অনেকে অনেক কারণেই কেঁদে থাকি। কিন্তু যে লোকটা খেতে পায় না, তার কান্নার সাথে কোনো কান্নারই তুলনা হয় না। বাংলাদেশে কত লোক খেতে পায় না? আমাদের কোনো পরিসংখ্যান নেই, না থাকলেও খেতে না পাওয়া মানুষের সংখ্যা কোটির অংকে হবে বলেই মনে হয়। আমাদের অগোচরে এই বিশাল বিস্তীর্ণ ক্ষুধার্ত মানুষের প্রতিদিনের কান্না তাদের নিজস্ব গণ্ডীর ভেতর বিকট বিপন্নতায় তাদের অস্তিত্ব ধ্বংস করে। কেউই পারে না ওদের সাহায্য করতে। ভিক্ষাবৃত্তি ও পাশের মানুষের সহানুভূতি, এর ওপরই টিকে আছে এ সমস্যার বর্তমান সমাধান। কিন্তু আর মনে হয় না এর ওপর নির্ভর করে চলবে। দিনে দিনে মানুষের ভিক্ষুকের প্রতি যে মনোভাব তৈরি হচ্ছে, তার বাস্তব ভিত্তি আছে, কারণ প্রচুর লোক ব্যক্তিগত ও সংঘবদ্ধ চক্রের মধ্য দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিকে একটি স্বকর্মসংস্থানে রূপ দিয়েছে। ফলে ধীরে ধীরে মানুষের ভিক্ষাদানের প্রবণতা আশংকাজনক হারে সংকুচিত হচ্ছে, ফলে ভিক্ষাকর্মীদের এখন আগের চেয়ে বেশি শ্রমঘন্টা কাজ করতে হচ্ছে, এবং নিয়মিত কর্মকুশলতার পরিচয় দিয়ে এলাকা ও অবয়বে নানা পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। পুরো ব্যাপারটি একটি ব্যবসায়িক চেহারা পেয়েছে, এবং কারো ব্যবসা ভালো যাচ্ছে কারো যাচ্ছে না। এর সাথে কোনো সম্পর্ক নেই আমাদের আগের সামাজিক ভিক্ষাবৃত্তির, যখন কেউ খেতে না পেলে হাত পেতে লোক থেকে চাইত এবং খাওয়াটা জুটে গেলে আর হাত পেতে নিজেও লজ্জায় পড়ত না এবং অন্যকেও প্রতারণা করত না। ফলে অভাবের তাড়নায় ক্ষুধার জ্বালার যে ভিক্ষাবৃত্তি তা আজ খুবই হতাশার, দুঃখের এবং কখনো কখনো বিপদেরও। তাহলে এই বিশাল নীরব নিরুপায় খেতে না পাওয়া লোকগুলো কি খেতে না পেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরবে? তাহলে কে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারে। আমরা সবাই দাঁড়াতে পারি, সবার নিজ নিজ সামর্থ মতো, কিন্তু উদ্যোগ তো নিতে হবে সরকারকেই, আর এ কাজ করতে তার লাগবে প্রচুর লোক, সে লোকই বা জোটাবে কে এবং জুটবেও বা কোথা থেকে। উত্তর একটাই ছাত্রসমাজ। তার জন্য সরকার প্রতিটি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর ছাত্র সংসদ নির্বাচন বাধ্যতামূলক করে দিতে পারে, ছাত্ররা যে যার রাজনীতি করুক, কিন্তু ছাত্র সংসদের নির্বাচন হবে সম্পূর্ণভাবে প্যানেলহীন, স্বাধীনভাবে বিভিন্ন পদে ছাত্ররা নির্বাচনে প্রার্থী হবে এবং জয়ীরা সংসদে ছাত্রদের জন্য কাজ করবে। পাশাপাশি প্রত্যেকটি ছাত্র সংসদ সরকারের জনসেবা ও জনজাগরণমূলক কর্মকান্ডে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ছাত্রদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে। এবং সরকারও ছাত্রদের সময় ও উৎসাহের চূড়ান্ত ব্যবহারের মধ্য দিয়ে জনসেবা ও জনজাগরণমূলক প্রকল্পগুলো আরো সচল ও ফলপ্রসূ করে তুলতে পারবে। এভাবে সরকারের পরিকল্পনা আর ছাত্রসমাজের স্বেচ্ছাশ্রম খেতে না পাওয়া মানুষের কাছে খাওয়া পৌঁছে দিয়ে মানুষের মৌলিকতম প্রয়োজন মেটাতে গণবন্টন ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে পারে, যা সঠিকভাবে কাজ করলে হয়ে উঠবে এক প্রাত্যহিক ত্রাণ কার্যক্রম, এবং দুপক্ষের নিয়মিত সাধনায় হয়ে উঠতে পারে বিপন্ন মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের প্রাত্যহিক কর্মসূচী।

মাসুদ করিম

লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।

১ comment

  1. মাসুদ করিম - ১ জুলাই ২০০৯ (৮:০৮ পূর্বাহ্ণ)

    গণশক্তি পত্রিকার আজকের সম্পাদকীয় ‘ক্ষুধার ছবি’। এবছর পৃথিবীতে একশ কোটির বেশি মানুষ অনাহারে দিন কাটাতে বাধ্য হবেন। সেসাথে আছে ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে মন্তব্য। আমাদের দেশে গণবণ্টন নিয়ে কোনো প্রয়াস তো দেখা যাচ্ছে না, তার ওপর ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’র যা অবস্থা তার কাছ থেকে কোনো তথ্য-উপাত্ত পাওয়াই তো দিনে দিনে অসম্ভব হয়ে উঠছে। এবার অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে কাজ করবেন বলে বিভিন্ন সংস্থাকে আশ্বস্থ করেছেন। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কতটুকু সফল তিনি হতে পারেন। আর আশা করছি আমাদের দেশের ক্ষুধার তথ্য-উপাত্ত কেউ যদি কোনো সূত্রে পান আশা করি এখানে তুলে দেবেন।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.