ঘোষিত মৃত্যুর ক্রমপঞ্জি

এই মৃত্যুর ঘোষক খালেদা জিয়া, সেই ঘোষিত মৃত্যুর ক্রমপঞ্জি ধরে তিনি ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন বিএনপিবধে।[...]

গত অক্টোবরে এক পোস্টে লেখেছিলাম, বিএনপির ঘোষিত মৃত্যুর ক্রমপঞ্জি লেখা হচ্ছে কোথাও, সেই ক্রমপঞ্জি লিখতে শুরু করেছি। এই মৃত্যুর ঘোষক খালেদা জিয়া, সেই ঘোষিত মৃত্যুর ক্রমপঞ্জি ধরে তিনি ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন বিএনপিবধে।

০৮ ডিসেম্বর ২০০৯ : দুর্নীতির বরপুত্র ও জিয়ার বড় ছেলে তারেক জিয়ার বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে অভিষেক।

০১ জানুয়ারি ২০১০ : ‘রাস্তায় কাঁটা দেব’ রাজনীতির স্থূলবালক সাকার ভাষ্য নিজের গলায় শপথবাক্য হিসেবে পাঠ করলেন খালেদা জিয়া।

৩১ জানুয়ারি ২০১০ : সপরিবারে শেখ মুজিব হত্যা মামলার পাঁচ খুনি আসামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর প্রতিক্রিয়াহীন বিএনপি।

০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ : সম্পাদকদের বচনামৃত শোনালেন খালেদা। ‘ আমি সবার কথা শুনব, সবার সঙ্গে কথা বলব’, ‘এক বছর সময় দিয়েছি, সরকারকে আরো সময় দিতে চাই। আমরা সংসদে থাকব, রাজপথেও প্রতিবাদ জানাব’। বচনামৃত ছাড়া আর কিছুই দেয়ার নেই আর খালেদার।

১০ ফেব্রুয়ারি ২০১০ : ওয়াকআউট না ক্যাটওয়াক! ক্যাটওয়াক, আসব যাব চিরদিনের সেই আমি, মিউজিক। এটাই খালেদার ‘সংসদে থাকব’ অমৃত ভাষনের পরিণতি। এমন সংসদীয় র‌্যাম্পে ক্যাটওয়াকে তার চেয়ে বেশি আর কাকে মানাবে।

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০: বোমা মেরেও বিএনপিকে বাঁচানো যাবেনা প্রমাণ করলেন দেলোয়ারপুত্র পবন।

২৯ মার্চ ২০১০ : খালেদা জিয়ার মহাসমাবেশে জনতার ঢল নামাই স্বাভাবিক। চট্টগ্রামে, বিএনপির মহড়াকক্ষে, এদিন মহড়ায় (রিহার্সাল) যে জনসমাগম হল, তাতেই আমরা নিশ্চিত তামাশাও (নাটক) মঞ্চসফল হবে। চট্টগ্রাম নয় সারা বাংলাদেশ সেদিন তামাশা দেখতে পাবে। আমরা বলব, খালেদা জিয়ার তামাশায় সারা দেশ আমোদিত হবেই এটাই স্বাভাবিক

০৪ এপ্রিল ২০১০ : প্রথমে তিনি কথাটা বলেছিলেন চট্টগ্রামের জনসভায়, আর আজ তিনি কথাটা বললেন সংসদে ‘যে মন্ত্রী-এমপিদের বেতন বাড়ানো হচ্ছে, তাঁদের মনোরঞ্জনে ব্যবহার করা হচ্ছে ইডেন কলেজের মেয়েদের।’

০৩ মে ২০১০ : বিএনপি সব সময় বাধাহীন, তাকে বাধা দেয়ার কেউ নেই — কখনো ছিলও না — কখনো হবেও না। তাই নির্বাচন কমিশন ঘেরাওর কর্মসূচি এভাবে মাঝ পথেই শেষ হয়ে গেল। বিএনপি সেই কেষ্ট যাকে কখনো কষ্ট করতে হয় না — তাই বিএনপির মহড়া মহড়া খেলা আর কোনো দিন শেষ হবে না।

০৮ মে ২০১০ : জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরামের আইনজীবি মহাসমাবেশে খালেদা জিয়া বলেছেন, দেশকে বিভক্ত করতে যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে যাচ্ছে সরকার। ঐক্যের প্রতীক খালেদা জিয়া, অনেকে যদিও ভুল করছিলেন, ভাবছিলেন যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়ে তিনি কিছু বলবেন না, জামায়াতের সাথে দূরত্ব বাড়বে খালেদার, তাদের ভুল ভাঙ্গল।

১২ মে ২০১০ : ভূতই দেখছেন খালেদা ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছেন না। ঝাড়ফুঁকবাদ থেকে এখন খালেদা আন্দোলনের পথে যেতে চাইছেন, তার মানে, গ্রামের হাটবাজারের সেই পরিচিত দৃশ্য — ঝাড়ফুঁকে ভূত না নামাতে ভূতেপাওয়াকে বেদম প্রহার — খালেদা এবার জাত চিনিয়ে ছাড়বেন — মরিয়া হয়ে মনে করিয়ে দেবেন তিনি মরেন নাই!

১৯ মে ২০১০ : উলামাপ্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন খালেদা জিয়া, আলেম সমাজের ওপর আক্রমণের মাধ্যমে দেশকে বিভক্ত করে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে যাচ্ছে সরকার — প্রেমের কথা পরের কাছে কইতে যে মানা, সে যে দিব্যি দেয়া দীক্ষা মন্ত্র — তাই খালেদা কখনো সরাসরি জামায়াত প্রসঙ্গে কথা বলতে পারেন না। আলেমরা প্রেমের কথা শুনলে বলেন, আস্তাগফেরুল্লাহ। আবার আলেমরা প্রেম করে বলেন, সুবাহানাল্লাহ। সুবাহানাল্লাহ, খালেদা, আপনার উলামাপ্রেম আনন্দময় হোক। আস্তাগফেরুল্লাহ, খালেদা, ধর্ষণকারী জল্লাদ উলামার সাথে প্রেম করা হারাম।

০৭ জুন ২০১০ : ‘এমন মজা হয় না’ — বিকল্প বাজেট, ছায়া বাজেট — কোথায় ছিল এসব বাজেট, যাদের বাজেট ছইফুরের জিম্মায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা ছিল, আজ ছইফুর নেই — খালেদাকে পেয়েছে কিছু আন্ডারবাম, তাদের জ্ঞানের বালুর গরমেই খালেদার এই হাল। সংসদেরও আর দরকার নেই পেশাদারী সাংবাদিকদের ডেকে প্রতিদিন এমন তারাজ্বলা সংসদ অধিবেশন ডাকতে পারেন খালেদা, উড়িয়ে দিতে পারেন তার হাজার কোটি টাকার পারিবারিক সম্পত্তি — মন্দায় পাঁচতারা হোটেল আর কনভেনশন হাউসের দুরাবস্থা কেটে যাবে। বলিউড ফিল্মের মতো বিদেশেও শুটিং করতে পারেন নিয়মিত, সংসদ শুটিং, যেখানে যাবেন সেখানকার পেশাদার সাংবাদিকদের ডেকে নেবেন, তাদেরও হাল ভাল নয়! হোকনা আপনার হাজার কোটি টাকায় তাদেরও কিছু উপকার! আর অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা যতই খুশি হোক, জামায়াতের বন্ধনের মতো, তারেক-কোকোর লুণ্ঠনের নাড়ীর টান তিনি কোনোদিন অস্বীকার করতে পারবেন না।

০৮ জুলাই ২০১০ : হায়রে বিএনপি। ‘মান্নান ভূঁইয়া অসুস্থ থাকায় তাঁর পক্ষে কেউ যদি বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করেন তবে তা বিবেচনা করা হতে পারে।’ মৃত্যুপথযাত্রী ‘সংস্কারপন্থী’ নিয়ে খালেদা জিয়ার কী যুগান্তকারী পদক্ষেপ! গন্ধ, সত্যিই পচা গন্ধ বের হচ্ছে।

০৫ অক্টোবর ২০১০ : আগামাথার ঠিক নেই খালেদার, ঔদ্ধত্যে ও কূপমুণ্ডকতায় খালেদা জিয়া এখন অনেক এগিয়ে গেছেন, গত ০৫ অক্টোবর ২০১০এ এক সম্মেলনে বলেছেন,যারা মুক্তিযুদ্ধ করেননি, ভারতে প্রবাস জীবনযাপন করেছেন, তারাই নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের চ্যাম্পিয়ন সাজানোর চেষ্টা করছেন। ওই একই সম্মেলনে তিনি এও বলেছেন, স্বাধীনতার পরপরই প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া হয়। আমরা তাদের বিচার করতে পারিনি। স্বাধীনতা বিরোধীদেরও তখনকার সরকার ক্ষমা করে দিয়েছিল। সাধারণ ক্ষমার কথা ভুলে গিয়ে আজ চার দশক পর তাদের সহযোগীদের বিচারের কথা বলে আবার জাতিকে হানাহানির দিকে ঠেলে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে। দেশপ্রেমিকদের এই দ্বিমুখী নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে
এরপর মুক্তিযুদ্ধে খালেদা জিয়ার নিজের ভূমিকার কথা অবশ্যই উঠবে, ১৯৭১-১৯৭৫ পর্যন্ত একজন নিতান্ত সাধারণ ব্যক্তি হিসেবে খালেদা জিয়ার জীবন কাহিনী জানা এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দিন শেষের আলোয় এই খালেদা জিয়ার স্বরূপ উন্মোচন ও বিএনপির লুপ্ত হয়ে যাওয়াই হবে আগামী কয়েক বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা।

১৩ নভেম্বর ২০১০ : খালেদার গোলাপী মিথ্যা এক কাপড়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। যাই হোক একাধিকবার চেষ্টা করেও জিয়া যাকে সেনানিবাস থেকে বের করতে পারেননি শেখ হাসিনা তাকে বের করে দিতে পেরেছেন।

০১ জানুয়ারি ২০১১ : এই সরকার অবৈধ, ক্ষমতায় গেলে এই সরকারের সকল কর্মকাণ্ড অবৈধ ঘোষণা করা হবে। ২০১১ সালের শুরুর দিনেই খালেদা তার ভবিষ্যত নিয়ে এমন ‘ইনশাল্লাহ’ ছড়াবেন তা আমাদের জানা থাকার কথা নয়। আসলে ২০১১ সালের প্রথম দিনেই খালদা জিয়া তার এই উক্তির মধ্য দ

[ এই পোস্টটি নিয়মিতই আপডেট করতাম, কিন্তু ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি/মার্চে কোনো একদিন পোস্টটি আপডেট করতে গিয়ে পোস্টটির বেশিরভাগ অংশ মুছে যায়, আর কোনোভাবেই রিকভারি সম্ভব না হওয়ায় পোস্টটি এভাবেই পড়ে আছে — পড়ে থাকবে। মা.ক ০৪/০১/২০১৪ ]

মাসুদ করিম

লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।

৩১ comments

  1. শামীম আহমেদ - ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৮:২৭ অপরাহ্ণ)

    ব্লগের ভিতর দলবাজি ভালো লাগেনা। ধন্যবাদ।

  2. রায়হান রশিদ - ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৬:০৮ পূর্বাহ্ণ)

    এই মৃত্যু ঘন্টা কি আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও বাজছে না? অন্য কোন ইস্যুর প্রসঙ্গে যাচ্ছি না, কিন্তু ছাত্র লীগ এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ‌- এই দু’টো ইস্যুকে যেভাবে মোকাবেলা করছে সরকার (এবং সরকারী দল), তাতে আশাবাদী হওয়া কঠিন।

    • বিনয়ভূষণ ধর - ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (১২:১৫ অপরাহ্ণ)

      এই মৃত্যু ঘন্টা কি আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও বাজছে না? অন্য কোন ইস্যুর প্রসঙ্গে যাচ্ছি না, কিন্তু ছাত্র লীগ এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ‌- এই দু’টো ইস্যুকে যেভাবে মোকাবেলা করছে সরকার (এবং সরকারী দল), তাতে আশাবাদী হওয়া কঠিন।

      @রায়হান!
      আমি ছাত্রলীগের ব্যাপারে কিছু বলতে পারবো না তবে ভাই আমি কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের উপর আস্হা রাখছি। আমি এবার খুব আশাবাদী…

      • বিনয়ভূষণ ধর - ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৫:২১ অপরাহ্ণ)

        ১.এক সপ্তাহের মধ্যেই প্রস্তুত হবে চূড়ান্ত তালিকা
        যুদ্ধাপরাধীদের ৪ স্তরের প্রাথমিক তালিকা

        ২.বিচারের অবকাঠামোগত প্রস্তুতি শেষ হয়েছে

  3. মাসুদ করিম - ১৩ মে ২০১০ (১০:০৫ পূর্বাহ্ণ)

    গতকাল খালেদা জিয়ার আন্দোলন প্রসঙ্গে বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর জনকণ্ঠে তার নিয়মিত কলামে লিখছেন

    খালেদা জিয়া আন্দোলনের কথা ভাবছেন। এই আন্দোলন সোসাল রিফর্ম কিংবা সমাজ পরিবর্তন নয়। এই আন্দোলনের লক্ষ, ক্ষমতা। ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত আমলাতন্ত্রের একাংশ, আইনজীবীদের একাংশ, রাজনীতিবিদদের একাংশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ, ছাত্র ও তরুণদের একাংশ। এই সব মিলিয়ে একটি সেন্ট্রালাইজড ক্লাস গঠিত, তাদের শীর্ষে খালেজা জিয়া। শ্রেণীটি সমষ্টিগতভাবে উদ্বৃত্ত আত্মসাত করেছে দীর্ঘদিন ধরে, নিজেদের জন্য ফিনানন্সিয়াল সম্পদ-সুযোগ-সুবিধা যোগাড় করেছে অবৈধভাবে। তারা বাধ্য নয় প্রতিযোগিতার চালে উদ্বৃত্ত লগ্নী করতে। সে জন্য শ্রেণী হিসাবে তাদের লক্ষ্য একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার (এই ব্যবস্থাটির সূত্রপাত করেছেন জিয়াউর রহমান সামরিক শক্তি ও অ-সামরিক শক্তি একত্র করে)। খালেদা জিয়ার এই লৰ্যের সঙ্গে যুক্ত তাই একটি সেন্ট্রালাইজড ক্লাস, যে ক্লাসটি গঠিত আমলাতন্ত্রের একাংশ, আইনজীবীদের একাংশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিৰকদের একাংশ, ছাত্র ও তরুণদের একাংশের সমবায়ে। এ ক্লাসটির কোন মাথা ব্যথা নেই রিফার্মের, খালেদা জিয়া কোন রিফর্মের কথা উচ্চারণ করেন না, যেমন উচ্চারণ করেন না এ সেন্ট্রালইজড ক্লাসটি।

    যে স্টেট ক্লাস তৈরি করা হয়েছে, সেই ক্লাসটির কোন প্রত্যৰ স্বার্থ ছিল না এবং কখনও নেই কোন সোসাল রিফর্মের। স্টেট ক্লাসের প্রাথমিক লক্ষ্য নিজেদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ন্ত্রণ করার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করা। এই ক্লাসটি সোসাল রিফর্ম থেকে সহস্র মাইল দূরে। যতৰণ পর্যন্ত মবিলাইজেশন দরকার, ততক্ষণ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাদের যুক্ততা, এই যুক্ততার জন্য সাধারণ মানুষের পৰে কতগুলো স্লোগানধর্মী বক্তব্য বলে যাওয়া। মতাদর্শিকভাবে অনুপ্রাণিত কোন রাজনৈতিক ক্ষমতা বিএনপির লক্ষ্য নয়। খালেদা জিয়া কি দক্ষিণপন্থী? কিংবা বামপন্থী?
    স্টেট ক্লাসের বিভিন্ন অংশের মধ্যে স্থায়ী প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে, কিন্তু খালেদা জিয়া-তারেক রহমান-কোকো রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতার উর্ধে। রাষ্ট্র তাদের; স্টেট ক্লাসের বিভিন্ন অংশ রাষ্ট্রের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার অধিকারী। রাষ্ট্রের সামাজিক পাওয়ার ইকুয়েশনের দুইদিক : একদিকে আছে রাষ্ট্রের চূড়ান্ত কর্তৃত্ব; খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং কোকো রহমান; অন্যদিকে আছে সামরিক বাহিনীর শ্রেষ্ঠত্ব (তত্ত্বাবধায়ক আমল এবং এই আমলে সামরিক বাহিনীর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকৃত) খালেদা জিয়ার বর্তমান আন্দোলন এই লক্ষে অগ্রসর হচ্ছে, স্টেট ক্লাসের অন্যান্য অংশ তাকে এ লক্ষে অগ্রসর হতে সাহায্য করছে।
    এর প্রমাণ : তারেক রহমানকে বাংলাদেশের সভরেনটির প্রতীক করা। স্টেট ক্লাসের অন্যান্য অংশ এখনই তারেক রহমানকে সভরেনটির প্রতীক করার মধ্যে দিয়ে এবং এই লক্ষে আন্দোলন অগ্রসর করার মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্রের সঙ্গে একজন ব্যক্তিকে সমার্থক করেছে আবার স্টেট ক্লাসের অর্ন্তগত সকল ক্লিক, ফ্যাকসন ও কোটারিকে ধনসম্পদ, প্রভাব প্রতিপত্তি এবং সম্মানকে একটি কমন গোলে পর্যবসিত করেছে। তারা পরস্পরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভেবে এসব লক্ষ অর্জন করবে এবং আন্দোলনের লক্ষ হচ্ছে এসব অর্জন ত্বরিত গতিতে যাতে পাওয়া যায় তার ব্যবস্থা করবে। একে কি সোসাল রিফর্ম বলা যায়? একে কি বলা যায় উন্নয়নের লক্ষে অগ্রসরমাণ সমাজ?
    কৃষক সমাজের বদলে একটি অসম রাষ্ট্র ব্যবস্থা তৈরি করতে খালেদা জিয়া সচেষ্ট। তাঁর আন্দোলন অগ্রসর হচ্ছে আয় বণ্টনের বিশাল বৈষম্যের দিকে। এ বৈষম্য থেকে তৈরি হচ্ছে আমলাতান্ত্রিক উন্নয়ন। এই উন্নয়নের বৈশিষ্ট সমাজ সংঘাতের নির্দিষ্ট ফর্ম। উৎপাদন না করে মুনাফা অর্জন কিংবা উৎপাদন না করে লুণ্ঠন, ৰমতার একটি বিশেষ চরিত্র তৈরি করে দিয়েছে। এই চরিত্র সমাজ এবং রাষ্ট্রকে সর্বনাশের প্রান্তে এনে দিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় খালেদা জিয়া অনুসৃত আন্দোলন ভাবনার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশ উৎপাদন না করে কিংবা উৎপাদন না বাড়িয়ে কোথায় পৌঁছবে? এভাবে কি অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় মবিলাইজ করা সম্ভব? খালেদা জিয়াকে এসব প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চান, তাদের জাতীয় রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হবে, না হলে তাঁরা বিপজ্জনক হয়ে উঠবেন। আমরা কি বার বার এই বিপদের মধ্যে বেঁচে থাকতে পারব? আমাদের বেঁচে থাকার ক্ষমতা ক্রমাগত বাড়ছে, নাকি ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে?

    বিস্তারিত পড়ুন এখানে : খালেদা জিয়ার কাছে জানতে চাই

  4. মাসুদ করিম - ২১ মে ২০১০ (২:০০ অপরাহ্ণ)

    সাপ্তাহিক বুধবারে আমীর খসরু লিখছেন

    বিএনপি একটি মধ্যপন্থার রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ সময়ে বিএনপি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে সে মধ্যপন্থার রাজনৈতিক চরিত্র হারিয়ে ফেলেছে। তবে বর্তমানে জামায়াতকে ছাড়া এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। বিএনপির একটি বড় অংশ মনে করছে, জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করার কারণে বিগত নির্বাচনে বিএনপিকে বড় ধরনের রাজনৈতিক খেসারত দিয়ে হয়েছে। অবশ্য বিএনপির চরম ডান অংশ মনে করছে, ভোটের অঙ্কের হিসাব করতে গেলে জামায়াতকে সঙ্গে রাখতেই হবে। এ বিষয়ে বিএনপি কোন নির্ধারক সিদ্ধান্তে এখনও পৌছাতে পারেনি।
    দুই বছরের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় বিএনপি সাংগঠনিক ও রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিএনপি এখনো ওই দুই বছরের আঘাতজনিত মানসিক অবসাদ কাটিয়ে উঠতে পারেনি। দলের মধ্যে সাংগঠনিক সংকটের এটি একটি অন্যতম প্রধান কারণ। দুই বছরের সেনাশাসন পুরো রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে সন্দেহ, অবিশ্বাস এবং আস্থার সংকট সৃষ্টি করেছে। এই অবিশ্বাস, সন্দেহ এবং আস্থার সংকট সবচেয়ে বেশি গ্রাস করেছে এ দলটিকে, এবং এই অবস্থার মধ্যে দলটি এখনো কমবেশি ঘুরপাক খাচ্ছে। এর থেকে বেরিয়ে আসার যে প্রবল সাংগঠনিক এবং মানসিক মনোবল প্রয়োজন তা দলটিতে নেই। জরুরি অবস্থার সময়কে কেন্দ্র করে নানা বিভাজনে দলটি নেতৃত্বের মানসিক নৈকট্য হারিয়ে ফেলেছে। জরুরি অবস্থাকালীন যারা জেল খেটেছেন তারা, যারা জেল খাটেননি তাদের থেকে আলাদা ভাবেন। জেল খেটেছেন যারা তারা নিজেদের প্রতিপক্ষের তুলনায় বেশি খাঁটি এবং সাচ্চা বলে ভেবে থাকেন। তা ছাড়া ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার সময় যারা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন তাদের আবার দুর্নীতিমুক্ত অংশ একেবারেই পছন্দ করছেন না। দুর্নীতিমুক্তরা দুর্নীতিগ্রস্তদের বিএনপির দুরবস্থার জন্য দায়ী করে থাকেন। এ ছাড়া জরুরি অবস্থাকালীন যারা খালেদা জিয়ার প্রতি পূর্ণ আস্থাশীল থেকে বিএনপির পক্ষে সোচ্চার থেকেছেন, তারা অন্যদের তুলনায় নিজেদের ত্যাগী বলে মনে করেন।
    কেন্দ্রীয় থেকে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত সর্বত্রই নানাবিধ নেতৃত্বের কোন্দল রয়ে গেছে। সাদেক হোসেন খোকা এবং মির্জা আববাসের দ্বন্দ্ব কিংবা গয়েশ্বর রায় এবং আমানউল্লাহ আমানের পরস্পরকে প্রতিপক্ষ ভাবার বিষয়টি কেন্দ্র থেকে পরিধি পর্যন্ত সকলেই অবগত। বিগত কাউন্সিলের মাধ্যমে দলে গণতন্ত্রচর্চার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্ধারণের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তা ব্যর্থ হওয়ায় দলের স্থানীয় পর্যায়ের দ্বন্দ্ব রয়েই গেছে। আর কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতৃত্বের কোন্দল বেগম খালেদা জিয়া শক্ত হাতে মোকাবিলা করার তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছেন না।

    বিএনপি কোনোদিনই মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দল ছিল না। বিএনপি সব সময় নির্ভেজাল ডানপন্থী দলই ছিল। আমাদের সংবাদ মাধ্যমে অনেকেই এভুলটি ইচ্ছে করেই করেন। এটা যারা করেন তারা বিএনপি ও আওয়ামী লীগের চরিত্রকে এক করে দেখাতে চান। তারা ভুলে যান পন্থায় এক রকম না হয়েও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অনেক বিষয়ে একই রকম আচরণ করতে পারে। তার মধ্যে একটা ধরা যাক অহেতুক হরতাল ডাকা, ক্ষমতায় থাকলে হরতাল খারাপ — ক্ষমতায় না থাকলে হরতাল ভাল। কিন্তু রাজনৈতিক দলের চরিত্রের দিক থেকে বাংলাদেশে একমাত্র ‘মধ্যপন্থা’র দল আওয়ামী লীগই।

    ২০০৭-২০০৮এ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিএনপি — আরেকটি বহুচর্চিত ভুল ধারণা আমাদের সংবাদ মাধ্যমের অনেকের। ২০০৭-২০০৮এ সব রাজনৈতিক দলেরই সমান ক্ষতি হয়েছিল, কারণ সামরিক শক্তি সব রাজনৈতিক দলের ক্ষতি করার জন্যই কমিটেড ছিল। বিএনপি ক্ষমতায় না থাকলে সবসময়ে এরকম থাকে, ক্ষমতায় থাকা ছাড়া বিএনপির কোনো রাজনৈতিক জীবন নেই।

    নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখে বিএনপি ।। আমীর খসরু ।।

  5. মাসুদ করিম - ২ জুন ২০১০ (৯:৫৯ অপরাহ্ণ)

    খালেদা জিয়ার কাছে নির্বাচন ও গণতন্ত্রের অর্থ কী, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর লিখছেন

    গণতন্ত্রের কথা, শেষ পর্যন্ত, বলে যেতে হবে। গণতন্ত্র পলিটিক্যাল ইকোনমি এবং এথিকস বোঝার জন্য জরুরী। প্রতিটি ব্যক্তির মানবিক ক্যাপাসিটি যদি সম্পূর্ণ করা যায় এবং প্রতিটি ব্যক্তির পরিবৃদ্ধি যদি সমানুপাতিক হয়, তাহলে গণতন্ত্রের মধ্যে দিয়ে স্বৈরতন্ত্র তৈরি করা সম্ভব হয় না। কিন্তু আমরা গণতন্ত্র বলতে বুঝি নির্বাচন, অর্থাৎ ধনতান্ত্রিক সম্পর্কের আবির্ভাব এবং পুনরার্বিভাব, সেজন্য আমাদের ধারণামতন গণতন্ত্রের মধ্যে এথিকস থাকে না এবং পলিটিক্যাল ইকোনমির ক্রিটিক থাকে না। শুধু থাকে ক্ষমতা। এই ক্ষমতার লোভে রাজনীতি করা, রাজনীতি হয়ে ওঠে তখন ভায়োলেন্ট। খালেদা জিয়া যে দুবার গণতন্ত্র তৈরি করেছেন, সেখানে অধিকাংশ বাসিন্দাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছেন অধিকার; অধিকারের পরিবৃদ্ধি হয় মুক্ত, সচেতন সৃষ্টিশীল আবহাওয়ার মধ্যে, এই আবহাওয়া তাঁর দুই রাজত্বে অনুপস্থিত ছিল বলে তাঁর মধ্যে তৈরি হয়েছে লুণ্ঠনের বোধ : লুণ্ঠনই নির্বাচনকে বৈধতা দেয়। নির্বাচন ক্সমতার লোভকে বৈধতা দেয় এবং নির্বাচন ক্ষমতাবানকে শক্তিশালী করার উপায়। এই হচ্ছে খালেদা জিয়ার কাছে নির্বাচন ও গণতন্ত্রের অর্থ।

    তিনি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন

    খালেদা জিয়া গণতন্ত্রকে পপুলার শাসন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের পপুলার নিয়ন্ত্রণ হিসেবে কখনও দেখেন না। তাঁর টেনশনের অন্যদিকে আছে রাষ্ট্রকে ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো গ্রহণ করা ও ব্যবহার করা। এই গ্রহণ ও ব্যবহার তাঁর ব্যক্তিগত অধিকার, তাঁর দুই পুত্রের ব্যক্তিগত অধিকার এবং তাঁর সহচরদের ব্যক্তিগত অধিকার। এই অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা কারও নেই। সেজন্য রাজনীতির ক্ষেত্রে এই অসম ব্যবহার, হস্তক্ষেপ ও অধিকার তাঁর রাজত্বকে বৈশিষ্ট্য দিয়েছে। আবার, যা-কিছু সম্পদ ছড়ানো ছিটানো, সেসব ব্যবহার ও লুণ্ঠন করার অধিকার তাঁর রাজনীতিতে বিশ্বাসী লুম্পেনদের। লুম্পেনরা আইনের উর্ধে, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান তাদের ব্যবহার করেন বিরোধীদের শায়েস্তা করার জন্য। এখানেই রিপ্রেজেন্টেসন সম্বন্ধে তাঁর ও তাঁর পুত্রের ধারণা। এই ধারণা বিএনপির রাজনীতিকে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের রাজনীতি থেকে আলাদা করেছে। দক্ষিণপন্থী রাজনীতি থেকে বিএনপির এবং খালেদা জিয়ার উত্তরণের সম্ভাবনা নেই।
    খালেদা জিয়া যেসব অদ্ভুত রাজনৈতিক দল নিয়ে জোট বেঁধেছেন, সেখানে ক্লাস পাওয়ার কাছে (যেমন যুদ্ধপূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম লীগ) কিন্তু সোস্যাল রিফর্মের কোন এজেন্ডা নেই। খালেদা জিয়া তার দরকার আছে বলে মনে করেন না। ভূমি সংস্কার, কৃষি সংস্কার, শিক্ষা, শিল্পায়ন, বিদ্যুত সমস্যা সম্বন্ধে তার নিজস্ব চিন্তা আছে কি? (অন্যের লেখা বক্তৃতা পাঠ করার কথা বলছি না)। খালেদা জিয়া বিকল্প রাজনীতি তৈরি করতে পেরেছেন কি? নেতিবাদী রাজনীতি অনবরত তৈরি করছে নতুন ধরনের বিভ্রান্তি। সরকারে যাওয়া সমস্যার সমাধান না। তিনি সরকারে যেতে চান, কিন্তু তাঁর সরকার কি করবে, এ সম্বন্ধে তার ধারণা নেই। তাঁর চিন্তা থেকে এবং কার্যক্রম থেকে বিকল্প রাজনীতি তৈরি হয় না। তিনি বিরোধী রাজনীতি করছেন, কিন্তু বিকল্প রাজনীতির দিকে অগ্রসর হতে পারছেন না। সেজন্য তাঁর রাজনীতির মধ্যে দায়বদ্ধতা নেই। মধ্যযুগীয় চিন্তা থেকে একবিংশ শতাব্দীর রাজনীতি করা কি সম্ভব?

    বিস্তারিত পড়ুন, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের নিয়মিত কলাম, জনকণ্ঠে, আজকের কলামের শিরোনাম : মধ্যযুগীয় চিন্তা থেকে একবিংশ শতাব্দীর রাজনীতি

  6. মাসুদ করিম - ৯ জুন ২০১০ (১২:৫০ পূর্বাহ্ণ)

    আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি। মানুষ দুর্ভোগে পড়ুক, কষ্ট পাক, অর্থনৈতিকভাবে দেশ বিপর্যস্ত হোক আমরা সেটা চাই না বলেই এ বাজেট প্রস্তাবনা নিয়ে এসেছি। তিনি বলেন, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নানা ইস্যুতে আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। বাজেট সম্পর্কে বিএনপির প্রস্তাবনা বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে সরকার গ্রহণ করে কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বিএনপি চায় এমন একটি আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা, যে ব্যবস্থা কোন গোষ্ঠীকে এড়িয়ে যাবে না। সব ধরনের বৈষম্য, শোষণ-বঞ্চনা এবং অবহেলার বিরুদ্ধেই রাষ্ট্রীয় নীতি পরিচালিত হবে। বেগম জিয়া তার বক্তব্যে তার সরকারের আমলের অর্থনৈতিক সাফল্যের একটি চিত্র তুলে ধরেন।

    পড়ুন এখানে বিএনপির ছায়া বাজেট

  7. মাসুদ করিম - ৯ জুলাই ২০১০ (১:২৯ পূর্বাহ্ণ)

    খালেদা-নিজামীর মতো নরকের কীটদের বাংলাদেশে জায়গা নেই — চিৎকার করে বলুন — আকাশবাতাস কাঁপিয়ে বলুন, এমনই আহবান করেছেন বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীর।

    ফারুক চলে গেলেন
    ফারুক চলে গেলেন। ডাক্তাররা ধরে রাখতে পারলেন না। শেখ হাসিনার হাজারো শুভেচ্ছা তাঁকে ধরে রাখতে পারলেন না। তিনি চলে গেলেন। পচা রাজনীতির শিকার হয়ে তিনি চলে গেলেন। হরতালে অগ্নিদগ্ধ হয়ে তিনি ইহকাল থেকে বিদায় নিলেন। বাংলাদেশের একজন গরিব মানুষকে পচা রাজনীতি মেরে ফেলেছে। পচা রাজনীতি ৰমতা চায় আর পচা রাজনীতির শিকার হয় গরিব মানুষ। এই অবস্থা আর কতদিন চলবে?
    হরতাল অধিকার, কিন্তু কোন রাষ্ট্রব্যবস্থা হরতালের নামে মানুষ খুন করার অধিকার কাউকে দেয়নি। মানুষ খুন করলে শাসত্মি হয়, শাসত্মি দেয়া হয়। হরতাল ডেকেছেন খালেদা জিয়া এবং তাঁর দল। হরতাল ডেকেছেন মতিউর রহমান নিজামী এবং তাঁর দল। হরতালের অধিকার প্রয়োগ করে খালেদা জিয়া ও তাঁর দল, মতিউর রহমান ও তাঁর দল ফারম্নককে খুন করেছেন। খুন যে-কোন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় শাসত্মিযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধ করেছেন খালেদা জিয়া ও তাঁর দল, মতিউর রহমান নিজামী ও তাঁর দল। মানুষ খুনের অপরাধ থেকে তাঁদের পার পাওয়ার কোন উপায় নেই। যে-রাজনীতিবিদ ও যে রাজনৈতিক দল মানুষ খুন করে, তাদের সভ্য-সম্মত কোন রাজনৈতিক ব্যবস্থা মাফ করে না। তাঁরা যদি মাফ পেয়ে যান, তাহলে বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা বলতে হবে সভ্য নয়। সভ্য রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তন ও প্রচলনের জন্য আমাদের লড়াই। সে লড়াই থেকে সরে আসা যায় না। ফারম্নকের খুনের দায়ভাগ খালেদা জিয়া এবং মতিউর রহমান নিজামীর। ঠা-া মাথায়, তাঁরা দু’জন ও তাদের দল ফারম্নককে খুন করেছে। এই খুনের বিচার হতেই হবে ও তাঁদের শাসত্মি পেতেই হবে। যদি তা না হয়, তাহলে বাংলাদেশ বর্বরতার শেষ সীমায় পৌঁছে যাবে, বর্বরতার শিরোমণি হবেন খালেদা জিয়া, তাঁর দল; নিজামী, তাঁর দল কিংবা যে কোন রাজনীতিবিদ ও তাঁর দল।
    দেশে উচ্চ আদালত আছে। এই খুনের বিচার তাদের কি মত আমরা জানতে চাই। দেশে বহু বিশিষ্ট আইনজীবী আছেন। এই খুনের বিষয়ে তাঁদের কি মত আমরা জানতে চাই। হুকুমের আসামি বলে আইনে একটি ধারা আছে। রাষ্ট্রের হুকুমে খালেদা জিয়া ও নিজামী খুনের দায়ে আসামি। যদি তাঁদের হুকুমের আসামি না করা হয়, বিশিষ্ট আইনজীবীরা এই আসামিদের কাঠগড়ায় না তোলেন এবং উচ্চ আদালতে এই খুনের প্রতিবিধান না করেন, তাহলে ধরে নিতে হবে বাংলাদেশে আইনের শাসন মাত্র এক প্রহসন। রাজনীতিবিদদের মতো আইজীবীরা এবং উচ্চ আদালত এই প্রহসনে শরিক (উচ্চ আদালত, আশা করি, আমার কথায় রাগ করবেন না)। ক্রোধে আমাদের বুক ফেটে যাচ্ছে, চোখে আমাদের অশ্রম্ন টলটল করছে : ফারম্নকের হত্যা আমরা মেনে নিতে পারছি না, নূরহোসেনের হত্যা, ফারম্নকের হত্যা আমরা মেনে নিতে পারছি না, গরিব বলেই কি তাদের হত্যার বিচার নেই। খালেদা জিয়া, নিজামী : আমরা হত্যার বিচার চাই। মানুষ হত্যার রাজনীতি থেকে খালেদা জিয়া কিংবা নিজামী কিংবা তাঁদের মতো খুনী রাজনীতিবিদদের বাংলাদেশ থেকে হটাবার ব্যবস্থা করে দিতে চাই। খুনের ব্যবসা করার জায়গা বাংলাদেশে নেই। রাজনীতি খুনের ব্যবসা নয়। শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে, ফারম্নককে বাঁচাবার জন্য যথেষ্ট করেছেন। আমরা সাধারণ মানুষ তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর বড় দায়িত্ব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যারা ফারম্নককে খুন করেছে তাদের গ্রেফতার করে আইনের কাছে সোপর্দ করা, এই মুহূর্তে বড় কাজ। বড় রাজনৈতিক দলের নেতা হিসাবে, হরতাল ডেকে মানুষ খুন করা যায় না। আইনের কাছে খুনী কিংবা খুনীদের সোপর্দ না করলে আইনের শাসন নিশ্চিত করা যাবে না। আইনের কাছে প্রধানমন্ত্রী কিংবা বিরোধীদলীয় নেতা সব সমান। এই সত্যটি প্রতিষ্ঠিত হোক, আমরা সাধারণ মানুষ, তাই চাই।
    এক সময় রাজনীতিতে ভালমানুষ আসতেন। এখনও রাজনীতিতে ভাল মানুষ আছেন। এই ভাল মানুষদের সঙ্গে আমরা বিশ্বাসঘাতকতা করে যদি খালেদা জিয়ার মতো কিংবা নিজামীর মতো লোকদের রাজনীতিতে টিকিয়ে রাখি। বজ্র থেকে আওয়াজ কেড়ে নিয়ে বলতে হবে, সহস্র কণ্ঠে বলতে হবে : এদের মতো নরকের কীটদের বাংলাদেশে জায়গা নেই।

    জনকণ্ঠে প্রকাশিত লেখাটির লিন্ক

  8. মাসুদ করিম - ১২ অক্টোবর ২০১০ (৭:৫১ পূর্বাহ্ণ)

    যারা মুক্তিযুদ্ধ করেননি, ভারতে প্রবাস জীবনযাপন করেছেন, তারাই নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের চ্যাম্পিয়ন সাজানোর চেষ্টা করছেন।

    খালেদার এই কথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছেন শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট শহিদুল ইসলাম। তিনি বলছেন

    ভারতে আশ্রয় নেওয়া এক কোটি ‘শরণার্থী’, স্যরি ম্যাডাম, ‘প্রবাসী’ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একটি বড় হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল। সারা বিশ্বের স্বাধীনতাকামী মানুষ আমাদের পেছনে দাঁড়িয়েছিল, তার অন্যতম কারণ ওই এক কোটি শরণার্থীর চাপ। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দাঁড়িয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যে ভাষণ দিয়েছিলেন, সে ভাষণে এক কোটি ‘শরণার্থী’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। সে ভাষণের জুৎসই জবাব দিতে ব্যর্থ জুলফিকার আলী ভুট্টো বেয়াদবের মতো কাগজপত্র ছুড়ে ফেলে অধিবেশন কক্ষ ছেড়েছিলেন। পৃথিবীর আর কোথাও এত অল্পসময়ে এত বেশিসংখ্যক মানুষ নিজের দেশের ঘরবাড়ি ছেড়ে ভিনদেশে উদ্বাস্তু হতে যাননি। জাতিসংঘের সে অধিবেশনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে ইন্দিরা গান্ধী বারবার ওই শরণার্থীর অর্থনৈতিক ও মানবিক চাপের কথা উল্লেখ করে বিশ্বসভার সমর্থন আদায় করতে সমর্থ হয়েছিলেন। আর আমাদের খালেদা জিয়া বলছেন, তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা নন, ‘প্রবাসী’। ছি! ধিক!

    এই দায়িত্বহীন ও অপমানজনক মন্তব্যের জন্য তিনি প্রকাশ্যে রেডিও টেলিভিশনে জাতির কাছে খালেদা জিয়াকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এবং খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে সাবধান করে দিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এই ধরনের মন্তব্য তাকে ও তার দলকে ‘মুসলিম লীগ’এর মতো ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করবে।

    বাংলাদেশে এমন পরিবার খুব কমই আছে, যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা বিপদগ্রস্ত হয়নি, মুষ্টিমেয় রাজাকার-আলবদর ছাড়া। কেউই শান্তিতে ছিলেন না। ছিলেন শুধু আপনি। তাই ভাবছেন, আমরা ভারতে গিয়ে ‘মৌজে’ ছিলাম। সল্টলেক ও পশ্চিম বাংলার সীমান্ত অঞ্চলের শরণার্থী শিবির, স্যরি, ‘প্রবাসী’ শিবিরগুলোর ছবিও দেখেননি? ‘মুক্তির গান’ ছবিটাও না? যদি দেখতেন তাহলে আপনার মুখ থেকে ও-রকম ‘ঘৃণ্য’ শব্দ বের হতো না। মুক্তিযোদ্ধাদের আপনি এভাবে হেয় করতে পারতেন না। পুরো জাতিকে অপমান করতে আপনাকে ১০ বার ভাবতে হতো। তাই সমগ্র জাতির দাবি, প্রকাশ্যে রেডিও-টেলিভিশনে আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে। নাহলে আপনিও বিএনপিকে বাঁচাতে পারবেন না। যে দল মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের এ রকম দৃষ্টিতে দেখে সে দল একদিন মুসলিম লীগের মতো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কারণ এ দেশের সবাই মুক্তিযুদ্ধের জন্য গর্ব করে। যারা করে না, তাদের স্থান বাংলাদেশে বেশি দিন হবে না।

    বিস্তারিত পড়ুন গতকাল সোমবারের কালের কণ্ঠে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিরোধী নেত্রীর বিস্ময়কর মন্তব্য

  9. মাসুদ করিম - ২০ নভেম্বর ২০১০ (১২:৩০ পূর্বাহ্ণ)

    এখানে দেব ২০ অক্টোবরে জনকণ্ঠে প্রকাশিত মুনতাসীর মামুনের কলামের একটা লিন্ক, যেখানে তিনি বলেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রধান লক্ষ্য খালেদার সেনানিবাসের বাড়ি ও তার দুই পুত্রকে রক্ষা করা। এরমধ্যে খালেদা বাড়ি ছেড়েছেন, পুত্রদের কখন ছাড়বেন জানি না।

    ওবায়দুল কাদের যে বলেছেন, “সামান্য একটি বাড়ি নিয়ে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে বিএনপি”, মনত্মব্যটিতে ঠাট্টার ভাব আছে বটে তবে ওই বাড়িটি অনেক কিছু। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির কেন্দ্র খালেদা জিয়া এবং তাঁর মূল কেন্দ্র এই বাড়ি। তিনি মনে করেন ওই বাড়িতে থাকার অর্থ জনগণকে বোঝান যে তার পেছনে সামরিক বাহিনী আছে, অতএব তিনি শক্তিশালী। বাড়ি ছাড়াও তাঁর মনোযোগ দুই পুত্রকে কেন্দ্র করে যারা ইতোমধ্যে নানা অভিধায় ভূষিত হয়েছে। লৰ্য করবেন গত এক বছর বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের ৫০ ভাগ ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি ও ৮০ ভাগ তারেক-কোকোকে নিয়ে। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মূল অর্থই তাই। টাকা ও নিজ পরিবার। জোট আমলে বিএনপির এমপি, মন্ত্রী ও তাঁদের পরিবারই সম্পদশালী হয়েছে। ৰমতায় তাদের আসতেই হবে, তাহলে ঐ বাড়ি রৰা হবে, তারেক-কোকো ফিরতে পারবে এবং সেই আগের চামচাদের নিয়ে বেগম জিয়া আবার রাজত্ব শুরম্ন করতে পারবেন। এ কারণেই অনেকে হুমকি ধমকি দিচ্ছেন, যেমন সামুসজ্জামান দুদু বলেছেন, “খালেদা জিয়ার বাড়ি ঠেকানো মানে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রকে ঠেকানো, প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আগুনে হাত দেবেন না। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করলে তিন বছর পর বাংলাদেশে অন্য কোন নেতার বাড়ি থাকবে না।” [ইত্তেফাক, ১৮.১০.১০] ধন্যবাদ দুদু। এত লাইন লিখে আমি যা বোঝাতে পারিনি। আপনি কয়েক কথায় তা বুঝিয়েছেন। ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি না থাকলে আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব থাকবে না। আপনারাই তো একমাত্র স্বাধীনতার ঠিকাদার, গণতন্ত্রের তল্পিবাহক, সার্বভৌমত্বের চৌকিদার। জাতীয়তাবাদী রাজনীতির মূলই হচ্ছে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি।

    আমরা আরো এগিয়ে যেতে চাই, সংসদ ভবন অঞ্চল থেকে জিয়ার কবরও উচ্ছেদ করতে চাই, যেন দুদু সাহেব বলতে পারেন – জিয়ার কবর উচ্ছেদ করলে বাংলাদেশে অন্য কোনো নেতার কবর থাকবে না। বিএনপির বাড়ি গেছে – সেনানিবাস বেঁচেছে, এখন বিএনপির কবরটি গেলে সংসদ ভবনটাও বাঁচে।

    এখানে পড়ুন মুনতাসীর মামুনের কলাম : বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মূল আদর্শই হচ্ছে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি ও খালেদা জিয়ার দুই পুত্রকে রক্ষা করা।

  10. নূপুর - ২৩ নভেম্বর ২০১০ (৩:৫৯ পূর্বাহ্ণ)

    আমার কিন্তু শিরোনাম দেখেই ছুটে আসা মাসুদ ভাই।
    কী অনবদ্য অনুবাদ করলেন মার্কেজের!

    • মাসুদ করিম - ২৯ নভেম্বর ২০১০ (১২:৪০ পূর্বাহ্ণ)

      ওই উপন্যাসের শিরোনামের দুটো অনুবাদের সাথে আমি পরিচিত ছিলাম : একটা ছিল মৃত্যুর কড়ানাড়া (সম্ভবত, রাজু আলাউদ্দিন) আরেকটা পূর্বঘোষিত মৃত্যুর কালপঞ্জি ( মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়)। কিন্তু আমি করেছি আপনার ভাল লাগার জন্যই ঘোষিত মৃত্যুর ক্রমপঞ্জি, এসব করতে ভাল লাগে — সারা জীবন যে শব্দতান্ত্রিক হতে চেয়েছি।

  11. মাসুদ করিম - ১০ এপ্রিল ২০১১ (২:১৮ অপরাহ্ণ)

    গত বুধবারে জনকণ্ঠে বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর লিখেছেন

    খালেদা জিয়া বাংলাদেশে সেকুলার রাষ্ট্র চান না। তিনি চান শরিয়া রাষ্ট্র। তাকে পর্দার অন্তরালে চলে যেতে হবে এবং রাজনীতি করা ছেড়ে দিতে হবেআমিনী ব্যাখ্যাত শরিয়া আইন মেনে তাকে জীবনযাপন করতে হবে। তা যদি না মানেন, তিনি নিজে তাঁর কথা মতো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করবেন। তিনি কি করবেন তা জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি। তাঁর রাজনীতি মোতাবেক, বাংলাদেশ কিংবা পৃথিবী দু’ভাগে বিভক্ত : একভাগে আছে শরিয়া অন্যভাগে আছে সেকুলারিজম। তিনি নিজেকে শরিয়া পৃথিবীর বাসিন্দা করেছেন এবং স্বেচ্ছায় সেকুলার পৃথিবী প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁর অফিসে পর্দা তিনি কবে ঝোলাবেন? পর্দার অন্তরাল থেকে তিনি তাঁর বাঘা বাঘা রাজনৈতিক সহচরদের সঙ্গে কিভাবে আলাপ করবেন। আমরা জানতে চাই ও দেখতে চাই। কওমী মাদ্রাসার ছাত্ররা বুকে কোরান শরীফ ঝুলিয়ে তাঁর অফিস তাঁর ঘরবাড়ি পাহারা কিভাবে দেবে, আমিনী তাঁর বুকে কোরান শরীফ ঝুলিয়ে খালেদা জিয়ার পর্দা-পুসিদা রক্ষা করবেন, আমরা আগামী দিনগুলোর দিকে তাকিয়ে আছি।

    বিস্তারিত পড়ুন : ভিজে বারুদ কবে বিস্ফোরিত হবে

  12. মাসুদ করিম - ২০ জুলাই ২০১১ (৭:৫৬ অপরাহ্ণ)

    খালেদা জিয়ার কাছে গণতন্ত্র কী, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর লিখছেন

    খালেদা জিয়ার কাছে গণতন্ত্রের অর্থ : সংসদহীন রাস্তার উন্মত্ততাতিনি সংসদহীন গণতন্ত্র বাস্তব করে তুলেছেন বলে তিনি একই সঙ্গে নির্বাচন অর্থহীন করে তুলেছেন। সংসদহীন গণতন্ত্র এবং অর্থহীন নির্বাচন, শেষ পর্যন্ত তাঁকে কোথায় পৌছেঁ দেবে। তিনি কারও কাছে দায়বদ্ধ নন, কোন ইনস্টিটিউশনের কাছে তাঁর দায়বদ্ধতা নেই। তিনি তাঁর দলকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। নৈরাজ্য কি গণতন্ত্র? নৈরাজ্য দিয়ে কি সংসদ চালানো যায়? নৈরাজ্য দিয়ে কি দায়বদ্ধতা তৈরি করা যায় কিংবা প্রতিষ্ঠা করা যায়? তিনি তাঁর দায়বদ্ধহীন উন্মত্ততা দিয়ে দিনের পর দিন পাবলিক ক্রিটিসিজম এবং আনত্মর্ঘাতের মধ্যকার সীমারেখা মুছে দিচ্ছেন, ফ্রিডম এবং নির্বাচনের মধ্যকার সীমারেখা লোপ করে দিচ্ছেন। তাঁর পাবলিক ক্রিটিসিজম হচ্ছে (সংসদ অস্বীকার করা কিংবা প্রত্যাখ্যান করা) অনত্মর্ঘাতকে উসকে দেয়া, হরতালের পূর্বে এবং হরতালের সময়ে এবং হরতালের পরে, তিনি এই কাজটি করে চলেছেন। এ বড়মাপের নেতার ফ্রিডম কিংবা সংসদে বিরোধী দলের নেতার ফ্রিডম (যে সংসদকে তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলেছেন) ব্যবহার করে মানুষের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি করছেন। একজন অপরাধীর সঙ্গে তাঁর মতো একজন বড় নেতার তফাত কোথায়, আমি তো খুঁজে পাই না। এ ধরনের সমাজে রাজনৈতিক গন্তব্য কিংবা মূল্যবোধ নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলা সম্ভব নয়।

    বিস্তারিত পড়ুন এখানে

  13. মাসুদ করিম - ৮ আগস্ট ২০১১ (১:০৯ পূর্বাহ্ণ)

    ০৬ আগস্ট ২০১১-এর দৈনিক সংগ্রামের খবরে কিন্তু আল্লাহর দরবারে দোয়া প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার আয়ু বা স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশেষভাবে কিছু চাওয়ার কথা উল্লেখ নেই। অন্য অনেক পত্রিকায় আছে কিন্তু সংগ্রামে নেই।

    মকবুল আহমদের বক্তব্যের শেষে সংগঠনের নায়েবে আমীর মাওলানা মুহাম্মদ আবদুস সুবহান উপস্থিত সবাইকে নিয়ে বাংলাদেশসহ মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও কল্যাণ কামনা এবং বিশেষভাবে জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লাসহ বিরোধী দলের কারাবন্দি সকল নেতাকর্মীদের সুস্বাস্থ্য এবং আশু মুক্তি কামনা করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন।

  14. মাসুদ করিম - ৩০ অক্টোবর ২০১১ (৮:৪৩ পূর্বাহ্ণ)

    খালেদা জিয়া তো আকণ্ঠ মুসলমান। কিন্তু গত বৃহষ্পতিবার ময়মনসিংহের মঞ্চে তাকে কেমন ভাইফোঁটা বা ভ্রাতৃদ্বিতীয়ায় (একটু আগাম হয়ে গিয়েছিল,আসলে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া ছিল পরের দিন শুক্রবার) পেয়ে বসেছিল : তার সেদিনের বক্তৃতায় তিনি অনবরত বলছিলেন ‘প্রিয় ভাইয়েরা’ শুধু মনের ভুলে বক্তৃতার মাঝামাঝি দুবার এর সাথে ‘প্রিয় বোনেরা’ বলেছিলেন। ভাইদেরকে দিয়ে তার বিশেষ কর্মযজ্ঞ আছে, ভাইফোঁটা দিয়ে তাদেরকে কাছে টানতে চাইছেন। বাংলার ভাইয়েরা কি তাদের আকণ্ঠ মুসলমান বোনের এই হিঁদুয়ানি ভ্রাতৃমঙ্গলকামনায় তার পাশে গিয়ে দাঁড়াবেন?

  15. মাসুদ করিম - ১৪ নভেম্বর ২০১১ (৬:২১ অপরাহ্ণ)

    কামাল লোহানী, খালেদা জিয়ার বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের দল, খালেদার এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে খালেদা ও জিয়ার মুক্তিযুদ্ধ কেমন ছিল তা যেমন আমাদের জানিয়েছেন তেমনি এই ‘মাদাম’ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিয়েছেন তার ব্যক্তিগত ভাণ্ডার থেকে।

    মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চরম ‘রসিকতা’ করেছেন মাদাম জিয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের জনসভায়। কথাটা হাল্কা হলেও বলতে বাধ্য হচ্ছি, পাবলিক দেখলেই কি ‘চাপা মারতে’ ইচ্ছে করে আপনার? কি করে আপনি বললেন, বলতে পারলেন ‘আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের দল নয়। বিএনপি হলো মুক্তিযুদ্ধের দল।’ উহ অসহ্য! এমন মিথ্যা কি করে একজন জাতীয় নেত্রী যিনি তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রী, একবার রাষ্ট্রপতির স্ত্রী, চীফ মার্শাল ল’ এ্যাডমিনিস্ট্রেটরের বেগম ইত্যাদি হয়েছিলেন, তিনি বেমালুম বলে ফেললেন হাজার হাজার মানুষের সামনে। সত্যিই হাসির খোরাক কারণ ঐ সময় বিএনপি নামের কোন রাজনৈতিক দল জন্মগ্রহণই করেনি। কি করে একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধের দল হতে পারে? আপনি মাদাম বিএনপির দলীয় চেয়ারপার্সন ও দেশনেত্রী। আপনি তাহলে কি বিএনপি’র জন্মকথা জানেন না? স্বামী মারা যাবার পর হঠাৎ করে নেত্রী বনতে চাইলে বুঝি এমনই পরিণতি হয়, তাই না মাদাম? আপনার এত প্রিয় দলের জন্ম কবে, তাও তো জানেন না। বিএনপির জন্মের অনেক আগেই, কমপক্ষে ১০ আগেই মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে।
    মাদাম, আপনি বলেছেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। আওয়ামী লীগের কোন নেতাই সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ করেননি। কিন্তু একবার বলবেন কি, আওয়ামী লীগ না শুরু করলে জিয়াউর রহমান কোথায় মুক্তিযুদ্ধ করতে যেতেন? ইতিহাস বলে, জিয়া তো পাকিস্তানী অস্ত্র বহনকারী ‘সোয়াত’ জাহাজ খালাস করতে পাকিস্তানী সুপিরিয়রের অর্ডার পালন করতেই গিয়েছিলেন, যখন পাকিস্তানী সেনাবাহিনী মানুষ হত্যা আর বাঙালীদের ডিসআল করতে শুরু করেছিল। এই তো মুক্তিযুদ্ধের ব্যাকগ্রাউন্ড মেজর জিয়ার। পরে যখন সীমান্ত পথে পালাতে গিয়েছিলেন তখন গ্রামবাসীরা তাঁকে ও সঙ্গীদের আটকে দেন। পরে এরপর গণহত্যা শুরু হলে চট্টগ্রামের কয়েকজন তরুণ সংস্কৃতিকর্মী ও বেতার প্রযোজক-প্রকৌশলী মিলে যে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী নেতার কেন্দ্র চালু করেন তার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বেলাল মোহাম্মদ ভাবেন, বাঙালী সৈন্যরাও আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন, এটা বোঝাবার জন্য একজন বাঙালী সেনা কর্মকর্তার বিবৃতি প্রচার করা দরকার। তখন চট্টগ্রাম ই.পি.আর-এর প্রধান ক্যাপ্টেন রফিক বেলালকে মেজর জিয়ার খোঁজ করতে বলেন। তারপর বেলাল মোহাম্মদ অনেক বলে কয়ে তাঁকে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। তারপর অবশ্যই সেক্টর কমান্ডার এবং পরে ব্রিগেড কমান্ডার হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালে কি তাঁর ভূমিকা ছিল সেকথা তাঁর সতীর্থ ক’জন সেক্টর কমান্ডার তো এখনও জীবিত আছেন। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে তাঁর ভূমিকা নিয়ে কত কথা হয়েছে। সে কথা সবাই জানে। মুক্তিযুদ্ধের উপপ্রধান সেনাপতি এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) এ. কে. খন্দকার বীরউত্তম এখনও জীবিত রয়েছেন।
    যাক মুক্তিযুদ্ধ যখন চলছিল, আপনি কোথায় ছিলেন, আপনাকে নিয়ে যেতে নাকি তিন তিনবার মেজর জিয়া টাকা-পয়সা দিয়ে লোক পাঠিয়েছেন, অথচ শুনেছি আপনি যাননি। স্বচ্ছন্দেই আছেন বলে জিয়াকে জানিয়ে দিয়েছিলেন। তো আপনি এসব জানবেন কোত্থেকে। যদি নাই জানেন ইতিহাস কিংবা সংগ্রামের দিনপঞ্জি, তবে সে ব্যাপারে বিকৃত তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করেন কেন?
    সেনাবাহিনীর লোক সরাসরি যুদ্ধ করবেন, না কি বসে বসে বাঁশি বাজাবেন? মুক্তিবাহিনীর কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, যুবক এমনকি শিল্পী-চিত্রকর যে সরাসরি যুদ্ধ করেছেন, তা কি আপনি জানেন? আওয়ামী লীগ সত্তরের নির্বাচনে সারা পাকিস্তানে ৫৬ দশমিক যে ভোট পড়েছিল তার ৭৫ ভাগ পেয়েছিল। আর সেই সুবাদে তাঁরা প্রথমে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি কিন্তু তিনি গ্রেফতার হওয়ায় তাঁর পরিবর্তে উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম দায়িত্বে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ, অর্থমন্ত্রী মনসুর আলী, সাহায্য মন্ত্রী কামারুজ্জামান এবং প্রধান সেনাপতি ছিলেন কর্নেল (অব) এম,এ, জি ওসমানী। এরা কোন দলের? প্রবাসে সরকার গঠন করে কি করছিলেন। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী খোন্দকার মোশতাক আহমদ মুক্তিযুদ্ধে থেকেও মার্কিনী দালালী করেছেন। অথচ তিনিও আওয়ামী লীগের। উনিও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ছিলেন। কিন্তু আপনি এসব জানবেন কি করে, কারণ আপনি তো পাকিস্তানী সেনাকর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে ওদের সেনাছাউনিতে বাস করছিলেন। আপনি যখন এ সব কথা বলেন, তখন পাগলও হাসে বোধ হয়। একজন জাতীয় নেত্রী, সম্মান করে আপনার ভক্তরা আপনাকে দেশনেত্রী উপহার দিয়েছে। দেশের বা জনগণের কতটুকুই বা জানবেন?

    অবশ্য লাজনম্র গৃহবধূর রাজনৈতিক জীবন বেশ বহু বছরই পালন করছেন, বেশ সফলভাবেই। তবে মাঝে মধ্যে যে ভুলগুলো করেছেন, তা বিসদৃশই ছিল। যেমন ১৯৯২ সালে আপনি প্রধানমন্ত্রী। সেই সময় বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য আনত্মর্জাতিক মর্যাদাসম্পন্ন একটি বিষয় ‘দ্বিবার্ষিক এশীয় চিত্রকলা প্রদর্শনী’। সেবার ছিল পঞ্চম প্রদর্শনী অর্থাৎ দশম বর্ষ। আর এই সময় দেশ-বিদেশের অত্যনত্ম গুণী, বরেণ্য, সম্মানীয় চিত্রকর, সমালোচক ও প-িতেরা আসেন আমাদের দেশে। আর এই এশীয় দ্বিবার্ষিক যেহেতু রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শুরম্ন করেছিলেন, তখন আমি শিল্পকলা একাডেমীর পৰ থেকে প্রতিমন্ত্রী জাহানারা বেগমের মাধ্যমে ৫ম দ্বিবার্ষিক উদ্বোধনের অনুরোধ জানিয়েছিলাম। মৃত স্বামীর কীর্তি এবং তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে এমনকি সমাগত গুণী শিল্পীদের প্রত্যাশা আপনি পূরণ করতে পারেননি। আপনি প্রথমে সম্মতি জানিয়েছিলেন কিন্তু হঠাৎ করে গভীর রাতে বাতিল করে রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে উদ্বোধন করতে বলে দিলেন।
    আরও একবার এমনি দুঃখজনক এবং আমাদের জন্য লজ্জাকর ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়েছিল, সেই একই প্রধানমন্ত্রিত্বকালে। এও আমার অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি। সেবার জগদ্বিখ্যাত শিল্পী সেতারিয়া, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে বিদেশে জর্জ হ্যারিসন ও ওসত্মাদ আলী আকবর খাঁকে নিয়ে কনসার্ট করা ও অর্থ সাহায্যকারী বন্ধু প-িত রবি শংকর এলেন বাংলাদেশে। ওসমানীতে সরকারী শ্রোতা এবং শিল্পকলার তখনকার অস্থায়ী মঞ্চে একদিন বাজিয়েছিলেন বেসরকারী শ্রোতা ও অর্থের বিনিময়ে আগত সঙ্গীতপ্রেমীরা। এদিন যে টাকা উঠেছিল, তা তিনি বাংলার শিল্পীদের জন্য কিছু করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। শেষ পর্যনত্ম তা আর হয়নি। তবে বাংলাদেশ থেকে চলে যাবার পর প্রধানমন্ত্রী মাদাম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে চাই। যথারীতি আমি প্রতিমন্ত্রী ‘সংস্কৃতি’ জাহানারা বেগমকে বললাম। তিনি কথা দিলেন, আমি ব্যবস্থা করে দেব। পরে জানালেন, মাদামের সময় হবে না। …শুনে হাসলাম। জগদ্বিখ্যাত এ শিল্পীর সঙ্গে দেখা করতে বিদেশের কত প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী নিজেদের ধন্য মনে করেন, আর আমার দেশের রূপ গরবিনী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বিষয়টিকে পাত্তাই দিলেন না। আমি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীকে বললাম, ৰতি কার হলো ম্যাডাম? রবি শংকরের না খালেদার? …আমার মনে হয়, এ বোধও তাঁর ছিল না। তাই এই সুযোগ হেলায় হারালেন। অথচ বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা নির্দিষ্ট সময়ে ওসমানীতে এলেন এবং অনুষ্ঠান শেষে মঞ্চে উঠে গিয়ে মহান শিল্পীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানালেন। সেই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধকালে তার সহযোগিতা ও সাহায্যের জন্য কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করলেন। … সংস্কৃতি বিষয়ে বুঝি আমাদের রাজনীতি করা মানুষদের এমনি মনোভাব। দু’জনের ব্যবহারে সেই পার্থক্যই ফুটে উঠল।

    জনকণ্ঠে কামাল লোহানীর লেখাটি বিস্তারিত পড়ুন : বলিহারী মাদাম খালেদা জিয়া!

  16. মাসুদ করিম - ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২ (১২:০৯ পূর্বাহ্ণ)

    স্বদেশ রায় লিখছেন

    বেগম জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে প্রত্যক্ষ অবস্থান নিয়েছেন। তিনি এটা নিয়ে কোন রাখঢাক করছেন না। তাই তিনি তার অবস্থানে দাঁড়িয়ে এ কথা বলেছেন। এমনকি তিনি কৌশলে এটাও বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেন না। কারণ, তিনি স্পষ্ট করে বলেন, বর্তমান সরকারকে তার সরকার অনুসরণ করবে না। কারণ, বর্তমান সরকার যেটা করছে এটাকে তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মনে করেন। এ কথাও বেগম জিয়াও নতুন করে বলেননি, তিনি যখন ৭১ এর চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দাবি করেছেন তখনই তিনি স্পষ্ট করেছেন, তিনি এদের বিচার করবেন না। যিনি তাদের মুক্তি দাবি করছেন তিনি যে এদের বিচার করবেন না এটা স্পষ্ট। এতদিন রাজপথে, দলীয় কর্মীদের সামনে বেগম জিয়া এ কথা বলেছেন। এবার তিনি সুধী সমাজের সামনেও সেটা স্পষ্ট করে বলনে। এর ফলে বেগম জিয়ার অবস্থান নিয়ে আর কারও কোন দ্বিধা থাকার কারণ রইল না। তিনি জানিয়ে দিলেন, তিনি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে। তাদের বিচার তিনি করবেন না। বেগম জিয়ার এই অবস্থান এভাবে পরিষ্কার করাটা দেশের মানুষের জন্যে ভাল হলো। এখন দেশের মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা বেগম জিয়ার এই রাজনীতিতে নৈতিকভাবে কতটা সমর্থন দিতে পারে। এমনকি তাঁর এ বক্তব্য নৈতিকভাবে প্রচারযোগ্য কিনা? ইউরোপে নাৎসীদের পক্ষে অবস্থান নিলে তাদের বক্তব্য কতটা নৈতিকভাবে প্রচার অধিকার পায় সেটা বিবেচনায় আনা দরকার। এবং ইউরোপসহ গোটা গণতান্ত্রিক বিশ্বকে ভেবে দেখা দরকার বেগম জিয়া গণহত্যাকারী নাৎসীদের মতোই একটি ফ্যাসিস্ট সংগঠনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এরপরে তিনি কতটা গণতান্ত্রিক বা আদৌ গণতান্ত্রিক বলে বিবেচিত হবেন কিনা? তাছাড়া তিনি যে ক্ষমতায় আসতে চাচ্ছেন, তিনি কাদের সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতায় আসতে চাচ্ছেন? তার সঙ্গে আছে ৭১-এর গণহত্যাকারী, নারী ধর্ষণকারী ফ্যাসিস্ট শক্তি জামায়াতে ইসলামী এবং চিহ্নিত ও স্বীকৃত তালেবান নেতা মুফতি আমিনী। তাই বেগম জিয়া যতই তপস্বী হোন না কেন তিনি ফ্যাসিস্ট ও তালেবানদের নিয়ে ক্ষমতায় আসার পরে দেশে কী ঘটবে সেটা কী কারো অজানা? পৃথিবীতে যেখানেই ফ্যাসিস্টরা ক্ষমতায় এসেছে সেখানেই গণহত্যা, এনথিক ক্লিনজিং হয়েছে। বেগম জিয়া ২০০১-এ এই ফ্যাসিস্ট ও তালেবানদের নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন- তখনও দেশে গণহত্যা, এনথিক ক্লিনজিং হয়। ২০০১ এ বেগম জিয়া ক্ষমতায় আসার পরে সারাদেশজুড়ে কী তান্ডব হয়েছিল তা মনে হয় স্মরণ করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এটা অনিবার্য বিষয়। কারণ, জামায়াতে ইসলামী একটি সন্ত্রাসী ও জঙ্গী সংগঠন তারা কী করবে এটা সকলের জানা। তাই ইতিহাসের বাস্তবতায় বেগম জিয়ার এ কথা অনেকটা সেই বিশেষ তপস্বীর প্রতিজ্ঞার মতই। এর থেকে বেশি কিছু নয়।

    লিন্ক : প্রতিহিংসার ধুয়া তুলে বেগম জিয়া ফের যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে চাচ্ছেন

  17. মাসুদ করিম - ২ মার্চ ২০১২ (৫:৫২ অপরাহ্ণ)

    খালেদা জিয়া মদ্যপান করেন, শেখ হাসিনা সহ অনেকে এটাকে খুব খারাপ চোখে দেখে, কেন দেখে তারাই জানে। পরিমিত মদ্যপান শরীরের জন্য ভাল। কিন্তু তার মানে এনয় যে একবারে মদ্যপান না করা ভাল নয়। খারাপ আসলে মদ্যপানকে খারাপ চোখে দেখা। কিন্তু তার চেয়েও খারাপ অতিমাত্রায় মদ্যপান করা। কেউ কি সত্যিই জানেন খালেদা জিয়া কী মাত্রায় মদ্যপান করেন? তবে তার মুখচোখ হাঁটুর অবস্থা দেখে মনে হয় তিনি ইয়েলেৎসিনের চেয়ে কোনোভাবেই কম মাত্রায় মদ্যপান করেন না। তাকে দেখলে কেন জানি আমার খালি ইয়েলেৎসিনের কথা মনে হয়, কেন মনে হয় আমি জানি না।

  18. মাসুদ করিম - ১২ নভেম্বর ২০১২ (১০:২৭ পূর্বাহ্ণ)

    জিয়াপূজক অবঃ ব্রিগেডিয়ার দেখি খালেদার চীনের ড্রাগন ও মূলত দিল্লির দরবার প্রীতিতে নাখোশ। তিনি জিয়া ছাড়া আর কেউই ঠিক কূটনীতি বোঝেন বলে মনে করেন না। ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম আবদুল হাফিজ শেখ মুজিবকে পাকিস্তানিদের চোখেই দেখেন এবং আবেগসর্বস্ব সত্তা ছাড়া কিছুই ভাবেন না বলেই মনে হল। বড় বড় পদপাড়া দেয়া এরকম আরো কত রাজনীতি ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অবঃ বর্তঃ ব্রিগেডিয়ার যে আছে আমাদের!

    দিল্লির দরবারে বিএনপির ধরনা

    বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক ভারত সফর ঘিরে গুঞ্জন এখনও থামেনি। একাধিক দৃষ্টিকোণ থেকে এর তাৎপর্য বিশ্লেষণ অব্যাহত রয়েছে। যতই এ সফরের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এবং মাঝে মধ্যে দলের অভ্যন্তরেই পরস্পরবিরোধী ভাষ্য পাওয়া যাচ্ছে, ক্রমেই বিষয়টি দুর্বোধ্য হয়ে উঠছে। দলের একটি অংশের দাবি অনুযায়ী, দলের ভারতনীতি অপরিবর্তিতই আছে। কিন্তু আমরা যারা কালের সাক্ষী তারা তো স্বাধীনতা-উত্তর ঘটনা পরম্পরায় প্রত্যক্ষভাবেই দেখেছি এবং বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছি যে, বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের কর্তৃত্ব ও আধিপত্যবাদ বিএনপির জন্মলগ্ন থেকেই দলটির গতিধারা নির্ধারণে ভূমিকা রেখেছিল। তবে তারও অনেক আগে থেকেই, বস্তুত স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই আমরা বাংলাদেশিরা ভারত-বন্ধুত্বের অনাকাঙ্ক্ষিত আলিঙ্গন থেকে মুক্ত হতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম।
    পাকিস্তানি শাসনের জোয়ালমুক্ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ভারতের মুরবি্বয়ানা এবং এ দেশ নিয়ে অতি তৎপরতা কেউ সুনজরে দেখেনি। সম্ভবত সে কারণেই ভারতের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর মাত্রাতিরিক্ত সৌহার্দ্য তার পতনকে ত্বরান্বিত করে থাকবে। উল্লেখ্য, পাকিস্তান সৃষ্টির আন্দোলনেও বঙ্গবন্ধু একইভাবে বল্গাহীন আবেগের শিকার ছিলেন। পাকিস্তানে থাকতেই সে দেশের এক জাঁদরেল সাংবাদিক জেডএ সুলেরির একটি নিবন্ধে পড়েছিলাম, মুসলিম লীগের কোনো এক কাউন্সিল অধিবেশনে যোগ দিতে আর্থিক সামর্থ্যের অভাবে সাইকেলে করে বঙ্গবন্ধু কলকাতা থেকে দিলি্ল গিয়েছিলেন। সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর শেখ মুজিবের অতীত বিবেচনায় তারই হাতে ক্ষমতা অর্পণের ওকালতি এই কাহিনীর জের ধরেই সুলেরি করেছিলেন বলেই আমার ধারণা।
    একই রকমের আবেগ বঙ্গবন্ধুর মধ্যে পরিলক্ষিত হলো সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে, যেখানে তিনি ভারতীয়দের ব্যাপারে অন্ধ। স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ কমান্ডের অধীনে এবং ১৬ ডিসেম্বর তাত্তি্বকভাবে এ কমান্ডের কাছেই পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণ করেছিল। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, পাকিস্তানিদের ফেলে যাওয়া বিপুল অস্ত্রভাণ্ডার ভারতীয়রা একতরফা তাদের দখলে নিয়ে নেয়। এত বছরেও শেখ মুজিবসহ বাংলাদেশের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। কেন আমাদের নেতৃত্বের এই বশংবদতা? নাকি আমাদের কষ্টার্জিত দেশে আমরাই অনাহূত আগন্তুক বা পরবাসী।
    স্বাধীনতার প্রথম প্রহরেই আমাদের নেতৃত্বের অন্ধ ভারতপ্রীতিতে মর্মাহত হয়েছিল এ দেশের স্বদেশপ্রেমিক মানুষ। হত্যা, ক্যু এবং নানা মুখোশে একাধিক অপশক্তির উত্থান অবশ্যই কাম্য নয়। কিন্তু দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্থের প্রশ্নে কোনো দেশপ্রেমিক আপস করতে পারে না। সুশৃঙ্খল সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সম্পর্কে তো তা চিন্তাই করা যায় না। বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে মর্মান্তিক মৃত্যুর পর ক্ষমতা দখলে ক্যু ও পাল্টা ক্যুর ধারায় জিয়াউর রহমান ক্ষমতার শীর্ষে উন্নীত হয়েছিলেন, যখন ভারতবিরোধী একটি মনোভাব এ দেশে তুঙ্গে। একইভাবে ভারতেও তখন চলছে মুজিব-উত্তর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ধারা-প্রকৃতি নিয়ে এক ধরনের স্নায়ু বৈকল্য। এমনই একটি স্পর্শকাতর সময়ে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিনা প্রতিবন্ধকতায় ভারতের তৎকালীন নেতৃত্বের সঙ্গে এক সমীকরণে পেঁৗছতে সক্ষম হন। তখনও দিলি্লতে প্রধানমন্ত্রিত্বের আসনে ইন্দিরা গান্ধী। বিস্ময়কর যে, কোনো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছাড়াই জিয়াউর রহমান কোনো তোষামোদ বা আনুগত্য প্রকাশ না করেই ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে সখ্য গড়ে তোলেন। তখন ভারতীয় নেতৃত্বে জিয়াউর রহমান সম্পর্কে কোনো তির্যক প্রশ্ন ওঠেনি, কেউ তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেনি বা তার শাসনকালে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো উৎকণ্ঠা দেখা যায়নি। যদিও তখন পর্যন্ত বাংলাদেশ-ভারতের পঁচিশ বছরের বন্ধুত্ব চুক্তি বহাল ছিল। আমার মনে পড়ে, সে সময়ে কোনো বিদেশি সাংবাদিক জিয়াকে এই চুক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তার সংক্ষিপ্ত মন্তব্য ছিল_ ঞযধঃ্থং ঃযবৎব, নঁঃ রঃ ফড়বংহ্থঃ নড়ঃযবৎ ঁং[That’s there, but it doesn’t bother us]। বস্তুত ইতিমধ্যে চুক্তিটির কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জিয়ার কূটনৈতিক প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের স্বীকৃতি মেলে যখন ওআইসি তাকে ইরাক-ইরান বিবাদ নিষ্পত্তির জন্য শুধু তাকে নিয়ে এক ব্যক্তি সমন্বিত দূতিয়ালির দায়িত্ব দেয়। ইতিমধ্যে সমগ্র আরব-মুসলিম বিশ্ব এই স্বল্প পরিচিত মানুষটিকে বুঝতে উদগ্রীব হয়ে উঠেছিল।
    সমগ্র বিশ্ব ব্যবস্থায়ই একটি অসমতা বিরাজ করলেও কেউ কেউ চাইলে তার ব্যক্তিত্বের জোরে বিরাজমান সমতার অভাবকে কাটিয়ে উঠতে পারে। জিয়াউর সহজেই সেটা করেছিলেন। আমরা যতদূর জানি, বাংলাদেশ-ভারত সমস্যা তখনও ছিল কিন্তু তা দুই দেশের সম্পর্কে অলঙ্ঘনীয় বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে জিয়াউর রহমান আবেগবর্জিত বাস্তবতার ভিতে দাঁড় করিয়ে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন ঘটিয়ে এ দেশের মানুষকে একটি অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে মুক্তি দেন।
    এখানে উপলব্ধির বিষয় এই যে, রাষ্ট্রপতি জিয়ার এবং বর্তমানের বিএনপি অভিন্ন নয়। যদিও জিয়ার প্রবর্তিত রাজনৈতিক ধারা অবলম্বন করে খালেদা জিয়া রাজনীতির পথে যাত্রা শুরু করেন, সময়ের সঙ্গে সেই ধারা থেকে অনেকটাই সরে আসেন তিনি। দৃষ্টান্তস্বরূপ জিয়ার সততাকে তিনি ধরে রাখতে পারেননি। তার জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে পরিবারতন্ত্রও ঢুকে পড়েছে তার রাজনীতিতে। স্বাধীনতার পরের এক ক্রান্তিকালে জিয়া সব মত ও পথের রাজনীতিক, পেশাজীবী এবং বাম ও দক্ষিণপন্থিদের সমন্বয়ে তার গঠিত দলে সরাসরি কোনো জামায়াত নেতাকে স্থান দেননি। ২০০১ সালে খালেদা জিয়া ওই জামায়াতকে নিয়েই জোট গঠন করেছিলেন।
    অতঃপর খালেদা জিয়া তার পুরো মেয়াদে দেশটাকে যথেচ্ছ লুটপাট করে ক্ষমতা থেকে এক প্রকার বিতাড়িত হয়েই জেলে যান। খালেদা জিয়ার ভাগ্য প্রসন্ন যে, তার উত্তরসূরিদের অর্থাৎ বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামীরা লুটপাটে তার শাসনামলের রেকর্ডকে ভাঙতে পারায় তার জন্য একটি সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। এই সম্ভাবনাকে ফলপ্রসূ করতেই চীন ও ভারতে তার ধরনা। যদিও এ কথা কে না জানে যে, বিএনপির রাজনীতির মূল স্লোগানই হলো_ ‘দেশ বাঁচাও, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বাঁচাও’ প্রতিবেশী ভারতের আধিপত্যবাদের ছোবল থেকে। যারা বিএনপিকে ভোট দেয় তারা বিএনপির এ স্লোগানে উজ্জীবিত হয়েই ভোট দেয়।
    কিন্তু তবু সরকার দিলি্ল গিয়ে ভারতের সঙ্গে যেসব দেনদরবার করে বিএনপিও তা-ই করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ভারতের পরম বন্ধু আওয়ামী লীগই ভারতের চাণক্য বুদ্ধির দরিয়ায় যা পায় না, বিএনপি কী করে ভাবল যে সাউথ ব্লকের কুশলীর কাছে বিএনপি পাত্তা পাবে? নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। বিএনপি জানে যে, শুধু স্লোগান দিয়ে নির্বাচন জেতা যায় না। ক্ষমতাসীনদের তূণে যে পরিমাণ তীর মজুদ আছে তার কিয়দংশ প্রয়োগ করলেই বিএনপি কুপোকাত! তাই তাদের বিদেশি পৃষ্ঠপোষকতা ও আনুকূল্য দরকার। সে জন্যই হন্যে হয়ে বিএনপি নেত্রী ‘আধিপত্যবাদী’ ভারতের দ্বারস্থ হতেও লজ্জাবোধ করেন না। কিন্তু বিএনপি নেত্রী কি কখনও ভেবেছেন, তার ভারতীয় আধিপত্যবাদ ঠেকানোর স্লোগানেই শুধু এখন আধিপত্যবাদবিরোধী জনগণ তার দলকে ভোট দেয়? তিনি যদি কোনো আঙ্গিকে ভারতীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কিছু ভাগ বসাতেও পারেন, তার চেয়ে অধিক পরিমাণ জনসমর্থন তিনি দেশের অভ্যন্তরেই হারাবেন। আসলে দিলি্লর দরবার বা বেইজিংয়ের ড্রাগনপ্রীতি শুধুই মায়া, শুধুই মরীচিকা। বাংলাদেশে ক্ষমতার দুর্গে প্রবেশের চাবি একমাত্র জনগণের হাতে। এ দেশের যে জনগণ জিয়া-উত্তরাধিকারের বদৌলতে খালেদা জিয়াকে এত ভালোবাসে এবং দলের দুর্দিনেও পাঁচটি কেন দশটি আসনও তার হাতে তুলে দিতে প্রস্তুত থাকে_ তাদের ওপর তিনি নির্ভর করতে পারছেন না কেন?

  19. মাসুদ করিম - ১৪ নভেম্বর ২০১২ (১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ)

    অমিত বসু, পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক ‘আজকাল’এর উত্তর সম্পাদকীয় আয়োজনে বাংলাদেশ নিয়ে যিনি গত কয়েক বছর ধরে লিখছেন,গতকাল তার দিক থেকে তার কথাগুলো বলেছেন চমৎকারভাবে। বাকিটা ভবিষ্যতের হাতে। তিনি খালেদার শারীরিক মানসিক পরিস্থতির যেকথা তুলেছেন রাজনীতিতে সেপ্রসঙ্গটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

    khaleda amit basu on Twitpic
    ঠিক কী চান খালেদা? ১/৪
    khaleda amit basu. on Twitpic
    ঠিক কী চান খালেদা? ২/৪
    khaleda amit basu.. on Twitpic
    ঠিক কী চান খালেদা? ৩/৪
    khaleda amit basu... on Twitpic
    ঠিক কী চান খালেদা? ৪/৪

  20. মাসুদ করিম - ২৯ নভেম্বর ২০১২ (১১:৪১ অপরাহ্ণ)

    কঠিন সময়ে কঠিন সব বাক্য। সবগুলোই রেকর্ডে রাখার মতো।

    জরুরি অবস্থার প্রশ্নই ওঠে না: হাসিনা

    জরুরি অবস্থা জারির যে শঙ্কা বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া প্রকাশ করেছেন, তা উড়িয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    তিনি বৃহস্পতিবার সংসদে বলেছেন, “এমন কি হয়েছে যে এমার্জেন্সি দেব? এমার্জেন্সি দেয়ার প্রশ্নই আসে না। গণতন্ত্র অব্যাহত থাকবে।”

    বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বুধবার জনসভায় বলেছিলেন, “ফিসফাস শোনা যায়- সরকার জরুরি অবস্থা দেবে। কিন্তু তা দিলেও কোনো কাজ হবে না। দেশের মানুষ কোনো কিছুই মানবে না।”

    আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা পাল্টা অভিযোগ করেন, বিএনপিই জরুরি অবস্থা জারির ‘পাঁয়তারা’ চালাচ্ছে।

    জরুরি অবস্থার কথা বলে খালেদা জিয়া দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, “জনগণই ক্ষমতার মূল উৎস। জনগণই তা মোকাবেলা করবে।”

    বিরোধীদলীয় নেতাকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনিই এমার্জেন্সি দিয়েছিলেন। আপনার প্রেসিডেন্ট এমার্জেন্সি দিয়ে আপনার ছেলেদের জেলে ঢুকিয়েছিল।”

    সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের ক্ষমতারোহনের ইতিহাস তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “জেনারেল এরশাদকে সাত্তার সাহেবের পেছনে লাগিয়েছিলেন। এরশাদ সাহেব ক্ষমতায় এসেছিলেন, ভাবি সাহেবকে উপ-রাষ্ট্রপতি করবেন বলে।

    “এরশাদ সাহেব কথা রাখেননি। ভাবি সাহেবকে কোনো ভাগ দেন নাই। এখন যদি এরশাদ সাহেব সত্যি কথা বলেন।”

    বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসক হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, “ওনারা (বিএনপি) এমার্জেন্সি-মার্শাল ল’তেই ভালো থাকেন।”

    “আমরা জনগণের ক্ষমতায় এসেছি। আমরা জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাসী,” বলেন তিনি।

    নবম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বিরোধী দলকে সংসদে যোগ দেয়ার আহ্বানও জানান।

    “তারা কথা সংসদে এসে বলুক। দেশকে যেন ধ্বংসের দিকে ঠেলে না দেয়।”

    বিরোধী দলের তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির দাবির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিরোধীদলের নেত্রী খুব সোচ্চার, এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার চান।”

    ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে যা হচ্ছে- জনগণই এর বিলুপ্তি চাইবে’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ১ জুলাই খালেদা জিয়া যে বক্তব্য দিয়েছিলেন- সংসদে তা পড়ে শোনান শেখ হাসিনা।

    বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ওনার একজন নেতা আছেন- যিনি ব্যারিস্টার, মিষ্টি করে কথা বলতে পারেন। ২০ নামে ২০টি একাউন্ট করেছেন, সিগনেচার তার। ভুলে যাবেন বলে তা আবার লিখে রেখেছেন। এটা দুদকে আছে।

    “সেই মওদুদ সাহেবও সেসময় বলেছিলেন, ‘অনির্বাচিত ব্যক্তিদের হাতে ক্ষমতা ছিল রাজনীতিবিদদের বড় ভুল।”

    বর্তমান সরকারের সময়ে উপ-নির্বাচন থেকে শুরু করে বিভিন্ন নির্বাচনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের প্রার্থীকে ভোট দেয়নি, হেরে গেছে। এত অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন এর আগে হয়েছে? এটা দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন।”

    “জনগণ ভোট দিলে ক্ষমতায় আসব, না হলে মাথা পেতে নেব। এটাই তো আমাদের রাজনীতি।”

    ডিসেম্বর মাসে বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের বিরোধী দলের নেত্রী আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছেন, যে মাসটা হচ্ছে বিজয়ের মাস।

    “যে মাসে পাকিস্তানী বাহিনী মিত্র বাহিনী ও মুক্তি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। সে মাসে স্বাধীনতা বিরোধীদের রক্ষায় এই ডিসেম্বর মাসে আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া হয়েছে।”

    তিনি আরো বলেন, “১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল, আমাদের মা-বোনদের হত্যা করেছিল। ৭৫ এর পর সামরিক অধ্যাদেশ জারি করে জেনারেল জিয়া তাদের রক্ষা করেছিল।

    “উনি বলেন, উনার স্বামী মুক্তিযোদ্ধা। উনি দাবি করেন ওনার স্বামী মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক।”

    বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের অন্য দলগুলোরও সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

    “উনি (খালেদা) ১৮ দল করেছেন কাদের নিয়ে। যুদ্ধাপরাধী, যারা পলাতক, যারা পুলিশের ওপর হামলা করেছিল- তারা তার মঞ্চে ছিল। যিনি, সাত ছাত্র হত্যার আসামি- তিনি ছিলেন তার মঞ্চে। উনি বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সোনার দোকানে ডাকাতি মামলার আসামি। তাকে মাফ করে দিয়েছিলেন ওনার স্বামী।”

    “তখন কথাই ছিলো, সাবাশ সাবাশ জিয়া ভাই। সাত খুন করে মাফ পাই,” ছাত্রলীগের এক সময়ের নেতা শফিউল আলম প্রধানের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন শেখ হাসিনা।

    হাসতে হাসতে হাসিনা বলেন, “সাবাশ সাবাশ বিরোধী দলের নেত্রী, এই না হলে রাজাকারা পালন। রাজাকার পালন করে যাচ্ছেন।”

    শেখ হাসিনা বলেন, “উনি (খালেদা) তো আমার বিরুদ্ধে ১৪টা মামলা দিয়েছিলেন। আমি বলেছি, কোনো মামলা প্রত্যাহার করা যাবে না, তদন্ত হবে। আমি জানি, আমি দুর্নীতি করিনি। যে অন্যায় করেনি- সে আত্মবিশ্বাস আমাদের আছে। জনগণ জানে কে দুর্নীতি করে।”

    ক্ষমতায় গেলে দুটি পদ্মা সেতু করবেন বলে বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “মিথ্যা বলার একটা সীমা থাকে? আমরা ফিজিবিলিটি শেষ করে এলাম, একটাই করতে পারল না। আবার দুটি করবেন!”

  21. মাসুদ করিম - ৩১ জানুয়ারি ২০১৩ (৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ)

    কেন বিএনপি জামাতের নিস্তার নেই, তার অননুকরণীয় ইতিহাস রাজনীতির ঘনসংবদ্ধ শৈলীতে জনকণ্ঠে তার নিয়মিত কলামে বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর লিখেছেন একটি অবশ্যপাঠ্য টেক্সট।

    জামায়াত-বিএনপির নিস্তার নেই

    ইতিহাস এবং রাজনীতি মৌলিকভাবে সম্পর্কিত। যাঁরা ইতিহাস নিয়ে কাজ করেছেন তাঁরা তাঁদের কাজের প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য গোপন করেননি। পেশাদার ইতিহাসের একটা গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হচ্ছে জাতীয় অতীতের একটা নির্দিষ্ট ধারার মধ্যে বেঁচে থাকার সংগ্রাম উন্মোচিত করা। এই উন্মোচন হচ্ছে স্কলারশিপ, এই উন্মোচন হচ্ছে মতাদর্শিক লড়াই, এভাবে তৈরি হয় ইতিহাস চর্চা। এভাবেই ইতিহাসবিষয়ক লেখা হয়ে ওঠে রাজনৈতিক প্র্যাকটিসের অংশ, কিংবা রাজনৈতিক প্র্যাকটিস। আমরা তদন্ত করেছি ইতিহাস-রাজনীতির সম্পর্ক, বুঝবার চেষ্টা করেছি কলোনির ইতিহাস-রাজনীতি এবং কলোনিত্তোর ইতিহাস-রাজনীতি। যাঁরা লিখেছেন তাঁরা ইতিহাস চর্চা করেছেন রাজনৈতিক সংঘাতে বুদ্ধিজীবী হিসেবে যুক্ত থেকে। ইতিহাস চর্চা করা তাঁদের রাজনৈতিক প্র্যাকটিসের গুরুত্বপূর্ণ দিক। ইতিহাস লেখা শ্রমজীবী আন্দোলনকে শক্তি যুগিয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলনকে বেগবান করেছে, নারীবাদী আন্দোলনকে মতাদর্শ দিয়েছে। একটা নির্যাতিত সমাজে চোখ খুলে দিয়েছে, অনেককেই লড়াকু করেছে এবং অনেককেই বিদ্রোহী করেছে। আমরা লড়াই করে, বিদ্রোহ করে আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন উদ্ধার করেছি পাকিস্তানীদের হাত থেকে। এই উদ্ধারের প্রক্রিয়া থেকেই সর্ব দিক জোড়া আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি গঠিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ সেজন্য আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন নির্মাণের লড়াই, এ লড়াইয়ে সকল রাস্তা মুক্তিযুদ্ধের দিকে গেছে, আর সকল রাস্তায় সকল মানুষ কুচকাওয়াজ করেছে। যুদ্ধ করেনি কে? নারী পুরুষ শ্রমিক কৃষক শিক্ষিত নিরক্ষর মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত-সরকারী চাকুরে অ-সরকারী চাকুরে : সবাই নিজের নিজের অবস্থান থেকে জাতীয় মুক্তির দিকে হাত বাড়িয়েছে। যুদ্ধের বিরোধিতা করেছে কে? পাকিস্তান এবং জামায়াতে ইসলামী ও তার অঙ্গ সংগঠন। মানুষ হত্যা করেছে কে? পাকিস্তান রাষ্ট্র এবং জামায়াতে ইসলামী ও তার অঙ্গ সংগঠন। এ এক লড়াই সশস্ত্রদের সঙ্গে নিরস্ত্রদের। এই এক লড়াই যে ক্ষেত্রে সশস্ত্ররা পরাজিত হয়েছে নিরস্ত্রদের কাছে, নিরস্ত্রদের অভিজ্ঞতা চারিয়ে গেছে জনজীবনে, নিরস্ত্রদের অভিজ্ঞতা থেকে তৈরি হয়েছে জাঁকালো সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ঐক্য। এই ঐক্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপি। এই ঐক্য বিশ্লেষণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে।
    আমরা কি করে ভুলে যাব বাংলাদেশ ছিল পাকিস্তানের কলোনি। ১৯৪৭ থেকে কলোনির ইতিহাস থেকে তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ আর কলোনির বাংলাদেশ থেকে তৈরি করেছে কলোনিয়াল বাঙালী জাতি। কলোনিয়াল বাঙালী জাতি কলোনির বাংলাদেশ অস্বীকার করেছে আর লড়াই করেছে স্বাধীন বাঙালী জাতির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মত। এই রাষ্ট্র বাঙালী জাতির কেন্দ্র ভিত্তিমূল এবং ইতিহাসের আশ্রয়। এই রাষ্ট্র জাতি থেকে তৈরি হয়েছে স্বতন্ত্র ইতিহাস, যে ইতিহাস পাকিস্তানের ইসলাম থেকে ভিন্ন এবং ভারতীয় জাতীয়তা থেকে ভিন্ন। এই ভিন্নতা প্রতিষ্ঠাই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্বেষণ ও নিয়তি। এই অন্বেষণ ও নিয়তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কলোনি রক্ষার জন্য পাকিস্তানের সশস্ত্র শক্তি পাকিস্তানের রাজনৈতিক শক্তি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে একত্রে লড়াই করেছে। পাকিস্তান রাষ্ট্র ও পাকিস্তানের রাজনীতির ভিত্তি জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে কলোনি রক্ষার সশস্ত্র লড়াই করেছে। আর বাঙালী জাতি ও বাংলাদেশের বিভিন্ন অধিবাসী কলোনি উচ্ছেদের জন্য সশস্ত্র লড়াই করেছে। এই দুই সশস্ত্র লড়াইয়ের লক্ষ্য একেবারে আলাদা; কলোনি রক্ষার লড়াই বনাম কলোনি উচ্ছেদের লড়াই। এই লড়াইতে পাকিস্তান রাষ্ট্র ও জামায়াতে ইসলামীর পরাজয় দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতির মানচিত্র বদলে দিয়েছে।
    কিন্তু এই পরাজয় সত্ত্বেও, পাকিস্তান সেনাবাহিনী দেশ শাসনের ক্ষেত্রে তার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে পেরেছে। এই ঐতিহ্যের সমর্থন মিলেছে কলোনিকালে এবং কলোনিত্তোরকালে জামায়াতে ইসলামী থেকে। জামায়াতে ইসলামী দেশ শাসনের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর অধিকারে বিশ্বাসী। সিভিল শাসনের বিরোধী জামায়াতে ইসলামী : কলোনিকালে জামায়াতে ইসলামী সেনাশাসনের পক্ষে নিরস্ত্র মানুষদের হত্যা করেছে। কলোনিত্তোরকালে এই বিশ্বাস থেকে জামায়াতে ইসলামী সরে যায়নি। বিএনপির উদ্ভব কলোনিত্তোরকালে সামরিক শাসন থেকে। সামরিক শাসনের বিরোধী বলে, বিএনপি গণতন্ত্রকে আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত বলে ভেবেছে এবং সামরিক শাসনকে বৈধতা দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে এবং শাসনের মানচিত্র থেকে হটিয়ে দিয়ে সামরিক শাসন, জামায়াতে ইসলামী উগ্র বাম দল, আওয়ামী লীগবিরোধী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে বিএনপিকে তৈরি করেছে। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধিতা এই রাজনীতির ভিত্তি মুক্তিযুদ্ধ ভারতের সাহায্যে হয়েছে, সেজন্য ভারতবিরোধিতা এই রাজনীতির লক্ষ্য। জামায়াতে ইসলামী, উগ্রবাম, আওয়ামী লীগ বিরোধী শক্তি এবং সামরিক শাসন একত্র করে বিএনপির প্লাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। গণতন্ত্রকে সাধারণ মানুষের মন থেকে মুছে ফেলে এই শাসনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ইতিহাসকে বিএনপি ব্যবহার করেছে জামায়াতে ইসলামীর সহায়তায়, ইতিহাসের সামরিক শাসনকে অনিবার্য ও প্রবল বলে চিহ্নিত করেছে মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে ক্রিয়াশীল গণতন্ত্রকে সামরিকতার মধ্যে অধস্তন করে এবং জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের রাজনীতি ক্ষেত্রে ত্রাণকর্তা হিসেবে প্রচার করে। সামরিকতার ভিতর কোন প্রতিরোধ নেই, প্রতিরোধ আছে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে, এভাবে গণতন্ত্র বিরোধিতা বিএনপি রাজনীতিতে প্রবল হয়ে উঠতে থাকে জামায়াতের সাহায্যে। বিএনপি এবং জামায়াত ক্ষমতার বাইপোলার উপাদান, এই দুই উপাদান একত্র করে ক্ষমতার রঙ্গমঞ্চ তৈরি করা হয়েছে, যে রঙ্গমঞ্চে গণতন্ত্র প্রতিরোধকারী ভূমিকায় অভিনয় করে চলেছেন খালেদা জিয়া এবং পার্শ্বচরিত্রে তরবারি ঘুরিয়ে চলেছেন জামায়াতের নেতারা।
    এভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বদলে বাঙালী মুসলমানকে ইতিহাসে উপস্থাপিত করা হয় এবং বিভিন্ন সম্প্রদায় মিলে বাঙালী জাতির বদলে মুসলমানিত্বের বোধ থেকে গঠিত ঐতিহ্য তৈরি করা হয়। এই ঐতিহ্যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নেই, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধিতা অপরাধ নয়, সেজন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার মুসলমান বিরোধী বিচার : এখানেই জামায়াত ও বিএনপির মৈত্রী। এই মৈত্রী একপক্ষে বাংলাদেশ রাষ্ট্র বিরোধী, অন্যপক্ষে বাঙালী জাতি বিরোধী। মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উদ্ভব হিমায়িত করেছে, এই হিমায়িত অবস্থা থেকে ইতিহাসকে মুক্ত করতে হবে। বিএনপি ও জামায়াতের এই অবস্থান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এবং বাঙালী জাতির বিরুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা এই অবস্থান থেকে, সেজন্য এই অবস্থান অপরাধ, ইতিহাসবিরোধী এই অবস্থানের কোন ইটপাথর বোমাবরুদ্ধ বাংলাদেশ রাষ্ট্রে থাকতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী এই অবস্থান শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং ইতিহাস এই অপরাধের বিচার শুরু করেছে। একজন নিরস্ত্র ব্যক্তিকে হত্যা যেমন অপরাধ, তেমনি ইতিহাসের ধারাবাহিকতার বিরুদ্ধে অবস্থান অপরাধ। এই অপরাধের বিচার থেকে জামায়াত-বিএনপির নিস্তার নেই, যত গাড়ি পোড়াক, বোমা ফাটাক, বারুদে ঢেকে দিক রাস্তার পর রাস্তা। এই প্রক্রিয়ায় ইতিহাস উচ্ছেদ করা যায় না। নাৎসিরা জার্মানিতে ইতিহাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পরাজিত হয়েছে।

  22. মাসুদ করিম - ১৭ আগস্ট ২০১৮ (৩:৫৯ অপরাহ্ণ)

    আট বছর আগে আমি লিখেছিলাম

    ১৯৭১-১৯৭৫ পর্যন্ত একজন নিতান্ত সাধারণ ব্যক্তি হিসেবে খালেদা জিয়ার জীবন কাহিনী জানা এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

    জিয়া-খালেদা বঙ্গবন্ধুর বাড়ি কেন যেতেন, প্রশ্ন হাসিনার

    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার আগে তার ধানমণ্ডির বাড়িতে জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী খালেদা জিয়ার যাওয়া-আসা ছিল জানিয়ে এর কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    তিনি বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় ‘সরাসরি জড়িত’ থাকার কারণেই জিয়াকে পরে রাষ্ট্রপতি করা হয়েছিল বলে তার বিশ্বাস।

    জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ঢাকায় আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার এমন বক্তব্য আসে।

    সেই সময়ের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “মেজর জিয়া এবং তার স্ত্রী… আমারতো মনে হয় এমন কোনো মাস নাই, তারা আমাদের বাড়িতে না আসত। এই যে ঘনঘন আসা, এর পেছনেও কি ষড়যন্ত্র ছিল?”

    বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পরদিন বেতারে সেই ঘোষণা দেওয়া মেজর শরিফুল হক ডালিমের (পরে লেফটেন্যান্ট কর্নেল) প্রসঙ্গ টেনেও একই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

    তিনি বলেন, “ডালিম ২৪ ঘণ্টা আমাদের বাড়িতেই পড়ে থাকত, এমন কোনো দিন নাই আসত না।”

    পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে তিনি নিহত হন।

    শেখ হাসিনা বলেন, “জিয়াউর রহমান মেজর ছিল। প্রমোশন দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানইতো তাকে মেজর জেনারেল করেছিল।”

    তিনি বলেন, “জিয়া যে রাষ্ট্রপতি হল, সূত্রটা যদি খোঁজেন… জিয়া ১৫ অগাস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল বলে… আমিতো বলব, একটা এজেন্ট হিসাবেই কাজ করেছিল।”

    বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শোক দিবসের এই আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দেশে বহু জ্ঞানী-গুণী মানুষ… সকলে খুব বাহবা দিতে শুরু করল একটা মিলিটারি ডিকটেটর নাকি বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়ে গেছে। মেজর থেকে তিন বছরের মধ্যে মেজর জেনারেল হল। তাকে সেনাপ্রধান করা হল, রাতারাতি রাষ্ট্রপতি হয়ে গেল।

    প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, “যেখানে মার্শাল ল আসে, যেখানে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করা হয়, সেখানে গণতন্ত্র কী করে থাকে?”

    জিয়াউর রহমানের সময় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বাধাগ্রস্ত করার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, “হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়া সম্পূর্ণভাবে জড়িত ছিল।”

    বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার আটকে রাখা হয়েছিল দায়মুক্তি অধ্যাদেশ জারি করে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর তা বাতিল করলে বিচারের পথ খোলে।

    ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর বিচারিক আদালতের রায়ে ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। আপিল বিভাগ ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে।

    ওই ১২ জনের মধ্যে পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে ২০১০ সালে। বাকিদের একজন মারা গেছেন এবং ছয়জন পলাতক।

    এরা হলেন- আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এম রাশেদ চৌধুরী, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, আব্দুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেমউদ্দিন। তাদের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করা হয়েছে।

    ১৫ আগস্ট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী
    জিয়া একা নন, খালেদা জিয়াও ষড়যন্ত্রে জড়িত

    স্বাধীনতার পর প্রতি মাসেই জিয়াউর রহমান তার স্ত্রীকে (খালেদা জিয়া) নিয়ে ঘন ঘন আমাদের বাড়িতে আসতেন। এটাও কি ১৫ আগস্টের ষড়যন্ত্রের অংশ? বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অস্ত্র ঠেকিয়ে অসাংবিধানিকভাবে জিয়াউর রহমান নিজেকে নিজে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। খুনি মোশতাক জিয়াকে সেনাপ্রধান বানিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন।

    Khaleda was involved in Aug 15 conspiracy: PM

    Prime Minister Sheikh Hasina said on Thursday there is no doubt that BNP chairperson Khaleda Zia was also involved in the August-15 carnage conspiracy, reports UNB.

    “Zia’s wife (Khaleda) brought self-confessed killer of the Father of the Nation (Sheikh Mujibur Rahman) to Parliament by rigging votes. What does it mean? It was not only Zia but also his wife involved in the conspiracy of the August 15 carnage. There is no doubt,” Hasina said.

  23. মাসুদ করিম - ১৯ আগস্ট ২০১৮ (১০:৪৮ অপরাহ্ণ)

    ১৫ আগস্ট ১৯৭৫: সত্যের সন্ধানে এক সুদীর্ঘ যাত্রা

    আগস্ট ১৫, ১৯৭৫

    যেকোনও বার্ষিকী, তা আনন্দের হোক আর বেদনার হোক; আমাদের সেইসব ঘটনা আর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কথা মনে করিয়ে দেয়, একসময় আমরা যাদের চিনতাম। প্রতি বছর যখন এইসব দিন আসে, আমরা মনে করার চেষ্টা করি কী ঘটেছিল সেই দিন। কখনও কখনও আমরা অতীত খুঁড়ে বিস্তৃতভাবে ঘটনা বিশ্লেষণ না করে সংক্ষিপ্তভাবে তা স্মরণ করি আর আমাদের ভাবনা অব্যাহত রাখি। আবার এমন সময় আসে, যখন আমরা বিরতিতে থাকি। অতীতের ঘটনা নিয়ে গভীর বিবেচনার স্বার্থেই আমাদের থামতে হয়। আমরা তখন ভাবনা জমা করতে থাকি, মূল্যায়ন করতে থাকি। একজন লেখকের ক্ষেত্রে এটাই হলো যথাযথ কর্মপ্রক্রিয়া। অতীতে কী ঘটেছিল তা নিয়ে ভাবনা জারি রাখা আর এর পুনর্মূল্যায়ন করা।

    ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার ক্ষেত্রে তেমনই একটা দিন। আগে একবার আমি বলেছিলাম, ১৫ আগস্ট উইলিয়াম ফকনারের এক উক্তিকে মনে করিয়ে দেয়। তা হলো অতীতের মৃত্যু হয় না কখনও, এমনকি অতীত বলে কিছু নেই। বছরের পর বছর আমি থেমে ছিলাম। অতীতকে স্মরণ করার চেষ্টায় রত ছিলাম। আর তারপর যখন সেইসব স্মৃতিরা ফিরতে শুরু করে তখন আমি অন্যান্য কাজকর্মে লিপ্ত হই। যাহোক, থেমে থাকার পর এই বছর আমি একটি পুরনো ইতিহাসের নতুন অধ্যায়ের সূত্রপাত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেই ইতিহাস কেবল বাঙালিদের নয়, আমার মতো আমেরিকানদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

    ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঢাকায় অনেক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল। একটি ঘটনাক্রমের ধারাবাহিকতায় এসব হত্যাকাণ্ড সম্ভব হয়ে উঠেছিল। সেসব হত্যাকাণ্ডে কেবল কি বাংলাদেশিরাই জড়িত ছিলেন? নাকি তাদের উৎসাহিত করা হয়েছিল, এমনকি হত্যার সুযোগও করে দেওয়া হয়েছিল? বাংলাদেশ আর যুক্তরাষ্ট্র, দুই দেশেই এমন কিছু মানুষ আছেন যারা হত্যাকাণ্ডকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির হাতিয়ার বানানোর বিপক্ষে। তারা মনে করেন, এই ধারার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় নেওয়া উচিত। আজ আমরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সহিংসতার কথা স্মরণ করছি। ঘটনার এতগুলো বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও ওই বছরের ১৫ আগস্ট এবং ৩ নভেম্বর (জেলহত্যা দিবস) সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির ভূমিকা নিয়ে আমাদের বোঝাপড়ায় ঘাটতি রয়েছে। আমাদের হাতে প্রচুর জিনিস এখন রয়েছে। এমনকি নতুন তথ্যও রয়েছে। সম্ভবত এর মধ্য দিয়ে অতীতের ওই ঘটনার বোঝাপড়ায় আমরা নতুন দিশা পাবো এবং আমাদের বোঝাপড়ার পরিসর বিস্তৃত হবে।

    ঢাকার এক বৈঠক থেকেই অভ্যুত্থান
    কিছু দিন আগে ঢাকায় সংক্ষিপ্ত সফরে আমি এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তার সম্পর্কে ভাবছিলাম আমি। ভাগ্য ভালো যে আমরা দুইজনই জীবিত আছি। ৩০ বছরেরও বেশি সময় আগে তার সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছিল আমার। আমার পাশে বসে ধীরস্থিরভাবে তিনি আমাকে জানালেন, আমাকে তার জরুরি কিছু বলার আছে। এই একটা কথাই তিনি আমাকে বলেছিলেন, তবে সে সময় তিনি খুব গম্ভীর ছিলেন।

    আমরা একে অপরকে চিনতাম। তবে খুব বেশি জানাশোনা ছিল না আমাদের পরস্পরের সম্পর্কে। তবে তার দুর্দান্ত এক সাহসী কর্মকাণ্ডের কথা জানতাম আমি। একজন মানুষের জীবন বাঁচাতে তিনি যে ঝুঁকি নিয়েছিলেন সেজন্য আমি তাকে শ্রদ্ধা করতাম। সেদিন সন্ধ্যায় আমি ঢাকাতে তার বাড়িতে ছিলাম। পেশায় ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। আমাকে এক জমায়েতে আমন্ত্রণ জানালেন। সেখানে অনেক ভিড় ছিল, একান্ত আলাপ করাটা ছিল দুঃসাধ্য। পরদিন সন্ধ্যায় সেখানে আবারও যাওয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি। আমি তাকে বললাম, পরদিন নির্ধারিত সময়ে তার সঙ্গে আমার দেখা হবে।

    অবশ্য, পরদিন আমি গ্রেফতার হওয়ার কারণে সে কথা রাখতে পারিনি। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্নেল আবু তাহেরের গোপন বিচার নিয়ে রিপোর্ট করতে আমি ঢাকায় গিয়েছিলাম। যে কেউই একে বিচার বলে অভিহিত করতে বিব্রতবোধ করতো। এটি ছিল এমন এক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে জেনারেল জিয়া তার বন্ধু আবু তাহেরকে ফাঁসিতে ঝোলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। একসময় এ‌ই তাহেরই জিয়ার জীবন বাঁচিয়েছিলেন।

    আমি ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ, দ্য গার্ডিয়ান ও বিবিসির জন্য রিপোর্ট পাঠাচ্ছিলাম। ঢাকাসহ বাংলাদেশের সব অঞ্চলের সংবাদমাধ্যমেই তাহেরের বিচার সংক্রান্ত খবরটি পুরোপুরিভাবে ধামাচাপা দেওয়া হলো। আমার করা একটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিবিসির বাংলা সংস্করণে প্রথম তাহেরের বিচারের খবরটি প্রকাশ পায়।

    ব্যাংককে রয়টার্সের অফিসে আমার প্রতিবেদন পাঠানোর পথ পেয়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে সেগুলো হংকং ও লন্ডনে আমার সম্পাদকদের কাছে পাঠানো হলো। ঢাকা টেলেক্স অফিস থেকে আমার প্রতিবেদন আদান-প্রদান প্রক্রিয়া এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রাখা হলো। আমাকে তিনদিনের জন্য আটকে রাখার পর ব্যাংককে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ততক্ষণে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সেন্সরশিপ আরোপের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে।

    ওই ভদ্রলোক কী বলতে চেয়েছিলেন তা শোনার জন্য আমি আর সময় নির্ধারণ করতে পারিনি। ৩০ বছরেরও বেশি সময় পর আমি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ঢাকায় যাই এবং সিদ্ধান্ত নিই ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করব। দেখা করার পূর্ববর্তী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে না পারার জন্য তার কাছে ক্ষমা চাইব। আমার পক্ষে এতটুকুই করার ছিল। তবে এত বছর আগে তিনি আমাকে কী বলতে চেয়েছিলেন তা জানার জন্য খুব আগ্রহ হচ্ছিলো। আমি তার অফিসের খোঁজ পেলাম এবং তিনি আমাকে দ্রুত দেখা করতে বললেন। আমি পৌঁছানোর পর তিনি আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন। ১৯৭৬ সালের জুলাইয়ের সে দিনটিতে দেখা না করায় তিনি আমাকে খানিক তিরস্কার করলেন। জিজ্ঞেস, আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, আর সেই রাতেই আপনার গ্রেফতার হতে হলো?’ আসলে দেখা করতে না পারার সেই ঘটনায় তিনি আমাকে ক্ষমাই করে দিয়েছিলেন। চা দেওয়া হলো। তার আস্থাভাজন এক ব্যক্তি যেন আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারে, তিনি তার ব্যবস্থা করলেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি যে গুরুত্বপূর্ণ কথাটা আমাকে বলতে চেয়েছিলেন তা মনে আছে কিনা। জবাবে তিনি বললেন, ‘এ তো মনে হচ্ছে গতকালকের কথা।’ এরপর তিনি পুরোপুরি গুরুগম্ভীর হয়ে গেলেন।

    পরবর্তী এক ঘণ্টা তিনি মজার এক গল্প শোনালেন। পরবর্তী বেশ কিছুদিন তার বাড়িতে দুপুর অথবা রাতের খাবার খেতে গিয়ে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আমরা। তার স্ত্রী ছিলেন সেই ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী। স্বামীর কথার সত্যতা নিশ্চিতের পাশাপাশি কোথাও কোথাও নিজের স্মৃতি থেকে অতিরিক্ত তথ্যও যুক্ত করছিলেন তিনি। আসলে আমাকে তিনি তাই বলেছিলেন, ৩০ বছর আগে যা বলার কথা ছিল। ঘটনাগুলো ছিল ১৫ আগস্টের কাছাকাছি সময়ের, যখন বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন।

    ঢাকার কূটনৈতিক সম্প্রদায়ের মধ্যেও ওই ভদ্রলোকের অনেক বন্ধু আছে। নিজের ব্যবসার কারণে এসব মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং সম্পর্ক হওয়াটা স্বাভাবিক। তিনি আমাকে বললেন, মার্কিন দূতাবাসে তার একজন বন্ধু আছে। তিনি রাজনৈতিক কর্মকর্তা। তার নাম ফিলিপ চেরি। ওই মার্কিনিকে সুদর্শন ও চমৎকার মানুষ হিসেবে বর্ণনা করলেন তিনি। বললেন, বাংলাদেশের জন্য তার অনেক প্রেম আছে। মাঝে মাঝে তারা ওই ব্যক্তির মালিকানাধীন কারখানা পরিদর্শনের জন্য দুইজন একই গাড়িতে করে যেতেন। বাংলাদেশ কত সুন্দর দেশ, এ কথাটা ফিলিপ চেরি যেভাবে বলতেন তা মনে আছে তার। ১৯৭৫ সালের জুলাইয়ের শেষে কিংবা আগস্টের শুরুতে ফিলিপ চেরি ওই ভদ্রলোককে ডেকে বলেছিলেন, তিনি তার বাড়িতে একটি নৈশভোজের আয়োজন করতে পারে কিনা। ওই ভদ্রলোক বলেছিলেন, তিনি সেটা করতে পারলে আনন্দিত হবেন। ফিলিপ চেরি কি নির্দিষ্ট কিছু অতিথিকে আমন্ত্রণ জানাতে চেয়েছিলেন? আয়োজককে চেরি নিশ্চিত করলেন যে তিনি চান কেবল একজন অতিথিকে আমন্ত্রণ করা হোক। তবে স্ত্রীকে নিয়ে আসতে কোনও সমস্যা নাই। ওই অতিথি হলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। সেই ভদ্রলোক জেনারেল জিয়াকে চিনতেন। তিনি জানালেন, ওই নৈশভোজ আয়োজন করতে পারলে তিনি খুশিই হবেন। চেরি কয়েকটি সম্ভাব্য তারিখের কথা বললেন। নৈশভোজ আয়োজিত হলো। জেনারেল জিয়া তার স্ত্রী খালেদাসহ সেখানে পৌঁছালেন। ফিলিপ চেরিও তার স্ত্রীসহ সেখানে গেলেন। ওই নৈশভোজে তাদের পাশাপাশি আয়োজক ও তার স্ত্রী ছাড়া আর কেউ ছিলেন না।

    আয়োজক বললেন, অভ্যুত্থানের এক সপ্তাহ আগে নৈশভোজটি আয়োজিত হয়েছিল। তার স্ত্রী মনে করেন, এটা দশ দিন আগের ঘটনা। ওই নৈশভোজে ওই দুই ব্যক্তির পৌঁছানোর পর পরই পরিষ্কার হয়ে গেলো, তারা তাদের নিজেদের মধ্যেই আলাপ করতে চাইছেন।

    জেনারেল জিয়া ও ফিলিপ চেরি বাগানের ভেতরে গেলেন এবং খাবার পরিবেশনের আগ পর্যন্ত একে অপরের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা কথা বললেন। জিয়া ও চেরিকে দেখে মনে হলো ওনারা একে অপরের চেনা। নৈশভোজের পর তারা আরেকবারও বাগানে গেলেন এবং আলোচনা করতে লাগলেন। ওই সময়ে দেখে মনে হয়েছিল তারা গালগল্প করছেন। অবশ্য, অভ্যুত্থানের পর সে নৈশভোজের আয়োজক ও তার পরিবার বুঝতে পারলো তাদের ‘ব্যবহার’ করা হয়েছে।

    অভ্যুত্থানের পরদিন নৈশভোজের সে আয়োজক এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে তিনি গাড়ি চালিয়ে গুলশানে ফিলিপ চেরির বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে এক নাটকীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল। নৈশভোজ আয়োজনকারী সে ব্যক্তি ক্ষুব্ধ ছিলেন এবং তার চোখে ছিল অশ্রু। কীভাবে এটা হয়েছে তা জানতে চাইতে থাকেন তিনি। তিনি মুজিবের স্ত্রীকে ‘নিজের মায়ের মতো’ বলে উল্লেখ করেন। তারা তাকে মেরে ফেলেছে। কেন? পুরো পরিবারকে হত্যা করা নিয়ে নৈশভোজ আয়োজনকারী ওই ব্যক্তি ক্রুদ্ধ ও মর্মাহত ছিলেন। বারবার জানতে চাইছিলেন, ‘কীভাবে এমনটা হলো?’

    চেরির স্ত্রী তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন, তাকে চা দিয়েছিলেন। চেরি তাকে বলছিলেন, ‘আমি জানি তুমি আমাদের পরিবারের খুব কাছের মানুষ। রাগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে নিজের গাড়িতে করে চলে যান। এরপর তিনি আর চেরির দেখা পাননি। তাদের পরিবার রাজনৈতিকভাবে সচেতন। তারা জানে, জিয়া-চেরির এই ডিনার কোনও সামাজিক উদ্দেশ্যে নয়। তারা ভালো করেই জানত, সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়ার ভূমিকা কী ছিল। সেনাবাহিনীকে মেজরমুখী করতে জিয়া কী করেছেন। তারা জানত, ১৫ আগস্টের কিছু সময় আগে ওই হত্যাকাণ্ড সংঘটনের টার্গেট নেওয়া মেজর ফারুক ও মেজর রশিদের কর্মকাণ্ড থেকে সেনাবাহিনীর মনোযোগ সরিয়ে দিতে তিনি কী করেছিলেন।

    অনেকেই বুঝতে সক্ষম হয়েছিল যে অভ্যুত্থানে জিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। জেনারেল জিয়া এর বিরোধিতা করলে এই অভ্যুত্থান সম্ভবই ছিল না। তথ্য-প্রমাণ থেকেও বোঝা যায়, অভ্যুত্থানে মূল কারিগরের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জিয়া। খন্দকার মুশতাক আহমেদের চেয়ে তার ভূমিকাই বড় ছিল।

    চেরি-জিয়ার বৈঠক যে বাসায় হয়েছিল, ঢাকা সফরের সময় এক সন্ধ্যায় আমি সেখানে গিয়েছিলাম। ওই ব্যবসায়ী ভদ্রলোকের কাছে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, চেরি যে সে সময়ের ঢাকার সিআইএ স্টেশন প্রধান ছিলেন তা তিনি জানতেন কিনা। আমার কথা শুনে তিনি চমকে যান। বলেন, আমি ভেবেছিলাম সে দূতাবাসের কোনও রাজনৈতিক কর্মকতা।

    ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড নিয়ে আমার পূর্বের লেখাতেও স্পষ্ট করেছি যে চেরি সিআইএ স্টেশন প্রধানই ছিলেন। একদম নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি আমি। সে সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিস ইউজিন বোস্টারই এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

    নেপথ্যে কারা?

    আমরা এখন স্পষ্টই বুঝি যে সামরিক অভ্যুত্থানের এক সপ্তাহ আগেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপপ্রধান ও আমেরিকার সিআইএ স্টেশন চিফের মধ্যে একটি বৈঠক হয়েছিল। বিষয়টি ‍খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ছয় মাস আগেই বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিস ইউজিন বোস্টার স্পষ্ট করে দূতাবাসের সবাইকে বলে দিয়েছিলেন যে মুজিব পতনের সঙ্গে জড়িত কারও সঙ্গে যেন যোগাযোগ না করা হয়।

    ১৯৭৪ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনকে শক্তিশালী করতে চাইছিলো। পরবর্তী কোনও এক নিবন্ধে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে। অভ্যুত্থানের সপ্তাহখানেক আগে ফিলিপ চেরি ও জিয়াউর রহমান ঢাকায় একটি আবাসিক ভবনে বৈঠকে বসেন। কর্তৃপক্ষের সবুজ সংকেত না থাকলে অভ্যুত্থানের পরিকল্পনাকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসা কিংবা কথা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না চেরির। রাষ্ট্রদূত বোস্টার যেহেতু এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন, তার মানে তাকে অন্য কেউ নির্দেশনা দিয়েছিল। সিআইএ স্টেশন চিফ হয়তো ওয়াশিংটন কিংবা ল্যাংলির কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশমতো কাজ করেছিলেন।

    ব্রিটিশ লেখক ক্রিস্টোফার হিচেন তার বই ‘দ্য ট্রায়াল অব হেনরি কিসিঞ্জার’-এ বাংলাদেশ নিয়ে একটি অধ্যায় রেখেছেন। তার মতে, ১৯৭৪ সালের আগস্টে নিক্সনের মৃত্যুর পর এই নির্দেশ দেওয়া ও অভ্যুত্থানের সমর্থন করার মতো সক্ষম একমাত্র একজনই ছিলেন। হিচেন তার বইয়ে লেখেন, রাষ্ট্রদূত বোস্টার বুঝতে সক্ষম হয়েছিলেন যে তার সিআইএ স্টেশন নেপথ্য কোনও ক্ষমতাশক্তির নির্দেশনায় কাজ করছে, যার সম্পর্কে তিনি অবগত নন। ওয়াশিংটনকে যদি এ সম্পর্কে অবগত না করা হতো, সেক্ষেত্রে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও অর্থহীন হয়ে যেতে পারত। ফোর্টি কমিটি আর জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এখনকার ভয়ঙ্কর যোগসূত্রের মতো করেই সিআইএ-ওয়াশিংটন ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় অভ্যুত্থানটি সম্ভব করে তুলেছিল।

    ফিলিপ চেরি ও জেনারেল জিয়াউর রহমানের বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন হাজির করে: মার্কিন সরকারের পক্ষে কে চেরিকে নির্দেশনা দিচ্ছিলো। তার এই নির্দেশনা কি ফোর্টি কমিটি থেকে দেওয়া হয়েছিল? নাকি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে থাকা হেনরি কিসিঞ্জারের দল সরাসরি এই নির্দেশনা দেয়? পরবর্তী নিবন্ধে এসব প্রশ্ন মীমাংসার চেষ্টা করা হবে।

  24. মাসুদ করিম - ২১ ডিসেম্বর ২০২১ (৩:৪০ পূর্বাহ্ণ)

    তারেক-কোকোর হাত ধরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন খালেদা জিয়া: ফখরুল
    https://bangla.bdnews24.com/politics/article1987317.bdnews
    দুই শিশু সন্তান তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর হাত ধরে খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

    সোমবার বিকালে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, তাকে ‘অন্যায়’ ও ‘বেআইনিভাবে মিথ্যা মামলায়’ কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে আওয়ামী লৗগ ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ শক্তিতে পরিণত হয়েছে।

    “কারণ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এদেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে দুই শিশুর হাত ধরে, আজকে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর হাত ধরে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।”

    খালেদা জিয়া ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন দাবি করে সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে আপনারা তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রেখেছেন। এখন তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়াই করছেন, মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।”

    স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের ক্ষণে দেশের যেসব উন্নয়ন হয়েছে বলে সরকার দাবি করছে, তার সবটাকে খারিজ করে দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই ৫০ বছরে গরিব আরও গরিব হয়েছে। এখানে কিছুসংখ্যক আওয়ামী লীগের সহায়তাপুষ্ট, মদদপুষ্ট কিছু বড়লোক আরও ধনী হয়েছে।

    “আজকে আমাদের দেশের কৃষকেরা তারা তাদের পণ্যের দাম পাচ্ছে না, শ্রমিকেরা তাদের শ্রমের ন্যায্য মজুরি পাচ্ছে না।”

    মহানগর নাট্যমঞ্চে বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আলোচনা সভার প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

    বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, মহানগর দক্ষিনের রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের আমিনুল হক, যুব দলের সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, কৃষক দলের হাসান শহিদুল ইসলাম বাবুল, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব বক্তব্য দেন।

  25. মাসুদ করিম - ২১ ডিসেম্বর ২০২১ (৪:১৩ অপরাহ্ণ)

    খালেদা জিয়া পরবর্তী বিএনপির ভবিষ্যত
    https://opinion.bdnews24.com/bangla/archives/68290

    বিএনপি তার ইতিহাসের সবচেয়ে ক্রান্তিলগ্ন পার করছে বর্তমান সময়ে। ১/১১ এর পর থেকে বিএনপির রাজনৈতিক সংকটে নিপতিত হওয়ার সূত্রপাত। দিন যত গেছে সংকটতো কাটেইনি বরং সময়ের সাথে সাথে তা আরো ঘনীভূত হয়েছে।

    সমস্ত সংকট এবং নানাবিধ চাপ সত্ত্বেও যার ওপর মানসিকভাবে নির্ভর করে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থেকেছেন, তিনি হলেন দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এক সামরিক অভ্যুত্থানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বেগম জিয়া বিএনপিতে যোগ দেন।

    জিয়া নিহত হওয়ার পর দলে নেতৃত্বের সংকট তৈরি হয়। একই সাথে শুরু হয় নানাবিধ উপদলীয় কোন্দল। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ১৯৮৪ সালের ১০ মে খালেদা জিয়াকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলের চেয়ারপার্সন নির্বাচিত করা হয়। সেই সময় থেকে খালেদা জিয়ার অনেকটা একক নির্দেশনা ও পরিচালনায় দলটি পরিচালিত এবং বিকশিত হয়েছে।

    খালেদা যখন দলের প্রধান হন তখন তিনি বিএনপির মত একটি প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দিতে পারবেন কিনা- এ প্রশ্ন অনেকের মধ্যেই জেগেছিল। এমনকি বিএনপির কিছু সিনিয়র নেতা সেসময় প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ খালেদা জিয়াকে সামনে রেখে দলের নেতৃত্ব নিজেদের হাতে রাখতে পারবেন বলে মনে করেছিলেন।

    খালেদা জিয়া এমন একটা সময়ে দলের প্রধান হন যখন দেশে সামরিক শাসন চলছে। বিএনপির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আব্দুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করেছেন। বিভিন্ন দলছুট রাজনীতিবিদ এবং কিছু সুবিধাবাদী ব্যক্তি নিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতার কেন্দ্রে বসে গড়ে তোলা এ দলটি জিয়ার অনুপস্থিতিতে টিকে থাকবে কিনা, এ প্রশ্ন তখন বিদগ্ধজনদের মনে।

    দলের প্রধান হওয়ার সাথে সাথেই খালেদা জিয়ার সামনে চ্যালেঞ্জ হাজির হয় বিএনপিকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে নিয়ে যাওয়া। এরশাদ প্রথমে ভেবেছিলেন, গৃহবধু পটভূমি থেকে উঠে আসা খালেদার পক্ষে বিএনপির মত একটি দলকে নিয়ে—যে দলে সুবিধাবাদী নেতাকর্মীদের একটা উল্লেখযোগ্য অবস্থান রয়েছে- তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করা সম্ভব হবে না।

    জিয়ার পথ ধরে এরশাদও বিএনপিসহ অন্যান্য দল থেকে নেতাকর্মী নিয়ে এসে দল গঠনের উদ্যোগ নেন। এ প্রক্রিয়ায় মওদুদ আহমেদসহ বিএনপি এবং তার অঙ্গসংগঠনের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মী এরশাদের সাথে হাত মেলান। অন্য যেকোন রাজনৈতিক দলের চেয়ে বিএনপি থেকেই বেশি নেতাকর্মী এরশাদের দলে যোগ দেন।

    এ সমস্ত কিছু বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করে। জিয়াউর রহমান নিহত হওয়া এবং সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর ফলে বিএনপির নেতাকর্মীরা এমনিতেই ছিলেন মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। এর সবকিছু এরশাদকে একটা মানসিক স্বস্তি এনে দিয়েছিল এই ভেবে যে, অন্তত বিএনপির পক্ষে খালেদার নেতৃত্বে আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হবে না।

    এ ধরনের একটি দলকে নিয়েই খালেদা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৫ দলের সাথে যুগপৎ এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সামিল হন। ১৯৮৬ সালে আন্দোলন যখন তুঙ্গে সেই মুহূর্তে হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগ, সিপিবি, ন্যাপ (মো) সহ ১৫ দলীয় জোট থেকে আটটি দল এরশাদ ঘোষিত সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়।

    জামায়াতও সেসময় তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে নির্বাচনে অংশ নেয়। তখন জামায়াতের রাজনীতির মূল লক্ষ্য ছিল সেক্যুলার এবং বামপন্থি দলগুলোর কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করা।

    সময়টা তখন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ‘শীতল যুদ্ধের’ সময়। জামায়াত তখন জাতীয় রাজনীতিতে সিপিবিকে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে। ফলে সিপিবি যেহেতু নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এ বিবেচনায় এবং সেক্যুলার বামপন্থি দলগুলোর সাথে পাশাপাশি বসার কথা চিন্তা করে জামায়াত নির্বাচনে অংশ নেয়।

    আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য প্রধান রাজনৈতিক দল নির্বাচনে চলে যাওয়ায় তা বিএনপির ওপর প্রচণ্ড চাপ তৈরি করে। বিএনপি নেতৃত্ব কোন সিদ্ধান্ত নেবেন সেটা বুঝে উঠতে পারছিলেন না। খালেদা তখন একক সিদ্ধান্তে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন এবং যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তাদেরকে ‘জাতীয় বেইমান’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বিএনপি নেতৃত্ব এজন্য ওসময় তাকে ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে অভিহিত করে।

    বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও নির্বাচন প্রতিহত করতে পারেনি। তবে বিএনপির নির্বাচন বর্জন রাজনীতিতে খালেদার একটা ভিন্ন ইমেজ তৈরি করে—যেটা পরবর্তীতে একটা লম্বা সময় তাকে রাজনীতিতে বিশেষ সুবিধা দেয়।

    নির্বাচন পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ, সিপিবিকে বাদ দিয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলন পরিচালনা করতে গিয়ে বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা স্পষ্ট হয়। বিএনপি নেতৃত্বাধীন সাত দলীয় জোটের বাকি ছয়টি দল ছিল সাইনবোর্ড সর্বস্ব। এছাড়া খালেদা সাথে পেয়েছিলেন রাশেদ খান মেনন, নির্মল সেনের নেতৃত্বে ১৫ দল থেকে নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়ে বের হয়ে আসা পাঁচটি ছোট বাম দলকে। কিন্তু এদেরকে নিয়ে খালেদার পক্ষে এককভাবে এরশাদবিরোধী আন্দোলনকে পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।

    আওয়ামী লীগ, সিপিবিসহ যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল তারা ১৯৮৭ সালে সংসদ থেকে পদত্যাগ করে মাঠের আন্দোলনে যোগ দিলে আন্দোলনে আবার গতি পায়। এরই ধারবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে সামরিক শাসক এরশাদের পতন ঘটে।

    এরশাদ সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট মওদুদ আহমদ তার চলমান ইতিহাস: জীবনের কিছু সময় কিছু কথা, ১৯৮৩-১৯৯০ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন (পৃষ্ঠা ৪৮০-৪৮১), রাষ্ট্রীয় অন্য যেকোন প্রতিষ্ঠানের চেয়ে সেনাবাহিনীর ওপর নির্ভর করে এরশাদ দেশ চালিয়েছেন। আন্দোলন তুঙ্গে উঠলে জেনারেলরা এরশাদের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেন। ফলে পদত্যাগ করা ছাড়া এরশাদের সামনে আর কোন বিকল্প খোলা ছিল না।

    আন্দোলনের শেষ দিনগুলিতেও বিএনপি নেতা ওবায়দুর রহমানসহ ছাত্রদলের কিছু শীর্ষ নেতা এরশাদের দলে ভিড়েন। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মী জাতীয় পার্টিতে চলে যাওয়ায় সাংঠনিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়া বিএনপির সামনে এরশাদ পতনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের চ্যালেঞ্জ হাজির হয়।

    সেসময় অনেকের মাঝে এ ধারণা জন্মেছিল যে বিএনপির পক্ষে বোধহয় নির্বাচনে জয় লাভ করা সম্ভব হবে না। বিএনপির নেতাদের অনেকে নার্ভাস ছিলেন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে খালেদার নেতৃত্বে বিএনপি ১৪০টি আসনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। এ বিজয় খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ করে দেয়।

    খালেদার নেতৃত্বে বিএনপি প্রথম ক্ষমতা কেন্দ্রের বাইরে থেকে রাজনীতির চর্চা করে সামরিক শাসন বিরোধী সফল আন্দোলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। তার নেতৃত্বেই প্রথমবারের মত ক্ষমতার বাইরে থেকে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়। বস্তুত এ দুটি বিষয় জিয়ার পরিচয় ছাপিয়ে নিজস্ব ইমেজে খালেদা জিয়ার নেত্রী ইমেজ নির্মাণ করে।

    খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী হন তখন বিশ্বে নারী রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান হয়েছেন হাতে গোণা মাত্র কয়েকজন। নারী-পুরুষ সমাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিদার পাশ্চাত্যের অনেক দেশই তাদের রাষ্ট্র পরিচলানা করার জন্য যোগ্য নারী নেতৃত্ব গড়ে তুলতে পারেনি।

    বাংলাদেশের মত অর্থনৈতিকভাবে পশ্চাৎপদ এবং সামাজিকভাবে অতীব রক্ষণশীল মুসলিম প্রধান দেশে একজন নারীকে সরকার প্রধান হিসেবে মেনে নেওয়ার মানসিকতা তখনো জনগণের একটা উল্লেখযোগ্য অংশের মাঝে গড়ে উঠেনি। এমনকি খালেদা জিয়া রাজনীতিতে আসার আগে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মীকে শেখ হাসিনার দলীয় প্রধান হওয়ার বিষয়টা নিয়ে কটাক্ষ করতে দেখা যেত। ‘ইসলামপন্থি’ দলগুলো নারী নেতৃত্ব ‘হারাম’ বলে বিএনপির সাথে তখনো জোট বাঁধেনি।

    এমতাবস্থায় খালেদা জিয়া সরকার প্রধান হয়ে প্রমাণ করে দেন যে, দরিদ্র মুসলিম প্রধান দেশ হলেও বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী নারীকে সরকার প্রধান হিসেবে গ্রহণ করার মানসিকতা অর্জন করেছে—যা তখন পশ্চিমের উদার গণতান্ত্রিক সেক্যুলার রাষ্ট্রের অনেককেই বিস্মিত করে।

    শুধু রাজনৈতিক রক্ষণশীলতা নয়, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি সামাজিক রক্ষণশীলতাতেও ধাক্কা মারেন। সনাতন ধর্ম প্রভাবিত সংস্কৃতির প্রভাবে আবহমান কাল ধরে শ্রেণি-নির্বিশেষে বাংলাদেশের বিধবা নারীরা সাদা শাড়ি পরতেন। খালেদা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সে ঐতিহ্য ভেঙ্গে ফেলেন। সেসময় সমালোচকদের নানা সমালোচনা উপেক্ষা করে তিনি রঙিন শাড়ি পড়া শুরু করেন। ধীরে ধীরে যার একটা সুদূরপ্রসারী প্রভাব বাংলাদেশের সমাজ কাঠামোতে পড়ে–ক্রমশ বিধবা নারীদের সাদা শাড়ি পড়ার প্রথার বিলুপ্তি ঘটে।

    বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার সামনে রাজনৈতিক নেত্রী থেকে ‘Stateswoman’ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা হাজির হয়। কিন্তু বিষয়টা তিনি উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হন। শুরুতেই তিনি বিতর্কিত ব্যক্তি আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করে বিতর্কের জন্ম দেন।

    এসময় খালেদা জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে উঠা প্রবল আন্দোলনের সম্মুখীন হন এবং এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হন। কিন্তু সবচেয়ে বড় ভুলটা তিনি করে বসেন- মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের অসম্মতি জানানোর মধ্যে দিয়ে।

    ১৯৯১ সালে অনেকেই যখন মনে করছিলেন সাংগঠনিকভাবে দুর্বল বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারবে না, তখন জনগণের একটা বড় অংশ বিএনপিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে এসে খালেদাকে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্মান এনে দেয়। কিন্তু ক্ষমতায় এসে তিনি সে জনগণের ওপর আস্থা রাখতে পারেননি।

    প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় টিকে থাকাকে খালেদা ‘Stateswoman’ হওয়ার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করলেন। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ, বামপন্থি এবং জামায়াত যুগপৎভাবে ভিন্ন ভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে আন্দোলন গড়ে তোলে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে যে প্রশাসনের উপর নির্ভর করে তিনি ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন, সে প্রশাসন তার প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলে, এরশাদের মত তার সরকারের পতন ঘটে। এর মধ্যে দিয়ে তিনি অনেকটা পতিত এরশাদের কাতারে নেমে আসেন।

    ক্ষমতা হারানোর পর খালেদা যে সামরিক শাসক এরশাদের অধীনে নির্বাচন না করার জন্য ‘আপসহীন’ খেতাব পান, সেই এরশাদের সাথেই ৪ দলীয় জোট গড়ে তোলেন। এতে যে তার ‘আপসহীন’ ইমেজ প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে সেটা তিনি বিবেচনায় নেননি। যে জামায়াত তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য আন্দোলন করেছিল তাদের সাথেও তিনি জোটবদ্ধ হন। পরবর্তীতে অন্যান্য ‘ইসলামপন্থি’ দলগুলোর সাথেও বিএনপির নৈকট্য বাড়ান।

    এর মধ্য দিয়ে ‘ইসলামপন্থি’ দলগুলোর নৈতিক দেউলিয়াত্ব জনগণের সামনে স্পষ্ট হয়। কেননা যারা এতদিন নারী নেতৃত্ব ‘হারাম’ বলে আসছিলেন, সে-ই তারাই নারী নেত্রীর অধীনে রাজনীতি করতে সম্মত হন। কিন্তু খালেদার ৯/১১ পরবর্তী আন্তর্জাতিক রাজনীতির বাস্তবতা বুঝতে পারার ব্যর্থতা থেকে ‘ইসলামপন্থি’ দলগুলো সাথে জোটবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত বিএনপির সাথে পশ্চিমা দুনিয়ার দূরত্ব তৈরি করে। তাইওয়ানের সাথে ব্যবসায়িক সূত্র ধরে দূরত্ব তৈরি হয় বিএনপির দীর্ঘদিনের মিত্র চীনের সাথেও।

    খালেদা জিয়ার ক্ষমতার দ্বিতীয় মেয়াদে প্রথম মেয়াদের তুলনায় দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার ঘটে। পুত্র তারেক রহমানকে রাজনীতিতে আনার ফলে দলের মধ্যে সমান্তরাল নেতৃত্ব তৈরি হয়, যা খালেদার নেতৃত্বকে দুর্বল করে। এ সময়কালে ‘ইসলামপন্থি’ সন্ত্রাসবাদের ব্যাপক উত্থান, ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা খালেদা এবং বিএনপির রাজনীতিকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তদুপরি দ্বিতীয় মেয়াদেও তিনি প্রথম মেয়াদের মত অনেকটা একই ধরনের ভুল করে বসেন।

    একটু ভিন্নভাবে দলীয় ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা রেখে নির্বাচন করার উদ্যোগ নেন খালেদা। ফলে তার আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত জেনারেল মঈনের নেতৃত্বে ১/১১ এর ঘটনা ঘটে, যার খেসারত বিএনপিকে এখনো বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। যে দলকে খালেদা এরশাদ শাসনামলের দুঃসময় থেকে টেনে তুলে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেন, জাতীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির গতিপ্রকৃতি উপলব্ধি করতে পারার ব্যর্থতার ফলে সে দল বিএনপিকেই তিনি তার ইতিহাসের সবচেয়ে সংকটময় অবস্থায় নিপতিত করেন।

    এরশাদের হাতে ক্ষমতাচ্যুতি ঘটার পর দলকে টেনে তুলতে পারলেও ১/১১ পরবর্তী সংকট থেকে খালেদা দলকে আর বের করে আনতে পারেননি। ২০১৪ সালের বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনের পরে তিনি শেখ হাসিনার মত আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটাতে পারেননি।

    জীবনের একটা পরিণত সময়ে এসে এসময়ে যেন তিনি ক্লান্তি বোধ করছিলেন। এরশাদ আমলের মত দীর্ঘ আন্দোলন, সংগ্রাম গড়ে তোলার মত ধৈর্য অথবা শারীরিক বা মানসিক কোন অবস্থাই যেন তার ছিল না। তাই অনেকটা যেন শর্টকাট পথ হিসেবে জামায়াতের সাথে মিলে দুই দুইবার পেট্রোল বোমা নির্ভর সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনে দলকে নিয়ে যান-যার লক্ষ্যবস্তু করা হয় সাধারণ আমজনতাকে।

    অধিকাংশ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়ে যাওয়ার পর জামায়াত জোটে নিস্ক্রিয় হয়ে যায়। খালেদা বুঝতে পারেন গণতন্ত্রের জন্য নয়, সুবিধাবাদী জামায়াত বিএনপির জনসমর্থনের শক্তিকে ব্যবহার করেছে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে শনাক্ত তাদের দলীয় ব্যক্তিদের রক্ষা করার জন্য। জামায়াতের কৌশল বোঝার ব্যর্থতার চরম মাশুল দিতে হয় বিএনপিকে।

    সরকারের প্রবল চাপের মুখে পড়ে দল অনেকটা নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় খালেদা চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান। অনেকে ভেবেছিলেন তিনি হয়ত আর ফিরে আসবেন না। কিন্তু খালেদা দেশে ফিরে এসে তার বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির মামলার রায় মোকাবেলার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি হয়ত ভেবেছিলেন, যে দলের পেছনে তিনি তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় ব্যয় করেছেন, যাকে অবলম্বন করে জিয়া নিহত হওয়ার পর দলটি এত দীর্ঘ পথ চলেছে—সে দলের নেতাকর্মীরা তিনি গ্রেপ্তার হলে আর যাই হোক সর্বস্ব দিয়ে মাঠে নামবেন, তাকে মুক্ত করার জন্য।

    এ আত্মবিশ্বাস থেকেই খালেদা দেশে ফিরে আসেন। তিনি হয়ত ধরে নিয়েছিলেন একমাত্র তার গ্রেপ্তারের মধ্যে দিয়েই সরকার বিরোধী আন্দোলন দাঁড়াবে—বিএনপির নেতৃত্বে জনগণ হয়ত তার মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নামবে। কিন্তু তিনি অবাক হয়ে দেখলেন, জামায়াত নেতাদের মুক্তির দাবিতে যে দল এত রক্ত ঝরালো, তার নিজের অতি প্রিয় সেই দল তার মুক্তির জন্য কিছু লোক দেখানো ছাড়া- এক অর্থে কোন আন্দোলনই করল না।

    শুধু তাই নয়, তিনি যে সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না বলেছিলেন, তিনি জেলে যেতে না যেতেই বিএনপির নেতারা দলকে সেই সরকারের অধীনেই নির্বাচনে নিয়ে যায়। এ সমস্ত কিছুই জীবন সায়াহ্নে এসে খালেদার ওপর প্রচণ্ড মানসিক চাপ সৃষ্টি করে।

    গত ৩৭ বছর ধরে বিএনপির সমস্ত কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে খালেদা জিয়াকে কেন্দ্র করে। তাকে আঁকড়ে ধরেই বিএনপি রাজনীতির নানা উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। সেই তিনি এখন গুরুতর অসুস্থ।

    বেশ অনেকদিন ধরে খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড কিছুদিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে তিনি লিভার সিরোসিসসহ নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত। খালেদা জিয়াকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার মত প্রযুক্তি বাংলাদেশে না থাকার ফলে তারা তাকে দ্রুত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য অথবা জার্মানিতে পাঠানোর সুপারিশ করেছে।

    দীর্ঘ সময় ধরে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবল চাপের মুখে থাকা বিএনপি তাদের দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানোর ইস্যুকে কেন্দ্র করে আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এটিও আরো অনেক উদ্যোগের মতই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। জনগণের বড় অংশকে সম্পৃক্ত করতে পারা তো দূরের কথা, দলটি তার মাঠ পর্যায়ের সব নেতাকর্মীদেরই এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাস্তায় নামাতে পারেনি।

    জনগণের পালস বুঝতে না পারা বা জনগণের মনোজগতকে ঠিক মত পড়তে না পারার বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বের যে প্রবল সীমাবদ্ধতা, সেটি আন্দোলন গড়ে তুলতে পারার ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে আরেকবার তারা স্পষ্ট করে।

    খালেদা জিয়া যে হাসপাতালের চিকিৎসা নিচ্ছেন, অর্থাৎ এভারকেয়ার, বাংলাদেশের উন্নয়নের নানা জয়গান গাওয়া সত্ত্বেও চরম বাস্তবতা হচ্ছে, এ ধরনের হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সামর্থ্য দেশের ৯০ শতাংশ জনগোষ্ঠীরই নাই। ভিআইপি কেবিনতো দূরের কথা, এ হাসপাতালটির সাধারণ কেবিনে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার সামর্থ্য দেশের ৯৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীর নেই।

    বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ক্ষেত্রেও পরিসংখ্যান দুটি কম-বেশি একই রকম। অপরদিকে, দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদ, আমলা এবং ব্যবসায়ী-পুঁজিপতিদের এভারকেয়ারের মত হাসপাতালে ভরসা রাখতে না পারাটা দেশের আমজনতার স্বাস্থ্য সেবার মানের চিত্র আসলে কতটা করুণ, সে দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করে।

    এখন প্রশ্ন হলো, খালেদা জিয়া পরবর্তী সময়ে বিএনপির রাজনীতি কি টিকে থাকবে? বিএনপি আওয়ামী লীগ, জামায়াত বা সিপিবির মত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠা দল নয়। বিএনপি গঠন করা হয়েছে ক্ষমতার কেন্দ্রে বসে, কিছু সামরিক/বেসামরিক আমলার সহায়তা নিয়ে। এ কারণে বিএনপি বিরোধী রাজনীতি যারা করেন তারা বিএনপিকে নিয়ে একটি মিথ তৈরি করেন।

    মিথটি হল বিএনপি গঠিত হয়েছে- “উত্তরপাড়া বা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেনাবাহিনীর সমর্থন নিয়ে’। বিএনপির পিছনে সেনা আমলাতন্ত্রের আশির্বাদ রয়েছে।” বিএনপির রাজনীতির বিরোধিরা এ মিথের জন্ম দিলেও এর সবচেয়ে বেশি ভোক্তা কিছুদিন আগ পর্যন্ত ছিল বিএনপির নেতাকর্মীরা। অবশ্য সম্প্রতি, বিশেষত ১/১১ এর পর থেকে আস্তে আস্তে তাদের অনেকে বুঝতে পারছেন বিষয়টা সঠিক নয়। এটা তাদের এতদিন যাবত গড়ে উঠা মনোজাগতিক নির্ভরতাকে ধাক্কা দিলেও সেটি তাদের রাজনীতির মূল স্পিরিটকে নষ্ট করেনি।

    কিছু সামরিক আমলার সহায়তায় জিয়ার রাজনৈতিক দল গঠন অন্য সেনা সদস্যদের ক্ষুদ্ধ করে। যারা জিয়ার এ প্রক্রিয়ার প্রতি ক্ষুদ্ধ হয়েছিলেন তারা কেবল কোনও একটি বিশেষ মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন না। ক্ষুদ্ধ হওয়া অফিসারদের মধ্যে একদিকে যেমন ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীরা, তেমনি ছিলেন পাকিস্তান ফেরতরা। একই সাথে ছিলেন মুসলিম জাতীয়াবাদ বা ‘ইসলামপন্থা’য় বিশ্বাসীরা এবং জাসদ ধারার বামপন্থিরা। এমনকি পেশাগত ঈর্ষা থেকেও অনেকে জিয়ার প্রতি ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন। তারা সকলেই চাচ্ছিলেন জিয়াকে ক্ষমতাচ্যুত করতে। ফলে জিয়ার বিরুদ্ধে ১৯টির ক্যু সংগঠিত হয়—যার ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় সহস্রাধিক সেনা সদস্য নিহত হন। ২০ তম সেনা অভ্যুত্থানে জিয়া নিহত হন।

    জিয়ার স্ত্রী খালেদা দুই দুইবার ক্ষমতাসীন হলেও রহস্যজনক কারণে জিয়া হত্যার বিচার বা এর তদন্তের কোন উদ্যোগ নেননি। বিএনপির নেতাকর্মী, বুদ্ধিজীবীদের মাঝে এ নিয়ে কোন আগ্রহ দেখা যায়নি। ১৫ অগাস্টের বিয়োগান্তক ঘটনা যেমন দেশি-বিদেশি নানা গবেষক নানা আঙ্গিক থেকে বোঝার চেষ্টা করেছেন, জিয়া হত্যাকাণ্ড নিয়ে সেটা কারো মাঝে পরিলক্ষিত হয়নি। এর মধ্যে দিয়ে বিএনপি সংশ্লিষ্ট বুধিজীবীদের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং নৈতিক দুর্বলতা ফুটে উঠে।

    চলমান ইতিহাসে মওদুদ আহমদ লিখেছেন (পৃঃ ২১৪), “জিয়া হত্যার বিচার বা সেই হত্যার পেছনে আর কোন ষড়যন্ত্র ছিল কিনা সেটার আর কোন সুরাহা হয়নি।” ফলে এর সাথে এরশাদ সংশ্লিষ্ট ছিলেন কিনা সেটা আর প্রমাণ করা যায়নি। সেটা করার মতো উদ্যোগ নেওয়ার সাহস এবং মেধা দুটোই বিএনপির মাঝে প্রবল ভাবে অনুপস্থিত। আর এ সাহসিকতার অভাবের ফলেই বিএনপিকে এরশাদ মনোনীত বিচারপতি সাত্তারকে তাদের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসেবে মেনে নিতে হয় (মওদুদ আহমদ, পৃঃ ২১৩)।

    সাত্তার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে এরশাদ তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। আবার খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামলের শেষ দিকে জেনারেল নাসিমের অসন্তোষের বহির্প্রকাশ জাতি প্রত্যক্ষ করে। আবার তার দ্বিতীয় ক্ষমতার মেয়াদকালের শেষে জেনারেল মঈন কর্তৃক ১/১১ এর ঘটনা ঘটে। এর থেকে যে বিষয়টা স্পষ্ট হয় সেটা হলো, সামরিক/বেসামরিক আমলাতন্ত্রের সমর্থন ছাড়াও বিএনপি নিজের পায়ে মূলধারার দল হিসেবে টিকে থাকতে সক্ষম।

    আগামী দিনেও বিএনপি মূলধারার দল হিসেবে টিকে থাকবে কিনা- এটি নির্ভর করছে দলটি যে রাজনৈতিক মতাদর্শ অনুসরণ করছে সমাজ কাঠামোয় এর প্রভাব কতটুকু তার উপর। বিএনপির রাজনৈতিক মতাদর্শের উৎস মুসলিম জাতীয়তাবাদ। ভারতীয় উপমহাদেশে জিন্নাহর হাত ধরে মুসলিম জাতীয়তাবাদের জন্ম। পরবর্তীতে মাওলানা ভাসানী এবং জুলফিকার আলী ভুট্টো মুসলিম জাতীয়তাবাদের সাথে তৎকালীন প্রভাবশালী ধারণা সমাজতন্ত্রের মিশ্রণ ঘটিয়ে ইসলামী সমাজতন্ত্রের কথা বলেন।

    জিন্নাহ ছাড়াও ভাসানী এবং ভুট্টোর তাত্ত্বিক প্রেরণার উৎস আরব জাতীয়তাবাদী সিরিয়ার দার্শনিক মিশেল আফলাক, যিনি বাথ সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্ম দেন। এ মতাদর্শের মূল বিষয় হলো ইসলামী পরিচয় এবং রেটোরিক আরব জাতীয়তাবাদী (এবং সমাজতান্ত্রিক) আন্দোলনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আফলাকের মতে, ইসলাম হচ্ছে মুসলমানদের জন্য ধর্ম, কিন্তু এটি একই সাথে ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত আরববাসীর পরিচয় এবং সংস্কৃতির অংশ।

    এ ধারণার বিশ্বাসীরা রাষ্ট্র এবং সমাজে শরীয়া আইন চান না, শুধু কিছু ইসলামিক রেটোরিক, প্রত্যয় এবং শ্লোগান ব্যবহার করতে চান। ক্ষেত্র বিশেষে ইসলামকে জাতিগত পরিচয়ের অন্তর্ভুক্ত করতে চান। একই সাথে তারা জনমানস এবং জীবনযাপন প্রক্রিয়ার অনেকটা পশ্চিমা ধারার মত আধুনিকায়নও চান।

    জিন্নাহ এবং ভাসানীর হাত ধরে মুসলিম জাতীয়তাবাদের যে বিবর্তন সেটির আরেকটু আধুনিক সংস্করণ দাঁড় করান জিয়াউর রহমান তার ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে’র ধারণায়—যেখানে ভূ-কেন্দ্রিক জাতীয়াতাবাদের কথা বলা হলেও কিছু ধর্মভিত্তিক রেটোরিক, প্রত্যয় এবং শ্লোগান এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

    এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে সমাজ কাঠামোয় এ ধরনের চিন্তার একটা শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে। বাংলাদেশের সেক্যুলার আন্দোলন এ ধরণের চিন্তাধারাকে সমাজ কাঠামো থেকে দূর করতে তো পারেইনি, বরং তাদের অনেকেই এ চিন্তাধারা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন, বা এ চিন্তাধারার সাথে আপস করেছেন। এ সূত্র ধরে আওয়ামী লীগের মাঝেও ধর্মভিত্তিক শ্লোগান এবং প্রত্যয় ব্যবহারের ঝোঁক আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। আবার “ইসলামপন্থিরা” মনে করেন এ ধারার প্ল্যাটফর্মের উপস্থিতি তাদের রাজনীতির বিকাশের সহায়ক।

    তাহলে দেখা যাচ্ছে সমাজ কাঠামোতে বিএনপির রাজনৈতিক মতাদর্শের একটা প্রভাবশালী অবস্থান রয়েছে। এ মতাদর্শের অনুসারীরা বিএনপিকেই এখন পর্যন্ত এ রাজনীতির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্লাটফর্ম মনে করে আসছে।

    নির্ভরযোগ্য রাজনৈতিক প্লাটফর্ম গড়ে উঠে দুই প্রক্রিয়ায়। এর একটি হলো- ক্যারিশমেটিক নেতার নেতৃত্বে জাতীয় পর্যায়ে আন্দোলন গড়ে তোলার সক্ষমতার ওপর। উপমহাদেশে এভাবে গড়ে উঠেছে গান্ধীর হাত ধরে কংগ্রেস, জিন্নাহ নেতৃত্বে মুসলিম লীগ এবং বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে আওয়ামী লীগ।

    আর অপরটি হলো- রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। উদাহারণস্বরুপ বলা যায় ইরাকের সাদ্দাম হোসেন, লিবিয়ার গাদ্দাফি এবং সিরিয়ার হাফেজ আল আসাদের কথা। জনপ্রিয়তা অর্জন না করার ফলে এরশাদের জাতীয় পার্টিকে বিএনপির হুবহু নকল করে গড়ে তোলা হলেও নির্ভরযোগ্য প্লাটফর্ম হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনি।

    ভবিষ্যতে খালেদার অনুপস্থিতিতে উপরে উল্লিখিত দুটি প্রক্রিয়ার যেকোন একটি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি যে মতাদর্শে বিশ্বাস করে সে ধারার বিকল্প প্লাটফর্ম গড়ে উঠবে না। ফলে বিএনপিই মূলধারার দল হিসেবে থেকে যাবে। যদিও দলে ছোটখাট ভাঙ্গন থেকে শুরু করে নানা মহল থেকে বিকল্প গড়ার প্রক্রিয়া পরিলক্ষিত হতে পারে।

  26. মাসুদ করিম - ২১ ডিসেম্বর ২০২১ (৪:২২ অপরাহ্ণ)

    https://twitter.com/urumurum/status/1472608519413063683
    << বিএনপি-র রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণতম হয়ে ওঠার প্রথম শর্ত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ধুমসে অপমান করা।>>

    <<মুখ খারাপ করতে চাই না, কিন্তু মুখ খারাপ করতেই হয়, তারেক জিয়া শিশু মুক্তিযোদ্ধা — খালেদা জিয়া প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা — এখন ফখরুল খুঁড়ে বের করতে পারে কিনা দেখা যাক, সেসময় খালেদার পেটে কেউ ছিল কিনা, তাহলে তাকে পেটে মুক্তিযোদ্ধা ঘোষণা করে সে তাফালিং-এর চূড়ায় উঠে যেতে পারত।>>

    https://twitter.com/urumurum/status/1473327290910052353
    <<খালেদার মৃত্যুর পরেই বিএনপির রাজনীতি নতুন করে জমে উঠবে। এই রাজনীতি জমে উঠতে গিয়ে বিএনপি হয়তো ভাঙ্গবে। সেই ভাঙ্গন কি মুক্তিযোদ্ধা অমুক্তিযোদ্ধা এই হিসেবে ভাঙ্গবে? অমুক্তিযোদ্ধা অংশে ফখরুল থাকবে, তাই খালেদা-তারেক-কোকো মুক্তিযুদ্ধের কুচক্রে কান ঝালাপালা করছে ফখরুল।>>

  27. মাসুদ করিম - ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ (৪:২৫ পূর্বাহ্ণ)

    খালেদা জিয়ার বহুল আলোচিত ১০টি অমানবিকতার ইতিহাস
    https://www.dhakatv.net/index.htm/975/

    খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য মানবিকতার কথা বলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে যে মানবিক রাজনীতির উর্ধ্বে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দেখাতে হবে। এই মানবিক দৃষ্টি দেখিয়ে খালেদা জিয়াকে যেন উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয় সেজন্য শুধু বিএনপি নয় বিভিন্ন সুশীল মহলের দাবি জানাচ্ছে।

    কিন্তু মানবিকতার প্রশ্ন যখন আসে তখন স্বাভাবিকভাবেই আসে যে খালেদা জিয়া নিজে কতটা মানবিক ছিলেন? ১০ বছর তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সেসময় তিনি দেশের রাজনীতিতে এবং জনগণের সাথে কতটুকু মানবিক আচরণ করেছিলেন?

    খালেদা জিয়ার ১০ বছরের শাসনামলে ১০টি বহুল আলোচিত অমানবিকতার ইতিহাস তুলে ধরা হলো:

    ১. ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা: ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা সুস্পষ্টভাবে ছিল বিএনপি-জামায়াতের এক মাস্টারপ্ল্যান। আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করা এবং শেখ হাসিনাকে চিরতরে নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য গ্রেনেড হামলার এই ঘৃণ্য ঘটনা হয়েছিল। এটি আজ আদালতের রায়ে প্রমাণিত।

    খালেদা জিয়া তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আদালতের রায়ে দেখা যায়, রাষ্ট্রের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করা হয়েছিল সে সময়। খালেদা জিয়া এই গ্রেনেড হামলার পর ন্যূনতম দুঃখ প্রকাশ করেননি বরং তিনি তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনা ‘ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন’ এমন উদ্ভট, অমানবিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেছিলেন।

    বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নয়, বিশ্বের যে কোন দেশের রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনাগুলোর আলোকে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় বিরোধী দলের ওপর চালানো নৃশংসতা ও অমানবিকতার এক জঘন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয় ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনাকে।

    [খালেদা জিয়ার বহুল আলোচিত ১০টি অমানবিকতার ইতিহাস]
    ২. ১৫ আগস্টের ভুয়া জন্মদিন পালন: ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার বিয়োগান্তক দিন। এই দিনে ভুয়া জন্মদিন পালন করেছিলেন খালেদা জিয়া। এবং শুধু ভুয়া জন্মদিন পালন করেই তিনি ক্ষান্ত হননি, ভুয়া জন্মদিনের তিনি বড় বড় কেক কাটার উৎসব করেছিলেন যেন শোকের আবহ নষ্ট হয়।

    একজন মানুষ কতটা অমানবিক হলে রাষ্ট্রের স্থপতির শাহাদাৎ দিবসে ভুয়া জন্মদিনের উৎসব করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্থানি সামরিক কর্মকর্তা কর্নেল জানজুয়ার সাথে স্বেচ্ছায় থেকে যাওয়ার কারণে যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে খালেদা জিয়াকে গ্রহণ করেননি তার স্বামী জিয়াউর রহমান।

    বঙ্গবন্ধু নিজের মেয়ে বলে স্বীকৃতি দেয়ায় সেই খালেদা জিয়াকে গ্রহণ করে জিয়া। আর তার প্রতিদান খালেদা জিয়া দিয়েছেন ১৫ আগস্টে কেক কেটে! এটিই খালেদা জিয়ার অমানবিকতার আরেকটি উদাহরণ।

    ৩. অক্টোবরের নির্বাচনের পর সারাদেশে তান্ডব: ২০০১ এর অক্টোবরের সেই ম্যানিপুলেটেড নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী হয় বিএনপি-জামায়াত। এই বিজয়ের পর পরই বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সারাদেশে তাণ্ডব, শুরু করে।

    আরো পড়ুনঃ নির্দয়-নৃশংস খালেদার প্রতি আর কতো মানবিক হবে সরকার?

    বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং ভোটারদেরকে চিরতরে নির্মূল করার জন্য সশস্ত্র হামলা, আক্রমণ, লুটপাট, দেশত্যাগে বাধ্য করা, ধ-র্ষণ, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। বাংলাদেশের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার ইতিহাসে একটি এটি একটি নৃশংস বড় ঘটনা।

    ৪. ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের অস্বীকৃতি: ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কেবল সপরিবারে হত্যাই করা হয়নি বরং এই হত্যাকাণ্ডের যেন বিচার না হয় সেজন্য বিচারের পথরুদ্ধ করেছিলেন খুনি মোশতাক এবং জিয়াউর রহমান।

    খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে যখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যখন শপথ নেন তখন তার সামনে সুযোগ এসেছিল এই কালো আইনটি বাতিল করার। আওয়ামী লীগ এই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল এর জন্য বিল এনেছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়া এই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলে অস্বীকৃতি জানান। এটি অমানবিকতার আরেকটি জ্বলন্ত উদাহরণ।

    ৫. যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী করা: বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়া দেশবিরোধী সংগঠন জামায়াত এবং দলের নেতাদেরকে পাশে নিয়েই ২০০১ এর মন্ত্রীসভায় বসেন খালেদা জিয়া। রাজাকার মতিউর রহমান নিজামী এবং রাজাকার আলী আহসান মুজাহিদের মত নরঘাতকদেরকে মন্ত্রী বানানো ছিল মানবতার বিরুদ্ধে এক ধরনের অপরাধ।

    ৩০ লাখ শহিদ এবং ৬-৮ লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এই রক্তস্নাত পবিত্র বাংলার মাটিতে এই দেশের পতাকা ওড়ানো গাড়িতে চড়ে বেড়িয়েছে তারা। খালেদা জিয়ার অমানবিক কর্মকাণ্ডের এটি আরেক দৃষ্টান্ত।

    ৬. ১৯৭৫ এর খুনিদের চাকরিতে বহাল: জাতির পিতার হত্যাকারীদেরকে কূটনৈতিক চাকরি দিয়ে পুরো জাতিকে কলঙ্কিত করেছিলেন খালেদা জিয়ার স্বামী জিয়াউর রহমান। আর সেই কলঙ্কের ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন খালেদা জিয়া স্বয়ং। তিনি কেবল খুনিদের চাকরি বহাল রাখেননি বরং তাদেরকে পদোন্নতিও দিয়েছেন।

    খালেদা জিয়ার প্রশ্রয়েই খুনিরা সারাদেশে আস্ফালন করে বেড়িয়েছে। এমনকি তারা ভরা জনসভায় দম্ভের সাথে বলেছিল- মুজিবকে হত্যা করেছি, কেউ আমার বা** ছিঁড়তে পারেনি! এর চেয়ে অমানবিক কান্ড আর কী হতে পারে!

    ৭. ১৯৭৫ এর খুনিদেরকে সংসদে নিয়ে আসা: খালেদা জিয়া জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনিদেরকে সংসদে নিয়ে আসেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে খুনিদেরকে নির্বাচিত করিয়ে আনেন তিনি।

    খালেদা জিয়ার কল্যাণে জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনিদেরকে জাতীয় সংসদে বসিয়ে পবিত্র সংসদের অবমাননা করেছিলেন। এটাও একটি অমানবিকতার একটি উদাহরণ।

    ৮. বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার বন্ধ: ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার প্রচলিত আইনে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু করে। এই বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসে। গদিতে বসেই খালেদা স্ব-উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির পথ বন্ধ করে দেন।

    খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ তার আত্মজীবনীমূলক লেখায় এ ব্যাপারে নিজের দুঃখ এবং ক্ষোভের কথা অকপটে স্বীকার করেছেন।

    ৯. শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকান্ড: শাহ এ এম এস কিবরিয়া একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন ডিপ্লোম্যাট এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী ছিলেন। হবিগঞ্জের এক জনসভায় বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা গ্রেনেড হামলা চালায়। একইসাথে নির্বিচারে গুলি চালায়।

    শাহ এ এম এস কিবরিয়া যখন সন্ত্রাসীদের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হন তখন সরকারের কাছে একটি হেলিকপ্টার চাওয়া হয়েছিল। হবিগঞ্জে সে সময় চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল অপ্রতুল। তাই গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু খালেদা জিয়া হেলিকপ্টার দিতে সরাসরি অস্বীকৃতি জানান। ফলাফল- জাতি হারায় একজন সূর্যসন্তানকে।

    ১০. আওয়ামী লীগ নেতা আহসানুল্লাহ মাস্টারকে হত্যা: আওয়ামী লীগের নেতা আহসানুল্লাহ মাস্টারকে গাজীপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করে খালেদা জিয়ার অনুগত বাহিনীর লোকজন। যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান ও তার বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের রংমহল খ্যাত ‘খোয়াব ভবন’- এ বসে।

    মূমুর্ষ অবস্থায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসানুল্লাহ মাস্টারকে ঢাকার পথে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হলে রাস্তায় দফায় দফায় বাধা দেয়া হয়। এক পর্যায়ে টঙ্গীতে তাকে বহনকারী গাড়ি আটকে দেয় সন্ত্রাসীরা। এভাবে বাধা দেওয়া না হলে শেষ পর্যন্ত হয়ত আহসানুল্লাহ মাস্টারকে যথাসময়ে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া যেত। তিনি হয়ত বেঁচে থাকতেন। এটিও অমানবিকতার একটি বড় উদাহরণ।

    এখানে মাত্র ১০টি ঘটনার কথা বলা হয়েছে। এর বাইরেও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার ওপর নৃশংস ও বর্বরোচিত হামলা এবং হত্যাচেষ্টার অনেক ঘটনা রয়েছে। আরও রয়েছে গ্যাসের দাবিতে বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর গুলি চালিয়ে হত্যার ঘটনা। রয়েছে সারের দাবিতে তীব্র আন্দোলনে গুলি চালিয়ে বহু সংখ্যক কৃষককে হত্যার ঘটনাও।

    পুত্র কোকোর মৃত্যুর ঘটনা শুনে রাজনৈতিক বিরোধ ভুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছুটে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়ার বাড়িতে। প্রধানমন্ত্রী নিজের প্রটোকল ফেলে সেদিন খালেদা জিয়ার পাশে দাঁড়ানোর জন্যই গিয়েছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার বাড়ির গেট খোলা হয়নি সেদিন। এমনই অমানবিক তিনি।

    খালেদা জিয়া আপাদমস্তক একজন উগ্র মনোভাবের মানুষ। প্রতিহিংসার রাজনীতি করে গেছেন জীবনভর। এমনকি তার দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম তাকে অশিক্ষিত এবং যোগ্যতাহীন বলে আখ্যা দিয়ে বলেছেন, শুধুমাত্র জিয়াউর রহমানের বিধবা স্ত্রী বলেই তিনি দলের পদ পেয়েছেন, এছাড়া তার আর কোনো যোগ্যতাই নেই।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.