প্রতিরক্ষা বৃত্ত

একজন মন্ত্রী ছাড়া এই বৃত্ত অসম্পূর্ণই থাকে। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বৃত্ত অসম্পূর্ণ[...]

একজন মন্ত্রী ছাড়া এই বৃত্ত অসম্পূর্ণই থাকে। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বৃত্ত অসম্পূর্ণ এবং এই অসম্পূর্ণতা রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে কাঙ্ক্ষিত সচলতা দেয় না – নাগরিকদের নিয়ত আলোচনার গণ্ডী থেকে সশস্ত্র বাহিনীকে অনতিক্রম্য দেয়াল দিয়ে ঘিরে রাখে – তাই জনগণ ও রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বৃত্তের পরিবর্তে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী হয়ে ওঠে সেনা, নৌ, বিমান ঘাঁটি আর সম্মিলিত সামরিক গোয়েন্দা ঘাঁটি।

কিন্তু এরকম কথার ভিত্তি কী? বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মন্ত্রীহীন কখন ছিল? বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিগত সময়কে যদি চারটি পর্বে ভাগ করি – মুক্তিযুদ্ধকালীন পর্ব, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার ও এর পরবর্তী বাকশাল সরকারের পর্ব, স্বৈরশাসকদের সরকারের পর্ব ও স্বৈরশাসন পরবর্তী গণতান্ত্রিক সরকারের পর্ব (যার ভেতরে কয়েকটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ও একটি সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুপর্ব আছে)। আমরা দেখি, স্বৈরশাসকদের সরকারের পর্বটি ছাড়া অন্য তিন পর্বেই প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশে ছিল। মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারে খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদই ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। এরপর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার ও বাকশাল সরকারের আমলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রী ও পরে প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবের হাতে থাকলেও একজন প্রতিমন্ত্রীও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। স্বৈরশাসকদের সরকারের পর্বে অবিকল্পভাবেই জিয়া ও এরশাদের হাতেই ছিল এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। ১৯৯১-এর পরে দুবারের খালেদা সরকার ও একবারের হাসিনা সরকারের দুই প্রধানমন্ত্রীই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের হাতেই পূর্ণ মেয়াদে রেখে দিয়েছিলেন। ২০০৭-০৮এর সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধান উপদেষ্টার হাতেই ছিল এবং ২০০৮এর নির্বাচনে নির্বাচিত হাসিনা সরকারও এখনো পর্যন্ত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এককভাবে তার নিজের হাতেই রেখে দিয়েছেন। যুদ্ধকালীন সময়ে ও জরুরী অবস্থায় সরকার প্রধানের হাতেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় স্বাভাবিকভাবে ন্যাস্ত থাকে – কারণ সেসময় প্রতিরক্ষামন্ত্রী আসলে যুদ্ধমন্ত্রী ও জরুরী অবস্থার সর্বোচ্চ প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। তো আমরা দেখতে পাচ্ছি একমাত্র শেখ মুজিবের সময়ে একজন প্রতিমন্ত্রী ছাড়া আর কেউই আমাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে আজো ঠাঁই নিতে পারেননি। এই ভিত্তিতেই আমি বলছি বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মন্ত্রীহীন এবং তাই বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বৃত্ত অসম্পূর্ণ।

একটি রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় হল : অর্থ, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা। এই চারটি মন্ত্রণালয়ের কাজের পরিধি ও ধরন এমন যে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে এই চারটি মন্ত্রণালয়ের কোনো একটির দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা অসম্ভব। তাহলে আমাদের প্রধানমন্ত্রীরা কী অসীম কর্মপরিধিকে অনায়াসে সামলাতে পারেন – নাকি বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজের পরিধি তেমন বিস্তৃত নয় এবং এর কাজের ধরনেও কোনো বিশেষত্ব নেই – তাই হয়তো টানা কুড়ি বছর সরকারের সর্বোচ্চ ব্যক্তিরা অনায়াসেই এককভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলেছেন।

আমাদের এই দক্ষিণ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও প্রভাব বিস্তারকারী প্রতিরক্ষা বিষয়ক কনফারেন্স ‘সাংগ্রি-লা ডায়লগ’-এ ২০০৯ সালে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা, ২০১০ ও ১১তে উপস্থিত ছিলেন তার সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি। প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ হাসিনা এই তিন বছরে একবারও এই কনফারেন্সে অংশ নিতে পারেননি – শুধু সময়ের অভাবেই এমনটি ঘটেছে তা নয় – একজন সরকার প্রধানের এভাবে প্রতিরক্ষা বিষয়ক কনফারেন্সে অংশগ্রহণ প্রধানমন্ত্রীত্বের জন্য অস্বস্তিকর, কারণ কোনো শীর্ষ সম্মেলন ছাড়া সরকার প্রধানের উপস্থিতি তার নিজের জন্য যেমন যথাযথ নয় আয়োজকদের জন্যও অস্বস্তির। অথচ এধরনের কনফারেন্সে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপস্থিতি অবশ্য কর্তব্য এবং সেসাথে কৌশলগত কারণে এই কনফারেন্সের নানা সংলাপে অংশগ্রহণ দেশের প্রতিরক্ষার কূটনীতিতে অত্যন্ত ফলপ্রসূ। আর দিনের পর দিন সবদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিকতা যেভাবে বাড়ছে তাতে পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষার মেলবন্ধন খুবই গুরুত্বের সাথে প্রতিভাত হচ্ছে। আর এজন্যই একজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাকে ওই কাজ না করিয়ে পরবর্তীতে দুবারই দীপু মনিকে দিয়ে ‘সাংগ্রি-লা সংলাপ’ সামলাতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে।

দেশের ভেতরেও তিনবাহিনীর সব স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরাসরি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা সুবিস্তৃত হয় না। প্রতিনিয়ত এসব বিষয় নিয়ে কাজ করা প্রধানমন্ত্রীর জন্য দুঃসাধ্যও হয়ে পড়ে। এছাড়া বাংলাদেশে ‘সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ’ বা Armed Forces Division নামে একটি প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়াও প্রধানমন্ত্রী দ্বারা পরিচালিত হয় – ফলে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী সরকার প্রধানকে আবার ‘সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ’কেও প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে পরিচালনা করতে হয়। আর এটাও ঠিক বোধগম্য নয় সশস্ত্রবাহিনীর জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ছাড়া আবার সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ একটা কেন থাকবে?

তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এখন ঠিক শুধু নিজের দেশের সশস্ত্রবাহিনীর ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করার জন্য নয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এখন এশিয়া জুড়ে এবং আরো বড় পরিসরে পৃথিবী জুড়ে সামরিক কূটনীতির মূল চালিকাশক্তি। কাজেই পৃথিবীব্যাপী প্রতিরক্ষা থেকে প্রতিরক্ষা কার্যক্রমে সার্বক্ষণিক ও নিবিড় অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে একজন মন্ত্রীর নিয়োগ এখন খুবই প্রয়োজনীয়।

শেখ হাসিনার হাতে দুটি উপায় আছে। তিনি এমন কাউকে খুঁজে বের করতে পারেন যার উপর তিনি সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে পারবেন এবং মন্ত্রী হিসেবেও ওই ব্যক্তিকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করবে। আবার তিনি এও করতে পারেন মন্ত্রীত্ব নিজের হাতে রেখে একজন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দিতে পারেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে। তবে দুক্ষেত্রেই তাকে খেয়াল রাখতে হবে এরা যেন কেউ সশস্ত্রবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি না হন। পূর্ণমন্ত্রী নিয়োগের ক্ষেত্রে কারো নাম প্রস্তাব ঠিক করতে পারছি না, কিন্তু প্রতিমন্ত্রী নিয়োগের ক্ষেত্রে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সোহেল তাজের নাম প্রস্তাব করা যায়।

সশস্ত্রবাহিনী নিয়ে শেখ হাসিনার একটা ভাল দিক আছে, তিনি নিয়মিত তিনবাহিনীর প্রধানদের সাথে বৈঠক করেন এবং তার চেয়েও বড় ব্যাপার প্রধানমন্ত্রীর পদাধিকার বলে তিনি সবসময় দেশের সর্বোচ্চ গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই-এর সাথে নিয়মিত মতবিনিময় করেন। শুধু তাই নয় দেশের অন্যান্য সামরিক ও বেসামরিক শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গেও তিনি নিয়মমাফিক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। এই অভ্যাসগুলোর কোনো ব্যাঘাত না ঘটিয়ে প্রতিরক্ষা বৃত্তকে সম্পূর্ণ করে নিজের অবস্থানকে আরো উন্নত করার স্বার্থে শেখ হাসিনাই পারেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে একজন মন্ত্রীর বা নিদেনপক্ষে একজন প্রতিমন্ত্রীর অনুপ্রবেশ সম্ভব করে দিতে।

মাসুদ করিম

লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।

৯ comments

  1. মাসুদ করিম - ২৫ জানুয়ারি ২০১২ (১০:৫৪ পূর্বাহ্ণ)

    অসম্পূর্ণ প্রতিরক্ষাবৃত্ত সম্পূর্ণ করার এখনই সময় — অন্তত একজন প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী।

  2. মাসুদ করিম - ২৮ মে ২০১২ (২:৪৫ অপরাহ্ণ)

    আরেকটি Shangri-La Dialogue 2012 সমাগত। আগামী ১-৩ জুন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ও কমকর্তাদের এই বৈঠকের জন্য সবকিছু প্রস্তুত। এবার কে যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে আবারো দীপু মনি? নাকি প্রতিরক্ষা সচিবের নেতৃত্বে শুধু প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা? এখনো কিছু জানি না।

    • মাসুদ করিম - ২ জুন ২০১২ (২:৫২ অপরাহ্ণ)

      হ্যাঁ, দীপু মনিই গেলেন সাংগ্রি-লা ডায়লগ ২০১২তে।

      Foreign Minister Dipu Moni now in Singapore to attend the 11th IISS Asia Security Summit known as the Shangri-La Dialogue yesterday held bilateral talk with Singapore Defence Minister Dr Ng Eng Hen.

      Expressing satisfaction over the current state of defence cooperation, both the ministers stressed the increased exchange of experts in different fields for the benefit of the two countries.

      The two ministers called for increasing cooperation in the field of security and counter-terrorism and emphasised on the incremental engagement to catch the untapped potentials.

      They also discussed wider security issues regarding situation in Afghanistan and Pakistan as well as democratic reforms taking place in Myanmar, according to a release of the foreign ministry.

      Describing Singapore as a role model of economic development for all the developing countries, Dipu Moni sought increased cooperation in the field of trade, commerce, investment and human resources development.

      She thanked the Singapore government for sharing development experiences under the auspices of the Singapore Cooperation Programme Training Awards.

  3. মাসুদ করিম - ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১২ (৬:০১ অপরাহ্ণ)

    মন্ত্রিসভার শাফল-রিশাফল তো বেশ হল, কিন্তু একজন অন্তত প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী এখনো জুটল না।

  4. মাসুদ করিম - ১১ ডিসেম্বর ২০১২ (১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ)

    পাকিস্তানের ইসলামবাদী আর পাকিস্তানের সেনাবাহিনী একে অপরের পোস্টার বয়। জিয়া বাংলাদেশের ইসলামবাদী আর বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে সেপথেই পরিচালনার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। তার পরবর্তী এরশাদ খালেদাও তাই করেছেন। শেখ হাসিনা কতটুকু পেরেছেন বাংলাদেশের ইসলামবাদী আর বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে একে অপরের পোস্টার বয় হওয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করতে? কিন্তু এর উপরই নির্ভর করছে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। এবং মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের রাজটীকাই বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে আজো তার যেটুকু মহিমা অর্জিত হয়েছে তার রক্ষাকবচের ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু আধুনিক সেনাবাহিনীর প্রগতির পথে একে ইসলামবাদীদের বিরুদ্ধে সংহত করতে কতটুকু করতে পেরেছেন হাসিনা, কতটুকু করতে পারবেন হাসিনা — এটাই এই সময়ের বাংলাদেশের প্রতিরক্ষার সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

  5. মাসুদ করিম - ৬ জুন ২০১৩ (১:২৪ অপরাহ্ণ)

    হাসিনা প্রশাসনের এমেয়াদের শেষ সাংগ্রি-লা ডায়লগ ২০১৩তেও দীপু মনিই সই। দীপু মনি কি কোনোভাবে এমেয়াদের দ্বিতীয় বছর থেকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পোর্টফোলিও শেয়ার করছিলেন অলিখিত ভাবে? দেখেশুনে তো তাই মনে হয়েছে আমার।

  6. মাসুদ করিম - ১৪ জানুয়ারি ২০১৪ (১২:৩২ অপরাহ্ণ)

    আরেকটি মন্ত্রিসভা হয়ে গেল, যথাবিহিত সম্মানপ্রদর্শনপূর্বক এবারও প্রতিরক্ষা + সশস্ত্রবাহিনি বিভাগ প্রধানমন্ত্রীর হাতেই ন্যাস্ত থেকে গেল।

  7. মাসুদ করিম - ৪ জুলাই ২০১৪ (৯:৩৬ পূর্বাহ্ণ)

    সাংগ্রি-লা ডায়লগ ২০১৪তে বাংলাদেশের পক্ষে উপস্হিত ছিলেন গওহর রিজভী। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট বলছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন শেখ হাসিনা। আজকের ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের প্রথম কলামের একটি খবরের এক পর্যায়ে বলা হচ্ছে

    Minister for LGRD and Cooperative Syed Ashraful Islam, also in charge of the Ministry of Defence

    সত্যিই কি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে? যদি তাই হয় তাহলে তো প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রী ব্যতিত অন্য কাউকে মন্ত্রী হিসেবে পেল।

  8. মাসুদ করিম - ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫ (৫:৫৮ অপরাহ্ণ)

    প্রযুক্তি মাঝে-মধ্যে প্রতিকূল পরিবেশও তৈরি করছে: প্রধানমন্ত্রী

    বর্তমান বহুকেন্দ্রিক বিশ্বে পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি পারস্পরিক সংযোগ দৃঢ় করার পাশাপাশি মাঝে-মধ্যে প্রতিকূল পরিবেশও তৈরি করছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    প্রযুক্তি ব্যবহার করে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা মোকাবেলায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আরও সক্ষম করে তোলার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।

    প্রধানমন্ত্রী শনিবার মিরপুর সেনানিবাসে ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স ও এএফডি কোর্সের গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

    তিনি বলেন, “বর্তমানে আমরা একটি সর্বজনীন ও বহুকেন্দ্রিক বিশ্বে বসবাস করছি। যেখানে পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি পারস্পরিক সংযোগকে সুদৃঢ় করছে, উদ্ভুত সমস্যা সমাধানের পথ দেখাচ্ছে, আবার মাঝে-মধ্যে প্রতিকূল পরিবেশও তৈরি করছে।

    “বিশেষ করে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ নানা ধরনের ঘটনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। আমি আশা করি, এই প্রশিক্ষণ আপনারা কাজে লাগাবেন, স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগবেন,যে কোনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় আপনারা অনেক বেশি সক্ষম হবেন।”
    বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও জঙ্গিদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনার তথ্য গোয়েন্দাদের তদন্তে উঠে এসেছে। এজন্য সম্প্রতি ফেইসবুকসহ ইন্টারনেটভিত্তিক কয়েকটি যোগাযোগ মাধ্যম সম্প্রতি কিছু দিনের জন্য বন্ধও রাখে সরকার।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা আজ যে একটি উন্নততর ও পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত বিশ্বে বসবাস করছি, সেই বিশ্বও বেশ কিছু অপ্রত্যাশিত কারণে সুরক্ষিত নয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপর উন্নত বিশ্বের অনেক নিয়ম-নীতি প্রভাব ফেলে। যার ফলে উন্নত দেশের অনেক অভিঘাতের প্রতিই তারা থাকে সংবেদনশীল।

    “এই পরিস্থিতিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিকে বহুমুখী ও শক্তিশালী করার জন্য নিজেদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করা প্রয়োজন।”

    বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী নিরাপত্তাজনিত অনেক সমস্যার সমাধানে সরকারের ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন তিনি।

    প্রতিরক্ষা বাহিনীর আধুনিকায়নে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, অনেক প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে রাজনীতি, অর্থনীতি ও গণতন্ত্রের মূল লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

    “১৯৯৬ সালের পূর্বে সশস্ত্র বাহিনীর জ্যেষ্ঠ ও মধ্যপর্যায়ের কর্মকর্তাদের উচ্চমানের প্রশিক্ষণের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান ছিল না। আপনাদের উচ্চশিক্ষার কথা বিবেচনা করে আমাদের পূর্ববর্তী মেয়াদকালে আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি এনডিসি, যা বর্তমানে একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।”

    মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর জনগণের পাশে থাকার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “জনগণ ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে এই অংশীদারিত্ব সময়ের পরিক্রমায় আরও শক্তি সঞ্চয় করবে। আমি বিশ্বাস করি, সশস্ত্র বাহিনী তার উদ্যোগ, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বে শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখে চলবে।”

    বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান রাষ্ট্রের কৌশলগত গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং সংহতি উন্নয়নে বাংলাদেশের তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকার গুরুত্বও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

    “সফলতার পাশাপাশি দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কিছু কিছু চ্যালেঞ্জ থেকেই যায়। আমি বিশ্বাস করি, আপনাদের সদ্যসমাপ্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে আপনারা এই চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলায় অনেক বেশি প্রস্তুত।”

    চলতি বছরের ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্সে (এনডিসি) এবং আর্মর্ড ফোর্সেস ওয়ার কোর্সে (এডাব্লিউএফ) ১১৩ জন অংশ নিয়েছিলেন।

    এনডিসিতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ ও বেসামরিক প্রশাসনের ৫১ জন এবং চীন, ভারত, মিশর, মিয়ানমার, ওমান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ সুদান, শ্রীলংকা, সৌদি আরব, তানজানিয়া ও যুক্তরাজ্যের ২৫ জন অংশ নেন।

    অন্যদিকে এডাব্লিউএফ কোর্সে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর ৩৭ জন সদস্য অংশ নেন।

    প্রধানমন্ত্রী জানান, একটি ‘স্ট্রাটেজিক ইনস্টিটিউশন’ হিসেবে এনডিসিকে গড়ে তোলার পাশাপাশি কলেজের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ইতোমধ্যেই ১৩২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি নতুন ভবন নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

    এছাড়া ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্সে বেসামরিক প্রশিক্ষণার্থীদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “সামরিক-বেসামরিক সম্পর্ক উন্নয়নে এ সিদ্ধান্ত ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”

    অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাদের মধ্যে হোসেন তৌফিক ইমাম, মসিউর রহমান ও গওহর রিজভী, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটির সভপতি সুবিদ আলী ভূঁইয়াসহ তিন বাহিনী প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপ্যাল স্টাফ অফিসারসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.