষক প্রয়াত সাহিত্যিক-গবেষক চৌধুরী আহমদ ছফার প্রণোদনায় আজাদ সম্পর্কে আরও আগ্রহী হয়ে উঠি। তাঁর ছেলে প্রাবন্ধিক শাকিল আহমদ তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা পড়ছেন, আজাদের কথাসাহিত্য নিয়ে শাকিল ভাইয়ের প্রবন্ধ ছাপা হয়েছিল দৈনিক পূর্বকোণ-এ। স্যার নিজেও আজাদের ছোটগল্প ‘হেড মিসট্রেস’-এর নাট্যরূপ দিয়ে বেতারে প্রচারের জন্য গল্পকারের অনুমতি প্রার্থনা করেছিলেন। আজাদ সানন্দে সম্মতি জানিয়ে পাঠিয়েছিলেন একটি শুভেচ্ছাপত্র। আমার এ-কথাটুকুই শুধু মনে আছে, আজাদ লিখেছিলেন : ‘সংস্কৃতি মানুষের দ্বিতীয় প্রকৃতি’। একদিন, অষ্টম শ্রেণির ভূগোলের পরীক্ষা দিচ্ছি, আমার চোখ বারবার চলে যাচ্ছে বারান্দায় পায়চারিরত স্যারের তর্জনীবন্দি বইয়ের মলাটের দিকে―আজাদেরই একটি উপন্যাস!

১৯৯৩-এ বিচিত্রা-র ইদ সংখ্যায় আবৃত্তিবিষয়ক একটি প্রবন্ধ মুদ্রিত হয়েছিল আজাদের, ‘আবৃত্তির শিল্পতত্ত্ব’ নামে। লেখাটি শুরু হচ্ছে এভাবে : ‘আবৃত্তির শিল্পতত্ত্ব, আমার ব্যক্তিত বিবেচনায়, এক অনাগত সম্ভাবনা’… শিল্পতত্ত্বই যার ‘অনাগত’, তার বায়বীয় কাঠামোকে আজাদ ধরতে চেয়েছেন কিছু ভাষ্যদীপ্র রেখাচিত্রের সাহায্যে―ব্যাপারটি অভিনব মনে হয়েছিল আমার, বক্তব্যের চেয়ে বাগ্‌বিন্যাসই ছিল বেশি আকর্ষক। বহুচর্চিত বিশেষণ ‘ব্যক্তিগত’-এর পরিবর্তে যে ‘ব্যক্তিত’ও লেখা যায়, প্রথম শিখলাম। এ-প্রবন্ধ আমাকে প্রলুব্ধ করেছিল দেশাত্মবোধক গান নিয়ে একটি অক্ষম গদ্যচেষ্টায়।

ওই বছরেই (১৯৯৩) আজাদকে প্রথম সশরীরে দেখার সুযোগ ঘটেছিল। এসএসসি-উত্তীর্ণ হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে গিয়েছিলাম ভর্তিসংক্রান্ত কাজে। অক্টোবরের বৃষ্টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে ঢুকতেই দেখলাম ‘র‌্যাগ ডে’ নামের মহোৎসব চলছে। তরুণ-তরুণীরা বর্ণাঢ্য বেশে মেতে আছে গানে, বাদ্যে, আড্ডায়, যেন পুষ্পকরথে হঠাৎ উড়ে এসে পৌঁছেছি এলডোরাডোয়―কস্মিনকালেও এখানে ছাত্রসংঘর্ষ ছিল না, ঘটেনি কোনও রক্তপাত। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছিল। অর্থনীতির অধ্যাপক মইনুল ইসলামের বিশ্লেষণময় বক্তৃতার শেষে আজাদ উঠে দাঁড়ালেন। হালকা গড়নের ঋজু শরীর, মাথাভর্তি বাহারি চুল, চোখে দীঘল নীলিমা; সহাস্যে হাত নেড়ে প্রথমেই বললেন, ‘তিনি (মইনুল ইসলাম) আমার সব বক্তব্য লুণ্ঠন করে নিয়ে গেছেন!’ আজাদের বক্তৃতা ছিল সংক্ষিপ্ত কিন্তু সরস, সমাপ্তি প্রায় এরকম : ‘এত অপ্রাপ্তি-অসন্তোষের মধ্যেও তরুণদের হতাশ হওয়ার কোনও কারণ নেই, তারুণ্যের শক্তিই পারে সব বাধা জয় করতে।’ এমন অভয়বাণী বোধহয় সেই চিরকালের ‘মুগ্ধ শিশু’র পক্ষেই উচ্চারণ করা সম্ভব, যাঁর চোখে ‘এক হ্রদ বিস্ময়ের ঝিকিমিকি’…

মুয়িন পারভেজ

জন্ম চট্টগ্রামে। লিখে সময় কাটি, পড়ে জোড়া লাগিয়ে দিই আবার। ভালোবাসি মেঘবৃষ্টিজ্যোৎস্না আর ঝরনাকলম। প্রকাশিত কাব্য : ‘মর্গে ও নিসর্গে’ (ঐতিহ্য, ২০১১)।

১৩ comments

  1. সাইদুল ইসলাম - ২৫ আগস্ট ২০০৯ (৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ)

    “আমার মাকে যখন” হ্যাঁ, মুয়িন, মনে পড়ছে সব, সিলেবাসে না থাকলেও এ কবিতাটি উচ্চস্বরে পাঠ করতাম, মায়ের ক্লান্ত মুখখানা শব্দগুলোর ফাঁক দিয়ে উঁকি দিত। তখনো তোর সাথে পরিচয় হয়নি, আজাদের কবিতা সঙ্গে ছিল। তারপর “তেইশ নম্বর তৈলিচত্র”, ছোটগল্প ‘বৃষ্টি’ পড়ে মনে সে কী তোলপাড় তখন!একটা পর্যায়ে এসে সেভাবে অার টানল না। তাতে কী!। অামাদের কৈশোর তো কেটেছে তাদের হাত ধরেই!

  2. মাহতাব - ২৫ আগস্ট ২০০৯ (৭:৩৫ অপরাহ্ণ)

    ধন্যবাদ মুয়িন।উনার তেইশ নম্বর তৈল চিত্র ,কর্ণফুলী ,কিছু ছোটগল্প এবং দু চারটি কবিতা পড়েছি ।উনার লেখা আমারও ভাল লাগে।

  3. আহমাদ মাযহার - ২৭ আগস্ট ২০০৯ (৭:৫৫ পূর্বাহ্ণ)

    ভালো লাগল লেখাটা। আন্তরিক উপলব্ধির ছবি ফুটে উঠেছে। আলাউদ্দিন আল আজাদ রাজনৈতিক ক্ষমতার সংলগ্নতার কারণে প্রকৃত মূল্য পান নি। এতটা উপেক্ষা পাবার মতো লেখক তিনি মোটেও নন।

  4. মোঃ সাহাবুদ্দীন এ,এম (রিপন) হাওলাদার - ২৭ আগস্ট ২০০৯ (১০:০৬ পূর্বাহ্ণ)

    অনেক ভাল লাগল আপনার লেখাটি পড়ে। আপনার উদ্দেশ্য সফল হোক। ভাল থাকবেন।

  5. রেজাউল করিম সুমন - ২৮ আগস্ট ২০০৯ (২:০৩ অপরাহ্ণ)

    যাঁর একটা সনেট-সংকলনের জন্য একদিন হন্যে হয়ে খুঁজেছিলাম প্রকাশকের আস্তানা, সেই কবিকেই পরে একা একা হেঁটে যেতে দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডোরে, দিনের পর দিন, কিন্তু কখনোই কথা বলার ইচ্ছে হয়নি!

    বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই জেনেছিলাম আমাদের পাশেই বাংলা বিভাগে পড়ান ‘স্মৃতির মিনার’ ‘তেইশ নম্বর তৈলচিত্র’-র লেখক অধ্যাপক আলাউদ্দিন আল আজাদ। পঞ্চাশ-ষাট দশকের প্রগতিশীল এই লেখক তাঁর অবস্থান থেকে ক্রমেই সরে এসেছিলেন বোধহয়। তাঁর নতুন কোনো লেখাকে ঘিরে আলোচনা হতেও শুনিনি। আর বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনের শুরুতেই আমরা শুনেছিলাম, এরশাদের সময়ে তাঁর না কি ইচ্ছে হয়েছিল উপাচার্য হবেন! কথাটা সত্যি না রটনা, তলিয়ে দেখিনি।

    কেবল একবারই কথা হয়েছিল আলাউদ্দিন আল আজাদের সঙ্গে, তাঁর অগ্রজ বন্ধু ও আমাদের শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের পাঠানো কোনো একটা খবর পৌঁছে দিতে গিয়ে। তাঁর কোনো কোনো লেখার ব্যাপারে আমাদের মুগ্ধতার কথা তাঁকে জানানো হয়নি সেদিন। … এখন ভাবলে একটু আফসোসই হয়।

    শামসুর রাহমানের স্মৃতিকথা ‘কালের ধুলোয় লেখা’ (২০০৪) থেকে প্রাসঙ্গিক অংশ (পৃ ৯৩-৯৫) :

    আলাউদ্দিন আল আজাদ আমাদের কালের বিরল এক প্রতিভাবান সব্যসাচী সাহিত্যস্রষ্টা। তিনি গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা, প্রবন্ধ সবক্ষেত্রেই প্রতিভার নির্ভুল স্বাক্ষর রেখেছেন। মনে পড়ে, আমার যৌবনের প্রত্যুষে কলকাতা থেকে প্রকাশিত মাসিক ‘সওগাত’-এ ‘শ্রাবণসন্ধ্যায়’ নামক একটি মনোমুগ্ধকর ব্যক্তিগত প্রবন্ধ পড়েছিলাম। তখন আলাউদ্দিন আল আজাদের বয়স খুবই কম। অত অল্প বয়সে অমন চিত্তাকর্ষক গদ্য রচনা আদৌ সহজ কাজ নয়। পরবর্তীকালে তাঁর ছোটগল্প, কবিতা এবং অন্যান্য অনেক লেখা পড়ার সুযোগ হয়েছে। সন্দেহ নেই, আমরা যারা পঞ্চাশ দশকের লেখক বলে চিহ্নিত তাদের মধ্যে আলাউদ্দিন আল আজাদ শুরু থেকেই একজন নামজাদা লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তাঁর প্রথম বইয়ের নাম ‘জেগে আছি’। এই বই কয়েকটি ছোটগল্পের সংগ্রহ। ‘জেগে আছি’র প্রকাশক আমাদের প্রিয় বন্ধু হাসান হাফিজুর রহমান। ১৯৫০ সালে প্রকাশিত এই বই সম্পর্কে শান্তিরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় দৈনিক ‘সত্যযুগ’ পত্রিকায় মন্তব্য করেছিলেন, ‘জেগে আছি’ মুসলিম বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ গল্পগ্রন্থ এবং সমগ্রভাবে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা বই। একজন লেখক, যাঁর বয়স মাত্র আঠারো বছর, তাঁর সম্পর্কে এ ধরনের প্রশংসা বাক্য নিঃসন্দেহে বিরল এবং উৎসাহব্যঞ্জক।

    ১৯৫৩ সাল থেকে বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘কবিতা’ পত্রিকায় নিয়মিত আমার কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে। কিছুকাল পর ত্রৈমাসিক কবিতা পত্রিকায় আলাউদ্দিন আল আজাদের ‘জলরং’ শীর্ষক একটি কবিতা আমি পড়ি। কবিতাটি আমার বেশ ভালো লাগে। এরপর অবশ্য তাঁর কোনও কবিতা সেই পত্রিকায় দেখি নি।

    আলাউদ্দিন আল আজাদের লেখনী কখনও আলস্য পোহায় নি; জনপ্রিয়তা, প্রতিষ্ঠা, নানামুখী সাফল্য তাঁকে আত্মতুষ্টির মোহে আটকে রাখতে পারে নি। তিনি লিখে গেছেন অনবরত, এখনও লিখে চলেছেন, প্রশংসিত হচ্ছেন বিজ্ঞ সমালোচক এবং উৎসাহী পাঠক-পাঠিকা মহলে। ঈর্ষাযোগ্য তাঁর সাহিত্য রচনার ক্ষমতা। গোড়ার দিকে তাঁর জীবনযাত্রার পথ পুষ্পময় ছিল না, অভাবের কাঁটার খোঁচা তাঁকে খেতে হয়েছে বারবার। কিন্তু প্রতিভার উজ্জ্বলতা যার সত্তাকে লালন করে কোনও বাধা, কোনও অভাব কিংবা বহুরূপী প্রতিকূলতা তার অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করতে পারে না। তাই আজাদ রূপকথার নায়কের মতো অভাবের রাক্ষসটিকে সাধনার ক্ষুরধার অস্ত্রের আঘাতে বধ করে গোছানো, নিরাপদ, ঝলমলে সংসাররূপী রাজকন্যার সঙ্গে সুখী জীবনযাপন করছেন। কিন্তু আমরা জানি, কোনও প্রকৃত শিল্পীর বাইরের জীবন যত জ্বলজ্বলে এবং প্রশান্তই হোক, তার অন্তর্লোকে নানা টানাপোড়েন, অস্থিরতা অবিরত চলতেই থাকে।

    আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আলাউদ্দিন আল আজাদ কস্মিনকালেও স্থবিরতাকে মেনে নেবেন না; কারণ তিনি আমাদের একজন প্রধান লেখকই নন, একজন অত্যন্ত সচেতন, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষও। আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তিনি তোলেন না বলেই জানি। তিনি ছাত্র হিসেবেও ছিলেন তুখোড়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিএ অনার্স এবং এমএ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। পিএইচডিও করায়ত্ত করেছেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। দেশের শিক্ষা বিভাগের নানা গুরুত্বপূর্ণ পদ অলঙ্কৃত করেছেন ডক্টর আলাউদ্দিন আল আজাদ। তবে ভবিষ্যৎ তাঁকে কুর্নিশ করবে এ দেশের প্রতিভাবান লেখক হিসেবেই। কারণ, তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের প্রণেতা। আলাউদ্দিন আল আজাদের গ্রন্থপঞ্জি সুদীর্ঘ – ছোটগল্প, উপন্যাস, কবিতা, নাটক, কাব্যনাট্য, প্রবন্ধ, গবেষণা, জীবনী, শিশুসাহিত্য, সম্পাদনাগ্রন্থ – সবখানেই রয়েছে তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি।

    তাছাড়া আলাউদ্দিন আল আজাদের কয়েকটি বইয়ের অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে বিদেশী ভাষায়। তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার, একুশে পদক, ইউনেস্কো পুরস্কার, আবুল কালাম শামসুদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার, অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ স্বর্ণপদক এবং আরও কিছু পুরস্কার পেয়েছেন তাঁর বহুমাত্রিক সাহিত্যকর্মের জন্যে। কথক একাডেমি তাঁকে ‘সাহিত্যাচার্য’ উপাধিতে ভূষিত করেছে।

    অনেক আগের একটি ঘটনার কথা না বললেই নয়। ঘটনাটি আমার অজানা ছিল। সেদিন টেলিফোনে কথাপ্রসঙ্গে আজাদ আমাকে জানান।

    ১৯৫১ সালে ‘নতুন কবিতা’ নামে একটি কাব্যসঙ্কলন প্রকাশিত হয় আমাদের এবং ওয়ার্সি বুক সেন্টারের মিলিত উদ্যোগে। এই সঙ্কলনটির সম্পাদক আশরাফ সিদ্দিকী এবং আব্দুর রশীদ খান। ওয়ার্সি বুক সেন্টার কিছু আর্থিক সাহায্য করেছিল। আমরা সঙ্কলিত কবিগণও কিছু চাঁদা দিয়েছিলাম। আমার বন্ধু হাসান হাফিজুর রহমান এই সঙ্কলনে কবিতা দিতে রাজি হননি। আমার পীড়াপীড়িতে শেষ পর্যন্ত আমাকে কবিতা দিলেন। সম্ভবত ‘নতুন কবিতা’ নামকরণটিও আমার ছিল।

    ‘নতুন কবিতা’ প্রকাশিত হবার দু’বছর আগে ওয়ার্সি বুক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী এ ধরনের একটি কাব্যসঙ্কলনের প্রস্তাব পান আলাউদ্দিন আল আজাদের কাছ থেকে। ওয়ার্সি বুক সেন্টার আজাদকেই সম্পাদক হতে অনুরোধ জানিয়েছিল। আজাদ সম্মত হন। কিন্তু শান্তি সম্মেলনে যোগদান করার উদ্দেশে আলাউদ্দিন আল আজাদকে তাড়াহুড়ো করে কলকাতা যেতে হয়। শান্তি সম্মেলন শেষ হওয়ার পরেই প্রগতিশীল লেখক আলাউদ্দিন আল আজাদকে প্রেসিডেন্সি জেলে নিরাপত্তা বন্দি হিসেবে কিছুদিন কাটাতে হয়। ফলে সময়মতো দেশে ফিরতে ব্যর্থ হন। ইতিমধ্যে আশরাফ সিদ্দিকী এবং আব্দুর রশীদ খানের সম্পাদনায় ‘নতুন কবিতা’ প্রকাশের কাজ শুরু হয়ে যায়। ইচ্ছে করলে আজাদ বাধা দিতে পারতেন যৌক্তিক কারণেই। কিন্তু তিনি সে-পথে যান নি, বরং কলকাতায় রচিত ‘মিউজিয়ামের সিঁড়ি’, ‘প্রোফাইল’ ও ‘প্রার্থনার শেষ’ কবিতা তিনটি প্রকাশের অনুমতি দেন সানন্দে। এই মনোভঙ্গি নিঃসন্দেহে আলাউদ্দিন আল আজাদের ঔদার্যের একটি উদাহরণ। প্রগতিশীল চিন্তাধারার জন্যে তাঁকে পাকিস্তান আমলে দু’বার কারারুদ্ধ হতে হয়। অত্যন্ত মূল্যবান তাঁর জীবন, একান্ত প্রয়োজনীয় তাঁর উন্নত মানের সাহিত্য সাধনা।

    এই স্মৃতিজাগানিয়া শোকলেখনটির জন্য মুয়িন পার্ভেজকে ধন্যবাদ জানাই।

    • মোহাম্মদ মুনিম - ২৮ আগস্ট ২০০৯ (৫:২২ অপরাহ্ণ)

      @সুমন
      তোমার মন্তব্যটিতে আলাউদ্দিন আল আজাদ সম্পর্কে অনেক ভালো তথ্য আছে। অনেকে মুল লেখাটা পড়লেও মন্তব্যগুলো হয়তো সেভাবে পড়েন না। তোমার মন্তব্যটি পোস্ট হিসাবে দিলে ভালো হতো। মূয়ীন পার্ভেজকে ধন্যবাদ এই চমৎকার লেখাটির জন্য। ‘আমার মাকে যখন’ এই কবিতাটি আমারও প্রিয় ছিল। পুরো কবিতাটি কি পোস্ট করা যায়?

      • রেজাউল করিম সুমন - ৩০ আগস্ট ২০০৯ (১২:৩৯ অপরাহ্ণ)

        মূল লেখা আর মন্তব্য/প্রতিক্রিয়া — সব মিলিয়েই তো ব্লগ। কেবল মূল পোস্ট যিনি পড়বেন তিনি নিজেকেই বঞ্চিত করবেন।
        শামসুর রাহমানের লেখা উদ্ধৃত করাই হতো না মুয়িন এ পোস্টটি না লিখলে। আমার নিজের বক্তব্য তো সামান্যই। তা দিয়ে আলাদা পোস্ট হয় না।
        ‘আমার মা’কে যখন’ কবিতাটি সংগ্রহে নেই। মুয়িন বা আমি শিগগিরই তুলে দেয়ার চেষ্টা করব।

      • মুয়িন পারভেজ - ৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (১:০৫ অপরাহ্ণ)

        ‘মুক্তাঙ্গন’ যদিও কবিতাচত্বর নয়, তবু কবিতার প্রতি ভালোবাসার জন্য মোহাম্মদ মুনিমকে ধন্যবাদ জানাই। ‘আমার মা’কে যখন’ কবিতাটি হাতের কাছে নেই। পাঠ্য কবিতাসঙ্কলনটি আছে গ্রামের বাড়িতে। বন্ধুদের সংগ্রহে আলাউদ্দিন আল আজাদের এ-কবিতাটি না পেয়ে দু-একটি অভিজাত বইদোকানে খোঁজ করি; কিন্তু আজাদের কিছু উপন্যাস থাকলেও কোনও কাব্যগ্রন্থ নেই (সম্ভবত চট্টগ্রামের গণগ্রন্থাগারে পাওয়া যাবে, সময় নিয়ে যাব একদিন)। কৌতূহলবশত নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্য মাধ্যমিক বাংলা সংকলন কবিতা বইটি কিনে এনে হতভম্ব হয়ে যাই : আজাদের কোনও লেখাই এখন কিশোর-কিশোরীদের জন্য পাঠ্য নয়―না কবিতা, না গল্প, না প্রবন্ধ!

        আমাদের সময়ে (১৯৯২-১৯৯৩) বইটির (কবিতাসঙ্কলন) সম্পাদক ছিলেন ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, বর্তমান সম্পাদকও তিনি। আজাদের কবিতাটি পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত না থাকলেও অন্তত আনন্দপাঠের সুযোগ ছিল তখন এবং শুধু কবিতাই নয়, তাঁর একটি দীর্ঘ প্রবন্ধও (‘বীরশ্রেষ্ঠদের কথা’) ছিল গদ্যাংশে। কিন্তু এ-প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা মাধ্যমিক স্তরে জানতেই পারছে না যে আলাউদ্দিন আল আজাদ নামের একজন বহুমাত্রিক লেখক ছিলেন এদেশে।

        কারও-কারও জানার আগ্রহ হতে পারে―এই ভেবে বর্তমান পাঠ্য কবিতাসঙ্কলনের (পুনর্মুদ্রণ, মার্চ ২০০৯) সূচিপত্রে উল্লেখিত নজরুল-পরবর্তী কবিদের তালিকা তুলে দিচ্ছি এখানে : জীবনানন্দ দাশ, জসীমউদ্‌দীন, আবদুল কাদির, মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা, সুফিয়া কামাল, আহসান হাবীব, ফররুখ আহমদ, সৈয়দ আলী আহসান, আবুল হোসেন, সুকান্ত ভট্টাচার্য, শামসুর রাহমান, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, সৈয়দ শামসুল হক, আল মাহমুদ ও মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। এঁদের মধ্যে সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা নতুন সংযোজন। সংকলন ও রচনা : মাহবুবুল আলম, ড. মঞ্জুশ্রী চৌধুরী ও শামসুল কবীর।

        • মুয়িন পারভেজ - ১৪ অক্টোবর ২০০৯ (১২:২৮ পূর্বাহ্ণ)

          ইদ উপলক্ষে বাড়ি গিয়ে, পুরোনো বাকশো থেকে ১৯৮৩-র (পুনর্মুদ্রণ : ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫) মাধ্যমিক বাংলা সাহিত্য (কবিতা) সঙ্কলনে মুদ্রিত আলাউদ্দিন আল আজাদের ‘আমার মা’কে যখন’ কবিতাটি অবশেষে উদ্ধার করা গেল। সম্পূর্ণ তুলে দিলাম :

          আমার মা’কে যখন

          আমার মা’কে যখন মনে পড়ে চলতি বাসের ভিড়ে জানালায়
          তাকাই করুণ আমি, রডধরা সহযাত্রীর হাতের যত ঘাম
          লাগে গালে ঝাঁকুনির তালে তালে এবং যদিও খুব নিরুপায়
          গরম নিঃশ্বাসে চাপে দেখি দূরে হলুদ-সবুজ বন, কালোজাম
          থোকা থোকা ধরে আছে আলগোছে ঠোকর মারে কাকেরা, উড়ে যায়
          ডাল থেকে ডালে, বসে কি যে খুশি দুপুররোদেও ডাকে অবিশ্রাম।
          আমি মুগ্ধ শিশু, চোখে এক হ্রদ বিস্ময়ের ঝিকিমিকি, মহাকায়
          বটগাছ খেলা করে বাতাসের স্রোতে―হাতে পাখি নীলকণ্ঠ নাম

          কখন পিছনে এসে মা আমার সহসা ধরে ফেলেন ছোটহাত
          বলেন, ‌’এখানে তুই দুষ্টু! আর আমি এতক্ষণ খুঁজে হয়রান!
          ‘না দাবো না আমি’ ঘাড় নেড়ে মোচড় দিয়ে বলেছি, ‘হোক লাত
          আমি দেখবো গাছের দালে দালে কাতবেলালির নাত!’ সেই স্থান
          এখনো রয়েছে জেগে ফাল্গুনের জোয়ারে ভাসছে খুব মৌতাত
          ফুলে ফুলে গুন‌্গুন্ মৌমাছি ঘন পাতার আড়ালে সাবধান
          কোকিলও গায় গান কুহুকুহু―কেবল আমরা নেই, কি আঘাত
          পেয়ে নাকেমুখে দুঃখে চলে গেছি, পদচিহ্নও রাখেনি সে বাগান

          যখন মা’কে আমার পড়ে মনে ঘোর হয়ে আসে ভরা শ্রাবণের
          কালোমেঘ, হিরণ্ময় বিজলির প্রস্তাবনা শেষ হলে ঝম‌্ঝম্
          বৃষ্টি অবিরাম পড়ে গুরুগুরু তূর্যধ্বনি কি আশ্চর্য দেখি ফের
          খুলে যায় রূপকথার মায়াবী দরোজারা একে একে, ছম‌্ছম্
          নীরবতা আমি চলি স্তব্ধপুরী সিঁড়ি বেয়ে বুকভরা আছে ঢের
          দুঃসাহস, দাঁড়ালাম নিরিবিলি যেখানে শুয়ে আছেন মনোরম
          রাজকন্যা―মৃতপ্রায়―অচেতন সম্মোহন মন্ত্র ঘুমে―পাই টের
          সকল পাথর মূর্তি আমারই দিকে তাকিয়ে রয়েছে, থম‌্থম্

          কাকে ভয় করি আমি? এই দ্যাখ আমার বাহুতে বাঁধা জননীর
          স্নেহের তাবিজ―তার চুম্বনের দাগ সারা শরীরেই ধরে আছি
          সোনার-রূপার কাঠি অপলক অদলবদল করি হাতে তীর
          ধনুকের সাজ শুধু কৌটার ভোমরার পাখা ছিঁড়ে কাছাকাছি
          টেনে নিই তাকে তুলে পঙ্খীরাজে যে আমার জন্য জ্ব’লে স্থির
          দীপাবলী হয়ে ছিল―আসুক না ধেয়ে রাক্ষসেরা ওরা মত্ত মাছি
          মাত্র―মেরেছি সহজে―যৌবরাজ্যে যাচ্ছি উড়ে উড়ে আমি মস্ত বীর
          ছাড়িয়ে পর্বতমালা নদী ও প্রান্তর―গলায় দোদুল মালাগাছি

          আমার মা’কে যখন মনে পড়ে ছিন্ন হয়ে যাই আমি স্তব্ধবাক
          পাষাণপ্রতিম, শুধু ভেজা চোখ এক সরোবর―গরমিল :
          ভুলতে পারি না তারে কি খোলাসা ছোবলে নিয়েছে, ক্ষুধা দুর্বিপাক―
          সেই বিষ তপ্ত করে, দগ্ধ করে আমাকে―তাই যখন অন্ধ চিল
          খুব আলোড়িত কালবোশেখীর মেঘে চক্রাকারে ছাড়ে তীব্র ডাক―
          চেয়ে দেখি―আমি যেন নগ্ন পা’য়ে চলেছি, থরে বিথরে অনাবিল
          জুঁই আবৃত কবর ছেড়ে সারা পল্লীর পথ-বিপথ সেরে, বাঁক
          নিয়ে শহীদ মিনারে এসে দাঁড়িয়েছি যতক্ষণ না আসে মিছিল।

          ‘উৎস ও কবিতা পরিচিতি’ অংশে লেখা আছে : ‘‘আমার মা’কে যখন’ কবিতাটি ‘সচিত্র বাংলাদেশ’ পত্রিকার একটি সাধারণ সংখ্যা (১লা জুলাই ১৯৮০) থেকে সংকলিত।” বলেছিলাম, ১৯৮৩-র মাধ্যমিক বাংলা সাহিত্য (কবিতা) সঙ্কলনটির সম্পাদক ছিলেন মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, শুধু কবিতাই নয়, গদ্যাংশেরও সম্পাদক ছিলেন দুজন : ড. কাজী দীন মুহম্মদ ও ড. আলাউদ্দিন আল আজাদ (মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান অন্যতম রচয়িতা ও সঙ্কলক)। এই তথ্যপ্রমাদের জন্য আমি দুঃখিত। প্রসঙ্গত একটি প্রশ্নও এল মনে : আজাদ সম্পাদক হিশেবে ছিলেন বলেই কি তাঁর দুটি লেখা সঙ্কলিত হয়েছিল? অবশ্য দুক্ষেত্রেই তো আজাদের স্বাচ্ছন্দ্য ও সাফল্য অনস্বীকার্য।

          • মোহাম্মদ মুনিম - ২২ অক্টোবর ২০০৯ (৮:৫৩ পূর্বাহ্ণ)

            কবিতাটা তুলে দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

  6. মাহতাব - ১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৪:২৫ পূর্বাহ্ণ)

    সুমন ধন্যবাদ

  7. কন্থৌজম সুরঞ্জিত - ৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ)

    বিস্মৃতির পৃথিবীতে স্মৃতি জেগে থাকে কেনো মুয়িন পার্ভেজ?

    • মুয়িন পারভেজ - ৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (১২:২১ অপরাহ্ণ)

      ধন্যবাদ, কন্থৌজম, আপনার অক্ষরবৃত্তলীন মন্তব্যের জন্য। ‘মুক্তাঙ্গন’-এ আপনাকে নিয়মিত পাব, আশা করছি। মণিপুরী দিনগুলো নিয়েও তো আপনি আমাদের উপহার দিতে পারেন কোনও স্মৃতিজাগানিয়া রচনা!

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.